সুপর্ণা বিশ্বাস
ভূমিকা
_______
শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড, জাতির ভিত্তি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার রূপ, ধরণ ও দর্শন অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। এক সময় যে শিক্ষা ছিল গুরু-শিষ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আজ তা হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিনির্ভর, বিশ্বমুখী ও কর্মমুখী। এই প্রবন্ধে আমরা তুলনামূলকভাবে আলোচনা করব শিক্ষার সেকাল এবং একালের পার্থক্য ও প্রভাব নিয়ে।
সেকালের শিক্ষা
_______________
সেকালের শিক্ষা ছিল অনেকাংশেই অনানুষ্ঠানিক ও মুখস্থনির্ভর। গ্রামের পাঠশালা বা মক্তব ছিল শিক্ষা গ্রহণের প্রধান মাধ্যম। শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রে ছিলেন গুরু বা মৌলভী, যাঁর ওপর নির্ভর করত শিষ্যদের জ্ঞানার্জন। পাঠ্যসূচি ছিল সীমিত—আক্ষরিক অর্থে 'পুঁথি-পাঠ', গণিতের প্রাথমিক ধারণা, ধর্মীয় অনুশাসন এবং নৈতিকতা ছিল মূল বিষয়বস্তু।
শিক্ষার উদ্দেশ্য তখন ছিল 'ভাল মানুষ' হওয়া, সমাজের নিয়ম মানা ও ধর্মীয় আদর্শে চলা। প্রযুক্তির অভাব, বইয়ের দুষ্প্রাপ্যতা এবং আর্থসামাজিক সীমাবদ্ধতা অনেককেই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রেখেছিল।
একালের শিক্ষা
______________
একালের শিক্ষা অনেক বেশি প্রাতিষ্ঠানিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং তথ্যসমৃদ্ধ। আজকের শিক্ষার্থী এক ক্লিকেই বিশ্বজুড়ে জ্ঞান-ভাণ্ডারে প্রবেশ করতে পারে। বই, ইন্টারনেট, ভিডিও লেকচার, অনলাইন কোর্স, স্মার্ট ক্লাসরুম—সব মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষা অনেক বেশি গতিশীল ও ব্যবহারিক।
বর্তমান পাঠ্যক্রমে গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা ছাড়াও কোডিং, ডেটা সায়েন্স, মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবেশচেতনা ও জীবিকাভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য এখন শুধু জ্ঞানার্জন নয়, বরং দক্ষতা অর্জন, সমস্যা সমাধান ও চাকরিযোগ্যতা বৃদ্ধিও এর অন্তর্ভুক্ত।
সেকাল বনাম একাল: পার্থক্য ও প্রভাব
__________________________________
পাঠ্যক্রম— ধর্মীয়—মৌলিক বহুমুখী ও জীবনমুখী
পাঠদানের মাধ্যম—মৌখিক—পুঁথি ডিজিটাল, মাল্টিমিডিয়া
শিক্ষকের ভূমিকা—একমুখী জ্ঞানদাতা সহায়ক—গাইড
শিক্ষার্থীর ভূমিকা—শ্রবণকারী সক্রিয়—অংশগ্রহণকারী
প্রযুক্তির ব্যবহার—অনুপস্থিত—ব্যাপক ও অপরিহার্য
সেকালের শিক্ষা জোর দিত নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনের ওপর, আর একালের শিক্ষা জোর দিচ্ছে দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতার ওপর। তবে বলা যায়, চরিত্র গঠন এবং মানবিক মূল্যবোধ আজও সমানভাবে প্রয়োজনীয়।
উপসংহার
__________
সেকাল এবং একালের শিক্ষার ধরণ আলাদা হলেও উদ্দেশ্য এক—মানবসম্পদ উন্নয়ন। তবে যান্ত্রিক এই যুগে আমরা যেন শিক্ষাকে কেবল চাকরির মাধ্যম হিসেবে না দেখি। নৈতিকতা, সহানুভূতি ও মানবিকতা যেন শিক্ষা থেকে বাদ না পড়ে।
সময় বদলেছে, শিক্ষাও বদলেছে। কিন্তু শিক্ষার চিরন্তন সত্য একটাই—এটি মানুষকে মানুষ করে তোলে।
_____________________
সুপর্ণা বিশ্বাস
বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
Comments
Post a Comment