শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গল্প
ল্যাব বিল্ডিং
কল্যাণ সেনগুপ্ত
তখন আমরা সিক্স কি সেভেন এ পড়ি। সুরবালা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ। হেডমাস্টার বগলাবাবু সঙ্গে করে ঢুকলেন ওঁকে। পঞ্চাশটা ছেলে কিছুটা ভয়ই পেয়ে গেল। ইয়া এক পালোয়ান। পরনে একটা গেরুয়া পাঞ্জাবি আর ধুতি। চুলগুলো খাড়া খাড়া বুরুষের মত। মুখ খানি রসগোল্লার হাড়ি। মোটা ঠোঁট । তলার ঠোঁটটা সামান্য ঝুলে পড়েছে। হাসি হাসি মুখ । ঘামে চপচপ করছে। পরে বুঝেছিলাম ওঁর মুখ টাই ওরকম যে মনে হয় সব সময় হাসছেন। চেহারা বেশ মোটামুটি ।সঙ্গে একটা মোটা পালোয়ানি গোঁফ। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল স্কুলে নতুন দারোয়ান এসেছে । আমাদের অবাক করে হেডু বললে "উনি স্যার সনৎ সান্যাল। তোমাদের আর্ট, ক্রাফট টিচার। কিন্তু উনি তোমাদের দরকার মত অন্য সাবজেক্ট ও পড়াবেন। আজ উনি তোমাদের বাংলা পড়াবেন" । নতুন টিচার কে পঞ্চাশটা বিচ্ছু র মধ্যে রেখে চলে গেলেন হেড স্যার। ক্লাস শুদ্ধু ছেলেদের হিক্কা উঠে গেল এরকম ড্রয়িং, বাংলা টিচার দেখে।
দশাসই চেহারা হলে কি হবে, প্রথম ক্লাসে কিছুটা নার্ভাস। বললেন " দাও , তোমাদের বাংলা বইটা। আমি একটু দেখি"।
বিকাশ "এইযে স্যার "বলে ভূগোল বই দিয়ে এল। আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি আর ফিকফিক হাসছি এই কিম্ভুতকিমাকার নতুন টিচার কে দেখে। দেখছি উনি কি করেন ।
ক্লাস শুদ্ধু ছেলে ওনাকে মেপে নিচ্ছে। কি ভাবে আক্রমণ করবে ভাবছে।উনি বই টা ওল্টাতে ওল্টাতে বললেন "তোমাদের বন্ধু ভুল করে ভূগোল এর বই দিয়েছে। তাই ওকেই উঠতে বলছি। বিকাশ কে বললেন "তোমাদের পড়া থেকে জিজ্ঞাসা করি? নিশ্চই পড়া হয়ে গেছে? বলেই বললেন "বলত দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ভারতের কোথায় প্রথম আঘাত করে?
বিকাশ একদম বেকুব। মাথা নীচু। এরপর স্যার বললেন ঠিক আছে । বুঝেছি এটা নতুন স্যারের অভ্যর্থনা। বসো। প্রথম দিন আজ তোমাদের ভূগোলের গল্প একটা বলি। বলে শুরু করলেন কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কাহিনী। একদম নতুন ভাবে ভূগোল । যেন শ্রুতি নাটক করছেন । মাঝখান থেকে শুরু করলেন গুরু গম্ভীর গলায় ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল ।ভেসে চলেছে দিনের পর দিন ।দূরে আকাশ সমুদ্রে নিমজ্জিত। কলম্বাস ভাবছেন তাহলে কি আমার অনুমান সঠিক নয় ? কোথায় তীর, কোথায় গাছপালা? কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এত সুন্দর অভিব্যক্তি দিয়ে গলা ওঠা নামা করিয়ে বলতে শুরু করলেন। আমরা পুরো কুপোকাত। যখন বেল পড়ল তখনও কলম্বাস আমেরিকার মাটিতে পা রাখেনি । মুখে মুখে সিনেমা দেখিয়ে ছাড়লেন। ঘন্টা পড়ার পর বেড়িয়ে গেলেন। আমরা অনেকক্ষণ চুপ করে ভাবতে লাগলাম। এরপর ড্রয়িং ক্লাসে এলেন দুদিন পর ।টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চক টা হাতে নিয়ে বললেন " ছবি আঁকার জন্যে এটা । কিন্তু মজা কি জানো? যত কম এর ব্যবহার করতে পারবে ততই ভালো। সন্দীপ একটু বোকা সাজলে " তাহলে ছবি আঁকবো কি করে স্যার?
