
বইপড়া : অতীত থেকে বর্তমান
কুহেলী রায়
অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তন আগ্রহ মানুষের আছে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো বই পড়া। তাই বই পড়ার অভ্যাস হওয়া উচিত শৈশব থেকেই। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার "তরুণীর স্বপ্ন" এই বইয়ে বলেছেন, "বই আমাদের নিঃস্বার্থ ও শ্রেষ্ঠ বন্ধু"। কবিগুরুর কথায় — "ভালো বই আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়"। আজ আমাদের আলোচনার বিষয় অতীতে বই পড়া ও বর্তমানে বই পড়া।
অতীতের কথা বলতে গেলে বছর তিরিশ পিছিয়ে গেলে অন্য ছবি আমাদের মনের প্রেক্ষাপটে ধরা পড়ে।তখন ছেলেবেলাও ছিল বড্ড মজার। অফুরন্ত আদর ভালোবাসা ও আত্মিক বন্ধন ছিল। ঠাকুমার ঝুলি, আবোল তাবোল, বুড়ো আংলা, হ য ব র ল আশ্চর্যময় কল্পনার জগত ছিল'। পাড়ার লাইব্রেরীতে ছুটির দুপুরে গল্পের বই পড়ার ভিড় জমতো।কমিকস বইয়ের জাদুকর ম্যানড্রেক, অরণ্যদেব এক রোমাঞ্চকর দুনিয়া ছিল। অতীতে অভিভাবকরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সন্তানদের হাতে উপহার হিসেবে বই তুলে দিত আর নিজেরাও অবসরের অনেকটা সময় বই পড়ে কাটাতো। একটা সময় ছিল যখন হাতে কোন নতুন বই এলে তার পাতার অদ্ভুত গন্ধে শেষ লাইন না পড়া পর্যন্ত নেশা কাটতো না। কলেজ বা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে নিজেদের পড়া কোন বই নিয়ে তর্কবিতর্ক আলোচনা সভা সাহিত্য সবার জমজমাট আসর বসতো।
এবার আসি, বর্তমানের কিছু অভ্যাস নিয়ে বর্তমানে মানুষ বই পড়া অভ্যাস থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। কিন্তু বই পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়া সমাজের পক্ষে সুলক্ষণ নয়। মানুষের জীবনে প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় এর অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু বই পড়ে যে নির্মল আনন্দ পাওয়া যায় তা অন্য কিছুতে অসম্ভব এটা বুঝতে আমরা ভুলে গেছি। এখন আর আগের মত পাড়ায়-পাড়ায় ক্লাব ও শিশু সংগঠন নেই। এখন শিশুদের পাঠ্য বইয়ের বাইরে জগতটাই ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। তরুণ বয়সে তাদেরই মনোযোগ চলে যাচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া বা বিনোদন মাধ্যমগুলির প্রতি। তাই ছেলেবেলায় যখন তাদের পাঠক হিসাবে হাতে খড়ি হওয়ার কথা তখন নানান পারিপার্শ্বিক কারণে বইয়ের প্রতি তাদের বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। উপহার হিসেবে বই দেবার চল নেই বললে ভুল হবে। তবে তা অনেকটাই কমে এসেছে। বর্তমানের দেশের নানান প্রান্তে পাঠাগার ছড়িয়ে আছে, বইয়ের সংখ্যাও অগুনতি, টেবিল চেয়ারও আছে। নেই শুধু পাঠক । আসল কথা হল আজকের এই ডিজিটাল যুগে হাত বাড়ালেই তথ্যের ভান্ডার- যেখানে জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত কিন্তু সেখানে মননশীলতার প্রকাশ নেই। মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সবার সদর্থক ভূমিকা প্রয়োজন। আমাদের ভবিষ্যতকে সুন্দর ও সুস্থভাবে গড়ে তুলতে হলে সবাইকে বইয়ের আশ্রয় ফিরতেই হবে। কারণ বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।
================
কুহেলী রায়
সহকারী শিক্ষিকা, আরামবাগ বিবেকানন্দ একাডেমি
সহকারী শিক্ষিকা, আরামবাগ বিবেকানন্দ একাডেমি
Comments
Post a Comment