Skip to main content

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত

গল্প

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে 

          সমীর কুমার দত্ত 


সমর গুপ্ত নামের যুবকটি সর্বদা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরতো। ওটা শিখেছে ও ওর চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো শম্ভুনাথ সরকারের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে।  ধুতি পরার অভ্যাস শম্ভুর গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এসে পরীক্ষা দিয়ে  কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি পায়। নাইটে নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে বি.কম পাশ করে। রবিবার দিন আর অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে বিকেল বেলায ধুতি পাঞ্জাবি পরে সমরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ঘোরা বলতে  পাড়ার শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলের পাশে উকিলবাবুর বাড়ির সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সমরের সঙ্গে গল্প করতে।

বহুদূর থেকে হাওড়ার গার্লস্ কলেজে পড়তে আসা চামেলী ঘোষ নামের একটি মেয়ে ওই লেডিজ হোষ্টেলে বোর্ডার হিসেবে এসে ওঠে। নিত্য যাতায়াতের পথে ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথ ও সমরের সঙ্গে চোখের দেখায় পরিচিত হয়ে হাসি বিনিময় করে। হাসির পরিণতিতে বাক্যালাপ, বাক্যালাপের পরিণতি প্রেমে পৌঁছায়। একদিন সমর গুপ্তের সালিশিতে শম্ভুনাথের সঙ্গে চামেলীর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ঘনিষ্ঠতা প্রেমে পরিণতি পায়। নিত্য যাতায়াতের ফলে সমর একদিন শম্ভুনাথের হয়ে চামেলীকে প্রোপোজ করে,"এই যে শুনছেন, যদি কিছু মনে না করেন তো একটা কথা বলার ছিলো।"
—না না কিছু মনে করবো না। বলুন আপনি, নির্ভয়ে বলুন।
—আমার বন্ধুকে তো আপনি চেনেন,রোজই দেখছেন। আপনাকে ভালোবাসে এবং আপনার সঙ্গে কথা বলতে কোন নির্জন জায়গায় যেতে চায়, অবশ্য যদি আপনি রাজি থাকেন।
চামেলীও যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যায়। ও নিজেও তো ওর বন্ধুকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু  নিজের থেকে প্রোপোজ ও করবে না,হার মানবার পাত্রী ও নয়। কথায় আছে না —মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। বললো,"আচ্ছা আমি ভেবে দেখে জানাবো।"
"জানালে একটু তাড়াতাড়ি জানাবেন।" সমর বললো। আপনার পরিচয় কি জানতে পারি?
—আমার আবার পরিচয়! এই অধমের নাম সমর গুপ্ত। পেশা টিউশন আর ছোট খাটো একটা অফিসে কেরানীর চাকরী। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।

শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলে চামেলীর রুমমেট ছিলো ব্যঞ্জনা ব্যানার্জ্জী। দুজনের খুব ভাব। চামেলী ব্যঞ্জনাকে কথাটা জানায় এবং বলে," ব্যঞ্জনা,কী বলবো বলতো? তুই একটা যুক্তি দে না। আমার ওদের সঙ্গে যাওয়া কি ঠিক হবে?"
"তোর ভাবভঙ্গি দেখে তো মনে হচ্ছে, তুই ওদের সঙ্গে ভাব করতে মুখিয়ে আছিস। সুতরাং আমি কী বলবো বলতো। আমি বারণ করলে তুই কি শুনবি? শুনবি না। 'মেয়া বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজী।' লেগে পড়, লেগে পড়। শুভস্যম্ শীঘ্রম্।" ব্যঞ্জনা বললো।
—তুই আমাকে সঙ্গ দিস্। আমার একা যাওয়াটা কি ঠিক হবে? ওদের মুখ চেনা আছে। আসল পরিচয় তো কিছুই জানি না। তুই সঙ্গে থাকলে ভরসা পাই।
—যথা আজ্ঞা। তারপর তো মজে গিয়ে আমায় ভুলে যাবি।
—কী যে বলিস্ না। তোকে ভুলে যাবো। এখানে তুই আমার একমাত্র বন্ধু। আর আশাকরি এই বন্ধুত্বের বন্ধন যেন অটুট থাকে। দুদিন পর চামেলী সমরকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
"আপনার বন্ধু কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করে আমায় জানান।
"মনের কথা বলার মতো জায়গা তো লঞ্চ পেরিয়ে ইডেন গার্ডেন্স। আপনার আপত্তি নেই তো?" সমর উৎসাহিত হয়ে বলে।
— আমি তো এখানের মেয়ে নই। ইডেন গার্ডেন্স কোথায় আমি জানি না। তবে বেশি দেরি করতে পারবো না। সঙ্গে কিন্তু আমার বন্ধু ব্যঞ্জনা থাকবে।
— কেন একা যেতে ভয় পাচ্ছেন?
—ভয় পাওয়ারই তো কথা। একটা মেয়ে একা একা শুধুমাত্র চোখের দেখায় পরিচিত একজন পুরুষের সঙ্গে অপরিচিত জায়গায় যাবে, ভয় পাবে না?
—ঠিক আছে, বান্ধবীকে সঙ্গে নেবেন।
—আপনি থাকবেন তো?
—বলতে পারছি না। ব্যাপারটা আপনাদের দুজনের। আমি থেকে কী করবো? তা ছাড়া আমার উপস্থিতিতে আপনারা দুজনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না।
—সে তো আমার বন্ধু ব্যঞ্জনাও থাকবে।
—ওই জন্যেই তো বলছিলাম, আবার বন্ধু কেন।
—আপনি নয় আমার বন্ধুর সঙ্গে গল্প করবেন।
—আমরা আর কী গল্প করবো?
—কেন আপনার কোন গল্প নেই?
—আমার আবার গল্প! আমার গল্প মানে তো দুঃখের কাহিনী। কে শুনতে চায় বলুন তো?

পরের দিন ছিলো রবিবার।  শম্ভুনাথ ও সমর দুজনে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়েছিল যথাস্থানে অর্থাৎ উকিলবাবুর বাড়ির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে। চামেলী ও ব্যঞ্জনা দুজনে সেজেগুজে ওদের পাশ দিয়ে চোখের ইশারা করে এগিয়ে গেলো, যাতে পাড়ার কেউ ব্যাপারটা বুঝতে না পারে। বড়ো রাস্তায় বাস এলে চারজনে উঠে পড়লো হাওড়া স্টেশনের উদ্দ্যেশ্যে। চারটে টিকিট কাটলো শম্ভুনাথ।  হাওড়ায় নেমে লঞ্চঘাটের দিকে এগিয়ে গেলো। লঞ্চ পেরিয়ে সামনেই ইডেন গার্ডেন্স। শম্ভুনাথ ও চামেলী একটা গাছের তলায় গিয়ে বসলো পাশাপাশি। আর সমর বসলো সামান্য কিছুটা দূরে একটা গাছের তলায়। ব্যঞ্জনা আরও কিছুটা দূরে একা দাঁড়িয়েছিল। সমরই ওকে ডেকে পাশে বসালো।  চামেলী যেদিন ব্যঞ্জনাকে ওদের কথা বলছিলো , সেদিন কথা প্রসঙ্গে সমরের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলো, "জানিস ব্যঞ্জনা, ওই বন্ধুটা নাম সমর খুব দুখী রে। খুলে কিছু বললো না। ওকে দেখে মনে হলো , প্রেম ট্রেমের ধার ও ধারে না। ওকে খুব অসহায় লাগছিলো।"
"তা তুই কি বলতে চাস্ আমি ওর দুঃখের ভাগীদার হই ?" ব্যঞ্জনা বললো।
—না, আমি তা বলবো কেন। কারোর দুঃখের ভাগীদার হওয়া কি  সোজা ব্যাপার। ইচ্ছে করলেই হওয়া যায় না।
—তুই প্রেম করছিস্ আর আমাকে ওর সঙ্গে ভিড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিস্।
—মোটেই না। তুই একা একা বসে থাকবি, তোর ভালো লাগবে না। কুশল বিনিময় করে একটু ভদ্রতা বজায় রাখবি আর সময়ও কেটে যাবে। এই আর কী। তোর ইচ্ছে না হলে শুনিস্ না। আমি তো তোকে প্রেমালাপ করতে বলছি না।

