শেষ রক্ষা
ইন্দ্রনীল মণ্ডল
লম্বা ছুটি নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর পর অভিজ্ঞান কলকাতায় এসেছে। এসে দেখেছ, সেই কুয়াশা ঢাকা ময়দানে গাছের পুরনো পাতা ঝরা, শীতের অলস দুপুর। কিন্তু হারিয়ে গেছে ১০ বছর আগে ওর আর মেঘনার প্রেম পর্বের রঙিন দিনগুলো। এই ময়দানের বড় বড় গাছের ফাঁক দিয়ে, সবুজের বুক চিরে ছুটতো ট্রাম। সেই ছুটন্ত ট্রামের দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরার পিছন দিকে বসে চলতে ওদের প্রেম পর্ব। একদিন গ্রীষ্মের দুপুরে খুনসুঁটি করতে করতে হঠাৎই তার রূপ, কথা-বার্তা, চরিত্র যেন বদলে যায়। মেঘনা অভিজ্ঞানকে বলে বসে, "তুই আমার সঙ্গে আজ যা করলি সেটা কিন্তু এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। আমি চিৎকার করে এখনি লোক ডাকবো।" অভিজ্ঞান ভীষণ অবাক হয় এবং বুঝতে পারেনা মেঘনা হঠাৎ এরকম বিপরীত, অবাস্তব কথা কেন বলছে? দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা সাজানো নাটক। ওতো মেঘনার পাশে খালি বসেই ছিল, তাও সামান্য দূরত্ব রেখে। কোন রকম অসভ্যতা, অশালীনতার পরিচয় দেয়নি, তাহলে? মোহনা যখন চিৎকার করতে যাচ্ছে, তখনই অভিজ্ঞান ওর হাত দুটি চেপে ধরে ক্ষমা প্রার্থীর মত বলে, "কি এমন হলো মেঘনা, যাতে হঠাৎই তুই এত উত্তেজিত হয়ে এরকম দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছিস? তুই নিজেও জানিস, আমি নির্দোষ, তোর সঙ্গে কোনো রকম খারাপ কাজ আমি করিনি।" কিছু পরে মেঘনা চাপা, হিস্ হিস্ শব্দ বলে, "তিন দিনের মধ্যে যদি তুই আমাকে ৫০০০০ টাকা না দিস, তাহলে আমি আমার বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্য সব জায়গায় তোর কুকীর্তির কথা ফাঁস করে দেব।" সেই মুহূর্তে নিজের আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে সব সত্য মেনে নেয় অভিজ্ঞান এবং অতি কষ্টে, কোনরকমে কুড়িয়ে বাড়িয়ে মাত্র একুশ হাজার টাকা জোগাড় করে এক বন্ধুর মাধ্যমে মেঘনার কাছে পাঠিয়ে দেয়। তারপরে কাউকে কিছু না বলে নিঃশব্দে এই শহর ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
বিভিন্ন ঘাটের জল খেয়ে অবশেষে পৌঁছায় ব্যাংককে। সেখানে দিনরাত পরিশ্রম করে অবশেষে নিজের একটি বাঙালি খাবারের রেস্টুরেন্ট খুলতে সমর্থ হয়। কিছুদিন আগে খবর পায়, মেঘনা খুবই অসুস্থ, দুরারোগ্য এনকাইলোসিং স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত।
তাই অসুস্থ মেঘনা, যাকে সে সত্যিই অন্তর থেকে একদিন ভালোবেসেছিল, তাকে দেখার জন্য তার বাড়িতে যায়। মনে মনে ভেবে রেখেছিল বিদেশে নিয়ে গিয়ে ওর চিকিৎসা করাবে। কিন্তু সেই ভাবনার আর শেষ রক্ষা হয় না। গতকাল মেঘনার বাড়িতে গেলে কোনরকমে মেঘনা ক্ষমা চাওয়ার জন্য ওর হাত দুটো ধরার চেষ্টা করতেই আচমকাই সবাইকে হতবাক করে দিয়ে অভিজ্ঞানের হাতের ওপরেই মৃত্যুর কোলে মেঘনা ঢলে পড়ে। হতভম্ব অভিজ্ঞান মনে মনে ভাবতে থাকে মিথ্যার বেসাতি করতে গিয়েই কি মেঘনার শেষ পরিণতি হল অসময়ে মৃত্যু?
Indranil Mandal
Salt Lake City, Kolkata 700091.
Comments
Post a Comment