Tribute on the birth centenary of Salil Choudhuri
শতবর্ষ পেরিয়ে সলিল চৌধুরী : একটু ফিরে দেখা
মণীন্দ্রনাথ বাগ
সবিতা যত্নে পেতেছেন আসন ---
কবিতার জন্য সযত্নে লালিত নিবন্ধিত কবির প্রেম।
এমন কোনো অনুভূতি আসে যদি কখনো
যে আমার বৌ এরই মতো,
নাম তার সবিতা।
অনুভব করা যায়না কখনো,
অথচ সে সর্বক্ষণ ছেয়ে থাকে বুকে
শত সুখে দুখে,
নাম তার কবিতা।
কবিতাকে তাঁর সহধর্মিনী রূপে কল্পনা করার সাহস ও সহানুভূতি তাঁরই থাকে, যিনি কবিতার গভীরে যেতে পারেন। আসলে আমরা প্রত্যেকেই এক একজন কবিতা, রূপে গন্ধে হয়তো একটু আধটু আলাদা....তবে উদ্দেশ্য সেই কবিতা সরানের উঠোন পেরিয়ে উদ্যানে আসা আবার উদ্যান পেরিয়ে আলোকিত প্রদেশে স্বচ্ছন্দে পৌঁছে যাওয়া। শব্দের সাথে শব্দের অন্বয় ঘটিয়ে অনাবিল আনন্দ প্রকাশের, এক সূক্ষ্ম প্রকরণকে যদি কবিতা বলি,তাহলে এমন কিছু ভুল বলা হয় না।
সলিল চৌধুরী মুখ্যত: সঙ্গীতজ্ঞ, অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন সুরস্রষ্টা। সংগীত পরিচালক।তারও অন্তরালে তাঁর কবি
সত্ত্বা, কবিতার ভুবন সুললিত,যেখানে গানের ভিতর দিয়ে যে শ্রোতার দলকে সম্ভাষণ করেন, কবিতায় তিনি আরো বড়ো এক দলকে সম্ভাষণ করেন এবং তা হল তাঁর সামনে থাকা সাধারণ মানুষজন। তাঁর দ্বিবিধ সৃষ্টির বুকে কান পাতলে, আবেগমথিত সুরঝংকার অনুভূত হয়।তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত কবি অবশ্যই। এতোদিন তাঁর এই অনন্য প্রতিভা অধরাই ছিল।অনাস্বদিত ছিলো। আলোচনা পর্যলোচনার আলোকে তেমন সমূহ অভিনন্দন বর্ষিত হয়নি।
শতবর্ষে এসে মনে হয় ,তাঁকে হন্যে হয়ে আমরা খুুঁজছি। সাহিত্য সাধনার অঙ্গনে পুরোহিতেরা, অদেখা জ্যোর্তিরালোকেচর সন্ধান পেয়েছেন বলেই মনে হয়েছে। তাই সলিল চৌধুরী কে নিয়ে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সংস্কৃতির নব্য কোনো অভিমুখের দ্বারোদ্ঘাটন হতে চলেছে বলেই আমার বিশ্বাস।
সলিল চৌধুরীর কবিতায় বিন্যস্ত মানব মনের অন্যতম নিগূঢ় আবেগ--প্রেম,যদিও গড়পড়তা সংজ্ঞার বিপরীতে। অতলান্ত সলিলে পাওয়া ভিন্ন অর্থের অচেনা আবেগ সামনে আসে যখন তিনি উচ্চারণ করেন কবিতায় ::
"যখন তোমায় বুকেতে পাই,তখন মনে হয়
গঙ্গা বুকে নিয়ে যেন আমিই হিমালয়...."
মোহময় রামধনু রঙের স্নিগ্ধতার অভিসার। বাংলা কাব্য সাহিত্যের ক্যানভাসে যেন ধরা দিয়েছে বিশাল ব্যপ্তির প্রতিমা। কবির অন্তকরণের বিপুল প্রত্যাশা।অনবদ্য সৃষ্টি নি:সন্দেহে। এখানেই তিনি সাধনায় রত নিরন্তর বিনির্মাণে অথচ প্রাপ্তির চূড়ান্ত বিন্দুর সামনা সামনি দাঁড়িয়ে, প্রত্যাখান,তাঁর স্বভাবসুন্দর বিনম্রতা।
তাইতো," লক্ষ্য ' কবিতায় তাঁকে বলতে দেখি,
অর্থ আমার পাথেয়
অর্থ আমার পথ নয়
লক্ষ্য সাধন করার উপায়
অর্থ আমার লক্ষ্য নয়।
তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে,তাঁর জীবনের লক্ষ্য কী ছিল! উত্তরের তাগিদে,এটুকু বলাই শ্রেয় যে, "যে মাটির বুকে চলতে শিখলাম, বড়ো হলাম, দাপিয়ে বেড়ালাম, বুঝতে শিখলাম ক্রমে ক্রমে, সে মাটি যেনো উন্মত্ত হানাদারদের অধিকারের।ছিনিয়ে নিতে হবে অবিলম্বে, এবং সেটাই অধিকারের পাসপোর্ট। জ্বেলে যেতে চাই মুক্তির মশাল ঘরে ঘরে।" ......
আর সেজন্য তিনি জীবনভর সৃষ্টিকরেছেন গান।
সুর দিয়েছেন শিরদাঁড়া টান টান করে।বিমূর্ত আবেগকে কোনো রকম গুরুত্ব না দিয়ে।কালজয়ী হয়েছে সেসব সৃষ্টি।সবটাই এখন ইতিহাস।প্রসঙ্গত: বলে রাখি,সব কবিতায়, তিনি জেনে বুঝেই সুরারোপ করার উপযোগিতা খুঁজে পাননি।এখানেই তিনি কবিতার কাছে বিনয়াবনত। কবিতা সবিতার প্রতি তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ সাধক। শ্রদ্ধায় মাথানত করেছেন কবিতার সৌরভের কাছে।আবিলতা ব্যতিরেকে কবিতাকে কখনও দূর থেকে কখনও তার পায়ের কাছে বসে বেসেছেন ভালো। অন্তর আত্মার সাথে কথা বিনিময় হয়েছে বহুবার।এবং সেখানেই কবির সার্থকতা। যেমন ধরাযাক "মহাকাব্যের দলিল" কবিতাকে....
আমাদের স্বপ্ন দেখা কত যুগ আগে শুরু হয়েছিল
কত উত্তরাধিকার পার হয়ে হয়ে
কত না অগ্রগতি কত ক্ষয়ক্ষতি শেষে
আজকে এখানে বসে থমকে দাঁড়িয়ে চেয়ে দেখি
ষড়যন্ত্র বিদ্যুতের চমকানি অন্ধকার রাতে
আজও হেনে যায়--আজও মন কেঁদে যায়
অপূর্ণ একটি আশা--আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে,
কত লক্ষ মুখ বেয়ে কত অশ্রু ঝরে গেছে
কত নদী রক্তে লাল হয়ে গেছে
কত ঘাম কত শ্রম অঙ্গবঙ্গ কলিঙ্গের সমুদ্রের তীরে,
আজও যারা কাজ করে তারা কী সম্পদ মণিমুক্ত রেখে গেছেন ,কে তার হিসাব রাখে! সম্পদের পাহাড়ের
আড়াল তৈরি হয়ে যুগ থেকে যুগান্তরে
বণিকের রাজদন্ড হাত থেকে হস্তান্তরে
হওয়ার পিছনে সেই শ্রমজীবী মানুষের হাত!
