কল্যাণ সেনগুপ্ত
আজ কোলাঘাটের বাড়ি যাওয়া হয়নি। ছুটির দিন, কি করি? কি করি? করতে করতে চলে গেলাম মিলনদার বাড়ি। অনেকদিন ধরে বলছিল। বললাম "দেখুন বললেন নি চলে এসেছি"। মিলনদা দাদার স্কুলের বন্ধু। দাদা এখন মুম্বাই কিন্তু আমার সাথে মিলনদার যোগাযোগ টা আছে। দাদা আর মিলন দা একসময় হরিহর আত্মা ছিল। এক স্কুল ,এক ক্লাস। মিলন দার বাবা আমাদের স্কুলের অঙ্কের টিচার ছিলেন।এখন মিলনদা কলকাতায় চাকরি করে। আমিও চাকরি করি কিন্তু সপ্তাহ শেষে বাড়ি যাই। এবার যাওয়া হয়নি। মিলনদা দেখে এক মুখ হাসি দিয়ে বললে "বাহ! বাহ! এই তো চাই । "ওগো শুনছো দেখ বিল্টু এসেছে" বলে হাঁক পাড়লে " ।
আবার মিলনদা আমার নাম ভুল বললে । বললাম " বিল্টু নয় চিত্ত ।
হ্যা, হ্যা, ওফ! কি যে হয় আজকাল।
হাসতে হাসতে বললাম " দাদা আপনি শেষ কুড়ি বছর ধরে আমার নাম ভুলভাল বলছ।
ঠিক, ঠিক। মিলনদা বললে " আজ যখন বাড়ি যাও নি চল আজ আমরা সাহেব কে নিয়ে চিড়িয়াখানা যাবো। তুমিও যাবে আমাদের সাথে। অনেকদিন গল্প গুজব হয় না।
অগত্যা। জোর আড্ডা হবে। মিলনদা ,বৌদি, ঝিমলি আর সাহেব । বৌদি সব খাবার দাবার প্যাক করছেন, ঝিমলি চার বছরের সাহেব কে রেডি করছে। মিলন দা বললে " বুঝলে বহু বছর বাদে যাচ্ছি। এইটাই মনেহয় শেষ যাওয়া।
কি অলুক্ষুনে কথা বলছেন সকাল বেলা?
হাসতে হাসতে বললে " তিনবার তুমি যাবেই। একবার সাহেব দের বয়েসে, ভাগ্য ভালো হলে কলেজ জীবনে দু থেকে তিনবার, সেটা শুধু জন্তু জানোয়ার নয় সঙ্গে ফাউ সুন্দরী মেয়েদের দেখার আশায়। আর বয়েস কালে নাতি নাতনীদের নিয়ে একবার। কি ঠিক কিনা?
এই একটা বাজে স্বভাব মিলন দার। খালি বলা " কি ঠিক কিনা" বলা।
হেসে বললাম চলুন আমিও অনেক দিন পর।
সাহেব খুব উত্তেজিত নানা জন্তু দেখবে বলে।
অনেকদিন পর এসে চিড়িয়াখানা টা অনেক ছোট মনে হল। আগে যেন অনেক বড় জায়গা নিয়ে ছিল। অনেক ইঁট কাঠ কংক্রিটের ঘর বাড়ি বেড়েছে।
কুমিরের ঘর, সাপের ঘর, সেই আগের মতই আছে। দুয়েকটা দেখে একটা গাছ তলায় বসেছি। বৌদি বললে " দেখেছো। এদের আর বয়েস হয় না।
মিলন দা বললে সত্যি আগেও যেরকম দেখেছি কুমিরগুলো, বানরগুলো, সিংহ সবারই বয়েস থেমে আছে দেখছি। ঠিক কিনা?
বললাম মিলন দা "আপনি সেই বলেছিলেন বাঘ আর শিম্পাঞ্জির গল্প বহু বছর আগে, বয়সের কথায় সেটা মনে পড়ল আজ"।
মিলনদা অবাক হয়ে বললে " বলেছিলাম নাকি? কী বল তো?"
ঝিমলি উজ্জীবিত হয়ে বললে" বল, বল, কি বলেছিল। বাবার আজকাল কিছুই মনে থাকে না।"
বললাম" আরে এই গল্প তো এখন লোকের মুখে মুখে,হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুকে।
"বলি মিলন দা?"
