Skip to main content

রণেশ রায়ের প্রবন্ধ

সমাজ বিকাশে প্রযুক্তি ও তার ব্যবহার





মানব সমাজ বিকাশে প্রযুক্তি:


মানব সমাজের বিকাশ ও অগ্রগমনে প্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে তার আবির্ভাব লগ্ন থেকেই। অথচ সভ্যতার ধারক বাহক তথা কর্পোরেট দুনিয়া ও তাদের পদলেহনকারীরা একে আজকের যুগের এক বিস্ময় বলে প্রচার করে প্রযুক্তির উন্নতিকে  তাদের একান্ত অবদান বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সম্পত্তির মালিকানা এবং তার সাহায্যে প্রযুক্তির উপর দখলদারি কায়েম করে তাকে কার স্বার্থে কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা স্থির করার অধিকার অর্জন করেছে মালিক গোষ্ঠী। এর জন্য তারা রাষ্ট্রের সমর্থন পায় কারণ রাষ্ট্র তাদের স্বার্থে পরিচালিত হয়। অথচ প্রযুক্তি একটা বহমান এমন উপাদান যা মানুষের অগ্রগমনে সহায়ক। পুঁজিবাদের আবির্ভাবের বহুকাল আগে থেকেই কার্যত মানব সমাজের আবির্ভাব লগ্ন থেকেই মানুষের শ্রম ও মননের সমন্বয়ে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটে চলেছে অবিরাম ধারাবাহিক ভাবে। আজকের সুউন্নত প্রযুক্তি অতীতের প্রযুক্তির উন্নতির ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতা থেকে প্রযুক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে একে এর  প্রকৃত স্রষ্টা তথা মেহনতি মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে মানবতার স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চলেছে মালিক শ্রেণী। ব্যাপক সাধারণ মানুষের স্বার্থে এর ব্যবহার খুবই সীমিত এবং সেটা পরোক্ষ। শুধু সেখানেই মানুষের স্বার্থ কিছুটা ছিটে ফোটা রক্ষিত হয় যেখানে তাদের স্বার্থ অর্থাৎ মুনাফার স্বার্থ রক্ষিত হয়। মানুষের স্বার্থটা পরোক্ষ এবং গৌণ। অথচ যদি এদের স্বার্থ থেকে প্রযুক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে তাকে মানব উন্নতির কাজে ব্যবহার করা যেত তবে মানুষের যে কল্যাণ হত তা মানবতাবোধকে রক্ষা করে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেত। আজের এই ভয়াভয় সভ্যতার চেহারাটা দেখতে হত না।

আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উপকরণের ব্যবহারে বৈচিত্র এনে উৎপাদনে বিকল্প উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে বা নতুন দ্রব্য উৎপাদন করার কৌশল আবিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রযুক্তির আবিষ্কার করে চলেছে যা তার জীবন ধারণের মানকে উন্নত করে চলেছে, তাকে মসৃন করে চলেছে। মানুষের মেহনতের সঙ্গে মনন যুক্ত থাকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। যুক্তির সাহায্যে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উপকরণের সঙ্গে উৎপাদনের কার্যকারণ সম্পর্কটা আত্মস্থ করে তার সম্পর্কে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে উন্নতস্তরে কাজে লাগনো হয় যা নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে। নতুন প্রযুক্তি মানুষকে নতুন হাতিয়ার পেতে সাহায্য করে। প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদনের জায়গাতেই অর্থাৎ মাঠে ঘাটে এই প্রযুক্তির আবিষ্কার হত। আলাদা করে গবেষণাগার ছিল না। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতি আটকে থাকত না। ধারাবাহিকভাবে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটত আজকের তুলনায় শ্লথ গতিতে হলেও। আর সে প্রযুক্তি কাজে লাগত মানুষের স্বার্থে। শ্রেণিবিভক্ত সমাজের আবির্ভাবের পর তার সুযোগ মালিক সম্প্রদায় আরো বেশি বেশি পেতে থাকে। কিন্তু পুঁজিবাদের আবির্ভাবের আগে পুঁজির প্ররোচনায় ও তার স্বার্থে প্রযুক্তির ওপর দখল নেওয়ার প্রশ্ন ছিল না। মেহনতি মানুষ তার উৎপাদন ও উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নি। তবে এটা সত্যি যে বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতার সামনে পরে পুঁজিবাদী সংগঠক শ্রেণী প্রুযুক্তি উন্নতিতে উদ্যোগ নিয়েছে, গড়ে তুলেছে গবেষণাগার যা প্রযুক্তি উন্নতির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে মেহনতি মানুষের প্রাপ্য থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন রেখে বঞ্চিত করে শুধু নিজেদের লাভের স্বার্থে প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহার করেছে। ঘটেছে লাগামহীন প্রযুক্তির উন্নতি আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোগবাদ সমরবাদ আর প্রকৃতি নিধন। স্রষ্টা হয়েছে সৃষ্টি ছাড়া। এই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখব প্রযুক্তি মানুষের মঙ্গল নয় লাভের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে সভ্যতাকে বিপন্ন করেছে, প্রকৃত অর্থে মানুষের অগ্রগমন থমকে গেছে। এটার ওপর আলোকপাত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমরা আরও দেখার চেষ্টা করব বিকল্প সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিভাবে প্রযুক্তিকে মানবতার স্বার্থে ব্যবহার করা যেতে পারে পুঁজিদবাদী ব্যবস্থায় যেটা লঙ্ঘিত হয়। এটা স্বীকার করতেই হয় যে পুঁজিবাদের প্রথম যুগে অর্থাৎ প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদের যুগে প্রযুক্তি উন্নতির সাহায্যে উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে পুঁজিবাদ সমাজ বিকাশে প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু একচেটিয়া পুঁজিবাদের আজকের সংকটকালে নয়া সাম্রাজ্যবাদের যুগে পুঁজিবাদ প্রযুক্তির অপব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় বাড়িয়ে নিজের সৃষ্ট সভ্যতারই ধ্বংস করে চলেছে। তারই পদধ্বনি আজ শোনা যাচ্ছে ভোগবাদ, সমরবাদ আর প্রকৃতি নিধন যজ্ঞে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এশিয়া আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। আমরা ভারতের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা আলোচনা করব।

