প্রিয়াংশু বিশ্বাস
নরকের যমালয়ের সামনে 'ডু নট ডিসটার্ব' বোর্ড ঝুলছে। দরজার সামনে চারজন যমদূত এসে জুটেছে। অগা, মগা, জগা আর বগা। অগা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, "এই দ্যাক, বুড়ো দরজা বন্দ করে পুঁতি লিখতেচে।"
জগা অবাক হয়ে বললো, "পুঁতি মানে?"
মগা বললে, "কারবার দেকিচিস, মগরেল বলে কি শোন। পুঁতি মানে জানে না। পুঁতি হলো গে এসকারসাইজ।"
বগা বললে, "ওই হ্যালো, বিদ্যের জাহাজ এলেন রে! ওটা এসকারসাইজ নয়, ওটা এক্সারসাইজ বুক। পারিস নে যকন ইঞ্জিরি ঝাড়তি এয়েচিস কেনো?"
মগা বললে, "চটতিচিস কেনো ভাই? ব্যাপারটা আগে শোন। সেবার আমায় একজনের ডেলিভারি নিতে যেতি হলো। টাইমটা ভুল করে পড়লুম। দুক্কুর তিনটে পঁয়ত্রিশ মিনিট। আসলে ওটা ছেলো দুক্কুর পাঁচটা তিপ্পান্ন মিনিট। আমার ভিজিটাল ঘড়িটা নতুন কিনিচি। হেব্বি দেখতে, কি করবো, না কিনে থাকতি পারলুম না। এট্টু অসোবিদা হয়, কিন্তু দেকলে পেরানে কেমন এট্টা শান্তি শান্তি আসে!"
যমালয়ের ভিতর থেকে চিত্রগুপ্তের ধমক এলো, "কারা চেলাচ্ছিস রা? ফের যদি শুনিচি, তোদের ভাগ্যের লেক পালটে ডাইনোসরাস করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দোবো।"
জগা ফিসফিস করে বললো, "এই জন্যি তোর ওপরে হেব্বি রাগ ধরে যায়। তুই হেব্বি ফালতু বকিস। আসল কতাটা সটে মার।"
বগা একটু থতমত খেয়ে ফের বললো, "তা বলচিলুম, সে নোকটার ঘরে তো ঢুকি পড়লাম। কিন্তু নোকটার মররার নাম নি। বেশ খানিক্কন ওয়েট করে সিগনালি খবর নে জানলুম, ব্যাটার মরবার ঢের দেরী আচে। তা বসলুম, একপাশে। নোকটা ছেলো ইনজিরির পফেসার। ইনজিরির পোতি আবার আমার বরাবরের এট্টু দূর্বলতা আচে। সে সবাই জানে। সেও দেখলুম ইনজিরি পড়াচ্ছে। কি সুন্দর পড়াচ্ছে। কি সাউন, কি থোরো, কি উচ্চারন। উফফফ, আমি তো একেবারে বাক্যিহারা। ওদিন কতকিচু জানলুম। এই যে তোরা, চেয়ারে বসবার জন্যি ঝগড়া করে মরিস। তার আসল নাম কি জানিস?"
অগা অবাক হসে বললো, "চেয়ারির আবার আসল মানে আচে নাকি? বলিস কি?"
বগা বললে, " তাহলে আর বলচি কি! চেয়ারকে ভালো বাংলায় বলে 'কেদারা'। তারপর ধর, জামাকাপড় রাকার টেরাংককে বলে তোরঙ্গ, মোবাইল ফোনকে বলে দূরভাষক্রমনিকা। তারপর..."
মগা বললো, "কান্ডটা দেকতিচিস। ফের জ্ঞানের মাঁপি খুলে নে বসেচে। কতা কিছুতেই সট আর কত্তি পারে নে। ওসব পেরাইভেট কতা থাক। একন যে কাজের জন্যি একেনে আসা সেইটে আগে মিটমাট হোক। যে লাশটা আমরা চারজন দাবী কত্তিচি, সেটা কার খাতি জমা হবে?"
ফের যমালয়ের ভেতর থেকে চিত্রগুপ্তের ধমক এলো, "ফের চেল্লাচ্ছিস? ফের শুনলি, ভাগ্যের লেক ডিলিট করে শিম্পাঞ্জী করে পৃথিবীতে পাটিয়ে দোবো।"
বগা বললে, "বুড়ো সাহেব ডি. লিট দিচ্চে কবে থেকে?"
অগা বললে, "ডি. লিট মানে?"
বগা বললে, "ওহ তোরা জানিসনে বুঝি? ডি লিট মানে হলো ডক্টর অফ লিটারেচার, এট্টা বিরাট বড়ো ডিগ্রী।"
অগা বললে, "কত বড় ডিগ্রী? 180 ডিগ্রী না 365 ডিগ্রী? অঙ্কের বিষয় বলে মনে হচ্ছে?"
