Skip to main content

গল্প ।। পাতাল প্রবেশ ।। আলাপান রায় চৌধুরী


ব্রেকফাস্ট টেবিলে সত্য আর সিম্মি একসাথে হল সেদিন সকালে। সিম্মি লেন্স পরে ছিল না। ওর প্রাকৃতিক ক'টা চোখের চাহনির মধ্যে কীরম একটা আচ্ছন্ন ভাব ছিল! সত্য সেটা খেয়াল করেনি- হয়তো এটা ভেবে যে ঘুমের ঘোর কাটেনি সিম্মির।

তবে সিম্মি মুখ খুলতেই পরিষ্কার হল ব্যাপারটা। ও বলল, 'জানো, কাল রাতে পেড়-ওয়ালে বাবা মেরে সাপ্নে মে আয়ে থে!'

সত্য অবাক হয়ে খাবারের থেকে নজর সরিয়ে বলল, 'বলো কী! আমিও তো ওনাকে দেখলাম স্বপ্নে!'

সিম্মি এবার চমকে উঠে যেন সজাগ হল। তারপর বলল, 'সাচ?'

'মুচ!'

'স্বপ্নের মধ্যে উনি বললেন, খুব শীঘ্রই দেখা হবে আবার।'

'আশ্চর্য ব্যাপার তো! আমিও তো একই স্বপ্ন দেখেছি।'

সিম্মি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শুধু।

সিম্মির ক'টা চোখের দিকে তাকিয়ে সত্য বলল, 'আচ্ছা কখন দেখলে কিছু বুঝতে পারলে?'

'ভোরবেলা মনে হয়।'

'আমিও হয়তো ভোরেই দেখেছি।'

'আচ্ছা?'

'কথায় বলে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়!'

'ওটা তো কথার কথা।'

'একদমই। কিন্তু আমরা দু-জনে মোটামুটি একই সময় একই স্বপ্ন দেখলাম কেন?'

সিম্মি ঠোঁট উলটে না জানার ভঙ্গি করল।

'শুনেছি গ্যাস হলে মৃত লোকের স্বপ্ন দেখে লোকে। হোমিওপ্যাথিতে সিম্পটম নেওয়ার সময়ও ডাক্তারদের পেশেন্টকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি।'

'কী? মৃত লোকের স্বপ্ন আসে কিনা?'

'হ্যাঁ।'

'আত্মা স্বপ্নের মধ্যে ঢুকতে পারে তো!'

'হ্যাঁ, পারে বলে শুনেছি। আর স্বপ্নতে আমরা যে অজান্তেই অ্যাস্ট্রাল প্রজেকশন করছি না, তা কে জানে!'

'অল্টারনেট রিয়ালিটির ঝলকও হতে পারে তো স্বপ্ন?'

'ইয়াপ্‌, ওই থিয়োরিটাও বাজারে আছে।'

এইসব কথা হতে-হতেই হঠাৎ সবজিওয়ালার গলা শোনা গেল। রোজকার মতো সবজির ঠেলা-গাড়ি নিয়ে হাজির সবজিওয়ালা বিকাশ। সিম্মি উঠে বাইরে যাচ্ছিল। সত্য বলল, 'উঁহু, লেন্স ছাড়া বাইরে যেও না।'

'ওহ ইয়েস্‌, থ্যাংকস্‌! খেয়াল ছিল না।'

'আমি যাচ্ছি, দাঁড়াও।'

সত্য সবজি কিনে ফিরে আসার ফাঁকে সিম্মি ব্রেকফাস্টটা সেরে ফেলল। আজ মর্নিং রান-এ যাবে না ও। পরে যোগ-ব্যায়াম করবে।

সত্য সবজি নিয়ে ডাইনিং স্পেসে ঢুকে সেগুলো রেখে কয়েকটা টাকার নোট আলোয় মেলে ধরে ভাল করে দেখল। সিম্মি সেই সময়টা সত্যকে লক্ষ্য করছিল।

এরপর সত্য বলল, 'নতুন কাজ এসে গেছে, বুঝলে! কিন্তু আমি একা যাব এবার। তুমি এদিকের কাজ মিটিয়ে কলকাতা যেতে পারো।'

'কিন্তু কাজটা কী শুনি?'

সত্য কাজটা বলায় সিম্মি বলল, 'আমার মনে হয়, আমার তোমার সাথে যাওয়াটা উচিত।'

সত্য বলল, 'কিন্তু ওপরওয়ালার হুকুম। কিছু করার নেই!'

'ঠিক আছে। আমি এদিকের কাজ শেষ করে চলে আসব–বাই চান্স যদি দরকার হয়। কলকাতা যাব না।'

'ঠিক আছে। একটা টেন্টেটিভ ডেট ঠিক করে নিচ্ছি যেদিন কোনও একটা পয়েন্টে আমরা মিট করব। স্টাডিতে এসো।'

সেদিন আবার ওদের দুজনের আলোচনা শুরু হল। সত্য বলল, 'লাদাখে অসুর!'

'ক্যায়া?'

'হুম্‌, লাদাখে অসুর দেখা গেছে বলে দাবি, পাদুম বলে একটা জায়গার কাছের পাহাড়ে। অন্তত বর্ণনা থেকে তো তাই মনে হল–অসুরের মতো কিছু বা কেউ, অথবা অসুরই। সেই হর্নড্‌ হেলমেট...'

'হর্নড্‌ হেলমেট?'

'হ্যাঁ, মানে হেলমেটের ওপরে সিং, প্রাচীনকালের মতো!'

'ওহ ইয়েস, পৌরাণিক সিরিয়ালে দেখেছি!'

'সেই সবকিছু। সেই জন্য আমাদের ডাক পড়েছে। আর যতদূর মনে পড়ছে এই ধরণের হেলমেট অতীতে বিভিন্ন উপজাতি ব্যবস্থার করতো- হয়তো আজও করছে!'

'ওখানেও কি পুরো একটা গ্রুপ?'

'তা তো জানা যায়নি। ওটা তো আমাদের জানতে হবে। আপাতত একটাই স্পটেড হয়েছে।'

'আচ্ছা!' সিম্মি একটু ভেবে বলল, 'লাদাখ তো তিব্বতের পাশেই।'

'আর তিব্বত মানেই অসুর।'

'সেটা কেন?'

'জুলস ভার্ন-এর ওই লেখাটার কথা শুনেছ? ওই যে, "আ জার্নি টু দ্য সেন্টার অফ্‌ দ্য আর্থ"?'

'তুমি আগর্ত ইম্প্লাই করছ?'

'ইয়েপ্‌! আগর্ত– তিব্বতের মাটির তলায় অসুরদের একটা আলাদা জগত! সে জন্যই ভাবছি যে এই অসু ওই আগর্তর বাসিন্দা কিনা– যদি আগর্ত বলে আদৌ কিছু থেকে থাকে তো!'

'এই ধারণাটা কীভাবে আর কেন জন্মাল?'

'এত গভীরে আমি যাইনি গো।'

'আচ্ছা হলো আর্থ থিয়োরির সাথে কি এটা সম্পর্কিত?'

'সেটাও ঠিক বলতে পারব না। তবে হতেই পারে– দুটোর মধ্যে খুব মিল। মাটির তলায় একটা জগৎ!'

'ক্রাস্ট-এর তলায় একটা সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবী– যার সাথে আমাদের পৃথিবীর কোনও সম্পর্ক নেই! হলো আর্থ থিয়োরি তো জুলস ভার্ন-এর গল্পের কথাটাই বলছে।'

'আর সেই পৃথিবীর ভেতরের পৃথিবীতে নাকি একটা নিজস্ব সূর্যও আছে, নিজস্ব বাস্তুতন্ত্রও আছে সেখানকার, প্রাণীকুলও আছে।'

'বাস্তু হোয়াট? কী বললে?'

'ইকোসিস্টেম! আর আমাদের পৃথিবী বা ক্রাস্ট-এর বিভিন্ন জায়গা আছে যেখান দিয়ে সেখানে পৌঁছানো যায়। যেমন মেরু অঞ্চলগুলো।'

'মেরু অঞ্চল মিন্‌স? মেরু পর্বত?'

'না না, ওটা তো সম্ভবত ইন্ডিয়ার ওপরের পামির পর্বত। প্রাচীন ভারতের অংশ ছিল ওটা, যতদূর জানি– মানে যাকে এখন গ্রেটার ইন্ডিয়া বলে আর কী।'

'ওহ, আই সি। আমার মা-দের দেশের বাড়ি যেখানে ছিল সেখান থেকে পামির পর্বত দূরে নয়। গল্প শুনেছি আমি নানির কাছে।'

'ওহ হ্যাঁ, পেশওয়ারের কাছে ছিল তো তোমার আসল মামার বাড়ি।'

'হ্যাঁ। পেশওয়ারের উত্তর দিকের পাহাড়ে।'

'আগে নর্থ-ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স বলত– দেশভাগের আগে।'

'হুম্‌ হুম্‌। এখন খাইবার পাখতুনখয়া বলে ওই অঞ্চলকে।'

'কাশ্মীরও তো কাছেই তাহলে ওখান থেকে।'

'হাঁ, একদম পাশেই।'

'আচ্ছা, হ্যাঁ, তো যেটা বলছিলাম, মেরু অঞ্চল বলতে নর্থ পোল, সাউথ পোল।'

'আচ্ছা আচ্ছা! মেরু অঞ্চল আর মেরু পর্বত সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস তাহলে।'

'এই হলো আর্থ-এর ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, তাহলে হিমালয়েও কি এরম কোনও বটমলেস্‌ পিট আছে যেখান দিয়ে পাতালে পৌঁছানো যায়?'