 সম্ভাবনার মধ্যেই ধ্বংসের বীজ:


সন্দেহের কারন নেই যে মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় ভোগ বৈচিত্রের সম্ভাবনার দুয়ার। মানব সমাজের এই অগ্রগমন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই আদিম কালে পৃথিবীতে মানবজাতির আবির্ভাবের ঊষালগ্নেই। সভ্যতারও সূত্রপাত তখন থেকেইI  সেই অর্থে সভ্যতা একটা বহমান ধারণা I মানব সমাজের প্রগতিতে প্রযুক্তির উন্নতি যে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে তাতে সন্দেহ নেই। পুঁজিবাদ এই বিকাশে এক বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছে বলে পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমালোচক কার্ল মার্ক্স ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলসও  মনে করেন। যে দূরদৃষ্টি নিয়ে এই দুই সমাজবিদ পুঁজিবাদের আবিরভাবলগ্নেই বিশ্বায়নের আগমন বার্তার ইঙ্গিত দিয়ে যান তা আজকের বিশ্বায়নের সর্বোচ্চস্তরের সমর্থকরাও কল্পনা করতে পারেন না। তবে এই দুই মনীষী  পুঁজিবাদের এই প্রাচুর্যের মধ্যেই যে তার সর্বনাশ লুকিয়ে আছে তা  বীক্ষণ করেন। তাদেরও প্রশ্ন থেকে যায় মানবতার স্বার্থে এই প্রক্রিয়া কতদূর কাজ করবে। এই ব্যবস্থাকে তাঁরা  এক আত্মঘাতী সঙ্কটমুখী ব্যবস্থা বলে মনে করতেন কারণ উৎপাদন ব্যবস্থা আর উৎপাদিকা শক্তির মধ্যে এক বিরামহীন দ্বন্দ্ব  দেখা যায় যার সমাধান এই ব্যবস্থার মধ্যে নেইI   বরং প্রযুক্তির বিরামহীন উন্নয়ন এই দ্বন্দ্বকে তীব্র থেকে তীব্রতর  করে কারণ এই ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান উৎপাদিকা শক্তিকে ধারণ করতে পারে নাI তাঁদের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষাপটে আমরাও দেখি :

ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর রূপ তার,
অণু  ভেঙ্গে পরমাণু
খুলে যায় সম্ভাবনার দুয়ার;
তারপর পরমাণু  ভাঙ্গলে !
কে রাখে তাকে  আগলে ?
সে এক বিস্ফোরণ !
মহা শক্তির উৎসরন
নয়া-সভ্যতা, অভিনন্দন।

এরপরও তাঁদের সংশয়, একটা কিন্তু। তাঁরা যেন বলেন:

পদধ্বনি ধ্বংসের না সৃষ্টির ?
তবে মেঘ, সে কি বৃষ্টির ?
যদি সে শক্তি সৃষ্টির বাহক
অবগাহনে কৃষ্টির আয়োজক,
অণুর গর্ভে জন্ম লয় অনুপম
মহান সে জনম।

আজ আমরা শুনি যুদ্ধের দামামা, পরিবেশের প্রতিশোধ, তার আক্রোশ।  ভোগবাদে কলুষিত সমাজ। আমরা বলি:

আবার বিস্মিত আমি,
এ  কি মূর্তি দেখি !
 দাপিয়ে বেড়ায়
ধ্বংসের প্রতিমূর্তি, এ কি !
জঙ্গলের ক্রন্দন
সভ্যতার স্খলন।

সর্বত্র হানা দেয় সামরিক বাহিনী। সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র:

ফিরে আসে হিরোসিমা বার বার
বন্দী সে জল্লাদের কারায়
মনুষ্যত্বের পরাজয়, জয় মিথ্যার
সত্য তার মান হারায়,
বিরোধ বাঁধে কায়া আর ছায়ায় , 
বনিকের পদলহন
ধর্মের তোয়াজে দহন;
দেখি আমি প্রকৃতির বিরাগ
অধর্মের  প্রতি ধর্মের অনুরাগ, 
অনিবার্য পতন, বিপর্যয়, 
প্রত্যক্ষ করি মানবতার অবক্ষয়,
সে এক পাপ পূণ্যের মহাজোট
 ডেকে আনে সভ্যতার সংকট। 
 (  রণেশ রায় ---- গোধূলি: সভ্যতার সংকট)