"হ্যা ,বল শুনি।"
" তখন আমরা কলেজে পড়ি। মিলনদা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির সন্ধান করছে। কিন্তু পাচ্ছে না কোথাও। একদম মরুভূমি চারিদিক। কে বন্ধুরা মিলে কোম্পানি করে এদিক ওদিক রাস্তার, বাড়ি ঘরের কনস্ট্রাকশন এর কাজ নিচ্ছে। বাবার মুদির দোকানে বসছে। এমন কি বাড়ির তাগাদায় টিউশুনি ও করছে এদিক ওদিক। এরকম সময় কাগজে একটা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গেজেটেড অফিসার এর এর বিজ্ঞাপন এল। এত মেঘ না চাইতেই জল। দেখে মিলনদার বন্ধু অ্যাপ্লাই করে দিলে। ইন্টারভিউ আসে চিড়িয়াখানা থেকে। বাড়ির লোক অবাক। এত জায়গা থাকে চিড়িয়া খানা?
বৌদি অবাক "ওমা! তাই। চিড়িয়াখানায় চাকরি? তারপর?"
বন্ধু গেল ইন্টারভিউ দিতে । এদিক ওদিক সামান্য কিছু জিজ্ঞাসা করে তাকে বলা হল চাকরি পার্মানেন্ট হবে কিন্তু কাজটা একটু ঝামেলার।
ঝিমলি বললে " চিড়িয়া খানায় আবার ঝামেলা কি?
ওদের একটা শিম্পাঞ্জি হঠাৎ করে মারা গেছে। কিন্তু ও খুব ফ্রেন্ডলী ছিল। খুব লাফালাফি করত। ডিগবাজি খেত। বাচ্চারা খুব ভালোবাসত। কর্তপক্ষ ভয় পাচ্ছে যে শিম্পাঞ্জির অবর্তমানে দর্শক না কমে যায়। তাই ওর ছাল টা ছাড়িয়ে রাখা আছে। চাকরির শর্ত হচ্ছে ওই ছালটা পড়ে নিয়ে শিম্পাঞ্জির মত কসরত করতে হবে। দশটা থেকে পাঁচটা। ইন্টারভিউ তে ওরা দেখতে চেয়েছিল সাইজে ঠিক হবে কিনা দেখতে। রোজ পাঁচটার পর বাড়ি, কোন ওভারটাইম নেই। চিড়িয়া খানার লোকেরা দেখিয়ে দেবে ঠিক কি কি ঠিক শিম্পাঞ্জির মত করতে হবে।
এরমধ্যে সাহেব ডাকাডাকি করছে " বাঘ দেখব। সিংহ দেখব। চল, চল পাখি দেখব"। ওকে থামিয়ে বৌদি বললে" ঝিমলি ওকে নিয়ে একটু এগো আমরা আসছি পিছনে"। আমার দিকে চেয়ে বললে "এরপর কি হল?"
বললাম " বন্ধু ইন্টারভিউ দিল। লেগেও গেল। চাকরির চিঠি চলে এল। বাড়িতে হৈ হৈ উৎসব লেগে গেল । সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এর চাকরি। প্রথম দিন ,অধিকর্তা ডাকলেন। গম্ভীর মুখে বললেন "একটা সতর্কতা আছে"।
নতুন চাকরির আনন্দে সেই বন্ধু না শোনার মত করে বললে " বলুন কি সতর্কতা? আর কি করতে হবে?"
