নগরের কান্না
তূয়া নূর
এই গল্পটা না বললে আমার স্কটল্যান্ডের গল্প শেষ হবে না।
একটা শহরের গল্প কি এতো অল্পতে বলে শেষ করা যায়?
নতুন গল্পের সৃষ্টি হয় যখন আনাচে কানাচে।
এডিনবার্গের নয়শো বছর উপলক্ষে মাসব্যাপী উদযাপনের
সেদিন ছিল শেষ রাত।
মিলি খালার বাসা শহরের মাঝখানে।
বাসা থেকে নেমে পায়ে হেটে শহর ঘুরে দেখা যায়।
ছোটবেলায় 'রেডিয়েন্ট রিডিং' বইতে একটা কুকুর ও মনিবের গল্প পড়েছিলাম।
আকারে ছোট কিন্তু দামী জাতের, লোমে ঢাকা শরীর,
ঢেকে থাকে চোখ যেন সবাইকে দেখছে সে
কেউ দেখতে পারে না তার চোখ, ববি তার নাম।
দুজনে হোটেলে আসতো খেতে, মনিব তাকে খেতে দিতো প্লেটে।
মনিব মারা গেলে হোটেলের পেছনে গ্রেফ্রিয়ার কার্কইয়ার্ড কবরস্থানে দেয়া হয় কবর।
ববি এসে চুপচাপ বসে থাকতো কবরের পাশে।
খালু বলল, চলো সেই কুকুরটা দেখে আসি।
সেই হোটেল আছে।
কবরস্থান আছে।
এই কবরস্থানে মনিবের মাথার দিকে বসে টানা চৌদ্দ বছর
পাহারা দিয়েছে ববি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
মনিবের পাশে তার কবর।
হোটেলের নাম হয়েছে 'গ্রেফ্রিয়ারস ববি'।
'গ্রেফ্রিয়ারস ববি' নামে উপন্যাস লিখেছেন এলেনর এটকিনসন।
হোটেলের সামনে রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ডে কুকুরটার ব্রোঞ্জ মূর্তি।
সবাই আদর করে দিচ্ছে হাত উঁচু করে নাক ছুঁয়ে।
নাকটা তাই সব সময় খুব চকচক করে
যেমন চকচক করে হিউমের ডান পায়ের বুড়ো আঙুল।
রাতে আতশবাজি করে শেষ হবে উৎসব,
আতশবাজি শুরু হল এক মিনিটের মতো।
বাকীটা অসংখ্য ড্রোন দিয়ে।
ড্রোন দিয়ে আতশবাজির কাজ এই প্রথম নিজ চোখে দেখলাম।
টিভিতে দেখেছিলাম বাংলাদেশের সংসদ ভবনের উন্মুক্ত স্থানে,
চীনাদের কাজ বাংলাদেশের স্বৈরশাসনের অবসানের পর।
স্কটল্যান্ডের আর্মি সেদিন রাতে ড্রোনের শো টা করেছিলো।
উৎসবমুখর চারদিক, রাস্তায় মানুষের ভিড়।
পথের মোড়ে মোড়ে মদের দোকান, বৃষ্টিতে নয় মদে ভেজা পায়ে হাঁটার পথ।
বিশ্ববিদ্যালয় এখানে, পার হয়ে ফিরছি বাসায়,
ডানে একটা দোকানের পাশে হালকা অন্ধকার সিঁড়ি পথ।
তার নীচে একটা মেয়ে বসে
দুই হাঁটুর মাঝে মাথা রেখে ডুকরে কাঁদছে।
অনেক দিন পর এমন করে কাঁদতে দেখলাম কাউকে!
================
তূয়া নূর
11513 centaur way
Lehigh Acres
FL 33971 USA
Lehigh Acres
FL 33971 USA

Comments
Post a Comment