বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু
সমীর কুমার দত্ত
আমাকে এক মুহূর্ত শান্তি দেয়নি ও ছেলে
ও আমার ছেলে নয়, সন্তান তূল্য ছোট ভাই
আমি ওর বড়দি মায়ের মতন।
পরপর দুই ভায়ের অকাল মৃত্যু হয় , তাই—
আমি ওকে মায়ের কাছ থেকে তিন মুঠো চালের ক্ষুদ দিয়ে কিনেনি
সেই থেকে ও আমার ছেলে নামে ক্ষুদিরাম ।
নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বিপ্লবী দলে (অনুশীলন সমিতিতে) যোগ দিয়ে
দেশোদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে,
নিশুতি রাতে চুপিসারে গোয়ালঘরে খাবার খেয়ে
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গা ঢাকা দিতো অন্ধকারে,
দেশোদ্ধার হলো কিনা জানা তার হলো না
কারণ সে চলেগেলো অকালে।
একদিন ভুল করে নিরপরাধ ব্রিটিশ মারে
ব্রিটিশও এর শোধ নিলো যে তাকে মেরে
ভুল করে সে নিরপরাধ মারলো ব্রিটিশ
তাকে মারলো ব্রিটিশ ভুল না করে
শহীদ হলো ক্ষুদিরাম, বন্দে মাতরম্ ধ্বনিতে।
ফাঁসির মঞ্চে বুক চিতিয়ে এগিয়ে গেলো দামাল ছেলে
প্রহরীদের পিছনে ফেলে
ভাবটা যেন এমন ছিলো —
"তোমারা কি আমায় নিয়ে যাবে, তোমারা তো নিজেই ভয়ে মরো
আমি নিজেই পারি যেতে আত্মাহূতি দিতে।"
যখন তাকে বলা হলো—মৃত্যুর আগে কী ইচ্ছে তার?
নিঃশঙ্কচিত্তে উত্তর দিলো সে,
"আমি ভালো বানাতে পারি বোমা
মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে
সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই,
কিন্তু সময় তো আর নাই।"
এমনি ছিলো মানসিক দৃঢ়তা, আর
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা তার।
তার জন্মদিন স্মরণ করা তো দূরে কথা
তার শহীদ দিবস মনে রাখার দায় কারোর নেই
কারণ সে তো কেউ কেটা নয়,
বলিদানের মৃত্যু সতত মর্মান্তিক ও স্মরণীয় হয়
তাই দরজায় দরজায় ডাক দিয়ে যায়
বিস্মৃত স্মৃতি তাও হাতড়ে বেড়ায়
ব্যতিক্রমী শুধু ফাঁসির মঞ্চ মজফ্ফরপুর বন্দিশালায়
তার তেজোময় অন্তরাত্মা পূজিত হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
অনেক নবজাতকের মৃত্যুর পর বেঁচে যাওয়া ক্ষুদিরাম
দেশের সেবায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ
তাই তো সে এলো আর বলে গেলো না
শহীদ হয়ে রয়ে গেলো বঙ্গমাতার অমর সন্তান
বঙ্গের প্রথম শহীদ আমার পুত্রসম
গর্বের ভাই দেশভক্ত বীর ক্ষুদিরাম
বন্দে মাতরম্।।
===============
Samir Kumar Dutta
Pune, Maharashtra
No comments:
Post a Comment