চন্দ্রপলাশের গোপনপত্র
তোমার পদধ্বনি এলেই পলাশগাছের ডালে
জ্বলে ওঠে রক্তচাঁদের শিখা।
হৃদয়বাগানের প্রতিটি শিরায়
তুমি লিখে দাও স্বপ্নলিপির সোনালি আঁচড়।
বৃষ্টিধ্বনি ছুঁয়ে যায় তোমার নীরবতার বারান্দা,
যেখানে আমার অশ্রু জমে আছে কাচের শিশিতে।
তোমার ছোঁয়া মানেই ভাঙা ঘড়ির কাঁটা
আবার বেজে ওঠে সময়ের সুরে।
আমার বুকের ভেতর এক অদৃশ্য নদী বয়,
যার তীরে তীরে কেবল তোমার নামের নুড়ি।
তুমি আসো—আর ভোরের কণ্ঠে শালিকেরা
গেয়ে ওঠে গোপনপত্রের গান।
এ শহরের অজানা সব রাস্তা
আমাকে নিয়ে যায় তোমার দরজার সামনে।
যেখানে দরজার কপাট খুললেই
আকাশ হেলে পড়ে আমার কাঁধে।
গোধূলিবিন্দুর আশ্রয়
গোধূলির লালিমায় তোমার ছায়া
মিশে যায় ধানের শিষের স্বপ্নে।
হাওয়াগুলো কানে কানে বলে—
তুমি আমার হারানো মন্ত্রফুল।
দিগন্তের প্রান্তে পাখিদের উড়ান
যেন তোমার হাসির খসড়া আকাশে লেখা।
আমার প্রতিটি শ্বাসে লুকানো থাকে
তোমার অজানা ছোঁয়ার তৃষ্ণা।
বৃষ্টির সঙ্গীতে ভিজে যায় গলিপথ,
যেখানে প্রথম তোমার হাত ধরেছিলাম।
সেই মুহূর্ত যেন সময়ের তালাবদ্ধ কুঠুরি,
যেখানে আমি আজও বন্দী।
তুমি দূরে গেলে শহর হয়ে যায় অন্ধ,
তারারাও মুখ ফিরিয়ে নেয় আকাশ থেকে।
শুধু তোমার নামের উচ্চারণেই
ফিরে আসে রঙ, আলো আর জীবন।
নক্ষত্রশঙ্খের ডাক
রাতের বুকের গভীরে শুনি নক্ষত্রশঙ্খের সুর,
তুমি কি তার ভেতরে লুকিয়ে আছো?
তোমার চুলে জড়ানো সমুদ্রবাতাস
আমাকে ডেকে নিয়ে যায় নীলদিগন্তে।
আমার স্বপ্নের ছাদের উপর
জোছনা ঢালে সাদা আগুন,
যেখানে তোমার ছায়া নাচে
বৃষ্টিধারার পর্দার আড়ালে।
তুমি কি জানো, আমি প্রতি সন্ধ্যায়
তোমার চোখের আয়নায় ডুব দিই?
সেখানে দেখি, হাজার বছর আগের আমি
এখনও তোমাকেই খুঁজছে।
তুমি এলে—শূন্য বেহালায়
নিজে থেকেই সুর বাজে।
তুমি গেলে—পুরো আকাশ
হয়ে যায় নিস্তব্ধ গুহা।
স্বপ্নচন্দনের জার্নাল
স্বপ্নচন্দনের পাতায় লিখেছি
তোমার নাম হাজারবার।
প্রতিটি অক্ষর থেকে ফুটেছে
অদেখা নীলপাখিরা।
তোমার হাসি শুনলেই মনে হয়
পাহাড়ের জলপ্রপাত নেমে এসেছে
আমার বুকের উপত্যকায়।
তোমার স্পর্শ—একটি অগ্নিমালা,
যা শীতলতায়ও উষ্ণ রাখে।
তুমি দূরে গেলে আমি
পদ্মফুলের শীতে কাঁপতে থাকা নদী,
তুমি এলে আমি—
মেঘছোঁয়া সোনালি ভোর।
আমাদের মাঝে যদি দূরত্ব থাকে,
সে শুধু নদীর দুই তীরের মতো,
যারা জানে—
বন্যা এলে মিলন অবধারিত।
আকাশতুলি ও রোদফুল
তুমি আমার আকাশতুলির আঁকা প্রথম ছবি,
যেখানে নীল আর সোনার মিশ্রণে
তৈরি হয়েছে এক চিরকালীন সকাল।
তোমার কণ্ঠ—হিমেল রোদে ভিজে থাকা সুর,
যা আমায় ডাকে ঘাসফুলের শিশির পথে।
তোমার হাতের মুঠোয় আছে
আমার সমস্ত দিগন্তের রঙ।
তুমি যখন কথা বলো,
আমি ভুলে যাই—পৃথিবীতে শীত আছে।
তুমি যখন চুপ থাকো,
আমি শুনি বাতাসের গোপন উক্তি।
তুমি যদি নাও হও,
তবে আমি হবো সেই সেতু,
যার ওপর দিয়ে তোমার স্বপ্ন পার হবে
সমুদ্রের ওপারে।
No comments:
Post a Comment