স্মরণ
রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ
গঙ্গা 'অনু'
যেও না সাথি
যেও না সাথি
ও যেও না সাথি
চলেছো একেলা কোথায়?
এই কথা তার লাখ লাখ ভক্তদের হৃদয়ে আজও ধ্বনিত হচ্ছে! কিন্তু সে বহুমুখী প্রতিভাশালী তো আর নেই তবুও আছে ও থাকবে চিরকাল মন মস্তিষ্কে ও ভক্তদের হৃদয়ে! ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের 'রাজপুত্র' যিনি ছিলেন আসামের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী যার নাম জুবিন বরঠাকুর পরে তিনি জুবিন গর্গ নাম বেছে নেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুতে অসমে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কিন্তু অসমের মানুষ কেন তাঁকে এত আবেগের সাথে ভালোবাসত? কেন তারা রাস্তায় নেমে গান গেয়েছিল, কাঁদছিল? লক্ষ লক্ষ ভক্ত থাকার পিছনে অন্যতম কারণ হলো গরীবদের মাঝে থেকে টাকা সাহায্য করা। অনেক ভক্ত তার এই জনহিতকর কাজের জন্য তাকে ভালোবাসতেন এবং "রক্ষক" মতো সম্মান করতেন। জানা গেছে, তিনি কিছু অনুষ্ঠানে পারিশ্রমিক না নিয়েই সাহায্য করতেন। তিনি ছিলেন একজন আলাদা চিন্তাধারার মানুষ তাই তিনি সঙ্গীত সীমানা অতিক্রম করতে পেয়েছিলেন! কিকবক্সার জুবিন, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে ভয় পেতেন না। অসমিয়ারা তাঁকে মশীহা (রক্ষক বা ত্রাণকর্তা) ও রাজা বলে ডাকত।
ত্রাণকর্তা বলা যেতেই পারে! জানা গেছে, ২০১৯-এ তিনি অসমের জঙ্গিগোষ্ঠী আলফাতে যোগদান করতে ইচ্ছে প্রকাশ করলেও জুবিন গর্গ উলফার কিছু নির্দেশ মানতে রাজি হননি, বিশেষত যখন তারা অসমে হিন্দি ও বাংলা গান গাওয়ার বিরোধিতা করেছিল মানে তিনি পশ্চিমবাগের ও অন্য শিল্পীদের মত শিরদাঁড়া বিক্রি করে দেন নি। ২০১৯ সালে তিনি সিএএ বিরোধিতা করে ছিলেন! তিনি এবং তার মতো অনেক শিল্পী সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদে গান গেয়েছেন। মুম্বাইয়ের থাকাকালীন তিনি এক বার বলেছিলেন, একজন রাজার নিজের রাজত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। মুম্বাইয়ে কোনো রাজা নেই। লতা মঙ্গেশকর বা রাজেশ খান্না মারা গেলে খবর হয়, কিন্তু রাজ্য থেমে থাকে না। কিন্তু আমি যদি আসামে মারা যাই, পুরো রাজ্য সাত দিনের জন্য থমকে যাবে," বলেছিলেন তিনি। সংগীত পরিচালক প্রীতম তখন মন্তব্য করেছিলেন, "ও এমনই, সত্যিকারের রাজা।" এই অপ্রতিম প্রেমের ফলে অসমের কালিতা জনগোষ্ঠী ছাত্র সংগঠন ১৬ সেপ্টেম্বর কে জুবিন গর্গের স্মৃতি দিবস হিসেবে পালন করা প্রস্তুতি নিতে চলেছে!
বড় বড় সংগীত পরিচালক ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ডাকও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জুবিন। রোহিত শেঠির একটি গানে গাওয়ার প্রস্তাবও তিনি সরাসরি নাকচ করেছিলেন। সংগীত পরিচালক প্রীতম তখন মন্তব্য করেছিলেন, "ও এমনই, সত্যিকারের রাজা। সুরকার জয় চক্রবর্তীর মতে, জুবীন গর্গ তার উপার্জনের ৭০% গরিবদের দান করেছেন! এই ত্রাণকর্তা জুবিন গর্গ ক্যান্সার রোগীদের থাকার জন্য তার বাড়ি উৎসর্গ করেছেন!
এই মহান শিল্পীর সিনেমা জগতে যোগদান কখন ভোলা যাবে না! আসলে তিনি শুধু তার সঙ্গীতের মাধ্যমে লোকের হৃদয়ে রাজ করেন নি বরং ছিলেন একজন ভারতীয় গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত প্রযোজক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট লেখক এবং সমাজসেবী। ভারতের অনেক সংগীতকারের তুলনায় জুবিন গর্গ অনেক বেশি গান গেয়েছেন! এক রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি অসমীয়া, হিন্দি, বাংলা মত প্রায় ৪০টি ভাষায় প্রায় ৩৮,০০০ হাজার বেশি গান গেয়েছেন। হিন্দি 'গ্যাংস্টার' ছবির 'ইয়া আলি' গানের জন্য তিনি সেরা প্লেব্যাক গায়কের খেতাব জিতেছেন। পেয়েছিলেন গ্লোবাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস!
এর ছাড়া তিনি এক ভাল ফুটবল প্রেমী! অসমের তরুণ ফুটবলারদের তিনি বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। গুয়াহাটি এফসি ক্লাবের স্থপতি কৌস্তভ চক্রবর্তী মতে, 'জুবিন গর্গ আমাদের ক্লাবকে যে সাহায্য করেছেন, তা কখনই ভোলার নয়। ২০১৮ সালে এই ক্লাব স্থাপিত হয়েছিল। সেইসময় পায়ের নিচে ভিত একেবারে শক্ত হয়নি। সেইসময় জুবিন আমাদের কাছে একটা আশার আলো হয়ে এসেছিলেন।'
২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ওকব্রুকে আসাম কনভেনশন কর্তৃক বর্ষসেরা অতিথি শিল্পী হিসেবে সম্মানিত এবং ২০২৪ সালে মেঘালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট.) ডিগ্রি প্রাপ্ত জুবিন দা শব্দেই তার প্রেমীরা চিরদিন মনে রাখবেন -
ভেজা ভেজা স্মৃতি পাথর
ফেলে আসা পথের বাঁকে
ফিরে ফিরে আকাশকুসুম
আজো আমায় ডাকে
যদি এমন হোতো সুজন
স্বজন হতে আমার তুমি
শুধু তুমি, শুধু তুমি
আমার শুধু তুমি!!
==============
Mr. Ganga
NORTH BASUDEBPUR, NATUN PALLY BELGHORIA, NORTH 24 PARGANASKolkata -700056

Comments
Post a Comment