গর্ভ
শাশ্বত বোস
নদীটার নির্দিষ্ট কোন নাম নেই! ওপারের পদ্মার চরের শেষ মাথা থেকে বেরিয়ে আবার এ দেশে এসে ঢুকেছে! এঁকে বেঁকে গিয়ে মিশেছে ভৈরব নদীতে। স্মৃতির পিঠে স্মৃতি জড়িয়ে গিয়ে, একটা ঝিমধরা বিষন্নতার বোধ নিয়ে, ওকে সবাই চেনে 'পদ্মার শাখানদী' নামে। ঘোর বর্ষায় ওর বুকে পেটে এখন জল থৈ থৈ! রোজ সন্ধ্যেবেলা ছেদু কাকার ঘাটে মাছের বাজার বসে। নিতান্ত ছোট্ট গ্রাম্য একটা বাজার! ওই শাখা নদীতে জাল দিয়ে যা যা মাছ ওঠে, তাই কাঁটা হয় এই বাজারে। রুই, কাতলা, পার্সে, ট্যাংরা, ভাঙ্গর, কাজলী আর বর্ষার মরশুমে কখনো সখনো ইলিশ! চওড়া বুক জুড়ে যেন রুপোর ক্যানভাস! পিঠের দিকটা সবুজ! নাকের কাছে খাবলা করে হলুদ আর সিঁদুর মাখানো যেন! যেন পদ্মার গর্ভে ভেসে আসা সৃষ্টির আদিকালের আদুরে সন্তান! এই শাখা নদী যেন পেট দেয় মাছেদের। এ পেট গর্ভের নিশ্চিন্ত আশ্রয়! এই শাখানদীর মিষ্টি জলে, পদ্মার স্রোতের বিপরীতে ভেসে আসা মাছেরা ঘর বাঁধে। আবার এই মাছেরাই পেট চালায় রাণীনগর ব্লক ২ এরিয়ার এই কয়েক ঘর ধীবরের! 'অজগর আলী মন্ডল' এদেরই একজন! এপারে ওর নাম অজগর আবার বর্ডার ক্রস করে ওপারে গেলেই হয়ে যায় 'বাহারুদ্দিন শেখ'! আজ সন্ধ্যার হাটে ইলিশ বেঁচেছে অজগর! হিম হিম সন্ধ্যায় জালে জড়িয়ে যাওয়া, জ্যান্ত বড় ইলিশ! ধবধবে সাদা! ডাঙায় টেনে তোলার পরও লাফাচ্ছিল। পানের মতন গড়ন তার, পেট ভর্তি ডিম! পদ্মার পারে পুবদিকের আকাশে তখন রং লেগেছে! অজগর আলীর বৌ গেছে ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে। অন্তত এলাকার মানুষ তাই জানে। কিন্তু অজগর জানে অন্য কথা! ওর বৌ 'রোকসানা' গেছে নিজের কোঁক ভাড়ায় খাটাতে! কোন বড়লোক নিঃসন্তান দম্পতির বাচ্চা নিজের গর্ভে নেবে ও! তারপর সময় হলে সেই নবজাতক ওর পেট থেকে পড়ে ফিরে যাবে নিজের ঠিকানায়! বিনিময় শুধু অনেক টাকা! হয়তো আর কিছুক্ষন পরেই বাজারের ধারালো আঁশবটিতে, ইলিশগুলোর পেট চিরে ডিমগুলো সব বেরিয়ে আসবে! সাথে মাটি ভিজিয়ে দেবে তাজা ইলিশের রক্ত! অজগর ধীর পায়ে লাইলির বাড়ির পথে পা বাড়ায়। এ চত্বরের নামজাদা বেশ্যা লাইলির গর্ভে তখন ছোট্ট অজগর খেলা করে!
===============
শাশ্বত বোস
ডাক্তার বাগান লেন
শ্রীরামপুর,হুগলী
Comments
Post a Comment