বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডে
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডে ২২ শে সেপ্টেম্বর, ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে, ইংল্যান্ডের নিউ ইংটন নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একজন বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ পদার্থ বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। উনি তড়িৎ চুম্বকত্ব ও তড়িৎ রসায়নের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তিনি ২৫ শে আগষ্ট, ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেছিলেন।
মাইকেল ফ্যারাডের বাবা জেমস গ্লাসাইট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৭৯০ সালের শীতকালে, জেমস ফ্যারাডে, তার স্ত্রী মার্গারেট হ্যাস্ট ওয়েল এবং দুই সন্তানকে ওয়েস্টমোরল্যান্ডের আউথগিল থেকে লন্ডনে স্থানান্তরিত করেন। যেখানে তিনি গ্রামের কামারের কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন। ওই বছরের শরৎকালে মাইকেলের জন্ম হয়। আর শীত কালে স্থানান্তরিত হন। মোট চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় মাইকেল ফ্যারাডেকে শুধুমাত্র প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা গ্রহণের পর নিজেই নিজেকে শিক্ষিত করেন।
বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডের জন্ম হয় খুব গরীব সংসারে। তিনি তাই একটি বইয়ের দোকানে কাজ করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকা নিয়ে গিয়ে লোকেদের বাড়ি বাড়ি বিক্রী করতেন। এই কাজ করার পরে তাঁকে বই বাঁধাই করার কাজ দেওয়া হয়েছিল। এভাবে তিনি তাঁর দরিদ্র সংসারের জন্য অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তবে তিনি এই কাজের জন্য অনেক বই পড়ার সুযোগ পান। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলি তাঁকে খুব আকর্ষণ করেছিল। এই বইগুলি পড়ে তিনি খুব প্রভাবিত হন। আর তিনি তাঁর বাড়িতে একটি ছোট গবেষণাগার তৈরি করেন। ইচ্ছা - বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করা। এবার উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে সামান্য কিছু বাঁচিয়ে, তিনি ওই টাকায় গবেষণাগারের জিনিস পত্র ক্রয় করতে থাকেন। আবার আবর্জনাতে যে সব জিনিস ফেলে দিত লোকজন, সেখান থেকেও তুলে এনে নিজেই জিনিস পত্র বানিয়ে নিতেন।
তিনি কোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষা লাভ করেন নি। কিন্তু নিজের চেষ্টায় উনি বিজ্ঞান শিক্ষা লাভ করেন।
তিনি স্যান্ডেমানিয়ান সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। এই জন্য ধর্মীয় বিশ্বাস তাঁকে বিজ্ঞান নিয়ে সাধনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি জীবনের শুরু থেকেই একজন বিজ্ঞান বিশ্বাসী মানুষও ছিলেন। এই কারণেই তিনি বিশ্বজয়ী বৈজ্ঞানিক হতে পেরেছিলেন।
(তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল - সারাহ বার্নার্ড। মাইকেল ফ্যারাডে ১৮২১ সালের ১২ - জুন তারিখে সারাহ বার্নার্ডকে বিয়ে করেন। এই বিবাহ ছিল তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী একটি মধুর বন্ধন। )
ফ্যারাডের উত্তরসূরি ছিলেন - উইলিয়াম ওডলিং।