প্রযুক্তির অপব্যবহার:


  মানুষের কায়িক শ্রম এবং তার অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা মানুষের চেতনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রযুক্তির বিকাশের পথ সুগম করেছে। প্রত্যক্ষ শ্রম ও তার সঙ্গে অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা যাকে  আমরা মৃত শ্রম বা নিহিত শ্রম (embedded labour) বলি সমবেতভাবে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটায়। এটি একটি বহমান ধারণা। নতুন কিছু নয়। সুতরাং আজকের ইলেক্ট্রনিক্স শিল্প ও তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা তথ্য প্রযুক্তি উন্নতির যুগটাকেই প্রযুক্তির যুগ বলে ভাবার কারন নেই। এই প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের `আগন্তুক` চলচিত্রের নাম মনে পড়ে। গাছ থেকে ফল পাড়া, জলে মাছ ধরা, আশ্রয় তৈরী, আগুনের ব্যবহার, লোহার ব্যবহার সবই প্রযুক্তির উন্নতির বহমানতার নিদর্শন বহন করে। জ্ঞানের  সমাবেশ আর সঞ্চয় ঘটে, মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটে । শ্রমের ফলে যে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে তার সঞ্চয় ভান্ডার হল আমাদের চেতনা। সেটাই সভ্যতার আঁধার। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেটাই শিক্ষার উপাদান।

আজকে সঙ্কটকালীন একচেটিয়া পুঁজিবাদের তথা নয়াসাম্রাজ্যবাদের যুগে আন্তঃজাতীয় কর্পোরেশনের (Transnational Corporation) রাজত্বকালে  ভয়ঙ্কর মাত্রায় আবির্ভূত হয়েছে চারটি বিষয়------ প্রযুক্তিবিপ্লব ও তার অপব্যবহার, সমরবাদ, ভোগবাদ আর দূষণ ও জঙ্গল সাফের দৌলতে প্রকৃতির উষ্মায়ন। এই প্রতিটি বিষয় বহুমাত্রিক হওয়ায় পৃথক আলোচনার দাবি রাখে। আমরা এদের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সেরে নেব। এই সমস্যাগুলোকে উদারনীতিবিদরা দুষ্টসমস্যা বললেও তারা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এদের অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন। সমস্যাগুলো সমূলে উৎপাটন করা বা এগুলোর  যাতে উদ্ভব না হয় তা না ভেবে সমস্যাগুলো এলে নেহাৎ মৌখিকভাবে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। ভোগবাদ আর সমরবাদকে অস্বীকার তো করা হয়ই না বরং বাণিজ্যের স্বার্থে লোভ চরিতার্থ করার জন্য তাকে মদত করা হয়। অথচ আমরা জানি দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ, মহামারী থেকে এ সমস্যাগুলো কোনভাবেই  কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে এগুলো আরও সঙ্কটাকীর্ণ করে তুলেছে। আরও বেশি মানুষকে পুঁজিবাদের সঙ্কট স্পর্শ করছে। প্রকৃতিবিদ দেশপ্রেমিক শক্তি আর শ্রেণী সংগ্রামে বিশ্বাসী মার্কসবাদীদের পরস্পরের কাছাকাছি টানার শর্ত তৈরী করছে। এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকে সমস্যাগুলোর কোনোটাই যে মেটানো যাবে না তা উপলব্ধি করার সময় এসেছে। এ নিয়ে কাউকে উদাসীন থাকলে চলে না।

