চেনা প্রতিবেশী
(পঞ্চম পর্ব )
দীপক পাল
ফ্ল্যাটের অ্যাকুইজিসান পেতে দূর্গাপুজোটা কেটে গেল। কালীপুজোর মুখে ত্রিহান ফ্ল্যাটের পজেসন লেটারটা হাতে পেল। তখন উৎসবের মুখে কি আর করা যাবে। ইমনও বললো,' পুজোটা এখানেই কাটাই। আহিরকে আমরা সময় দিতে পারবো পুরোপুরি। দাদা আসবে ভাইফোঁটায়। এরপরে আমরা খোলা মেজাজে ফ্ল্যাটের কথা ভাববো কেমন।'
' আমিও সেই কথাটাই ভাবছিলাম ইমন। দুজনের চিন্তাধারা একদম এক। ঠিক আছে।
এদিকে সামনের মাস থেকেই ব্যাঙ্ক লোন কাটা শুরু করবে।' ' ওমা তাই নাকি?'
- ' হ্যাঁ, তবে একটা কথা তোমায় বলিনি সেটা হচ্ছে যে কালীপুজোর আগেই মনে হয় আমার একটা প্রোমোশন হচ্ছে। আমার বস্ কালকে বলছিল। পেপার নাকি সাইন হয়ে গেছে কাল পরশু হয়তো হাতে পাব যদিও ওটা এখনও চীফ্ পারসোনেল অফিসারের কাছে আছে। তিনি হয়তো কালকে ডেসপ্যাচে দেবেন। প্যাসেজে আজকে ওনার সাথে আমার বসের দেখা হয়েছিল তিনিই বললেন আমাকে। কাল পরশু অফিস কামাই করো একদম পরেতো শনি-রবি দুদিন ছুটি। যাও বেটার হাফকে আজই খবরটা দিয়ে দাও।'
- ' এই খবরটা তুমি এতক্ষণে দিলে, কিগো তুমি। কিছুদিন আগেতো বলেছিলে তোমার ও আরো দুজনের প্রোমোশনের প্রোপোজাল দিল্লী অফিসে অ্যাপ্রুভ্যালের জন্য গেছে। আমি
ভাবলাম তখন অ্যাপ্রুভ হবে কি হবে না তার নেই ঠিক। আগে হাতে পাও তখন দেখব।'
- ' ঠিক পেয়ে যাবো। তবে এমাসেতো আর হবেনা। নভেম্বর মাসের পেশিটে ঢুকবে। আমি নভেম্বর মাসের মাইনের সাথে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর মাসের এরিয়ারের টাকাও পাব।'
কালীপুজোটাও আহিরের সাথে এদিক সেদিক ঘুরে বাজী পুড়িয়ে হৈ হৈ করে বেশ আনন্দ করে কাটালো ওরা। ভাইফোঁটার দিন ইমনের দাদা নির্ঝর এলো বোনের হাতে ফোঁটা নিতে। হাতে মিষ্টির প্যাকেট আর ইমনের জন্য একটা সুন্দর শাড়ী। ইমনও দাদাকে দিল পাজামা-পাঞ্জাবি। দুপুরবেলা খুব ভালো খাওয়া দাওয়া হলো। নির্ঝর বলে, - ' শালাবাবু, তোমরা চুপিচুপি ফ্ল্যাটটাতো কিনলে, তা বেশ করেছ কিন্তু সেটাতো একবার দেখতে পারি নাকি। কিরে ইমন, একবার বলেছিলি একটা ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছে আছে। তারপর কিনেও ফেললি কিন্তু একবারও জানালি না।'
- ' আরে জানাবো বলেইনা তোকে বলেছি যেমন করে পার আসতেই হবে আজ। যেই সকালে ফোঁটা হয়ে গেল অমনি তোকে জানিয়ে একটা সারপ্রাইজ দিলাম।'
- ' তা করেছিস বেশ করেছিস। এখন কাপড় পরে রেডী হয়েনে। ত্রিহান তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নাও। গাড়ী এনেছি তোমাদের ফ্ল্যাটে গাইড করে নিয়ে চলো আমায়। দেখে আসি।'
- ' সত্যি যাবিরে দাদা। কি মজা লাগছে আমার। চল তবে। চটপট পাল্টেনি। '
