Skip to main content

পবিত্র চক্রবর্তীর গল্প

ঢাকী




কান্ড দেখেছ!
দুগগা পুজোতে ঢাক ভালোই বাজিয়েছে কীর্তন কামার। ছোট্ট থেকেই বাপ ঠাকুরদার
হাত ধরে শহুরে হাওয়ার মাঝে ট্যাং ট্যাং করে কাঁসি পিটাতে পিটাতে কখন যে
বাপ থেকে নিজেই ঠাকুরদা হল, মনে করা দায়।
বছরের কিছু সময় তার ছক বাঁধা কাজ। তাছাড়া বার মাসের তের পাব্বন, উৎসব
লেগেই আছে, তবে তা থেকে ঘরে তোলার মত তেমন কিছু থাকে না। উঠোনের দাওয়ায়
চমরাটাকে টান করতে করতে কত কথাই না মনে পরে যায়। এই তো সেবার রায় দালানের
খড়ি ওঠা ঠাকুর মন্দিরের সামনে ঠাকুরদা পাল্লা দিয়েছিলেন অন্য ঢাকিদের
সাথে। কীর্তনের তখন উঠতি বয়স, কচি কচি গোঁফ, হাল্কা দাড়ি এদিক উদিক দিয়ে
উঁকি মারছে। কাঁসির বদলে ঢাকের বোলে হাত ঝালাচ্ছে সবে। পিঠ টন টন করলেই
দাদুর চোখ পাকানো দেখেই আবার শুরু করছে বাদ্যি।
রাত যত ঘন হচ্ছে, মা মা রব চারিদিকে। ধোঁয়া- ধুনোর গন্ধ। বৃদ্ধ রায়
মশায়ের ঘড়ি ধরা কাজ, তার সাথে নরহরি বামুনের নিয়মের মাঝে কীর্তনের বাপ
টপাটপ করে বিশাল রাম দা হাতে একটা একটা করে পাঁঠার মুন্ড মাটিতে
নামাচ্ছে। ফিনকি দিয়ে লাল রক্ত ছিটকে ছিটকে লাগছে মুখে-গায়ে। উফ ভাবা যায়
এসব পুণ্যির কাজ।
-"বলি দাদু, ঢাকের সাথে সাথে তুর চামরাও এব্বার শুকাবে, তুর ছেইলে যে
ডেইকে ডেইকে সারা" -পালুর কথায় বুড়ো তাকিয়ে দেখে বংশের একমাত্র পিদিম
দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে। দাদুর সাথে রঙ্গ করার সময় পেলেই হাত ধুয়ে লেগে পরে।
পালুর একটাই নাম। ইস্কুলের খাতাতেও ওই নাম তোলা আছে। কচি শাল গাছের মত
চেহারা। পালুর বাপ বলে এক নম্বরের খচ্চর। কান ধরে কত বার ঢাক বাজানোর
চেষ্টা করেছে। শেষে কীর্তনের কথায় পালু নাক বেঁকিয়ে ঢাক ধরে। এটা বোঝে
না, কত পুন্ন্যি করলে ঢাকি হয়ে জন্ম নিতে হয়। সময় পেলেই নাতির গায়ে হাত
বোলাতে বোলাতে বুঝিয়েছে, "দ্যাক, পেলো, তুর এই হাতেইর বাইদ্যি শুনেই
দেবতারা সগগ থেইকে মাটিতে লামেন, খুশি হন"।
পালুর হয়েছে জ্বালা , এই বুড়োর কথা খুব একটা ফেলতে পারে না। মাঝে মধ্যে
অবশ্য ঘাড়ের রোঁয়া ফুলিয়ে বলে, "হ, তুর দেবতারা খুশি হন, আমার বন্ধুরাও
দাঁত বাইর কইরে হাসে। বলে, ওই পেলো ঢাকি আইসছে"।