  আজ নয়া-উদারনীতিবিদরা শ্রম থেকে চেতনাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখাবার চেষ্টা করে। চেতনা যেন শ্রম নিরপেক্ষ অতিপ্রাকৃতিক প্রতিভা যা জন্মসূত্রেই পাওয়া যায়। শ্রমের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। এটাই হল জন্মলব্ধ বুদ্ধিবৃত্তি যা প্রযুক্তির জন্ম দেয়। উচ্চবিত্তরাই এর ধারক ও বাহক। শ্রমজীবী মানুষের এর ওপর দাবি থাকতে পারে না। জন্মসূত্রে পাওয়া বিশেষ প্রতিভার প্রচেষ্টায় গবেষণাগারে প্রযুক্তির জন্ম হয়। পুঁজি খরচ করে যে পুঁজিপতিরা এই গবেষণাগার তৈরী করে তাদেরই প্রাপ্য প্রযুক্তি এবং তার ফল। পুঁজির মালিকানার জোরে প্রযুক্তির ওপর প্রাধান্যকামী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয় সেটাকে আড়াল করার চেষ্টা চলে। বলা হয় না যে তারা নিজেদের স্বার্থে প্রযুক্তির ব্যবহার করে। আর এর থেকেই উদ্ভব ঘটে ভোগবাদ আর সমরবাদ। এছাড়া এমন প্রযুক্তির আজ অবাধ ব্যবহার যা প্রকৃতির ভারসাম্য বিঘ্নিত করে, এমন পণ্য সামগ্রী উৎপাদনে সাহায্য করে  যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্বক। আজ এটা প্রমাণিত সত্য। এই কারনে উন্নত `সভ্য` দেশগুলো অজস্র এমন পণ্যের উৎপাদন ও ভোগ নিজেদের দেশে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তাদের বহুজাতিক সংস্থাগুলোর স্বার্থে তা ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে  অবাধে উৎপাদন করে তা নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে। গরিব দেশের মানুষেরা এর ভোক্তা। সবই চলে খরচ কমিয়ে লাভ বাড়ানো আর তার সঙ্গে বাজার দখলের তাগিদে। এভাবে মানুষের ক্ষতি করে প্রযুক্তির অপব্যবহারের প্রবণতাকে আমরা প্রযুক্তি সর্বস্বতা বা প্রযুক্তিবাদ বলি। সুতরাং প্রগতির স্বার্থে প্রযুক্তির আবিষ্কার প্রযুক্তির ব্যবহার আর প্রযুক্তিসর্বস্বতা তথা প্রযুক্তিবাদ এক বিষয় নয়। প্রযুক্তি সর্বস্বতা বা প্রযুক্তিবাদ প্রযুক্তির বিকাশ ও আবিষ্কারের আসল কারিগর শ্রমজীবী মানুষের অবদানকে অস্বীকার করে। যুক্তিবাদকে অস্বীকার করে তার জায়গায় স্থান দেয়  ভাববাদকে যা অতিপ্রাকৃত সর্বশক্তিমান তথা ভগবানের অনুগ্রহের কারাগারে মানবসমাজকে বন্দি করে রাখতে সচেষ্ট হয় । আর এর জন্য দরকার হয় সমরবাদ এবং একইসঙ্গে অন্ধ ভক্তিবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মৌলবাদ ( সে ধর্মীয় মৌলবাদী-ই  হোক বা অন্য কোন ধরনের মৌলবাদ-ই হোক ) ----- তাদের মধ্যে এক সমঝোতা। মৌলবাদ হ`ল বিজ্ঞান বিরোধী। অথচ যুক্তিভিত্তিক প্রযুক্তির উন্নতি ছাড়া, প্রযুক্তির ওপর মুষ্টিমেয়ের দখল প্রতিষ্ঠা না করে পুঁজিবাদ টিঁকে থাকতে পারে না। এখানেই পুঁজিবাদ আর মৌলবাদের বিরোধ ঘটে। ব্যাপক সাধারণ মানুষকে ধ্বংস করার জন্য সমাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করার জন্য সাম্রাজ্যবাদকে মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে সন্ধি করতে হয়, মৌলবাদকে মদত করতে হয় আবার প্রযুক্তির সুযোগ পাওয়ার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের স্বার্থে মৌলবাদের বিরোধিতা করতে হয়। এক স্ববিরোধতার উদ্ভব ঘটে। আজকের দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে মুসলিম মৌলবাদের বিরোধ তাদের মধ্যে যুদ্ধ সেই বার্তাই বহন করে। এর ফলে তাদের দুনিয়ায়  সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এরাই একদিন ঐক্যবদ্ধ  হয়ে তাদের সাধারণ শত্রু সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লাগাতার চক্রান্ত করে গেছে। তাকে উচ্ছেদ করেছে রাশিয়া থেকে, চীন থেকে। যে দেশেই সমাজতন্ত্রের লড়াই হয় সেখানেই এরা  যুদ্ধ বাধায়। তারা ঐক্যবব্ধ হয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক চেতনাকে খুন করে যদিও মুখে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের যপ আওড়ায়। সমাজতন্ত্রের শিবির  নিধনে সার্থকতা পেয়ে এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এটাই নিয়ম। কারন পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত সংকট সাম্রাজ্যবাদ মৌলবাদ কাউকেই রেওয়াত করে না। অন্যের ঘর পোড়ায় আবার সেই আগুনে নিজেরা দগ্ধ হয়। মুখে মানবতার কথা বলে কিন্তু এরাই মানবতার সবথেকে বড় শত্রু।

ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ভোগবাদ আর সমরবাদকে মদত করা হয়। দেখলাম  যে প্রযুক্তি, প্রযুক্তির উন্নতি আর প্রযুক্তিবাদ এক বিষয় নয়। আমাদের কোন কোন বন্ধু উভয়কে এক করে দিয়ে আমাদের ওপর মিথ্যা আক্রমন হানে। বলে যে আমরা মার্কসবাদীরা প্রযুক্তি ও প্রযুক্তির উন্নতি চাই না। আদিম বর্বরতার জাদুঘরে গরিব অসহায় মানুষকে বন্দি করে রাখতে চাই। আমরা স্পষ্ট জানাতে চাই যে আমরা প্রযুক্তি চাই, প্রযুক্তির উন্নতিও চাই। কিন্তু তা ব্যবহৃত হবে জনকল্যাণে। মুষ্টিমেয় মানুষের লোভ চরিতার্থ করার জন্য নয়। সমরবাদ ভোগবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়। প্রকৃত নিধন করে নয়। উদারনীতিবাদদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ এখানেই। আমরা প্রযুক্তি নয় প্রযুক্তিবাদের বিরোধী। আমরা বিকল্প আধারে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সঠিক প্রযুক্তি সঠিকভাবে কিভাবে ব্যবহৃত হতে পারে তার ওপর আলোকপাত করতে পারি। সেটা সবস্তরের মানুষকে ভোগবৈচিত্রের সুযোগ করে দিয়ে তাদের জীবন ধারনের মান বাড়াতে পারে। যারা প্রকৃত অর্থে প্রযুক্তি উন্নতিতে  অবদান রাখে তারা তার ফল ভোগ করতে পারে। নিজেদের সৃষ্টি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবে না। মুনাফাবাজ ভোগবাদ আর সমরবাদকে মদত দিতে হয় না। প্রযুক্তি হতে পারে পরিবেশবান্ধব, শত্রু নয়।