'তবে এই আগর্ত মিথ-এও কেভ সিস্টেমের উল্লেখ আছে না?'

'হ্যাঁ, কেভ নেটওয়ার্ক বা গুহার সারি তো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেছে মাটির নিচে।'

'আবার কোথাও-কোথাও পাথরের, মানে পাহাড়ের ভেতরেও।'

'মাটির তলায় সারি-সারি গুহা আর সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গের ছড়াছড়ি। সুড়ঙ্গ-শহর বললেও ভুল হবে না কিছু-কিছু ক্ষেত্রে। 'ডেরিন্‌কুয়ু', এই সেই, আগেও এই নিয়ে আলোচনা আর কাজ করেছি আমরা দু-জনে– সৌরাষ্ট্রের কেস্‌টায়।'

'হিমালয়ে তো বৌদ্ধ গুহা, গুম্ফা-টুম্ফাও আছে।'

'হিমালয়ের ব্যাপারে তো নিশ্চিত ভাবে কিছু বলাও যায় না! এখানে যে কী থাকতে পারে আর না থাকতে পারে...'

'কেঁচো খুঁড়তে কেউটে না কী বলে না বাংলায়? সেই ব্যাপারটা আর কী!'

'আর হিমালয়ে কী পাওয়া যেতে পারে আর না পারে...'

'তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই!'

'আই এগ্রি। সেই জন্যই আমরা এত কাজ পাই অবশ্য।'

এই বলে সত্য সিম্মির দিকে তাকিয়ে চোখ মারল, আর সিম্মি তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা বাঁকা হাসি হাসল। তারপর সত্য বলল, 'প্রশ্ন হল, তিব্বতের আগর্তও কি আসলে জাস্ট একটা কেভ সিস্টেম?'

'আর সেটা পুরোটাই বা তার একটা অংশ আমাদের আজকের দিনের লাদাখে আছে কিনা!'

'এর কতটা বাস্তব, আর কতটা বাড়িয়ে বলা, তাও তো জানা নেই আমাদের।'

'আর ওই লাদাখি অসুর– সে যদি..., র‍্যাদার তারা যদি সত্যি হয়, তাহলে তারাই বা কারা?'

'কোনও কেভ সিস্টেম, মানে ওই গুহার সারি থেকে থাকলে, সেখানে কি কোনও রিমোট ট্রাইব বসবাস করে?'

'বা 'ফেরাল পিপ্‌ল'– যারা মূল স্রোতের মানব সভ্যতার থেকে অনেক দূরে, আলাদা হয়ে থাকে।'

'তোমার এটা কেন মনে হল যে লাদাখের অসুররা 'ফেরাল' হতে পারে? পাঠানকোটের অসুররা তো সবার সাথে মিলেমিশেই থাকত। কেউ জানতোও না!'

'বিস্তীর্ণ ধূসর মরুভূমি; পপুলেশন ডেন্সিটিও কম। এরম জায়গাই তো 'ফেরাল' লোকজনের লুকিয়ে থাকার পক্ষে আদর্শ!'

'বাত তো সাহি হ্যায়! তবে পাঠানকোটের মতো যদি এদের একটা পুরো গোষ্ঠী থেকে থাকে লাদাখে বা অন্য কোনও জায়গায়, তাহলে তাদের 'ফেরাল' বলা চলে কি? একটা গোটা উপজাতি মানে সেখানে সবাই মানুষের সংস্পর্শেই রয়েছে; আমরা যাকে 'সভ্যতা' বলে জানি তার থেকে দূরে থাকলেও মানুষের ছোঁওয়া বা উপস্থিতি থেকে দূরে নয় তারা।'

'সেক্ষেত্রে তো তারা আনকন্টাক্টেড ট্রাইব। এরম উপজাতি তো অ্যামাজনের জঙ্গলে, তারপর সেন্টিনেল দ্বীপে- এসব জায়গায় আছেই, যাদের বাইরের পৃথিবীর সাথে কোনও সম্পর্কই নেই।'

'হ্যাঁ, আর সম্পর্ক তৈরি হোক, সেটাও তারা চায় না। তারা প্রকৃতির কোলেই খুশি। একদিক দিয়ে ভাল। মানিকবাবুর আগন্তুক ছবিটা মনে পড়ে গেল!'

'হোয়াট ওয়াস দ্যাট? দ্য লাস্ট পার্ট!'

'আ মুভি বাই দ্য গ্রেট রে হুজ্‌ নেমসেক্‌ আই অ্যাম। নেভার মাইন্ড!'

'ওহ, ওকে!' বলে সিম্মি মুচকি হাসল। তারপর আবার বলে চলল, 'আর একটা ব্যাপার। শোনা যায় যে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমেরিকান আর্মি একটা গুহাতে এক দৈত্যের সম্মুখীন হয়– মানে দৈত্য বা দৈত্যাকার মানুষ। সেই দৈত্যও তো 'ফেরাল' অসুর হতে পারে'

''ফেরাল', গুহা- নিবাসী অসুর! যা রটে তার কিছুটা তো সত্যি বটে!'

'এই ক্লাসিফায়েড খবরটা মনে হয় লিক হয়ে গেছিল। গোপন রাখা যায়নি!'

'আর আর্মির লোকেরা ঢপ মারবে বলে মনে হয়না!'

'ইচ্ছা করে মিথ্যে বা ভুল বলবে বলেও মনে হয়না..., এক যদি নেশা করে না থাকে'

'বা ভুল না দেখে থাকে। আর মিথ্যে বলেই বা কি লাভ?'

'এক্ষেত্রে মিথ্যে বলার তো কোনো কারণ নেই!'

'কে বলতে পারে? উম্মম, এরম একটা থিয়োরি আছে কিন্তু বাজারে।'

'কীরম থিয়োরি?'

'ওই, যে প্রকৃতির রোষের শিকার হয়ে দশরাজন যুদ্ধে হারার পর কিছু অসুর আফগানিস্তানের উত্তর অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেয়– সেখানে এক নতুন রাজত্বও স্থাপন করে। তারাই পরবর্তীকালে ইরান আর পশ্চিম এশিয়ার অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।'

'আই সি! উম্‌, ইন্টারেস্টিং!'

'একটা ব্যাপার ঠিক যে সেদিনের সেই অসুরদের সাথে আজকের কান্দাহার অঞ্চলের এই দৈত্যের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা না জানতে পারলে শুধু অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়াই সার হবে। আর এমনিতেও কান্দাহার আফগানিস্তানের উত্তরভাগেও অবস্থিত নয়।'

'যাক্‌ গে, ওই কান্দাহার জায়েন্ট-এর কেস্‌টা অন্তত আমাদের হাতের বাইরে। তাই ভেবে লাভ নেই।'

'হুম্‌ হুম্‌, কাজে ফেরা যাক।'

লাদাখের যেখানে যেতে হবে সেই জায়গাটা কিছুক্ষণ স্টাডি করে সত্য বলল, 'জম্মু আর হিমাচলের ঠিক ওপারে লাদাখের জান্সকার অঞ্চল। পাদুম টাউনটা হল জেলা হেডকোয়ার্টার টাইপের ওই অঞ্চলের। ওর আশেপাশে থেকে অপারেট করতে হবে আমায়।'

সিম্মি সেই ফাঁকে যাওয়ার রুটটা দেখে নিয়েছে। ও বলল, 'ওখানে হোটেল বা হোম-স্টে তো কমই হবে। তবে ঠিক জায়গাটা লোকেট করতে পারলে হয়তো জেলা হেডকোয়ার্টার থেকে আর একটু দূরে গিয়ে থাকতে পারবে–লোকজনের থেকে একটু দূরে।'

'ওখানকার পপুলেশন ডেন্সিটি কম তো ইন্ডিয়ার অন্য জায়গার তুলনায়। তাই ওখানকার হেডকোয়ার্টারেও লোকজন গড়ে কমই হবে ইন্ডিয়ার অন্য জেলা হেডকোয়ার্টারগুলোর তুলনায়।'

'আচ্ছা মিডিয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে পারলে?'

'মানে কেস্‌টার মিডিয়া কভারেজ হয়েছে কিনা?'

'ইয়াপ্‌!'

'না না, এটা গোপন সূত্রে পাওয়া খবর– অসমর্থিত সূত্র অবশ্য। তবে ওপরওয়ালারা নিশ্চিত হতে চায়।'

'মানে যেতে পড়সি দেশগুলোর নতুন কোনও অতর্কিত আক্রমণের ভয় না থাকে!'

'হুম্‌, আর অসুর না এলিয়েন, না অন্য কোনও কিছু, সেটাও জানাটা দরকার, মিডিয়া এখনও গন্ধ পায়নি এটার।'

'বাই দ্য ওয়ে, আমি রুটটা দেখলাম। মানালি হয়ে যেতে পারবে তুমি। তারপর লেহ্‌ হয়ে জান্সকার। অ্যান্ড আই উইল ফলো ইউ।'

'বাহ! যে খবরটা দিয়েছে সে আমাদেরই একজন। তার সাথে লেহ্‌-তে দেখা করে নেব আমি পাদুম যাওয়ার পথেই।'

'আমরা পাঠানকোটে থাকলে অবশ্য আরও সহজে পৌঁছনো যেত। এনিওয়ে, তোমার মিনিমাম দেড়-দুদিন লাগবেই, চণ্ডীগড় আর মানালিতে নাইট-স্টেও করতে হবে লেহ্‌-এর পথে রওনা হওয়ার আগে। ওখান থেকে দুটো রুট–একটা কার্গিল হয়ে, আর একটা লিংশেড হয়ে। লিংশেডটাই শর্ট হবে।'

'কী কী জিনিস লাগবে তার একটা লিস্ট বানিয়ে নেব আজ দু-জনে মিলে ভেবেচিন্তে।'

'ভাল কথা, আমি তোমার সাথে কতদিন বাদে মিট করব?'