পালুর বন্ধু মহলটাও কম ছোট না। গাঁয়ের শেষ প্রান্তে সন্ধ্যে হলেই মা-বাপ
খেদানো ছেলে পিলেদের সাথে নানা ভাষার সম্মেলন আর কিঞ্চিৎ কটু ধোঁয়ার
মৌতাতে জমে ওঠে আসর। টিম টিমে বাল্বের আলোয় চলে নানা রঙিন পরিকল্পনা।
পালু এখানকার মাতব্বর। ভগবানের কৃপায় সুঠাম চেহারা আর মারকুটে স্বভাবের
জন্য ওর মুখের ওপর খুব একটা কথা বলার সাহস রাখে না।
-"না! এভাবে চলে না, একটা ঘড় দরকার। লক্ষী'দা অনেকদিন ধরেই বলছে পাশের
গ্রামের সঙ্গে জলে ঝাঁপাতে হবে"।
-"হ রে তোর লক্ষী'দা বলেই খালাস, তারপর, টাকাটা কে দেবে তোর বাপ!"
উত্তেজিত হয়ে মনা বলে ওঠে।
উদাস ভাবে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর প্যান্ট ঝেরে উঠে পরে পালু। সারা
রাস্তায় নানা স্বপ্নের জালগুলো কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘিরে ধরে পালুর শরীরকে।
আপন বলে ওঠে "নিদেন হাজার দুই তো লাগবেই।" ঠোঁটটা কামড়িয়ে হাঁটতে থাকে
পালু। পড়ে থাকে পিছনে পড়ে থাকা শিশিরে ভেজা ধুলো পথ।
ঘড়ের টিমটিমে আলোয় পা টিপে টিপে ঢুকতেই বাবা বলে উঠলেন, "লবাব পুত্তুর
এয়েছেন, রাত –বিরেত লাই, গান্ডে পিন্ডে গিলে লাও"।
নিঃশব্দে পালু রান্নাঘড়ে ঢুকে থালা টেনে খেয়ে শুতে চলে গেল। মনে হল না
বাপের কথায় কোন ছাপ পরেছে। এ যেন এক চিরস্থায়ী। বাপ বলে যাবে আর পালু
সমান্তরাল কান দিয়ে বার করে দেবে।
ছোট্ট ঘর। কিছুটা পারিপাট্যের ছাপ আছে। যদিও বাড়াবাড়ি রকমের কিছু করার
ক্ষমতা নেই। কীর্তন কামার থেকে শুরু করে পালুর মা স্কুলের গণ্ডী পার
করাটাকে বাহুল্য মনে করেছিল এক জমানায়। তবে পালুর ক্ষেত্রে তাদের মতের
পরিবর্তন অবশ্যই হয়েছে। যদিও মাঝে মধ্যে ছেলের বেয়াদপি দেখে নিজের
পরিবর্তিত সেই চিন্তার গালে চড় মেরে বসে।
কামার সম্প্রদায়ের হলেও , কীর্তন তার ছেলের নাম নিজের সাথে মিলিয়ে
রেখেছিল গৌর। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যেবেলায় গৌর গ্রামের বুড়ো বটের দাঁত বার
করা রোয়াকে বসে বিড়িতে জব্বর টান মেরে ভাগ্যকে এন্তারসে গাল পেরে বলে,
"কি আর হবে, এত্ত কাল ধইরে ঢাক বাজাচ্চি, আর আমার পুত্তুর ইস্কুলে গিয়ে
পূবপুরুষদের বিদ্যে লদীতে ফেলচে।"
এইভাবেই কাটে কীর্তন কামারদের প্রতি সন্ধ্যা। সামনেই পৌষ মাস। অমাবস্যার
কালী পুজো। বায়নার জন্য ডাক পরে হরিপুর থেকে। সংসারে অসময়ে দেবতারা মাঝে
মধ্যে আসেন বলে কিছুটা ক্ষরা কাটে। মা লক্ষ্মী সদয় হন। সেদিন রাতে কীর্তন
পালুর দরজাটা ঠেলে ঘুমন্ত পালুর কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে পরে। ঘোলাটে চোখে
বোঝার চেষ্টা করে নাতির মতিটাকে। ঘড়ের বাল্বের হাল্কা আলোয় নিজের কৈশোরকে
অনুভব করে। পরম মমতায় পীঠে হাত বোলাতেই জেগে পালু। বিস্ময়ে ফ্যাল ফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকে। নাতির ঘুম ভেঙে যাওয়াতে বুড়ো এক মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে
মলাম স্বরে বলে, "পেলো, সামনেই পৌষে কালী, কর্তা বাড়ীর বায়না এয়েচে।
বাপের সঙ্গে যা তু। "
-"বুড়োর মাতাটা সত্যিই গেচে, সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা।"
-"তো কি হয়েচে বাপ! দেবতাদের চটাতে লাই রে, এবার তু বাজাবি আর আমি না হয়
কাঁসিটা বাজাবো, কেমন!"
কোনও ক্রমে ঠেকের ভাষাকে সামলিয়ে পেলো ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "ভাগ তো, মাঝ রাতে
কেলো কইরতে এয়েচে", বলেই পাশ ফিরে জোর করে চোখ বন্ধ করে।

রাতটা বেশ গভীর। ঢাকটা জোড়েই বাজচ্ছে। বরং বেশী জোড়েই। উদ্যাম ভাবে বোল
উঠছে একের পর এক। আদিম আর্তনাদের মতো প্রাচীন উলুর সাথে জুবু থুবু থাকা
সারবদ্ধ পাঁঠার ভয়ার্ত স্বর মিলে মিশে একাকার। ভিজে উঠছে জমি, সারা হাত,
কাপড় গাঢ় কালচে থকথকে জমাট রক্তে অমাবস্যাকে করে তুলছে যোগ্য পৌষে কালীর
রাত। ফাঁক বুঝে পটু হাতে গলা সমেত কাটা মাথা তুলে নিচ্ছে কর্তা বাড়ীর
নির্বাচিত লোক।
না, পালু পৌষে কালী পুজোর ঢাক বাজাই নি। ওইদিন রাতের পর সকালে কীর্তন
কামারের সাথে গৌরও মলাম সুরের খেই ধরে। কাজ উদ্ধার হয়নি, গৌরের চিল
চিৎকার কিছুটা কানে ঢুকেছিল পালুর।
বয়েসের ভারে ন্যুব্জ কীর্তন কামার তার বাপ-ঠাকুরদার টান করা ঢাকে কাঠি
দিয়েছিল, বোলগুলো যেন বাধ্য শিশুর মত বুড়োর তালে কথা বলতে শুরু করে। এবার
আর এই কামারদের কাছে বলির দায়িত্ব দেওয়া হয় নি। গৌরের মনটা খারাপ। এহেন
ভাগ্যের কাজ পরেছে অন্য গ্রামের কামারদের। কানাঘুষায় শোনা যাচ্ছে
ব্যাটারা টাকা কম নিচ্ছে। তবে বলির মাংস বেশ ক্ষানিকটা করে পাবে।
-"ওহ! ভারী তো কম লেবে! কাটারিটাই ভালো কইরে ধইরতে লারচে", বাপের কানের
কাছে ফিস ফিস করে বলে গৌর।
_ "লিক গে, ছাড়ান দে, যা পেইচি তাতেই চালা রে", একটু গম্ভীর ভাবে বলে কীর্তন।
এবছর, ধান কাটার তাড়া নেই। জমি কোথায়! সারা বছর ফাঁক পেলে যে ভাগ চাষির
কাজ করতো, তাও গেছে। আগের বছরে তাও কীর্তনের সাথে হাত মিলিয়েছিল ছেলে আর
নাতি। নাতি হল নবাব, কীর্তনও পা হড়কে বেশ কিছু মাস বিছানার সাথে ভাব
করেছিল। গৌর একা আর কত পারবে! নাতি যত তাল গাছের মত বাড়ছে, এসব কাজকে কেন
জানি না অস্পৃশ্য অচ্ছুতের মত দেখছে। ভাগ চাষির ভাগ্য খানিকটা বুড়ো বলদের
মত।
হঠাৎ সোরগোলে সম্বিৎ ফিরে পায় কীর্তন। কোমরটাকে একটু সোজা করে ঘারটা তুলে
ধরে। লয়টা গেছে কেটে। পাশে গৌর নেই। গলাটা ঝেড়ে, শুকনো ঠোঁটের কষটা মুছে
কয়েকবার নাতি আর ছেলের নাম ধরে ডাক দেয়।