ফ্ল্যাটটা ঘুরে ফিরে দেখে নির্ঝর বললো, ' বেশ ভালোই তো লাগছে ফ্ল্যাটটা। ফ্ল্যাটের পজিশন ছোটর মধ্যে খুব ভালো। আগেতো ভালো করে রঙ করতে হবে। তার পরে আছে ইলেক্ট্রিফিকেসনের কাজ। অতদুর থেকে এসে খুব কষ্ট হবে। এশিয়ান পেইন্টসকে রং করার কনট্যাক্ট দিয়ে দাও। আমার খুব জানাশোনা আছে, যদি বলো আমি তোমাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি। তারা ক্যাটালগ নিয়ে তোমাদের বাড়ী এসে জেনে নেবে তোমরা কি করতে চাও। রং পছন্দ করে একদিন তাদের নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দেবে আর ডুপ্লিকেট চাবিটা ওদের দিয়ে দেবে। ওরা ওদের কাজ করবে আর তোমরা তোমাদের কাজ রোজ যেভাবে করছো সেভাবেই করবে। কোন চাপ নেই।'
ইমন আর ত্রিহান কিছু কথা নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে বলাবলি করছিল। নির্ঝর বলে, - ' কিরে ইমন এনি প্রবলেম?' ' আমরা ভাবছিলাম যদিও তোর কথা ঠিক আমাদের কষ্টটা কম হবে কিন্তু এটাও ঠিক ওখানে অর্ডার দেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।'
- ' বুঝতে পেরেছি আমি। ঠিক আছে আমি তোদের এক লক্ষ টাকা ধার দিচ্ছি তোরা তবু এশিয়ান পেইন্টসের সাথে কাজ কর। বেশী হাইফাইতে যাবিনা। তুই এই বাচ্চাকে নিয়ে পারবি না আর ত্রিহানকেও বারবার অফিস কামাই করতে হবেনা। ব্যাপারটা একবার চিন্তা করে দেখ।' ইমন বলে, ' কিন্তু তোর টাকাটা শোধ করবো কি করে?'
- ' তোকে আমি কোনদিন তাগাদা দেবনা টাকার জন্য। তাহলে ঐ কথাই রইল ত্রিহান। তাছাড়া একটা ভাল ইলেকট্রিসিয়ান পাঠিয়ে দেব তোমার কাছে, সে আমার বন্ধু।'
কথা শেষ করে ওরা সব ফিরে গেল সেদিন। নির্ঝর ওদের বাড়ীর কাছে পৌঁছে দিল।
জানুয়ারির মাঝামাঝি ওদের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান স্থির হলো। খুব প্রয়োজনীয় কিছু কিছু জিনিস ওরা নিয়ে এসেছিল আগের দিন। তার মধ্যে পুজা ও যজ্ঞসামগ্রী ইত্যাদিতো আছেই। খুব ভোরে ওরা আহিরকে কোলে নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে এলো। এসে স্নানটান করে নতুন কাপড় পড়ে নিয়ে দ্রুত হাতে আলপনা দিল। ত্রিহানও চটপট্আ হিরকে স্নান করিয়ে নতুন জামা পড়িয়ে দিলো। নিজেও স্নান করে পায়জামা ও পাঞ্জাবী পড়ে নিয়ে ইমনের সাথে হাত লাগালো। দুজনের গায়েই শাল। এই ঠান্ডায় আহির সোয়েটার খুলে ফেলতে চাইছে। ইমন আহিরকে খুব ছোট ছোট কাজে ব্যস্ত রাখছে। আহিরও খুব উৎসাহের সঙ্গে সেকাজ পারুক না পারুক চেষ্টা করছে। না পারলে বলছে, ' মা হচ্ছে না বা পারছিনা।' বেলা সাড়েআটটার কিছু আগে ত্রিহানের দাদা শ্রেয়ান মা, বৌদি সম্বৃতা আর ভাইপো সুদীপকে নিয়ে এসে গেল। সুদীপ খুব মেধাবী ছাত্র। রহড়া রামকৃষ্ণ মিসনে ক্লাস সিক্সে পড়ে। ক্লাসে সে থার্ড বয়। বৌদি
এসেই হৈ চৈ শুরু করে দিল। বললো, 'কিরে ইমন ফ্ল্যাটটা তো বেশ ভালই নিয়েছিস।
আগেতো কিছুই জানাসনি। সব কিছু হয়ে যাবার পর বললি অমুক ডেটে আমাদের নতুন ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশ তোমাদের অতি অবশ্যই আসা চাই।' ইমন উঠে দাঁড়িয়ে বলে, - ' এ কথা বলোনা বৌদি, বিজয়ার দিন প্রণাম করতে গিয়ে একটু হিন্টস্ দিয়েছিলাম না? তখনও তো অ্যাকুইজিসানটা পাইনি। কি করে বলবো ফ্ল্যাটটা পেয়ে গেছি। ব্যাঙ্ক আর শান্তি এপার্টমেন্টের সাথে কি হয়েছে কে জানে। মাঝখান দিয়ে আমরা সাফার হচ্ছিলাম তাই সেরকম ভাবে কিছু বলিনি যদি কেস কেঁচে যায়। তাছাড়া খেলতে খেলতে আহির পড়ে গিয়ে যা কান্নাকাটি হৈ চৈ হলো তারপর আরতো বেশিক্ষণ বসিনি। দাদার বাড়ীতে যাবার ছিল।'
