বহুরূপীর জীবন ।। মিঠুন মুখার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, August 20, 2025

বহুরূপীর জীবন ।। মিঠুন মুখার্জী

বহুরূপী

বহুরূপীর জীবন

মিঠুন মুখার্জী


এবারের দুর্গাপুজোয় 'আমরা কজন' ক্লাবের পক্ষ থেকে সেরা বিউটি কম্পিটিশনের আয়োজন করা হয়েছিল। যাদের বয়স কুড়ির ভিতর তারাই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মোট ত্রিশজন অংশগ্রহণ করেছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। একটা লম্বা স্টেজ করা হয়েছিল সুন্দরীদের প্রর্দশনীর জন্য। বলা হয়েছিল সবদিক থেকে যারা সুন্দরী হবেন তারাই প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করবে। এই সুযোগটা জীবনপল্লী গ্ৰামের কেষ্ট দা হাতছাড়া করেন নি। অল্প বয়সে কত মেয়ে যে তার প্রেমে পড়েছিল তার হিসেব নেই। পেশায় কেষ্টদা একজন বহুরূপী। নানান রূপ সেজে মানুষদের আনন্দ দিয়ে পয়সা উপার্জন করাই তার কাজ। সে একজন সুন্দরী সেজে ওই প্রতিযোগিতায় উপস্থিত হয়েছিলেন। যারা বিচারকের আসনে ছিলেন তাদেরকেও কেষ্টদা একেবারে ঘোল খাইয়ে দিয়েছিলেন। বিচারকরা তিন জন এক মুহূর্তের জন্য বুঝতে পারেন নি যে, এই সুন্দরী আসলে কোনও মেয়ে নয় ছেলে। সকল সুন্দরীদের দেখার পর যখন কেষ্টদা সুন্দরী নারীর রূপ নিয়ে মঞ্চে ওঠেন, তখন সকলে তার রূপেরকলা দেখে অভিভূত হয়ে যান। মনে হয় পনেরো-ষোলো বছরের কোনো অপ্সরা। তিনি যা যা করছিলেন বিচারকদের তাই তাই ভালো লাগছিল। 
        অবশেষে রেজাল্টের পালা। শ্রেষ্ঠ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিচারকরা প্রথম নির্বাচন করেছিলেন কেষ্ট দাকে অর্থাৎ মেনকা মুখার্জীকে। কেষ্ট দা মেয়েদের গলায় নিজের নাম মেনকা মুখার্জী বলেছিলেন। দ্বিতীয় আরাধ্যা সিকদার ও তৃতীয় কমলিকা দাশগুপ্ত। যখন পুরস্কার দেওয়ার জন্য মেনকা মুখার্জীর নাম ঘোষণা হয়, তখন কেষ্ট দা মেয়েদের মতো হেলেদুলে এসে একটু মুচকি হেসে বিচারকের হাত থেকে প্রথম পুরস্কার নেন। এখানেই ঘটে সেই ব্যাপারটা। 'আমরা সবাই' ক্লাবের সভাপতি শ্রী হীরক বিশ্বাস মহাশয় ভালো ভাবে দেখে কেষ্ট দাকে চিনতে পারেন। মাইক্রফোন হাতে নিয়ে বলেন --- "আমাদের একটা বড় ভুল হয়েছে। বিচারকসহ এখানকার সকল মানুষের চোখে ধূলো দিয়ে একজন পুরুষ নারীরবেশ ধরে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্ৰহণ করেছেন,যার বয়স চল্লিশের উপরে। নাম কেষ্ট মুখার্জী। এই প্রতারনাকে আমরা সহ্য করব না। এই ছলনাকারীকে আমরা উপযুক্ত শাস্তি দেবো।" কেষ্টদা বুঝতে পারেন তিনি ধরা পড়ে গেছেন। আর উপায় নেই। তখন তিনি নিজের আসল গলায় সকলকে বলেন -- " সভাপতি মহাশয় আমার কথা বলছেন। আমি কেষ্ট মুখার্জী, একজন বহুরূপী। মানুষকে আনন্দ দেওয়ায় আমাদের কাজ। আসলে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে পাঁচশ টাকা বাজি ফেলে এই প্রতিযোগিতায় আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। ওর সব শর্ত আমি পূরণ করায় পাঁচশ টাকা জিতেছি। আপনাদের শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব। বহুরূপীর অসাধারণ দক্ষতা ও জীবনের কথা চিন্তা করে ক্লাব সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে বিচারকরা সুন্দরী বহুরূপী হিসাবে সেরা বিউটির প্রথম পুরস্কারটি কেষ্ট দার হাতেই তুলে দেন। সকলে হাততালি দিয়ে তার দক্ষতার প্রশংসা করেন। কেষ্ট দার দুচোখে জল দেখা যায়।

===================

              মিঠুন মুখার্জী
             গ্ৰাম - নবজীবন পল্লী
             পোস্ট + থানা - গোবরডাঙ্গা
             জেলা - উত্তর ২৪ পরগনা
             পিন - ৭৪৩২৫২


No comments:

Post a Comment