তাঁর নিজের কোন সন্তান ছিল না।
এবার তাঁর কর্ম কান্ড নিয়ে আমরা আলোচনা করি।
তাঁর বয়স যখন একুশ বছর তখন লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউটে তিনি হামফ্রে ডেভির বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলেন। বক্তৃতা শুনে হামফ্রে ডেভির কথাগুলো উনি লিখে একটা বই আকারে বাঁধাই করেন। ফ্যারাডের ওটি রয়্যাল ইন্সটিটিউটে হামফ্রে ডেভির নাম করে পাঠিয়ে দিলেন।
তারপরে বেশ কিছুদিন কেটে গেল - হামফ্রে ডেভি তাঁর এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে গুরুতর আহত হলেন। তিনি তখন ফ্যারাডেকে নিজের সহকারী হিসেবে নিয়োগ করেন ও রয়্যাল ইন্সটিটিউটে নিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে কাজ করাতে থাকেন।
পরবর্তী কালে - হ্যামফ্রে ডেভির মৃত্যুর পরে ফ্যারাডে হন রয়্যাল ইন্সটিটিউটের নতুন পরিচালক।
ফ্যারাডে রয়্যাল ইন্সটিটিউটের পরিচালক হিসেবে নিজের ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে লাগলেন। এখানেই তিনি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত আবিষ্কারটি করেছিলেন, সেটি হল - " তড়িৎ-চৌম্বকীয় আবেশ। " তিনি আবিষ্কার করলেন - পরিবাহীর তার কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন তড়িৎ উৎপাদন করে। জগতে সেটা ছিল প্রথম জেনারেটর। হ্যাঁ, জেনারেটরের পথপ্রদর্শক ছিলেন বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডে।
বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডে চৌম্বক বলরেখা আবিষ্কার করেছিলেন। এই বলরেখা কাল্পনিক ছিল। কিন্তু তাঁর আবিষ্কৃত এই বলরেখার দ্বারা চুম্বকের বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছিল। হ্যাঁ , " ক্ষেত্র তত্ত্ব " - এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পাওয়া গেল।
ফ্যারাডে তাঁর ৪০ বছর বয়সের মধ্যেই আবিষ্কার করলেন - ১। ইলেকট্রিক মোটর, ২। জেনারেটর, ৩। ট্রান্সফরমার।
এই সময়ে রয়্যাল ইন্সটিটিউটের অন্যান্য সকল বিজ্ঞানীগণ তাঁর সকল আবিষ্কারের কদর করতেন, কিন্তু ওনার অদৃশ্য বলরেখার ধারণা কেউই গ্রহণ করলেন না। তখন তিনি মুষড়ে পড়েন। মনে মনে হতাশ হয়ে পড়েন।
এমন সময় ঈশ্বরের অসীম দয়ায় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এলেন ম্যাক্সওয়েল। ফ্যারাডের কাজকে স্বীকৃতি দিলেন ম্যাক্সওয়েল। হ্যাঁ, তাঁর পুরো নাম হল - জেমস্ ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল।
তিনি তখনকার রাজপরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। কম বয়সেই তিনি ফ্যারাডের বই একদম মন দিয়ে পড়লেন। তাছাড়াও তিনি ফ্যারাডের সমস্ত জার্নাল পড়লেন।
পড়ার ফল হল - এবার ম্যাক্সওয়েল তাঁর আপন গাণিতিক ব্যাখ্যাগুলি বই আকারে বাঁধাই করে নিয়ে গেলেন ফ্যারাডের কাছে। সেই বইটা দেখেই ফ্যারাডের মনে পড়ে গেল, তিনিও একদিন এভাবে একটি বই লিখে নিয়ে এসেছিলেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
ফ্যারাডের কাছে ম্যাক্সওয়েল তাঁর গাণিতিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তড়িৎচৌম্বক বলরেখার একটা সমীকরণ কিছুতেই আর মেলাতে পারছিলেন না। অনেকবার চেষ্টা করতে থাকলেন। তাও হচ্ছিল না। এবার ম্যাক্সওয়েল ছোট্ট এক পরিবর্তন করে দিলেন - এতেই সবকিছু মিলে গেল। ফ্যারাডে ধারণা করেছিলেন - বিদ্যুৎ পরিবাহীর চারপাশে
