প্রবন্ধ
বিবেকানন্দের শিক্ষাদর্শন
শংকর ব্রহ্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন, "যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দকে জানো। তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে সবই ইতিবাচক, নেতিবাচক কিছুই নেই।"
বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন, দেশের ভবিষ্যৎ দেশের জনগণের উপর নির্ভর করে। তাই তিনি মনুষ্যত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "আমার উদ্দেশ্য, মানবজাতিকে তার অন্তর্নিহিত দেবত্ব শিক্ষা দেওয়া এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তা কীভাবে কাজে লাগাতে হয় তা শেখানো।"
তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা মানবতার পরিপূর্ণতার প্রকাশ। তা মানুষের মধ্যেই আছে। তার বিকাশ ঘটাতে হবে। সমসাময়িক শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে না, মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগাতে সাহায্য করে না। শিক্ষাকে তিনি তথ্যের সমষ্টি মনে করতেন না। তার কাছে শিক্ষা ছিল, মানুষ তৈরি করার, জীবন দানের ও চরিত্র গঠনের মাধ্যম। তিনি শিক্ষাকে মহান চিন্তার সমষ্টি মনে করতেন।
মানুষকে ইতিবাচক শিক্ষা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন বিবেকানন্দ। তিনি মনে করতেন, নেতিবাচক চিন্তাগুলি মানুষকে দুর্বল করে। তিনি বলেছিলেন, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সবসময় দোষারোপ না করে, উৎসাহিত করা উচিৎ, তবে তারা একসময় উন্নতি করবেই।
তিনি বলেছেন, ম্যাকলে শিক্ষাব্যবস্থা ও ভারতীয় বর্ণব্যবস্থা ছেলেমেয়েদের নেতিবাচক শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা থেকে তারা আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদার শিক্ষা পায় না। বিবেকানন্দের মতে, একমাত্র তাদের ইতিবাচক শিক্ষাই দেওয়া উচিত।
বিবেকানন্দ বলেছেন, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর থাকেন। তাই মানুষের সেবা করা মানেই ঈশ্বরের সেবা।
তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীতে যদি কোনও দেশকে পুণ্যভূমি বলতে হয়, যদি কোনও দেশে মানবিকতা, পবিত্রতা, শান্তি সর্বোচ্চ স্থান নেয় এবং সর্বোপরি কোনও দেশ যদি আধ্যাত্মিক ধারণায় পূর্ণ থাকে, তবে সেই দেশটি হল ভারত। ভারতীয়রা প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও অর্থকেই জীবনের লক্ষ্য মনে করে না। তারা সত্যের সন্ধান করে। তাঁর মতে, ইচ্ছা ও সংহতিই হল আসল শক্তি।
আত্মসংযমের উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। কারণ, সংযত মনের চেয়ে শক্তিশালী আর কিছুই হয় না। মনকে যতই সংযত করা হয়, তার শক্তি তত বাড়ে। তাই তিনি এমন কিছু করতে বারণ করেছেন, যা মনকে অশান্ত করে।
বিবেকানন্দ লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধিতা করেছেন। তার মতে আত্মায় লিঙ্গ বা বর্ণভেদ করা অশাস্ত্রীয়। এমনকি যোগ্যতার নিরিখ বিচার করাও অন্যায়। তাই তিনি পুরুষ-নারী চিন্তা না করে মানুষ চিন্তা করতে বলেছেন।
বিবেকানন্দ ঈর্ষা ও অহংকার ত্যগ করে একত্রে সবাইকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পবিত্রতা, ধৈর্য ও মানসিক দৃঢ়তা সব বাধা দূর করে দেয়। তাই তিনি সাহসের সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। যে কাজ ধৈর্যের সঙ্গে সঠিক ভাবে করা হয়, বিবেকানন্দের মতে, সেই কাজই সফল হয়।
– 'আত্মবিশ্বাসই ঈশ্বরবিশ্বাস।" বিবেকানন্দ বলেছেন, বিশ্বের ইতিহাস হল কয়েকটি আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষের ইতিহাস। নিজের উপর বিশ্বাস থাকলেই অন্তরের দেবত্ব জাগরিত হয়। তাই তিনি বলেছেন, তেত্রিশ কোটি হিন্দু দেবদেবী ও বিদেশি দেবদেবীতে বিশ্বাস থাকলেও, কারো যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে সে মুক্তি পাবে না।
======================
SANKAR BRAHMA.
8/1, ASHUTOSH PALLY,
P.O. - GARIA,
Kolkata - 700 084.
Comments
Post a Comment