হাতে একটা গান্ধীজির ছবি তুলে ধরলেন । এইটা আমি আঁকবো। চক টা নিয়ে ঘষ ঘস করে দুটো লাইন টানলেন ।একটা মাথার ওপরের দিক আর লাঠি আর চশমার ধার টা। ব্যস চমৎকার ঘটে গেল বোর্ডে। আমাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে গান্ধীজি পিছন ফিরে দৃপ্ত পেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ক্লাসের সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। আরেকটা দেখান স্যার।
সুশান্ত এবার কঠিন অঙ্ক ছুড়ে দিলে নেতাজি স্যার, নেতাজি।
সনৎ স্যার কিছুক্ষন বোর্ডের দিকে ফিরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে চক দিয়ে তিন চারটে টানে এঁকে ফেললেন। আমাদের মুখ ঝুলে পড়েছে। চোখ গোলগোল। উনি দেখালেন একটা স্ট্রোকে নেতাজির একটা হাত সামনে আরেকটা পিছনে।দিল্লি চলোর ঢং ।মাথার টুপিটা ওপরটা বোঝা যাচ্ছে সঙ্গে চশমার ফ্রেমের সাইড। নীচ টা আঁকেন নি। নিমেষের মধ্যে বোর্ডে নেতাজি। এমন জাদু আগে কখনো দেখিনি। ক্লাস শুদ্ধু ছেলে আনন্দে হাত তালি দিয়ে উঠল।
এরপর বোর্ড মুছেই দিচ্ছিলেন ।আমরাই বাধা দিলাম " থাক স্যার। এরপর বললেন ছবি আঁকো , নিজের মন থেকে। দেখে নয়। প্রতিটি মানুষের , প্রকৃতির একটা একেকটা সময় এক এক রকম রূপ। প্রত্যেকের এক একটা নিজস্বতা আছে। সেটাকে ধরতে হবে। খেয়াল করতে হবে। যত কম টানে তাকে ফুঁটিয়ে তুলতে পারবে তত সাফল্য। ছবির প্রাণ কিন্তু ওই মোচড়। তার বৈশিষ্ট্য। ডিটেলিং নয়। যত ঠিক কার্ভ, তত তুমি এগিয়েছো। এরপর আরেকদিন এসে ক্লাসে বললেন " তাকাও মাঠের দিকে ।যে গাছ টা কাছে সে তত ডিপ লাইন যে পিছনে সে তত হালকা লাইন। এই ভাবে ছবির দূরত্ব, ডেপথ বোঝানো হয়। যত দুর তত হালকা হবে পেন্সিল। কিছু দিনের মধ্যেই সনৎ স্যার আমাদের ছবি আঁকা টা অন্য পর্যায় নিয়ে গেলেন । যে আঁকতে চায় না সেও তখন এঁকে ও আনন্দ পাচ্ছে।
কিছুদিন পর ক্লাসে বললেন " তোমাদের ক্রাফট, কেমিস্ট্রি, বায়োলজির আলাদা ল্যাবরেটরি থাকা দরকার। কিছুই নেই দেখছি। কি রকম একটা বড় ঘরে গায়ে গা লেগে ল্যাব হয়। বললেন আমি হেড মাস্টার মশাই কে বলব। বিকাশ একদিন বললে " সনৎ স্যার নাকি চিঠি নিয়ে বিধায়ক, এমপি, এমন কি মধ্য শিক্ষা পর্ষদেও যাবে। ল্যাব বিল্ডিং এর জন্যে।
প্রেমেন বললে " উনি যেন কেমন! আমাকে বললে " চিত্ত তুই সেদিন আসিস নি। স্কুলে ঢুকে দেখি দারোয়ান দের নিয়ে জঙ্গল মত পড়ে থাকা জমি কাটছেন। দুদিনে সাফ হয়ে গেল। তারপর আমাদের সবাইকে বললেন " চল গাছ লাগাই। সুন্দর ফুল ফুটবে, সবাই যখন স্কুলে ঢুকবে দেখেই মন টা সুন্দর হতে যাবে। উনি ই চিনিয়ে দিলেন কেমন করে গাছ লাগাতে হয় ,পরিচর্যা করতে হয়। বললেন " যখন প্রথম ফুল ফুঁটবে দেখবে কি আনন্দ হচ্ছে। দেখতে দেখতে স্কুলের সামনের পরিত্যক্ত জায়গাটা গাছ গাছালিতে ভরে উঠল। আমাদের রোজ কাজ হল গাছে জল দেওয়া। পোকা ধরলে সেই পাতা ফেলে দেওয়া। গোড়া টা পরিষ্কার করে খুঁচিয়ে দেওয়া যাতে গোড়ায় জল যায় ঠিকমত। দিনে দিনে সনৎ স্যার যেন আমাদের একজন হয়ে গেলেন।
একাই থাকতেন । পাশের গ্রামের শচীন একদিন বললে জানিস " স্যার না খুব কৃপণ।
কেন ? কৃপণ কেন?