তড়িৎচৌম্বক বলরেখাগুলো স্থির বৃত্ত তৈরি করে। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের সেটিকে সংশোধন করে দিলেন। আর সেটি এই রকম হয় - বৃত্তাকার বলরেখাগুলো আলোকতরঙ্গের গতিতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আজ আমরা যে মাইক্রোফোন, স্পীকার ব্যবহার করে থাকি, সে সবই এই তত্ত্বকে ভিত্তি করেই নির্মাণ করা হয়েছে। তাই ঐ আবিষ্কারের গুরুত্ব অপরিসীম।
নোবেল বিজয়ী বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মাইকেল ফ্যারাডেকে নিয়ে মন্তব্য করেন, " তাঁর আবিষ্কারগুলোর মাত্রা আর ব্যাপকতা, বিজ্ঞান আর শিল্পকারখানার জগতে সেগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করলেই বোঝা যায় – এই মানুষটিকে যত বড় সম্মানই দেওয়া হোক না কেন, সেটা যথেষ্ট নয়।"
আমরা অনেকেই জানি বৈজ্ঞানিক হামফ্রে ডেভি, " ডেভির সেফটি ল্যাম্প " - আবিষ্কার করেছিলেন। এ ছাড়াও উনি বেশ কিছু মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন। আমরা আজ যে সোডিয়াম আর ক্যালসিয়াম - ব্যবহার করে থাকি সেই আবিষ্কারের কৃতিত্ব এই বৈজ্ঞানিকের। আবার ফ্যারাডে ইলেকট্রোলাইসিসের সূত্রগুলো প্রস্তাব করেছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁর দ্বারা তড়িৎ রসায়নের ক্ষেত্র অনেক বেশি উন্নত হয়েছিল।
ফ্যারাডে দেখিয়েছিলেন - বেশ কিছু পদার্থ চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে দূরে সরে চলে যায়। এটি " ডায়ম্যাগনেটিজম " নামে পরিচিত।
ফ্যারাডে বেনজিন ও আরো অন্য কিছু হাইড্রোকার্বনআবিষ্কার করেছেন। যেমন - কার্বন ট্রেট্রাক্লোরাইড। তিনি ক্লোরিনের ক্ল্যাথ্রেট হাইড্রেট অনুসন্ধান করেন।
(বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডে ক্লোরিন এবং কার্বনের দুটি নতুন যৌগ আবিষ্কার করেছিলেন। হেক্সাক্লোরোইথেন - এটি তিনি ইথিলিন এবং কার্বন টেট্রাক্লোরাইডের পচন থেকে ক্লোরিনেশনের মাধ্যমে তৈরি করেছিলেন।)
এছাড়াও ফ্যারাডে বুনসেন বার্ণারের একটা প্রাথমিক রূপ ও জারণ সংখ্যার ব্যবস্থা আবিস্কার করেন। আবার অ্যানোড, ক্যাথোড, ইলেকট্রোড ও আয়ন - এর মতো পরিভাষা জনপ্রিয় করেন।
মাইকেল ফ্যারাডে বেশ কয়েকটি গ্যাসকে তরলীকরণ করতে সফল হন। তিনি ইস্পাতের সংকর ধাতুগুলি অনুসন্ধান করেন। ফ্যারাডে আলোকীয় উদ্দেশ্যে তৈরি বেশ কয়েকটি নতুন ধরণের কাচ তৈরি করেন। এই ভারী কাচগুলির একটির নমুনা পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যখন কাচটি চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করা হয়েছিল, তখন ফ্যারাডে আলোর মেরুকরণের সমতলের ঘূর্ণন নির্ধারণ করেছিলেন। এই নমুনাটি চুম্বকের খুঁটি দ্বারা বিকর্ষণকারী প্রথম পদার্থও ছিল।
মাইকেল ফ্যারাডেই প্রথম রিপোর্ট করেন যা পরবর্তীতে ধাতব ন্যানো পার্টিকেল নামে পরিচিত হয়। ১৮৫৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন যে সোনার কলয়েডের আলোকীয় বৈশিষ্ট্য সংশ্লিষ্ট বাল্ক ধাতুর থেকে ভিন্ন।
এটি সম্ভবত কোয়ান্টাম আকারের প্রভাবের প্রথম রিপোর্টিত পর্যবেক্ষণ ছিল।
এটিকে ন্যানোবিজ্ঞানের জন্ম বলে মনে করা যেতে পারে ।
