অঞ্জনা মজুমদার
আজ পাশের বড় স্কুলে স্বাধীনতা দিবস পালন হবে । ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েরা স্কুল ড্রেস পরে হাতে ছোট্ট ছোট্ট পতাকা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। নিতাই স্কুলে পড়ে না,স্কুলের পাশে একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। কাজ না করলে তার বাড়িতে ভাত রান্না হবে না। মা আর ছোট বোনের খাওয়া হবে না। আজ স্কুলের সামনে বেশ ভীড়। তাই চা বিস্কুট ও বেশি বিক্রি হচ্ছে। নিতাই এর মনে ভারি আনন্দ। আজ বোনকে একটা চকোলেট কিনে দেবে।
চা বিক্রি করতে করতেই নিতাই দেখল, একটা ছোট্ট মেয়ে পতাকার কাছে যেখানে ধূপ জ্বালানো আছে, সেখানে আপন মনে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে পতাকার দিকে তাকিয়ে আছে। আর একি? তার ফ্রকের তলাটা ধূপের আগুনে আগুন ধরে গেছে। ধীরে ধীরে জামাটায় বেশি করে আগুন লেগে যাচ্ছে। কেউ খেয়াল করেনি। বেশি তাপ লাগতে মেয়েটি থতমত খেয়ে ছুটতে লাগল। আর হাওয়া লেগে আগুনটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।
বাচ্চারা ভয়ে চেঁচামেচি করতে লাগল। মাস্টারমশাই দিদিমণিরা এখনও স্কুলঘর থেকে বাইরে আসেননি। নিতাই আর দেরি করলো না। দোকানের পাশে রাখা বস্তাটা নিয়ে দৌড়ে গেল। বাচ্চাটিকে বস্তা দিয়ে জড়িয়ে ধরে জল আনো জল আনো বলে চেঁচাতে লাগল।
নিতাই এর চেঁচামেচি শুনে চায়ের দোকানের ক্রেতারা, আর স্কুলের মাস্টারমশাই দিদিমণিরা বাইরে এসে ছুটে এলেন নিতাই এর কাছে।
নিতাই আগুন নিভিয়ে ফেলেছিল। আতঙ্কে বাচ্চাটি কথা বলতে পারছে না। নিতাই এর হাতটা বেশ পুড়ে গেছে, জ্বালাও করছে। বাচ্চারা জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছে, নিতাই আগে বাচ্চাটির মুখে দিয়ে বলল, নাও বোন, আর ভয় নেই একটু জল খাও।
দিদিমণি বললেন, তুমি চায়ের দোকানের নিতাই না? তোমার তো বেশ পুড়েছে হাতটা। ওষুধ লাগাতে হবে। তোমার উপস্থিত বুদ্ধির জন্যই আজ এই ছাত্রীটি পুড়ে যাবার থেকে বেঁচে গেছে।
হেডমাস্টারমশাই বললেন, এ তো একটা ছোট্ট খোকা। ও চা তৈরি করে? স্কুলে পড়ে না?
নিতাই বলল, আমি চা না তৈরি করলে বাড়িতে রান্না হবে না। মা বোনকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমার আর লেখাপড়া হবে না।
মাস্টারমশাই বললেন, আজ স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে দেশের একটা সাহসী পরোপকারী ছোট ছেলে লেখা পড়া ছেড়ে কাজ করবে তা হবে না। নিতাই তুমি আজ থেকে লেখা পড়া করবে। তবে সম্মানের সাথে নিজের কাজও করবে। আমি নিজে তোমাকে স্কুল ছুটির পর পড়াবো। দেশের স্বাধীনতার দিনে আজ নিতাই ও স্বাধীন দেশের সেই ছাত্র তৈরি হবে যে লেখা পড়া করবে আর নিজের সংসারও সামলাবে।
সব মাস্টারমশাই আর দিদিমণিরা এগিয়ে এলেন। ঠিক বলেছেন স্যর, আমরা সবাই নিতাই এর পাশে আছি। স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমাদের শপথ।
সব বাচ্চারা নিতাইকে ঘিরে ধরে একসুরে বলল, আমরাও স্বাধীনতা দিবসে নিতাইদার পাশে থাকব।
হেডমাস্টারমশাই বললেন, আজ নিতাই আমাদের দেশের পতাকা তুলবে।
নিতাই এর চোখে জল। হেডমাস্টারমশাই এর হাত ধরে নিতাই পতাকা উত্তোলন করল। নতুন এক স্বাধীনতার আলো তার চোখে। সবার সঙ্গে পতাকাকে স্যালুট করে নিতাইও বলল, জয়হিন্দ। বন্দেমাতরম।
==============
অঞ্জনা মজুমদার
এলোমেলো বাড়ি
চাঁদপুর পল্লী বাগান
পোঃ রাজবাড়ি কলোনী
কলকাতা ৭০০০৮১
No comments:
Post a Comment