গলা নামিয়ে অধিকর্তা বললেন " লাফালাফি করুন যত খুশি। কেউ না করছে না। করার সময় একটু সাবধান ।পাশেই বাঘের খাঁচা শুধু মনে রাখবেন। কোনো কারনে সেখানে পড়ে গেলে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। নির্ঘাত ওপরে।
এই বা কে পায়। প্রথম চাকরি ।বাইরে কিছু না বললেই হয়। প্রথম প্রথম বেশি লাফালাফি গায়ে হাতে ব্যথা হল। তারপর কমে গেল। বন্ধু রোজ যায়। নতুন নতুন লোকজন দেখা হয়। একদিন দেখলে ওর কলেজের বন্ধুরা এসেছে শিম্পাঞ্জি দেখতে। উত্তেজনায় খুব লাফালাফি করছে। মুখে তো ডাকতে পারছে না। সেদিন উত্তেজনায় লাফ টা একটু বেশি হয়ে গেল।
করতে গিয়ে পাশের খাঁচায় ঝপাং করে পড়ে গেল।
সাহেব ঝুলোঝুলি শুরু করেছে কারণ ঝিমলি যায়নি সাহেব কে নিয়ে গল্পটা শুনবার জন্য। একটু এগোলে সত্যি বাঘের খাঁচা।
বৌদি বললে "যেতে যেতেই বল"।
"পড়ে তো খুব ভয় পেয়েছে। ওঠার অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না। বাইরে দর্শক খুব মজা পাচ্ছে। হেসে গড়িয়ে পড়ছে শিম্পাঞ্জির ভয় পাওয়া দেখে। কিন্তু শিম্পাঞ্জি সত্যি সত্যি উঠতে পারছে না। বেশ কয়েক বার চেষ্টা করে হাঁফাতে লাগল। বাঘ টা দূরে বসেছিল চুপ করে।
এমন সময় মিলনদা চেঁচিয়ে উঠলো মনে পড়েছে, মনে পড়েছে । দাড়াও বাকিটা আমি বলছি। ততক্ষনে বাঘের খাঁচার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। মিলন দা ধরলে "চাকরি বাঁচাতে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে পারছে না। এদিকে বাঘ আসতে আসতে এগিয়ে আসছে।"
ঝিমলি বাঘের খাঁচায় সামনে দাড়িয়ে বললে " দেখো দেখো এখানেও বাঘের পাশে শিম্পাঞ্জির খাঁচা।
সত্যি তো। আমরাও অবাক হলাম। শিম্পাঞ্জি টা এখানেও লাফালাফি করছে বাচ্চাদের দেখে।
বৌদি ছাড়বে না বললে " গল্প টা শেষ কর।
মিলন দা একটু সরে পাশে দাড়িয়ে বললে " বাঘ টা যখন একদম কাছে চলে এসেছে তখন ভয়ে বন্ধু চোখ বুজে ফেলে ইস্টনাম জপ করতে লেগেছে।
তারপর কি হল?
বাঘ টা কিন্তু হামলে পড়ল না। খাঁচার মধ্যে শিকার হুড়োহুড়ির কি আছে?
তবে? ঝিমলি উত্তেজনায় ফুটছে।
মিলনদা বললে " ও কাছে এসে শিম্পাঞ্জির কানে কানে শুধু বললে " কোন ব্যাচ?
ব্যস গল্প শেষ। ঝিমলি আর বৌদি হা, হা করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা। একবার মাথা নিচু আরেকবার আকাশ পানে মুখ করে হেসেই যাচ্ছে।
হঠাৎ খেয়াল হল চারিদিকে চিড়িয়া খানার লোক জন লাঠি হাতে সবাইকে বার করে দিচ্ছে বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে।মিলন দা বললে "দেখেছো শিম্পাঞ্জি টা ভিতরে ঢুকে গেছে আর দেখা যাচ্ছে না। আমি বললাম দাড়ান আমি আসছি। বলে খাঁচার পিছনের দিকে দৌড়ে যেতে গেলাম। কিছুটা যেতেই লাঠি হাতে লোকজন আমাকে আটকাল। চলুন, চলুন। সময় হয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে যেতেই হবে। লোকগুলো ছাড়বে না। তর্কাতর্কি তে স্পষ্ট দেখলাম দূরে পিছনের শিম্পাঞ্জির ঘর থেকে একটা পরিষ্কার জামা কাপড় পড়া হাতে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে কেউ বেড়িয়ে যাচ্ছে পিছনের মাটির রাস্তা ধরে ।
আমি চেঁচিয়ে বললাম মিলন দা দেখলেন? , দেখলেন?"লোকগুলো এবার জোর করেই আমাদের পিছনের দিকে ঠেলে সরিয়ে দিতে থাকল। শিম্পাঞ্জির খাঁচা খালি। আবার কাল সকাল দশটায় সে সামনে আসবে।
মিলনদা চোখ বড় বড় করে বিস্মিত চোখে আমাকে বললেন " দেখলে, ? এমন কি বাঘের খাঁচাও খালি?
