চেনা প্রতিবেশী (চতুর্থ পর্ব) ।। দীপক পাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, August 20, 2025

চেনা প্রতিবেশী (চতুর্থ পর্ব) ।। দীপক পাল

অফিসে কম্পিউটারে কাজ


 চেনা প্রতিবেশী 

(চতুর্থ পর্ব)

দীপক পাল 

পরের দিন বেলা সাড়ে দশটায় ত্রিহান, ইমন ও আহিরকে নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে সোজা ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে পিন করা সব কাগজ পত্র তার সামনে পেশ করল। ম্যানেজার সব খুঁটিয়ে দেখে বললেন,

- 'এমনিতে দেখছি কাগজপত্র সব ঠিকই আছে। একটু বসুন।' তিনি সুইচ টিপলেন একজন বেয়ারা এসে উপস্থিত। ওকে বললেন,

'আড্ডিবিদেশবাবুকে একটু ডেকে পাঠাও তো।'

 

আড্ডিবাবু বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরে একজন ভদ্রলোক সুইং ডোর ঠেলে ঢুকলো।

- 'বিদেশবাবু, ত্রিহান মজুমদারের নামে যে একটা জয়েন্ট ফাইল ওপেন হয়েছে, এই নিন তার কাগজপত্র। এনারা এসেছেন ওনাদের নিয়ে গিয়ে যা যা করার করে ফেলুন। যান ত্রিহানবাবু স্বদেশ বাবুর সাথে যান।ওরা ম্যানেজারকে নমস্কার জানিয়ে স্বদেশের পেছন পেছন গেল। লোন ডিপার্টমেন্টটা কয়েকটা আলমারী আর ফাইলিং কেবিনেট দিয়ে একটু আড়াল করা। বিদেশবাবু তার টেবিলের সামনের দুটো চেয়ারে ওদের বসতে বললেন। তারপর একটা ফাইলিং কেবিনেট থেকে একটা ফাইল নিয়ে এসে দুটো ফাইল পাশাপাশি টেবিলের ওপর রেখে বসলেন। বিদেশবাবুর পাশে আরও দুজন লোক কম্পিউটারে খুব মনোযোগ সহকারে কাজ করে চলেছে। এদিকে আহির ইমনের পাশে বসে এদিক ওদিক দেখছিল। হঠাৎ টেবিলের ওপরে রাখা স্ট্যাম্প প্যাড টা তুলে নিল। ইমন স্ট্যাম্প প্যাডটা আহিরের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যথাস্থানে রেখে দিতে বিদেশবাবু বলে উঠলেন,

'আহা ওটা কাড়লেন কেন, ওটা ওকে দিন ওটা নিয়ে ও খেলুক, ওটা খুব শক্ত করে লাগান আছে খুলবে না সহজে। খুলে গেলেও আমরাতো আছি। ও ওটা নিয়ে খেলুক ততক্ষণে আমরা কাজে লেগে পড়ি।ফাইল খুলে বিদেশবাবু একটা চার ছ পাতার ফর্ম বার করে কোথায় কি লিখতে হবে সেটা বলে দিল আর কোথায় কোথায় সই করতে হবে দাগ দিয়ে জিগ্গেস করলো দুজনের ফটো এনেছে কিনা। তারপর নিশ্চিন্ত হয়ে দুটো ফাইল থেকে যা দরকার সেই কাগজগুলো একটা ফাইলে রেখে বাকিগুলো ত্রিহানের ফাইলে ঢুকিয়ে রাখলেন। সব কাজ মিটতে মিটতে সাড়ে বারোটা বেজে গেল। তারপর ওদের ফর্মটা দেখে নিয়ে বললেন,

- 'দেখুন এই মাসের লোনের কোটা আর নেই। আবার সামনের মাসে যখন টাকা আসবে, তখন আবার দেওয়া শুরু হবে। আপনার আগে একজন আছে, তার আগে হবে, তারপর আপনাদের। অতএব এখনই কিছু হবে না। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে রাখবো। অবশ্যই না। আমি গড়িয়ার শান্তি এপার্টমেন্টে যাবো, তারপর যে কোনদিন একবার আপনার বাড়ীতে যাব ফোন করে।'

- 'আচ্ছা তাহলে আমরা এখন আসি?'

