আদিম ক্ষুধা
আনন্দ গোপাল গরাই
স্বাতীকে একা পেয়ে তার পিছু নিয়েছে দুজন ষন্ডামার্কা ছেলে। সম্ভ্রম বাঁচাবার জন্যে প্রাণপণে ছুটতে থাকে সে। ছেলে দুটোও ওকে ধরার জন্যে ছুটতে থাকে ওর পিছু পিছু। অতিরিক্ত নেশা করার কারণে পা টলতে থাকে তাদের। হঠাৎ আবছা অন্ধকারে স্বাতী দেখতে পায় এক মাঝবয়সী ভদ্রলোককে। প্রাণপণে দৌড়তে দৌড়তে তার কাছে এসে সাহায্য প্রার্থনা করে সে। ততক্ষণে মাতাল ছেলেদুটোও তার কাছাকাছি এসে গেছে। একজন তো ওর হাতটা ধরব ধরব করছে। তা দেখে ভদ্রলোক গর্জন করে বললেন--" আর এক পা এগোবার চেষ্টা করবি না।" কথাটা বলেই যে ছেলেটা কাছাকাছি এসেছিল তাকে সজোরে মারলেন এক লাথি। রাস্তার উপর চিৎ হয়ে উল্টে পড়লো সে। সঙ্গী ছেলেটা একটা চকচকে ছোরা বের করে মারতে গেলো ভদ্রলোককে। তাই দেখে পকেট থেকে পিস্তল বের করলেন ভদ্রলোক। পিস্তল তাক করতেই প্রাণভয়ে একটা ঘিঞ্জি গলির দিকে ছুটে পালালো ওরা।
ভদ্রলোকের সঙ্গে স্বাতী গিয়ে হাজির হলো এক প্রাসাদোপম বাড়িতে। ভদ্রলোক তাকে বসতে দিলেন একটা ঝাঁ চকচকে রুমে। এতক্ষণে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো স্বাতী। ভদ্রলোক না থাকলে ওর যে কী অবস্থা হতো তা চিন্তা করে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো তার। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা কাজের লোক চা টিফিন দিয়ে গেলো তাকে। ভদ্রলোকের আতিথেয়তায় বর্তে গেলো স্বাতী। এই ভদ্রলোক শুধু যে তার সম্ভ্রম বাঁচিয়েছেন তাই নয়-- অল্প সময়েই তাকে নিজের মেয়ের মতো আপন করে নিয়েছেন।
ভদ্রলোকের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এলো তার। টিফিন খেয়েই মোবাইলটা খুললো স্বাতী। তার বাবার অনেকগুলো মিসড্ কল রয়েছে। এই শহরেরই একটা কোম্পানিতে রিসেপশনিষ্টের কাজ করে সে। সন্ধ্যের আগেই প্রতিদিন বাড়ি ফিরে যায় সে। আজ এত দেরি হচ্ছে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার ফোন করেছেন বাবা। বাবাকে কল ব্যাক করে স্বাতী বলে--" আমার ফোনটা সাইলেন্ট মোডে ছিল বাবা। তাই বুঝতে পারিনি। অফিস ছুটির পর আমি একটু মার্কেটিং এ গিয়েছিলাম। এক মিনিটের জন্যে লাস্ট বাসটা ফেল করলাম। আমার জন্যে চিন্তা করো না বাবা। আজকের রাতটা আমি এক বান্ধবীর কাছে থেকে যাব।"
সম্পূর্ণ একটা মনগড়া কথা বলে বাবার দুশ্চিন্তা দূর করলো স্বাতী। তার শরীরের উপর দিয়ে আজ প্রচন্ড ধকল গেছে। এখন একটু রেস্টের দরকার। তাছাড়া এই ঘটনার পর গাড়ি ভাড়া করে একা বাড়ি ফেরার সাহস হলো না তার। তাছাড়া ওই ভদ্রলোক আজকের রাতটা এখানেই থেকে যাবার কথা বলেছেন। তার কথা অগ্রাহ্য করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। কাল বাড়ি ফিরে বাবাকে সব জানাবে সে।
এখানে আসা তার প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়ে গেল। এর মধ্যে ভদ্রলোক একবারও এলেন না তার রুমে। হয়তো কোনো জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন। যাই হোক ডিনার সেরে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলো স্বাতী। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। গভীর রাতে দরজায় নক করার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। চোখ কচলাতে কচলাতে দরজার ছিটকিনিটা খুলে দিলো সে। ঘরে ঢুকলেন সেই ভদ্রলোক। অবাক হয়ে স্বাতী বললো--" এত রাত্রে আপনি! এই রুমে কিছু নিতে এসেছেন বুঝি?"
"হ্যাঁ, শুধু নিতেই আসিনি। কিছু দিতেও এসেছি।" -- এই বলে দরজার ছিটকিনিটা ভালো করে এঁটে দিলেন ভদ্রলোক। ( এবার আর ভদ্রলোক না বলাই ভালো।) সভয়ে স্বাতী দেখলো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই সে। রীতিমতো নেশা করে এসেছে। পা দুটো টলছে-- চোখে হায়নার মতো হিংস্র চাহনি। ভয়ে শিউরে উঠলো স্বাতী। কোনো ভনিতা না করেই বিছানায় নিয়ে গেলো তাকে। সারারাত ধরে স্বাতীর শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেলো লোকটা। এক অসহায়া যুবতীর চীৎকার চার দেওয়ালের মধ্যে মাথা কুটে মরলো।
==========================
আনন্দ গোপাল গরাই গ্রাম -প্রসাদপুর, পোস্ট -হাঁসড়া, থানা-পাঁড়ুই, জেলা-বীরভূম, পিন-৭৩১২১৪.

Comments
Post a Comment