৩টি কবিতা ।। অর্ণব সামন্ত
বালুচরীর স্রোত
স্রোতকে ভুলতে চেয়েছি বালুচরীতে
বালু আর চরী দুটি শব্দের উচ্চারণে
মনে পড়ে চোরাবালির কথা যেখানে মানুষ
হাজার চেষ্টা করেও বাস্তবিক চক্রব্যুহে পড়ে যায়
অভিমন্যুর থেকে বড়ো হবার চেষ্টা করেও পারে না
আকন্ঠ মায় আমস্তক ডুবে যায় সহজিয়া ভঙ্গিতে
একটি সহজ গান গাইতে গাইতে , যার মর্মকথা
বেদনার বালুচরে খেলাঘর বাঁধার ইচ্ছা
মহাকালের বিন্দুর চেয়েও আরও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু
অথবা প্রায়ই শূন্য শূন্যপুরের যার অনায়াস যাতায়াত
স্রোত বন্ধ হলেও তার মধ্যে আগুন থাকে
যা সেই স্রোতস্বিনীকে বা অন্তরঙ্গ হওয়া মানুষজনকে
পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় , কখনো সখনো স্রোত দৃশ্যমান
না হলে ফল্গুভাবে বহমান হয় , তার চোরাবালিতে
সে প্রিয়জনকে গ্রাস করে আনন্দ পায়
তবে সে মৃত্যু মৃত্যু নয় মৃত্যুর অধিক মৃত্যু
যার সঞ্জীবনী সুধা পানে জীবন পেয়ে যায়
জীবনের থেকেও বেশি জীবন ,
তখন স্রোতস্বিনী সমুদ্রে হারায় নাকি
সমুদ্র স্রোতস্বিনীতে হারায় তার জন্য
কোনো ভূগোলবিদ বা সেচদপ্তরের আধিকারিককে লাগবে না
কিংবা জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করার টারবাইন বা ইঞ্জিনিয়ার দরকার নেই
শুধু স্রোত বসে থাকে , হেঁটে বেড়ায় , ছোটে সহজ পোশাকে
সরল ভঙ্গিতে , অক্ষরে অক্ষরে ঢেউ লাগে
বিবর্তনে বিবর্তনে পরিবর্তনই ধ্রুবসত্য বলে
এক জীবন অন্য জীবনের ঠোঁটে চুমু খায়
আর শিষ দিতে দিতে উদাত্ত গান গেয়ে ওঠে
সমুদ্র ফেনায় , জ্যোৎস্নায় , স্পন্দনে , কম্পনে , আনন্দের অর্গাজমে !
মোহনার সহজ গান
মোহনায় ফুটেছে নয়ন গর্জনশীলা চল্লিশার গান
সূর্যমুখী , বোড়ে নিয়ে বসে আছে দ্রাঘিমা
রাজরাজেশ্বরী শব্দের জাদুতে ছুঁয়েছে নৈঃশব্দ্যের পদ
সমস্ত খিদে , খেদ জুড়ে চলে জ্যোৎস্নার প্লাবন
নদীভিত্তিক সভ্যতার হৃদয়ে শুধুই আগুনের দাউ দাউ ও জলের ছলাৎছল
সোরা সেজান সফেন সমুদ্রের বুকে রামধনুপট্টি
পল গোগাঁ সহজ গান হয়ে মঞ্জরিত তাহিতি দ্বীপে
সমস্ত কামনাবাসনা জুড়ে মোহমুগ্ধতা চাঁদের ভুরুভঙ্গে চাঁদ
জ্যোৎস্নাপ্রপাতের স্বাভাবিকতায় চাঁদও পেয়ে যায় লজ্জা
উতলা সমর্পণ ডাকে এক জায়মান উত্থানকে
পান্ডুলিপির অক্ষরে অক্ষরে তখন ব্ল্যাকহোলের অপত্য আলো !
শিকড়ের স্বাদগন্ধ
শিকড়ের স্বাদ নিতে আবার ফিরি সমুদ্রে
এখানেই মুথাঘাসে শিশির , শিউলি বকুলের ঘ্রাণ
ইনহিবিশন একপাশে সরিয়ে অন্যপাশে পিছুটানহীন
নীলকে ধারণ করে পুষ্করিণী প্রতিবিম্বে প্রতিফলনে
সোঁদা মাটি আর্দ্র হয়ে ওঠে করুণায় স্নেহে প্রেমে
নির্ভেজাল প্রাণ ঢেলে দাও প্রাণের আরও গভীরে
মুখে ফোটাও সহজ শব্দ ছন্দ সাযুজ্যে সামীপ্যে
সরল আলো হেঁটে যাক তিশানের নারী হয়ে
যদিও মাঝপথে এসে দাঁড়ায় রেমব্রান্টের হলুদ আঁধার
আবার মুখোমুখি সোরা ও সেজান স্তরে স্তরে রঙের উন্মোচন
জলের গহীনে যেতে চেয়ে জল অপত্য আলোকে করে আহ্বান
সদ্যোজাতের আকর্ষক গন্ধ মোহমুগ্ধ করে রাখে জীবন
ছিন্ন শিকড় সম্পর্কের মাটিতে পায় অথই সমুদ্র !
*******************
ARNAB SAMANTA
Gorkhara , Langalpara
Near Milan Sangha Club Field ( East Side)
P.O. + P.S. -- SONARPUR
SOUTH 24 Pgs
Kol - 150
Comments
Post a Comment