- 'হ্যাঁ আসুন।'

ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে বাড়ী ফেরার পথে একটা মিষ্টির দোকান থেকে কিছু মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরলো প্রায় একটা। এর মধ্যে আহিরের বায়নায় তার হাতে একটা সন্দেশ দিতে হলো ইমনের আপত্তি সত্তেও। বলে, ' এর পরে আহিরকে খাওয়ানো দুপুরে খুব মুস্কিল হবে, জান।'

দুপুর আড়াইটে বেজে গেল যখন ত্রিহান ঢুলু ঢুলু চোখ আহিরকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজেই ওর পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুদিন ধরে শনি রবিবারের দুপুরগুলো খুব ব্যস্ততায় কেটেছে। কিভাবে দিনগুলো যে কেটে গেল টেরই পেলনা। আজকে অফিস কামাই করায় চিন্তা মুক্ত মনে যেন এই পড়ন্ত দুপুরে খুব আরাম বোধ করছে। ইমন এখনো ঘরে ঢোকেনি। ত্রিহান জানালার বাইরে ছোট পর্দার ওপর দিয়ে দৃষ্টিটাকে ছুঁড়ে দিল।

 

আকাশটা আজ বেশ পরিস্কার। কালো মেঘ যা ছিল তা কেটে গেছে। ত্রিহান ওর মনের সাথে অনেক মিল খুঁজে পেল যেন। মনটাও পাখির মতো উড়তে চায়। কাজ সেরে ইমন কাপড় দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে ত্রিহানের পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আপন মনে বলে উঠলো,

- 'বাব্বা দুদিন ধরে যা পরিশ্রম ও টানটান উত্তেজনা মনের মধ্য দিয়ে গেল ঠিক এখন যেন একটু হাল্কা হাল্কা লাগছে। হ্যাগো, আর কি কোন দিক দিয়ে কোন ব্যাগড়া আসতে পারে?'

- 'আমার তা মনে হয় না। ব্যাঙ্ক তো কাগজপত্র সব দেখেই বলেছে লোন সামনের মাসেই হয়ে যাবে। তবে মনে এত দোলচাল কেন?'  ইমন ত্রিহানের গা ঘেঁষে এসে বললো,

- 'যতক্ষণ না ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারছি ততক্ষণ আমার মনের আশঙ্কা যাবে না।' ত্রিহান বলে,

- 'তোমার মনের দোলচালে আমার কবি অমর মিত্রের একটা কবিতার লাইনের কথা হঠাৎ মনে পড়লো ' আশা নিরাশার দ্বন্দ্ব অতীত কামনার মড়া জ্যোৎস্নায়।ইমনকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে রাখতে বলে, ' না ইমন আর কোন ভয় নেই।'

           

বিকেলে ওদের ঘুম ভাঙলো আহিরের ডাকে। সে উঠে বসে মাকে ধাক্কা দিয়ে বলছে,

- 'মা ওঠো না, মাঠে যাবে নামা ওঠো  ওমা ওঠো না।' ক্রমাগত বলতেই থাকলো।

- 'দাঁড়া না উঠছি।তারপর উঠে বললো, ' আজকেও তোকে বেরোতে হবে?' জানিস বাবা মিষ্টি এনেছে, খাবি না এখন? আজকে আর বেরোতে হবে না। বাবা আছে না ঘরে।'

ব্যস, অমনি আহির কেঁদে ফেলে। ' আমি মিষ্টি খাব না, মাঠে যাবো ....।' ত্রিহান বলে, থাক থাক চলো আমরা সবাই মিলে যাই পার্কে। বিকেল শেষের দিকে, এখুনি সন্ধ্যে হয়ে যাবে। ঘুরে এসে টিফিন করা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি চলো।' ইমন বলে,

- 'দাঁড়াও বারান্দার কাপড়গুলো তুলে আনি আগে।' ইমন ত্রস্তপদে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

রোজ পার্কে যেতে যেতে আহিরের কিছু বন্ধু হয়ে গেছে। ইমনেরও সেই সব ছোট বাচ্চাদের কোন কোন মায়েদের সাথে আলাপ হয়েছে। আহির পার্কে ঢুকেই দৌড়ে চলে গেল সেদিকে। ইমন আর ত্রিহান একটা ফাঁকা বেঞ্চে গিয়ে বসলো। সেখান থেকে আহিরের প্রতি নজর রাখা যাচ্ছে। সে একটা ফুটফুটে ওর সমবয়সি মেয়ের সাথে দৌড়দৌড়ি করছে। যারা স্লিপে চড়ছে হৈ হৈ করে তাদের কাছে গিয়ে কখনো দাঁড়াচ্ছে আবার দৌড়ে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। একজন মহিলা আহিরকে কিছু যেন বললো, আহির আঙুল তুলে এদিকে দেখিয়ে দিল। দেখা গেল মহিলা এদিকেই আসছে। ইমন বললো, ' লাবণ্য আসছে।'