এমন নিপাট শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে তাঁর কবিতা "মহাকাব্যের দলিল" গড়গড় করে এগিয়ে চলেছে।যেতে যেতে সারাটা কবিতার অঙ্গে যেন একটি প্রার্থনা সবিশেষে বর্ণিত হয়েছে--" আমার সন্তান যেন,যেনতেন প্রকারেণ বেঁচে বর্তে থাকে।" পাঠককে,সম্ভব হলে,পাঠ করতে বলি,কবির অনন্য সৃষ্টি "আমি খালিদের মা বলছি"--একটি দীর্ঘ কবিতা বটে। তবু প্রতিটি ছত্রে মায়ের কান্না যেন আর থামতেই চায় না।সব শেষে এসে কবি মায়ের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন
"আমি জানি খালিদের কথা সত্যি হবে
আমার ছেলেমেয়েরা কখনও হার মানবে না
ঐ ধ্বংসস্তুূপের মধ্যে থেকেই
আমার রবীন্দ্রনাথ নজরুল আবার বড়ো হবে
আবার আমার বাংলাদেশ
নতুন করে গড়ে উঠবে।।
কী নিদারুণ মর্ম ব্যথা কবি চিত্রিত করেছেন। অনন্য সৃষ্টি।
পাঠ করে দেখার অনুরোধ রইলো কবির কলমে আঁকা কবিতাগুলি :: আমি বলছি আমি ; জবানবন্দি; মানুষ ;
একটি কবিতার জন্ম ; কোথায় সে গান! ; নির্মাল্য (নির্মলেন্দু চৌধুরীর অকাল প্রয়াণের ) ; আমি কবি নই।
ও মশায় শুনছেন? ; মৃত্যু পুনর্জীবন মৃত্যু ; শপথ ; যখন অসহ্য হয় ; আমি ; 29শে নভেম্বর1982 (প্রমোদ দাশগুপ্তের স্মরণে) এসব ব্যতীত বহুবিধ ছড়া ও ছোটোখাটো কবিতার "কবিতা সংগ্রহ "।
তবুও পড়তে হয় তাঁর অভিমানের বিগলিত তপস্বী মনের ক্রন্দন-----
"আমাকে মার্জনা কোরো,
আমি কোনো কবি নই তোমাদের দলে।
আমার উদ্দেশ্য হোলো,উদ্দেশ্য সাধন......
ছলে কিংবা বলে কিংবা
যে কোনো কৌশলে।"
নিজেকে কবি বলতে তিনি নারাজ,অনীহার অচিন্তনীয় বাঙ্ময় প্রকাশ।। সংস্কৃতির অঙ্গনে,সে যুগেও যে অসম-প্রতিযোগিতা ছিল,তা অস্বীকার করি না। আজও সেই ধারার প্রত্যক্ষ অবক্ষয় তীক্ষ্ণভাবে নগ্নবেশে বিরাজমান।হীনমন্যতায় আজও বুদ্ধিজীবীরা ভোগেন বৈকি। যাক সে সব বিতর্কে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।আমার উদ্দেশ্য,ভিন্ন গভীরতায় যাওয়া....নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সেই শোভা অবলোকন করা যেখানে কবি একবুক জলে দাঁড়িয়ে কেমনভাবে "সূর্য প্রণাম সারছেন"। তন্ময় হয়ে দেখেছি তাঁর তর্পন প্রকরণ।কবিতা নির্মানের ব্যাকরণ তাঁর পায়ে বেড়ি বাঁধতে পারেনি। কখনো ধানজমির আল ধরে হেঁটেছেন অত্যন্ত বিশ্বস্ততাকে সাথে নিয়ে। শহুরে পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে,মেঠোপথে স্বচ্ছন্দে
হেঁটে অগণিত সরলমনা মানুষের হাটে এসে পৌঁছেছেন। বঞ্চনার গভীরতাকে স্বচক্ষে দেখেছেন,মনোব্যথায় ক্লান্ত হয়েছেন।বিদ্ধস্ত হৃদয় নিয়ে গান বেঁধেছেন, এমনকি শুনিয়েছেন জনসাধারণকে সেই সংগে। সার্বভৌম স্বাধীনতার উত্তোরণের পথে সামাজিক-রাজনৈতিক যেকোনো টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে,সলিল চৌধুরীর বিদগ্ধ গানগুলি প্রতিবাদমুখর মানুষজনকে জুগিয়েছে ভাষা।তাঁর আগুণঝরানো গনসংগীতের সুর-ভাষ্যে, মেদিনী কেঁপেছে বারংবার।
"কী শোনাবো, কাকে শোনাবো" তার প্রেক্ষিত রচনায়,তিনি ছিলেন একান্ত আত্মগত।নিয়মনিষ্ঠতায় ও একাগ্রতায় ছিলেন স্থিরসংকল্প। অসাধারণ প্রতিভাবান, সুরস্রষ্টা হিসেবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। এ সত্বেও,সঙ্গীতের সীমাহীন প্রান্তরের মাঝে নিষ্ঠাভরে এমন কবিতা মহলগড়ে গেছেন বাস্তবিকই তা অতুলনীয় ।
গান বাঁধার এক কারিগরের হাতে কবিতা যদি স্বরূপিত হয়,কাব্যসাহিত্যের অঙ্গনে যদি তাঁকে 'স্বভাবকবি বলে " ব্যাঙ্গার্থের আদলে নিম্নবর্গের বলা হয়, সেক্ষেত্রে আমার স্থিরবিশ্বাস যে মহাসত্যের অপলাপ করা হচ্ছে বা হয়েছে বরং তাঁর কবিতার উৎসমুখ ঘিরে তথ্যনিষ্ঠ ভাবে আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিত রচনাই বরং স্বাস্থ্যকর।চুলচেরা বিশ্লেষণের,মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করতে বসলে মনেহবে হয়তো যতোটা মাননীয়কে নিয়ে ভাবা সম্ভব হয়েছে,তার থেকে সে পরিধি আরও অনেক বিস্তৃত।সাঁজতারার আলোকময়তার তিনি এক অসামান্য সুজন।
বিশ্লেষণের গবেষণাগারে,তাঁর নির্মান-ব্যুৎপত্তির অভিমুখকে সামনে আনা যেতে পারে,তাতে বাংলা কাব্যসাহিত্যের অঙ্গন যথাযোগ্য নতুন ধারায় বিস্ময়কে সজ্ঞাত করা যেতে পারে।জানা নেই, সমাজবিবর্তনের সাথে সাথে অবক্ষয়ের স্রোত কেমন ভাবে আমাদের ঐতিহ্যের অঙ্গনে প্লাবনসম এসে পড়ল!!
