হরধনু ভঙ্গ
প্রিয়াংশু বিশ্বাস
স্কুল পরিদর্শক, এক রোমহষর্ক
প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেন ছাত্রকে ফাইভে,
বুক তার কাঁপেনি, যদিও সে ভাবে নি,
হট করে কেউ এসে উত্তর চাইবে ।
সেই পরিদর্শক, কেশে বলে খকখক,
"বলোতো হরধনু ভেঙেছিল কে ?"
সতু বলে, "জানিনি, আমি স্যার ভাঙিনি,
মনে হয় ভেঙেছিল ওই তিলু দে ।"
তিলু বলে, "মিছে কথা, আমার তো পিছে ব্যথা,
একভাবে বসে আছি, পারি নাকো নড়তে ;
আমি কিছু ভাঙি না, অতশত জানি না,
আমি শুধু স্কুলে আসি পড়াশোনা করতে ।"
সবাইকে এড়িয়ে, ক্লাস থেকে বেরিয়ে,
ক্লাস টিচারের রুমে ঢোকে ইন্সপেক্টর ।
ধমকান সেখানে, "কি পড়ান এখানে ?
ছাত্ররা পারছে না সামান্য উত্তর ?"
স্যার বলে, "সতু, তিলে, একেবারে ভালো ছেলে,
ওরা কোনো এই সব ভাঙচুর করে না ।
তবে স্যার কেষ্ট, বজ্জাত দুষ্ট,
ওছাড়া এই কাজ আর কেউ পারে না ।"
হাত দিয়ে মাথাতে, ঘটনার ব্যথাতে,
স্কুল পরিদর্শক একেবারে চমকান ।
কথা না বাড়িয়ে, আর না দাঁড়িয়ে,
চারিদিকে চেয়ে চেয়ে মাঝে মাঝে থমকান ।
ওই পাশে রাস্তার, বসে হেড মাষ্টার,
রুমে তার গিয়ে তিনি বিস্তারে জানালেন ।
আক্ষেপ মিশিয়ে, মন গেছে বিষিয়ে,
কেন সেটা তাকে তিনি ভালো করে শোনালেন ।
তারপরে ধরলেন, জিজ্ঞাসা করলেন,
"এখানে কি সত্যিই পড়াশোনা হয় না ?
না হয় ছাত্তর, জানল না উত্তর,
টিচারের দশা তবু মেনে নেওয়া যায় না ।"
বলেন হেড মাষ্টার, "বলি কি দেখুন স্যার,
ওই ক্লাস টিচারের কথাখানি শুনে যান ।
অনেকটা দিন ধরে, মাস্টারি করে করে,
তিনি প্রতি ছাত্রকে ভালো মতো চিনে যান ।
মেনে নিতে নেই ক্ষতি, বলেই থাকেন যদি,
কেষ্টা ভেঙেছে তবে কেষ্টাই ভেঙেছে ।"
বলে পরিদর্শক, "মানা যায় কাঁহাতক,
স্কুলের এই মানখানা কোনখানে নেমেছে !"
এরপর কি হবে ! উঠে যান নীরবে,
আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ী যান ধরতে,
ঘিরে ধরে কষ্টরা, ভেবে ভেবে পথ সারা,
চিঠি তিনি লিখলেন স্কুল শিক্ষাবোর্ডে :
'দরকার বিচারই, যেই স্কুলে টিচারই,
হরধনু কে ভেঙেছে সেটা কেউ জানে না,
সেই স্কুল রাখবার, নেই কোনো দরকার,
যে স্কুল সমাজেতে আলো বয়ে আনে না ।'
সেই চিঠি খানা দেখে, শিক্ষারবোর্ড থেকে,
কিছু দিন পরে দিলো জবাবটা জুটিয়ে,
'বাচ্চারা ধরবেই, ভাঙ্গাভাঙ্গি করবেই
তাতে নেই দরকার স্কুলটাকে উঠিয়ে ।
আমরা যে ভালো বুঝি, বিরোধীর স্ট্র্যাটেজি,
একেবারে প্রি-প্ল্যানড পুরো চক্রান্ত,
রাজ্যেতে বলে বলে, আগুন উঠতো জ্বলে,
পাবলিক সেটা যদি, একবার জান তো ।
ওদের কথায় কান, দেবেন না সম্মান,
ওরা তো মোটেই যে ভদ্দরলোক না
চাইলে উন্নয়ন, দিচ্ছি অনুমোদন,
আর একটা হরধনু দ্রুত কেনা হোক না ।'
সাদা মন ভীরুতায়, একেবারে নিরুপায়
উপায় না দেখে আর, ঠিক সেই বছরে,
বিষয়টি তারপর, স্কুল ইন্সপেক্টর,
শিক্ষার মন্ত্রীর আনলেন নজরে ।
উনি বলে, "সত্যি, স্কুলের সম্পত্তি,
ভাঙবার কেসটা ভালোভাবে ধরছেন ?
