তিনটি কবিতা ।। উৎপল হালদার
প্লাবন
কণক অরুণ হাসি হাসে রোজ রাশি রাশি
আলোকের পুলকে ভরে ভূবন—
তমঃনিশা হয় শেষ ঘুচায় মলিন বেশ
জেগে ওঠে অনন্ত মর্ত্য জীবন।
কিরণ পরশ তার নিত্য দেয় উপহার
অমৃতের ধারা দানে অকৃপণ।
সহস্র ফণায় ফোঁসে বিকট করাল রোষে
সহসা এল ঝঞ্ঝা সে মূর্তিমান—
নিমেষে হল আঁধার নির্ঘোষ বজ্র হুঙ্কার
সাগরে জোয়ার নদীজলে বান।
ভাঙে মহীরুহ কত ঘর ভাঙে শত শত
খসে যায় যত পাখিদের নীড়—
অনিবার ধারাপাত সারাদিন সারারাত
গগনতলে কালো মেঘের ভীড়।
কূল ভাঙে নদী-নদ মুছে যায় জনপদ
ভেসে যায় গরু মোষ বিলকুল—
শেষ সম্বল আঁকড়ি কাঁথা কম্বল পাকড়ি
গৃহ-বাটি হারা হল ছিন্নমূল।
ধুয়ে গেল ভিটেমাটি ছন্নছাড়া কান্নাকাটি
ফসল গেছে, গেছে মুখের ভাত—
কুমোর কামার চাষী তাঁতী জেলে উপবাসী
তারা পথের পরে কাটায় রাত।
কত গেল রাত্রিদিন মলিন লাবন্যহীন
শিশুগুলো রয়েছে শুকনো মুখে—
অগাধ অসীম জল নেই কূল নেই তল
আশারা বাঁধে না বাসা শূন্য বুকে!
বর্ষার গান
কিসের দুঃখে ডাগর চোখে
হঠাৎ এল ছায়া
বিষাদে অতি তরল মতি
ঝরায় শুধু মায়া।
বাদল দিনে কাজরী গানে
কেয়ার গন্ধ মেখে
রঙ্গিনী আাজ পরেছে তাজ
চমকে উঠি দেখে।
নূপুর পায়ে রূপসী হয়ে
মন্থর মৃদু বোল
সুন্দর সুর শত অশ্রুর
সঙ্গীতের হিন্দোল।
ওড়না জরি উড়িয়ে তারি
আকাশ কিনারায়
মোতির দোলে মেঘ-মহলে
আঁখির ইশারায়—
বিষাদ ভুলি স্বপনগুলি
ঝিলমিলিয়ে যায়।
তড়িৎ হেসে সোহাগে মেশে
রূপটানেতে তায়—
জরির থানে আঁধার আনে
কৃষ্ণ বরণ মেঘ
বিজন বনে ঝিঁঝিঁর তানে
স্বপ্নেরই আবেগ।
অন্ধকার
আজ উতরোল হৃদয় সাগরের পথে—
ফেলে আসা উজ্জ্বল নিহত ভালবাসাকে
আমি বোঝাতে পারিনি অন্তিম আকাঙ্ক্ষা—
শুধু বিবর্ণতায় ভরা গভীর মননে
আঁধারের গুঞ্জন সময়ের গ্রন্থীতেও।
আমি বোঝাতে পারিনি বিমিশ্র চাওয়াটা—
রূঢ় আয়োজনে হিম হয়ে যায় স্মৃতি
কোন্ আক্রোশে গ্রাসে প্রবহমান যন্ত্রণা
ধর্মাশোকের জটিল উপসংহারে—
প্রবাহিত বিদ্বেষ অরণ্যের নিয়মে
ঠেলেছে অনন্ত বেদনার অববাহিকায়
বুঝিনি ঐ ইশারা অসভ্য সভ্যতার!
নীল কস্তুরী আলোর তারাভরা রাতে
মহান পৃথিবীর মেধাবী জিজ্ঞাসা
আমি বোঝাতে পারিনি সহস্র চেষ্টায়—
অন্ধকারের কু-স্বপ্নে অন্তহীন মৃত্যু
সৈনিকের সঙ্গীনের মতো উদ্যত—
বুঝিনি তোমাদের গ্রহে আমি অর্বাচীন!
সময়ের ব্যবধানে মুছে যাবে সব গ্লানি
সব অস্থিরতা ব্যর্থতা আর বিমর্ষতা।
আমি পারিনি বোঝাতে অবুঝ হৃদয়কে।
হে নীরব পৃথিবী শাশ্বত যুগের চক্রে
নিহিত স্বার্থ,সংঘর্ষ, মুর্খ উচ্ছাস
আর গভীরতর অন্তিম অন্ধকার—
Comments
Post a Comment