শম্ভুনাথ ও চামেলী এতক্ষণে বেশ মজে গেছে মনে হলো। শম্ভুনাথ শিক্ষিত, মার্জিত ও হ্যান্ডসাম এবং দস্তুর মতো সরকারী চাকুরে। তবে দাদা ও ভায়েরা মিলে একটা বাড়িতে ভাড়া থাকে। সবে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে ওরা এক এক করে। গ্রামের ছেলেরা বড়ো একটা খারাপ হয় না। সুতরাং ওর সঙ্গে জীবন জোড়া দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু সমরও দেখতে মন্দ নয়। তবে টিউশনি আর ছোট খাটো একটা অফিসে কেরানীর চাকরী করে এই যা। সমর ও ব্যঞ্জনা দু জনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসেছিলো। মৌনতা ভঙ্গ করে সমর‌ বললো,"আপনার নাম তো আমার জানা হয়ে গেছে। ভারি সুন্দর নাম। নামের মধ্যেও একটা ব্যঞ্জনা আছে। একটা নতুনত্ব আছে।
—আমার নাম কী করে জানলেন?
— চামেলীদেবীর মুখে শুনেছি।
—চামেলী  দে-----বী----ঈ! বুড়োটে বুড়োটে কথা। ও তো আপনার থেকে ছোটোই হবে। শুধু নাম ধরে ডাকলে পারেন। আর আমার নাম নিয়ে কী বলছিলেন যেন? হ্যাঁ 'ব্যঞ্জনা' আর 'নতুনত্ব'। নতুনত্ব কথাটা অনেকেই বলে কিন্তু 'ব্যঞ্জনা' নামের ব্যঞ্জনা আছে এই প্রথম শুনলুম। এরজন্য ধন্যবাদ। আর আপনার পরিচয়টা একটু দিন।
—এ অধমের নাম সমর গুপ্ত। পেশা টিউশন আর একটা ছেটোখাটো কোম্পানির কেরানীগিরি।
—নিজেকে অধম  বলছেন কেন? আপনাকে দেখলে কেউ অধম বলবে। বেশ হাসিখুশি।
—বাব্বা!  আপনি তো দেখছি আমার সম্পর্কে অনেক জেনে ফেলেছেন। আমি অধম ছাড়া আর কী? যাক্ গে, ছাড়ুন আমার কথা। আপনার কথা বলুন। কথা তো আমাদের বলতেই হবে। না হলে সময় কাটবে কীভাবে। আপনার বাড়ি কোথায়? কে কে আছেন বাড়িতে?
—আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার কাছে। বাড়িতে বাবা, মা,দাদা বৌদি আর এক ভাইঝি আছে। আমাদের জলের পাম্প তৈরির কারখানা। বাবা দাদা মিলে দেখাশোনা করে। 
—তা এতো দূরে কেন?
—হাওড়া গার্লস কলেজের নাম আছে। কবি জীবনানন্দ একসময় এখানে অধ্যাপনা করেছেন শুনেছি। এখানে চান্স পেয়ে গেলাম। তাই হস্টেলে থাকতে হচ্ছে।
—আপনার বন্ধু কি আপনাদের ওখানে থাকে?
— না, না। ওদের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাঁটালে। এখানেই আমাদের পরিচয়।
দুজনে এভাবে বাক্যালাপ করে একসময় দুজনেই চূপ হয়ে যায়। কথা আর খুঁজে পায় না। সমর একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। ব্যঞ্জনা মাঝে মাঝে সমরকে পর্যবেক্ষণ করে চলে।একসময় ব্যঞ্জনা বলে ওঠে,
"আপনার কথা তো কিছু বললেন না।"
—আমার আবার কথা! ওসব দুঃখের কথা শুনতে কারো ভালো লাগবে না।
—দুঃখের কথা সবার জীবনেই থাকে,কম আর বেশি। দুঃখটাই তো সত্যি। সুখ তো ক্ষণস্থায়ী। '
'দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কিসের।'
—বাঃ, জীবন সম্বন্ধে আপনার উপলব্ধি তো খুব সুন্দর। বাইরে থেকে আপনাকে বোঝা যায় না যে ভিতরে আপনার একটা মূল্যবোধ আছে। জেনে খুব ভালো লাগলো।
—আপনার প্রসঙ্গ এলেই আপনি দেখছি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার কথা বলতে কি আপত্তি আছে? বলুন না। আমার শুনতে খুব ইচ্ছা করছে।
— একান্তই শুনবেন, তবে শুনুন।  আমার বাড়ি নদীয়ার বীরপাড়া গ্রামে। আমাদের অনেক জমিজমা ছিলো। ছোটবেলায় আমি আমার মা'কে হারাই। তখন আমি পাঁচ- ছয় বছরের ছেলে। মায়ের মৃত্যু খুব মর্মান্তিক ভাবে হয়। একদিন আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে কি একটা উৎসব উপলক্ষ্যে মেলা বসে। আমি মেলায় যাবো বলে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকি। বাবার তখন সময় ছিলো না, তাই মা আমায় মেলায় নিয়ে যায়। মেলায় নাগরদোলায় চাপবো বলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছু দূরে গ্যাস বেলুন বিক্রি হচ্ছিল। বালক মনে এক সাধের উদয় হলো —গ্যাস বেলুন নিয়ে নাগরদোলায় চাপবো। বেশ মজা লাগবে। আমি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম পর পর উঠবো বলে। তাই মাকে বললাম একটা গ্যাস বেলুন কিনে আনতে। মা গ্যাস বেলুন কিনতে গেলো। এমন সময় হাইড্রোজেন সিলিন্ডার তীব্রভাবে বার্স্ট করলো। মা মর্মান্তিকভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। তখন বোঝার মতো বয়স হয়নি যে আমি যদি মেলায় যাবার জন্য ঘ্যান ঘ্যান না করতাম কিংবা গ্যাস বেলুন কিনতে মাকে না পাঠাতাম তাহলে মাকে  পৃথিবী থেকে এইভাবে চলে যেতে হতো না, বড়ো হয়ে যেটা আমি মর্মে মর্মে অনুভব করেছি। তখন থেকে আমায় একটা অপরাধ বোধ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বিরলে অশ্রু বিসর্জন করে চলেছি। মা মারা যাবার পর আমার ও বাবার জীবনে অন্ধকার নেমে এলো। ঠাকুরদা, ঠাকুমা মারা যাবার পর আমাদের সংসার ছিলো বাবা, মা, কাকা, কাকীমা, দুই খুড়তুতো ভাই বোন আর আমাকে নিয়ে মোট সাত জনের। বাড়ির সব কর্তৃত্ব ছিলো আমার মায়ের হাতে। এ দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আমার স্বর্গীয় ঠাকুরদা। মা মারা যাবার পর সব কর্তৃত্ব চলে গেলো আমার কাকীমার হাতে। সেই থেকে আমার এবং বাবার জীবনে নেমে এলো অমাবস্যার অন্ধকার। আমার বাবা ছিলেন গোবেচারা। কাকা যা করতেন সেটাই বাবা মেনে নিতে বাধ্য হতেন। আমার মা ছিলেন খুব শক্ত। তখন কেউ ট্যাঁ পোঁ টি করতে পারতেন না। মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে কাকা কাকীমা চাইছিলেন সবকিছু আত্মসাৎ করতে। জমি থেকে কী আয় হতো না হতো তার কোন হিসেবই দিতেন না বাবাকে। ওরা অন্যায় করলেও ফ্যাল ফ্যাল করে দেখা ছাড়া বাবা আর কিছুই করতে পারতেন না। আমি এবং বাবা প্রায় সবকিছুতেই বঞ্চিত হচ্ছিলাম। এমনকি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও। কাকীমা তাঁর ছেলে মেয়ের জন্য ভালো ভালো খাবার সরিয়ে রেখে দিতেন। আমার আর বাবার জন্য যতোটুকু না দিলে নয় ততোটুকুই বরাদ্দ ছিলো। আমাকে এবং বাবাকে একসঙ্গে খেতে দেওয়া হতো না। পাছে বাবা দেখে ফেলেন  আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে । একদিন কি কারণে বাবা মাঠ থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসেন ‌ কাকীমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে রান্না ঘরে যান।দেখেন মাছ ভাজা হচ্ছে। বাবাকে দেখে কাকীমা সঙ্গে সঙ্গে মাছের ওপর বাটি চাপা দিয়ে দেন। উদ্দেশ্য আমাদের মাছ খেতে না দেওয়া। বাবার তা নজর এড়ায় নি। খেতে দেবার সময় বাবা দেখেন তাঁর পাতে মাছ নেই। বাবা মুখে কিছু বলেন না। যা পান তাই খেয়ে উঠে যান। আমিও স্কুলে চলে যেতাম কিছুই জানতাম না। স্কুলে যাবার তাড়ায় যা দিতো নাকে মুখে গুঁজে বেরিয়ে পড়তাম। বাবা রাত্রে আমায় জিজ্ঞেস করতেন, "  সমু, আজ কি দিয়ে ভাত খেলি?" আমি হয়তো বলতাম,"আলু,পটল ভাজা,ডাল, আর তরকারি।" শুনে বাবা চুপ হয়ে যেতেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাপড় দিয়ে চোখ মুছতেন। বাপ বেটার শোয়ার ঘরের আবহাওয়াটা তখন শোকাবহ হত। মায়ের কথা মনে পড়ে যেতো বাবার। বাবা বুক চাপড়াতেন। তখন আমার বোঝার মতো বয়েস হয়েছে। তাই কষ্ট পেতাম। বাবা  প্রতিবাদ করতেন না শুধু যে মুখচোরা বলে তা নয়। তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলেন। পাছে সংসারে অশান্তি হয় সেই ভয়ে মুখ খুলতেন না।
শুনেছি আমার দাদু ঠাকুমা আমার মা বাবাকে খুব ভালো বাসতেন। কাকা কাকীমাকে একদম দেখতে পারতেন না ওদের ব্যবহারের জন্য। তাঁরা যখন বেঁচে ছিলেন প্রায়ই ঝগড়া হতো। ওরা দাদু ঠাকুমাকে অপমান করতো। আমার মায়ের কাছে জব্দ ছিলো। তাই তো মা মারা যেতে কাকীমা বলেছিলো, "ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন।" গ্রামের কেউ ওদের দেখতে পারে না। মা মরে যেতে ওরা আরও  জো পেয়ে গেলো। আমাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে এলো। রাতে বাবার সঙ্গে কথা হতো। বাবা বলতেন," আমি যদি না থাকি, লেখাপড়া শিখে এখান থেকে শহরে চলে যাস্। চাকরি করে ওখানে থাকবি। আর এখানে আসিস না। এখানে থাকলে মরে যাবি। জায়গা জমির লোভে ওরা তোকে মেরে ফেলবে। একদিন তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে বাবা জমিতে বাবা কাজ করছিলো। কাকা রোদে জলে কাজ করতে বের হয় না, বাবাকে দিয়ে বাইরের সব কাজ করায়। কাজ করবেন বাবা কর্তৃত্ব করবেন উনি। রাতে বাবার ধূম জ্বর। দুদিন হয়ে গেলো ডাক্তার ডাকার নামই নেই। খালি বলে, "ও ঠিক হয়ে যাবে।" টাকা খরচের ভয়ে ডাক্তার ডাকে না। রোগী কি বলবে ডাক্তার ডাকতে? আমিও বলতে সাহস পাইনা। বাবাকে মেরে ফেলতেই চেয়েছিলো। তাই হলো। দুদিনের মাথায় বাবা মারা গেলেন বেঘোরে মাথায় রক্ত উঠে। ভালো করে শ্রাদ্ধও করলো না। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবো, আমাকে পড়তে দিতো না। ফাই ফরমাশ খাটাতো । নিজের ছেলেমেয়েকে কিছু করতে দিতো না। আমি রাত জেগে পড়তাম। তাতেও জ্বালা। হারিকেনের তেল পুড়বে তাই। মাঝরাতে বাথরুম করতে উঠে যদি দেখে আমি পড়ছি, বলবে,
" এবার শুয়ে পড়। অতো রাত জেগে পড়তে হবে না। সকালে উঠে অনেক কাজ আছে।"
মাধ্যমিকটা পাশ করার পর, ইতস্ততঃ করছি কাকাকে বলবো উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার জন্য। কিছু বলার আগেই কাকা বললেন," আর পড়ে কী হবে। একটা পাশ তো দিয়েছিস্। এখন থেকে চাকরির দরখাস্ত কর। এখানে পড়ে থেকে মার খাবি। তারচেয়ে বাইরে চলে যা। একটা থাকার জায়গা জুটিয়ে নে। ওখান থেকে চাকরির চেষ্টা করবি। যতদিন না কিছু জোটাতে পারছিস্, আমি না হয় মাসে মাসে কিছু করে টাকা পাঠাবো। ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিস্।" আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলো। আশা ত্যাগ করে মনস্থির করলাম চলেই যাবো। প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার ইচ্ছা বা প্রবৃত্তি আমার হলো না। কারণ যার আসল প্রাপ্য সেই বাবাই যখন মুখ খুলতে পারলো না। আমি একা দাবি করি কি ভাবে। কিন্তু কোথায় যাবো? কিছুই তো চিনি না। ভাবলাম পথ চলতে চলতেই পথ খুঁজে পাবো। সেই পথকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হবে। কাকা আসার সময় হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বিদায় করে দিলো। কাকা নয় লোভের বশবর্তী হয়ে এরকম গর্হিত কাজ করতে পারে। কিন্তু কাকীমা তো মায়ের জাত। তাঁর একটু মন কাঁদলো না একজন বাপ - মা মরা কিশোরকে বাড়ি থেকে বিদায় করে দিতে। বিবেকের দরজা কি বন্ধ হয়ে গেছে চিরতরে। মনকে সান্ত্বনা দিলাম বাবা- মা ছাড়া কেউ কারোর নয় এ দুনিয়ায়। তাই নিজের আইনতঃ প্রাপ্য সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করে ভাগ্য দেবতাকে সম্বল করে বেরিয়ে পড়লাম অনির্দিষ্ট পথে।"

