নবাবী নুপুর
✍️পার্থ প্রতিম দাস
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর রাজা ও নবাবী শেষ হয়ে প্রজাতন্ত্রের উন্মেষ ঘটেছে। সেই প্রাচীন প্রাসাদগুলো এখন প্রায় অভিজাত হোটেলে পরিণত হয়েছে। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসে ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেখার জন্য। তখন তারা সেই হোটেলগুলোতে থাকে। সেই বঙ্কিমের যুগ থেকে ইতিহাসের প্রতি বাঙালীর আকর্ষণ তীব্র রয়েছে।
অশ্বিনী, সে বহুজাতিক সংস্থায় কর্মচারী। তার মতে রোজগার করো আর ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়ো ভারত দর্শনে। এই খামখেয়ালী মনোভাবের জন্য অশ্বিনী চিরকুমার থেকে গেছে। তাতে কি হয়েছে? তার সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা, নদী, গুহা ভাস্কর্য, ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি।
এবারের পুজোর ছুটিতে অশ্বিনী বেরিয়ে পড়লো আরাবল্লীর কোলে মরুস্থলির ইতিহাস দেখার জন্য। প্রাসাদ হোটেলে একটা রুম বুক করে পুজোর ছুটিটা কাটাচ্ছে। সারাদিন উটের পিঠে চেপে, হরিন ময়ূরের ছবি তুলে ফিরে আসে হোটেলে। প্রতি রাতে শুনতে পায় নূপুরের মিস্টি ধ্বনি। সকালে উঠে খুঁজতে থাকে কোথা থেকে নূপুরের ধ্বনি আসছিল! কর্মচারীদের জিগ্যেস করে।একজন গাইড সেই নবাবী অন্তঃপুরে কিছু ইতিহাস ও চিত্রশিল্প দেখায়। ছবি গুলোর মধ্যে অশ্বিনী আবিস্কার করে একটা ছবিতে নৃত্যরত সুন্দরী মেয়ে, পায়ে তার বহুমূল্য নুপুর। গাইড জানায়, "নবাবের সভার নর্তকী কৃতিকার ছবি। নবাব নৃত্যে মুগ্ধ হয়ে কৃতিকাকে ওই বহুমূল্য নুপুর উপহার দেয়। পরে কৃতিকা অজানা কারণে আত্মহত্যা করে।"
অশ্বিনী কথা শুনে বুঝতে পারে, কৃতিকার অতৃপ্ত আত্মা হয়তো এখনো এই প্রাসাদে আছে। তাইতো সে নূপুরের শব্দ শুনতে পায়। নবাবের চয়েস দারুন। এমন লাবণ্যময়ীর পায়ে তো অমূল্য নুপুর শোভা পায়। ছবিটার দিকে দেখলে চোখ ফেরানো অসম্ভব। রূপ গুনে ভরপুর সে চিত্র।
রাত গভীর হলো। হোটেল ঘুমিয়ে পড়েছে। শরতের আকাশে একা চাঁদ যেন ঘুমন্ত পৃথিবীটাকে পাহারা দিচ্ছে। আবার শোনা গেল নূপুরের ধ্বনি। অশ্বিনী বেরিয়ে পড়লো। এক এক করে সমস্ত জায়গায় ঘুরে ঘুরে সে পৌঁছে গেল একটা বন্ধ রুমের সামনে। রুমটা উপরে নাকি নীচে সেটা বোঝা মুশকিল। কারণ, অনেকগুলো সিঁড়ি উপর নীচে ওঠা নামা করে অশ্বিনী সেখানে পৌঁচেছে। চারপাশ দেখে সাহস করে বন্ধ দরজা খুলে দেখে সিলিং থেকে ঝুলছে একটা কঙ্কাল। ঝাড়বাতিটার উজ্জ্বল আলোয় কঙ্কালের দাঁত কপাটি যেন চিকচিক করছে। আর ওই কঙ্কালের পায়ে রাজার সেই মহামূল্যবান নুপুর পরানো আছে। জানলার ফাঁক দিয়ে শরতের হাওয়া এসে ওই পা দুখানা দোলাচ্ছে আর নুপুর বেজে চলেছে।
ততক্ষণে অশ্বিনীর হৃৎপিন্ড তার গলায় আটকে যাওয়ার অবস্থা। এতটা ভয় সে এর আগে কোনোদিন পায়নি।
=================
পার্থ প্রতিম দাস, আকন্দা, বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর

Comments
Post a Comment