পাহাড়প্রমাণ ঐতিহ্যের চালচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কী এসব কিছুরই অগ্রাহ্য করার পাঠ নিতে চলেছি!!তাই যদি হয় , তাহলে আমাদের উত্তরাধিকারকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখতে অচিরেই ভুলে যাব।
===========
ঋণ স্বীকার :: 1) প্রিয়দর্শী চক্রবর্তীর সম্পাদনায় "সলিল চৌধুরী..কবিতা সংগ্রহ "
2) উইকিপিডিয়া
~~~~~~~~~~~~~~▪▪~~~~~~~~~~~~~~
Name : Manindranath Bag
Address: 163/4,Kotrung Dharmatala Lane
Po. Hindmotor Dt. Hooghly
West-Bengal...Pin 712233.
আমার ছেলেমেয়েরা কখনও হার মানবে না
ঐ ধ্বংসস্তুূপের মধ্যে থেকেই
আমার রবীন্দ্রনাথ নজরুল আবার বড়ো হবে
আবার আমার বাংলাদেশ
নতুন করে গড়ে উঠবে।।
কী নিদারুণ মর্ম ব্যথা কবি চিত্রিত করেছেন। অনন্য সৃষ্টি।
পাঠ করে দেখার অনুরোধ রইলো কবির কলমে আঁকা কবিতাগুলি :: আমি বলছি আমি ; জবানবন্দি; মানুষ ;
একটি কবিতার জন্ম ; কোথায় সে গান! ; নির্মাল্য (নির্মলেন্দু চৌধুরীর অকাল প্রয়াণের ) ; আমি কবি নই।
ও মশায় শুনছেন? ; মৃত্যু পুনর্জীবন মৃত্যু ; শপথ ; যখন অসহ্য হয় ; আমি ; 29শে নভেম্বর1982 (প্রমোদ দাশগুপ্তের স্মরণে) এসব ব্যতীত বহুবিধ ছড়া ও ছোটোখাটো কবিতার "কবিতা সংগ্রহ "।
তবুও পড়তে হয় তাঁর অভিমানের বিগলিত তপস্বী মনের ক্রন্দন-----
"আমাকে মার্জনা কোরো,
আমি কোনো কবি নই তোমাদের দলে।
আমার উদ্দেশ্য হোলো,উদ্দেশ্য সাধন......
