মুরোদ
রানা জামান
মাজেদার চিৎকারে ব্যথিত হতে থাকে আকাশ বাতাশ। মেয়ে দুটোকে বাবা ছাইদুল ধরে রেখেছে কোলে। মনে মনে বলছে: পরপর দুইটা মাইয়া দিছো আল্লাহ, বংশ রক্ষার জন্য এইবার একটা পোলা দেও।
মাজেদার ছোটবোন সাজেদা এসে বললো, বুবুর খুব কষ্ট হইতাছে। হেরে কুনু ক্লিনিকে নিয়া চলেন দুলাভাই।
ছাইদুল বললো, ক্লিনিকে নেয়ার মতো ট্যাকা নাই। এর আগেও তোমার বুবুর দুইটা নরমাল ডেলিভারি হইছে। এইবারও নরমাল ডেলিভারি হইবো ইনশাআল্লাহ।
আপনের মতো কঞ্জুস ছাড়া আর কেউ দাই ডাকে না ডেলিভারির লাইগা।
তখন মাজেদার গগনবিদারী চিৎকারের সাথে সাথে নবজাতকের চিৎকারও শোনা গেলে সাজেদা ছুটে চলে গেলো আঁতুড়ঘরে।
ছাইদুল দুই মেয়েকে বললো, শুইন্যা আহো তোমাদের ভাই হইছে না বইন হইছে।
মেয়েরা আঁতুড়ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালে মাজেদা হাত ইশারায় ভেতরে ঢুকতে বললে ওরা ভেতরে ঢুকে তাকিয়ে রইলো নবজাতকের দিকে।
মাজেদা বললো, তোগো আরেকটা বইন হইছে। তোগো বাপরে গিয়া জানা।
কিন্তু ছাইদুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। আধাঘণ্টা পরে ছাইদুল মাজেদাকে ফোনে বললো, তোরে একটা পুলা দিতে কইছিলাম। কিন্তুক তুই তিনটা মাইয়া বিয়াইলি। তোরে দিয়া আমার বংশ রক্ষা হইতো না।
পনেরো দিন পরে ছাইদুলের দ্বিতীয় বিয়ের সংবাদ পেয়ে মাজেদা চলে এলো বস্তিতে। জুলিয়াকে বললো, কমসেকম একটা পোলা পয়দা কইরো। নাইলে ছাইদুল আরেকটা বিয়া করবো। তিন মাইয়া পয়দা হইছে বইলা আমারে ত্যাগ কইরা তোমারে নিকা করছে।
মাজেদার সংসার চলতে থাকলো যেমন চলার কথা। দশ মাস পরে সংবাদ পেয়ে একদিন মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে তিন মেয়ে সহ মাজেদা ছাইদুলের ঝুপড়িতে উপস্থিত। ছাইদুলের দিকে মিষ্টির প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরে বললো, চাইর নম্বর মাইয়ার বাপ হওয়ায় মিষ্টি লইয়া আইসি।
ছাইদুল বললো, তুই কি আমার কাটা ঘায়ে নুন দিতে আইছস?
বিয়ার পর থাইকা কুনুদিন ভাত-কাপড় দেও নাই। তবু মাইন্যা নিছিলাম। পোলা পয়দা না হওয়া কি আমার দোষ?
এই ঘটনার দুই বছর পরে ছাইদুলের ষষ্ঠ মেয়ের বাবা হবার সংবাদ পেয়ে মাজেদা দ্বিগুণ আকৃতির মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে তিন মেয়েসহ ফের চলে এলো বস্তিতে। ছাইদুলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো, অহন কী করবা? তিন নম্বর বিয়া করবা? হেই মুরাদ কি আছে তোমার?
================
রানা জামান
বড়বাগ, মিরপুর-২;
ঢাকা-১২১৬; বাংলাদেশ

Comments
Post a Comment