বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষক দিবস পালনের তাৎপর্য
যিনি শিক্ষা দান করেন তিনিই শিক্ষক। শিক্ষা বলতে কেবল প্রথাগত শিক্ষা বা পুঁথিগত শিক্ষা নয়, বৃহৎ অর্থে প্রথা বহির্ভূত জ্ঞান ও কর্মের বাস্তব অভিজ্ঞতা। রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে বলা যায় যে, উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র। শিক্ষকের মধ্যে ছাত্রত্ব বেঁচে না থাকলে ছাত্রেরা তাঁর মনের নাগাল পেতে সমর্থ হয় না।শিক্ষকরা হলেন সমাজ গড়ার কারিগড়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকেরা। আদিকালের সামাজিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেই আবাসিক গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থার যুগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল নিবিড় ও মধুর সম্পর্ক। পিতা মাতার পর দ্বিতীয় পিতা বা অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকদেরকে মান্য করতেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কাছে শিক্ষক ছিলেন পরম গুরু। গুরুর আশীর্বাদ ও দাক্ষিণ্য ছাড়া জীবনে সাফল্য অধরা থেকে যায়। গুরুর নির্দেশিত পথে অনুগমন করলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। শিক্ষক তথা গুরুর প্রতি ছাত্র তথা শিষ্যের আনুগত্য, ভক্তি, বিশ্বাস ও আত্মনিবেদন ছিল দৃষ্টান্ত মূলক। প্রাচীন ভারতে গুরু গৃহে গুরুর সাহচর্যে বসবাস করে শিক্ষা গ্ৰহণ ছিল তৎকালীন ঐতিহ্য। গুরু শিষ্য তথা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ঐতিহ্যগত পরম্পরা বৈদিক সংস্কৃতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর উত্তরাধিকার নির্দেশ করে। প্রাচীন আর্য সমাজে শিক্ষক বা গুরুর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা নিরূপণ করতে, গুরু শিষ্যের পরম্পরাকে সম্মান জানাতে একটি পূর্ণ দিবস উৎসর্গ করা হয়। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় অন্য কোন সম্পর্ক এতটা গুরুত্ব পেত না। গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ ভাবে নির্দিষ্ট করে 'গুরু পূর্ণিমা' উদযাপন অনুষ্ঠানটি আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। গুরু পূর্ণিমা একটি বৈদিক প্রথা, যে প্রথার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষককে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন।
সারা বিশ্বে ৫ অক্টোবর আন্তজার্তিক শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। কিন্তু ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫সেপ্টেম্বর। এদেশের প্রতিটি শিক্ষাক্ষেত্রে মহা সমারোহের সঙ্গে দিনটি পালন করা হয়। শিক্ষাবিদ তথা ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণকে সম্মান জানানোর জন্যই ৫ সেপ্টেম্বর দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।এবারে এই দিবস পালনের নেপথের ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক। ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। তাঁর স্মরণেই এই তারিখটিকে দেশজুড়ে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় । আসলে আমাদের দেশের শিক্ষক দিবসের ইতিহাস সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের সঙ্গে সম্পর্কিত। রাধাকৃষ্ণণ চেন্নাইয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ যখন ১৯৬২ সালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তার ছাত্ররা ৫ সেপ্টেম্বরকে একটি বিশেষ দিন হিসাবে উদযাপন করার অনুমতি চাইতে তার কাছে যান। কিন্তু রাধাকৃষ্ণণ পরিবর্তে, সমাজে শিক্ষকদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ৫ সেপ্টেম্বরকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আর এভাবেই ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হতে শুরু করে।
"প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন তাই তিনি, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতেন, তিনি বলতেন "True Teachers are those who help us to think for ourselves" প্রকৃত শিক্ষক তিনি যিনি আমাদের ভাবতে শেখান।প্রকৃতপক্ষে একজন শিক্ষকই পারে দেশ, সমাজের পরিবর্তন করতে, তাই শিক্ষকদের অবদানকে আমরা কোনদিনই ভুলতে পারি না। একজন শিক্ষক হলেন সমাজ তথা মানুষ তৈরীর কারিগর। একজন মা সন্তানকে জন্ম দেয়, কিন্তু সত্যিকারের যিনি একজন শিক্ষক তিনিই জীবনকে আকার ও আকৃতি দেন, শিশুদের মনে ন্যায় নীতি এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি করেন। তাই শিক্ষকদের ছাড়া জীবন অর্থহীন। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে হয়তো আমরা শিক্ষকদের গুরুত্বকে অনুভব করার চেষ্টা করি না, কিন্তু শিক্ষকের গুরুত্ব সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে।"#
সম্মানে শিক্ষক দিবস। শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস। প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণে অথবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা প্রণম্য ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে কিছু দিবস পালন করা হয়ে থাকে । তার মধ্যে শিক্ষক দিবস হলো অন্যতম একটি সর্বজন বিদিত বহু নন্দিত এবং বহু বন্দিত উদযাপিত দিবস। শিক্ষক হলেন সমাজের সর্বস্তরে সমাদৃত এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব। সভ্যতার আদি পর্ব থেকে শিক্ষকের গুরুত্ব, শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা সমাজের সর্বক্ষেত্রে অনুভূত হয়। তখন থেকেই শিক্ষক হলেন সমাজের অভিভাবক স্বরূপ। তাঁরই নির্দেশিত পথে সমাজ জীবনের তথা ব্যক্তি জীবনের অভিমুখ নির্ধারিত হতে দেখা যায়।
পরিশেষে একটি কথা আজকে চারিদিকে যখন সংকট অস্থিরতা বিদ্বেষের কালো মেঘ ভনীভূত শিক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে শিক্ষাকে পুনরুদ্ধার করতে শিক্ষকদের আবারও সম্মানিত করে মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে তাদের দায়িত্বে অবিচলিত থাকবে শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষক দিবস পালন ও শিক্ষানুরাগী জ্ঞান তাপস সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্ম দিবসে তার আদর্শ দেখানো পথেই আপামর শিক্ষক কুল উজ্জীবিত হয়ে উঠুক। দেশ ও জাতির গঠনে আগামী প্রজন্মকে যথাযোগ্য শিক্ষা প্রদানের মধ্যে দিয়ে। ফিরে আসুক আবারো শিক্ষক শিক্ষার্থীর সেই মধুর সম্পর্ক শিক্ষাঙ্গন গুলো ভরে উঠুক ছাত্র-ছাত্রীদের কল গুঞ্জনে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের চাহিদা পূরণে সর্বোপরি তাদের মানসিক সামাজিক ও বৌদ্ধিক বিকাশে শিক্ষকরা নিজেদের নিবেদিত প্রাণ মানসিকতায় শিক্ষাদানের মহান সেবায় আত্মনিয়োগ করুক। প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মরণে আবারো শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা সম্মান ভক্তি ও ভালোবাসা সৃষ্টি হোক।
==========================
Curtsy:
1. https://ek24.in/teachers-day-speech-for-teachers-and-students/
2. https://www.shabdodweep.co.in/teachers-day-in-honor-of-teachers/
3. social media
রচনা- পাভেল আমান -হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ
Comments
Post a Comment