আশা
মধুশ্রী ভট্টাচার্য্য
সজলের সময়টা বড় খারাপ যাচ্ছে। পা ভেঙে তিন মাস টানা বিছানায় পড়ে থাকায় চাকরিটা খোয়াতে হল। ছোটখাটো প্রাইভেট কম্পানীতে চাকরির এই হাল। আজ তিন মাস হতে যায় ইন্টার্ভিউ দিল কত কোম্পানীতে কিন্তু চাকরি জুটল না। আজকেও বেশ কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দিয়ে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরছিল সজল। আজকাল বাড়িতে আর ফিরতে ইচ্ছা করে না। বাবা মায়ের অন্ধকার মুখ দেখলে আরো খারাপ লাগে। ওরা যেন আশা ছেড়ে দিয়েছে। গরীব বাবা মায়ের খারাপ ছাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়ারই কথা যেন মেনে নিচ্ছে।
আজ বাড়ি না ফিরে পাড়ার শেতলা মন্দিরে গেল সজল। মা খুব জাগ্রত। সজলকে কী একটা চাকরি জুটিয়ে দিতে পারেন না শেতলা মা। মাকে প্রণাম করে বসল মন্দিরের চাতালে। মায়ের মুখের দিকে তাকাল সজল। কী যেন এক রহস্য খেলা করছে মায়ের চোখে।
কিরে ব্যাটা তুই এখানে? হঠাৎ কারো ডাকে চমকে তাকিয়ে দেখল কমলাদিদা। কমলাদিদা মন্দিরের দেখাশোনা করে। পাশেই ওর নিজের ছোট একটা বাড়ি আছে। বুড়ো মানুষ একাই থাকে। বিধবা, ছেলেপুলে নেই।
কেন, আসতে নেই? সজল হাসি মুখে বলল।
রোজই আসবি বাবা। তবে তোদের মায়ের কাছে আসার সময় কোথায়?
আমি বেকার দিদা। আমার সময় আছে।
ওমা সেকী? অপিস যেতিস যে?
চাকরি নেই। গেছে আজ অনেক দিন হল।
মন খারাপ করিস না। মাকে বল, মা ব্যবস্থা করবেন দেখবি।
সজল চুপ করে থাকে। কমলাদিদা বলে চলে শোন, অমন খারাপ সময় সব্বার আসে রে। আমার তো পেট কেটে অপারেশন হল। ছেলেপুলে কিছুই হলনি। তোর দাদু গেল তখন আমার তিরিশ বছর বয়েস। কে দেখল আমারে বল? সবাই বলল অল্প বয়েসের বেধবা। একা থাকতে পারবি না। সব ছিঁড়ে খাবে। আমি বলি না তার সাথে এগার বচ্ছর ঘর করেছি। তাকে আমি ভুলতে পারবোনি। শেতলামায়ের চরণ ধরে পড়ে রইলাম। মা আর বিয়ে করব না। তুমি ব্যবস্থা কর। মা করলেন।
কিরকম ব্যাবস্থা?
বুদ্ধি দিলেন মা। দুঘর ভাড়া বসালাম। সম্পত্তি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে কত অশান্তি। সব একা ঠেলেছি।
তারপর?
কটা টাকা জমিয়ে রিক্সা কিনলাম। এখন রিক্সা ভাড়া খাটাই। চরিত্তির ঠিক রেখেছি। কেউ একটা কথা বলুক দেখি আমার নামে?
সত্যি দিদা। তোমার যা মনের জোর। প্রশংসা পেয়ে কমলাদিদা খুশি হয়ে আরো গল্প করে।
সজল ভাবে সত্যিই দিদা একজন ফাইটার। আর সে এত কম বয়সেই হেরে যাচ্ছে জীবন যুদ্ধে? কিছু একটা করা দরকার। কিন্তু কী করবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হয় আচ্ছা একটা ব্যবসা করলে কেমন হয়। চাকরির চেষ্টা তো অনেক হল। রান্না করতে চিরদিনই খুব ভালবাসে সজল। সজলের হাতের রান্না খেয়ে সবাই ধন্য ধন্য করে। একটা ক্লাউড কিচেন তো করাই যায়। এইটুকু পুঁজি আছে। বাড়িতে বসেই ব্যবসা করা যাবে। আর সজলকে বাবা, মা দুজনেই হেল্প করতে পারবে। বুকের ভিতরে একটা উদ্দীপনা অনুভব করে সজল। ওর নিজের ব্যবসা। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোমোশনাল ভিডিওর পেজ, ইউটিউব চ্যানেল। গায়ে কাঁটা দেয় সজলের। শেতলা মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ের মুখে আশ্বাসের এক অনিন্দ্যসুন্দর হাসি। মাকে আভূমি নত হয়ে একবার প্রণাম করে সজল উঠে দাঁড়ায়।
আজ চলি দিদা।
আয়। আবার আসিস। চাকরি হল কিনা জানাস।
চাকরি তো অনেক হল ব্যবসা করব এবার। কমলাদিদার কাছে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে জোর কদমে হাঁটা দিল সজল। মা বাবাকে এখুনি বলতে হবে সব কিছু।
==============
Madhusree Bhattacharya
RA 89
Rajbangshi Para
Gopalpur
Kolkata 700102

Comments
Post a Comment