'তুমি ওই কাজ শেষ হলেই চলে এসো।'

'আরে তাও একটা ডেট আর টাইম তো বলো।'

'হ্যাঁ, তোমার ক'দিন লাগবে মোটামুটি?'

'ই অ্যারাউন্ড ১.৫ উইক্স।'

'তাহলে আমি যেদিন বেরব সেদিন থেকে ১৫ দিন বাদে মিট করবে। তার আগে কাজ শেষ হয়ে গেলে আমি বার্তা পাঠিয়ে দেব; লোকেশন চেঞ্জ হলেও জানাব। নয়তো পাদুমেই মিট করব, বুঝলে।'

তারপর সত্যর কী মনে হতে গুহা নিয়ে ইন্টারনেটে একটু পড়াশুনা করল কিছুক্ষণ। তারপর সিম্মিকে ও বলল, 'ভিয়েতনাম-এর হাং সন ডুং গুহার ব্যাপারে পড়লাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা– যার ভেতরে নদী, জঙ্গল, মেঘ-টেঘ সবই আছে; আছে তার নিজস্ব আবহাওয়াও। অদ্ভুত! তাই না?'

'বাব্বা! এরম জায়গায় তো কোনও ট্রাইব অনায়াসে থাকতে পারে।'

'তুমি এইরম কোনও গুহায় কখনও গেছ নাকি?'

'না না, নট ইয়েট!'

'ওখানে ক্যাম্প করলে দারুন লাগবে কিন্তু!'

'তা লাগবে, তবে...'

'তবে কি?'

'একটা কথা মনে করার চেষ্টা করছিলাম।'

'ইয়েঃ, আমার মনে পড়লো- এটাই কি সেই গুহা যেখানে লিজার্ড ম্যান দেখা যায় বলে শোনা যায়?'

'ইয়েস! এটাই ভাবছিলাম আমি- আমার ভাষা-ভাষা মনে পড়ছিল- নামটা খুব চেনা-চেনা লাগছিল!'

'হাং সন ডুং হলো লিজার্ড ম্যানের গুহা- আমার মনে পড়ে গেল।'

'ভাগ্গিস মনে পড়লো! আমি মনে না করতে পারলে আজ সারাদিন ওটাই মাথায় ঘুরতো।'

এই কথায় ওরা দু-জনেই একটু হাসলো; তারপর সত্য হালকা গম্ভীর হয়ে বলল, 'এ ভিয়েতনামে গিরগিটি মানবের কিংবদন্তির আড়ালেও কোনো হারানো বা অনাবিষ্কৃত উপজাতির বাস্তব অস্তিত্ব থাকতেই পারে।'

'আবার কোনো ক্রিপটিডও হতে পারে।'

সত্য মাথা নাড়লো

সিম্মি বলল, 'এই বিদেশী ক্রিপটিডের কেসগুলো যে কবে পাব আমরা!'

'আমার খুব ইচ্ছা অন্তত কিছু বিদেশী মিস্টরি নিয়েও কাজ করার! সুযোগ আসবে আশা করি। যাইহোক...'

'ভিয়েতনামের এই গুহার মতো রকমই কোনও গুহার গল্পই কালক্রমে আগর্তর উপাখ্যানে পরিণত হয়নি তো?'

'আগে দেখা তো যাক যে কেস্‌ মে দম্‌ হ্যায় কি নাহি! পাঠানকোটের মতো পাদুমেও অসুর আছে নাকি!'

'হা হা, হ্যাঁ হ্যাঁ!'

'আমার মনে হয় তোমার জি.পি.আর. বা এল.আই.ডি.এ.আর. নিয়ে যাওয়া উচিত। অন্তত এল.আই.ডি.এ.আর-টা।'

'কোনও 'ফেরাল' ব্যক্তি হোক বা আনকন্ট্যাক্টেড বা মূল স্রোতে থেকে বিচ্ছিন্ন ট্রাইবের সদস্য, সে বা তারা যে মাটির তলায়ই থাকবে তারও তো মানে নেই। তাই...'

'আর তাছাড়া এটাও ঠিক যে আর্মি চেক-পোস্টে প্রব্‌লেম হতে পারে; পুলিশ বা অন্য লোকজনেরও সন্দেহ হতে পারে জি.পি.আর. বা এল.আই.ডি.এ.আর. নিয়ে গেলে। জিনিসটা বাজেয়াপ্ত হয়ে গেলে আরও কেস্‌!'

'রাইট ইউ আর, বেবি!'

সিম্মি একটু হাসল। সত্য বলে চলল, 'এটা এমন একটা জায়গা যেখানে আউট অফ্‌ দ্য অর্ডিনারি কিছু নিয়ে যাওয়া যাবে না– গেলেই সন্দেহ হবে! তাই আগে এটুকু বুঝেনি যে কেস্‌টায় আদৌ দম্‌ আছে কিনা!'

সিম্মি হাসিমুখে বলল, 'সেবার নর্থ বিহারে মনে আছে?'

'হা হা হা, ইন্ডিয়ান আর্মির স্নাইপার যে আমাদের শুট্‌ করেনি এই ভাগ্যি!'

'অ্যারেস্ট বা ইন্টারোগেশন অবধিও ব্যাপারটা গড়াতেই পারত।'

'সেই, সে আর বলতে! যা আমরা করতে চাই না সেটাই করতে হত সেক্ষেত্রে– আত্মপ্রকাশ!'

'এক্সপ্লোরার-এর ছদ্মবেশটা আমাদের ফেভার করে সবসময়, লল!'

পরের দিন সত্য হেডকোয়ার্টারে গেল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য সত্য সেন্ট্রাল ডাটাবেস-টাও একবার ঘেঁটে দেখে নিলো- যদি সেখান থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তারপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এল সেদিনই। তারপরের দিন ভোরবেলা সিম্মি ওর গালে চুমু খেয়ে বিদায় জানাল সত্যকে–ও নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ল। সাথে রয়েছে মাউন্টেন সিকনেস্‌-এর জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর অক্সিজেন। যেহেতু অনেকটা পথ আর একা ড্রাইভার, তাই উত্তরাখণ্ডের চমোলি থেকে যাত্রা শুরু করে মাঝে-মাঝে থেমে এগোতে থাকল ও। পথ চলতে-চলতে পাল্টাতে থাকে ভূপ্রকৃতি ও তার সৌন্দর্য! সন্ধ্যায় চণ্ডীগড় পৌঁছে শহরের কাছে একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার বেরিয়ে পড়ল সত্য। লাদাখ এলাকায় ঢোকার পর গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ সেখানকার অপার্থিব শোভা উপভোগ করে নিল ও– অবশ্য পুরো যাত্রাপথেই ও যখনই থেমেছে চারিদিকের ভিউটা উপভোগ করতে ভোলেনি। তারপর আবার স্বচ্ছ নীল আকাশের তলায় কত রুক্ষ-শুষ্ক উপত্যকা পেরিয়ে এগোনো শুরু করল সত্য। সেদিন রাতটা তার কাটল লাদাখের প্রাণকেন্দ্র লেহ্‌ শহরে। যার কথায় এতদূর আসা, রাতে হোটেলের কাছে একটা ক্যাফেতে দেখা করতে এল সেই লোকটি। সে বলল যে পাদুমে আর তার আশেপাশের এলাকায় অসুর দেখা যাওয়ার ব্যাপারটা ওখানে কানাঘুষো শোনা গেছে। তার থেকে যেখানে অসুর দেখা গেছে তার এক্স্যাক্ট লোকেশনটা জেনে নিল । পরের দিন রাস্তা খারাপ থাকার ফলে লিংশেড গ্রামে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল ওর; তাই সেখানে পৌঁছে রাতটা একটা হোম-স্টেতে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় সত্য।

পরদিন সকালে বেরিয়ে পাদুম পৌঁছে যায় ও– রাস্তা খারাপ থাকার ফলে আবারও হিসাবের তুলনায় বেশি সময় লাগল, আর খেতে হল খারাপ রাস্তার ধুলোও। সেদিন হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে অন্ধকার হওয়ার আগে সত্য হাইওয়ে দিয়ে সেই জায়গাটা দেখতে গেল যেখানে, আর যার আশেপাশে, ওকে অনুসন্ধান চালাতে হবে। জায়গাটা পাহাড়ে হলেও হাইওয়ের ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেখান থেকেই বাইনোকুলার দিয়ে ভাল করে চারিদিকটা সময় নিয়ে নিরীক্ষণ করল সত্য। পরদিন সকালে ওখান দিয়ে যে ট্রেকিং রুটটা গেছে সেটা ধরে সেখানে পৌঁছাবে ও। এটাই প্ল্যান!