প্রাধান্যবাদী এই ব্যবস্থায় শ্রম ও যুক্তি সৃষ্ট প্রযুক্তির মালিকানার ওপর দখল পায় পুঁজিপতিগোষ্ঠী। মানুষ তার নিজের সৃষ্টির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। স্রষ্টা হারায় সৃষ্টি তার, মালিক হয় দখলদার। ফলে উন্নত প্রযুক্তির দরুন যে শ্রম সময় বাঁচে, খরচ কমে , উৎপাদনে বৈচিত্র আসে তার সুফল শ্রমজীবী মানুষ  পায় না। তাদের শ্রম সময় কমে না, প্রকৃত মজুরি বাড়ে না।  বরং উন্নত প্রযুক্তিতে শ্রম নিবিড়তা বাড়ে। শ্রমিক  ছাঁটাই হয়।  দীর্ঘদিন লড়াই করে শ্রম সময় কমাতে সক্ষম হয়েছিল শ্রমজীবী মানুষ। আজ কর্মসংকোচনের যুগে আবার শ্রমজীবী মানুষকে আট ঘন্টার বেশি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোথায় প্রযুক্তির উন্নতির সুযোগ কিছুটা হলেও শ্রমজীবী মানুষ পাবে তা নয় বরং তাদের ওপর শোষণ বেড়ে চলেছে। অপরদিকে মালিকের লাভের সুযোগ বাড়ে কারন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্বৃত্ত শ্রম সময় ও তার সাথে উদ্বৃত্ত মূল্য বাড়ে। মুষ্টিমেয়ের হাতে সম্পদের সমাবেশ ঘটে। পুঁজির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনের কেন্দ্রীভবন বাড়ে। একই সঙ্গে দখলদারি ব্যবস্থায় দখল বজায় রাখার জন্য সমরবাদের বিস্তার ঘটে। বাজারে উৎপাদিত পণ্যের বন্যা বয়ে যায় বলে তা বিক্রি করতে হয়। চাহিদা বাড়াবার নানা ব্যবস্থা করতে হয়। ভোগবাদের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়। ঋণের মাধ্যমে ভোগ্য দ্রব্য ক্রয়ের সুযোগ করে দিতে হয়। ব্যাংকে সাধারণ মানুষের জমা টাকা থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়, ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ডে কেনার সুযোগ বাড়াতে হয়। আজ ভারতে মোদী সরকারকে সেটাই করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অবাধে পরিবেশ শত্রু প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলে। বিশ্বায়নের ছাতার তলায় সব দেশকে নিয়ে এসে দক্ষিণের অনুন্নত দেশগুলোতে সেসব দেশের  কাঁচামাল শ্রম জমি ব্যবহার করে সেখানকার পরিবেশ ধ্বংস করে উৎপাদন করিয়ে নেওয়া হয়। প্রাপ্য লাভ পুঞ্জীভূত হয় বহুজাতিক সংস্থার হাতে। উত্তরের উন্নত দেশের মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় দক্ষিণের দেশগুলি।

আমরা বলেছি যে দখল বজায় রাখার স্বার্থে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবাধে অস্ত্র উৎপাদিত হয়। অস্ত্র একটা লাভজনক উৎপাদন ক্ষেত্র। অস্ত্র উৎপাদন ও বিক্রির তাগিদে আঞ্চলিক যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়। পশ্চাদপদ দেশগুলো উন্নতদেশের অস্ত্রের বাজারে পরিণত হয়। অসম বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরে পশ্চাদপদ দেশ বাধ্য হয় কারন তারা আমেরিকার মত বৃহৎ শক্তি নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা বিশ্ব  ব্যাংক প্রভৃতি সংস্থার কাছে ঋণে ডুবে থাকে। তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপদেশ মেনে চলতে বাধ্য হয়। দেখা যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি মানব কল্যানে লাগে না। মুনাফাবাজদের স্বার্থে কাজে লাগে। পশ্চাতপদ দেশের সম্পদ লুঠের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সেসব দেশের পরিবেশ ধ্বংস হয়। শ্রমজীবী মানুষের ওপর শোষণের চাপ বাড়ে।