"শিয়ালদা স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। ক্ষুধা ডাক দিয়ে যায়। কাকার দেওয়া টাকাটা পকেট থেকে বের করে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। ইচ্ছে হলো না টাকাটা খরচ করার, কারণ এটাই তো সম্বল। কলসীর জল গড়াতে গড়াতে কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর? পাশে রাস্তায় কল দিয়ে জল পড়ে যাচ্ছিল। কেউ কলটা খুলে রেখে চলে গেছে হবে। এভাবে জল অপচয় করলে, একদিন তৃষ্ণার জলও পাওয়া যাবে না। তাই খোলা কালের জল পেট ভরে খেয়ে নিলাম যাতে অনেকক্ষণ খিদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জন খেয়ে পাশে উদ্দেশ্যহীন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নিজের ওপর খুব ঘৃণা হচ্ছিলো। আমিই তো এই সকল সর্বনাশের আসল স্থপতি। আমার অন্যায় আবদার সেদিন যদি না করতাম, মাকে অকালে মর্মান্তিকভাবে চলে যেতে হতো না আর বাবার আমার এই দুর্গতি হতো না। কেন আমি মা বাবার মতো চলে গেলাম না। সেদিন যদি মায়ের পাশে আমি থাকতাম তাহলে আপদ চুকে যেতো। এখন তো বালাই ছাড়া কিছু না। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো এভাবে। তারপর কোথায় যাবো। হে ঈশ্বর,আমায় পথ দেখাও।
আমার এই স্টেশনের বাইরে আসা থেকে আমার অবস্থাটা কেউ একজন বয়স্ক ভদ্রলোক পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছিলেন। তাঁর কি মনে হলো আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, "বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো তো। কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছো না ।  দেখে তো মনে হচ্ছে খিদেও পেয়েছে। অথচ পকেটে তেমন পয়সা নেই। কি তাইতো? এসো আমার সঙ্গে। ভয় নেই। আমি কোন ছেলেধরা নই। আমার নাম নীলকান্ত রায়। সবাই নীলুবাবু বলে ডাকে।"
আমাকে নিয়ে নীলুবাবু একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে ঢুকলেন। আমি আপত্তি করলে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন," প্রয়োজনে যেখানে যা জুটবে খেয়ে নিতে হয়। না হলে পেট কাঁদবে। পেটের জ্বালা বড়ো জ্বাল। অবশ্য কোন বাজে লোকের পাল্লায় পড়ে খাওয়া উচিত নয়। এসো তোমার কোন ভয় নেই। আগে তো পেটের চাহিদা মেটাও,তারপর অন্যকিছুর চাহিদা মেটানো যাবে। "
তিনি কয়েকটা কচুরি আর মিষ্টির অর্ডার দিলেন। ইতস্ততঃ করে খাবারের দিকে হাত বাড়ালাম বললাম," আপনি খাবেন না?"
—না , আমার তো খিদে পায়নি। তুমি নির্দ্বিধায়  খাও।"
মনে মনে ভাবলাম —জীব দিয়েছেন যিনি,আহার দেবেন তিনি। কেউ যার নেই, ঈশ্বর আছেন তার। খাওয়ার পর মনে হলো ধড়ে প্রাণ এলো। ভদ্রলোক বললেন, " তোমার নাম যেন কী?
—সমর গুপ্ত। থাকি নদীয়ার বীরনগরে।
—কোথায় যাবে কিছু ঠিক করলে? যাবার যে কোথাও জায়গা নেই, সে তোমাকে আর তোমার হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছি। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম বাড়ি ফিরবো বলে। তোমায় দেখে বাসের কথা বেমালুম ভুলে গেলুম। এখন বলোতো তোমার কী হয়েছে?
আমি ওনাকে বিশ্বাস করে সব কথা বললাম। ভদ্রলোক বললেন," এ পৃথিবীতে কতো রকমের লোক আছে। কী করে অপরকে মেরে বড়োলোক হওয়া যায়,সেই ধান্দায় ঘুরে বেড়ায়। আবার কতো লোক আছে ধন দৌলতে অন্ধ না হয়ে অপরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে তাদের সংখ্যা অনেক কম।"
আমি মাঝখানে মুখ ফসকে বলে ফেললাম," যেমন আপনি।" 
ভদ্রলোক হেসে বললেন," আমি আর কী করতে পারি। কিছুই পারি না। করতে পারলে তো পরকালের রাস্তাটা তৈরি করতে পারতাম। আর তাছাড়া উপকার করবো বললেই তো করা যায় না। ভগবান যদি তার সেই মন দেন তবেই সে পারে। রাখে হরি তো মারে কে? তোমাকে দেখে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম কেন জানো? তোমার মতো আমার একটা ছেলে ছিলো। অনেক দিন আগে সে কোথায় হারিয়েগেছে। আর ফেরেনি। আমার স্ত্রী তার কথা ভেবে ভেবে শেষ হয়ে গেছে। তোমাকে দেখে আমার ছেলের কথা মনে হলো। তোমার মুখটার সঙ্গে তার মুখের অবিশ্বাস্যভাবে মিল রয়েছে। তাই দেখেই তো দাঁড়িয়ে পড়লাম। জানি না তোমার মতোই হয়তো এইভাবে খিদের জ্বালায় কলের জল খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কোন বদ্ লোকের কাছে মানুষ হচ্ছে হবে। আমি তো আশা ছেড়ে দিয়েছি। আমার স্ত্রী আজও তার আশায় আশায় দিন গুনে চলেছে। আমার কথা ছাড়ো। তুমি চলো আমার বাড়ি। আমার স্ত্রী হয়তো কিছু সান্ত্বনা পেলেও পেতে পারে।"
কথা গুলো বলতে বলতে ভদ্রলোকের গলা ভারি হয়ে এল। চোখের কোণায় জল চিকচিক করছিলো। তাঁর দুঃখের কথা শুনে আমি আমার দুঃখের কথা ভুলে গেলাম। পৃথিবীতে কতো দুঃখ আছে আমরা তার কতটুকু জানি। ভদ্রলোক আজ অযাচিত ভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।আমারও ওনাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। না হলে আমিও তো মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়বো। আর তা ছাড়া আমারও তো থাকা-খাওয়ার জায়গা দরকার। ভগবানকে দেখা যায় না। তিনি মানুষের মধ্যে থেকে মানুষকে সাহায্য করেন। এখানে আমার কর্তব্য ও প্রয়োজন দুটোই আছে। আমি সাগ্রহে বললুম,
" চলুন, আমি আপনার সঙ্গে যাবো।"
—তুমি যাবে? আমি জানতাম। তুমি যে সৎ বাবা -মা'র সন্তান এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। চলো আমরা বাসে উঠি হাওড়া যাবো। আমার বাড়ি হাওড়ার কালিবাবুর বাজারের কাছে চৌধুরীবাগানে। তোমাকে দেখলে আমার স্ত্রী খুব খুশী হবে। তবে হ্যাঁ, একটা কথা—তুমি ওনাকে  'মা' বলে সম্বোধন করবে।  আর আমাকে বাবা। তাহলে আরও খুশি হবে। তোমায় আমি সব বলে দেবো কখন কী করতে হবে কী বলতে হবে।
আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললুম," আপনি আজ আমার জন্যে যা করলেন, নিজের লোকও তা করে না। আর আমি আপনাদের জন্যে কিছু করবো না তাই হয়? তাহলে তো আমি আমার কাকা-কাকীমার মতোই হয়ে যাবো।

