"আমি প্রাই..মারি মাস্টার"
শিউলী ব্যানার্জী (মুখার্জী)
অনেকে নাক উঁচু করে প্রশ্ন করেন কিসে চাকরি করেন স্কুলে ? হাইস্কুলে ? উত্তরে বলি না প্রাইমারি স্কুলে, মুখটা কেমন পানসে করে বলে ও ....প্রাই.....মারি স্কুলে । তখন আরো গর্বের সঙ্গে বলি হ্যাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আজকাল তো সরকারি বিদ্যালয় গুলো মিড ডে মিল ও... কি যেন ভাত খাওয়া ইস্কুলে পরিনত হয়েছে। তখন আরো গর্বের সঙ্গে বলি হ্যাঁ হয়েছে তাতে কি? পেটে ছোট ছোট ছাত্র ছাত্রীদের খিদের জ্বালা থাকবে আর তারা বিদ্যার্জন করবে সেটা কি ভাবে হয় মশাই । বিদেশের স্কুল গুলিতেও এই একই ব্যবস্থা চালু আছে তবে কেউ স্পেশাল কিছু খেতে চাইলে কুপন কেটে নিতে হয় এই আর কি। আপনার ধারনা আছে বিবেকানন্দকে চেনেন ও পুরো নাম বলি স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী জী হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন উনিই বহু বছর আগে প্রথম এই ধারনা এনেছিলেন। পেটে পড়লে তবেই তো পিঠে সইবে। আরে মশাই আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক আমাদের কোন কিছুতেই কষ্ট নেই। আমরা সব দায়িত্ব খুব যত্ন সহকারে নিতে পারি। আমরা জুতা সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবই পারি। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের কাছে গেলেই সব ভুলে যায়। জানেন স্কুলে ওরা স্যারদের অনেক সময় আপনি আজ্ঞে করতে পারে না। ও ....স্যার তুমি আজকে কি পড়াবে গো। তবে ওদের সরল মনে জটিলতার জায়গা নেই। ওরা মাটির তাল। কুমোর যেমন চাকার পর মাটির তালকে রেখে হাঁড়ি, কলসি , ফুলদানির রূপ দেয় সেই রকম আমরা প্রথমিক মানে প্রাইমারি ,তো সেই মাটির তালকে নিজেদের মনের সুন্দর ভাবনা দিয়ে নিজেদের মনের মতো আকার দি। পরে যখন পাঁচ বছর থেকে দশ বছর হয় হাইস্কুলে যায় তখন তুমি থেকে ওরা ঠিক আপনি বলতে শিখে যায় । কতবার ওদের জুতোর ফিতেও বেঁধে দি মশাই। আবার কেউ কেউ কোন কারনে কান্না করলে তাকে নানা রকম মজার কথা গল্প নাচ করে ভুলিয়ে অ, আ, A, B ,C,D ও সুন্দর শিখিয়ে নি। কারো কারো জলের বোতলের ঢাকনাটাও খুলেদি। অনেক সময় রান্না করা মিড ডে মিলের খাবারও নিজেরা পরিবেশন করে সন্তান সম ছাত্র ছাত্রীদের খাওয়ায়। ওরা জানে ঘরের বাবা মা কে ছেড়ে স্কুলে তারা নিশ্চিন্তে স্যার ও দিদিমনিদের কাছে আছে। ওরা কিছু হলেই স্যারদের গায়ে ঘেষে বসে । যেন একটা পরিচিত আদর ও ভালোবাসার গন্ধ পায়। বোকা দিলে মুখ ভার করে আবার কিছু পরেই খিলখিল করে হেসে ওঠে । হ্যাঁ আমরা প্রথমিক শিক্ষক । আমরা গড়ি ,জীবন গড়ি একটা ছোট্ট শিশুকে ভবিষ্যতরে নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলি । আমরা এমন যারা শতশত সন্তানসম ছাত্র ছাত্রীদের উন্নতিতে আনন্দিত হই। হ্যাঁ আমি গর্বিত আমি প্রাথমিক শিক্ষক, গর্বের সঙ্গে বলি প্রাইমারি টিচার কারন ঈশ্বর আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন যাতে আমি ছোট্ট ছোট্ট ফুলের মতো ছাত্র ছাত্রীদের ফুলের বাগানে একজন দায়িত্ববান ,কর্তব্যনিষ্ঠ, মমতা ও ভালবাসায় ভরা একজন ফুলবাগানের মালী হয়ে উঠতে পারি ওদের সাথে থাকতে পারি হাসতে পারি , খেলতে পারি ওদের কষ্টে কাঁদতেও পারি আবার শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদান করতে পারি।। তাই আমি শিক্ষক অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষক ।।
=================
নাম: শিক্ষিকা শিউলী ব্যানার্জী (মুখার্জী )
গ্রাম +পোস্ট: নিত্যানন্দপুর
জেলা: বাঁকুড়া
Comments
Post a Comment