জমাট ধুনোর গন্ধ ম ম করছে, ভিজে ফুলের গন্ধের সাথে বাতাসকে ভারী করে
তুলেছে নানা ফল-দুধ-রক্তের নোনতা গন্ধ। এসব আর নাড়া দেয় না কীর্তনদের।
আচমকা শরীরটা কেঁপে উঠল পালুর অশ্লীল গলার শব্দে। নিজের কানকে বিশ্বাস
করানোটা কঠিন। তবে যতই এগিয়ে যাচ্ছে কীর্তন ততই ছেলের রগরগে গলাটাও শুনতে
পেল। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে একটা জায়গায় বেশ কিছু লোকের মাথা গোল হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে, সঙ্গে চলছে হাত-পা নাড়িয়ে কথাবার্তা।
ফাঁকা জায়গায় সন্তর্পণে ছাল ওঠা ঢাকটা রেখে বাঁকা দেহটাকে সেদিকে নিয়ে
যেতেই কীর্তনের চক্ষু চড়কগাছ। একি! পেলোকে পেরে মারছে কেন?
বেশ কিছু শক্তি ফিরে পায় বুড়ো। কোঁচকানো শিরা ওঠা হাতে ভিড় করে থাকা
ভক্তদের সরিয়ে এগিয়ে যায় কীর্তন। ঘাড় গোঁজা পেলোর পাশেই ফুঁসতে থাকা
ষাঁড়ের মত গৌর মাজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-"ও গৌর, বাবা কি হইচে বল রে, পেলোকে কি কললি!", শত বছরের প্রাচীন
অশ্বত্থের পাতায় হাওয়া লেগে যে ভয়ার্ত আওয়াজ ওঠে, কীর্তনের স্বরে যেন
তারই অনুকম্পন জেগে উঠছে।
-"লাও লাও আর মাতা খেয়ো নি, তুর লবাব কি কইরেচে, হারামজাদা" ফুঁসতে
ফুঁসতে জবাব দেয় গৌর।
হাজার কথার মধ্যে সব কথা যেন হারিয়ে যায়। বেদীর কালী মূর্তির নিথর পাঁঠার
নীলাভ চোখের মত কীর্তনের চোখ বোঝার চেষ্টা করে। রাশি রাশি ঝাঁঝালো কটু
নগ্ন কথার সারমর্ম যখন আশি বছরের বুড়োর কালচে খড়ি ওঠা ধুলোটে হৃদয়ে ঢুকল,
বুঝল কি আহামক্কের মত কাজটা সে করেছে। ঢাকের বায়না তো দূর অস্ত, মুখও
দেখবে না কেও গ্রামের। হয়ত, বাবুদের কৃপাতে একঘড়ে হয়ে পরবে।
-"পেলো এইটা কইরতে পাইরলি! এত্ত বচরে এইমনটা কেও কইরে নি বাপ" নিঃস্পন্দ
গলায় কেটে কেটে ধীর ভাবে বলে কীর্তন। না, চোখ দিয়ে জল পরছে না। তারা
কামার। শত লোহার বল বুকের প্রতিটা পাঁজরে। অনেক ঘটনা জীবনের ইতিহাসকে
ওলট-পালট করেছে। বুকের ভীষণ এক গভীরে নাড়া খেলেও, চোখের জলে মণি কখন ভাসে
নি।
_ "বেশ কইরেচি, আবার কইরব দইরকার হলে", কথাটা বলে পালু মার খাওয়া ফুলো
ফুলো চোখে টলতে টলতে হাঁটা লাগাল।
কর্তা মশাইয়ের মন। ধন্যি লোক। ঘাড় ধরে বার করে দিলেও, লোকের হাত দিয়ে
হাজার তিনেক টাকা কীর্তনের হাতে দিয়েছে। অবশ্য, গৌর বা কীর্তন ধুলোয় বসে
বার কয়েক নিষ্ফল ব্যর্থ আবেদন করতে পিছিয়ে যায় নি। কর্তা পাথর চোখে
তাকাতেই, কিছু মাতব্বর গৌরের পিছনে লাথ মেরে পায়ের সুখটা জমিয়ে করেছে।
অতি উৎসাহীরা ঢাকের চামড়ায় বেশ কিছু আঁকিবুঁকি কেটে বাদ-প্রতিবাদও
জানিয়েছে।

জীবনের গতিপথ কুয়াশা ঢাকা এক সরল রেখা। সরল যে অনেক সময় আক্ষরিক অর্থে
জটিলতার রূপান্তর। হয়ত সেই আলেখ্য বুঝতেই জীবনের অনেকটা সময় শেষবারের
জন্য জ্বলে ওঠার অবলম্বন খোঁজে। তার তাগিদে এক অনামী সন্ধ্যায় বিছানার
পাশে শুয়ে কীর্তন হাতরে বেড়ায় ফেলে আসা রুক্ষ পথ। এখন তার চোখ দিয়ে যে জল
বেরোয়, তার নাম কান্না কিনা বোজা মুশকিল। তবে তীব্র দহন যে তার হাড় বার
করা বুকের খাঁচার বাইরের না, সেটা বোঝে একমাত্র নিজেই। কিছু দড়ি ছেঁড়া
খাটিয়ার একচেটে জীবন আজ তার সর্বক্ষনের সঙ্গী। মাঝে মধ্যে গৌর এসে উঁকি
মারে। ঘোর কাটলে কীর্তন ক্ষয়াটে জীর্ন ভুরূর ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করে।
দুর্বোধ্য ভাষায় চলমান জীবনের অভিযোগ জানাতে ছাড়ে না। আদৌ অভিযোগ না
অনুনয় তা গৌর কেন কেওই বোঝে না!
-"শুইয়ে থাক, চিল্লাতে হবেক লা, পেটের ভাইত তো আইনতে হবেক", নিত্যদিনের
রোজনামচার মত বলে বেরিয়ে যায় গৌর। এইভাবেই শুরু হয় দিন আর শেষও হয় অনুরুপ
ভাবে। ঢাকের বোলের ছন্দ কীর্তন কামারের গত হয়েছে মাস ক্ষানেক হল।
সামান্যের মাঝে অসামান্য নানা রূপে আসে। সেই আকস্মিক পরিবর্তনের লয় ধরতে
পারলে জীবন তোমার, না ধরতে পারলেও জীবন সেই তোমারই থাকে। শুধু পটভূমি যায়
পরিবর্তিত হয়ে। কর্তা বাড়ির ঘটনাটা পালুর কাছে ছিল তীব্র প্রতিবাদ। উঠতি
বয়েসের এক চেতনার মিশ্রণ। তবে তা তথাকথিত শাস্ত্রের পরিপন্থী কিনা তা
ভাবার সময় তার ছিল না। নিরীহ জীবহত্যা লীলার বিরুদ্ধে এক কিশোরের চরম
থাপ্পর।
সেদিন থাকতে পারে নি পালু। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে নিথর হয়ে যাওয়া
নির্বাক পশুগুলোর ভাষা যেন তার কানের পর্দাকে ছিঁড়ে দিচ্ছিল। পালু যে আগে
এসব দেখে নি তা নয়। কিন্তু কৈশোরের প্রাবল্য তার মনের অতলে জাগায় প্রশ্ন,
অনুভূতি। কাঁসিটা টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে কাটারি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কামারের
গালে সপাটে থাপ্পর মারতে সে বেশী চিন্তা করে নি। চিন্তা করে নি নামাবলী
কোমরে জড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুতের অস্তিত্বকে। গলাটা টিপে ধরে
থামিয়ে দিয়েছিল অর্থ না বুঝে মন্ত্রের কচকচানি
প্রাচিত্তির সহ শুদ্ধ ভাবে হোম করে আবার শুরু হয়েছিলো পৌষে কালীকে তুস্টি
করার পালা ।শুধু পালা পরিবর্তন হয়েছিলো কীর্তন-গৌরদের গতিপথে। তবে,
সেদিনের এই দুঃসাহস ভোলা কি যায় !ক'জনের মনের মধ্যেই বা জেগে ওঠে আদিম
রূপের মধ্যেও আদিমতা।