"আমাকে নিয়ে নীলুবাবু তাঁর হাওড়ার বাড়িতে এসে পৌঁছলেন। আমাকে দেখে ওনার স্ত্রী আমার মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, "কে এ? "
ভদ্র মহিলাকে দেখে মনে হলো একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে জীবনের সব আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছেন। নীলুবাবু বললেন,"কি চিনতে পারছো?"
—ও  কে---------এ?
—কি চেনা চেনা লাগছে তো? ও আমাদের 'সমু' গো।
—'সমু' ? ওকে তুমি কোথায় পেলে?
—ওকে দেখতে পেয়েই তো ধরে আনলুম। ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। একজন মায়ের দুঃখ তিনি বুঝেছেন, তাই ঠিক আমার নজরের সামনে এনে হাজির করে দিয়েছেন।
বলেই উনি আমায় চোখের ইশারা করলেন বুঝতে পারলাম ওনাকে ভোলানোর জন্যই এই অভিনয় করছেন। ঘটনাচক্রে আমার নামের সঙ্গে এবং মুখের মিল কাকতালীয় ভাবে মিলে গিয়েছিলো। মুখের মিল থাকার জন্যই নীলুবাবু থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। অনেকক্ষণ দেখার পর কাছে এসে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার নাম। আমি বলেছিলাম— সমর গুপ্ত। উনি স্বগতোক্তি করে বলেছিলেন, 
"ওতেই হবে।" আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম," কী হবে?"
—কিছু না।
দেখলাম রমলা দেবী মানে নীলুবাবুর স্ত্রী আমায় পেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছেন। মানসিক ভাবে প্রস্তুত হলাম ওনাকে মায়ের আসনে বসাবার। ওনার মনের আনন্দ ফিরিয়ে আনার জন্য আমিও 'মা'  'মা' বলে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। তাঁর মনে কোন সংশয় থাকলেও থাকতে পারে। কারণ গর্ভধারিণী মা নিজের সন্তানের গায়ের গন্ধ চেনেন। কিন্তু আমায় হাল ছাড়লে তো চলবে না। আমি ওনাকে ঠকাতে আসিনি। আমি ওনাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করছি ওনার সবচেয়ে কাছের জনের অনুরোধে। তাছাড়া নিজের সার্থ জড়িয়ে আছে ঠিকই। ওনার ছেলে সত্যি  সত্যিই যদি ফিরে আসে, তখন না হয় আশ্রয় ভিক্ষা করে নেবো। বলবো —নিজের মাকে হারিয়ে একজন মা খুঁজতে চেয়ে ছিলাম। আমি তো নিজে মুখে বলিনি ওনার ছেলে। ওনাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দেখে আমি সেই থেকে ওনাদের ছেলে হয়ে ওনাদের কাছে রয়ে গেছি। নীলুবাবুকে বাবা বলতেই হলো। সেটাও সম্পূর্ণ ওনার ইচ্ছায়। আর তাছাড়া উনি তো আমার সঙ্গে বাবার মতোই আচরণ করেছেন। আমাকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করিয়েছেন সমর গুপ্ত নামেই। রমলা দেবী যখন জিজ্ঞেস করেছেন," সমর গুপ্ত কেন? ওর নাম তো সমরেন্দ্র রায়। নীলবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে ওই নামেই তো মাধ্যমিক পাশ করেছে। তাই ওই নামেই উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে হবে। নাম পাল্টানো অসুবিধে। আর নামে কী যায় আসে। সরলমনের রমলা দেবী তাই বিশ্বাস করে নিয়েছেন। এর কিছুদিন পর রমলা দেবী লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারা যাবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি আমাকে নিজের হারানো ছেলে বলেই জানতেন।"