আরে বলিস না। গেছিলাম ওনার কাছে পেইন্টিং শিখতে । গেলে কিছুই খাওয়ায় না। জল চাইলে বড় জোর দুটো বাতাসা।
মৃন্ময় বললে " বড় লোক রা এরকম হয়। নিশ্চই বড় বাড়ি?
শচীন ঘাড় নাড়লে। হলো না। " কি বলব, একটা বারান্দা, একটা ঘর সঙ্গে একটা ছোট্ট রান্না ঘর আর বাথরুম। ওই ঘরেই হাজার বই চারিদিকে।
আমি বললাম আর কি আছে ঘরে?
সেটা আরো করুণ। একটা তক্তপোষ একটা কাঠের ভাঙ্গা আলমারি।একটা নড়বড়ে ছোট্ট টেবিল আর চেয়ার।
মৃন্ময় বললে " ওনাকে তো ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে।
আমাদের মুখে বিস্ময়" আর কিছু নেই ?
খাটের অর্ধেক বই , খাতা রাখা। রান্নাঘর টা দুর থেকে দেখলাম কিছুই নেই প্রায়।
তিলক, স্যারের বাড়ির সবচেয়ে কাছে থাকে । বললে " একটা কাজের লোক ও নেই। নিজেই সব কিছু করেন। আমি একদিন গেছিলাম ।বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে তখন দেখলাম।
ক্লাসের সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল" কি দেখলি বল।"
একটা ছোট স্টোভ, তাতে রান্না করছে নিজেই। আবার নিজেই গামছা পরে নিজের জামা কাপড় ও কাচে, ঘর ঝার দেন।
সমস্বরে বললাম " বলিস কি, এত হাড় কিপ্পুস।
তবে রাস্তার একটা কুকুর আর কিছু বেড়াল আছে ওনার বাড়িতে।
আজ ক্লাস এ টিচার আসেনি তাই আড্ডা জমেছে ভালই। সনৎ স্যারের সব খবর শুনে আমরা তাজ্জব। ওনার পাড়ার শৈবাল ,বললে " উনি তো পুজোর চাঁদা ও খুব সামান্য দেন। আর গেলে ই গন্ডগোল । এ পাড়া, ও পাড়া র ছেলেরা শাসিয়ে যায় । উনি সেই এগারো টাকার ওপরে উঠবেন না। দেবেন সবাই কে। ছেলেরা শাসায় , উনি হাসেন । বেশি হম্বিতম্বি করলে বলেন " এক একজন করে চলে এসো ।যা করবে করো দেখি। বলে একজনের হাত ধরেছিল সে আর কিছুতেই খুলে চলে যেতে পারছে না। উনি হাসছেন।অদ্ভুত লোক কিন্তু।
ছাত্র রা স্কুলে খাওয়া দাওয়া করলে উনি বাক্স করে ঘরে নিয়ে যান। বলেন পরে খাবেন। নিজে কোনদিন খাওয়ান নি।
কলকাতায় মাঝে মাঝেই যেতেন তদবির করতে। কিন্তু তেমন কিছু হল না। উনি হাল ছাড়েন নি।
সেই গেরুয়া পাঞ্জাবি আর ধুতি আর কেডস। প্রথম প্রথম শুধু ক্রাফট আর ড্রয়িং ক্লাস নিতেন । পরে বাংলা , ভূগোল ও উঁচু ক্লাসে নিতেন। ঐরকম বদখত দেখতে পালোয়ান মানুষ টা এমন সব সাবজেক্ট পড়াতে পড়াতে কিন্তু তত টা খারাপ লাগত না। স্কুলের সবার আঁকার হাত টাই উনি পাল্টে দিলেন। উনি থাকতে থাকতে অল বেঙ্গল ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা ও আমরা জিতে ফেললাম। যা কোনো দিন আগে হয় নি।
কিন্তু আমরা স্কুল ছাড়া অবধি ওনাকে সেই ল্যাব বিল্ডিং করতে দেখিনি। পরের দিকে স্কুলের অন্য টিচার রা বলতেন " সান্যাল স্যার নাকি কলকাতায় বেড়াতে যান। কেউ কেউ দেখেছে উনি সন্ধ্যে বেলা স্টেশন থেকে হাতে বড় বড় প্যাকেট নিয়ে ফেরেন। নিজের কাজে গিয়ে স্কুল ফাঁকি দিতেন । কিন্তু উনি আসার পর