বুঝি নাকো মাইরি, থানায় কি ডাইরি
করেছেন ? নাকি শুধু হৈচৈ করছেন ?"
স্কুল ইন্সপেক্টরে, আমতা আমতা করে
ঘাড় নেড়ে জানালেন ডাইরি করেন নি।
এতো হবে প্যাঁচানো, কেস খুব ক্যাঁচানো,
আগে তিনি গুনতিতে সত্যি ধরেন নি ।
মন্ত্রী বলেন রাগে, "ডাইরি করুন আগে,
ডাইরির কপিখানা এনে দিন সত্বর,
মুখ্যমন্ত্রী ভাই, আপনার জানা নাই,
ছোটোখাটো ইস্যু নিয়ে কতো তিনি কট্টর ।
কপিখানা পেলে হাতে, আজকেই মাঝরাতে,
তার সাথে কথা আমি নিজে গিয়ে বলছি ।
না পেলে তবে খুব, কংক্রিট কোনো প্রুফ,
অপমান হবো না ---- নাক-কান মলছি ।"
মুখ্যমন্ত্রী শুনে, বললে প্রমাদ গুনে,
"ভেঙ্গেছে ? করেছে বেশ কাজ ওরা মস্ত,
কেন স্কুলে রাখে যতো, এই 'হরধনু' মতো
সাম্প্রদায়িক সে জঘন্য অস্ত্র ।
ভালোবাসি শিবকে, সেই মহাদেবকে,
ভক্তিতে পুজো করে যাকে সারা দেশটা ।
এ বিরাট ভুল তো, হাজার হোক স্কুল তো,
তাঁর ধনু রাখা মানে দাঙ্গার চেষ্টা ।"
মুখ্যমন্ত্রী তবে, অর্ডার দিলেন সবে,
হরধনু যে ভেঙ্গেছে খোঁজা তাকে দরকার,
সে হবে হকদার, বিশেষ পুরষ্কার,
লোভনীয় চাকরি দেবে তাকে সরকার ।
.........................
প্রিয়াংশু বিশ্বাস একজন সরস ও ব্যঞ্জনাময় কবিতার লেখক । বর্তমানে তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্তর্গত উস্থি থানার সন্নিহিত উত্তর কুসুম হাই স্কুলের ইংরেজি বিভাগের একজন সহকারী শিক্ষক । তাঁর কবিতায় উঠে আসে সামাজিক অবক্ষয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অরাজকতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ, তবে মজার ছলে । রাজনৈতিক বা ব্যক্তি আক্রমণ বা অশ্লীলতা নেই তার লেখায় । মানুষ হাসতে ভুলে গেছে, তাই সকলকে প্রাণখোলা হাসির নৈবেদ্য এই কবিতাগুচ্ছের উপস্থাপনা । আমার প্রকাশিত কবিতার মজার কাব্যগ্রন্থগুলি হলো - [1] 'মিছিমিছি', [2] 'পান সুপারি', [3] 'ভূমিকম্প', [4] 'বাপের বাড়ী', [5] 'Blue Blood' (ইংরেজি মজার কবিতার বই), [6] 'সবুজ কন্যা'।

Comments
Post a Comment