রানার : এক বিলুপ্ত কিংবদন্তি
রানা জামান
হে রানার, তুই ছিলি একদা পত্র প্রদানের হিরো
ছুটে যেতি নিত্য নক্ষত্রের নিচে, কাদা মেখে
দূর গ্রামের পথে
কাঁধে ঝোলা, হাতে কেরোসিন বাতি
বার্তা বয়ে আনতি মানুষের সুখ-দুঃখ, মরণ-জন্মের
তোর পদচিহ্নে বেজে যেতো সময়ের শিঙ্গা
তুই ছিলি সেই সেতু, যার উপর দিয়ে
এক মানুষ পৌঁছে যেতো আরেক মানুষের হৃদয়ে
বৃষ্টিজলে ভিজে, রোদে পুড়ে,
তুই হেঁটে যেতি
অবিচল, অনমন, নিঃস্ব অথচ জ্যোতির্ময়
পল্লীবধূ অপেক্ষায় থাকতো বারান্দায়,
হাতে পানপাতা, মনে এক প্রার্থনার কবুতর উড়তো—
"রানার আসবে আজ; খবর আনবে তার।"
আর তুই, ধূলোমাখা স্মিত হাসি মুখে চলতিস যেন
সময় নিজেই এসেছে উত্তর দিতে কারো অপেক্ষার
আজ চিঠি চালাচালি নেই আর পক্ষে বা বিপক্ষে
ডাকঘর বিরান কাঁধে, ডাকবাক্স জীর্ণ শীর্ণ ক্ষয়িষ্ণু
পত্রের জায়গায় এসেছে নোটিফিকেশনের শব্দ
যেখানে ভালোবাসা মাপা হচ্ছে "seen" শব্দ দিয়ে
ইতিহাসের ভাঁজে আজো শুনি
তোর পদশব্দ
এখনো রাত্রির গভীরে বাতাস ফিসফিস করে বলে,
"রানার গেছে এই পথে।"
তুই হারাস নি, রানার—রয়ে গেছিস প্রতিটি
ভুলে যাওয়া অপেক্ষার মধ্যে,
যে চোখ আজও জানালার ফাঁক দিয়ে তাকায় দূরের দিকে
তুই ছিলি এক বিশ্বাস, যে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতো
মানবতার উষ্ণতা কখনো নিজের জীবন বিপন্ন করে
হে শেষ ডাকের দূত,
তোর প্রদীপ আজ নিভে গেছে, কিন্তু আলো নয়;
যতদিন মানুষ অপেক্ষা করবে
কোনো উত্তরের,
ততদিন বেঁচে থাকবি তুই
ধূলোয়, মাটিতে, মানুষের অক্ষয় স্মৃতিতে নিরন্তর
অদৃশ্য চিঠির কাগজে লেখা এক চিরায়ত নাম হয়ে-
"রানার"।

Comments
Post a Comment