শূন্য থেকে শুরু
শ্রেয়া দত্ত
প্রিয়া ছিলো গ্রামের মেয়ে। তাঁর জীবনে ছিল অনেক স্বপ্ন। সে ছোট্ট গ্রাম থেকে বড় শহরে গিয়ে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল, তাঁর জন্য প্রিয়াকে জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে নিজের মতো করে তাঁর জীবন গড়ে তুলবে। কিন্তু ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাসে একদিন তাঁর সব স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।
প্রিয়ার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল আর কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মারা গেলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তাঁর বাবা, ফলে সে চলে যাওয়ার জন্য প্রিয়ার কাঁধেই এসে পড়ল পুরো পরিবারের দায়িত্ব। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচ,ছোট ভাই-বোনেদের দেখাশোনা, তাঁদের পড়াশোনার খরচ,বাড়ির ঋণ—সব কিছু যেন একসাথে এসে প্রিয়ার জীবনকে এলোমেলো করে দিল। প্রিয়ার পড়াশোনা মাঝপথেই থেমে গেল আর তাঁর স্বপ্নও সেখানে থেমে গেল। হাতে গোনা কিছু টাকার ওপর তাঁদের জীবন কাটতে লাগল।আত্মীয়দের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার সাহস পেত না প্রিয়া,কারণ ওদের কাছে সে নিজেকে দুর্বল দেখাতে চাইত না।মনটা ভেঙে পড়েছিল,দিনের পর দিন সে চোখে শুধু অন্ধকার দেখতে লাগল।একদিন সকালে মায়ের কাছে বসে প্রিয়া কান্না করছিল,তখন মা বললেন - 'প্রিয়া সবকিছু হারিয়ে যাওয়া মানেই শেষ হয়ে যাওয়া নয়।শূন্য থেকে শুরু করলেও জীবন আবার নতুন করে গড়ে তোলা যায়,শুধু তুই জীবনে কখনো হার মানিস না।' মায়ের কথাগুলো যেন প্রিয়ার মনে নতুন আশার সঞ্চার করলো।সে সিদ্ধান্ত নিলো- 'আর বসে থাকব না,নিজেই সবকিছু করব,নিজের পায়ে দাঁড়াব আর নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেব।' এরপর প্রিয়া শুরু করল ছোট ছোট কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই। রোজ সকালে উঠে তাঁদের পাড়ার ছোট বাজারটিতে ছোটখাটো কাজ করতে লাগল - বাজারে সবজির দোকানে কাজ,ইলেকট্রনিক দোকানে হাতে হাতে কাজ— সে যাই কাজ পেত তাই করত।সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করার চেষ্টা করত,কারণ বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না।প্রিয়া প্রতিজ্ঞা করেছিল জীবনে যত কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন,পড়াশোনা করা সে কোনোভাবেই ছাড়বে না।তাই সে অনেক কষ্টে তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগল।দিন দিন তাঁর পরিশ্রমের ফল আসতে শুরু করল।দোকানের মালিক তাঁর সততা আর পরিশ্রম দেখে তাকে বোনাস দিলেন।এরপর হঠাৎই একটি বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে গেল প্রিয়া।নিয়মিত বেতন থেকে মা'র চিকিৎসার খরচ চালাতে লাগল।ছোট ভাই-বোনেদের পড়াশোনার খরচ চালাতে লাগল আর সংসার খরচও ওই টাকাতেই চলত।ধীরে ধীরে তাঁর স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নিতে লাগল। প্রিয়া বাড়ির ঋণ শোধ করল,মাকে সুস্থ করে তুলল ও ভাই-বোনেদের উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে লাগল।প্রিয়া সবচেয়ে বড় জিনিস যা শিখলো সেটা হল—জীবনে ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে জীবনে কোনোকিছুই শেষ হয়ে যায় না।সে প্রমাণ করে দিলো যদি কখনো হার না মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেও জীবনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো যায়।
আজ প্রিয়া শুধু নিজের জন্য নয়, তাঁর পাড়ার ও গ্রামের অসহায় মেয়েদের জন্য সে নতুন আশার আলো হয়ে উঠল।প্রিয়ার জীবনের সংগ্রাম প্রমাণ করে—যে শূন্য থেকে শুরু করেও জীবনে স্বপ্নপূরণ করা যায় ও নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়।
============
Shreya Datta
42/15/A, Dayamayee Para Lane.
P.O-Khagra, Dist-Murshidabad,Pin-742103

Comments
Post a Comment