কবিতাগুচ্ছ ।। মেশকাতুন নাহার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, August 20, 2025

কবিতাগুচ্ছ ।। মেশকাতুন নাহার

কবিতাগুচ্ছ ।। মেশকাতুন নাহার 



১.

বিধির অভিশাপ 


সরকারি হবো সরকারি হবো ছিল বড়োই যে সাধ, 
এখন দেখি সরকারি হওয়া আমারই অপরাধ।
সাতটি বছর পার হলেও পাইনি নিজ অধিকার, 
স্থায়ীকরণ,পদোন্নতিটা অতি সত্বরই  দরকার।

জনস্বার্থে সরকারি হয়েছে,বল আমার কীসে ভুল? 
বিধিরই চক্রে গ্রেড বক্রে, ভেঙেছে মনেরই কুল।
প্রভাষক থেকেই বিদায় নিচ্ছে হাজার হাজার লোক,
নীরব চিৎকার,নেই শোধাবার,প্রাণে বইছে শোক।

বদলী চালু নেই বলেই তো চলছে ভাই অনিয়ম, 
একই জায়গায় থেকে থেকে লড়াই চলে হরদম।
দিন দিনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কমছে যতই,
ছাত্রছাত্রীর ফলাফলের মান নামছে নীচে ততই।

বিকলাঙ্গ সামাজিক অবস্থান দুঃখ মনেরই মাঝে,
বঞ্চনারই শিকার হয়েছি আঠারো বিধিরই ভাঁজে।
চাই অধিকার,চাই মর্যাদা,অভিশাপের অবসান,
সকল ভেদাভেদ দূর করতে গাহিবো সাম্যের গান।


২.

ভালোবাসার রঙধনু 



ইচ্ছে মতো রঙধনু টা
উঠে আকাশ নীলে,
সাজিয়ে দেয় এই আমাকে 
সাতটি রঙে মিলে।

বর্ষণ শেষে ক্লান্তি ধুয়ে
দেয় সে মুচকি হাসি,
নানান বর্ণে দীপ জ্বালিয়ে 
বলে ভালোবাসি।

ওই মেঘেরা যেই না উড়ে
ঝরে পড়ে ঘাসে,
রঙধনু টা ঠিক তখনই 
চুপিসারে আসে। 

অবাক হয়ে দেখি তারে
মেলে নয়ন দুটি,
ক্ষণিক পরে হৃদয় ভাঙে
নেই যে তাহার ছুটি। 

ইচ্ছে করে বন্দী করি
কত নামেই ডাকি,
তবুও সে হাওয়ায় হারায়
দিয়ে আমায় ফাঁকি।

আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে 
চলে রঙের খেলা, 
আকাশ পানে তাঁরই খুঁজে 
যায় যে আমার বেলা।





৩.

শরতের শোভা 



শরৎ মানে শুভ্র মেঘের 
স্নিগ্ধ বিকেল বেলা, 
শরৎ মানে রৌদ্র ছায়ার 
লুকোচুরি খেলা। 

নদীর তীরে কাশের বনে
এলোকেশী দোলা,
শিউলি বেলী খোঁপার চুলে 
কন্যার আঁচল খোলা। 

শরৎ মানে কচি ধানের 
সাজায় নতুন ডালা,
শাপলা,শালুক,পদ্ম,কেয়ার
সৌরভ ভরা মালা। 

শরৎ মানে নীল আকাশে 
উড়ে চলা পাখি,
হঠাৎ এসে রংধনুর রঙ
জুড়ায় দুটি আঁখি। 

শরৎ মানে উদারমনা 
একটি মিষ্টি বধূ,
স্বচ্ছ হাওয়ায় নিসর্গ শোভায়
স্নেহ মাখা শুধু।



৪.

বিষফোঁড়া 


শোনরে মেয়ে বলি আমি চলার পথের কষ্ট, 
চেনাজানা কিছু মানুষ হয় রে খুবই দুষ্ট। 
নারীর কাজের মূল্য দেয় না খোঁচা মারে শুধু 
অন্তর তাদের ছলাকলা মুখে খালি মধু।

কর্মস্থলে কেউ বা আবার কথার ধনুক ছুড়ে,
সুযোগ পেলেই বিশ্রী চোখে সুইয়ের মতো ফুঁড়ে। 
যেই না কেহ ভালো কাজের তারিফ করে বলে, 
ঠিক তখনই একটা শ্রেণি হিংসায় পুড়ে জ্বলে।

ঘরে বাইরে কাজ করেও পেলাম কেবলই হেলা,
চাকরি শেষে বাসার চাকরি এমনই যায় রে বেলা। 
আয়-উপার্জন যতই করুক স্বামীর সেবা ফরজ, 
আরও আদেশ জারি করে  দেখতে হবে অগ্রজ।

নিজ পরিচয় গড়ে তোলা সহজ নয় রে কন্যা,
খুশি গুলো ভাসিয়ে নেয় হঠাৎ আসা বন্যা। 
উপার্জিত অর্থ যখন দেয় না নারী তুলে,
ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে স্বপ্ন হাওয়ায় দুলে।

সন্তান কোলে,বাসে ঝুলে,চাকরি করে নারী, 
পদে পদে জুলুম করে কিছু অত্যাচারী। 
শোনরে মেয়ে আরও বলি স্বাধীনতার কথা, 
ইচ্ছে হলেই যায় না উড়া এটাই বাস্তবতা।

======================

মেশকাতুন নাহার, 
প্রভাষক সমাজকর্ম 
কচুয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ,
কচুয়া,চাঁদপুর।
উত্তরা, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment