Skip to main content

গল্প -- অয়ন সাঁতরা




 বিকৃত 


লাল গোলাপের পাপড়িটা অনেক্ষণ ধরে পায়ে পায়ে পিষ্ট হতে হতে এখন দলা পাকানো আবর্জনায় পরিনত হয়েছে। বর-আসন এখন শুন্য, বরকে ঘিরে পারিষদের ন্যায় বসে থাকা বন্ধুবর্গদের চেয়ারও শুন্য। সবাই বিয়ের মণ্ডপে। খাওয়ার জায়গাটাও এখন ফাঁকা, তবে পাখাগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরেই চলেছে। প্যান্ডেলের বাইরে, মাঠের এক প্রান্তে দু জন নারী পুরুষকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তারাও বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে বেড়িয়ে গেল। ক্যাটারারের লোকগুলো দ্রুত কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে। একজন এসে হঠাত খবর দিল –' বাড়ির পিছনে এইমাত্র একটা ডেডবডি দেখা গেছে!'  
                                               ১
-' বিয়েবাড়িতে আমি এমনিতে খাওয়া হয়ে গেলে বেড়িয়ে যাই। কিন্তু কোলকাতার বাইরে ... এইরকম গ্রাম সাইডে আসায় রাতে খাওয়ার পরেও আমি মাঠে ঘুরছিলাম।  বিয়ের সময় হতে সবাই একে একে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলও আমি একাই ঘুরছিলাম। এমন সময় হঠাতই পারোমিতাকে দেখতে পাই। সেও আমাকে দেখতে পায়। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেমন আছে সে! এখানেই বা আসা কিভাবে... এইসব আর কি'।
-' আপনাদের রিলেশানটা?'
-'চার বছর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল...'
-'একবার বিয়ে হয়েছিল, মানে টেকেনি তাই তো?'
-'বলাই বাহুল্য। তারপর টুকটাক সাধারন কথাবার্তা। জানতে পারলাম ও কনে পক্ষ। ব্রাইডের পি.এইচ.ডি গাইড'।
-'তারপর?'
-'তখন পৌনে দুটো হবে... আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে যাই। বিয়ের জায়গায় যাইনি। পাশের পুকুরটার ধারে একটু পাইচারি করি। তেমন কোনো কথা হয়নি। মিনিট পনেরো কুড়ি পরে সুমন আসে..'
-'এক মিনিট। সুমন কে?'
-'অভিরূপের অফিস কলিগ হিসেবে আমরা দু জনেই এসেছিলাম কোলকাতা থেকে'
-'বুঝেছি। বলে যান'।
-'সুমন এসে বলে সে এবার লজে ফিরতে চায়। আমি সম্মতি দিতে বাইক বার করতে গেল সুমন পারোমিতা আর কিছু কথা না বলে বিয়ের মন্ডপের দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে সুমন বাইক নিয়ে এসে দাঁড়াল, আমি উঠে পরলাম। ব্যাস! তারপর আজ সকালে জানতে পারলাম পারোমিতা বাড়ির পাশের খাতটায় পরে মারা গেছে'।
-'আচ্ছা সুমনের সঙ্গে পারোমিতার পরিচয় ছিল?'
-'না। তা কি করে সম্ভব!'
-'ঠিক আছে'।
কৌশিকবাবু এতক্ষন রাজদীপকে জেরা করছিলেন। আর কৌশিকবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে রাজদীপের জবানবন্দি শুনছিল অংশুমান।
কৌশিকবাবু এবার পরিতোষবাবুকে, মানে যার মেয়ের বিয়ে ছিল গতকাল, তাকে জিজ্ঞেস করল –' আচ্ছা আপনার মেয়ে বেড়িয়ে গেছে তো?'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ... আপনারা আসার আগেই ওইদিকটা আমরা সেরে ফেলেছি'।
-'ধন্যবাদ। তবে ওখানেও আমাদের যেতে হতে পারে... সে যাই হোক, আপাতত আপনি বলুন তো- বিয়ের ব্যাবস্থা তো এই উঠোনেই হয়েছিল?'
বাড়ির উঠোনটার দিকে লাঠি নির্দেশ করে জিজ্ঞেস করলেন কৌশিকবাবু।
-'হ্যাঁ'
-'খাতটা যেহেতু বাড়ির পিছন দিকে, পারোমিতাকে তাই সেই অবধি যেতে মন্ডপ ক্রস করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনাদের কারুর না কারুর তো তাকে দেখার কথা, কারন আপনাদেরই কথা অনুযায়ী রাত হয়ে যাওয়ায় সেই সময় বেশি কেউ এই বারান্দায় ছিল না। অথচ আপনারা প্রত্যেকেই বলছেন কেউ তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেননি... এটা কি করে সম্ভব?'
পরিতোষবাবুর স্ত্রী শর্মিলা বললেন –'দেখুন, বিয়ের সময় আমরা সবাই মন্ডপে নানান কাজে ব্যাস্ত ছিলাম। কতজন মাঠ থেকে ভিতরে আসছে...আমরা তো আর সবাইকে লক্ষ রাখিনিতাছাড়া বাথরুম যেতে গেলেও...'
-'বাথরুমটা দেখাবেন চলুন।' বাথরুমের দড়জার দিকে এগিয়ে গেলেন কৌশিকবাবু। তারপর বললেন –' এটার পিছনেই খাতটা?'
