শব্দ
সনৎকুমার নস্কর
কিছু কিছু শব্দ থাকে সুইচের মতো।
হাত দিলেই দপ্ করে জ্বলে ওঠে ব্যঞ্জনার আলো।
তখন দেখে নিই অন্তর-বাহির
গহন আঁধারে ঢাকা পথ
শব্দ সে পথের সঙ্গী হয়৷
উপনিষদের কবি শব্দকে বলেন 'শব্দব্রহ্ম',
যখন সে দিগন্তবিস্তারী ---
কথাটার মানে খুঁজে পাই সেসময়
গর্ভের গভীরে উচ্চারিত ধ্বনি জাগিয়ে তোলে
আমূল আর্তনাদ৷
শব্দেই কি শব্দের শেষ?
তারও কি নেই আত্মার মতো
জীবনের অন্তহীন পথ?
এক হৃদয় থেকে আর এক হৃদয়ে
সে তো করে ক্লান্তিহীন পরিক্রমা
আমাদের বাসনা-বিশ্বে সে তোলে ঝড়
আবেগমায়া দেয় ছড়িয়ে বাক্ স্পন্দের পর
অবশ্য
কখনো কখনো সে বয়ে আনে কূটাভাস
তর্কনীয় অর্থ বিচ্ছুরণে ক্রিয়াময় হয়ে ওঠে তার সত্তা
শব্দসংশ্লেষে স্বরতরঙ্গে ফুটে ওঠে শিল্পকারিতা
আবার
ক্বচিৎ কখনো ঘটে শব্দের অতিচার
অন্তরীণ আবেগকে ছেড়ে
লঘু শিথিলতাকে সে করে আশ্রয় তখন অর্থঘন পঙক্তিকে শূন্যবিহারী মনে হয়৷
বাকস্পন্দের এই নীরক্ত নির্জীবতা কি
শব্দের শেষ গন্তব্য?
না কি আপাত পঙ্গুতার আড়ালে
সে লুকিয়ে রাখে সুবেদী প্রত্যয়?
উত্তর মেলে না ৷
শব্দব্রহ্ম।
ব্রহ্মপুরুষের মতো সেও এক অনধিগম্য বিস্ময় ৷
====================
সনৎকুমার নস্কর
[অধ্যাপক, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যক্ষ, কলা অনুষদ, ক.বি.]
No comments:
Post a Comment