তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন
১ কার্পেট
যার ওপর দিয়ে নিজেকে প্রভাত সূর্য ভেবে তিনি হাটবেন।
কার্পেটের কোনা গুলো আঠা দেওয়া টেপ দিয়ে সযত্নে ও খুত না রেখে মুড়ে দেওয়া
হোঁচট না খেতে হয় যেন,
অনেক খানা খন্দ পেরিয়ে এখন যিনি কার্পেটে হাটবেন।
তাকে দেখে মনে হয় একটা কাকাতুয়া
সব সময় শব্দ করে কথা বলে চলেছেন।
লাল কার্পেট সারি সারি চেয়ার যারা সেই কোন সকাল থেকে সাজাচ্ছিল
তারা এখন ছাতুর সাথে কাঁচা লঙ্কা পেঁয়াজ দিয়ে খেয়ে বিশ্রামে।
কাকাতুয়া হাসি হাসি মুখে নিষ্ক্রান্ত হবার পর ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের লাল কার্পেট চেয়ার ইত্যাদি আবার তড়িঘড়ি সরিয়ে রাখতে হবে যথাস্থানে তবেই কাজ শেষ, পাওয়া যাবে মজুরি।
সব তড়িঘড়ি । কে জানে কখন শান্তিরক্ষক এসে বলবেন - এই দেখি তোমার পরিচয় পত্র , একবার দেখে নিই তুমি এই দেশের নাগরিক কি না ।
২ কবিতা
কবিতার কাজ তোমার কাপড় ছেঁড়া
কবিতার কাজ কবি বোঝে না আজও
রক্তকরবী রিক্ত, একাকী নীরবে থাকে
শম্ভু মিত্র কখন দেবে যে নাড়া।
আকাশচুম্বী অট্টালিকার সাজে
নগরী সকল সারা পৃথিবীকে আজ মাপে
থার্মোমিটারে বাড়ছে তাপের মান
সুনামি আসবে কখন ধীবর বলো !
খাপছাড়া এই কবিতা রচনাকারী
বিলম্বে আজ এসেছে নদীর ধারে
কেউ ডাকেনি আজকে সভায় যেতে
সভার নায়ক একা এসে বসে চেয়ারে।
৩ বিজ্ঞাপন
একটা গোল টেবিল চারটে চেয়ার
আলমারি গ্যাসের উনান
পড়ার টেবিলে ল্যাপটপ
পাশে মুঠোফোন
খাট বিছানার তোষক লেপ
সব বিক্রি সব বিক্রি ।
কেমন তর মৃত্যু মৃত্যু
ছেড়ে দেওয়া একটা জীবন
দুটি জীবন
তিনটি জীবন বা চারটে জীবন।
খারাপ ভালো কেউ জানে না
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি কেবল।
হারিয়ে যাওয়া বেবাক কারা
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে
চুপিসারে ডাকতে থাকে
ডাকতে থাকে - সব বিক্রি সব বিক্রি।
৪ রেলগাড়ি
এই সংযোগ স্থল ষ্টেশনে মুহুর্মুহু রেলগাড়ি আসছে রেলগাড়ি চলে যাচ্ছে
তবে আমার ইপ্সিত রেলগাড়ি কখন আসবে স্বয়ং
স্টেশন মাস্টার বলতে পারলেন না
কি কারণে সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
চুপচাপ চলে যাও নিজের গুহায় মার্গারিটা
তোমার দু চোখে খুন
দাড়িয়ে রয়েছ কেন ভুল ইস্টিশনে
চারপাশে ক্রমাগত ভিড় বেড়ে যায়
ভিড় বাড়ে রেলগাড়ির বাঁশিতে।
রেলগাড়ি আসা রেলগাড়ি চলে যাওয়া
বড়ই বিষাদ ডাকে
সে বিষাদ থেকে যায় শরতের কাশ ফুল জুড়ে
মার্গারিটা, জান না কি তুমি !
নিজের গুহায় তুমি চলে যাও মার্গারিটা।
=============
সুশান্ত সেন
৩২বি শরৎ বোস রোড কলিকাতা ৭০০০২০
Comments
Post a Comment