-'হ্যাঁ' বলে দরজাটা খুলে দিলেন পরিতোষবাবু। দরজাটা খুললেই সামনে একফালি ঝুল বারান্দার মত জায়গা, তারপর সেই খাত! বাঁ দিকে আবার বাথরুমের দরজা।
কৌশিকবাবু বিস্ময় প্রকাশ করলেন –'এ তো মশাই ডেঞ্জারাস জায়গা! এখন তো মনে হচ্ছে এটা সুইসাইড বা মার্ডারের থেকে সিম্পিল অ্যাক্সিডেন্টের কথাই আগে ভাবতে হয়'।
-'সে আমরা অবশ্য অস্বিকার করতে পারিনা'।
-'ইনভিস্টেগেশান হয়ে গেলেই আগে এই জায়গাটা ঘিরে দেবেন'।
একজন কনস্টেবেল গোছের লোক কোশিকবাবুকে বললেন –'স্যার, কাল রাতে যারা যারা এই বাড়িতে থেকেছে প্রত্যেককে ছাদে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছি'।
-'হ্যাঁ, চল' বলেই একবার পরিতোষ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন –'ডোন্ট মাইন্ড, আপনার গেস্টদের একটু বিব্রত করতেই হচ্ছে'। তারপর –'আয় অংশু' বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলেন।
গতরাতে যারা যারা এই বাড়িতে ছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ঘুমিয়ে পরেছিল; যেহেতু বিয়ে ছিল অধিক রাতে। যারা জেগে ছিল তারা বলছে কেউ পারোমিতাকে চিনত না এবং কে এল, কে গেল, বিয়ে বাড়িতে তা নিরিক্ষন করা সম্ভব নয়। তবুও সবাই মোটামুটি নিজের নিজের কার্যকলাপ বর্ণনা করল। কেবল দু জনের বক্তব্যের মধ্যে সন্দেহভাজন কিছু ছিল। প্রথমজন কনের এক মামা আর দ্বিতীয়জন কনের ভাইয়ের এক বন্ধু। 
মামার বক্তব্যঃ বিয়ের দেরি আছে বলে প্যান্ডেল থেকে খেয়ে এসে একবার একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম। তারপর নিচে শাঁখের আওয়াজ টাওয়াজ হতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘর থেকে বেড়িয়ে যখন নিচে নামতে যাই তখন স্পষ্ট একজনের ছায়া দেখেছিআবার যখন নেমে আসছি, তখনো মনে হয়েছে পিছন পিছন আরো কেউ নামছিল, তখন অবশ্য অতটা আমল দিইনি। কিন্তু পরে মনে হয়েছে, উপর থেকে তো আর কারুর নেমে আসার বাকি ছিল না। থাকার মধ্যে আমার ছোত ভাইয়ের বাচ্চা ছেলেটা...সে তো ঘুমচ্ছিল, তাছাড়া তার বয়স তিন। আর মা, তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, তাঁর বয়স চুরাশি'।
রাজের বক্তব্যঃ (কনের ভাইয়ের বন্ধু) আমি একটা ফোন করতে ছাদে এসেছিলাম। আমি কথা বলতে বলতে চাপা স্বরে একজন ছেলে আর মেয়ের গলার আওয়াজ পেয়েছি। সামথিং ... স্পেশাল... মানে...
রাজের বক্তব্য আন্দাজ করে অংশু ঠান্ডা অথচ গম্ভিরভাবে, এই প্রথম কথ বলল –'মধ্য রাতের গোপন অভিসার বলতে চাইছেন তো! কিন্তু তারা কারা সেটা দেখতে পাননি?'
-'না'
এইবেলা অংশুমানের পরিচয়টা দিয়ে রাখা দরকার। অংশুমান প্রথমত কৌশিকবাবুর বন্ধুর ছেলে এবং দ্বিতীয়ত ওনার হবু জামাইও বটে। অংশুমান পেশাদারি গোয়েন্দা না হলেও শখে এর আগে কৌশিকবাবুর দুটো ইন্টারেস্টিং কেসে ওনাকে সহায়তা করেছে। তবে সেই দুটো কেসই কোলকাতার ছিলএবারের টা তো একেবারে মাদিনীপুর! ব্যপারটা আসলে নিতান্তই কাকতালীয়। কৌশিকবাবু মেদিনীপুরে এসেছিলেন মাস তিন এক আগে একটা মার্ডার কেসের তদন্তে। সে কাজ হয়ে গেছে। এই সপ্তাহেরই শেষে ওনার কোলকাতায় ফেরার কথা ছিল, কিন্তু আজ সকালে এই খবরটা পেয়ে উনি ঘটনাস্থলে চলে আসেন। আর অংশুমান এসেছে তার অফিসের কাজে। ও একটা বিজ্ঞাপন অফিসে কাজ করে –মেইনলি ফোটগ্রাফি। সেই কাজেই এসেছিল এদিকে, কৌশিকবাবু থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আজ সকালে খবর পাওয়ামাত্র কৌশিকবাবু ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।
                                          'আচ্ছা কাকু, বলছি আপনি ওদের সাথে একটু কথা বলুন। গুকালের পুরো ভিডিও আর যা স্টিল তোলা হয়েছে, তার সবগুলোর যেন এক কপি করে পাঠিয়ে দেয়'।
-'গুড। ঠিক বলেছ'।
-'আর বলে দিন, ভিডিও যেন কোনোভাবে এডিট না কর হয়'।
পরিতোষবাবু ক্যামেরাম্যানকে ডেকে দিলেন। কৌশিকবাবু ছবি আর ভিডিও দিতে বললেন।
-'আচ্ছা কাকু... একটু শোনো'।
-'কি?'
-'পারসোনাললি যারা ভিডিও করেছিল...'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছ। দেখছি। শুধুমাত্র কাল রাতের ভিডিও গুলোর ব্যাবস্থা আমি করতেই পারি। ওয়েট'। কৌশিকবাবু দু জন ইন্সপেক্টারকে নিয়ে ভিতরে গেলেন। অংশু এর মাঝে পরিতোষবাবুকে বলে রাখল, 'ছবি গুলো আমরা পেয়ে গেলে আপনাকে একবার আসতে হবে'।
-'কেন বলুন তো?'
-'সবাইকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া কাল রাতে এখানে যে যে গেস্টরা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আপনাদের রিলেশান, এটসেট্রা...'
-'ঠিক আছে, আপনারা খবর দেবেন। তবে একটা কথা ছিল...'
-'বলুন'।
-'কাল সন্ধ্যেবেলা আপনারা কি বাকি পুলিশদের সাথে নিয়ে...'
কোউশিকবাবু এমন সময় এসে বললেন –'চিন্তা নেই, ওখানে শুধু আমি আর অংশুই থাকব। আর আমি পুলিশের পোশাকে থাকব না'।
ছবি আর ভিডিও বিকেলের মধ্যেই গেস্ট-হাউসে পৌঁছে দিল ক্যামেরাম্যান। কৌশিকবাবু বেড়িয়েছেন তাঁর এক সহকারি অফিসারের সাথে। আসলে পরিতোষবাবুর অতিথিদের জবানবন্দি অনুযায়ী এবং আনুষঙ্গিক তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে চার জনের নাম উঠে এসেছে, যাদের সঙ্গে ওইদিন পারোমিতার কথোপকথন হয়েছে –তাদেরই বাড়ি গিয়েছেন ওঁরা।
আকাশটা কালো করে এসেছে। এই সময় এইরকম আবহাওয়াটা অস্বাভাবিক। ফাল্গুন মাসে সাধারনত চৈত্রবৈশাখের মত বিকেলের দিকে আকাশ কালো করে ঝর বৃষ্টি হয় না। তবে আজ হয়েছে। বেশ ভালো রকম কালো করেছে, ঠান্ডা বাতাসের সাথে ধুলো উড়ছে ঝরের দাপটে। মধুস্মিতা, অংশুর মিতা এতক্ষন জানালার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। এবার জানালা থেকে সরে এসে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। অংশু বিছানায় বসে ছবি গুলো বিছিয়েছে, তার একটাতে খেয়াল না করে বসে পরেছিল। অংশু 'কানা নাকি' বলে ছবিটা সরিয়ে নিল।
'ওপস, সরি। খেয়াল করিনি। এই বাবা কখন আসবে?'