রসায়ন বিজ্ঞানে তাঁর আবিষ্কারগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এর কারণেই একজন রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে তিনি পরে শিক্ষা দান করেন।
তবে ইতিহাস বলে যে - বৈজ্ঞানিক হ্যামফ্রে ডেভির সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ছিল 'মাইকেল ফ্যারাডে' - সত্যই তো তাই। অসম্পূর্ণকে তিনিই তো সম্পূর্ণ করেছিলেন।
এখন তাঁর আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১। ইলেক্ট্রিক মোটর -
বিজ্ঞানী ফ্যারাডে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ৩ রা সেপ্টেম্বর, লন্ডনের রয়াল ইনস্টিটিউশনের বেশমেন্টে জগতের সামনে তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রের প্রদর্শনী করে দেখিয়েছিলেন। তিনিই
প্রথম ইলেক্ট্রিক মোটর তৈরি করে দেখান। তাঁর আবিষ্কার ছিল - তড়িৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রথম ধাপ।
মাইকেল ফ্যারাডে তাঁর প্রদর্শনীতে এটি করে দেখান -
তিনি মুক্ত ঝুলন্ত একটি তার পারদের পুলে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। এটির ওপরে তিনি একটি স্থায়ী চুম্বক স্থাপন করেছিলেন। এরপরে তিনি ওই তারের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত করার। এখন দেখা যায় - তারটি ওই চুম্বকের চারপাশে ঘুরছে। এই সময় ওই তারটির চারপাশে একটি অতি ঘনিষ্ঠ বৃত্তাকার চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়।
বিজ্ঞানী ফ্যারাডে তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কার - " কোয়ারটারলি জার্নাল অফ সায়েন্স " নামে একটি জার্নালে প্রকাশ করেন। তাছাড়াও তিনি তাঁর গবেষণা পত্রের কপি ও তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রের পকেট আকারের মডেল, সারা বিশ্বের সহকর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এতে সকলেই তাঁর আবিষ্কৃত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ঘূর্ণণের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। পদার্থ বিদ্যার ক্ষেত্রে এটি এক অমূল্য আবিষ্কার।
২। জেনারেটর -
বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের আগষ্ট মাসে তাঁর প্রথম ট্রান্সফরমার তৈরি করেছিলেন। তিনি এই সময় তড়িৎ চৌম্বকীয় আবেশ আবিস্কার করেছিলেন। তিনি তামার তার দিয়ে একটি নলকে মুড়িয়ে দেন, কাপড় দিয়ে অন্তরক করেছিলেন। এই তামার তারটিকে তিনি একটি গ্যালভোনোমিটারের ( এই যন্ত্রটি তড়িৎ প্রবাহ সনাক্ত করে থাকে ) সঙ্গে সংযুক্ত করে দেন। এরপরে উনি ওই নলের ভেতর দিয়ে একটা চুম্বককে সামনে থেকে পিছনে এবং পিছন থেকে সামনে চালনা করতে থাকেন। আর এই সময় গ্যালভোনোমিটারের সুইটা সরে যায়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি প্রমাণ করলেন যে তড়িৎ প্রবাহ করানোর জন্য চুম্বককে গতিশীল রাখতে হয়।
তিনি প্রথম জেনারেটর আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্র প্রধাণত যান্ত্রিক শক্তি বা চালিকা শক্তিকে - ( এখানে সামনে ও পিছনে চলাচল করা চুম্বকের গতি ) - রূপান্তরিত করে। আর এটিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
