ভুতুড়ে গল্প
হাফেস পুকুর
জেড এইচ ফাহাদ
১.
আজ হাসান তাদের নানার বাড়ী যায়। তাদের নানার বাড়ী ফেনী জেলার ফুলকাজী উপজেলার
মধ্যে অবস্থিত। হাসানপর নানাদের গ্রামের নাম কুতুবপুর। তাদের নানাদের বাড়ী
কুতুবপুর গ্রামের শেষ মাথায় অবস্থিত। তাদের নানাদের বাড়ীর আশপাশের জায়গাগুলোতে
জ্বীনদের বসবাস বলে লোকমুখে শুনা যায়। হাসানের নানার বাড়ীর জায়গাগুলো দিনে-দুপুরেও
ভয়ংকর। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো হাফেজ পুকুর। যা তাদের নানাদের গ্রামের পাশের
গ্রামে অবস্থিত। এটার ভয়াবহ আতংক সবার মনে বিরাজ করে। এই পুকুরের চারপাশে
কবরস্থান আছে এবং কবরস্থানের পাশ দিয়ে
রাস্তার আছে। দিনে-দুপুরেও রাস্তাটা নির্জন থাকে। হাসান ছোটবেলা থেকে নানার বাড়ী
আসা পছন্দ করতো না এসব কারণে। তাকে
যখন-তখন একা ঘুরতে যেতে দেওয়া হতো না। বিশেষ করে হাফেজ পুকুরের আশপাশে। হাফেজ
পুকুরে অনেক ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটে। একবার তো একজন ব্যাক্তি ওজু করার জন্য হাফেজ
পুকুরে একা নামে যখনই সে পানিতে স্পর্শ করে হঠাৎ তখনই একটা হাতটা তাকে পানির ভিতর
টেনে নিয়ে যায়। যোহরের সালাত শেষে তার সাথিরা তাকে অনেক খোঁজ করেও তাকে পায়
না। পরে পুকুরের পানিসেচ দেওয়ার পর
গ্রামবাসী দেখতে পায় সে ব্যাক্তিটা পুকুরের মাঝখানে একটা শিকলে বাঁধা। তখন সবার মনে প্রশ্ন জাগে কারা করলো কাজটা?
তারা নয়তো? সবাই এতে আতংকিত হয়ে পড়ে। এতেই শেষ নয়, আরেক
বার সাদ্দান নামে এক ব্যাক্তি ইলেকট্রনিক এর কাজ শেষে তার সাথিদের রাস্তার মোডে
নামিয়ে দেয় এরপর সে দ্রুত গতিতে বাইক নিয়ে হাফেজ পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তার উদ্দেশ্য সে তার আপুর শশুর বাড়ী যাবে। হঠাৎ
কোথেকে একটা কুকুর তার বাইকের সামনে আসে। সে কুকুরটাকে দেখে বাইকের ব্রেক চাপে ফলে
তার ডান পাটা বাইকের চাকার ভিতর ডুকে যায়। ফলে তার ডানপার হাড় বেরিয়ে যায়। পরক্ষণে
কুকুরটা অদৃশ্য হয়ে যায়। তার সঙ্গীরা তা দূর থেকে দেখে। তারা এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই খবর
ছড়িয়ে যাওয়ার পর সবাই ভাবে, কোথেকে এল এই কুকুর? আবার কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল? এই কাজটা তারা করে নাই তো? এভাবে
অনেক মানুষ তাদের আক্রমণের শিকার হয়।
২.
