শাপে বর
সাইফুল ইসলাম
বড় বড় ফাটল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িটির পিছন দিকের দেয়াল ঘেঁষে একখানা কামার শালা। পঞ্চাশোর্ধ পবিত্র ও তার স্ত্রী রাধারানী ছোট ছেলেকে নিয়ে সেই বাড়িতেই থাকে। কামারশালায় হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শুরু হয় সকাল সকাল, চলে দিনভর। সারাদিনের আগুনের আঁচে শরীরখানা যেন কয়লা।
সেদিন পাড়ার অনেকে জুটেছে পবিত্রর কামারশালায়। কাজ করতে করতে সে হঠাৎ ধুলোয় শুয়ে ছটফট করছে। সবাই মিলে ডাক্তার-খানা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
"আমাকে নিয়ে যেতে হবে না। এমনটা আমার প্রায়ই হয় "- বলে হাত বাড়িয়ে একটা প্লাস্টিকের কৌটো থেকে কি যেন নিয়ে মুখে পুরে বলল - একটু জল দাও।
কিছুক্ষণ বাদে উঠে আবার কাজ শুরু করলো।
ওটা তুমি কি খেলে? -প্রশ্ন ছুঁড়ল কেউ।
খাবার সোডা।
কে তোমাকে এসব খাওয়ার যুক্তি দিয়েছে?
কেউ না। আমি রোগী, আমিই ডাক্তার।
খাবার সোডা নামটা শুনেই সকলেই মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করল।
পবিত্র বলল -ডাক্তার একটা পেটের ছবি করতে বলেছে। টাকা পয়সার অভাবে তা পারিনি। --বলেই হাপর টানতে শুরু করল।
লোকের ভিড় কমে গেছে। গরম লোহা হাতুড়ির ঘা খেয়ে রূপ বদলাতে শুরু করেছে। পাশে বসে আছে সমবয়সী জলিল।
বুঝলে জলিল ভাই -এ রোগ আমার দুই বছর ধরে আছে। ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পাই।
তোমার টাকার ব্যবস্থা আমি করছি। তুমি কালকেই চলো। ছবিটা করে আনি।
পরদিন পেটের ছবি করে ফেরার পথে গ্রামের ডাক্তারকে ছবিটা দেখানো হলো।
কই সেরকম তো কিছু হয়নি তোমার। তাহলে এরকম হওয়ার কারণ কি? --ডাক্তারের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।
পথে আসার সময় পবিত্র বললো -ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কখনো ভাবি বিষ পান করে মরে যাই।
দিন কয়েক বাদে আবার একদিন অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলো। কোনরকমে উঠে সে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হল। রাত কেটে ভোর হতে না হতেই কামারশালায় জ্বলল আগুন।
এক বছর হতে চলল, পবিত্র ওর পেটের ব্যথায় কষ্ট পায় না। মনে শতেক প্রশ্ন নিয়ে একদিন ডাক্তারের কাছে গিয়ে হাজির। বলল -সপ্তাহে তিন দিন কষ্ট পাওয়া রোগী আজ প্রায় এক বছর ভালো আছি ডাক্তার বাবু।
ডাক্তারবাবু বললেন - শেষ যেদিন ব্যথা উঠেছিল, সেদিন কি খেয়েছিলে?
বিষ। বাঁচতে আর ইচ্ছে করে না বলে সেদিন আমি বিষ খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম ডাক্তারবাবু। বিধির বিধান দেখুন আমি এখন সুস্থ।
পবিত্র মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পর ডাক্তার বাবু হাঁ করে চেয়ে রইলেন।
------------------------
সাইফুল ইসলামের প্রকাশিত গল্পের বই :
Comments
Post a Comment