অভিজিৎ দত্ত
বর্তমানে বিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্হা এক ঘোরতর সংকটের সম্মুখীন। শুধুমাত্র পাশ-ফেল দিয়ে এর বিচার করলে হবে না।আমরা জানি বিদ্যালয় সমাজের একটি ক্ষুদ্র প্রতিরূপ (school is a simplified, purified a small society)। পিতা-মাতা বা অভিভাবকরা তাদের সন্তান-সন্ততিদের কী জন্য বিদ্যালয়ে পাঠায়? উত্তরটা হবে একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য (সত্যিই কী তাই?)।তাই বিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হবে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ। এই পথে অন্তরায় হচ্ছে শিক্ষক মহাশয়দের পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক কাজকর্ম করা। সেটা মিড-ডে মিল হোক কিংবা ঐক্যশ্রী, কন্যাশ্রী কিংবা বস্ত্র বিতরণ, সাইকেল বিতরণ বা ব্যাগ বিতরণ ইত্যাদি।
সরকার হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। তাই জনপ্রতিনিধিদের কাজ হচ্ছে জনগণের দাবীগুলিকে বাস্তবায়িত করা। বিদ্যালয়ে পাশ-ফেল বা শাসন থাকুক বেশীরভাগ জনগণই তা চায় কিন্ত বাস্তবে তা রূপায়িত হয় না কেন? বেশীরভাগ জনগণই চায় বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান ব্যাতিরকে অন্য কোন কাজের চাপ যেন শিক্ষকদের উপর না থাকে। বাস্তবে কী তা হচ্ছে? আজ যে প্রাইভেট স্কুলগুলোর রমরমা তার জন্য দায়ী কারা? সাধারণ মানুষের পক্ষে কী বেশী, বেশী টাকা খরচ করে সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলে পড়ানো সম্ভব? সরকারী স্কুলগুলোতে কী যোগ্য শিক্ষক নেই? আগে সাধারণ মানুষের ভরসার স্হল ছিল সরকারি স্কুলগুলো। বর্তমানে তা নেই কেন? শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সচেতনতার সঙ্গে, সঙ্গে সরকারী সদিচ্ছা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া বিদ্যালয়গুলির শ্রী বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
আসল তফাৎ হচ্ছে মানসিকতার ও সদিচ্ছার আমরা যদি দেশকে প্রকৃতই ভালোবাসি, দেশের সর্বাঙ্গিন উন্নতি চাই তাহলে সবচেয়ে বেশী জোর দেয়া দরকার শিক্ষায়। একমাত্র প্রকৃত শিক্ষায় পারে দেশ বা জাতির উন্নতি ঘটাতে।এরজন্য দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক সিলেবাস ও বাস্তবোচিত পাঠ্যক্রম চালু করা। গাছের গোড়া কেটে আগায় জল দিলে যেমন গাছের কোনো লাভ হয় না সেইরূপ গোড়া থেকে শিক্ষার্থীদের ভিত মজবুত না করলে একটি উন্নত ভারতবর্ষের স্বপ্ন কী সত্যি হবে? প্রাথমিকে যে জিনিসগুলো আমরা শিক্ষার্থীদের শিখাতে চাইছি, সেগুলো যদি তারা অর্জন করতে না পারে ,তাহলে তাদের পরের ক্লাসে প্রমোশন দেয়া কী উচিত না যুক্তি সম্মত? শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি নানারকম সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী আছে(যেমন সংগীত, নৃত্য, ছবি আঁকা, হাতের কাজ, খেলাধূলা ইত্যাদি)।এগুলোর বিকাশে সবরকম সরকারী সহায়তা নেই কেন?আজকের ছাত্র, আগামীদিনের নাগরিক। তাই যদি সত্যি হয়,তাহলে সেই শিক্ষার্থীদের ভালো করে তৈরি করতে না পারলে কাদের হিত আর কাদের অহিত? প্রশ্ন নানাভাবে মানুষের মনে ঘোরাফেরা করছে? আমরা কী এব্যাপারে সচেতন?যে বিপ্লবী বা স্বাধীনতাসংগ্রামীদের অবদানে দেশ স্বাধীন হয়েছে-তাদের সম্বন্ধে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে জানতে পারবে না কেন?শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম কীভাবে জাগবে?আমরা ভাবছি কী?সামাজিক অবক্ষয় বা মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে শিক্ষার্থীদের কীভাবে উওরণ করানো যাবে-এ ব্যাপারে উপযুক্ত পাঠ্যক্রম আছে কী? শুধুমাত্র পথ নিরাপত্তা,পরিবেশ দূষণ বা আত্মরক্ষার শিক্ষায় সব নয়।দরকার শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ। উপযুক্ত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা।তাই দরকার নতুন করে ভাবনা চিন্তার। ভালো করে শিক্ষার্থীদের ভিত গড়ার।তবেই শিক্ষাব্যবস্হা সফল হয়েছে বলা যাবে।এরজন্য শিক্ষাব্যবস্হার সঙ্গে যুক্ত সকলকে সচেষ্ট ও আন্তরিক হতে হবে।
যে শিক্ষাব্যবস্হায় শিক্ষক মহাশয় বা অভিভাবকদের গুরুত্ব দেয়া হয় না -সেই শিক্ষাব্যবস্হা কাদের ভালোর জন্য, এই প্রশ্ন উঠবেই। তাই সংকীর্ণ রাজনীতি ছেড়ে, দেশ ও দশের উন্নয়নে ,প্রকৃত রাস্তা যতক্ষণ না আমরা বেছে নিচ্ছি, ততদিন দেশের উন্নতির আশা সুদূরপরাহত। শুধু শিক্ষক মহাশয়দের বলির পাঁঠা করে, দেশের বা দশের উন্নতি কী সম্ভব? তাই দরকার বাস্তবোচিত পথে চলার, সঠিক নীতি বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার। নাহলে বিদ্যালয়গুলিতে যেভাবে শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে পড়ছে তাতে আগামীদিন কী আমরা একটা ভালো সমাজ উপহার পাবো?কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দিয়েই শেষ করি -
'যারে তুমি নীচে ফেলো টানিবে যে নীচে
পশ্চাৎে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাৎে টা্নিছে।'
ABHIJIT DUTTA, AT-MAHAJANPATTI, P.O.JIAGANJ,DIST.MURSHIDABAD, PIN.742123, WESTBENGAL,
Comments
Post a Comment