- 'এই ইমন, আজকে দেখছি বেঞ্চে বসে আছো। ইনি বুঝি তোমার মিস্টার।'

- 'হ্যাঁ এসো আলাপ করিয়ে দিই। ত্রিহান, ইনি হচ্ছেন লাবণ্য।  আহির যার সাথে দৌড়ে দৌড়ি করে খেলছে, ঐ কিউট বাচ্চাটার নাম তিয়াসা আর লাবণ্য হচ্ছে ওর মা। আর লাবণ্য তুমি তো আহিরকে চেনই ইনি হচ্ছেন আহিরের বাবা।।'

ত্রিহান আর লাবণ্য পরস্পর নমস্কার বিনিময় করলো। ত্রিহান জিগ্গেস করলো,

- 'আপনাদের বাড়ী কোন দিকে?''

- 'এই তো আমাদের বাড়ী। একেবারে পার্কের গায়ে। একদিন আসুন না আমাদের বাড়ী সবাইকে নিয়ে। এই ইমন সত্যি একদিন এসো না আমাদের বাড়ীতে সবাই।'

ত্রিহান দেখলো পার্কের উত্তর দিকে লাবণ্যদের দোতলা বড়ীটা। দোতলার বারান্দায় টবে কত রকম ফুল ফুটে আছে। বাড়িটা পার্কের উত্তরে হলেও সম্পূর্ণ  দক্ষিন মুখো। বলে,

- 'আপনারা তো সারাদিনই পার্ক দেখতে পান।'

- 'শোন ইমন, সারাদিন কাজের চাপে পার্কের দিকে তাকাবার ফুরসৎই পাই না জানেন?'

- 'আচ্ছা আচ্ছা ঠিক। আমি বরং ওদিকে গিয়ে তিয়াসার সাথে একটু আলাপ করে আসি।'

ত্রিহান এগিয়ে গেল চুপিচুপি ওদের পেছন দিকে। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই  দুজনেই হঠাৎ পেছন দিকে কি  কা রণে তাকাল। হয়তো আবার দৌড়ানার তাগিদে। আহির বললো,

- 'ওই দেখ আমার বাবা আসচে।' ওমনি তিয়াসা বলে,

- 'আমার বাবা আপিস।' এরপর আরো মজার ঘটনা হলো। আহির ছুটে এসে ত্রিহানকে জড়িয়ে ধরে বলে, বাবা।' তিয়াসাও আহিরকে দেখে দৌড়ে এসে ত্রিহানকে জড়িয়ে ধরে বলে, ' কাকু। ' ত্রিহান অবাক ও খুব খুশী হয়ে বলে,

- 'আমি জানি তোমার নাম তিয়াসা আর তুমি খুব ভাল মেয়ে তাই নাকিন্তু এবার তো বাড়ী ফিরতে হবে। দেখছ না পার্কটা কেমন আবছা হয়ে উঠছে। এখনই সন্ধ্যে নামবে। চল আমরা বাড়ী ফিরে যাই। ওরা দুজন ত্রিহানের পিছন পিছন ফিরে এলো বেঞ্চে।

- 'দেখ দেখ লাবণ্য, হ্যামলিনের বাঁশীওয়ালার মতো ত্রিহানের সাথে সাথে কেমন ভাবে ওরা ফিরে এলো।'

- 'দেখলাম তো, অন্য দিন ডেকে ডেকে আনতে হয়। সহজে আসতেই চায় না।ততক্ষণ ওরা দুজন ওদের মায়েদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সবাই এবার উঠে পড়লো।

           

এরপর সপ্তাহ তিনেক কেটে গেল। জুলাই মাসের এক শনিবার সকালে বিদেশবাবু ফোন করে ত্রিহানদের বাড়ি এসে উপস্থিত হলো। আগে থেকে ফোন করায়  ত্রিহান মিষ্টি এনে রেখেছিল। বিদেশ বাবুকে বেশ খাতির করে বসানো হলো। উনি জিগ্গেস করলেন এইবাড়ীতে তারা ভাড়া থাকে কিনা কত টাকা ভাড়া দিতে হয় ইত্যাদি। তারপর তিনি আসল কথায় এসে গেলেন। ইমনও রান্না বন্ধ করে এসে দাঁড়িয়েছে। বিদেশ বাবু বললেন,