ফিরে আসবার সময় গেট অবধি মুখে কোন কথা নেই আমাদের।
মিলনদা শুধু বললে " চল, দুদিন বাদে আরেকবার আসব। গল্পটা তাহলে গল্প নয়। তাই বয়েস হয় না চিড়িয়া খানার জন্তুদের।
আবার মিলনদা আমার নাম ভুল বললে । বললাম " বিল্টু নয় চিত্ত ।
হ্যা, হ্যা, ওফ! কি যে হয় আজকাল।
হাসতে হাসতে বললাম " দাদা আপনি শেষ কুড়ি বছর ধরে আমার নাম ভুলভাল বলছ।
ঠিক, ঠিক। মিলনদা বললে " আজ যখন বাড়ি যাও নি চল আজ আমরা সাহেব কে নিয়ে চিড়িয়াখানা যাবো। তুমিও যাবে আমাদের সাথে। অনেকদিন গল্প গুজব হয় না।
অগত্যা। জোর আড্ডা হবে। মিলনদা ,বৌদি, ঝিমলি আর সাহেব । বৌদি সব খাবার দাবার প্যাক করছেন, ঝিমলি চার বছরের সাহেব কে রেডি করছে। মিলন দা বললে " বুঝলে বহু বছর বাদে যাচ্ছি। এইটাই মনেহয় শেষ যাওয়া।
কি অলুক্ষুনে কথা বলছেন সকাল বেলা?
হাসতে হাসতে বললে " তিনবার তুমি যাবেই। একবার সাহেব দের বয়েসে, ভাগ্য ভালো হলে কলেজ জীবনে দু থেকে তিনবার, সেটা শুধু জন্তু জানোয়ার নয় সঙ্গে ফাউ সুন্দরী মেয়েদের দেখার আশায়। আর বয়েস কালে নাতি নাতনীদের নিয়ে একবার। কি ঠিক কিনা?
এই একটা বাজে স্বভাব মিলন দার। খালি বলা " কি ঠিক কিনা" বলা।
হেসে বললাম চলুন আমিও অনেক দিন পর।
সাহেব খুব উত্তেজিত নানা জন্তু দেখবে বলে।
অনেকদিন পর এসে চিড়িয়াখানা টা অনেক ছোট মনে হল। আগে যেন অনেক বড় জায়গা নিয়ে ছিল। অনেক ইঁট কাঠ কংক্রিটের ঘর বাড়ি বেড়েছে।
কুমিরের ঘর, সাপের ঘর, সেই আগের মতই আছে। দুয়েকটা দেখে একটা গাছ তলায় বসেছি। বৌদি বললে " দেখেছো। এদের আর বয়েস হয় না।
মিলন দা বললে সত্যি আগেও যেরকম দেখেছি কুমিরগুলো, বানরগুলো, সিংহ সবারই বয়েস থেমে আছে দেখছি। ঠিক কিনা?
বললাম মিলন দা "আপনি সেই বলেছিলেন বাঘ আর শিম্পাঞ্জির গল্প বহু বছর আগে, বয়সের কথায় সেটা মনে পড়ল আজ"।
মিলনদা অবাক হয়ে বললে " বলেছিলাম নাকি? কী বল তো?"
ঝিমলি উজ্জীবিত হয়ে বললে" বল, বল, কি বলেছিল। বাবার আজকাল কিছুই মনে থাকে না।"
বললাম" আরে এই গল্প তো এখন লোকের মুখে মুখে,হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুকে।
"বলি মিলন দা?"
"হ্যা ,বল শুনি।"
" তখন আমরা কলেজে পড়ি। মিলনদা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির সন্ধান করছে। কিন্তু পাচ্ছে না কোথাও। একদম মরুভূমি চারিদিক। কে বন্ধুরা মিলে কোম্পানি করে এদিক ওদিক রাস্তার, বাড়ি ঘরের কনস্ট্রাকশন এর কাজ নিচ্ছে। বাবার মুদির দোকানে বসছে। এমন কি বাড়ির তাগাদায় টিউশুনি ও করছে এদিক ওদিক। এরকম সময় কাগজে একটা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গেজেটেড অফিসার এর এর বিজ্ঞাপন এল। এত মেঘ না চাইতেই জল। দেখে মিলনদার বন্ধু অ্যাপ্লাই করে দিলে। ইন্টারভিউ আসে চিড়িয়াখানা থেকে। বাড়ির লোক অবাক। এত জায়গা থাকে চিড়িয়া খানা?