যেখানে তথাকথিত অসুর দেখা গেছিল বলে খবর, সেই জায়গাটা লেহ্‌-তে থাকাকালীনই ম্যাপে দাগিয়ে নিয়েছিল সত্য। কয়েকটা ট্রেকিং রুট ঠিক করে নিল সত্য, আর সেই অনুযায়ী খোঁজও শুরু করে দিল হাইকার-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েই। প্রতিদিন সাথে থাকছে অক্সিজেন, ওষুধ, আর অবশ্যই জল আর খাবার।

আট দিন কেটে গেল, কিছুই পাওয়া যায়নি। হোটেল ছেড়ে একটা হোম-স্টেতে এসে উঠেছে ও। অবশেষে নবম দিনে শিকে ছিঁড়ল! একটা নাম-না-জানা পাহাড়ি ঝর্ণার আশেপাশের কয়েকটা খাঁজ পরীক্ষা করতে-করতে একটা ফাটলে চোখ পড়ল র। একটু চেষ্টা করে ও দেখল যে একজন মানুষ গলে যেতে পারবে কষ্ট করে হলেও। ফাটলটা এমনভাবে রয়েছে যে কেউ খুব ভাল করে না খুঁজলে জানতেই পারবে না যে এখানে এই ফাটলটা রয়েছে! একা বেশিদূর এগোতে চায় না ও; গুজরাটের সৌরাষ্ট্রে সেবার কী হয়েছিল সেটাও ওর মনে আছে। কিন্তু তবুও কৌতূহল থেকে যতদূর পর্যন্ত একা নিরাপদে এগোনো সম্ভব, ততদূর অবধি ফাটলটা চেক করার চেষ্টা করল ও। ফাটলটা দিয়ে আড়াআড়িভাবে বেশ কিছুটা এগোনোর পর ওর মনে হল জায়গাটা একটু বেড়েছে। সত্যর মনে পড়ল প্রকৃতির এক অনন্য বিস্ময় দক্ষিন আমেরিকার ইকুয়েডরে অবস্থিত টায়স গুহার কথা!

এতক্ষণ ফাটলের ভেতর প্রাকৃতিক আলো খুব কমই ঢুকছিল– তাই টর্চটা হাতে নিয়ে নিয়েছিল সত্য। কিন্তু আর একটু এগোতেই মনে হল সামনের দিকটায় একটু আলো রয়েছে– টর্চ আপাতত আর লাগবে না; খালি চোখই যথেষ্ট। ফাটলটা এবার আর একটু প্রশস্ত হওয়ায় সত্য মোটামুটি সোজাসুজিভাবেই এগোনো শুরু করল। আলোর উৎস অবধি পৌঁছনোর আগেই হঠাৎ কী যেন একটা চকচক করে উঠল সামনে– আয়না নাকি? কয়েক পা এগোতেই ঘটল অদ্ভুত এক কাণ্ড– আচমকা ধোঁওয়ায় ঢেকে গেল চারদিক! সামনে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না যে! আর ধোঁয়ার লক্ষ্য যেন সত্যই– নিমেষের মধ্যে ঘিরে ফেলে তাকে লক্ষ্য করেই যেন আক্রমণ করল ধোঁয়ার কুণ্ডলীগুলো! সত্য বিপদ বুঝে পিছনোর চেষ্টা করল, কিন্তু সেই সরু ফাটলে দ্রুত পিছনোও গেল না। বিশেষ কিছু বুঝে বা করে ওঠার আগেই সত্য অনুভব করল যে ধোঁয়ায় তার মস্তিস্ক ও স্নায়ু আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে; সে সংজ্ঞা হারাচ্ছে! অল্প সময়ের মধ্যেই ও পুরোপুরি অচৈতন্য হয়ে ফাটলের পাথরের গায়ে এলিয়ে পড়ল। এতে ওর কানের পিছনটা পাথরে ঘষা লেগে ছোড়ে গেল; কিন্তু জায়গা ছোট হওয়ায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সুযোগ পেলোনা ওর শরীরটা- ফলে কোনো গুরুতর আঘাত পেলোনা ও।

সত্যর জ্ঞান ফিরল– কতক্ষণ পরে ফিরল, সেটা  জানে না! সে এটুকু বুঝল যে কোনও গ্যাসের প্রভাবে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। কানের নিচে একটু জ্বালা অনুভব করলো সত্য- তার বেশি কিছু না। ও যেখানে আটক ছিল সেখানে গোল পাথর দিয়ে বন্ধ করা দরজা; ঘরটাকে কক্ষ না বলে কুঠুরিই বলা চলে। প্রাচীন মিশরের নেয় জানালার মতো এয়ার-শ্যাফ্‌ট বা বাতাস আসার রাস্তা দিয়ে হাওয়া আসছিল বলে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল ও। সত্যর আবার মনে পড়ে গেল তুরস্কের পাতাল শহর 'ডেরিনকুয়ু'-র কথাও। আয়নার সাহায্যে বাইরে থেকে আলো ঢুকছে পাথরের ঘরে অল্প-অল্প। মিশর-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে মিশরেও হাজার-হাজার বছর আগে এইভাবে আয়নার সাহায্যে আলো প্রবেশ করানো হত মাটির তলায় বানানো সমাধি-কক্ষগুলোতে। ও কি জ্ঞান হারিয়ে স্বপ্ন দেখছে, নাকি টেলিপোর্ট হয়ে দূর অতীতে চলে এসেছে ও?
যাই হোক, পূর্ব অভিজ্ঞতা আর চারিদিকের পরিবেশ থেকে সত্য বুঝল যে ও মাটির তলায় রয়েছে– সেটাকে পাহাড়ের ভেতরের ফাঁপা অংশ বলেই মনে হল র! সেদ্ধ বীজ জাতীয় কিছু খাবার দেওয়া হয়েছে ওকে– কিন্তু সেদিকে ওর মন নেই। ওর মনে তখন কৌতূহলের লহর উঠেছে। সত্যর রুক্স্যাকটা কাছে নেই– তাই তখন সময় কত সেটাও দেখা যাচ্ছে না কারণ ফোনটা তার মধ্যেই ছিল। সেটা এখন কোথায় কে জানে! তবে এয়ার-শ্যাফ্‌ট দিয়ে আসতে থাকা আলো থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে তখনও দিনের বেলা
 

একসময়ে হঠাৎ ঘড়ঘড় করে সামনের গোল পাথরের দরজাটা খুলে গেল! সত্য আশ্চর্য হয়ে সামনের দিকে তাকাল। চমরী গাইয়ের খুলি পরা, হাতে সম্ভবত কোনও প্রাণীর হাড় থেকে তৈরি দণ্ড-ধরা দুইজন লোক কুঠুরিতে ঢুকে সত্যকে ধরে মাটি থেকে তুলে জোর করে টেনে সামনের দিকে, মানে কুঠুরির বাইরে নিয়ে যেতে শুরু করল। তারা যখন ওকে নিতে আসল আর যেভাবে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল, তার থেকে সত্যর এটা বুঝতে বাকি রইল না যে ও সেখানে বন্দি– বন্দি মানে একেবারে জেল-বন্দি কয়েদির মতো হাল ওর! যদিও কোথায় এবং কেন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই নিয়ে তার যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কুঠুরি থেকে বেরোনোর পর তার বিস্ময়ের সীমা থাকল না! তাতে বাকি প্রশ্নগুলো তখনকার মতো তার মগজে চাপা পড়ে গেল।

অনেক উঁচু নিচু গুহা-গহ্বরের মধ্যে দিয়ে তারা যখন ওকে নিয়ে এল একটা বিরাট খোলা জায়গায়– সত্যর এবার আর এটাও বুঝতে বাকি রইল না যে এই পাহাড়কে ফাঁপা কারা বানিয়েছে! এখানে পাহাড়ের গায়ের একটা ফাটল দিয়ে অনেকটা আলো আসছে। একটা জলধারাও বইছে পাহাড়ের পাথর আর মেঝের পাথরের গা দিয়ে। সেখানে জানোয়ারের ছাল আর চমরী গাইয়ের শিং-পরা অনেক অর্ধ-নগ্ন পুরুষ ও নারী। এখানে তো একটা নয়, অসংখ্য অসুর। পাহাড়ের ভেতর একটা গোটা বসতি, একটা গোটা আদিবাসী সমাজ! এ যে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! এ তো সত্যিই আগর্ত!

সেই লোকরা একসাথে কী যেন করছিল। একটু এগোতে ও বুঝল যে সীমিত আলোতেই সম্ভবত চাষের কাজ করছে তারা। তারা নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তাও বলছে– এটুকু বোঝা যাচ্ছে। তাদের ভাষা অবশ্য ও বুঝতে পারছিল না। আর পারবেই বা কী করে? তাদের ভাষা আর সত্যর ভাষার উৎস যদি একও হয়ে থাকে তাও হাজার-হাজার বছরের ভাষা-বিবর্তনের ফলে আজ তা সত্যর কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠবে যে এটাই স্বাভাবিক!

আরও কাছে যেতেই সেই লোকজনরা মাথা তুলে তাকে দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার তারা নিজেদের কাজে মন দিল। ওই দু-জন প্রহরী গোছের লোক তাকে ইশারা করে চাষের কাজে হাত লাগাতে বলল। কাজে হাত লাগিয়ে চারিদিকের সবকিছু দেখতে আর অনুভব করতে লাগল ও। এখানকার পরিবেশটা লাদাখের ভূপৃষ্ঠের মতো নয়। আর মাটির তলায় চাষবাস হয়তো ওই বইতে থাকা জলধারার জন্য সম্ভব হচ্ছে। এখানকার আবহাওয়ায় কেমন একটা উষ্ণ ছোঁওয়া– লাদাখের শীতল মরু পরিবেশের প্রভাব যেন এখানে নেই!