অংশু ছবি গুলোর উপর থেকে চোখ না সরিয়েই বলল –'ঠিক নেই। একেকটা জায়গা থেকে কেমন ইনফরমেশান পাচ্ছে, সেসবের উপর দিপেন্ট করছে'
-'তাহলে তুই তখন থেকে ছবি গুলো নিয়ে কি করছিস?'
-'যে ছবি গুলোতে পারোমিতাকে দেখা যাচ্ছে বা আংশিক দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আলাদা করছি'।
-'বাবা... আংশিক! পারোমিতাকে পছন্দ হয়েছে বল। তা না হলে কোন ছবিতে আংশিক দেখা যাচ্ছে সেটা আবার আলাদা করে রাখছিস'।
-'ভাট বকলে অন্য কাউকে ফোন করে বক'।
-'ঠিক আছে বকব না। তাহলে বল, সকাল থেকে কি কি বুঝলি?'
-'বলতে পারি। তবে...'
-'স্পাই এর কাজ করতে হবে?'
-'এই মুহূর্তে না। তবে ...ছাড় সে কথায় পরে আসছি। আগে আমার থিওরিটা বলি'।
-'মানে পারোমিতা কিভাবে খাতে পরল?'
-'রাইট। দেখ, খাতের দিকে যাওয়ার দু টো রাস্তা। একটা রান্না ঘরের পিছনে, অন্যটা বাথরুম যাওয়ার মুখে'।
-'ওয়েট। বাথরুম যাওয়ার মুখে বলতে?'
-' পরিতোষবাবুর বাড়ির শুরুতেই বারান্দা। বারান্দায় উঠে ডানদিকে সিঁড়ি। সিঁড়ির পাশ দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার রাস্তা। কমন বাথরুম, আই হোপ বিয়ে বাড়িতে সবাই এটাই ইউস করেছেকাজেই কারুর অ্যাক্সিডেন্ট হল না, হল শুধু পারোমিতার?'
-'মে বি হতেই পারে। আর তুইই তো বললি দু টো রাস্তা, একটা রান্না ঘরের পিছনে'।
-'সেতাই তখন বলতে যাচ্ছিলাম। রান্না ঘরের পিছনে যদি যায় সেটা হবে আত্মহত্যার চেষ্টা। কিন্তু সেটা করলে ভোর অবধি জেগে থাকা রান্না ঘরের পাঁচ জন লোকের কারুর না কারুর চোখে সেটা পরত'।
-'তাহলে তুই বলছিস এটা সিওর মার্ডার'।
-'মোস্ট প্রোবাবলি'।
-'কাউকে মার্ক করেছ?'
-'এখনো পর্যন্ত একজনকে'।
-'কে?'
-'তুই পারোমিতার যে এক্স হাসবেন্ডের সঙ্গে ওখানে দেখা হয়ে গিয়েছিল, সেটা শুনেছিস তো?'
-'হ্যাঁ'।
-'তার অফিস কলিগ। মানে সুমন। রাজদীপ বলছে বটে ওর অফিস কলিগ পারোমিতাকে আগে থেকে চেনে না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে অন্য কোনো ভাবে ওদের পরিচিতি হতেও পারে। রাজদীপ সেটা জানে না'।
-'আচ্ছা, আমরা ধরে নিলাম, সুমনের সঙ্গে পারোমিতার শত্রুতা ছিল। কিন্তু তোমার থিওরিটা কি?'
-'রাজদীপ বলেছে সুমন লজে ফেরার প্রস্তাব দেওয়ায় রাজদীপ রাজি হয় এবং তারপর সুমন বাইক আনতে যায়। পারোমিতাও কিন্তু আর সেখানে দাঁড়ায়নি। এবার লক্ষণীয় বিষয় এই যে বাইক রাখার জায়গাটা হয়েছিল ঠিক সেই বারান্দার পিছনে। আর বারান্দায় ওঠার জন্য ওখানেও একটা দড়জা আছে; আমি নিজে দেখেছি। সো সবাই বিয়ে দেখতে ব্যস্ত। সুমন দেখল পারোমিতা বাথরুমের দিকে যাচ্ছে। স্মার্টলি বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেল, আর পারোমিতা দরজা খোলা মাত্র পিছন থেকে হালকা একটা ধাক্কা ব্যাস! কিন্তু এটাকে ঠিক মেনেও নিতে পারছি না। কেন বলত?'
-'এটা হলে তো পারোমিতা বাথরুমের দিকে যাচ্ছে আর সুমন বাইক বার করতে গিয়ে সেটা দেখতে পেল, সেটা কাকতালীয়। অর্থাৎ সুমন খুনের মোটিভ নিয়ে আসেনি নিশ্চয়ই। আর খুন করাটা মোটেই কোনো সহজ কাজ নয়, এক যদি না সে পাশাদারি খুনি হয়। তাই ওভাবে...'
-'গুড। ঠিক এই জন্যই আমি থিওরিটাকে বাতিল করেছি। তবে সুমনকে এখনো তালিকা থেকে বাদ দিইনি। কারন লজে রাজদীপ আর সুমন দুজনেই ছিল। অথচ খবর দিয়ে যখন সবাইকে আসতে বলা হল, তখনো সুমন এল না কেন?'
মিতা বলল, 'আচ্ছা, সুমনের দিক থেকে সরে এসে আমরা যদি অন্য কারুর প্রাস্পেক্টিভ থেকে দেখি'।
-'তুই আবার কাকে টেনে থিওরি বানাচ্ছিস?'
-'বর'
-বর?
-হতেই তো পারে বরটা বর্বর!
-ঝেরে কাশ।
-দেখ। আমরা জানি পারোমিতার সঙ্গে রাজদীপের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। অ্যাম আই রাইট?
-রাইট।
-তারপর ধর পারোমিতার সঙ্গে কালকের বিয়েতে যে বর ছিল, তার সঙ্গে...
-মানে তুই বলতে চাইছিস, বিয়ে করতে এসে হঠাত করে পুরোনো সঙ্গিনীকে দেখে বাবাজি ভয় পেয়ে যায় আর সেখান থেকে অ্যাটেম্প টু মার্ডার!
-ইয়েস।
-হুম। বুঝলাম। দু টো ব্যাপারে হালকা বাধা থাকছে ঠিকই... বাট সেগুলোকেও নিঃসন্দেহে উড়িয়ে দেওয়া যায়। আর সেগুলোকে বাদ দিলে নেহাত তোর থিওরিটা খারাপ না।
-বাধাটা কোথায়?
-এজ। বর বাবাজির বয়সটা যা শুনেছি, সেটা পারোমিতার থেকে অনেকটা কম। তবে সেটা খুব একটা ফ্যাক্ট না। আর সেকেন্ডলি, বিয়ের আসরে বরের পক্ষে কখনোই মার্ডার অ্যাটেম্প করাটা পসিবেল নয়। কিন্তু এখানেও সেটা সে করতে পারে, যদি অন্য কাউকে সে এই কাজে লাগায়।
এবার বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। ঝড়টাও বেশ বাড়ছে। জানালার পাল্লাটায় আওয়াজ হচ্ছে দুম-দাম। মিতা উঠে গেল জানালা বন্ধ করতে। জানালা বন্ধ করতে করতেই মিতা জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা ওই পারোমিতার বাড়ির লোককে ওর পাস্ট নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি?'