বিদেশ থেকে গ্রামে তিনজন প্রবাসী আসে। তারা আসার সময় অঢেল টাকা-পয়সা নিয়ে আসে।
তাদের আসার খবরটা গ্রামের বিখ্যাত আলেম জানতে পারে। আলেম প্রবাসীদের টাকা-পয়সার
খবর চুনে লোভে পড়ে যায়। তাই রাতে সে তিন প্রবাসীর বাড়ীতে হানা দেয়। তাদের সকল
সম্পদ লুর করে এবং তাদের হত্যা করে। সে তিনজনের লাশ হাফেজ পুকুরে পেলে দেয়।
পরেরদিন ফজরের সালাতের ওজু করতে মসল্লিরা পুকুরে আসলে দেখে পুকুরের পানি লাল হয়ে
আছে। গ্রামবাসীরা এতে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু পরের দিন এসে দেখে পানি স্বাভাবিক হয়ে
গেছে। গ্রামবাসীরা এর কারণ জানতে চাইলেও জানতে পারে না আসল ঘটনা। পরে সে আলেম মারা
যাওয়ার পর ঘটনাটা জানতে পারে। সেই আলেমের
দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলের আবার তিনটে ছেলে ছিল আর ছোট ছেলের একটা মেয়ে ছিল। আলেমের
মৃত্যুর পরে বড় ছেলে পরিবার নিয়ে শহরের চলে যায়।
তার ছেলেরা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে আলেম হয়। এই ভাবে পনেরো বছর কেটে যায়। তারা বড় হয়ে যায়।
তারা সবাই গ্রামে আসে তাদের চাচাতো বোনের বিয়েতে। দুপুরে যোহরের সালাতের জন্য ওজু
করতে পুকুরে নামে। যেই না তারা পানিতে স্পর্শ করে হঠাৎ তিনটা হাত এসে তাদের পানির
ভিতরে নিয়ে যেতে চায়। দুইজনে নিয়ে যেতে পারে কিন্তু তৃতীয়জনকে নিয়ে যেতে পারে না।
কারণ, তার পকেটে আল-কোরআন ছিল।
তাই হাতটা থাপ্পড় মেরে চলে যায়। এতে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরার পর সবাইকে
ঘটনাটা খুলে বলে। সবাই বুঝে যায় তারা তাদের প্রতিশোধ নিয়েছে। যে বেঁচে গেছিলো সে
গ্রামে আর কখনো আসে নাই।
৩.
হাসান আজ বিকেলে পাশের গ্রামে খেলতে গেছে। সেখানে তার আবার কিছু বন্ধু আছে।
তাদের সাথে গল্প করতে করতে রাত হয়ে যায়। সে যখন হাফেকজ পুকুরের সামনে দিয়ে আসছিল
তখন বাজে রাত বারোটা।পুরো এলাকা নির্জন কোথাও কোন মানুষ নেই সে একা। হঠাৎ তার চোখের সামনে হাফেজ পুকুরের ভয়ানক অতীত ভাসতে
থাকে। ফলে তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। সে
কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। তখনই সে দেখতে পায় তার দিকে এগিয়ে আসছে একটা লোক।
সে মনের ভিতর সাহস খুঁজে পায়। কিন্তু,
সামনে গিয়ে লোকটাকে দেখে চমকে
যায়। এই তো সেই লোক যে কয়দিন আগে হাফেজ পুকুরের সামনে মারা যায়। সে তখনই উল্টো দৌড়
দেয় কিন্তু সে সামনে গিয়ে দেখে দুজন লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। এরা হচ্ছে সেই
হত্যাকারী আলেমের নাতি। তাদের চেহারা দেখতে কি যে ভয়ানক লাগছে। হঠাৎ সে দুজন তার সামনে এসে গায়েব হয়ে যায়। এবার
তারা তিনজন আসে তাদের দেখতে ভয়ানক লাগছে। সে তাদের সরাসরি দেখে পুরোপুরি ভয়ে জমে
যায়। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। তারা তিনজন তার সামনে এসে হাসতে থাকে। তাদের
হাসির আওয়াজটা এতটাই ভয়ংকর যে হাসানের
হ্রদপিন্ড দ্রুত উঠা-নামা করতে শুরু করে। তার বলতে থাকে তাদেরকে সেই আলেমের
তিন নাম্বার নাতিকে এনে দিতে হবে না হয় এভাবে গ্রামবাসীদের থেকে প্রতিশোধ নেবে।
তারা হাসানকে ভয় দেখাতে থাকে।
হাসান জানে সে যদি ভয় পায় তাকে মেরে পেলবে তারা। তার কাছে আগুন জালানোর কোন
যন্ত্রও ছিল না যে আগুন জালিয়ে তাড়িয়ে দিবে। হাসান হঠাৎ ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর তার আর কিছু মনে নেই। ফজরের সময় মুসল্লিরা
মসজিদে যাওয়ার সময় তাকে দেখতে পায়। হাসান তখন মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় রাস্তায়
পড়ে আছে। সবাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তখন সবার মনে আবারও সেই পুরোনো প্রশ্ন জেগে উঠে, এটা
নিশ্চয়ই তাদের কাজ?....
=====================
স্কুল : শাহীন একাডেমী স্কুল এন্ড
কলেজ, ফেনী
ঠিকানা : মিয়া বাড়ি, শাহীন একাডেমীর রোড, রামপুর, ফেনী, বাংলাদেশ।
Comments
Post a Comment