বৌদি অবাক "ওমা! তাই। চিড়িয়াখানায় চাকরি? তারপর?"
বন্ধু গেল ইন্টারভিউ দিতে । এদিক ওদিক সামান্য কিছু জিজ্ঞাসা করে তাকে বলা হল চাকরি পার্মানেন্ট হবে কিন্তু কাজটা একটু ঝামেলার।
ঝিমলি বললে " চিড়িয়া খানায় আবার ঝামেলা কি?
ওদের একটা শিম্পাঞ্জি হঠাৎ করে মারা গেছে। কিন্তু ও খুব ফ্রেন্ডলী ছিল। খুব লাফালাফি করত। ডিগবাজি খেত। বাচ্চারা খুব ভালোবাসত। কর্তপক্ষ ভয় পাচ্ছে যে শিম্পাঞ্জির অবর্তমানে দর্শক না কমে যায়। তাই ওর ছাল টা ছাড়িয়ে রাখা আছে। চাকরির শর্ত হচ্ছে ওই ছালটা পড়ে নিয়ে শিম্পাঞ্জির মত কসরত করতে হবে। দশটা থেকে পাঁচটা। ইন্টারভিউ তে ওরা দেখতে চেয়েছিল সাইজে ঠিক হবে কিনা দেখতে। রোজ পাঁচটার পর বাড়ি, কোন ওভারটাইম নেই। চিড়িয়া খানার লোকেরা দেখিয়ে দেবে ঠিক কি কি ঠিক শিম্পাঞ্জির মত করতে হবে।
এরমধ্যে সাহেব ডাকাডাকি করছে " বাঘ দেখব। সিংহ দেখব। চল, চল পাখি দেখব"। ওকে থামিয়ে বৌদি বললে" ঝিমলি ওকে নিয়ে একটু এগো আমরা আসছি পিছনে"। আমার দিকে চেয়ে বললে "এরপর কি হল?"
বললাম " বন্ধু ইন্টারভিউ দিল। লেগেও গেল। চাকরির চিঠি চলে এল। বাড়িতে হৈ হৈ উৎসব লেগে গেল । সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এর চাকরি। প্রথম দিন ,অধিকর্তা ডাকলেন। গম্ভীর মুখে বললেন "একটা সতর্কতা আছে"।
নতুন চাকরির আনন্দে সেই বন্ধু না শোনার মত করে বললে " বলুন কি সতর্কতা? আর কি করতে হবে?"
গলা নামিয়ে অধিকর্তা বললেন " লাফালাফি করুন যত খুশি। কেউ না করছে না। করার সময় একটু সাবধান ।পাশেই বাঘের খাঁচা শুধু মনে রাখবেন। কোনো কারনে সেখানে পড়ে গেলে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। নির্ঘাত ওপরে।
এই বা কে পায়। প্রথম চাকরি ।বাইরে কিছু না বললেই হয়। প্রথম প্রথম বেশি লাফালাফি গায়ে হাতে ব্যথা হল। তারপর কমে গেল। বন্ধু রোজ যায়। নতুন নতুন লোকজন দেখা হয়। একদিন দেখলে ওর কলেজের বন্ধুরা এসেছে শিম্পাঞ্জি দেখতে। উত্তেজনায় খুব লাফালাফি করছে। মুখে তো ডাকতে পারছে না। সেদিন উত্তেজনায় লাফ টা একটু বেশি হয়ে গেল।
করতে গিয়ে পাশের খাঁচায় ঝপাং করে পড়ে গেল।
সাহেব ঝুলোঝুলি শুরু করেছে কারণ ঝিমলি যায়নি সাহেব কে নিয়ে গল্পটা শুনবার জন্য। একটু এগোলে সত্যি বাঘের খাঁচা।
বৌদি বললে "যেতে যেতেই বল"।
"পড়ে তো খুব ভয় পেয়েছে। ওঠার অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না। বাইরে দর্শক খুব মজা পাচ্ছে। হেসে গড়িয়ে পড়ছে শিম্পাঞ্জির ভয় পাওয়া দেখে। কিন্তু শিম্পাঞ্জি সত্যি সত্যি উঠতে পারছে না। বেশ কয়েক বার চেষ্টা করে হাঁফাতে লাগল। বাঘ টা দূরে বসেছিল চুপ করে।