-'সেসব কথা তোর বাবার সাথে হয়েছে। আমি আগে চলে এসেছি। কাকু আসুক, বাকি কথা জানা যাবে'। কথাটা বলেই অংশু ভুরু কুঁচকে একটা ছবির দিকে তাকাল। তারপর আর একটা ছবি হাতে নিয়ে সেই ছবিটার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হন্যে হয়ে বাকি ছবি গুলো হাতরাতে লাগল। মিতা জিজ্ঞেস করল –কি খুঁজছিস?
অংশু কোনো উত্তর দিল না।
কৌশিকবাবু ফিরলেন প্রায় রাত আটটা, বৃষ্টি থামার পর।
-নতুন কিছু খবর পাওয়া গেছে?
-নতুন খবর বলতে পারোমিতার বাবা মায়ের থেকে যেটুকু জানা গেছে, তাতে মেয়ের সুইসাইড করার কোনো কারন তো তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তাহলে বাকি রইল মার্ডার আর অ্যাকসিডেন্ট। এবার ওর বাবা মায়ের কথা অনুযায়ী মেয়ের শত্রু তো কোনো কালে ছিলই না, উপরন্তু কোলকাতা থেকে শত্রু মেদিনীপুরে এসে খুন করবে, এ যুক্তি তো মেনে নিতে পারছে না। ইভেন আমারো এবার মনে হচ্ছে ইটস জাস্ট আ অ্যাক্সিডেন্ট।
-আচ্ছা কাকু, আমার একটা কথা সকাল থেকেই মনে হচ্ছিল, তখন বলিনি।
-কি?
-পারোমিতা কি আদৌ উপর থেকেই নিচে পরেছে? কারন বাথরুমের রেস্পেক্টে ওটা খাত হলেও আদপে তো ওটা পুকুরপাড়। হতেও তো পারে উনি ওখানে গিয়েছিলেন, দেন ওখানে কেউ...
-উপর থেকে পড়েছে কিনা সেটা তো কালকের রিপোর্ট হাতে এলেই বোঝা যাবে। বাট... সেই 'কেউ' ওনাকে কোকাতা থেকে চেস করে এখানে এসে...
-না আকস্মিক ভাবে দেখা হয়ে তো যেতেই পারে। পারে না কি...?
-তা পারে। তবে উপর থেকে পরার ফলে যেভাবে মাথা ফাটে... এক্ষেত্রেও কিনু...
-না না। সেটা তো অ্যাক্সিডেন্ট প্রুফ করার জন্য আততায়ী ইচ্ছে করেও করতে পারে?
-পারে।
-তাহলে এখন সেই 'কেউ' টাকে খুঁজে বার করাটা খুব দরকার।
কৌশিকবাবু আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, চাকরটা এসে জিজ্ঞেস করল, 'ভাত না রুটি?'
-ইয়ে অংশু, তুমি রাতে রুটি খাও?
-না ভাত। তবে কাকু, এখন একটু বেরোবো।
-না না, এখন কোথায় বেরোবে? রাত হয়ে গেছে, এটা তো কোলকাতা নয়। রাস্তা গুলিয়ে ফেললে...
-না না। আমি রাস্তা গোলাবো না।
-ঠিক আছে, তাহলে আমার গাড়ি নিয়ে যাও।
মিতা আবার বায়না ধরল সেও বেরোবে। অগত্যা, কৌশিকবাবু একজনকে অনুমতি দিয়েছেন, আর একজনকে থামান কিকরে? তবে বার বার করে বলে দিলেন দশটার মধ্যে যেন বাড়ি ফেরা হয়।  
                                         ৪
-আমরা ঠিক কোথায় যাচ্ছি? জিজ্ঞেস করল মিতা।
অংশু বলল, না জেনেই যখন বেড়িয়েছিস তখন আর না জানলেও চলবে। মিতাও আর ঘাঁটাল না। কারন ও জানে এখন অংশু কোনো জবাবই দেবে না। তাই ঘার ফিরিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে বসে রইল। মরামের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে যাওয়ার আওয়াজ আর হেডলাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরির মত গাছগুলো।
গাড়িটা একটা পুকুরের পাড়ে এনে পার্ক করল অংশু। মিতা বেশ আন্দাজ করতে পারল, এটা সেই ডেথ স্পট। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন এখানে এসে লাভটা কি? প্রশ্ন করবে না করবে না ভেবেও শেষমেশ বলেই ফেলল, এখন এখানে এলে কেন?
-ছক সাজাতে। আমি তো আর হোমস নই যে ঘরে বসে বসে সব সাজিয়ে নেব আর স্পটে এসে কেরামতি দেখাবো!
-'তা সকালে ছক সাজাতে...' অংশু মিতার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে, কথাটা শেষ করতেও না দিয়ে দুটো জলের গাড়ির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল –' লক্ষ্য করে দেখ, এদিকটায় জলের জায়গা ছিল প্লাস জেনারেটারের ব্যাবস্থাও এখানে ছিলতারমানে জেনারেটারের দায়ীত্বে যারা ছিল... মমম... না, সবসময় যে তারা থাকবে...' নিজেই কথা বলছে, বলতে বলতে আবার থেমে থেমে যাচ্ছে অংশু। সাজাচ্ছে, গুটি গুলো সাজাচ্ছে। কি যেন ভেবে একবার বিরবির করে বলল, রাজলক্ষ্মী ইলেক্ট্রনিক্স!
-'আমি কি গাড়িতে গিয়ে বসব? মশা কামড়াচ্ছে'।
-'না। আমার মোবাইল নিয়ে আসা হয়নি। জায়গাটার ছবি তুলে রাখ'।
-'নিচ্ছি'।
মিতা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি নিচ্ছে, অংশু বলল, কাল বিকেলের দিকে একবার বৃষ্টি হচ্ছিল না?
-হচ্ছিল তো!
-তাহলে এখানে ধস্তাধস্তি হলে কিন্তু মাটিতে তার ...। অংশু টর্চ জ্বেলে জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করছে। পুকুরের পার ধরে খানিকক্ষণ হেঁটে যাওয়ার পরে হঠাত একটা জায়গায় অংশু থামল, তারপর হাঁটু গেরে বসে কিছু যেন নিরিক্ষন করল। তারপর মুচকি হেসে বলল –'অনুপ্রবেশ। বাট হু ওয়াস দ্য সেকেন্ড অ্যন্ড হোয়াই?'
