দৌড় প্রতিযোগিতা
মুক্তি দাশ
মা মরে যাওয়ার পর লালু ভীষণ একা হয়ে গেল। একেবারে একা। বাপ তো অনেক আগেই পরপারে। এই বিশাল পৃথিবীতে এখন সে একদম একা। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায়, কখনো বা বাস-স্ট্যান্ডে, কখনো স্টেশন চত্বরে ঘুরে বেড়ায়। ভিক্ষে করে কোনোরকমে দিন গুজরান হয়। রাত্তিরে ফুটপাতে মড়ার মতো ঘুমোয়।
সেদিন রাস্তার ধারে বসে সে চেয়ে-চিন্তে পাওয়া বাসি পাউরুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল, হঠাৎ ভুলুর সংগে দেখা। ভুলুকে সে কাছে ডাকল। নিজের ভাগের পাউরুটি ছিঁড়ে এক টুকরো দিল ভুলুকে। ভুলু তাতেই খুশি। ব্যস্। সেই থেকে দু'জনের বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হল। এখন ওরা যেখানেই যায়, দু'জনে একসংগে। লোকে বলে, মাণিকজোড়।
সেদিন ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই লালু উঠে বসল। তারপর হঠাৎ কী মনে পড়ায় ছুটতে শুরু করেছে। পেছন পেছন ভুলুও। রীতিমতো দৌড়-প্রতিযোগিতা। টার্গেট ডাস্টবিন। গতরাতে মজুমদার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। পরিত্যক্ত খাবারের এঁটোকাঁটায় উপচে পড়ছে ডাস্টবিন।
প্রতিযোগী মাত্র দু'জন। লালু আর ভুলু। দু'জনেই প্রাণপণে ছুটছে। শেষপর্যন্ত লালু জিততে পারল না অবশ্য। বেচারা!
ততক্ষণে ভুলু একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ডাস্টবিনে। দৌড়ে সে জিতেছে।
ওর পা যে চারটে!
____________
মুক্তি দাশ
১৩৫, অঘোর সরণী
রাজপুর
কলকাতা-৭০০১৪৯
Comments
Post a Comment