সময় বড় কম
গৌতম সমাজদার
ছা-পোষা মানুষ নির্মলবাবু। অতি সরলতা অঞ্চলের মানুষকে মুগ্ধ করত। নির্মলবাবু খুবই জনপ্রিয় মানুষ গ্রামে। যাতায়াতের পথে সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন। গ্রামের সবার বিপদে পাশে থাকেন। বৌ কমলা মাঝে মাঝেই বলেন, "ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়াও। ঘরে সময় দাও। তাতে সংসারটাও ভাল থাকবে, তোমার শরীরও ভাল থাকবে।" কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। নির্মলবাবু অবিচল থাকেন। নিজের স্বল্প আয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সংসার ভাল করে চালাতে। এজন্য নিজেও অনেক আত্মত্যাগ করেন। অতি সাধারণভাবে নিজের জীবন কাটান। পরিবারের চাহিদা মেটাতে সদা তৎপর। তবু চাহিদা তো আজকের জীবনে মেটানো বেশ কঠিন। বিজ্ঞাপনের শিকার হয়ে পরিবারের সব সাধ মেটাতে পারেন না। নিজেও তাতে দুঃখ পান। তবে তাতে পরিবারের বন্ধন কম নেই। কখনো দূরত্ব সৃষ্টি হলেও একটা টান সবাই সবার জন্য বোধ করে। স্ত্রী তার সাধ্যমতো পরিবারকে ভাল রাখার জন্য প্রচুর দায় দায়িত্ব পালন করে। বিয়ের পরপর কিছু সময় ভাল কাটলেও পরের দিকে চাহিদা মেটানোর ঘাটতিতে অশান্তি যে হত না তা নয়। নির্মলবাবু নিজে কষ্ট করেও পরিবারের জন্য সঞ্চয় করেন। একদিন নির্মলের খুব ইচ্ছে হল, মারা গেলে তার গ্রামের লোকেরা কি অনুভব করবে, পরিবারের লোকেরাই বা কিভাবে নেবে, কি বলবে, সেটা জানার। কল্পনামাফিক খুব ভোরে নির্মল মৃত্যুর ভান করল। কল্পনায় দেখল পাড়ার মানুষ ভেঙে পড়েছে বাড়িতে। অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। আবার অনেকেই গালমন্দ করছে। একে একে অনেকেই গলায় মালা পরাল। কেউ চন্দনে সাজিয়ে দিল। স্ত্রী, পুত্রের চোখেও জল। স্ত্রী কাঁদছে আর বলছে, "মাথার ছাদটা সরে গেল।" পুত্র বলল, "কখনো কখনো না জেনে ঠিক আচরণ করিনি। মানুষটাকে বোধহয় বুঝতেই পারিনি। নাহলে অঞ্চলের মানুষ এত ভালবাসে? সত্যিকারের ভাল মানুষ ছিল বলেই এটা হচ্ছে।" আর যারা কোমর বেঁধেছে শ্মশানযাত্রায়, তাদের অনেকেই নির্মলকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে, খারাপ ব্যবহারও করেছে। এরপর শ্মশানযাত্রা। মৃতের সংখ্যা বেশী হওয়ায় পোড়ানোর সূযোগে দেরী হল। যাই হোক, কিছু সময় পর কাঠের ওপর কাঠ সাজিয়ে নির্মলকে ধর্মীয় রীতি মেনে শুইয়ে দেওয়া হল। কিছু সময় গেলে শ্মশানযাত্রীরা অধৈর্য্য হয়ে বলাবলি করল, "বাড়ি ফিরে কখন স্নান করব? কখন খাব? দূর আর ভাল লাগছে না। পুড়তে এত সময় লাগছে কেন?" স্ত্রী আরো কিছুক্ষণ বাদে ছেলেকে বলল, "বড় ক্লান্ত লাগছে, আর ভাল লাগছে না। কখন যে বাড়ি ফিরব?" ছেলে বলল, "হ্যাঁ গো মা, আমারও কাল প্রচুর কাজ। একটু ঘুমোতে না পারলে করব কি করে? পুড়তে অনেক সময় লাগছে।"
নির্মল তখন ভাবছে, এটাই বাস্তবতা। যতক্ষণ আছো, ততক্ষণ তোমার দাম। তুমি লাশ হয়ে গেলে আর কোন মূল্য নেই এই পৃথিবীতে। দু'দিন পর পরিবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পাড়ার মানুষ পরের দিন থেকেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শুধু তুমি থাকবে না, এটাই চিরন্তন সত্য হয়তো।
==================
Goutam Samajder, 22/86 Raja Manindra Road .Kolkata-37, Contact and whatsapp no 7003092393

Comments
Post a Comment