মিতা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই অংশু বলল, তোকে একটা কাজ করতে হবে। এই বাড়ির যে ছোট মেয়েটা আছে, ওর থেকে কায়দা করে কথা আদায় করতে হবে।
-কি কথা?
-চ। গাড়িতে যেতে যেতে বলব।
                                     বিকেলের দিকে ঝড় হয়ে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। মিতার গাড়িতে একটু শীত শীত করছিল বইকি। কিন্তু চাপা উত্তেজনাও ছিল। অংশু কি এমন দেখল ওখানে? তাছাড়া বিকেলে ছবিতেই বা কি এমন খুঁজে পেয়েছিল সে? –মিতা যখন এইসব ভাবছে, তখন ওকে অবাক করে অংশু বলল –'তুই নিশ্চয়ই ভাবছিস আমি বিকেলে ছবিতে কি খুঁজছিলাম?'
-'হ্যাঁ তো'।
-'শোন তাহলে, কারন তোর জানাটা দরকার। কিন্তু তার আগে বল তো, কাল পারোমিতা কি পরেছিল?'
-'শাড়ি। লাল আর হলুদের কম্বিনেশান'।
-'ঠিক এই একই কালারের শাড়ি আরো একজন পরেছিল'।
-'কে?'
-'পোরিতোষ বাবুর ভাইয়ের বড় মেয়ে। আমি যখন পারমিতার ছবি গুলো আলাদা করছিলাম, তখন একটা ছবিতে আমিও ঘোল খেয়ে গিয়েছিলাম। ওই যে তখন বললাম না.. আংশিক! সেইরকম একটা ছবি। আমি ব্যাক সাইডটা দেখে ভেবেছিলাম ওটা পারোমিতা বাট পরে অন্য একটা ছবির পুরোটা দেখে বুঝলাম ওটা অনন্যা, মানে পরিতোষ বাবুর ভাইয়ের মেয়ে'।
-'তুই কি মিন করতে চাইছিস বল তো?'
-'এটাই যে, পরিতোষবাবুর ছেলের বন্ধুর জবানবন্দি অনুযায়ী সেই রাত্রে ছাদে যে গোপোন প্রেমালাপ চলছিল, বা পুরোনো প্রেমিক প্রেমিকার বচসা, যাই বলি না কেন... সেই দুজনের একজন অর্থাৎ নারীটি অনন্যা।
-'মানে তুই বলতে চাইছিস, অনন্যার বয়ফ্রেন্ড অনন্যা ভেবে পারমিতাকে মেরে ফেলেছে। যাহ্‌। সে কেন ...তাছাড়া...'
-'তাছাড়া ছার বালিকে। যেটা বলছি, সেটা শোন। কাল আমি সকালে কোলকাতা যাব, দরকার আছে। আবার বিকেলের মধ্যে ফিরে আসব। তুই শুধু কাকুর সঙ্গে ওই বাড়ি পৌঁছে গিয়ে অনন্যার বোনের সঙ্গে কথা বলে আদায় কর, অনন্যার পাস্ট। মানে অনন্যার বিয়ের আগের ঘটনা কি ছিল?'
-'তুমি এত সিওর হচ্ছ কি করে যে অনন্যার...'
-'বিয়ের আগে বয়ফ্রেন্ড ছিল কিনা?'
-'হ্যাঁ'
-'শোন, অনন্যার বয়ফ্রেন্ড কাল্প্রিট কিনা, সে বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। বাট, তার বয়ফ্রেন্ড ছিল এবং সে সেদিন ওই বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত ছিল, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি কিছু বিয়ে বাড়িতে কিছু গেস্টদের করা ব্যাক্তিগত ভিডিও থেকে। এইধরনের ভিডিও গুলোতে এমন অনেক ধরনের ফুটেজ ধরা পরে ম্যাডাম!'
-'ঠিক আছে। আমি ঠিক কথা বার করে নেব। কিন্তু তুই কোলকাতায় যাবি কেন?'
-'পারোমিতা কাল রাতে কেন পিছনদিকের ওই পুকুরে গিয়েছিল বা কেন পুকুরপারে যাওয়ার কথা ছিল, সেটা জানতে'।
-'মানে? এই তো বলছিস ভুল করে...' 
-'কিন্তু এই ভুলের পিছনে আরো কিছু ঠিক ভুল আছে। সেগুলো যে না জানলে অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে'।
                                       ৫   
অংশু পরদিন সকালে বেড়োনোর আগেই পারোমিতার রিপোর্ট টা চলে এল। রিপোর্ট বলছে, উঁচু কোনো জায়গা থেকে পরেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তবে মৃত্যুর অন্যতম কারন কোনো ব্লান্ড ইন্সট্রুমেন্টের আঘাত।
অংশু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল –'মাথার আঘাতটা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল ওটাই মৃত্যুর কারন, সেইজন্যেই আপনাকে বলেছিলাম হতেও পারে উপর থেকে পরে মারা যায়নি। কিন্তু এখন ব্যাপারটা যা দাঁড়াল, উপর থেকেও পড়েছে আবার নিচেও মার খেয়েছে'।
কৌশিকবাবু বললেন, মানে পারমিতার জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা হয়েছিল।
-'হুম। এবার দেখতে হবে বাঘটি কে, আর কুমিরটাই বা এসেছিল কেন?'
-'অ্যাঁ?'
-'বাদ দিন। বলছিলাম, ওই পোরিতোষবাবুর জামাইয়ের অফিসের ঠিকানাটা আজকে দুপুরের মধ্যে জেনে আমাকে এস.এম.এস করে দেবেন তো'।
-'ঠিক আছে। তা তুমি রাতের মধ্যে আবার এখানে আসছ তো'।
-'ইচ্ছে তো আছে। কারন সিনেমাটা তো আর বেশিক্ষন ঝুলিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ও ভাল কথা, রিসেপ্সশানের জায়গাটার লোকেশানটাও পাঠিয়ে দেবেন। ওখানেই ডাইরেক্ট ঢুকে যাব'।
-'বেশ। তুমি তাহলে বেড়িয়ে পর। যাবে যখন দেরি করে কাজ নেই'।

বিকেল থেকেই সাজ সাজ রব। কনে যাত্রিদের যাওয়ার জন্য গাড়ি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশরা সবাই সাধারন পোশাকে। খুব নিজেদের লোক ছাড়া এই খুনের ব্যাপারটা পারা প্রতিবেশিরা এখনো কেউ জানে না। আত্মীয়-স্বজন রাও না। পরিতোষবাবু এমনিতেই চিন্তায় আছেন, তার উপর আবার দুপুরে খাওয়ার আগে কোউশিকবাবু তাঁর জামাইয়ের অফিসের ঠিকানা পাঠাতে আরো নারভাস হয়ে পরেছিলেন উনি। এদিকে মিতা শুধু সুযোগ খুঁজছিল কি করে অনন্যার সেই ছোট বোনটিকে আলাদা করে পাওয়া যায়। অংশু বলেছে, ব্যাপারটা কনফার্ম করে দিতে আর সেই ছেলেটার ঠিকানা দিতে। মিতা এদিকে ভেবে পাচ্ছে না, অনন্যার বয়ফ্রেন্ড অনন্যা ভেবে পারোমিতাকে ফেলে দিলেও নিচে আঘাতটা করল কে? নাকি সেই ছেলেটি এতটাই সাংঘাতিক যে...। আরে, ওই তো অনন্যার বোন। ওটাই তো...হ্যাঁ, ছবি অনুযায়ী তো তাই।
-'শুনছ?' ডাক দিল মিতা।
-'আমায় বলছেন?' ঘুরে দাঁড়ায় মেয়েটি। পায়ে পায়ে এগিয়ে এল মিতার কাছে। 'বলুন'। এই তো! ঘেঁটে গেল মিতা। কিভাবে শুরু করবে? না, অংশুর কথা বলা যাবে না। বলতে হবে বাবা জানতে চেয়েছে।
-'আমি ইন্সপেক্টার কৌশিকবাবুর মেয়ে, মধুস্মিতা। বাবা আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে কয়েকটা প্রশ্ন করতে'।
-'আমাকে?'