বগা বললে, "ধুররর, ও ডিগ্রী নয়, এটা এট্টা সাট্টিফিকেট। যারা রিসার্চ করে, তারা এই সাট্টিফিকেট পায়। সে যাক গে, তোরা এসব বুজবিনি। এর জন্ন হেব্বি পড়াশোনা করতে লাগে। ন্যাক থাকা চাই। জানিস এজন্য ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে কার্ড করবার জন্নি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে গেচিলুম। তা সে আদার কাট, ভোটার কাট কত কিচু চাইলো। ধুররর পালিয়ে এলুম।"
জগা বললে, "এত জ্ঞান রাখিস কোথায় তুই? এত জ্ঞান তবু এট্টু অহংকার নি। রাতে ঘুম হয়? ডিলিট মানে মুচে দেওয়া, মানে কম্পিউটারে মুচে দেওয়া। বুড়ো সাহেব কম্পিউটারে একন কাজ কত্তেচে। হেড অফিস থেকে অর্ডার এয়েচে। বুড়ো একেতে চোকে দেকে না, তারপর সাড়ে সতেরো লক্ষ বচর বয়স হলো, হাতে পায়ে আর সাড় নি। তবু গদি ছাড়বে নে। এই এক আংগুল দিয়ে কি-বোট চেপে চেপে টাইপ কত্তেচে আর মুচতেচে। কত বানাম ভুল হচ্চে। আর কেস জন্ডিস হচ্চে। কি হ্যারাসমেন্ট, কি হ্যারাসমেন্ট! আর একন যমালয়ে যা কাজের পেসার, ভাবচি কাজ ছেড়ে দেবো। পৃথিবীতে গিয়ে করোনার ভ্যাসকিন বেলাক করবো। হেব্বি ইনকাম। রোজকার এই হ্যানগাম আর ভাল লাগতেচে না।"
যমালয়ের ভেতর থেকে ধমক এলো, "ফের চেল্লালে ওরাং ওটাং করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দোবো।"
অগা ফিসফিস করে বললে, "তাহলে ওই লাশটা আমায় দাও তোমরা। তোমরা তো জানো, যে পরীক্কায় ফেল করে সুইসাইড করবে সে লাশ আমার। অন্য লাশ নেবার তো জো নেই আমার, এই লাশটা হলে আমার একশোটা ডায়মন্ড কোটা ফিলাপ হবে। তারপর বহু বচর পর এমন এট্টা লাশ পেয়েচি। একটা হেব্বি অসিক্কিত লাশ।"
বগা বললে, "কি করে বুঝলি ওটা অসিক্কিত লাশ?"
অগা বললে, " সিম্পিল, মরবার আগে চেল্লাচ্ছিলো মার্কস বাদ, মার্কস বাদ, মানে পরিষ্কার রেজাল্টি সব পাশ নাম্বার বাদ। একন তো কেউ পরিক্ষায় কম নাম্বার পেয়ে সুইসাইড করে না। একন তো পরিক্ষাই ক্যান্সিল। পরীক্ষা না দিয়েই ছেলে-পিলেরা পাশ কত্তেচে।"
মগা বললে, "আহাহা, আমায় দাও। বাচ্চার হাতের মোয়া এক্কেরে না? ওটা আমার লাশ, ওটা এট্টা পলিটিক্যাল লাশ, আমিও এস্পটে ছিলাম। ও মার্ক্সবাদ বলে চেল্লাচ্ছিলো। মার্ক্সবাদ কি তা তো কেউ জানো না। মার্ক্সবাদ হলো সাম্যের প্রতীক মানে ইকুয়ালিটি। সবার সমান অধিকার।"
যমালয়ের ভেতর থেকে কের ধমক এলো, "ফের চেল্লাচ্ছিস? এবার কিন্তু মোরগ করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দোবো।"
বগা বললে, "ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, ওটা আমার। এটার এভরি ডেটা চিৎকার করে বলতেচে, এটা করোনা, মানে আমার পেশেন্ট। লোকটার নাম করোনা, মানে ফুল নাম কমল রক্ষিত নাথ। ক-তে কমল, র-তে রক্ষিত, ন-তে নাথ। ফেসবুক সাচ করে দেকে নিতে পারো। আর মরার সময় আমিও এসপটে ছিলুম। ও চেল্লাচ্ছিল, "মাস্ক বাঁধ, মাস্ক বাঁধ।"
জগা বললে, "দেখো ভাই তুমি করোনার ডেডবডি অনেকগুনো পাবে, কিন্তু ওটা আমাকেই দিতে হবে, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। আমি ওটা নিয়ে কালকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েচি। তিনলক্ষ করে লাইক আর ভিউ আর শেয়ার হয়েচে। আমি কিছুতেই মিথ্যেবাদী সাজতি পারবো না।"
[ সমাপ্ত ]

Comments
Post a Comment