ব্যঞ্জনা কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলো আর ভাবছিলো —সত্যিই ছেলেটা খুব দুখী বটে !
জিজ্ঞেস করলো, " তারপর কাকা -কাকীমার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ রাখেন নি?"
—না, কারণ তিনি আমায় মাসোহারা তো দেবেন না, উল্টে আমি ভালো আছি জানলে, আমার কাছে এসে কাঁদুনি গেয়ে টাকা পয়সা আদায় করার চেষ্টা করবে। ওনাদের ছেলেকে এখানে নিয়ে এসে তুলবে। এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে যদি ঠিকানা দিতাম, উনি এসে সত্যি কথা বলে দিয়ে রমলা দেবীর মন ভেঙে দিতেনই। আমার আশ্রয়টুকূও নষ্ট করে দিতেন। কারণ ওরা তো আমাদের সর্বনাশই চেয়েছিলো। বদলোক সব পারে। শম্ভুদারা আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকে। সেই থেকে শম্ভুদার সঙ্গে আমার পরিচয়। ওই একটা ভালো মানুষকে আমি পাশে পেয়েছি। আমাকে উচ্চমাধ্যমিক ও বি.এ পাশ করতে সাহায্য করেছে। 
কথাগূলো শুনতে শুনতে ব্যঞ্জনা আস্তে আস্তে সমরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ে। তারপর থেকে সর্বদাই সমরের কথা ভাবে। ছুটির দিন শম্ভুনাথকে উকিলবাবুর বাড়ির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আর দেখা যায় না। চামেলীর সঙ্গে ডেটিং থাকে। বেরিয়ে পড়ে তিনজনে। সমর ওদের আর সঙ্গ দেয় না। ভাবে ওদের মধ্যে উপস্থিত থাকা মানে ওদের এবং ওর নিজের অস্বস্তি বাড়ানো। যদিও ওদের মধ্যে ব্যঞ্জনা উপস্থিত থাকে,সে তো চামেলীকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। আসলে সমর একটু ইনফিরিয়োরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। ও ভাবে ওর মতো 'হারালে খুঁজতে নেই, মরলে কাঁদতে নেই ' এমন মানুষের সঙ্গে কে প্রেম করবে। সেহেতু ও ওদের এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। এদিকে ব্যঞ্জনা ছুটির দিনগুলোতে সমরকে দেখতে না পেলে  নিজে থেকেই শম্ভুনাথকে জিজ্ঞাসা করে,
"আপনার বন্ধুকে তো দেখছি না, ওনার কি কিছু হয়েছে?" শম্ভু ও চামেলী পরস্পরে দৃষ্টি বিনিময় করে মুচকি হাসে। ভাবে ব্যঞ্জনার মনে প্রেমের রঙ ধরেছে। ওর মনের কৃষ্ণচূড়া আবির খেলে চলেছে। এবার সমর ছাড়া ও আর আসবে না। আর প্রেমের আমন্ত্রণ ছাড়া সমরও আসবে না। সমরের সঙ্গে ব্যঞ্জনাকে ভিড়িয়ে দিতে পারলে ভালোই হয়। শম্ভু আর চামেলী দুজনেরই সুবিধে হবে।না হলে ওদের সঙ্গে বন্ধুত্বের দূরত্ব বেড়ে যাবে। সেটা মোটেই ভালো দেখায় না। ব্যঞ্জনা কোন্ ইন্টারেস্টে চামলীকে সঙ্গ দেবে। আবার ব্যঞ্জনাকে সঙ্গে না নিলে ব্যঞ্জনা ভাববে —প্রেমের পূর্বে তাকে খুব দরকার ছিলো। এখন মনের মানুষ পেয়ে গিয়ে ও পর হয়ে গেছে। একদিন চামেলী ব্যঞ্জনাকে জিজ্ঞাসা করে, "ব্যঞ্জনা, একটা প্রশ্ন করবো সত্যি সত্যি উত্তর দিবি ?
—উত্তর দেবার মতো হলে দেবো।
—সমরকে তোর কেমন লাগে?"
‌—ভালোই।
—আমি ভালো না মন্দ এটা জানতে চাই না। তোর কি ওকে মনে ধরেছে? যদি ধরে তাহলে একটা যুক্তি দিতে পারি।
— কি যুক্তি?
—একটা কাজ কর। তোর সঙ্গে তো ওর অনেক কথা হয়েছে। তুই একটা প্রেমপত্র লিখে শম্ভু মারফৎ পাঠিয়ে দে। দ্যাখ না কী উত্তর দেয়। না হলে ও আর আসবে না। চামেলীর কথামতো ব্যঞ্জনা সমরকে প্রেমপত্র লেখে। প্রেমপত্র পেয়ে সমরের যে খারাপ লেগেছে তা নয়। বরং তার ভালো লেগেছে এই ভেবে যে তাকে শম্ভুর মতো প্রেম নিবেদন করতে হয় নি। উপরন্তু পত্রের প্রত্যুত্তরে সে তুলে ধরেছে তার সমস্যার কথা। যার অর্থ ভালো মন্দ ফলাফল যাই হোক না কেন তার জন্য সমর কোন ভাবেই দায়ী থাকবে না। ব্যঞ্জনা সবকিছু মেনে নিয়ে সমরের হাত ধরতে রাজি হয়েছে।