সামান্য তোতলালো কি মেয়েটা? হুম, তাহলে মিতার এখন নরম হলে চলবে না। 'হ্যাঁ, তোমাকে। কাল তুমি পুলিশকে সব সত্যি কথা কিন্তু বলোনি'। সন্দেহটা সন্দেহ হিসেবে নয়, হাই কনফিডেন্সের সাথে কথা ছুঁড়ে দিয়েছে মিতা।
-'মানে?' এবার একটু ঘাবরেও গেছে। নাহ, এই তো মোক্ষম সময়।
-'তুমি তোমার দিদির পাস্ট নিয়ে পুলিশকে কিছু বলনি। অল রাইট, অতজনের সামনে তোমার দ্বিধা হয়েছিল নিশ্চই, আর সেই জন্যই বাবা আজকে পারসোনালি জানতে পাঠিয়েছে'।
-'সেটা পুলিশ জেনে কি করবে?'
-'দরকার আছে। তুমি সব সত্যি বলবে'।
-'দিদি জানবে না তো যে আমি বলে দিয়েছি?'
-'না জানবে না'।
-'ঠিক আছে'।
মেয়েটি যা বলল তা এইরকম –' অনন্যার সাথে ছেলেটির স্কুল লাইফের প্রেম। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় অনন্যা বাড়িতে বেকায়দায় ধরা পরে যায় এবং তারপর সাত তাড়াতাড়ি করে অনন্যার বিয়েও দিয়ে দেয়। এদিকে ছেলেটিকে বাড়ির কেউ তেমন চোখে দেখেনি। বা দেখে থাকলেও এতদিনে তা ভুলেও গেছে। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে সেই অভিক অর্থাৎ অনন্যার প্রেমিক, যে এখন ক্যাটারারিঙ্গের বিসনেস করে, তার কাছে গিয়ে পৌঁছোয় এই বিয়ের জল, ক্যাটারিঙ্গের দায়ীত্ব। ওদিকে অনন্যা বিয়ের দিন সকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে আসে এবং দুপুর বেলায় তার বাচ্চা ছেলেটার জন্য খাওয়ার আনিয়ে দিতে বললে  ক্যাটারিং এর ওখান থেকে অভিক খাওয়ারটা নিয়ে আসে। অনন্যা তাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় আর সে সবটাই বলে বোনকে। এদিকে অনন্যার বর কিছু সন্দেহ করতে পারে এই ভয়ে অনন্যা রাতে নিচে যখন সবাই বিয়ের ওখানে ব্যাস তখন চুপি চুপু ছাদে অভির সঙ্গে দেখা করে। সেই কথোপোকথনের কথাই উল্লেখ করেছে দাদার বন্ধু। তবে উপরে আদৌ কি কথা হয়েছিল তা সে জানে না। তবে অনন্যা নিছে নেমে আসার কিছু সময় পরে দিদিকে দেখে অভিকে একবার চমকাতে দেখেছে সে!'
'অভি অনন্যাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকেছে? তারমানে তো বোঝাই যাচ্ছে, অভি কালপ্রিট' ভাবল মিতা। মিতা এও ভাবল, অভি কি তাহলে ছাদে অনন্যার থেকে টাকা পয়সা কিছু চেয়েছিল ব্লাকমেল করে?

...
'ভারতবর্ষে প্রথম টকি এসেছিল ১৯৩১ সালে। যদিও তার আগে হলিউড টকি ভারতে দেখানো হয়েছে ১৯২৮ এ। বাংলায় টকি এলেও তার সাউন্ড প্রবলেম নিয়ে গুনিদের মধ্যে অভিযোগ ছিল। এম্নন সময় এলেন বি.এন.সরকার। তাঁর নিউ থিয়েটারস বলতে গেলে সেই সময় বাংলার সিনেমার জগতে একচেটিয়া মার্কেট করে নিয়েছিল। তবুও যে সব ছোট খাটো কিছু ফিল্ম প্রোডাকশান তার ফাঁকে গজিয়ে উঠেছিল, তার মধ্যে এই ' বাকধারা পিকচারস' ও একটা'। একটানা এতটা বলে থামলেন সঞ্জয়বাবু। পুরোনো প্রোডাকশানের স্টিল, ভিডিও রোল, এছাড়া অন্যান্য নথি পত্তর নিয়ে বেশ ভাল রকমের ব্যাবসা ফেঁদে বসেছেন এই সঞ্জয় ভদ্দরলোক। অংশু চায়ে ছোট্ট চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল –'সেই সময় ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে যা দেখা গেছে আর কি... মানে ওই অগ্নিকান্ডে সিনেমার রিল নষ্ট হয়ে যাওয়া...'
-'উঁহু, এইখানেই গল্প। তখনকার দিনের বেশ নামকরা এক পরিচালকের চারটে ছবি রাজনৈতিক কারনে মুক্তি পেতে পারে নি। সময়টা তা ধরুন গিয়ে চল্লিশের গোড়ার দিককার কথা। কিন্তু সেই রিল পরে বিদেশ ঘুরে নিলেম হয়ে... অবশ্যই হিস্টরিকাল ভ্যালুর দিক থেকেই... সে জিনিস এখন আমার কাছে। এবার যাকে তাকে এসব জিনিস...'