ছলে কিংবা বলে কিংবা
যে কোনো কৌশলে।"
নিজেকে কবি বলতে তিনি নারাজ,অনীহার অচিন্তনীয় বাঙ্ময় প্রকাশ।। সংস্কৃতির অঙ্গনে,সে যুগেও যে অসম-প্রতিযোগিতা ছিল,তা অস্বীকার করি না। আজও সেই ধারার প্রত্যক্ষ অবক্ষয় তীক্ষ্ণভাবে নগ্নবেশে বিরাজমান।হীনমন্যতায় আজও বুদ্ধিজীবীরা ভোগেন বৈকি। যাক সে সব বিতর্কে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।আমার উদ্দেশ্য,ভিন্ন গভীরতায় যাওয়া....নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সেই শোভা অবলোকন করা যেখানে কবি একবুক জলে দাঁড়িয়ে কেমনভাবে "সূর্য প্রণাম সারছেন"। তন্ময় হয়ে দেখেছি তাঁর তর্পন প্রকরণ।কবিতা নির্মানের ব্যাকরণ তাঁর পায়ে বেড়ি বাঁধতে পারেনি। কখনো ধানজমির আল ধরে হেঁটেছেন অত্যন্ত বিশ্বস্ততাকে সাথে নিয়ে। শহুরে পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে,মেঠোপথে স্বচ্ছন্দে
হেঁটে অগণিত সরলমনা মানুষের হাটে এসে পৌঁছেছেন। বঞ্চনার গভীরতাকে স্বচক্ষে দেখেছেন,মনোব্যথায় ক্লান্ত হয়েছেন।বিদ্ধস্ত হৃদয় নিয়ে গান বেঁধেছেন, এমনকি শুনিয়েছেন জনসাধারণকে সেই সংগে। সার্বভৌম স্বাধীনতার উত্তোরণের পথে সামাজিক-রাজনৈতিক যেকোনো টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে,সলিল চৌধুরীর বিদগ্ধ গানগুলি প্রতিবাদমুখর মানুষজনকে জুগিয়েছে ভাষা।তাঁর আগুণঝরানো গনসংগীতের সুর-ভাষ্যে, মেদিনী কেঁপেছে বারংবার।
"কী শোনাবো, কাকে শোনাবো" তার প্রেক্ষিত রচনায়,তিনি ছিলেন একান্ত আত্মগত।নিয়মনিষ্ঠতায় ও একাগ্রতায় ছিলেন স্থিরসংকল্প। অসাধারণ প্রতিভাবান, সুরস্রষ্টা হিসেবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। এ সত্বেও,সঙ্গীতের সীমাহীন প্রান্তরের মাঝে নিষ্ঠাভরে এমন কবিতা মহলগড়ে গেছেন বাস্তবিকই তা অতুলনীয় ।
গান বাঁধার এক কারিগরের হাতে কবিতা যদি স্বরূপিত হয়,কাব্যসাহিত্যের অঙ্গনে যদি তাঁকে 'স্বভাবকবি বলে " ব্যাঙ্গার্থের আদলে নিম্নবর্গের বলা হয়, সেক্ষেত্রে আমার স্থিরবিশ্বাস যে মহাসত্যের অপলাপ করা হচ্ছে বা হয়েছে বরং তাঁর কবিতার উৎসমুখ ঘিরে তথ্যনিষ্ঠ ভাবে আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিত রচনাই বরং স্বাস্থ্যকর।চুলচেরা বিশ্লেষণের,মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করতে বসলে মনেহবে হয়তো যতোটা মাননীয়কে নিয়ে ভাবা সম্ভব হয়েছে,তার থেকে সে পরিধি আরও অনেক বিস্তৃত।সাঁজতারার আলোকময়তার তিনি এক অসামান্য সুজন।
বিশ্লেষণের গবেষণাগারে,তাঁর নির্মান-ব্যুৎপত্তির অভিমুখকে সামনে আনা যেতে পারে,তাতে বাংলা কাব্যসাহিত্যের অঙ্গন যথাযোগ্য নতুন ধারায় বিস্ময়কে সজ্ঞাত করা যেতে পারে।জানা নেই, সমাজবিবর্তনের সাথে সাথে অবক্ষয়ের স্রোত কেমন ভাবে আমাদের ঐতিহ্যের অঙ্গনে প্লাবনসম এসে পড়ল!!
পাহাড়প্রমাণ ঐতিহ্যের চালচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কী এসব কিছুরই অগ্রাহ্য করার পাঠ নিতে চলেছি!!তাই যদি হয় , তাহলে আমাদের উত্তরাধিকারকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখতে অচিরেই ভুলে যাব।
===========
ঋণ স্বীকার :: 1) প্রিয়দর্শী চক্রবর্তীর সম্পাদনায় "সলিল চৌধুরী..কবিতা সংগ্রহ "
2) উইকিপিডিয়া
~~~~~~~~~~~~~~▪▪~~~~~~~~~~~~~~
Name : Manindranath Bag
Address: 163/4,Kotrung Dharmatala Lane
Po. Hindmotor Dt. Hooghly
West-Bengal...Pin 712233.
Comments
Post a Comment