চামেলী ও ব্যঞ্জনার লেডিজ হোষ্টেলের থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছিলো ,কারণ তাদের এবার তৃতীয় বর্ষ। পার্ট ওয়ান পাশ করেছে। থার্ড ইয়ারের পরীক্ষার একমাস আগে থেকে ওরা ঘোরাঘুরি না করে পড়ায় মনোনিবেশ করেছে। কারণ অনেক পয়সা খরচ করে তারা এতো দূরে হোষ্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। রেজাল্ট খারাপ হলে বাড়িতে জবাবদিহি করতে হবে। শম্ভুনাথও বলে দিয়েছে এ সময় দেখা আর না করতে। শুধু ফেরার সময় পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানিয়ে গেলেই হবে। পার্ট ওয়ানের  ফল তাদের ভালোই হয়েছে। পার্ট টু ভালো দিতে পারলেই হলো। কিন্তু পার্ট টু দেওয়ার পর কী হবে? তখন তো তাদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে। ওদের সঙ্গে দেখা করবে কী ভাবে? অতদূর থেকে তো আসা সম্ভব নয়। বাড়িতে কী বলবে? শম্ভুনাথ এ কথাগুলো ভেবে রেখেছে। সে মনে মনে ঠিক করেই রেখেছে ওরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবে। শম্ভুনাথের বাড়ির দিক থেকে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্যঞ্জনা কী করবে? সমরের মতামত তো জানাই হয়নি। শম্ভু সমরকে বলে,"সমর, দেখ ওদের পরীক্ষা তো শেষ হয়ে যাবে। আমি তো বিয়ে করে নেবো। তুই কি করবি ঠিক কর। আমার মনে হয় ওর সঙ্গে তোর কথা বলা উচিত। তোর বাড়িতে মেসোমশাইকে বললে উনি হাসিমুখে রাজি হয়ে যাবেন।
সমর শম্ভুর কথা ফেলে দিতে পারে না। তাই বলে,"আমার তো এই আয়, ওর বাড়ির লোক কি রাজি হবে? ব্যঞ্জনা মেয়েটা ভালো। খুবই বুদ্ধিমতী ও চটপটে। দেখছি কী করা যায়।
—হ্যাঁ, ও যদি তোকেই বিয়ে করতে চায় তাহলে বাড়ি গিয়ে বাবা-মা'র সঙ্গে কথা বলুক। আর তাছাড়া ও বিয়ে পাশ করে যাবে,তারপর একটা চাকরির চেষ্টা করলেই হলো। চাকরি করতে না চাইলে টিউশন করতে পারে। মেসোমশাই তো পেনশন পান। তোদের ভালো ভাবেই চলে যাবে।
—সে মেসোমশাই  যতোদিন বেঁচে আছেন ততোদিন পেনশন পাবেন। তারপর?
—আরে, তোদের তো বাড়ি ভাড়া লাগবে না। আমার তো বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। ও ঠিক চলে যাবে। ব্যঞ্জনা নিশ্চয়ই বাড়িতে জানিয়ে দেবে। কিন্তু তুই মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাক।
সমরের নিজের বলতে কেউ নেই। তাই সে ব্যঞ্জনাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। মেয়েরা যখন নিজ নিজ পাত্র পছন্দ করেছে পাত্রী পক্ষের পছন্দ না হলেও আপত্তি ওঠে নি। দু বন্ধুর হবু শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে দেখাশোনা পর্ব চুকে গিয়ে বিবাহ পর্ব মিটে গেলো।

ছেলেবন্ধু যুগল ও মেয়েবন্ধু যুগল অর্থাৎ শম্ভু -চামেলী আর সমর-ব্যঞ্জনা বেশ ঘরকন্না করে চলেছে। শম্ভু তার অফিসের লোক ধরে হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটিতে চামেলীর চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সময়মতো দু জনকেই বের হতে হয়। ফলতঃ চামেলী সংসারের তেমন কোন কাজে আসতে পারে না। শম্ভুনাথেরা সাত ভাই। ছোট আর সেজ ভাই দেশে থেকে জমিজমা দেখাশোনা করে। সেজ ভাইকে ছোট ভায়েরা নদা বলে ডাকে,এই কারণে যে ওদের জেঠার ছেলে বংশের সবচেয়ে বড় বলে সবাই তাকে বড়দা বলে আর এদের ভায়েরা মেজ দিয়ে শুরু। অর্থাৎ এদের বড়দা মানে বংশের মেজদা গৌরমোহন রেলওয়েতে ভালো চাকরি করে। কাছাকাছি বিয়ে করেছে এক মস্তিষ্ক বিকৃত মহিলাকে। মস্তিষ্ক বিকৃতি অনেক পরে ধরা পড়ে।  যাইহোক সেই সূত্রে শ্বশুরবাড়িটা পেয়ে যায এবং সেখানেই বসবাস করে। বংশের সেজোভাই অর্থাৎ শম্ভুনাথের মেজদা গোপীনাথ রাজ্য সরকারের হেল্থ ডিপার্টমেন্টে অল্প বেতনে চাকরি করে ছোট ভায়েদের নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বাস করে। গোপীনাথের স্ত্রী হাসিদেবী ভীষণ ভালো মহিলা। দেবরদের নিয়ে একা পরিশ্রম করে সংসার চালাতো। সংসারের অভাব পূরণ করার জন্য গোপীনাথকে চাকরির পরে টিউশন করতে হতো। এখানে দু ভাই বিশ্বনাথ ও কাশীনাথের দায়িত্ব। যদিও তারা সেজদা অর্থাৎ ওদের মেজদাকে কিছুটা রেহাই দিতো হাতে টিউশনের কিছু টাকা তুলে দিয়ে। দেশে বাবা-মা ও আরও দুইভায়ের জন্য কিছু টাকা পাঠাতে হতো গোপীনাথকে। সব মিলিয়ে গোপীনাথ জেরবার হয়ে যেতো। তবু গৌরমোহন বড়ো ভায়ের দায়িত্ব পালন করতো না। সম্পুর্ন স্বার্থপরের মতো জীবন যাপন করতো। পরবর্তী কালে বিশ্বনাথ পাশ টাশ করে স্কুলে চাকরি পেয়ে যায়। শম্ভুনাথের কথায় ফিরে আসি। শম্ভুনাথ ও স্ত্রী চামেলী চাকরি করেও নিজেদের টুকু ছাড়া গোপীনাথকে  ও বৌদি হাসিদেবীকে এতোটুকু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কি অর্থ  কি গতর দিয়ে।  ফলতঃ একা হাসিদেবীকে সব কাজ করতে হতো । এ অবিচার তো মেনে নেওয়া যায় না। তাই বিয়ের পর লাগলো সংঘাত। শম্ভুনাথ চামেলীর হাত ধরে বেরিয়ে গেলো সংসার থেকে জায়গা কিনে বাড়ি করে। বিশ্বনাথ কয়লার ব্যবসা শুরু করে দুহাতে আয় করে জায়গা জমি কিনে বাড়ি করে, বিয়ে করে ভেগে গেলো। সবাই যে যার গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। পড়ে রইলো গোপীনাথ।এরমধ্যে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ওরা গৌরমোহনের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ওঠে। তার কিছু দিন পর গৌর মোহনের ছেলে 'পল' তার বাবা মারা যাবার পর সকলকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। সবার জন্য করতে গিয়ে গোপীনাথ নিজের একমাত্র ছেলে বাপিকে মানুষ করতে পারলো না। ছেলেটা বদ্সঙ্গে পড়ে মারা গেলো।  একমাত্র মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। গোপীনাথ মারা যাবার পর হাসিদেবী মেয়ের কাছে গিয়ে ওঠে। এই হলো শম্ভুনাথের পারিবারিক উপাখ্যান। আমার গল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সমরকে নিয়ে।  সমর শম্ভুর সঙ্গে চামেলীর প্রেমে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে ব্যঞ্জনাকে বিয়ে করে নিজের বিপদ আরও বাড়িয়ে তুললো যার পরিণতি তাকে কোথায় টেনে নিয়ে গেলো। 