সত্যর মনে পড়ল যে চীনদেশেও এরম একটা শহর আছে যেখানে লোকে আজও মাটির তলায় ঘর বানিয়ে থাকে– তাতে শীত আর গ্রীষ্ম দুটোতেই স্বস্তি পাওয়া যায়– কিন্তু কিছুতেই জায়গাটার নাম মনে পড়ল না ওর- হয়তো নামটা কঠিন বলেই! সেটা অবশ্য এরকম মাটির তলায় গোটা একটা শহর নয়, শুধু কিছু ছোট বাড়ি মাত্র।

তবে সত্য এটাও বুঝতে পারল যে আপাতত পালানোর উপায় নেই! সুযোগ বুঝে পালানোর চেষ্টা করতে হবেআপাতত নিজেকে ওর সিনেমার এক্সট্রার মতো মনে হচ্ছিলো। কিসের চাষ হচ্ছে তা না বুঝেই কিছুটা আনমনা, কিছুটা চিন্তিত আর কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে যন্ত্রের মতো চাষের কাজ করতে থাকল ও। সেখান থেকে কয়েক ঘণ্টা পর চাষের কাজ সেরে ফেরার সময় সত্যর মনে হল হয়তো এই হালকা আলোয় কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এরা, আর ওর চোখও সেই পরিবেশে সয়ে গেছে কিছুটা। তখন ও বুঝতে পারল যে এই সাম্রাজ্য সম্ভবত অনেকগুলো তলা বা ফ্লোর জুড়ে আছে- কারণ যে তলায় তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল সেই কুঠুরিটা ওই চাষের ক্ষেতের ওপরের তলায় অবস্থিত। কিন্তু কতটা ওপরে সেটা অনুমান করতে পারল না, আর তা অনুমান করা সম্ভবও না

ফেরার পথে এক আশ্চর্য সমাধিক্ষেত্র দেখল ও– অসুরদের সমাধিক্ষেত্র! সত্য কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়াল। দেওয়ালের গায়ে লম্বা খাঁজ-খাঁজ মতো কাটা– পাথরের কফিন বলে মনে হল সেগুলো ওর। খাঁজগুলো খোলাই। বাইরে থেকে কোনও কিছু দিয়ে ঢাকা নয় এরম নিদর্শনও আছে পৃথিবীর অন্য জায়গায়। তবে সেইসব ক্ষেত্রে মৃতদেহগুলি মমি বানিয়ে রাখা হয় বলে সত্যর অন্তত জানা নেই। এখানে কিন্তু তার ব্যতিক্রম। কিছুটা মমির মতো করে রাখা রয়েছে মৃতদেহগুলি– হয়তো বিশেষ লোকেদের দেহগুলি সংরক্ষণ করা হয়। গোধূলি দ্রুত এগিয়ে আসছে। যেহেতু পাথরে খাঁজ-কাটা তাকের মতো কফিনগুলো খোলা, তাই তার ভেতরে কী আছে সেটা আয়না থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া ক্ষীণ আলোয় অল্প হলেও বোঝা যাচ্ছিল। তার মধ্যে রয়েছে এক বা একাধিক দেহ– কাপড় বা জন্তু-জানোয়ারের ছাল দিয়ে ঢাকা বা মোড়া হয়তো। সে জন্যই আলোর অভাবে সেটা ঠিক বোঝা গেল না। যারা ওকে কুঠুরি থেকে বের করে চাষ করাতে নিয়ে গেছিল, সেই দু-জন প্রহরীই ওকে আবার ফেরত নিয়ে যাচ্ছিল। সত্য আর বেশি কিছু বোঝার আগে ওই দু-জনের মধ্যে একজনের হাতের সেই হাড়ের তৈরি দণ্ডের ধাক্কা হঠাৎ পিছন থেকে পিঠে লাগায় সত্য আবার চলতে শুরু করল। ওখানকার লোকজন যেসব ঘরে থাকে, সেগুলোও যেতে-যেতে দেখল সত্য। ছোটবেলায় টি.ভি-তে দেখা 'ফ্লিন্টস্টোনস' কার্টুন শো যেন বাস্তবে দেখছিল সত্য- অলীক কল্পনাও তাহলে সত্যি হয়! একটা বড় ঘর আর তার পরিবেশ দেখে মনে হল ওটা সরাইখানা জাতীয় কিছু- তার আসবাবপত্রও হয়তো পাথরেরই তৈরী। এইসব দেখতে-দেখতেই কুঠুরিতে ফিরে এল ও। আশেপাশে আরও কয়েকটা একই রকমের ঘর আছে। তাতে ও অনুমান করল যে এটা হয়তো এই পাতালপুরীর কারাগার!

এতক্ষণ এই বিপদের মধ্যে খিদে ব্যাপারটা ঠিক মাথায়ও আসেনি, আর অনুভব হয়নি। গোধূলিতে খুব খিদে অনুভব করায় শেষ পর্যন্ত দ্বার-রক্ষীদের দেওয়া সেই অচেনা খাবারই ওকে কোনওমতে খেতে হল। খিদের চোটে অবশ্য বেশ দ্রুতই সেটা খেয়ে ফেলল ও। খেতে খেতে ও ভাবলো, 'এই খাবার নির্ঘাত শুধু কয়েদিদের জন্য! এখানকার সাধারণ মানুষজন অবশ্যই এর থেকে ভাল খাওয়া দাওয়া করে।'

তারপর পাথরের তৈরি কুঁজোতে রাখা জল কষ্ট করে খেয়ে নিল। স্বাদটা থেকে ও বুঝতে পারল যে ওটা স্থানীয় ঝর্ণার জল কারণ এই ক'দিন ধরে এদিক-ওদিক সার্ভে করতে গিয়ে ও এক-আধ বার পাহাড়ি ঝর্ণার জল চেখে দেখেছে বৈকী! যাইহোক, সাময়িকভাবে খিদে মিটল। এরপর বসে বসে পালানোর উপায় ঠাওর করার চেষ্টা করতে লাগল ও। এয়ার-শ্যাফ্‌ট তেমন চওড়া নয় বলে শ্যাফ্‌ট গলে পালানো যাবে না। সিঁধ কাটারও উপায় অন্তত এই মুহূর্তে নেই। তাই দরজায় প্রহরীরা থাকবে অনুমান করেও কয়েকবার ভেতর থেকে ঠেলা-গুঁতো মেরে দরজাটা খোলার চেষ্টা করল ও; কিন্তু কোনও লাভ হল না! তারপর পাথরের ঘরের মধ্যে কোনও ফাঁপা বা দুর্বল অংশ আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করল সত্য– এর জন্য হাত আর পা দিয়ে পাথরের দেওয়াল আর মেঝেতে মেরে-মেরে দেখল ও। কিন্তু সবই নিরেট! শেষে তখনকার মতো নিরুপায় হয়ে বসে পড়ে সিম্মির কথা ভাবতে লাগল। সিম্মি থাকলে হয়তো সাহায্য করতে পারত। সেবার গুজরাটের কালা পর্বতের গুহায় যখন সত্য আটকে পড়েছিল তখন সিম্মিই তো ওকে বাঁচিয়েছিল! কিন্তু এখন সিম্মি নেই। কয়েকদিনের মধ্যেই ওর লাদাখে চলে আসার কথা, কিন্তু রুক্‌-স্যাকটা অসুরদের হাতে লুণ্ঠিত হওয়ায় সিম্মিকে সিগনাল দেওয়ারও উপায় নেই! এইদিকে এখান থেকে বেরোতে না পারলে ওর নিজের ভবিষ্যৎ কী হবে সেই নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছে সত্য– এই বিচিত্র জগতের বাসিন্দারা ওর সাথে কী করতে চলেছে তা জানে না ও। একটা রাস্তা না বেরোলে সত্য-সিম্মিদের হেডকোয়ার্টারের খাতায় অন্য কারুর-কারুর মতোই 'মিসিং ইন অ্যাকশন' হয়ে যাবে স্বয়ং সত্যও। ও কিছুটা ব্যাকুল হয়ে মনে-মনে বলল, 'বাইরের জগতের কোনও কিছুই কি এখানে এসে পৌঁছোয়নি? আজকের যুগের লাদাখের সাথে কি এদের কোনও মিলই নেই? বাইরের জগতে বার্তা পাঠানোর কি কোনও উপায়ই নেই?'

সর্বগ্রাসী অন্ধকারটা যেন ধীরে-ধীরে তাকে চেপে ধরছিল। সময় বোঝা না গেলেও এটা সত্য বুঝতে পারল যে খুব একটা রাত হয়নি। তবে আরও একটা জিনিস ওকে ক্রমে চেপে ধরছিল! ওর মনে হল যে এই পাতাল-দেশের সবাই প্রাচীন কালের মতোই সূর্যোদয়ের সাথে ওঠা আর সূর্যাস্তের সাথে ঘুমোনোতে অভ্যস্ত। সত্য মনে-মনে ভাবল, 'সব কেমন নিশ্চুপ! না ওপর থেকে, না নিচ থেকে, না পাথরের দরজার বাইরে থেকে, না এয়ার-শ্যাফ্‌টের দিক দিয়ে– কোনও সাড়া-শব্দই নেই কারুর বা কোনও কিছুর! সবাই কি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছে, নাকি পাথর ভেদ করে কোনও শব্দ আমার অবধি পৌঁছচ্ছে না? এই সুযোগে যদি বেরিয়ে যাওয়া যেত, ইস্‌! হেল! নাহ, একটা না একটা দিশা পাবই! একটা না একটা রাস্তা বেরোবে না? এত ট্রেনিং নিয়েছি কীসের জন্য তাহলে? আর একটু ভাল করে জায়গাটাকে স্টাডি করতে হবে। কিন্তু তার আগেই যদি...! না না, পারতেই হবে আমায়! বেরোবই! হ্যাঁ!'