-'আসল কথায় আসুন'।
-'হ্যাঁ, বলছি। গত মাসের এগারো তারিখে পারোমিতা বসু নামের একজন প্রোফেসর আমার কাছে এসেছিলেন এই ব্যাপারে। ওনার নাকি রিসার্চের কাজে লাগবে। তা কাগজ পত্রও কিসব যেন দেখিয়েছিলেন। তবে আমার বলে ন্যাজ্য দাম নিয়ে কথা, এর মধ্যে এক শাশালো খদ্দের এলেন। বেশি দাম দিতে রাজি। আমি তবুও একবার ওনাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু পেলাম না। মহা ধন্দে পরে গেলাম। উনি এমনিতেও যে দিনে নেবেন বলেছিলেন সেদিন আসেননি। দিন পেরিয়ে গেছে। আমিও তাই সেই লোককে বেচে দিলাম জিনিস। তার পরে একদিন হঠাত করে সে মেয়ে এসে হাজির। আমি অগত্যা সেই ভদ্দরলোকের ঠিকানাই দিয়ে দিলাম ব্যাস! এইটুকুই। এর বেশি আমি জানি না'।
-সেই ভদ্রলোকের নাম?'
-'দাঁড়ান, দেখে বলতে হবে'। বলে সঞ্জয়বাবু মনিটরের দিকে চোখ রাখলেন।
                                        ৬
-খাওয়ার নিয়ে এসেছিস কিছু? গাড়ি চালাতে চালাতেই প্রশ্ন করে অংশু। মিতা পাশের সিটে বসে। জবাব দেয় –'ফোন করে বললি আর আনব না? কিন্তু তুই সকাল থেকে কিছু খাসনি কেন?'
-'আর খাওয়া? চারিদিকে দৌড়োদৌড়ি করতে করতেই তো সময় চলে গেল। বিলপত্তর, এক্সচেঞ্জ... তাও ভাগ্য ভাল পুরোনো বন্ধুর দেখা মিলেছে। নয়তো আজ আর সবটা পেতে হতনা।
মিতার চোখে মুখে উচ্ছাস। 'তারমানে তুই সল্ভ করে ফেলেছিস?'
'প্রোবাবলি'
-'তর প্রোবাবলি মানে হয়ে গেছে। বাবা জানে?'
-'কাকু কাল রাত থেকেই আমার থিওরিটা জানেন। আর আজ বিকেলে ফোন করে বলে দিয়েছি সবটা। নইলে যে সমস্যা হয়ে যাবে'।
-'সে তোর থিওরি তো আমিও জানি'।
-'তুই যেটা জানিস, সেটা অনুমান'।
-'মানে?'
-'সেদিন আমি কার ছবি দেখছিলাম? আর কিই বা খুঁজছিলাম?'
-'কেন, পারোমিতার...'
-'আরো একজন'।
-'অনন্যা'।
-'না। অনন্যার কেসটা ইম্পরটেন্ট, বাট মেন নয়'।
-'তাহলে?'
-'তাহলে, তাহলে আগে খাওয়ার দে। তুই স্টিয়ারিং ধর। আমি খাই, নয়তো ওখানে আর গল্প বলা হবে না'।

চারিদিকে সাজ সাজ রব। বরপক্ষের এখনো সবাই ব্যাপারতা জানে না। অংশু কৌশিকবাবুকে বললেন –'কাকু... বলছি, গোটা টা বলতে গেলে তো অনেক কথাই উঠবে। কিন্তু কাজটা তো এখানে না হলেই নয়'।
-'সে ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। পোরিতোষবাবুর বেয়াইয়ের সঙ্গে সব কথা হয়ে গেছে। ছাদের ঘরে ব্যাবস্থা হয়েছে। বলা হবে কনের মেকাপ হচ্ছে'।
-'আর...'
-'সব ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। তোর কাছে শুধু প্রুফ আছে কিনা বল'।
-'সব আছে'।

ঘরটা বেশ বড়। ছাদের পাশের ঘর বলতে সাধারণত যেমনটা ভাবা হয় তা নয়। ঘরের একপাশে লাইট, ক্যামেরার স্ট্যান্ড ইত্যাদি ছবি তোলার আরো কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে ক্যামেরাম্যান নারাচারা করছে। ইনি সেই মেয়ের বাড়ির ক্যামেরাম্যান। ছেলের বাড়ির ক্যামেরাম্যান নিচে ইতিমধ্যেই ভিডিও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভবত আর ইনি মেয়ের সাজার অপেক্ষ্যায়। অংশুদের ঢুকতে দেখে ঘর ছেরে দিচ্ছিলেন, কিন্তু কৌশিকবাবু বললেন –'থাক থাক আপনাকে উঠতে হবে না'। তারপর অংশু, পোরিতোষবাবু, মিতা, অনন্যা, অনন্যার বাবা-মা একে একে নিজেদের মত চেয়ার টেনে বসে গেলেন। ছেলের বাবাও উপস্থিত আছেন। অংশুই শুরু করল কথা। প্রথমেই ইষত গলা খাকরানি দিয়ে বলল –'প্রথমে কিন্তু অনন্যার মায়ের সাথেই কথা বলতে হচ্ছে'। অনন্যার মা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন অংশুর দিকে। অংশুর কোনো বিকার নেই। সে ঠান্ডা ভাবেই বলল –'আপনার মেয়ের বিয়ের আগে একটি ছেলেকে ভালোবাসতো আর তাই আপনারা মেয়েকে পুরো কলেজটা না পড়িয়েই সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলেন তাই তো!'
-'এসব...এসব কথা...'
-'চিন্তা করবেন না। আপনারা বাবা মা হয়ে অমানবিক কাজ করেছেন ঠিকই, মাপ করবেন ছোট মুখে বড় কথা, কিন্তু এটাই সত্যি। যাই হোক, আমি অতটা অমানবিক হতে পারলাম না, তাই ওর হাসবেন্ডকে এখানে উপস্থিত রাখিনি'। এই শেষ কথাটা শোনার পর আর কিছু বললেন না উনি। কেমন যেন মূষরে গেছে। শুধু বললেন, 'তার সঙ্গে...'
-'বলছি কি সম্পর্ক। তার আগে আপনি বলুন তো অনন্যা, আপনি পোরশু দিন রাতে ছাদের সঙ্গে ওই অভিক ছেলেটির সঙ্গে কথা বলছিলেন তাই না!'
-'হু'।
-'কি কথা হয়েছিল?'
-'এক রাশ অভিমান নিয়ে যা বলা যায়। তার উপর যখন দুপুর বেলা সেই আমার ছেলের জন্যে খাওয়ার এনে দিয়েছিল... তারপর আপনিই বলুন না কি কথা সে বলতে পারে?'
-'হুমকি? ব্ল্যাক্মেল?'
-'না না। এসব কি বলছেন? ও কখনোই এসব বলেনি। শুধু বাচ্চাদের মত আবদার করেছিল, আমি যেন সারারাত ছাদে দাঁড়িয়ে ওর সাথে গল্প করি। কিন্তু আমি শুনিনি। ছুটে চলে এসেছিলাম'।
-'আর আপনার ছুটে চলে আসাটাই এক গভীর ট্র্যাজেডিতে পরিনতি নিয়েছিল'।
-'মানে?'
-'বলছি। অভিক...!'
