আশীষ কুমার বিশ্বাস
গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।
তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা ।
গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ ।
যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ;
সে-ই জাতিস্মর ।
মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত
রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" ।
গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ ।
হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে ।
মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি ।
বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস?
ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে ।
এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।
কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !
এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো ।
মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা
বানিয়ে বানিয়ে বলছে?
সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।
সে বাড়িতে কিছু খাবে না, শুধু কাঁন্না কাটি করে যে , সে ছোট মার বাড়ি যাবে !
তাকে ছোট মার বাড়িতে দিয়াসো, এ বাড়িতে সে থাকবে না ।
অনেক বোঝানো হলো, ভয় দেখানো হলো ।
কিন্তু সে নাছোড়বান্দা, সে যাবেই ।
পাড়ার বয়স্ক কয়েক জন মিলে , তাকে নিয়ে যাওয়া হলো বিনয় পল্লী । এ পথ , ও পথ করে
বাড়ির কাছে আসতেই, সে ছুটে ঘরে ঢুকে গেলো ।
খাটের নিচে বসেছিল ভুলু, তার পাশেই ছিল বেতের মোড়া । সে সেখানে বসেই ভুলু কে আদর করতে লাগল।
এমতবস্থায় ঘরে ঢুকলো তাঁর ছোট মা, মন মরা
আলুথালু কেশ ।
বাবু তাঁকে জড়িয়ে ধরলো ।
উনি এবার আমাদের প্রশ্ন করতে লাগলেন,
ব্যাপার টা বুঝে উঠতে পারছেন না ।
আমরা এবার পুরো ঘটনা ঘুছিয়ে বলতে লাগলাম।
ততক্ষণে পাড়ার অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
তিনি কাঁন্নায় ভেঙে পড়লেন ।
সত্যি সত্যিই বছর পাঁচেক আগে, তাঁর এক ছেলে
অজানা জ্বরে মারা যায় । অনেক চেষ্টা করেও
তাঁকে বাঁচাতে পারিনি।
বাবু কিন্তু একা একাই ঘরের মধ্যে এইটা ঐটা
ধরছে, কিছু জিনিস খুঁজেই চলেছে!
ধীর পায়ে ঘরে ঢুকলো খুকু । দেখেই বাবু, দিদি-দিদি বলে ডাকতে লাগলো ।
এবার চলে আসি, সেই পাড়ার কথায় ।
যেখানে জন্ম হয়েছিলো বাবুর । পাড়ার নাম
পার্থপুর , সোদপুর নাটাগড়ে ।
ছেলে কে নিয়ে কি করা যায় ?
নিয়ে যাওয়া হলো " মহামায়া কালী বাড়ি "
এক তান্ত্রিক এর কাছে ।
তান্ত্রিক বল্লো , "ওঁর জাত মেরে দিতে হবে,
মুচির বাড়ি তিন দিন খাওয়া দাওয়া করাতে
হবে । "
সে সব ও করা হলো ।
একদিন তাঁর ছোট মা, এবং দিদি বাড়িতে এসে
উপস্থিত, সঙ্গে বাবুর জন্য প্যান্ট -শার্ট ।
বাবু নতুন প্যান্ট-শার্ট পেয়ে খুব খুশি, জামা টা
দেখেই বললো, দিদির এ রঙের একটা ফ্রক ছিল না!
দিদি ও ছোট মা , আবার কাঁন্না শুরু করে দিলো ।
সেই পুরনো দিনগুলি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
এই সব ঘটনা কিন্তু একদিন ভুলে যেতে হোল,
বাবু কে পাঠিয়ে দেওয়া হলো তাঁর জেঠুর বাড়িতে,
বর্ধমান মশাক গ্রামে ।
# আশীষ কুমার বিশ্বাস #
Comments
Post a Comment