✍️পার্থ প্রতিম দাস
সব সময় ভাবুক মন দুঃখের তাল কেটে বেরিয়ে যেতে চায় নিরুদ্দেশের পথে। তাইতো আকাশে উড়োজাহাজের শব্দ শুনতে পেলেই, চোখ তুলে ওপরের দিকে খোলা শূন্যের দিকে তাকায়। আকাশকে শূন্য বলাটাও ভুল। অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্রের বাস সেখানে। সেখানেও আছে আইনের রাজত্ব। ভৌতবিজ্ঞানের নিয়ম নীতি সেখানে বিপুল পরিমাণে কাজ করে। ছোটবেলা থেকে সূজয় এইসব পড়েছে। এখন তার হাতে বাজারের থলে। বাজারে গিয়ে সে ঠিক করে দরদাম করতে পারে না। দর কষাকষি যে একটা আর্ট, সেই ব্যপারটা তার সিলেবাসে নাই।
আগে বাজার করে ফিরলে মায়ের কাছে বকা খেত। এখন স্ত্রীর মুখে বকা শুনে। ছেলে মেয়ে গুলো বড় হচ্ছে। প্রতিদিন কথা শুনতে তার ভীষণ আত্মসম্মানে লাগে। মোড়ের দোকানের সামনে টোটো দাঁড় করিয়ে সে একটা সিগারেট ধরায়। এক রাউন্ড ধোঁয়া ছেড়ে দোকানের পল্টুদাকে বলল, "তোমার খুব ভাগ্য ভালো। দোকানের হিসেব পত্র কত সুন্দর করছো। আমি আর হিসেবটা শিখতে পারলাম না।"
এতো লম্বা চওড়া প্রশংসা শুনে পল্টুদা হেব্বি খুশি হয়ে গেল। জামার কলার তুলে বলল, "হিসেব করাটাই আসল বিদ্যা। আর সব তো ছাইপাশ। টিউশনি নিতে আসিস। ফ্রীতে তোকে বুঝিয়ে দিবো।"
দোকানের পেছন থেকে হাঁড়ি কুড়ির ঠোকাঠুকির আওয়াজ এলো। পরে কার চলার দুমদাম শব্দ। পল্টুদার স্ত্রী বেরিয়ে এসে বলল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমার বুদ্ধি জানা আছে। ছেলেটার স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে। ছেলেটাকে আনতে যাও।"
তখন পল্টুদা ঝড়টা তৈরী হওয়ার আগেই বেরিয়ে গেল ছেলেকে আনতে। একটু দেরি করলেই স্ত্রীর মুখে আরো দুচার কথা শুনতে হতো। সূজয় সমস্ত ব্যপারটা দেখে মনে মনে খুব হাসলো। বিজ্ঞ পল্টুদা এক নিমেষে কেমন কেঁচো হয়ে গেছে।
সূজয় একা আর দাঁড়িয়ে থেকে কি করবে? সে ও টোটো নিয়ে বাজারের দিকে চলে গেল। সূজয়ের পাড়ায় আগে অনেক শিক্ষক ছিল। তাই সবাই তাদের পাড়াকে শিক্ষক পাড়া বলতো। এখন ওর পাড়ায় ঘরে ঘরে টোটো। তাই সবাই এখন টোটো পাড়া বলে।
কোনো কাজ ছোটো নয়। তবে টোটো পাড়া শুনলে সূজয়ের মনটা খারাপ হয়ে যায়। পূর্বের গৌরব তারা ধরে রাখতে পারেনি।
=============
✍️পার্থ প্রতিম দাস
আকন্দা, বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর

Comments
Post a Comment