এছাড়াও বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডে ক্রিসমাস লেকচারও আবিষ্কার করেন। তিনি বিশেষভাবে তরুণদের জন্য এটি ডিজাইন করেছিলেন। এতে করে তরুণেরা বৈজ্ঞানিক নীতি ও আবিষ্কার খুব ভালো করে বুঝতে পারে। আজও প্রতি বছর রয়াল ইনস্টিটিউসনে
ক্রিসমাস লেকচার পরিবেশিত হয়।
৩। ট্রান্সফরমার
বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডে তারের কয়েলের মধ্যে আবেশনের ওপর প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। এখানে ছিল একটা লোহার রিং, এটির চারপাশে একজোড়া কয়েল ঘুরিয়ে দেওয়া ছিল। এর ফলে প্রথম টরয়েডাল ক্লোজড - কোর ট্রান্সফরমার তৈরি হয়েছিল। তবে ফ্যারাডে তাঁর আবিষ্কৃত ট্রান্সফরমারে শুধুমাত্র আলাদা আলাদা কারেন্ট স্পন্দন প্রয়োগ করেন।
একটা টরয়েডাল ট্রান্সফরমার হল এমন একটা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার যেটি ডোনাট আকৃতির কোরের ওপর নির্মিত।
ডোনাড আকৃতির কোর - ( চৌম্বকীয় পদার্থের একটা অবিচ্ছিন্ন লুপ দিয়ে গঠিত ) - চৌম্বকীয় প্রবাহকে সঞ্চালন করে, যা শক্তি স্থানান্তরে সহায়ক হয়।
বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডে তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রের দ্বারা সারা বিশ্বের যে উপকার করেন তা অমূল্য। পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর আবিষ্কারের অবদান অপরিসীম। তাঁর তখনের ওই সকল আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে আজও অনেক আবিষ্কার হয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের সকল আবিষ্কার অমর ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
এ ছাড়াও ফ্যারাডে ইলেকট্রোলাইসিসের সূত্রগুলো প্রস্তাব করেন। এভাবে উনি তড়িৎ রসায়নের ক্ষেত্রকে উন্নত করেন।
ফ্যারাডে দেখিয়েছিলেন - বেশ কয়েকটি পদার্থ চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে দূরে সরে চলে যায়। এটি " ডায়ম্যাগনেটিজম " নামে পরিচিত।
ফ্যারাডে বেনজিন আবিষ্কার করেন। এছাড়াও উনি আরো কিছু হাইড্রোকার্বন আবিষ্কার করেন। তিনি রসায়ন বিজ্ঞানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই তিনি রসায়ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।
তাঁর বিশ্ব পরিচিতির কারণগুলি আলাদা করে নিচে দেওয়া হল -
১। ফ্যারাডের আবেশ সূত্র।
২। তড়িৎ-রসায়ন।
৩। ফ্যারাডের প্রভাব।
৪। ফ্যারাডের খাঁচা।
৫। ফ্যারাডের ধ্রুবক।
৬। ফ্যারাডে কাপ।
৭। ফ্যারাডে তড়িৎ বিশ্লেষণ আইন।
৮। ফ্যারাডে প্যারাডক্স।
৯। ফ্যারাডে চক্রকার।
১০। ফ্যারাডে-দক্ষতা প্রভাব।
১১। ফ্যারাডে তড়িৎ।
১২। ফ্যারাডে চক।
১৩। বল রেখা।
বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডে যে সমস্ত পুরস্কার পান সেগুলি হল -
১। রয়াল মেডেল ( ১৮৩৫, ১৮৪৬ )
২। কপলি পদক ( ১৮৩২, ১৮৩৮ )
৩। রামফোর্ড মেডেল ( ১৮৪৬ )
৪। আলবার্ট মেডেল ( ১৮৬৬ )
বিজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডেকে তড়িতের জনক বলা হয়।
ফ্যারাডের দুটি সূত্র হল -
১। প্রথম সূত্র অনুসারে বলা হয় - তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় তড়িৎ দ্বারে উৎপন্ন বা সঞ্চিত পদার্থের পরিমাণ তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মোট তড়িৎ বা চার্জের পরিমাণের সমানুপাতিক।
২। দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে বলা হয় - একটি বদ্ধ তার কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান সময়-এর সাথে কুণ্ডলীতে অতিক্রান্ত চৌম্বক ফ্লাক্স পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।
এক ফ্যারাডে হল বৈদ্যুতিক ধারকত্বের একক। এর দ্বারা এক কুলম্ব চার্জকে এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যের মাধ্যমে সঞ্চয় করার ক্ষমতা বোঝায়। এই এককটি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মাইকেল ফ্যারাডের নামে নামকরণ করা হয়। এটা ফ্যারাডেজ কনস্ট্যান্ট ( প্রায় ৯৬৪৮৫ কুলম্ব ) থেকে ভিন্ন - এটা এক মোল ইলেকট্রন দ্বারা স্থানান্তরিত চার্জকে বোঝায়।
যেহেতু এক ফ্যারাডে একটি অনেক বড় একক, তাই সাধারণত এর সাথে মিলিফ্যারাড, মাইক্রোফ্যারাড, পিকোফ্যারাড - এর মতো ছোট উপগুণিতক ব্যবহার করা হয়।
ফ্যারাডের আরো অনেক কাজ আমরা নিচে আলোচনা করলাম।
ফ্যারাডে একজন অত্যন্ত নীতিবান বিজ্ঞানী ছিলেন। ফ্যারাডে তাঁর জীবনের অনেকটা সময় জনসেবায় ব্যয় করেন। অনেকটা শক্তি ও তিনি এই কাজে ব্যয় করেছিলেন। তিনি অতি মহান এক জন মানুষ ছিলেন। ফ্যারাডে বাতিঘরগুলিকে সর্বোত্তম করে তোলেন। তিনি জাহাজগুলিকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য অনেক কাজ করেছিলেন। ফ্যারাডে চার্লস লায়েলের সঙ্গে কাউন্টি ডারহামের হাসওয়েলে একটি কয়লা খনি বিস্ফোরণের উপর একটি ফরেনসিক তদন্ত তৈরি করেছিলেন। তখন সেই তদন্ত প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত দেয় যে কয়লার ধুলো বিস্ফোরণের তীব্রতায় অবদান রাখে এবং বায়ুচলাচল কীভাবে এটি প্রতিরোধ করতে পারে তা তিনি প্রদর্শন করেছিল। মাইকেল ফ্যারাডে সোয়ানসিতে শিল্প দূষণ, রয়েল মিন্টে বায়ু দূষণ নিয়েও তদন্ত করেছিলেন এবং গ্রেট স্টিঙ্কের সময় টেমস নদীর খারাপ অবস্থা সম্পর্কে " দ্য টাইমসকে " তিনি লিখেছিলেন । ফ্যারাডে নীতিগত সংকোচনের কথা উল্লেখ করে ক্রিমিয়ান যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর বক্তৃতা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, মানুষ নিজের জন্য পরীক্ষাগুলি পুনরায় তৈরি করতে পছন্দ করেছিলেন, আবিষ্কারটি আরও ভালভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং একজন প্রকাশককে বলেছিলেন, "আমি সর্বদা অর্থের চেয়ে বিজ্ঞানকে বেশি ভালোবাসি এবং যেহেতু আমার পেশা প্রায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, তাই আমি ধনী হতে পারি না।"
রানী ভিক্টোরিয়া তাঁকে হ্যাম্পটন কোর্টে একটি বাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আজীবন নিষ্ঠার প্রতিদান দেন। এমনকি তাঁকে নাইটহুডের সম্মানও প্রদান করেন। ফ্যারাডে কৃতজ্ঞতার সাথে কুটিরটি গ্রহণ করেন কিন্তু নাইটহুড প্রত্যাখ্যান করেন।
ফ্যারাডেকে মৃত্যুর পরে লন্ডনের হাইগেট কবরস্থানে সমাহিত করা হয় , যা তার স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ভৌত বাস্তবতার একটি নতুন ধারণা রেখে যায়।
নাম
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
মোবাইল ফোন নম্বর/হোয়াটস অ্যাপ নম্বর
৯৮৯১৫৫৭৮১১
ঠিকানা
A - 0608
A wing
Downtown
Casa Aurelia
Palava City
Phase 2
Thane - 421204
Maharashtra
India
Comments
Post a Comment