কামার জীবনে এহেন ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় প্রাচীন কীর্তন। বিরোধ বাধে নিজের
সাথে নিজেরই। গৌর যখন তার 'লবাব'কে বাঁখারি দিয়ে পিটাচ্ছিল থামাই নি সে।
এটাই পালুর প্রাপ্য শাস্তি। মার খেতে খেতে কঁকিয়ে বলেছিল, "শালা, বেশ
কইরেচি, কোন ধম্মে লিকেচে কালী মাংস খাবে, আর তোরা নাকি শিল্পী, লাচ
ভাইলো কইরে..." কথাটা শেষ করার আগেই রাগের মাথা খেয়ে বলিষ্ঠ গৌর পালুর
মুখে দেয় সজোরে গুঁতো। রক্তে ভেসেছিল গৌরের হাত। লুটিয়ে থাকা ছেলেটার
পাশে পিচ করে থুতু ফেলে চালার মধ্যে ঢোকে। কীর্তন ভালো ভাবে বোঝার আগেই
গৌর হিড় হিড় করে টেনে তাকে নিয়ে যেতে যেতে বলে, "শালো থাকুক পইড়ে।"
' তোরা নাকি শিল্পী, লাচ ভাইলো কইরে',- এ কথার মানে যে কতটা নিষ্ঠুর
হাসির মত তা এতদিনে বোঝে নি কামার শ্রেণীর এই প্রাচীন প্রতিনিধি। বার বার
করে ঘুরে ফিরে আসে কীর্তনের মাথায় পালুর মার খাওয়া জড়ানো গলার ব্যঙ্গ।
ধর্ম বা শাস্ত্রের তলোয়ার তাকে যতটা না কাটাকুটি করেছে, তার থেকেও বেশী
বার এই ভোঁতা অথচ ছ'টি শব্দের চাবুক তার পঁচাত্তরটা বছরের ধারাপ্রবাহকে
আকস্মিক ভাবে মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছিল বারবার। ঝর্না থেকে নদী চলতে চলতে
অন্তিম লগ্নে এসেও অনেক সময় পথের ক্লান্তিতেই যে ভাবে হারিয়ে ফেলে মাটির
সাথে সখ্যতা, সেই নিয়মটা কীর্তনের শিল্পী সত্ত্বাকে এক কঠিন কথার অনুরণনে
করে তুলেছিল শুষ্ক।
পরদিন সকালে গৌরের কড়া নিষেধ অমান্য করে ' লবাব'-এর কাছে ছুটে যেতে গিয়েই
ধাক্কা খায়।
-" পেলো, ও পেলো ওঠ রে, গৌর দ্যাকে যা লাতি উঠছেক লাই", মাটিতে বসে পরে
নাতির ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া মাথাটাকে কোলের উপর তুলে ডাকাডাকি জুড়ে দেয়
কীর্তন। কাক ভোরে ক্ষোয়াটে গলার চিৎকারে পথ চলতি লোক, কামার পাড়ার
হাঁপরের দড়ি ছেড়ে হুমড়ে পরে কিছু মানুষ। গৌর ছেলেকে পাঁজাকোলা করে ঘড়ের
মধ্যে ঢোকে। কীর্তন পাথরের মত পা ভাঁজ করে উবু হয়ে বসে থাকে উঠোনের সজনে
গাছের ছড়ি ছিটিয়ে থাকা পাতা-ফুলের মাঝে। অদূরেই শিশিরে ভিজে থাকা খয়েরি
রক্তের উপর জমতে শুরু করেছে ধুলোর আস্তরণ। গুন গুন করে শুরু হয় কামার
পাড়ার গুঞ্জন। সূর্যের আলোয় ভর করে বগল ছেঁড়া সোয়েটার, র্যা পার জড়িয়ে
আসে কীর্তনের মত কিছু রোঁয়া ওঠা প্রাচীনের দল।
-"ওঠ রে কেত্তন। চুপ কইরে থাকিস না রে। বিশে ডাগতার লিয়ে আইসলেই দেইখবি
লাতি ছুইটবে।"
-"হ গো কেত্তন'দা ডবকা লাতি তুমার, বইসে বইসে না ভেইবে উইঠে পর।"
-"বড্ড ভালো গো তুর লাতি, উটতি বয়েসে কাইলকের মত কাইন্ড কইরে থাকে, তা
বলে গৌর বাড়াবাড়ি কইরবে কেনে?"
বাক্যবাণে জর্জরিত কীর্তন বোঝাতে পারে না বা হয়ত বোঝানোর চেষ্টাও করে না।
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে মাটির দিকে। অস্ফুট গলায় বলার চেষ্টা করে, "
শিইল্প, আমি কি ঢাকি..."
বোধের বাইরে কথাগুলো চলে যাওয়াতে কামার পাড়ার কিছু চ্যাঙরা ছেলের দল
ধরাধরি করে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে আসে। আশ্চর্য মানুষ আর তাদের জীবন! কালকের
ঘটনায় প্রায় একঘরে করে দেওয়ার নিদানের পক্ষে একজোট হয়ে গলা চড়িয়েছিল, আর
আজ এক রাতের প্রবাহে নতুন এক উৎসাহে কীর্তন, পালুকে সমবেদনা জানাতে
একবারের জন্য কার্পন্য করতে ভোলে নি। ভুলে যায় নি না দেখা নিশুত রাতের
ঘটে যাওয়া ঘটনায় নানা রঙের পরত চাপাতে।