- ' যাই বলিসনা কেন তোরা ভীষণ চাপা। যাকগে যাক আমি কিন্তু স্নান করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে এসেছি। কিছু করতে হলে আমাকে বল।' ' হ্যাঁ এদিকে এসো।'
ত্রিহানের বাবা আগেই গত হয়েছেন। ছোট ছেলের ফ্ল্যাট দেখে খুশী। বলেন, - ' হ্যাঁরে ত্রিহান পুরোহিত মশাই কটার সময় আসবে? বৌমাতো সব গুছিয়ে নিয়েছে।'
- ' নটার সময় আসবে বলেছিল মা, এখন দেখছি সওয়া নটা বাজে দেখি আর একটু।'
বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলো। কিন্তু ফোন করার প্রয়োজন পড়লো না।
তিনি এসে গেলেন। ইমন শাঁখ বাজিয়ে পুরোহিত মশাইকে ঘরে ঢোকাল। ত্রিহানের মা আর বৌদি সম্বৃতা উলু ধ্বনি দিয়ে তাকে বরণ করলো। পুরোহিত মশাই ঘরে ঢুকেই পূজোর আসনে আসীন হয়ে পুজোর কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি এখানেরই স্থানীয় বাসিন্দা। পুজো চলাকালীন ইমনের দাদা নির্ঝর তার মা বাবা, স্ত্রী সীমন্তি ও একমাত্র মেয়ে জাহ্নবীকে নিয়ে উপস্থিত হলো। জাহ্নবী লরেটোতে ক্লাস এইটে পড়ে। জাহ্নবীও লেখা পড়ায় খুবই মেধাবী। সবাই একেবারে মাটিতে বসে পড়লো। একমাত্র আহির ছাড়া। পূজোতো চলছে অনেকক্ষণ ধরে। তার কি অত ধৈর্য্য আছে। সে বারে বারে এ ঘর ওপর বারান্দায় দৌড়দৌড়ি করছে। তার মাঝে কখনো সুদীপ কখনো জাহ্নবীকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে। আবার উলুধ্বনির সময় কাঁসর নিয়ে টানাটানি করছে,
' আমি বাজাবো আমি বাজাবো।' আর বাজাবার কি ছিরি। একবার সুদীপের সাথে কাঁসর টানাটানি করে পড়ে গিয়ে সে এক কান্ড।
একসময় পুজা শেষ হলো। অঞ্জলি শুরু হলো। ত্রিহান আহিরকে জোর করে কোলে বসিয়ে অঞ্জলি দিল। ঠাকুর মশাই সামান্য প্রসাদ গ্রহনের পরে তার জিনিস পত্র গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে বিদায় জানালেন। অবশ্য ইমন আর দুই বৌ মিলে তাকে সব গুছিয়ে নিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। তারপর প্রসাদ খাওয়ার সাথে গল্প গুজব করার পালা চললো বেশ কিছুক্ষণ। সেদিনটা খুব মজা করে কাটলো। সুদীপ আর জাহ্নবী আহিরকে নিয়ে যেভাবে লুকোচুরি খেলা খেলছে যে আহিরই বারেবারে চোর বনে যাচ্ছে। তাতে আহিরের কোন হেলদোল নেই। সে তাতেই খুব খুশী। ওদিকে একজন স্থানীয় রান্নার মহিলা ঠিক করা হয়েছিল রান্নাবান্না করার জন্য। রান্না মানে হাল্কা করে খিচুড়ি আলুরদম টমেটো দিয়ে ও বেগুনি আলুভাজা ফ্রুটচাটনী পায়েস আর রসগোল্লা। রসগোল্লাটা দোকান থেকে কেনা।