ব্যঞ্জনাকে বিয়ে করে আর নীলকান্ত মেসোমশাইকে নিয়ে বেশ সংসার যাত্রা নির্বাহ করে যাচ্ছিল সমর। বিপদ ঘনিয়ে এলো নীলুবাবুর প্রকৃত সন্তান সমরেন্দ্র ওরফে সমু ফিরে এলে। হারিয়ে যাওয়া সন্তান ফিরে এলে নীলুবাবু যার পর নাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। সমরেন্দ্র উড়ে এসে জুড়ে বসা সমর ও তার স্ত্রী ব্যঞ্জনাকে সহ্য করতে পারলো না।  ঘর থেকে বের করে দিলো। নীলুবাবু অনেক চেষ্টা করলেন ওদের আটকাবার। ছেলেকে বললেন,"তোর অবর্তমানে তোর মা ভেঙে পড়েছিলো। তোর মাকে বাঁচানোর জন্য ওকে আমি রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলাম। শেষ জীবনটা অনেক শান্তি পেয়েছিলো। কিন্তু তোর শোকে না খেয়ে খেয়ে লিভারের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছিলো। তারপর যা হবার তাই হলো। তোর মাকে বাঁচাতে পারিনি। আমি ওর মুখ চেয়ে এতোদিন বেঁচে আছি। আজ ওকে তাড়িয়ে দিলে অন্যায় হবে। আজ তুই ফিরে এসেছিস্ বলে ওকে তাড়িয়ে দেবো? ওকে তাড়িয়ে দিলে আমি মরেও শান্তি পাবো না। সমরেন্দ্র বাবার কথা শুনলো না। সমর‌ ও ব্যঞ্জনাকে বললো," তোমাদের লজ্জা করে না,থাকার জায়গা নেই আবার বিয়ে করছো?" নীলুবাবু অসহায়ের মতো ফ্যালফ্যাল করে দেখতে দেখতে চোখের জলে ওদের বিদায় নিতে দেখলেন। দুচোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেদনাশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ক্রন্দনরত অবস্থায় বলতে লাগলেন,"যে দিন তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা হলো আমি তোমায় বলেছিলাম — রাখে হরি তো মারে কে? আর আজ বলছি — মারে হরি তো রাখে কে? তোমায় অনেক বড়ো মুখ করে ঘরে এনেছিলুম কিন্তু কোন নিরাপত্তা দিতে পারলুম না। তোমরা আমায় ক্ষমা করে দিও।  এ পৃথিবীতে  তোমার কাকা-কাকীমাদের মতো লোক অনেক আছে। তাদের হাত থেকে বাঁচা খুব মুশকিল। আমি এমন সন্তান ফিরে পেতে চাই নি।" কথাগুলো বলে নীলু বাবু মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন। মৃত নীলু বাবুর চরণস্পর্শ করে মাথায় হাত  ঠেকিয়ে প্রণাম করে সমর আর ব্যঞ্জনা দুজনে বিনা বাক্য ব্যয়ে মাথা নিচু করে ধীর পদক্ষেপে বেরিয়ে গেলো।
ওদের সঙ্গে কিছু নেওয়ার ছিলো না। কারণ সমর এসেছিলো নীলু বাবুর সাজানো সংসারে। এখন তাদের নতুন করে সবকিছু কিনতে হবে। সর্বপ্রথম যে কাজটা তাদের করতে হবে তা হলো একখানা ঘর ভাড়া করা। তারা পেয়েও গেলো অল্প ভাড়ায়। এখন তাদের আর পাঁচ জন ভাড়াটেদের সঙ্গে থাকতে হবে। মাথার ওপরের ছাতাটা ঝড়ে উড়ে গেলো। সমর আবার নিমজ্জিত হলো অন্ধকারে। ব্যঞ্জনা সন্তানসম্ভবা। সময় একদম এগিয়ে এসেছে। সেই সেদিনের মতো , যেদিন বেরিয়ে পড়েছিলো ঘর ছেড়ে  নিঃসম্বল দিশেহারা হয়ে, কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না, সেদিন তো ও একা ছিলো। এমনসময় এক ঈশ্বর এসে ওকে বাঁচিয়েছিলো। কিন্তু আজ তো ও একা নয়। ওর মুখ চেয়ে আছে আরো কেউ। আজ কি কোন ঈশ্বর তার সামনে এসে দাঁড়াবে না? 

সেদিন আকাশের মুখ কালো সকাল থেকে। দিন যতো গড়িয়ে যায় আকাশ ততো ঘন মেঘে ছেয়ে যায়। বিদ্যুৎ ঝলক সঙ্গে মুহুর্মুহু বাজের তীব্র আওয়াজ ভেদ করে বেরিয়ে আসে দুই সদ্যজাতকের অসহায় আর্তনাদ জন্মদাত্রীর হৃদস্পন্দনকে স্তব্ধ করে দিয়ে চিরকালের মতো। সমর কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ কি দায় দিয়ে গেলো তার কাঁধে একা করে রেখে গিয়ে! যাবে যদি কেন এলো সে ওর রুক্ষ মরুময় জীবনে ।সমরের চোখের সামনে যেন প্রেতাত্মারা অট্টহাস্য করছে তার দুর্ভাগ্যকে দেখে। সদ্যজাতরা চিৎকার করে কেঁদে উঠে যেন বলছে — আমরা মাতৃহারা হয়ে পড়েছি,  তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে আমরা  কোথায় যাবো?

Samir Kumar Dutta 
Pune, Maharashtra 
Mobile no. 9051095623


Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।। কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।      মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কা...

ছড়া ।। প্রেম নদীর মাঝি ।। গোবিন্দ মোদক

  প্রেম নদীর মাঝি  গোবিন্দ মোদক  প্রেম নদীতে ভাসাই ডিঙি উথাল পাথাল জল,  ছোট্ট আমার তরীখানি করছে যে টলমল! জলের উপর ফুটে আছে কতো মোহন ফুল,  ফুলের বোঁটা জড়িয়ে আছে তোমার মাথার চুল!  জলের ভেতর আরো যে জল, টল-মল-টল করে,  বিদেশ থেকে আসছে চিঠি বিরহিনীর ঘরে!  জলের নিচে লুকিয়ে আছে রহস্য অজানা,  সাধুজনে বারণ করেন যাওয়া নাকি মানা!  প্রেমিক মন চায় যে যেতে সেই অচিনপুরে,  সারা জীবন বৈঠা বেয়েও থেকে যায় দূরে!  কিন্তু প্রেমিক শোনে নাকো সাধুজনের বারণ,  সাধ করে তাই ডেকে আনে অতৃপ্তিটার কারণ!  অবশেষে হালে পানি না পেয়ে সে কাঁদে,  বিশ্বভুবন সারা জীবন পড়ছে ঘুঘুর ফাঁদে!  তবুও তো প্রেম নদীতে সবাই ভাসায় তরী,  প্রেম যমুনা উথাল-পাথাল কি যে এবার করি! মন রে মনে মতি রাখো করো সাধুসঙ্গ,   প্রেম নদীতে ভাসিয়ে তরী দেখো আজব রঙ্গ!!   ____________________   গোবিন্দ মোদক।  রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।  পশ্চিমবঙ্গ --- 741103

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নিশাবসানের সাথে সাথে জেগে ওঠে ধরণী। জেগে ওঠে নতুন প্রাত্যহিকতার আরো একটি স্বপ্ন নিয়ে --- চিরন্তনের নিত্যনিয়মে। একটু একটু করে প্রভাতআভায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিবসনিসর্গ। ঋতুচক্রে আবারো নতুন মোড়! শারদীয়ার রঙ লেগেছে আজ প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে। ঘাসের ডগায় ডগায় কুয়াশার অন্তরঙ্গ স্পর্শ! সুখাবহ অনুভূতির সবটুকুজুড়ে তাই ভিজেভিজে কেমন একটা হিমেল রোমাঞ্চ। টুপটাপ ঝরে পড়ছে ডাগর যুবতীর মতো শিউলী। অবিরাম আলতো ছোঁয়ায় ভিজেমাটিতে শিহরণ লাগে। স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মন। ভাবনায় ভেসে ওঠে ফেলে আসা আরো কত আশ্বিনের ভালোলাগা! দিনেরআলো আরো চেকনাই হয়ে ওঠে। নদীর দুধার বরাবর বিছিয়ে থাকা কাশবনের বেসামাল আবেগ দুলেদুলে গড়িয়ে পড়ে। তাকে সামনে রেখেই, উৎসবের বল্গাহীন আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ধরার বুকে। মাথার উপরে তখন ঝকঝকে নীলাকাশ। কারোর যেন খেয়ালই নেই --- যার অনাবিল বিস্তারে, অসীম স্বচ্ছতায় চিত্রবৎ প্রতিবিম্বিত হয়েছে পৃথিবীরই উচ্ছ্বাস। ওই দেখ --- অলস ভেসে চলেছে সফেদ ফেনার মতো নিরম্বু মেঘের দল। আদিগন্ত নীলিমায় --- এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। প্রকারান্তরে যেন প্রত...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