কিছুদিন ধরেই আকাশটা ঘোলাটে হয়ে থাকতো। আজ সকাল থেকে তামাটে মেঘ কালো করে
শুরু হল অঝোরে বৃষ্টি। শিং নামিয়ে গরুগুলো ডাক ছেড়েছে। কামার পাড়ায় আগুণ
নিভু নিভু। বৈশাখীর মা কোমরে শাড়ির খুঁট খুঁজে ধানিকে মাঠ থেকে আনতে
ছুটেছে। হাওয়ার দাপটে রতন কামারের দাওয়ার প্লাস্টিকের ত্রিপল পাল্লা দিয়ে
কোন মতে টিকে আছে। গৌর কোনমতে ছাতাটা চেপে ধরে বাড়ির কাছে আসতেই ঠুন ঠুন
করে শব্দ। ভ্রূ জোরা কুঁচকে দোরের দিকে কান পাততেই বুঝলো, আওয়াজটা একটু
জোড়াল একঘেয়ে তালে বেজে চলেছে। এ যে ঢাকের বোল!
অনেক দিনের চেনা লয়। ছাতাটা দাওয়ার এক কোনে কোন মতে ফেলে কাদা পা নিয়ে
দরজাটা খুলতেই দেখে ঘড় অন্ধকার, জানলা দিয়ে জোলো হাওয়ার সাথে বৃষ্টির
ছাঁট ঢুকছে। চোখ বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো শব্দের উৎস।
-" বাবা, জেইগে আছ নাকি," কিছুটা অজানা আতঙ্ক মিশ্রিত গলায় ডেকে ওঠে গৌর।
জানলাটা বন্ধ না করে বাপের কাছে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। খাটিয়ার একপাশে
রাখা ছাল ওঠা ঢাকটার উপর টপ টপ করে বিন্দু বিন্দু জল চুঁইয়ে পড়ছে। শব্দটা
ওখান থেকেই উঠে আসছে। ঠিক যেন প্রাচীন সভ্যতার ইতিকথার ধোঁয়াটে নিশীথের
কথা বলে চলেছে। দিচ্ছে অস্তিত্বের প্রমান। শেষ হয়েও না শেষ হওয়া
সংগ্রামের বীরত্বকে। গৌর থমকে থাকে। দেওয়ালের স্যাঁতস্যেঁতে কোনায় বসে
পরে। রুক্ষ চামড়ায় আজ জলীয় বাষ্পের কণা লেগে আছে। ফাটা চামড়ায় আজ শীত
আঁকিবুঁকি কাটছে স্বল্প । তবুও এক সহনশীল খোঁচায় সচকিত হয়ে গৌর তাকায়
কীর্তনের দিকে। কিছু বলতে গিয়ে অজানা কান্নায় কামার জীবনের চোখটা সজল হয়ে
ওঠে। অস্ফুট শব্দে বিড়বির করতে থাকে।
- "বাবা তুর হাইতটা লইরছে রে আবার, পারবিক তু।" শুকনো মাটিতে বৃষ্টির
প্রথম জলকণা প্রথম যে ছন্দের মদিরতা তোলে, তারই যেন অমোঘ ছোঁয়া লেগেছে
কীর্তনের দেহে । সমূল উৎপাটিত বৃক্ষেরও কোন না কোন অংশ লেগে থাকে মাটির
গহ্বরে। দীর্ঘ টানাপড়েনের ইতিহাস লেগে থাকে মানব জীবনে, তার সত্তার কোন
এক প্রহেলিকাময় পটভূমিতে ।
নাতির 'তোরা নাকি শিল্পী, লাচ ভাইলো কইরে' কথাটা যে কতখানি তার শিল্পী
সত্ত্বায় আঘাত হেনেছিল, তা এক উঠতি কিশরের মনে নাও দাগ কাটতে পারে।
কিন্তু, কিছু আপাত বালখিল্য কথা পরিবর্তন করে দেয় মানব জীবনের আলেখ্য।
দোষ পালুকে সত্যি কি দেওয়া উচিত! প্রশ্নটা আপেক্ষিকতার প্রসঙ্গ টানতে
পারে। এটা ঠিক আপেক্ষতার বিচার করতে বসলে অনেক কিছুই জীবনে পাওয়াও যেমন
হয় তেমন, হারাতেও হয় তার বেশী। বেশ ক'টা মাস বিছানায় থেকে কীর্তনের
অবচেতন মনে যে কথা ঘুরপাক খায়, তা এক অজানা রহস্যে আবৃত। সেই সত্য
উদ্ঘাটন করার সামর্থ্য হয়তো কারোরই নেই। তবু বোধ যখন সজাগ হয় তখন সময়
অনেকটা চলে গেলও ফেলে যায় কিছু দাগ। সেই দাগের ভরসায় শুরু হয় বাকী পথ
চলা।
থরথরে করে ঠোঁটটা কেঁপে ওঠে প্রাচীন কামারের শুষ্ক মুখের প্রতিটি বলি
রেখায়। কয়েকবার ঢোঁক গিলে যেন কীর্তন বলতে চায় তার ঘুমন্ত দেশের অনুভুতির
কথা। শীতের কোল ছেড়ে এক ক্ষুদার্ত অজগর যেমন অতি ধীর লয়ে এগিয়ে চলে
খাদ্যের সন্ধানে। কীর্তনের দৃষ্টিও সেই সর্পিল আকারে ঘুড়ে ফিরে দেখতে চায়
কিছু একটা।
_ "পে-লো ক-ই , বা-ই-দ্যি-টা ল-ই-য়ে আ-য় ", শ্যাওলা ধরা বটের কোটরের কোন
এক অতল অন্ধকার থেকে বেরল কীর্তনের ভাঙা ভাঙা স্বর।
প্রথমে বুঝতে অসুবিধা হলেও , ক্ষানিক পরে গৌর বুঝে যায় কথাটা। ক্ষানিক
চুপ করে থেকে শান্ত গলায় বলে, "তু একটু সুইস্থ হইয়ে ওঠ, সব হবেক।"
অকাল বৃষ্টির ছাঁট ঘড়ের এক কোণকে ভিজিয়ে তুলেছে। সব দেখেও ধীর ভাবে
এগিয়ে যায় জানলার কপাটের কাছে। সুক্ষ গুঁড়োর মত জল কণা ভিজিয়ে তুলছে
গৌরের রঙ ওঠা জামাটাকে। আজ খারাপ লাগছে না, বরং বেশী করে আসুক জল ধারা,
ভরিয়ে তুলুক ফুটি ফাটা বক্ষ পিঞ্জরকে। সজীব করে তুলুক খয়েরী হৃদয়ের
প্রতিটি স্পন্দনকে। ভাবের ঘোরটা তা কাটলো একটু পরেই। আকস্মিক ভাবে রঙ ওঠা
আধ খাওয়া দরজার ঠন ঠন করে কড়া নাড়ার শব্দে। একবার নয় –দু'বার নয় বেশ