এমন সময় মিলনদা চেঁচিয়ে উঠলো মনে পড়েছে, মনে পড়েছে । দাড়াও বাকিটা আমি বলছি। ততক্ষনে বাঘের খাঁচার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। মিলন দা ধরলে "চাকরি বাঁচাতে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে পারছে না। এদিকে বাঘ আসতে আসতে এগিয়ে আসছে।"
ঝিমলি বাঘের খাঁচায় সামনে দাড়িয়ে বললে " দেখো দেখো এখানেও বাঘের পাশে শিম্পাঞ্জির খাঁচা।
সত্যি তো। আমরাও অবাক হলাম। শিম্পাঞ্জি টা এখানেও লাফালাফি করছে বাচ্চাদের দেখে।
বৌদি ছাড়বে না বললে " গল্প টা শেষ কর।
মিলন দা একটু সরে পাশে দাড়িয়ে বললে " বাঘ টা যখন একদম কাছে চলে এসেছে তখন ভয়ে বন্ধু চোখ বুজে ফেলে ইস্টনাম জপ করতে লেগেছে।
তারপর কি হল?
বাঘ টা কিন্তু হামলে পড়ল না। খাঁচার মধ্যে শিকার হুড়োহুড়ির কি আছে?
তবে? ঝিমলি উত্তেজনায় ফুটছে।
মিলনদা বললে " ও কাছে এসে শিম্পাঞ্জির কানে কানে শুধু বললে " কোন ব্যাচ?
ব্যস গল্প শেষ। ঝিমলি আর বৌদি হা, হা করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা। একবার মাথা নিচু আরেকবার আকাশ পানে মুখ করে হেসেই যাচ্ছে।
হঠাৎ খেয়াল হল চারিদিকে চিড়িয়া খানার লোক জন লাঠি হাতে সবাইকে বার করে দিচ্ছে বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে।মিলন দা বললে "দেখেছো শিম্পাঞ্জি টা ভিতরে ঢুকে গেছে আর দেখা যাচ্ছে না। আমি বললাম দাড়ান আমি আসছি। বলে খাঁচার পিছনের দিকে দৌড়ে যেতে গেলাম। কিছুটা যেতেই লাঠি হাতে লোকজন আমাকে আটকাল। চলুন, চলুন। সময় হয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে যেতেই হবে। লোকগুলো ছাড়বে না। তর্কাতর্কি তে স্পষ্ট দেখলাম দূরে পিছনের শিম্পাঞ্জির ঘর থেকে একটা পরিষ্কার জামা কাপড় পড়া হাতে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে কেউ বেড়িয়ে যাচ্ছে পিছনের মাটির রাস্তা ধরে ।
আমি চেঁচিয়ে বললাম মিলন দা দেখলেন? , দেখলেন?"লোকগুলো এবার জোর করেই আমাদের পিছনের দিকে ঠেলে সরিয়ে দিতে থাকল। শিম্পাঞ্জির খাঁচা খালি। আবার কাল সকাল দশটায় সে সামনে আসবে।
মিলনদা চোখ বড় বড় করে বিস্মিত চোখে আমাকে বললেন " দেখলে, ? এমন কি বাঘের খাঁচাও খালি?
ফিরে আসবার সময় গেট অবধি মুখে কোন কথা নেই আমাদের।
মিলনদা শুধু বললে " চল, দুদিন বাদে আরেকবার আসব। গল্পটা তাহলে গল্প নয়। তাই বয়েস হয় না চিড়িয়া খানার জন্তুদের।
==============
Kalyan Sengupta
Flat 4B,
2.N.N.Dutta Road
Kolkata 700040

Comments
Post a Comment