রেজাল্ট
সৈকত মাজী
শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।
" মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক দিলো শুভ্রাংশু।
" কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।
" ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো" কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।
" না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও" মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।
শুভ্রাংশু ক্লাস ফাইভে পড়ছে। সম্প্রতি মাস ছয়েক হলো ওর খুব ঘন ঘন জ্বর হচ্ছে, আর ওর শরীরটা ভেঙে গেছে একদম। ওর বাবা সৌমেনবাবু এলাকায় এমন কোনো ডাক্তার নেই যার কাছে ওর চিকিৎসা করাননি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। আজ ওকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাঁকুড়ার বড়ো একটা নার্সিংহোমে, ওখানে ভেলোর থেকে একজন বড়ো ডাক্তার আসছেন।
আজ পরীক্ষা শেষ শুভ্রাংশুর। যাক আজ আর মা ওকে পড়ার জন্য জ্বালিয়ে মারবে না, আজ ওর ছুটি, এবার ক্লাস সিক্স, মানে হাইস্কুল। ভারি মজা হবে মনে মনে ভাবলো শুভ্রাংশু।
না শুভ্রাংশু জ্বরটা কিছুতেই সারছে না। সৌমেন বাবু দেখলেন ডাক্তারও আজ বেশ চিন্তিত। কয়েকটা রক্ত পরীক্ষা করাতে দিলেন, আর সৌমেনবাবুকে বললেন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি আমি যা ভাবছি তা যেন না হয়। কথা টা শোনার পর থেকে সৌমেনবাবুর ভয়ে বুক শুকিয়ে গেছে। উনি ভাবছেন সত্যি যদি সেটা হয় মালতিদেবী কে কি করে সামলাবেন।আর নিজের ওই ছোট্ট একটা দোকানের রোজগারে কিভাবে ট্রিটমেন্ট হবে ছেলের। এসব ভাবতে ভাবতে নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে পড়লেন সৌমেনবাবু।
আজ শুভরাংশুর রেজাল্ট বেরিয়েছে। ও খুব খুশি, এবার ওকে ওর মা একটা সাইকেল কিনে দেবে বলেছে। নতুন সাইকেলে চেপে নতুন স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠলো শুভ্রাংশু। বিছানাতে শুয়ে শুয়ে কল্পনায় ভেসে গেলো সে।
আজ আরো একটা রেজাল্ট আসার কথা। মালতিদেবী, সৌমেনবাবুর জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন। সৌমেনবাবু থমথমে মুখে, রুক্ষ চুল নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
" কি গো রিপোর্ট দেখে ডাক্তার কি বলল? ভয়ের কিছু নেই তো" আকুল আগ্রহে জানতে চাইলেন মালতিদেবী।
সৌমেনবাবু ওনার মুখের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো। মনে মনে ভাবছেন কিভাবে নিষ্ঠুর এই কথাটা বলবেন মালতিদেবীকে। মালতিতো পাগল হয়ে যাবে। এসব ভাবছেন আর করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মালতিদেবীর মুখের দিকে।
মালতিদেবী অধৈর্য্য হয়ে, ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করেলেন,
" কি হলো কিছু বলছো না যে, কিছু তো বলো সব ঠিক আছে তো"
" মালতি তুমি নিজেকে একটু সামলাও" কষ্ট করে বলেলেন সৌমেনবাবু
". কি হয়েছে বলবে তো, বাবুর কি হয়েছে?- মালতিদেবী এবার জোর গলায় বললে্
" ক্যান্সার" বলেই চোখের বাঁধন ভাঙা জলটা আড়াল করার জন্য মুখ ফিরিয়ে নিলেন সৌমেনবাবু। আর শুনতে পেলেন ভারি কিছু মাটিতে পড়ার ধপ করে আওয়াজ।
==============
সৈকত মাজী
বেলডাঙা, কুস্থলিয়া, গঙ্গাজলঘাঁটি, বাঁকুড়া, ৭২২১৩৩
Comments
Post a Comment