কয়েকবার, জোড়েই। এবার জানলাটা দ্রুত বন্ধ করে, দরজার দিকে পা চালায় গৌর।
পাল্লাটা খুলতেই আরও এক বিস্ময় তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ল। একটাই শব্দ অতি
কষ্টে বেরোল, "তু...!!"
- "এইখানেই দাঁইড়ে রাইখবি নাকি!" প্রশ্নটা ছুঁড়েই ভিতরে ঢুকে জামার বোতাম
খুলতে থাকে পালু।
জটিল তত্ত্বে ভরা মানব জীবন। তার থেকেও নানা আবরণে ভরা ব্যবহারিক
বৈচিত্র্য। গৌর দরজার দোরেই নিঃস্পন্দের মত দাঁড়িয়ে থাকে। দুটো চোখ
লেপ্টে থাকে পালুর দিকে। বোঝা মুশকিল তার চোখের দৃষ্টি কী আদৌ কোন অর্থ
খুঁজছে! বেশ কিছু মাস ধরেই এই হাল। বয়েসের আগেই আর এক বয়েস যেন তাকে গিলে
ফেলছে ক্রমশ। সেদিনের ঘটনার পর পালুকে নিয়ে নানা চর্চা বেশ কিছুদিন এক
পল্লী জীবনে চায়ের আড্ডা, কামাড়শালা এমনকি রায় বাড়িতে জমে উঠেছিলো। একটু
দুরের গ্রামীন হাসপাতালে কটাদিন পরে থাকতে হয়েছিল পালুকে। অসময়ের যদি কোন
ফুল ফোটে তাহলে তাকে ঘিরে যেমন কথাও হয় ঠিক তেমনি নানা মানুষের অতি
সক্রিয়তাও দেখা যায়।
পালুর ঞ্জান ফিরতেই যে মানুষগুলো বৃদ্ধ কীর্তনকে, গৌরকে নানা ভাবে
সাত্বনা দিয়েছিল তারাই আবার উস্কানির আগুনটা জ্বালাতে কম সাহায্য করে নি।
স্রোতহীন পুকুরে একটা ঢিল যে তরঙ্গ ক্ষনিকের জন্য ওঠে, অনুরূপ ভাবে এক
নতুন উৎসাহে জেগে উঠেছিল কীর্তনের অসম্যের প্রতেবেশীকুল। তবে এটাই
আশ্চর্যের পালুকে পুলিশের কথা যতবারই বলা হয়েছে ততবারই ক্ষীণ স্বরে বাখান
দিয়ে উঠেছিলো।
- "তুরা লিজের ঘড়টাকে সামলা শালো রা..."
স্তম্ভিত হয়ে যায় পালুর এই ব্যবহারিক পরিবর্তনে। বাখান থেকে মা বাপ তুলে
কাঁচা খিস্তিটা নতুন নয়, বরং ডাগর ছেলের মুখে বড় মানানসই। কিন্তু
প্রতিশোধের আগুন এত তাড়াতাড়ি নিভে যাবে এটাই অবাক করার মত!
অবাক হয়েছিল আরও ঠিক দু-একদিন পর, হয়ত আলোচনার রসদ আর মর্ম বানীর শোনানোর
দুই রাস্তা প্রস্তুত করে পালু ঘড়ে আর পা বাড়ায় নি। কীর্তনের চোখ দিয়ে
একটা শুষ্ক জলের রেখা কী যে বলতে চেয়েছিল নিজে কে তা বোঝাই দুঃসাধ্য ।
গৌর পুরপুরি পাথর না হলেও ছেলের দোষের গুণাগুণ হয়ত কিছুটা বিচার করার মত
ক্ষমতাটা অর্জন করেছিল। সাধারণত জীবনে অনেক বড় কিছু হওয়ার পর মানুষের
বোধেরও পরিবর্তন হয়! গৌর কেন তার ব্যতিক্রম হবে?
শাস্ত্র ঞ্জানহীন হতে পারে কীর্তন বা গৌর, তবে, এটা হয়তো বুঝেছিল, পালু
খুব একটা ভুল নয়। সত্যিই, টাকার জন্য তাদের ঢাক বাজাতে হয়। পেটের তাগিদ
বড় তাগিদ! রক্তে ভেসে যাওয়া মন্দির প্রাঙ্গনের সাথে তাদের শিল্পের কোন
যোগই নেই। পাশের পাড়ার জগু, মধো বলেছিল, "দ্যাক গৌর ছেইলটা তোর বইড্ড
পাকা। আরে বাবা ফেইল কড়ি মাকো তেল।"
হরেন খুড়ো মুখ ঝামটা দিয়ে মরা মাছের মত কীর্তনকে বলতেও ছাড়েনি, "সহাগের
লাতি! তা বইলে শিইল্প শিইল্প করে ... পেটে টান পড়লেই সব পাছা দিয়ে বেইড়ে
পইড়ত!"
পালুর আকস্মিক কোথায় চলে যাওয়ার পর খুব একটা খোঁজ নেয় নি কেউই। বেয়াড়া
ছেলের থাকা থেকে না থাকাই ভালো, এই ভাবতে টকটকে লাল লোহার পর বলিষ্ঠ
হাতুড়ির ঘা দিতে দিতে বহুবার ভেবেছে। আর যত ভেবেছে, ততই সেই অবয়বহীন লোহা
কোন ফাঁকে যে কাটারীতে পরিণত হয়েছে খেয়ালই সে করে নি!
খেয়াল যখন এলো তখন দেখে যতটা পাতলা হওয়ার দরকার তার থেকে বেশী পাতলা হয়ে
গেছে। আর কয়েক ঘা দিলে ওটা আর কাটারীই থাকত না। সাঁড়াশি দিয়ে ধরে জলে
ফেলতেই ছ্যান করে গরম ধাতু এক শান্তির নিঃশ্বাস যেন কোন অতল থেকে ছাড়ে।
যেন বলতে চায়, সৃষ্টির মধ্যেও থাকে শৃঙ্খলা, অনুশাসন, তার বাইরে বেরোলেই
সৃষ্টির অবমাননা।
পেটের জন্য সৃষ্টি,না, সৃষ্টির জন্য পেট! আপাত সংসারী মানুষ কীভাবে দেখেন
সেটা তাদের রুচির বিষয়, বাঁচার ও বাঁচানোর তাগিদের বিষয়। পালু হয়ত,
পরোক্ষ স্বার্থ যুক্ত শিল্পী, যার উন্মাদনা সৃষ্টির মধ্যেই সীমিত, আবেগ
বাধাহীন। হাজারো পরস্পর পক্ষ ও বিরোধী কথায় চঞ্চল হয়ে পড়েছিল সেই পুজো
এবং তার পরবর্তী ঘটনা ক্রম। যতই চঞ্চলতা বেড়েছে স্তিমিত হয়েছে তার পিতৃ
মন।