এইসব ভাবতে-ভাবতে সারাদিনের ক্লান্তি আর এই ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশের প্রভাবে চোখ লেগে এলো ওর।

তখন কত রাত হয়েছে কোনও ধারণা নেই ওর। হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল সত্যর– ও নাকে একটা ঝাঁঝ অনুভব করছে, আর তার সাথে কাশিও পাচ্ছে খুব। মিশকালো অন্ধকারের মধ্যেও ওর বুঝতে অসুবিধা হল না যে এটা সেই ধোঁয়া যার ফলে দিনের বেলায় ও অজ্ঞান হয়ে গেছিল। এবার এয়ার-শ্যাফ্‌ট দিয়ে সেই ধোঁয়া আসছে আবার। কেউ কি ইচ্ছা করে করছে এটা? মনে তো হয় তাই! কিন্তু কেন? এসব অবশ্য সত্য ভাবার বা বোঝার সময় পায়নি তখন– কারণ তখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে ধোঁয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার– সেই আদিম গ্যাস-চেম্বার থেকে মুক্ত হওয়ার! কিন্তু সেই চেষ্টা অল্প কিছুক্ষণের, এবং বৃথা! পালানোর কোনও পথ নেই– গোল পাথরের দরজা বন্ধ আর ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে ঘর। অতএব আবারও জ্ঞান হারাল সত্য!

সেই নাম-না-জানা ঝর্নাটা যে পাহাড়ে তার পিছন দিকে কিছুটা দূরে একটা পাহাড়েই অবস্থিত একটা মনাস্ট্রি। সত্যর চোখ খুলল সেখানে। সত্য সেখানে তার রুক্‌-স্যাক সমেত কীভাবে পৌঁছাল সেটা একজন মাঝবয়সী বৌদ্ধ সাধুকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি শান্ত গলায় বললেন, 'তোমাকে যিনি বাঁচিয়েছেন, তিনি এখানকার প্রধান লামা। উনি কাল রাতে আমাদের আদেশ দেন ঝর্ণার ধার থেকে তোমাকে উদ্ধার করে আনার জন্য। তার আদেশ মতোই আমরা আপনাকে খুঁজতে যাই আর ওই ঝর্ণার ধার থেকে উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসি।'

সত্য অনুমান করল যে তাদের পাতাল রাজ্য থেকে ঝর্ণার ওখান অবধি হয়তো অজ্ঞান অবস্থায় ওকে সেই অসুররাই ছেড়ে দিয়ে গেছিল। গোপনীয়তা বজায় রাখে বলেই অজ্ঞান না করে ওকে ছাড়েনি তারা- পাছে তাদের আরও কিছু রহস্য সত্যর চোখে পড়ে যায়। আরব্য রজনীর আলিবাবার গল্পের মুস্তাফা দর্জিকে যেমন চোখ বন্ধ করে মৃত কাশেমের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, অনেকটা সেরম ব্যাপার আর কী।

কিছুক্ষণ পর প্রধান লামার সাথে দেখা করারও সুযোগ পেলো ও। লামার ঘরে ঢুকতেই তাঁর আভা মণ্ডলের পজিটিভ ভাইব্রেশন ওকে কারুর একটা কথা মনে করিয়ে দিল। কিন্তু ঠিক কার কথা সেটা তখনকার মতো ও বুঝতে পারল না।

'আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাব মাননীয় লামা!'

লামা শান্তভাবে বললেন, 'সব ব্রহ্মাণ্ডের ইচ্ছা। আমি তো মাধ্যম শুধু।'

'আপনি আজ না এলে ওরা যে কী করত আমার সাথে!'

'তোমার এখনও এই জগতে অনেক কাজ বাকি আছে।'

'ওরা নিশ্চয়ই আগন্তুকদের মেরে ফেলে বা বলি দেয়?'

'না, ওরা অন্যরকম সাজা দেয়– তোমার মতো আগন্তুকদের ওরা ওদেরই একজন বানিয়ে নেয়। বহির্জগতে বা মূল স্রোতে ফিরতে দেয় না। তুমি অত্যধিক কৌতূহল দেখিয়ে আরও এগিয়ে যেতেই ওরা বুঝতে পারে যে, জানতেই হোক বা অজান্তেই হোক, তুমি ওদের আস্তানায় ঢোকার চেষ্টা করছ।'

'আচ্ছা আচ্ছা। তাহলে ওরা নজরদারি করে? বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখে ওরা?'

'হ্যাঁ, পাহাড়ের গায়ে খুব ছোট-ছোট গর্তের মধ্যে আয়না লাগিয়ে ভেতর থেকে সব দেখতে পায় ওরা।'

সত্য বুঝল যে লামা গর্ত বলতে সম্ভবত এয়ার-শ্যাফ্‌টগুলোর কথা বলছেন, আর এটা সিম্পল ফিজিক্স! আয়নাগুলো আলোর সোর্সের পাশাপাশি পেরিস্কোপ হিসাবেও কাজ করে। আর সাবমেরিনের নাবিকের মতোই পাহাড়ের মধ্যে থেকেও বা মাটির তলায় থেকেও বাইরের সবকিছু দেখতে পায় ওরা– বিশেষ করে ওদের ঠিকানায় কেউ চলে এল কিনা সেটা ওরা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে খেয়াল রাখে!'

লামা বললেন, 'তাই ওদের এলাকায় কিছুটা ঢুকে পড়তেই ওরা তোমাকে এক বিশেষ ধোঁয়ার সাহায্যে অজ্ঞান করে পাহাড়ের ভেতরের অলিগলি দিয়ে মাটির তলায় নিয়ে যায়। এইসব গুহা-পথ পাতালবাসীরা শ'য়ে-শ'য়ে বছর ধরে পরিশ্রম করে খোদাই করেছে। বহু প্রজন্ম কেটে গেছে এই কাজে। আর ওদের তৈরি ওই পাতাল-নগরীতেই তুমি বন্দি ছিলে আজ ভোর-রাত অবধি।'

'ওদেরও নিশ্চয়ই সমাজ আছে। উৎসব আছে, নিয়ম-কানুনও আছে।'

'হ্যাঁ, আছে। যে আগন্তুকদের সেটা ভাল লেগে যায়, বা যারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়, তাদের পক্ষে ভাল। যারা তা পারে না, তাদের জীবন নরকে পরিণত হয়! আমি জানি তুমি পারতে না ওখানে থাকতে।'

'সত্যি মহান লামা, আমার জন্য ওরম জীবন নয়। আমি পারতাম না ওখানে মানিয়ে নিতে। কিন্তু, বহির্জগতের কোনও লোক ওখানে আটক হলে তারা পালানোর চেষ্টা করে না, বা পালাতে পারে না?'

'প্রথমত পালানো খুব মুস্কিল ওখান থেকে–তুমি নিজেও সেটা দেখেছ। তবুও যখন-যখন যারা-যারা পালাতে পেরেছে তাদের কথা হয় বাইরের পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করেনি, নয়তো তাকে পাগল ভেবেছে।'

'আর বিশ্বাস করে কেউ ওই পাতাল-গহ্বর খুঁজতে এসে থাকলে?'

'হয় তারা পাতালবাসীদের হাতে চিরকালের মতো আটক হয়েছে, নয়তো নিহত হয়েছে। আবার অনেকে আর পাতালপুরীর প্রবেশপথ খুঁজেই পায়নি। তোমারও নিজেরও তো এক সপ্তাহ লেগে গেল, ঠিক কোন জায়গায় খুঁজতে হবে সেটা জানার পরেও।'

সত্য দেখল যে লামা জানেন যে ও এক সপ্তাহ ধরে অসুরদের ট্রেস্‌ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

লামা বললেন, 'এমনিতেই দুর্গম পার্বত্য এলাকা– আজকে নয় রাস্তাঘাট হয়েছে। কিছু বছর আগে অবধিও রাস্তাঘাট ছিল না সেরকম, জানোই তো।'

'হ্যাঁ, তাই অতীতে এখানে আসা বা এখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়া দুটোই বেশ কঠিন ছিল।'

'পাতালবাসীদের কথা এখানকার লোকরা জানে, কিন্তু কেউ প্রকাশ করে না বাইরের পৃথিবীর কাছে।'

সত্য বুঝল যে এটা এখানকার স্থানীয় অলিখিত কোড অফ্‌ কন্ডাক্টের অন্তর্গত হয়ে গেছে।

লামা বলে চললেন, 'তুমি জেনে গেছ সব, কিন্তু তোমায় কথা দিতে হবে যে তুমি কাউকে কিছু বলবে না– তুমি যাদের জন্য কাজ করো, তাদেরও না, আর এমনকি তোমার বান্ধবীকেও না।'

সত্য একটু অবাক হল– লামা সিম্মির কথা জানলেন কী করে! তাহলে কি ইনফরমেশন লিক হল?

লামা বলে চললেন, 'কাল দুপুরে তোমার বিপদ অনুভব করে আমি কাল রাতেই ওদের প্রধানের সামনে প্রকট হই!'