পরিবেশের প্রশ্নে আমরা দেখি আজ মূল ভারতে যে সব শহর গড়ে উঠেছে সেখানে দূষণ যে মাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে ভারত যে প্রাকৃতিক বিপদের মুখে পড়বে সেটা  পুঁজিবাদের সমর্থকরাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। তাও সমর শিল্প  নোংরা শিল্প ও নির্মাণ শিল্পের আক্রমন কমছে না বরং বেড়ে চলেছে। গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে হয়ে চলেছে এক ধূসর নগরিকরন। দেশের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর ওপর খনি লুঠের তাগিদে নজর পড়েছে বহুজাতিক সংস্থার। সবুজকে জঙ্গল সাফ করে মানুষকে জীবিকাচ্যুত করে চলছে শিল্পের নামে এক ধ্বংসলীলা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার মরে খনিজ সম্পদ লুঠ করে কর্পোরেট সস্থার দাবি মেটাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিদেশে। ভারতব্যাপি যে উন্নয়নযোগ্য চলছে তাতে উচ্চবিত্তরা আরো বড়লোক হচ্ছে আর প্রান্তিক মানুষদের আরো প্রান্তিকরণ ঘটে চলেছে। এই প্রসঙ্গে আমরা আজের ভারতের প্রান্তিক অঞ্চলের ওপর আক্রমনের নমুনাটা তুলে ধরতে পারি। কিভাবে পরিবেশের সর্বনাশের ক্রিয়াকান্ড চলছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটা দেখে নিতে পারি।





প্রযুক্তি ব্যবহারে সঠিক দিশা কে দেখাতে পারে:


প্রযুক্তি যদি মানবতার ধর্ম পালন করত তবে তা কর্ম সঙ্কোচন ঘটাতো না। উৎপাদনে শ্রম সময় কমত। শ্রমজীবী মানুষ অবসর পেত। শিল্প সংস্কৃতি উন্নতিতে তাদের সৃষ্টিশীল মননের স্ফূরণ ঘটত যা সভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিত। ভোগবাদের বা সমরবাদের বিস্তার ঘটাবার প্রয়োজন হত না। অথচ ভোগ বৈচিত্র এনে শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান বাড়ানো যেত। উল্লেখযোগ্য যে ভোগ আর ভোগবাদ এক নয়। জীবন-এর  মান বাড়াতে ভোগ বৈচিত্র এবং প্রয়োজনে ভোগের মাত্রা বাড়ানো অবশ্য-ই দরকার। কিন্তু সব জলাঞ্জলি দিয়ে ভোগ সর্বস্বতা এবং  তার জন্য ব্যাপক মানুষকে বঞ্চিত করে মুষ্টিমেয়র ভোগ লালসা যাকে আমরা ভোগবাদ বলি তা সমর্থন করা যায় না। আজ নয়া সাম্রাজ্যবাদের যুগে সেটাই ঘটে চলেছে। একটা দেশে ব্যাপক আয় বৈষম্য সৃষ্টি করে সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষকে নিরক্ষর আধপেটা রেখে তাদের চিকিৎসা আশ্রয়ের ন্যূনতম ব্যবস্থা না করে মুষ্টিমেয়ের বিলাস জীবন যাপনের পথ করে দেওয়া হয় এই ব্যবস্থায়। সেটাতে-ই আমাদের আপত্তি।