- "হাঁ কইরে কি দেইকছ, দরজাটা দাও কেনে!" পালুর কথায় সম্বিত ফিরে পায় গৌর।
দরজার পাল্লাটা বন্ধ করে গৌর বলে ওঠে, "কুথা থেইকে আসছিস?"
- "ও বড্ড জব্বর বিষয়, কাইল দেইখতে পাবেক, শালো এই 'ফাঁপি'র চোটে লস্ট না
হইয়ে যায়।" সত্যিই এই অকাল পউষে বাদলায় আর 'ফাঁপি'র তান্ডবে জীবন কিছুটা
বিপর্যস্ত। তবে বহুকাল পর এমন হওয়ায় একটু অন্য মেজাজে আছে প্রকৃতি।
প্রকৃতিও তো মানুষের মত। পালুর কথায় সন্দেহটা কেন জানি না আরও দীর্ঘতর
হতে থাকে বাপের মন।
পালু উদ্বেগহীন ভাবে দাদুর কাছে গিয়ে বুড়োর কঠিন কর্কশ গালের চামড়ায় টান
মেরে আদরের সুরে বলে ওঠে, "বুড়ার বইড্ড গোসা, অনেক শুইয়ে লিয়েছিস, কাল
সকালে তুকে লাচাব দেইকে লিছ।"
দাদু আর নাতির বহু পুরনো এক দৃষ্টি বিনিময় হয়। বহুদিনের বীজ যেমন তার
ছোট্ট মাথাটি দিয়ে শক্ত মাটির গালে স্নেহের চুম্বন দিয়ে বলে ওঠে, এবার
আমাকে আলো দেখাও, জেগে ওঠে নতুন অঙ্কুর। কীর্তনের চোখে দেখা দিল সেই নব
কিশলয়ের স্নিগ্ধতা।
ঘড় থেকে পালানোর উদ্দেশ্য ঠিক উদ্দেশ্যমূলক ছিল না। অদ্ভুত একটা বিষণ্ণতা
পালুর মনে দাগ কেটেছিল। হয়ত ওই ঘটনাটা হয়েই পালুর জীবনে কিছুটা হলেও
পরিবর্তন এনেছিল। সে তার রায় বাড়ীর ঘটনার উপর কোন কারনেই অনুতপ্ত নয়। মনে
মনে সে আজও তা স্বীকার করে। নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা ধর্মের নামে! ঠিকই করেছে।
কিন্তু অন্তরে দাগ কেটেছে তার দাদুকে কথাটা বলার পর। যদিও সে কতটা বুঝে
বলেছে তা সে নিজেও জানে না।
যতবার পালু নিজের সাথে নিজে কথা বলেছে ততবার অনুভব করতে পেরেছে সেই
কথাটার তাৎপর্য। এটা বুঝেছে, অশতিপর ওই বুড়ো তাকে, তার পরিবারকে নিরন্তর
ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিলো ঢাকের জোরেই । আজ ওই বাদ্দ্যিটা যদি না জানত তার
অশিক্ষিত দাদু তাহলে কেমন জীবনযাত্রা হত! সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
শিল্পের জন্য সাধনা, না বাঁচবার জন্য শেখা! এই জটিল তত্ত্ব বোধ করি কেউই
ভাবে না, কীর্তনও ভাবে নি। বাপের ধারাকে বজায় রেখে তার আগামী প্রজন্মকে
এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, এই সরল অঙ্কে হয়ত ছিল তার জগত। তবে কীর্তন ভালবেসেছিল।
শহরে কিছুকাল কুলিগিরি করে বুঝেছে, জীবনে বাস্তবের দৈর্ঘ্যটা বড্ড রকম
বেশী। তাও কামারের কাঠিন্য পালু ভোলে কী করে, এ যে তার অস্তিত্ব! কিছু
টাকা কোনমতে রোজগার করে সে ফিরে এসেছে তার গ্রামে। কী ভাবে কোন পথে
রোজগার করল, সেটা না হয় নাই জানলাম।

