মোবাইল
জুয়েল রুহানী
সকাল ১০ টা ছুই ছুই রবি ফ্রেশ হওয়ার জন্য তারাতারি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হওয়ার ওয়াসরুমে ঢুকে। ওদিকে নয়ন ঘুম থেকে উঠে দেখে বাসায় কেউ নেই সেও তরিঘরি করে উঠে বেড়িয়ে পড়ে অফিসের দিকে। যাওয়ার সময় নজরে পড়ে ওয়াশরুমের দড়জা খোলা তাই সে সব দড়জা বন্ধ চলে যায় অফিসে।
রবি ফ্রেশ হয়ে যেমনি ওয়াশরুম বের হবে তেমনি দেখে বাহির থেকে দড়জা আটকানো, অনেকক্ষণ টানাটানি করে যখন কোনো লাভ হলো না তখন রাগে তার শরীর থেকে ঘাম ঝড়তে লাগলো! ভাবলো মাথা গরম করে কোনো লাভ হবে না, কিছু একটা করতে হবে।
ভাবতে ভাবতে দেখতে পেল বালতি তে অনেক কাপর ভেজানো রয়েছে, তাই সে কোনো কিছু না ভেবেই কাপর ধুতে লাগলো। কাপর ধুতে ধুতে কখন যে ঘন্টা খানেক সময় পার হলো বুঝতেই পালো না।
ততক্ষণে গরমে শরীর থেকে ঘাম ছুটছে অবিরাম, তাই সে কিছুক্ষণ পর পর গায়ে পানি ঢেলে গরম নিবারনের ব্যার্থ প্রচেষ্ঠা চালিয়েই যাচ্ছে। কোনো ভাবেই লাভ হচ্ছে না। এবার সে ভাবলো দড়জায় সজোরে আঘাত করে দড়জা ভেঙ্গে ফেলবে। সে শক্তি যে তার আছে সেটা তার হালকা পাতলা লম্বা শরীরের গঠনই বলে দেয়।
না এ চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয় রবি, কেননা এটা ভাড়া বাসা। তাই সে বিকল্প চিন্তা করতে লাগলো। ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে কাউকে ডাকবে সেটাও পারে না একদিকে লজ্জা অন্যদিকে বাসার প্রধান ফটকে তালা দেয়া। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বালতি উল্টো করে বসে পরলো।
এবার চিন্তার ভাজ পরলো তার কপালে! দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম কোনো কিছু আর ভালো লাগছে না তার। এই মুহূর্তে ছুটির ঘন্টা মুভির কথা মনে হয়ে তার গা শিউরে উঠতে লাগলো। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গরম শরীরেও যেন ঠান্ডা অনুভব করতে লাগলো রবি!
এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়, ঘরে ফেরার নাম নেই করোরই।
যান্ত্রিকতার এই যুগে আধুনিক বিজ্ঞানের তরুন প্রজন্মকে দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার মোবাইল ডিভাইসটি হাতে থাকলে হয়তো এই সময়টুকু অতি তুচ্ছ্ব সময় মনে হত। কিন্তু মোবাইল ফোনটি এই অল্প সময়ে কাছে না থাকায় আজকের এই বন্দি সময়টুকু যেন একটি বছরের চেয়ে কম নয় রবি'র কাছে।
কেননা বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ তরুনের প্রধান সঙ্গী এই ফোন! যা মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা কমিয়ে একাকিত্বের আসর জমিয়ে তুলেছে বিশ্বব্যাপী! এই তো কিছুদিন আগেই যেখানে গ্রামের মাঠ-ঘাট হৈ হুল্লোড়ে ভরা আজ যেখানে শুধুই নীরবতা! আমাদের মনে কখনও উদয় হয় না আমরা কতটা আসক্ত?
রবি'র মাত্র কয়েকঘন্টার অবরুদ্ধ সময়ই চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় যে আমারা কতটা মোবাইল আসক্ত!
বিজ্ঞানের আবিষ্কার অবশ্যই কল্যানের, কিন্তু সঠিক মূল্যায়নের অভাবে তরুণ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। এভাবে চলকে থাকলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার অনিবার্য। সচেতন হতে হবে, সচেতন করতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে।
---------------
জুয়েল রুহানী
কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট, বাংলাদেশ
Comments
Post a Comment