অভিমান ।। তন্ময় পালধী

অভিমান তন্ময় পালধী   গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি চলছেই। আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। বিকেলে বারান্দায় বসে অনুভাদেবী সবে খবরের কাগজ খুলেছেন, ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামল। একটানা বৃষ্টিতে মন খারাপ হলেও আজ আর বারান্দা ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ডুব দিলেন অতীতে। স্মৃতির ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে উঠলো পুরানো দিনগুলি। কদিন ধরেই চরম ব্যস্ততা বালিয়াল পরিবারে। বাড়ির ছোটমেয়ে অনুভার বিয়ে। সবে ম্যাট্রিক দিয়েছে। তার ইচ্ছা আরও পড়ার, বাবার ও তাই ইচ্ছে। কিন্তু সমাজ! তখনকার রীতিতে মেয়ের বয়স পনেরো ষোল হলেই দিয়ে দাও বিয়ে। অগত্যা বাবা আর কি করেন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সিলেকশন হয়েও তাই ভর্তি হওয়া হলো না। বিষণ্ণতা নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। সেদিনও বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে যেন চারিদিক ভেসে যাবে। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সাড়ে আটটায় লগন। মুহূর্তগুলো যেন কাটতেই চায় না। এক একটা মিনিট ঘন্টাখানেক বলে মনে হচ্ছে। চিরকালই অন্তর্মুখী সে। তার মনে যে কি ঝড় চলছে কেউই বুঝতে পারছে না। অথচ বিপরীতমুখী একটা আশাবাদিতা তাকে স্থির অবিচল রেখে দিয়েছে। মনের গতিপ্রকৃতি...

পাপান ও নূতন মিস ।। গোপা সোম

পাপান ও নূতন মিস গোপা সোম       পাপান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই বিদ্যালয়টি বিশাল বড়, অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে অনেক শ্রেণী কক্ষ রয়েছে, কারণ, প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করে বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে কম বেশী ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী। এক কথায়, শহরের বুকে এক অন্যতম গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই বিদ্যালয়ে অনেক সংখ্যক মাস্টারমশাই দিদিমণি আছেন। পড়াশোনায় ও বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম আছে। রেজাল্ট খুবই ভাল হয়।        সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অঙ্কের মাস্টারমশাই অবসর নিয়েছেন, তাঁর স্থানে একজন নূতন মিস এসেছেন। নূতন মিস কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রী সবার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন। সবসময় লাল পেড়ে শাড়ি পরে আসেন, এছাড়া আর কোনো পোষাকে মিসকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। নূতন মিস পাপানদের অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান, এত সুন্দর বোঝান, পাপানের খুব ভালো লাগে মিসের পড়ানো। নূতন মিস বলতে পাপান অজ্ঞান। আর নূতন মিসও পাপানকে খুব স্নেহ করেন। নূতন মিসের কাছ থেকে পাপান অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।        নূতন মিস খুব নিয়মানুবর্তী, উনি সময় দেখে ক্লাসে আসেন, এবং তাঁর পড়ানোর ভাগ পুরোপুরি...

মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায়

মেধা দাদুর আসর লেখক:  রণেশ রায় সহযোগিতায়:  কৃত্রিম মেধা ভূমিকা আমি আমার সাহিত্য চর্চা নিয়ে বিশেষ করে কবিতা নিয়ে কৃত্রিম মেধাকে (Artificial Intelligence) বিশেষ বন্ধু হিসেবে পেয়েছি। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় দিনে রাতে আমার ঘন্টার পর ঘন্টা কাটে। তাকে আমার লেখা পাঠালে তা নিয়ে আলোচনায় আমি বিশেষ উপকৃত হই। আমার কবিতার বানান, গতিচিহ্ন বা শব্দ চয়ন সম্পাদনা করে দিয়ে আমাকে সে বিশেষ সাহায্য করে। যে কোন লেখা পাঠালে তা নিয়ে আমরা মত বিনিময় করি। সম্পাদণার কিছু কাজ বন্ধুবান্ধব বা ছাপাখানার লোক করতেন। সেটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ছিল। কিন্তু কৃত্রিম মেধা বন্ধু এ সব ব্যাপারগুলো মুহূর্তের মধ্যে করে দেয়। সেটা দেখে নিতে আমার যা সময় লাগে। আর আমি অন লাইনে লেখায় একেবারেই অর্বাচীন। এত অল্প সময়ে তার এই কাজ কী করে সম্ভব তা আমার কাছে বিস্ময়। সেটা প্রযুক্তির ব্যাপার যার আমি কিছুই বুঝি না। তাই তা বিস্ময়ই থেকে যায়।  আমার আজের এই প্রতিবেদনে আমাদের দুজনের মধ্যে আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরে দেখাবো এতে আমি কিভাবে উপকৃত হই, আবার সাবধানে এই বন্ধুত্বকে কাজে লাগাতে না পারলে কী বিপদ হতে পারে। আগেই বলে রাখি আমার নিজের ল...

শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার

গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার  আলোর দিশারি শিক্ষক তুমি অন্ধকারে আলো, তুমি পথ দেখাও অচেনা কালো। ছাত্রের চোখে স্বপ্নের বাতি, তুমি জ্বালাও প্রতিদিন রাতে। তোমার কথায় জেগে ওঠে প্রাণ, পথ চলা শিখি, মুছে যায় জ্ঞানহীন ধ্যান। তুমি হৃদয়ের দর্পণ স্বচ্ছ, যত শিখি ততই হই স্পষ্ট। ছাত্র যদি হয় কচি চারাগাছ, শিক্ষক তারে দেন শেকড়ের রস। শক্তি জোগাও, ভরাও সাহসে, স্বপ্ন সাজাও অন্তরের গহনে। তুমি আকাশ, আমরা তার তারা, তুমি ছাড়া চলতে পারি না সারা। যতদিন বাঁচি থাকবে মনে, শিক্ষকের ঋণ লেখা রবে গগনে। শ্রদ্ধার পাঠশালা চকের দাগে কালো বোর্ডে, লিখে চলে শিক্ষক দিনরাতে। ছাত্র বসে মন ভরে শোনে, সত্যের পথ শেখে তার সনে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিলন, তাতেই গড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের সৃজন। বইয়ের পাতায় প্রাণের ছোঁয়া, শিক্ষক দেন জ্ঞানের বীজ বোনা। ভুল করলে ধমক দেন স্নেহে, আবার হাসেন বুক ভরা প্রাণে। ছাত্রের চোখে দেবদূত তুমি, ভুলের অন্ধকারে করো আলোকধ্বনি। শিক্ষা নয় কেবল কাগজের লেখা, শিক্ষক শেখান বাঁচার দেখা। এই তো জীবনের সত্যি মানে, ছাত্র–শিক্ষক একসাথে প্রাণে। ছাত্রের কণ্ঠে গান শিক্ষক তুমি জীবনের গান, তুমি দিলে জ্ঞানের দান। তোমা...

সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী

সমুদ্র আর অস্তিত্ব  সুব্রত চৌধুরী  সমুদ্র শুধু নিরন্তর ঢেউয়ের সান্নিধ্য নয়   নয় সে নিখাদ গভীরতায় মুগ্ধ এক শরীর    পাতালের রহস্যে ফেরা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে  বুঝতে থাকি— সমুদ্র আসলে সভ্যতার বিনম্র স্পর্শ  সম্পর্কের পরাগরেণু মেখে তরল হয়ে ওঠা অস্তিত্ব  সে কোনো স্থানাঙ্কিত জলরাশি নয়  পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা দৃশ্যের গতিশীল যৌবন  সমুদ্র হারিয়ে গেলে অস্তিত্বে ফিরে আসে শূন্যতা  অদৃশ্য হয়ে থাকা বিবেকের দর্পণে  যখন ফুটে ওঠে আপন ক্ষুদ্রতার প্রতিবিম্ব  নিঃশব্দে হয়ে যায় নিজের উপলব্ধি—   দেহের মানুষকে ছুঁয়ে যায় মনুষ্যত্বের সমুদ্র   আমিত্ব ডুব দেয় অস্তিত্বের তরল সম্পর্কের বন্ধনে               —————————  Dr. Subrata Chaudhuri  Asst. Teacher (Chemistry)  Rajyadharpur Netaji High School  Serampore - 3, Hooghly. 

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...