খাওয়া দাওয়ার পর ত্রিহানের মা আর বসতে চাইলোনা। শ্রেয়ানও বললো, - ' আর বসবোনারে ত্রিহান, অনেকটা পথ যেতে হবে আমাদের এখুনি না বেরোলেই নয়।' ইমন তাদের সঙ্গে পায়েস ও রসগোল্লা পাঠিয়ে দিল। সন্ধ্যে হওয়ার আগেই নির্ঝররাও চলে যেতেই হঠাৎ সব কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল ফ্ল্যাটটা। এক আহিরের ঘ্যনঘ্যনানি ছাড়া আর সব চুপচাপ। আহির বাড়ী যাবার বায়না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়লো। ত্রিহান ওর পাশে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো আগামী পড়শু সব মালপত্র নিয়ে এই ফ্ল্যাটে কিভাবে ও কেমন ভাবে ঠিক ঠিক করে আনবে। ইমন রান্নাঘরে রাঁধুনিকে কি নির্দেশ দিচ্ছে। রাঁধুনিকে রাত আটটার মধ্যে কিছু কাজ করিয়ে ছেড়ে দিল তার পাওনা মিটিয়ে।
আহির উঠে পড়ে ত্রিহানের সঙ্গে বকবক করছিলো। ওকে ধরে একটু ভাত খাইয়ে দিলো আলু সিদ্ধ দিয়ে। ওর ও ত্রিহানের জন্য অল্প কিছু রেখে বাদ বাকি বেঁচে যাওয়া সব খাবার রাঁধুনিকে দিয়ে দিয়েছিল। অল্প একটু ভাত আহিরের জন্য তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছিল হাঁড়ীর মধ্যে একটা আলু ফেলে দিয়ে। নিজেদের জন্য রাখা খাবারগুলোকেও গরম করিয়ে রেখেছিল। ইমন ও ত্রিহান খেয়ে নিল সেগুলো গরম থাকতে থাকতে। তারপর শুয়ে শুয়ে দুজনে বাড়ী শিফ্টিংয়ের পর ফ্ল্যাটে তা কোথায় কি ভাবে রাখবে সেই ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে বলতে ত্রিহান ঘুমিয়ে পড়লো। ইমনও বুঝতে পেরে চোখ বুজলো।
মালপত্র শিফটিং সময় মতো খুব সহজেই হয়ে গেল। ঠিক সময়ে গাড়ী এসে উপস্থিত হলো। আগের দিন দুজন মিলে জামা কাপড়ের সাথে বেডশিট বেডকভার ইত্যাদির দুটো বড় বড় পোটলা আর থালা বাসন হাঁড়ী কুঁড়ির দুটো মজবুত পোঁটলা বানিয়ে রাখতে ওগুলো খুব সহজেই উঠে গেল গাড়ীতে। অবশ্য খাট টাট আগেই তুলে নিয়েছিল। ইলেক্ট্রিসিয়ানও যিনি নির্ঝরের বন্ধু তার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। নির্ঝর তার গাড়ী নিয়ে উপস্থিত। একেবারে সামনা সামনি দুই বন্ধু। কিছুক্ষণ দুজনে কথাবার্তা বলে। নির্ঝর জিগ্গেস করলো ইমনকে, - ' কিরে তোরা কতদূর এগুলি?' আবার বলে, ' সবতো প্রায় রেডী দেখছি।'
- ' দাদা একটু বস, ম্যাগি বানিয়েছি। চায়ের সরঞ্জাম রেডী। তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এইনে ধর ম্যাগি খা।' ত্রিহানকে ডেকে দুটো ম্যাগি থালা দিয়ে বললো, ' তোমার আর ইলেক্ট্রিসিয়নদাদার জন্য।' তারপর চা বসিয়ে দিল খেতে খেতে।
কাগজের থালা, কাপ দুতিনটে জিনিস ছাড়া। চা টা খেতে খেতে সব কিছু রেডী হয়ে যেতে নির্ঝর কিছু অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজের গাড়ীতে তুলে ইমন আর বন্ধুকে নিয়ে ত্রিহানের সাথে কথা বলে গাড়ী নিয়ে চলে গেল ফ্লাটে। এদিকে ট্র্যন্সপোর্টের গাড়ীও ছাড়ার জন্য রেডী হলো। ত্রিহান বাড়ীয়ালার সাথে কথা বলে
তাকে বিদায় জানিয়ে গাড়ীতে উঠে ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলো। গাড়ীও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিল।
=================
Dipak Kumar Paul, (9007139853) ,
DTC , Block-8, Flat-1B,
Diamond Harbour Road, Kol- 700104
DTC , Block-8, Flat-1B,
Diamond Harbour Road, Kol- 700104
Comments
Post a Comment