পরের দিন সকালে বাদলা কমে গেছে। ফাটা ঠোঁটের মত জমি সমস্ত নির্যাস সংগ্রহ
করে কিছুটা প্রশান্ত। পালু ভোর থেকেই কোদাল হাতে গ্রামের পাঁচটা ছেলের
সাথে ভিজে আগাছা গুলো পরিস্কার করে যেন বলতে চাইছে, সকল মলিনতা ভুলে আবার
তৈরী হোক নতুন জমি।
- "কে পালু নাকি? কবে এলি বাপ", মুরুব্বি গোছের এক বুড়ো পালুকে জিজ্ঞাসা করে উঠল।
- " ও দাদু, এয়েচি কাল গো। আজ এস বাদ্দ্যি শোনাব," পালু হাঁসতে হাঁসতে জবাব দিল।
বেলা যত গড়ায়। ভগ্ন শীতের সকাল একটু তার পরিধিও বিস্তার করে। বেলা একটু
বেড়েছে। তবে, আজ গ্রামে যেন অকাল উৎসব লেগেছে। গ্রাম্য জীবনে খুশীর
প্রলেপ। সাঁঝ বেলায় শাঁখের ফুঁ দেওয়ার পর বারয়ারি তলায় আসর জমানোর জন্য
বাউল গানের আসর বসবে।
পালু গ্রামে ফেরার পথে কিছু টাকা দিয়ে এসব কান্ড করে আসে।
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর পর, যে যার মত বেড়িয়ে এসে জমতে থাকে অনুষ্ঠানের
জায়গায়। শীতের প্রাবল্য না কমায় মা তার বাচ্চাকে বেশ খানিকটা পুরনো উলের
সোয়েটার চাপিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ এই অত্যাচারের আতিশয্যে শিশু প্রবল চীৎকারে
প্রতিবাদ জানিয়ে উঠলেও আসর ছাড়া যাবে না। এমন সুজোগ সীমিত কামার ও
গ্রাম্য কুলে কমই পাওয়া যায়।
- "চল বুড়া আইজ দেইখবি তোর পেলো কেমন লাচায়," পাজাকলা করে পালু কীর্তনকে
তুলে আনে। মঞ্চের পাশে খাটিয়ায় শুইয়ে দেয়।
ক্রমে রাতের সাথে সাথে বাড়ছে লোক, বাড়ছে হ্যজাকের আলোর তীব্রতা। বাউল
গানের পর পালু তার বন্ধু জছোনের বাড়ী থেকে নিয়ে এলো লাল শালুতে মোড়ানো
ঢাক।
চমকে ওঠে গৌর। ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে তাকায় কীর্তন। মাথায় তার জমে থাকা
ধোঁয়ার মত কুন্ডলীকৃত চিন্তা যেন বেড়িয়ে আসতে চায়। ঢাকটা পালু কাছে নিয়ে
যেতেই প্রাচীন বদ্ধ দরজার মত ঠোঁট দুটি কেঁপে ওঠে তির তির করে।
- "দ্যাক, এিটা কে বইলে চাদর, কেমন শইব্দ হয় দ্যাক কেনে," বলেই
প্লাস্টিকের শক্ত কাঠি নিয়ে নতুন পাতলা ফাইবারে মোড়ানো ঢাকে কাঠি দিয়ে
বাজাতে থাকে পালু।
গম গম করে ওঠে চারি দিক। চামড়ার ঢাকের বদলে নতুন সাজে ঢাক। দিব্ব্যি সুরও
তোলে। বাজিয়ে চলেছে পালু। এক উন্মাদনা যেন তার আজ প্রতিটি রন্ধ্রে
আবর্তিত হতে থাকে। কার তাগিদ, কীসের জন্য তার এই প্রচেষ্ট!
বেশ খানিকক্ষণ বাজানোর পর থামে পালু। শীতের রাতেও দরদরিয়ে ঘাম ছুটে
চলেছে। ঝাঁকড়া চুল মুখের সামনে থেকে তুলে বুড়োর কাছে মুখটা নামিয়ে বলে, "
বইল্লি না তো কেমন হল!"
মানব জীবনে প্রত্যাবর্তন নানা ভাবে আসতে পারে। এটা নয় যে জীবন কাওকে
সুজোগ দেয় না। এটা নয় মৃত্যু দোরগোড়াতে দাঁড়িয়ে আছে বলে আরও একবার আশা
দেখবে না।
কীর্তনও পেয়েছিল। দীর্ঘ খরা কাটানোর পর সেই প্রথম বৃষ্টির মত। নিশ্চুপ সে
বহুকাল ধরেই। আজ যেন সে আরও নিশ্তব্ধ। তবুও বৃদ্ধের জীর্ণ হাত আস্তে
আস্তে উঠলো। মুখে একটা আবেদন। পালু এগিয়ে দিল নতুন ঢাকের নতুন কাঠি।
- "বাজা বুড়া, এইবার বাজা," একটু ঝুঁকে জড়ালো ভাবে দাবী জানিয়ে পালু বলে উঠলো।
কামার পাড়া অবাক। অবাক গৌরও। কামারের কঠোর চোখে আজ যেন জমাট জল। ছেলের
কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখল, কীর্তনের হাতে কাঠিটি ধরা। পালু ঢাক এগিয়ে দিল।
ক্ষীণ শব্দ উঠলো অশতিপর বৃদ্ধের হাত দিয়ে , ধিন ধিন ধিন...।


মাঝ সমুদ্রে যে জাহাজটা চলছিল। নাবিক দূরবীনটা চোখে দেয়।
যাত্রীরা নামার জন্য ব্যস্ত। এখন শুধু স্থির হাতে হুইল ধরে রেখে ধীরে
লাগাতে হবে জাহাজ বন্দরে।।

………………xxxxxxxxxxxxxx…………………



লেখক – পবিত্র চক্রবর্তী
সেক্টার ২এ, বিধান নগর
দুর্গাপুর- -৭১৩২১২
জেলাঃ—পশ্চিম বর্ধমান

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...