লামার এই কথাটা শুনেও সত্য আশ্চর্য হল কারণ প্রথমত, ও যে বিপদে পড়েছে সেটা তো লামার জানার কথা নয়! তাহলে কি লামার টেলিপ্যাথির শক্তি আছে? আর দ্বিতীয়ত, অতি বৃদ্ধ লামাকে দেখে মনে হচ্ছে যে বার্ধক্যের ভারে খুব বেশি দূরে যাতায়াত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে কি লামা সূক্ষ্ম দেহে সেখানে গেলেন? সত্যর সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল।

সত্য যে কিছু ভাবছে সেটা বুঝতে পেরে লামা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার স্মিত হাসিমুখে বলা শুরু করলেন, 'আমি পাতালবাসীদের কথা দিয়েছি যে তুমি কাউকে কিছু বলবে না। সেই শর্তেই ওরা তোমায় ছেড়েছে।'

সত্যর মধ্যে এবার একটু সঙ্কোচের ভাব দেখা দিল। সে বলল, 'কিন্তু শ্রদ্ধেয় লামা, ওদের ব্যাপারটা বাইরের পৃথিবী, বিশেষ করে ভারত সরকার ব্যাপারটা জানলে ওদের সাহায্য করতে পারবে- মূল স্রোতে ফেরাতে আর জীবনের গুণগত মান উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারবে সরকার।'

এর উত্তরে লামা ঠাণ্ডাভাবেই বললেন, 'দ্যাখো সত্য, এটা তাদের ইচ্ছা, তাদের সিদ্ধান্ত। আর আমাদের সেটাকে সম্মান করা উচিত– তারা যখন কাউকে নিজেদের অস্তিত্ব জানাতে চায় না, তখন আমদেরও উচিত ব্যাপারটা প্রচার না করা– তাই নয় কি? ভেবে দেখো।'

তার প্রত্যুত্তরে ও ধীরে ধীরে বলল, 'কথা দিলাম আমি! কথার খেলাপ হবে না কখনও।'

'হিমালয়ার বুকে তো এরকম অনেক রহস্যই আছে। তুমি তো সেসব নিয়ে চর্চা করো, সেইসব রহস্যের সন্ধান আর সমাধানও করো!'

সত্য আবারও অবাক হল– লামা তার জীবিকার কথাও জানেন! লামা বলে চললেন, 'তাই একটা রহস্য না হয় উহ্য থাক সমাজেরকাছে। আরও সুযোগ পাবে...'

সত্য হালকা হেসে বলল, 'কিন্তু ওরা এভাবে নিজেদের লুকিয়ে রাখে কেন, শ্রদ্ধেয় লামা?'

'ওরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে। শুরুর দিকে ওরা মাটির ওপরেই থাকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন থাকে মাটির নিচে। মাটির ওপরে মানুষের আনাগোনা, মানুষের হানাহানি, আবহাওয়ার প্রকোপ আর আরও হাজারো সমস্যায় জর্জরিত মানব সমাজ। তাই পাতালকেই ঘর বানিয়েছে ওরা।'

এই প্রসঙ্গে সত্যর মনে পড়ে গেল ওপাল পাথরের জন্য বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার শহর 'কুবার পেডি'-র কথা–যেখানের শুষ্ক আবহাওয়া আর গরমের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ মাটির তলায় বসবাস করে। আর তার সাথে তুরস্কের 'ডেরিনকুয়ু'-র কথাও– যার ব্যাপারে প্রচলিত আছে যে হানাহানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই স্থানীয় মানুষ মাটির তলার সেই শহরে আশ্রয় নেয়। এর আগেরদিন আটক থাকাকালীন চীনের সেই নাম-না-জানা শহরের কথা তো ও ভেবেছিলই। কয়েক মুহূর্ত সেগুলোর কথা ভেবে ও লামাকে জিজ্ঞেস করল, 'কবে থেকে এরকম হল?'

'সেই দাশ রাজার আমল থেকে।'

'মানে সেই দশরাজন যুদ্ধ যা ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিল?'

'হ্যাঁ, সেই যুদ্ধে ভরত গোষ্ঠীর উপজাতিদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর এই উপজাতির লোকরা পালিয়ে আসে এখানে– যেখানে কেউ তাদের খোঁজ পাবে না।'

সত্যর মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়ে গেল পাঞ্জাবের পাঠানকোটের প্রত্নক্ষেত্রে পাওয়া সেই শিলমোহরগুলোর কথা– একটা শিলমোহর ছিল যেটা দেখে মনে হয়েছিল সেটা মাটির তলায় অসুরদের অবস্থান বোঝাচ্ছে। এখন ওর মনে হচ্ছে ওটা এই পাহাড়ের ভেতরে অসুরদের অবস্থানটাই বোঝাচ্ছিল।

লামা বলতে থাকলেন, 'ধীরে-ধীরে প্রাকৃতিক গুহাকে আরও খুঁড়ে পাহাড়ের ভেতর থাকতে শুরু করে তারা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাহাড়কে ফাঁপা বানিয়ে একটা শহর তৈরি করে ফেলেছে তারা। তাদের গোষ্ঠীর নিয়মই হল সেখান থেকে না বেরোনো; তবে খুব অল্প হলেও এই গুহা-জগতের বাইরে লোক বেরিয়ে আসে– নিয়ম উল্লঙ্ঘন করা লোক তো সব সময়েই আছে, সব জায়গায়ই আছে; এইটা গুণই বলো বা দোষ, মানুষের মধ্যে তো আছেই ওই প্রবৃত্তিটা।'

'আর বেরিয়ে এলে তারা কি পালিয়ে যায়?'

'পালিয়ে তারা আর যাবে কোথায়? বাইরের পৃথিবীর আচার-আচরণ কিছুই তো জানে না তারা– বাইরের জগতের সম্মুখীন হয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয় তারা। কখনও কেউ বাইরে বেরিয়ে এলেও আবার তাদের আটক করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়– কঠোর দণ্ডও দেওয়া হয়।'

'মানে মৃত্যুদণ্ড?' চমকে জিজ্ঞেস করল সত্য।

'না, তার থেকেও ভয়ঙ্কর– একঘরে করে দেওয়া হয় অনেকদিনের জন্য– যাতে তারা নিজের লোকজনের, নিজের উপজাতির অভাব টের পায়। আর সেই উপলব্ধি থেকেই যাতে তারা আর তোমাদের জগতে যাওয়ার কথা না ভাবে।'

'এভাবেই ৫০০০ বছর ধরে চলে আসছে তাহলে!'

'হ্যাঁ, কেউ-কেউ কখনও-কখনবেরিয়ে এলে তোমাদের জগতের লোকরা তাদের দেখে ভূত, দৈত্য বা ভিনগ্রহী ভেবে ভুল করে, ভয় পায়। সেরমই একটা খবর পেয়েই তো তুমিও এখানে এসেছ।'

সত্য সবকিছু মন দিয়ে শুনছিল। সত্যর ঠিকুজি-কুলুজি সবই জানেন বর্ষীয়ান লামা। তাই সত্যর এখানে আসার উদ্দেশ্যও যে লামা জানেন সেই কথা শুনেও সত্য এবার আর নতুন করে চমকে উঠল না। ও বলল, 'হ্যাঁ, মাননীয় লামা। আমি উত্তর পাঞ্জাবে এরম এক গোপন উপজাতির সন্ধান পেয়েছিলাম কিছু বছর আগে। তারা অবশ্য মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, কিন্তু নিজেদের ট্রাইবাল আইডেন্টিটি, ইয়ে মানে আদিবাসী পরিচয়, গোপন রাখে তারা। এখানেও যে এরম 'ফেরাল' পিপ্‌ল, মানে মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন একটা প্রাচীন উপজাতির সন্ধান পাব, তা ভাবতেও পারিনি! তবে এটাও ঠিক যে এরম পাণ্ডববর্জিত জায়গাই তো লুকিয়ে থাকার পক্ষে আদর্শ! লাদাখের প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান শুনে আমার মনে পড়েছিল পাঠানকোটের সেই অসুরদের কথা। এরা সম্ভবত তাদেরই জাতভাই-বোন। এদেরই আমরা পৌরাণিক কথায় অসুর বলে চিনি। কিন্তু সত্যি-সত্যি যে দুটো ব্যাপার এভাবে মিলে যাবে, দুটো ক্ষেত্রেই যে একই উপজাতির সন্ধান পাওয়া যাবে, তা ভাবতেই পারিনি আমি!'

লামা স্মিত হাসলেন। সত্য বলল, 'আপনি আমার জন্য যা করলেন তা আমি জীবনেও ভুলব না! আর এমনিতেও আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে খুব আপন মনে হল। মনে হলে যেন আপনাকে আগে থেকেই চিনি আমি!'

এর জবাবও লামা স্মিত হাসি দিয়েই দিলেন, তবে এবার তার হাসির মধ্যে যেন একটা হালকা রহস্যের ভাব ফুটে উঠল। সত্য বলতে থাকল, 'সব, সবকিছু যেন নাটকের মতো হল– যেন স্বপ্নের মধ্যে দেখলাম! আমি তাদের হাতে আটক হব, তাদের শহরে বন্দি-দশায় সময় কাটাব, আবার এত তাড়াতাড়ি উদ্ধারও হব, আর আপনার সাথেও যে এরম ভাবে, এরম অবস্থায় দেখা হবে- এসব আমি স্বপ্নেও ভাবিনি!'

'স্বপ্নে ভাবোনি, কিন্তু স্বপ্নে দেখেছ–আভাস পেয়েছ আমাদের সাক্ষাতের।'

সত্য এবার জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারল না, 'যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই, মাননীয় লামা।'

লামা অল্প হেসে বললেন, 'আমি তোমার কাজের কথা, বান্ধবীর কথা, আর তোমাদের দু-জনের দেখা স্বপ্নের কথা, এইসব কীভাবে জানলাম– তাই তো?'

সত্য অবাক হল, তবে তার সাথে এটাও বুঝতে পারল যে লামার সম্ভবত থট রিডিং-এর ক্ষমতা আছে– কারুর মনের কথা পড়ে ফেলতে পারেন তিনি। ও শুধু একটা ছোট 'হ্যাঁ' বলল।

এর প্রত্যুত্তরে লামা একটু গম্ভীর ভাবে বললেন, 'সত্য, আমাদের আগেও দেখা হয়েছে!'