এবার দেখা যাক আমরা এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলি তা সঠিকভাবে রূপায়িত করতে পারলে সমরবাদ  ভোগবাদের দাসত্ব না করে পরিবেশকে রক্ষা করে কিভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে প্রগতিকে সুনিশ্চিত করতে পারি। পুঁজিবাদের বিকল্প সমাজতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিপুঁজি বিকাশের সুযোগ প্রতিহত করা হয়। প্রথম পর্যায়ে যতদিন সমাজ শ্রেণীবিভক্ত থাকে রাষ্ট্র দুষ্ট অথচ প্রয়োজনীয় (necessary evil) হলেও ঐতিহাসিক কারনে টিকে থাকে, তাকে টিকিয়ে রাখতে হয়, রাতারাতি উবে যায় না। এই সমাজতান্ত্রিক গঠন কালে রাষ্ট্র উপকরণের মালিক হয়। ব্যক্তিমালিকনার  প্রান্তিকরন ঘটে। এর উচ্চতর স্তর যাকে লেনিন সাম্যবাদ বলেছেন সেই স্তরে রাষ্ট্র থাকার প্রয়োজন হয় না। ঐতিহাসিক ভাবে তার অবলুপ্তি ঘটে, সে উবে যায়।   গোষ্ঠীবব্ধ ভাবে সমাজ উপকরণের মালিক হয়। এই স্তরে উন্নত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি শ্রমজীবী মানুষকে শ্রম সময় বাঁচাবার সুযোগ দেয়। তাদের এই সুযোগ দিয়েও বাড়তি উদ্বৃত্তের সাহায্যে পুঁজিগঠনের কাজ চলে যার মালিক ব্যক্তি নয় প্রথম স্তরে রাষ্ট্র ও পরবর্তী সাম্যবাদের স্তরে সমাজ হয়। এর ফলে ব্যক্তিপুঁজির শোষণ বন্ধ হয়। সমাজের  প্রয়োজনে পুঁজি, উপকরণ ও শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করা হয় বলে তার মালিকানা সমাজই ফিরে পায়। উৎপাদন প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বন্টিত হয়। ক্ষমতা অনুযায়ী দেওয়া আর প্রয়োজন অনুযায়ী নেওয়ার নীতির ভিত্তিতে। অযথা ভোগবাদকে মদত করে না। অথচ বন্টনে সমতা থাকায় এবং তা প্রয়োজন ভিত্তিক হওয়ায় মানুষের ভোগ বৈচিত্র বাড়ে।  বিলাসিতার সুযোগ থাকে না। একই সঙ্গে একজন তিনটে বাড়ির মালিক হয় না বা উচ্চবিত্তদের প্রত্যেকের হাতে তিনটে করে মোবাইল থাকে না।  সবাই ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে পারে। আর উন্নতির সাথে সাথে এই ন্যূনতম স্তরটা বাড়তে থাকে। বেড়ে যদি প্রয়োজনে মানুষকে গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যায়, ঘরে উন্নত জীবন যাপনের ব্যবস্থা করা যায় তাতে আপত্তির কিছু থাকে না। দশজনকে মেরে একজন একাই ভোগ করে না। একজনের হাতে বা পাতে জমা হয়ে অপচয় হয় না। অথচ ক্রমান্বয়ে সকলের জীবন যাপন বাড়তে পারে। সুচিন্তিত ভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রাধিকার স্থির করা যায়। বাজারের স্বতঃস্ফূর্ততা যা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তার ওপর নির্ভর করতে হয় না। এই ধরনের অর্থনীতিতে পরিবেশ শত্রু প্রযুক্তির  ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া যায়। পরের ওপর নিজের প্রাধান্যবাদ চাপিয়ে দেওয়ার যুদ্ধ থেকে সমাজকে মুক্ত করা যায়। বিদেশের কাছে নিজেদের সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে হয় না। একেই প্রকৃতপক্ষে আওতাভুক্ত উন্নয়ন বলা হয়। উদারনীতিবিদরা যে আওতাভুক্ত উন্নয়নের কথা বলে তা মুনাফাবাজি বজায় রাখে, ব্যক্তিপুঁজির শোষণকে আইনসম্মত মনে করে। সেক্ষেত্রে উন্নয়ন আওতাভুক্ত হতে পারে না। আওতা বহির্ভূত হয় কারন উন্নয়নের ফসল বিত্তবানরাই ভোগ করে। আয়বন্টনে অসমতা সমাজের বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। আমরা বন্টনের যে সমতার কথা বলি তা চূড়ান্ত অর্থে সমতা নয়। প্ৰয়োজনভিত্তিক বন্টনের কথা বলা হয়। এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে এই মুহূর্তে অসম বন্টনের রাজত্বে অভ্যস্ত থেকে আমরা এই আদর্শ ব্যবস্থাকে কাল্পনিক ভাবতে পারি কারন উদারনীতিবাদীদের টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা অন্যকে মেরে টিকে থাকার জীবনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আত্মকেন্দ্রিক মানুষের লালসা লোভ আমাদের আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। কিন্তু মানুষের সহমর্মিতা পারস্পরিক বিশ্বাস তার সমাজ ভাবনা সেগুলো যদিও অনেক বেশি সত্য। এই  গুনগুলোকে এই ব্যবস্থা খুন করে। অথচ সব সাধারণ মানুষ সেগুলো নিয়ে সুখে থাকতে চায়। জীবনে নিজের জন্য ক্ষুন্নিবৃত্তি তাদের জীবন দর্শন নয়। সেটা হতে পারে না।  তাই উপযুক্ত ব্যবস্থায় তার ভাগ করে চলার দর্শন যদি পুষ্টি পায় তবে আমাদের স্বপ্নের সমাজ বাস্তবায়িত হয়। উদারনীতির আত্মকেন্দ্রিক দর্শনের মুখের ওপর জবাব দেওয়া যায়। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমশক্তি আরও ভারসাম্য ও মানবিক যুক্তিতে বন্টিত হতে পারে। আর এ পথেই মানুষ পুঁজির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে।

নতুন ব্যবস্থায় শ্রমজীবী মানুষ তার সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। তার সৃষ্টি সমাজের সম্পদ বলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।এর জন্য দরকার এই সমাজটাকে ভেঙে নতুন সমাজের জন্ম দেওয়া। অস্ত্রে সজ্জিত এই ব্যবস্থার রক্ষাকর্তা রাষ্ট্র। তাকে বলপূর্বক উচ্ছেদ করেই সেটা করা সম্ভব। তার নিজের মধ্যেই উচ্ছেদের বস্তুগত (objective) শর্ত নিহিত আছে যেটা মার্ক্সবাদ দেখিয়ে দেয়। সেই সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করেই তিনি বলেন, ``পূরণো সমাজের গর্ভে নতুন সমাজ যা নিহিত থাকে তার প্রসব ঘটাতে শক্তি-ই ধাত্রীর কাজ করে``।   কিন্তু আপনা থেকে তা হয় না। আত্মগত শর্তকে (subjective condition) তৈরী করতে হয়। অনেক আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে তিক্ততম সংঘর্ষের মধ্যে দিয়েই একে উচ্ছেদ করে আমাদের স্বপ্নকে সফল করা সম্ভব।এবং এটা একটা ঐতিহাসিক অনিবার্যতাও ।  অনেক হতাশার মধ্যেও সেইজন্যই বোধহয় জীবানন্দ দাশ বলেন  : 

"সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে  ----- এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে;
সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ;
এ বাতাস কী  পরম সূর্যকরোজ্জ্বল
প্রায় ততদূর ভালো মানব-সমাজ
আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে
গড়ে দেব, আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে।``

=================================================


দ্রষ্টব্য:  
সংকটের সভ্যতা-------  রণেশ রায়;  
বিক্ষুব্ধ এ ভারত------  রণেশ রায়