স্কুলের শোভা একেবারেই পাল্টে গিয়েছিল। হেড মাস্টার মশাই ওনাকে কেন বেশি পাত্তা দেন ওনারা বোঝেন না। একটা আত্ম সুখী স্বার্থপর মানুষ হয়ে আস্তে আস্তে আমাদেরকাছে ধরা দিতে লাগলেন। ক্রমশ প্রচারে ওনার ভাবমূর্তি টা মলিন হতে লাগল। ওপরের ক্লাসে গিয়ে পিছন থেকে আওয়াজ দিতেও ছাড়িনি।স্কুল কে যে কত কিছু দিয়েছেন সেটা কেউ মনে রাখলে না। একটা ল্যাব বিল্ডিং করবেন বলে পারেন নি সেটাই বড় হয়ে দাড়াল। আগের কথা সব ভুলে গেল সবাই। মাঝে মাঝেই দেখছে উনি স্কুল অর্ধেক করে কলকাতা যান আর নিজের কিছু জিনিসপত্র কিনে আনেন। কাজের কিছু করেন না। স্কুলের ল্যাব বিল্ডিং উনি করতে পারবেন না। উনি কিছুই বলেন নি। যখন স্কুল ছেড়ে যাই তখন ও মাঝে মাঝে ই কলকাতায় তদবির করতে কিন্তু ফেরেন বেশ কিছু বই নিয়ে। লোকে পিছনে ওনাকে ফেরেপবাজ , ফাঁকিবাজ , এইসব বলে।
কলেজ পাশ করে চাকরি র ও প্রায় বছর দশেক কেটে গেছে তখন কলকাতায় থাকি। বাবার শরীর খারাপ বলে গ্রামে এসেছি। বাড়ির চাকর শম্ভু দা খবর দিলে " ভালো দিনে এসেছো। তোমার স্কুলে কাল মন্ত্রী মশাই আসবে"।
"কেন ? কি হয়েছে?"
"তোমাদের স্কুলে আরেকটা বাড়ি হবে তার জন্যে শিল্যানাস করতে আসছেন।"
আচ্ছা এতদিনে। তাহলে ল্যাব হচ্ছে। সেই সনৎ মাস্টার মশাইয়ের কি হল কে জানে। গিয়ে একবার খোঁজ নেব ভেবেছি। ব্যাটা শুধু ভাঁওতা দিয়ে গেল।
স্কুলের প্রেয়ার হলে ছাত্র শিক্ষক কিছু আমার মত পুরনো ছাত্রের ভিড়। ডায়াসে প্রধান শিক্ষক , সহ প্রধান শিক্ষক, পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও এনারা উপস্থিত। আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষ হবার পর প্রধান শিক্ষক উঠে বললেন " আজ স্কুলের বড় আনন্দের দিন। আজ নতুন ল্যাব বিল্ডিং এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। এবং খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি উঠবে। সেখানে ছাত্র রা সমস্ত ল্যাব আলাদা আলাদা পাবে। মন্ত্রী মশাই এসেছেন তার শিলান্যাস করতে।
মন্ত্রী মশাই মাইক্রোফোন পেয়ে ই বললেন " আজ আমি কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে আসিনি এখানে। আমার ওপর কিছু দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটাই পালন করতে এসেছি। এটা কোন সরকারি অনুষ্ঠান নয়"।
একটু দম নিয়ে বললেন " আজ সবার আগে একটা গল্প বলি আগে, তারপর কাজের কথা। এটা এক শিক্ষকের গল্প। অন্তত পনেরো বছর একা চেষ্টা করেছেন স্কুলের একটা বিল্ডিং বাড়াতে। বড় দরকার ছিল ল্যাব বিল্ডিং এর। গ্রাম থেকে শহরে ছুটে ছুটে এসে শিক্ষা বিভাগে ততবির করেছেন । কিন্তু কিছুই হয় নি। শিক্ষা পর্ষদের টেবিলে টেবিলে অনুরোধ করে ফাইল এগোতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেন নি। এই অজ পাড়া গাঁয়ে টাকা মঞ্জুর হয় না সহজে। দিন দিন জেদ শক্ত হয়েছে । মাস্টার মশাইরা , ছাত্র রা অবিশ্বাস করেছেন। কিন্তু মানুষ টা করেই ছাড়বে। শেষ অবধি ও সে পারেনি। রিটায়ার করে স্কুল ছেড়ে চলে গেছেন মাথা নত করে। অনেকে বলেছেন উনি ফাঁকি দিয়ে কলকাতায় নিজের কাজ করতে যেতেন। একটু থেমে বললেন " উনি যদি এতদিনে না পারে থাকেন তার দায় কিন্তু ওনার নয় । সম্পূর্ন দায় আমার। উনি চেষ্টা ত্রুটি করেন নি"।
হঠাৎ মনেহল উনি তো সেই সান্যাল স্যারের কথাই বলছেন মনে হচ্ছে।
উনি বলে চলেছেন। " দুবছর বাদে পেনশন পেয়েছেন । তারপর দুটি কাজ করেছেন । কৃপণ লোক টা সারা জীবনের অর্জিত সম্পদের প্রায় পুরোটাই দান করে গেছেন এই স্কুলের ল্যাব বিল্ডিং করার জন্যে। পঞ্চাশ লাখ টাকা উনি জমিয়েছিলেন কষ্ট করে । গায়ে লাগা কালিমা মুছিয়ে দেবার ভার আমাকেই দিয়ে গেছেন। টাকা পয়সার কোন অভাব ছিল না। মালদার এক জমিদারের ছেলে উনি। বাবার ইচ্ছেতে ওনার জীবিত কালে সন্ন্যাস নেন নি। নিজের ইচ্ছে তে স্কুলের মাস্টারী করতেন। বাবা নেই এখন আর পিছু টান নেই। সংসার ছেড়ে ওনার পছন্দ এক আশ্রমে চলে গেছেন।
আরেকটা কাজের ভার আমার ওপর ভার পড়েছে সেই মহা মূল্যবান অর্থ পৌঁছে দেবার জন্যে। বলে চুপ করলেন। হলের উপস্থিত সমস্ত ছাত্র ,শিক্ষক পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে শুরু করলে কে কেমন ভাবে তির্যক দৃষ্টিতে সনৎ স্যার কে দেখেছে এবং ভেবেছে। অনেকেরই মাথা নত হয়ে এল।একজন রিপোর্টার পাশ থেকে জিজ্ঞাসা করলে
"আপনার কেউ হয়?
কিছুক্ষন উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মাথা নীচু করলেন। এই নেতাকে মাথা নীচু করতে তেমন কেউ দেখেনি। বললেন "দাদা বরাবর সন্ন্যাসীর মতন। ওনার গলা জড়িয়ে যাচ্ছে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন । আবার থেমে একটু এদিক ওদিক চেয়ে দম নিয়ে বললেন "বছরের পর বছর আমার ডিপার্টমেন্ট এ গেছেন তৎবির করতে অথচ আমি জানতেই পারিনি। ওই, যদি কেউ বলে মন্ত্রীর দাদা। বাবা বলতেন দাদার মত হও। আফসোস, হতে পারিনি"।
আবার থেমে এদিক ওদিক চেয়ে নিজেকে সামলালেন। হলে সূঁচ পড়লে শব্দ শোনা যায়। অধীর আগ্রহে সবাই শুনতে চাইছে ওনার কথা। বললেন "আমি আর বেশী কিছু বলতে পারছি না। আপনাদের স্কুলে এসে দাদা কেও নতুন করে চিনলাম। এই স্কুল বাড়ি খুব তাড়াতাড়ি হোক আমি চাই। আমি খোঁজ রাখব"।
বলে চুপ করলেন। সামনের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বসে পড়লেন। হল হাততালিতে ফেঁটে পড়ল। উনি বসে পড়ে ধুতির খুঁট টা খুঁজতে লাগলেন মাথা নীচু করে।
==============
Kalyan Sengupta
N.N.Dutta Road
Kolkata 700040
N.N.Dutta Road
Kolkata 700040
Comments
Post a Comment