- 'আপনারা দুজনেই আছেন, ভাল হলো। ব্যাঙ্ক আপনাদের মোট লোন স্যাংশন করেছে একত্রিশ লক্ষ সত্তর হাজার। আপনারা যে টাকাটা দিয়েছেন তা ব্যাঙ্ক থেকে লোন পাবার জন্য কেমন । তাহলে ইউনিটের দাম বাকি থাকলো তিরিশ লক্ষ চল্লিশ হাজার। এই টাকাটা তো পাবেনই এছাড়া ক্লাব আর এক বছরের জন্য মেইনটেনেন্স ও সিংকিং ফান্ড নিয়ে ঐ টাকাটা গিয়ে দাঁড়ায় একত্রিশ লক্ষ সত্তর হাজার। এখন এই টাকাটা অর্থাৎ আসল ও সুদ সমেত টাকাটা আপনাকে মাসে মাসে তিরিশ বছর অথবা আপনার যত বছর সার্ভিস বাকি আছে তার মধ্যে যেটা কম হবে সেটা সেই সময়ের মধ্যে শোধ করতে হবে। ক্লিয়ার?' ওরা দুজনেই মাথা নাড়াল বুঝেছে বলে।

বিদেশবাবু  কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

- 'আপনাদের মাসে মাসে কুড়ি হাজার টাকা করে কাটলে কিছু অসুবিধে নেই তো? দেখুন এই কুড়ি হাজারের মধ্যে আসলের সাথে সুদও আছে। প্রতি বছর অবশ্য সুদটা কিন্তু কমতে থাকবে। এতে লোন শোধটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আমরা কিন্তু কাউকে এত কথা বলি না। এবার যাবার আগে আপনাদের দু তিনটে জায়গায় সই করতে হবে।' বলে তিনি ব্যাগ থেকে কাগজপত্র বার করলেন। ত্রিহানও কাগজের ওপর ঝুঁকে দেখতে থাকলো। সেই ফাঁকে ইমন প্লেটে করে বিদেশবাবুর জন্য সাজানো মিষ্টির প্লেটে বিদেশ বাবুর সামনে নামিয়ে রাখলো সঙ্গে এক গ্লাস জল। তিনি একবার সেদিকে চেয়ে বললেন,

- 'সইটাতো করতে হবে ম্যাডাম।'

- 'করছি। চায়ের জল বসিয়ে এসেছি। এখুনি আসছি।'

কিছুক্ষণ পরে দু কাপ চা নিয়ে এলো ইমন। এক কাপ ত্রিহানের হাতে দিয়ে আর এক কাপ স্বদেশ বাবুর সামনে নামিয়ে রাখলো। ত্রিহান চায়ে চুমুক দিয়ে ইমনকে বললো,

- 'ইমন কগজগুলো ধরো, আমার করা সইয়ের নিচে নিচে তিনটে সই করে ওনাকে দাও।' চা টা খেয়ে বিদেশ বাবু উঠলেন ব্যাঙ্কে ফিরে যাবার জন্য। যাবার আগে বললেন,

- 'আমরা প্রথমে শান্তি এপার্টমেন্টকে ষোল লাখ টাকা দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছি। কারণ, আপনারা বোধহয় খেয়াল করেননি ফ্ল্যাটের এখনও অল্প কিছু কাজ বাকি আছে এই টাকা পেয়ে সেগুলো কমপ্লিট করুক তারপর আমাদের জানাক। তখন আমরা বাকি টাকা দিয়ে কমপ্লিট সার্টিফিকেট নিয়ে নেব। আপনারা সেই অরিজিনাল সার্টিফিকেট নিয়ে তার একটা ফটো কপি করে সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে দিয়ে যাবেন কেমন? যদিও এটা সম্পূর্ণ ভবিষ্যতের ব্যাপার। আচ্ছা তবে আমি আসি এখন। চা খেতে গিয়ে একটু দেরী হয়ে গেল।' হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন বিদেশ বাবু।


                                                                                                          ( চলবে) 


পড়ুন আগের তিনটি পর্বঃ 

            পর্ব-১

           পর্ব -২

           পর্ব-৩

Address : -
-----------------

Dipak Kumar Paul

(Contact - 9007139853)

Block-8, Flat-1B

DTC Southern Heights

Kolkata -  700104.

No comments:

Post a Comment