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

চন্দন সুরভি নন্দর কবিতা

টাকার মেশিন                      মায়ের ওষুধ নিয়ে শহর থেকে ফিরল রতন সবে সন্ধ্যা নেমেছে  রাস্তায় আলো কম হাসপাতাল অনেক দূরে  অদৃশ্য যম খেলাকরে  মৃত্যুর সীমান্তে শায়িত মা   শেষ রক্ষা হল না  আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফোটে রাতের আঁধারে ঘরের দেওয়াল গুলো রাঙিয়ে গেছে কারা  তুলেছে রং বেরং এর তোরন  এসেছে নির্বাচন  শোনাযায় এবার নাকি এ টি এম চিহ্নে দাঁড়িয়েছে একজন! টাকার মেশিন........  জিতলে সবাইকে দেওয়া হবে! সামনে বসে উল্লাসে ফেটে পড়া রোবট গুলো মানুষ কবে হবে?  ====================== Chandansuravi Nanda Revenue Office  BL&LRO,Manbazar-ll Boro Purulia PIN-723131 Phone-9163332432

কবিতা ।। রঙ ।। ইউসুফ মোল্লা

  রঙ  ইউসুফ মোল্লা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,  পৃথিবী নানা রঙে সেজে উঠেছে।  ধূসর বাদামী রঙ তোমার দেহ,  মাথায় সবুজ রঙের বাবরি চুল,  তাতে গুঁজে রেখেছো লাল-নীল ফুল।  নববধূর মতো সিঁথিতে দিয়েছো সিঁদুর,  চোখে দিয়েছো কাজল।  দিগন্তভরা আকাশ তোমাকে নীল উপহার দিল,  সূর্যের লাল আলো তোমাকে সুন্দর করেছে।  তুমি তাদের ফিরিয়ে দিলে, বুকভরা ভালোবাসা আর স্নেহ।  মাঝে মাঝে এইভাবে হোলি আসে,  আমার মনকে রাঙিয়ে দিতে। ------------------    ইউসুফ মোল্লা উত্তর অঙ্গদ বেড়িয়া, ট্যাংরাখালী, ক্যানিং,  দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ৭৪৩৩২৯

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

ছোটগল্প ।। নীলিমার আত্মজাগরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত

নীলিমার আত্মজাগরণ পরেশ চন্দ্র মাহাত নীলিমা মাহাত, বয়স পঁচিশ প্লাস —তার বাবা মায়ের পঞ্চম তথা শেষ সন্তান। দুই দাদা —বড়দাদা শঙ্কর ও ছোটদাদা বিজয়। বড় দাদা শঙ্কর আর দুই দিদি তাদের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র নীলিমা আপাতত স্বামীর কোমল হাতের স্পর্শ ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত এবং আদৌ কবে অথবা সেই সৌভাগ্য আসবে সেটা ঈশ্বরের নিকটই একমাত্র জ্ঞাত। সেই সঙ্গে দুবছরের সিনিয়র ছোটদাদা বিজয়েরও নীলিমার মতো অবস্থা। তারও জীবনসঙ্গিনী জুটেনি। মোট সাতজন সদস্য নিয়ে গঠিত সংসার নীলিমাদের পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার —মধ্যবিত্ত পরিবার না বলে যদি নিম্নবিত্ত বলা হয় তবুও কোনো অত্যুক্তি করা হয় না। বাবার প্রত্যেকদিনের আয়ের উপর ভিত্তি করেই চলে সংসার। এই কঠোর এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও নীলিমার মা শ্রীমতী মেনকা‚ সংসার সামলে তার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার প্রতি যথেষ্ট তৎপর ও সহানুভূতিশীল। তাদের পড়াশুনায় কোনো খামতি রাখেননি। যথা সময়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের মুখ দেখিয়েছে – টিউশনের বন্দোবস্ত করেছে। তাদের জীবন যাতে সুখকর হয় সেটাই প্রতিদিন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছে। পাঁচ-পাঁচটি ছেলেমেয়ের মধ্যে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলা একপ...

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________ 

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

নারীমর্যাদা ও অধিকার হিমাদ্রি শেখর দাস  নারীর মর্যাদা বলতে বোঝায় নারীর সম্মান, অধিকার, এবং তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এটি সমাজে নারীর অবস্থান এবং তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। নারীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং তাদের অধিকার গুলি সুরক্ষিত থাকে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই শ্রেণি সংগ্রাম শুরু হয়েছিল অনেক আগে।  একদিকে শ্রেণী বৈষম্য অপরদিকে নারী পুরুষের বৈষম্য এই দুটি ছিল শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অন্যতম দুটি মূল ভিত। নারীর অধিকারহীনতা বা দাসত্ব শুরু হয় পরিবার ও সম্পত্তির উদ্ভাবনের ফলে। বহু যুগ ধরে নারী সমাজকে পারিবারিক ও সামাজিক দাসত্বের বোঝা বহন করতে হয়েছে বিনা প্রতিবাদে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে - দাস সমাজব্যবস্থা এবং সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষ ও পরিবারের অধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। সামাজিক উৎপাদনের কাজে নারীদের বঞ্চিত রেখেই তাদের পরাধীন জীবন যাপনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা হয় ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে। নতুন করে নারীদের সামাজিক উৎপাদনের কাজে ...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________