অভিক বুঝি এতক্ষন বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে ভিতরে আসতেই অংশু বলল –'আমায় যা যা বলেছ, সবাইকে তাই বল এবার। আমি যানি তুমি সত্যি বলছ। কারন তার পরের অংশটা আমার জানা'।
অভিক বলল –'সেদিন আমি ছাদে অনন্যার সাথে ছিলাম। তারপর অনন্যা ছুটে নিচে চলে যায়। কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমিও ছুটে যাই। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে দেখি সিঁড়ির পাশ দিয়েই অনন্যা কোথায় যাচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ধরতে যাই। সে একটা দরজায় ঠেলা মেরে দরজাটা খোলে। আমি জানতাম না ওটা কিসের দড়জা। আমি অনন্যা ভেবে একদম ওর পিছনে গিয়ে হাতটা ধরে টানি আর সঙ্গে সঙ্গে ...বোধ হয় ঘটনার আকস্মিকতাতেই সে ভয় পেয়ে পা পিছলে নিচে পরে যায়। আমি ভিষন ভয় পেয়ে যাই। কিন্ত আশ্চর্য, দৌড়ে ওখান থেকে সরে এসে দেখি অনন্যা দিব্যি মন্ডপে! তখন বুঝি যে পরে গেছে, সে অনন্যার মতোই শাড়ি পরায় আর পিছন থেকে দেখতেও অনেকটা একই রকম হওয়ায় আমি ভুল করেচিলাম'।
'কিন্তু ও যে শোধ নিতেই আমার মেয়েকে ঠেলে ফেলে দেয়নি তার প্রমান কি?' অনন্যার মা বলেন। কিন্তু এবার অনন্যা ঘুরে দাঁড়ায়। সে বলে 'আমি অনেক প্রমান তমায় পরে দেব মা। আগে ওনার কথা শুনতে দাও'। তার গলায় স্পষ্ট ঝাঁঝ।
এর মধ্যে ক্যামেরাম্যান তার ক্যামেরা আর স্ট্যান্ড নিয়ে উঠে বলল –'আমি তাহলে চললাম। বর বোধ হয় রেডি'। কিন্তু তার বেরোতে যাওয়ার মুখে অংশু তাকে আটকাল।
-'এক মিনিট ... আপনার নামটা যেন কি?'
-'শুভাশিষ জানা'।
-'সিওর তো!'
-'কি অদ্ভুত প্রশ্ন?'
-'বেশ। আপনি ছবি তোলার সময় কোনো সহকারি সাথে রাখেন?'
-'রাখি। কেন?'
-'তিনি ছবি তোলেন?'
-'না।
-'লাইট ধরে'।
-'কিন্তু পোরশু দিন তিনি ছবি তুলেছিলেন। আর তার তোলা সে ছবিতে আপনাকে দেখা গেছে'
-'তো?'
-'আরে তো মানে? সেখান থেকেই ত আপনার উপর সন্দেহ মশাই। ছবিতে দেখা গেছে আপনি সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন। অল্প একটূ দেখা গেছে। কিন্তু আপনি যখন ছবি গুলো কোয়ারটারে দিতে এসেছিলেন, তখন যে আপনাকে দেখে ফেলেছিলাম!'
-'কি যা তা বলছেন?'
-'আপনি এই মাত্র বলেছেন আপনার নাম বলছেন। যদিও সে নাম অস্বিকার করার ক্ষমতা আপনার নেই। যেমনটা ক্ষমতা নেই এটা অস্বিকার করার যে, আপনার কোলকাতার শোভাবাজারে বাড়ি আছে!'
-'আমি ওই মেয়েটাকে খুন করেছি? কিন্তু কেন? আমি কি পাগোল? এমনি এমনি একটা মেয়েকে মেরে ফেলব?'
-এমনি এমনি তো নয়। আপনি গতবছর ১৩ই মে সঞ্জয় মিত্রর নিলামঘর থেকে 'বাকধারা পিকচারসের' যে ছবির রিল কিনেছিলেন অন্যান্য নথির সঙ্গে, সেই জিনিস তার একসপ্তাহ আগে বুক করে গিয়েছিলেন পারোমিতা। এবার আপনি সেই জিনিস বেশি দাম দিয়ে কিনে নিলে পারোমিতা আপনার কাছে যায় সেই রিলের ছবি আপনি যেন ওনাকে অন্তত পক্ষে দেখতে দেন কারন উনি এই বিষয়এ রিসার্চ করছেন। কিন্তু আপনি তাকে সেই জিনিস দেননি। অপেক্ষা করছিলেন অন্য কোন বড় পার্টির জন্য। এদিকে বেশ কিছুদিন আগে পারমিতা আপনাকে ফোন করে জানান যে উনি আপনার দু একটা খুচরো বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত, তাই আপনার এতেই মঙ্গল- যদি রিল আপনি ওনাকে দিয়ে দেন'। শুভাশিষ কিছু একটা মৃদু প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল, অংশু বলল –'অস্বিকারের উপায় নেই। পারোমিতা মরেছে, ওর ফোন নয়। তারপর শুনুন। আপনি দেখলেন বাঁচার একটা পথ আছে, যদি আপনিও পারোমিতার কোনো উইক পয়েন্ট খুঁজে বার করতে পারেন! হঠাতই আপনার মেদিনীপুরের এজেন্সি থেকে অর্ডার এল। আপনিও নিজে ছবির কাজে এলেন, কোলকাতা থেকে পালিয়েই একরকম। ব্ল্যাকমেল কি জিনিস তাই না! যাই হোক, আপনি এখানে এসে দেখতে পেলেন পারোমিতাকে। তারপর দেখলেন এই বাড়ির পিছন দিকটা। ভেবেছিলেন ওখানে কায়দা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলবেন। প্ল্যান মত গেলেনও। কিন্তু আপনি সময়ের আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন বা পারোমিতা আপনার টোপ গিলে সেখানে যায়নি। অথচ আপনি নিরাস হয়ে ফিরে আসার আগেই উপর থেকে কি যেন একটা পরল। আপনি হাতে চাঁদ পেলেন। আপনার শিকার এরই মধ্যে অর্ধেক ক্ষত। ব্যাস! আপনিও দিলেন পাথর চাপা!' সবাই চুপ। অংশুই আবার বলল –'আপনি ঘটনাটা বিকৃত করতে চেয়েছিলেন ঠিকই... তবু সব কেমন ঘেঁটে গেল তাই না শুভাশিষবাবু!'

পরদিন সকালে আগে অংশু আর মিতা ফিরে আসে মিতার গাড়ি করে। মিতা অবশ্য একচোট ঝাল নিয়েছে অংশুর উপর, তাকে ছবির ব্যাপারটা ডিটেলে না বলার জন্য।


 ===================


অয়ন সাঁতরা
ফোন- ৯৮৩৬৬১৪০৮৪
ঠিকানা- ১৭সি, এ সি পাল স্ট্রিট। কোল-৫৭







বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...