এই কথার অর্থ না বের করতে পেরে সত্য ফ্যালফ্যাল করে বয়স্ক লামার স্নিগ্ধ মুখের দিকে চেয়ে রইল। কিছু মুহূর্ত পর সত্যর মুখ দিয়ে বেরোল, 'আমাদের আগেও দেখা হয়েছে? কিন্তু আমি তো ঠিক মনে করতে পারছি না, মাননীয় লামা!'

তারপর তিনি যা বললেন সেটা শুনে সত্যর মনে হল যে ও নির্ঘাত অন্য ডাইমেনশন বা রিয়েলিটিতে পৌঁছে গেছে!

লামার সাথে কথোপকথন শেষ হওয়ার পর সেই ঘর থেকে বেরিয়ে লামার সাথে কথোপকথনের ধাক্কা আর প্রভাব থেকে নিজেকে কিছুটা সামলে নেওয়ার পর আগের ঘরে ফিরল ও। ঘরে এসে একবার রুক্‌-স্যাকটা চেক করল সত্য– হ্যাঁ, সবকিছুই আছে! কিচ্ছু খোওয়া যায়নি। তথাকথিত অসুররা একটা জিনিসেও হাত দেয়নি!

সেদিন দুপুরের খাবারটা মনাস্ট্রিতে খেয়ে প্রধান লামাকে প্রণাম জানিয়ে সেদিন বিকেলে তার হোম-স্টের দিকে হাঁটা লাগাল। পাহাড় ডিঙিয়ে ট্রেক রুট ধরে ফিরতে-ফিরতে সত্য মনে মনে ভাবল যে হোম-স্টের মালিক এতক্ষণে নিশ্চয়ই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন– সত্য আগের রাতে ঘরে ফেরেনি। তাই হয়তো পুলিশ বা মিলিটারিকে এতক্ষণে খবরও করে দিয়েছেন তিনি। তারা যদি সত্যর জন্য সার্চ শুরু করে দিয়ে থাকে তাহলে এবার তাকে তার দুম করে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কৈফিয়ত দিতে হবে! এইসব আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতে হোম-স্টেতে ফিরে ও জানতে পারল যে সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। আগেরদিন বিকেলে মনাস্ট্রি থেকে একজন বৌদ্ধ সাধু এসে হোম-স্টের মালিককে জানিয়ে গেছেন যে সত্য সেই রাতটা মনাস্ট্রিতেই থাকবে; পরদিন হোম-স্টেতে ফিরবে। তাই সত্যর জন্য দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ ছিল না মালিকের কাছে। সব জেনে সত্য মাননীয় লামাকে মনে-মনে আবারও ধন্যবাদ জানাল

রাতে সত্য ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখল যে তার ঘরের মেঝেতে একটা বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে, আর সেই অতলস্পর্শী অন্ধকারের মধ্যে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই অন্ধকার থেকেই প্রকট হওয়া দুই অসুর! অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা ভয় বা অসুরদের আস্তানায় আটক হওয়ার পোস্ট-ট্রমাটিক-স্ট্রেস-ডিসঅর্ডার থেকেই হয়তো এমনটা হল! সাধারণ মানুষ ছাড়াও সেনাবাহিনীর শক্ত-পোক্ত মানুষদেরও যুদ্ধ-জনিত শক এবং অবসাদ থেকে এরকম হয়ে থাকে।

অসুররা কি তাদের বন্দিকে এত সহজে ছেড়ে দেবে? স্বপ্ন থেকে জেগে একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর এই প্রশ্ন মাথায় আসতেই টর্চ জ্বালিয়ে সত্য প্রথমে হোম-স্টের বারান্দাটা দেখল, আর তারপর জানালার বাইরে যেটুকু পর্যন্ত টর্চের আলো পৌঁছয় সেটুকু ভালো করে দেখে নিল। কোথাও কেউ নেই! তারপর ওর মনে হল যে, যদিও সাবধানের মার নেই, তবুও প্রধান লামা যখন অভয় দিয়েছেন তখন চিন্তার কোনও কারণ নেই! তারপর রাতের লাদাখি পরিবেশটা একটু উপভোগ করে অল্প জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল ও।

পরেরদিন গোটা দিনটা মানসিক প্রস্তুতি নিল সত্য। নিজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও ধর্ম-সঙ্কট কাটিয়ে সিম্মিকে কী বলবে মনে-মনে তার একটা ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে নিল ও। এমনিতে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়– এটা তাদের রোজ দিনের গল্প। কিন্তু এই ব্যাপারটা অন্য।

বাইরের কেউ ভুল করে বা ইচ্ছা করে অসুরদের এলাকায় ঢুকে পড়লে পাতালের সেই উপজাতির মানুষরা তাদের চিরকালের মতো নিজেদের একজন বানিয়ে নেয়। এই প্রসঙ্গে সত্যর মনে পড়ল যে সারা পৃথিবীতে রহস্যময়ভাবে নিরুদ্দেশ হওয়া অভিযাত্রী বা হাইকারের সংখ্যা কম নয়– যাদের নিরুদ্দেশ হওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, আর তাদের কোনও চিহ্নও পাওয়া যায়নি! আবার কারুর-কারুর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। এই নিয়ে বই বেরিয়েছে, টি.ভি.-তে শো হয়েছে, ইন্টারনেটে লেখা-লিখি, ভিডিও, কত কিছু হয়েছে। এরপর থেকে লাদাখে এসে যদি কেউ বা কারা আশ্চর্য ভাবে নিরুদ্দেশ হয় তাহলে হয়তো ধরে নিতে হবে যে সে বা তারা পুরাণের পাতা থেকে বাস্তবে উঠে আসা অসুরদের কবলে পড়েছে।

সেদিন বিকেলে এটা-ওটা ভাবতে-ভাবতে ওর এটাও মাথায় এল যে, যে হোম-স্টেতে রয়েছে তার তলায় মাটির নিচেই আছে অসুরদের পাতালপুরী! কী অসাধারণ স্থাপতি তারা– সত্যর মনে পড়ল পৌরাণিক উপাখ্যানে আছে ময়-দানবের কথা। তিনিও তো অসুর ছিলেন। সত্য স্বগতোক্তির মতো করে এই কথাগুলো বলল, 'ময়-দানব এর চরিত্রটা নিশ্চয়ই কোনও বাস্তব ঐতিহাসিক চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে বানানো। ময়-দানবকে তো রূপক বলে মনে হয়না। তিনিও কি এই পাতালবাসী অসুরদেরই একজন ছিলেন? তাদেরই কোনও পূর্ব-পুরুষ...'

ওদিকে সত্যকে লাদাখি মাখন-চা দিতে এসে সেই হোম-স্টের মালকিন সেই কথাগুলো শুনতে পান। কিন্তু তার বিন্দু-বিসর্গও বুঝতে না পেরে উনি জিজ্ঞেস করেন, 'কিছু বলছেন, বাবু?'

সত্য বুঝল যে এরম অন্যমনস্ক হয়ে বিড়বিড় করাটা ঠিক হয়নি। কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও লিক হয়ে যেতে পারত। ও নিজেকে সামলে নিয়ে একটা মেকি হাসি হেসে বলল, 'না না, ও কিছু না– একটা কবিতার লাইন মনে করছিলাম। আপনাকে কিছু বলিনি।'

'হ্যাঁ, আমদের লাদাখের সৌন্দর্য দেখে অনেক টুরিস্টের কবিতা বলতে ইচ্ছা হয়! এই নিন আপনার চা।' বলে মুচকি হেসে মালকিন চা রেখে তিনি সেই ঘর থেকে চলে গেলেন।

তার পরের দিন কথামতো সিম্মি বাইকে করে পাদুমে এসে পৌঁছল। সত্য ওর সাথে একটা ভিউইং পয়েন্টে দেখা করল। সিম্মি ওকে জিজ্ঞেস করল যে কাজ কেমন এগিয়েছে। সত্য বলল, 'না আমি কিছু খুঁজে পাইনি! মনে হয় এ যাত্রায় খবর ভুল ছিল।'

'ওহ, তাহলে তো বেকার হয়ে গেল!'

'আমি কিছু খুঁজে পাইনি। তার মানে যে ওটা নেই তা তো নয়– হয়তো অন্য কেউ কোনওদিন খুঁজে পাবে। হয়তো লাদাখে নয়, খোদ তিব্বতে অসুরদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যাবে!'

সিম্মি কিছু সন্দেহ করল না; ও ভাবল যে সত্য একটু হতাশ। তাই বলল, 'আমি তো এসে গেছি– এবার আমরা দুজনে মিলে খুঁজব! দেখি না কী পাওয়া যায়।'

'না না, আমি কাল অবধি অলরেডি ১০ দিন খুঁজেছি, জানোই তো। দুটো বর্ডারই এখান থেকে খুব দূরে নয়। কাজেই আর বেশি ওখানে ওই একই জায়গায় ঘোরাঘুরি করলে লোকজনের সন্দেহ হতে পারে।'

'সেটাও ঠিক। তুমি এতদিন ঘুরে বেড়ালে। কেউ সন্দেহ করেনি তো?'

'নাহ্‌, কখনও স্কেচ আর্টিস্ট তো কখনও জিওলজিস্ট। আবার কখনও ভূ-পর্যটক সেজে ঘুরেছি। আর বাসা তো পাল্টেছিই।'

'আচ্ছা আচ্ছা, ইয়েহ বাত হ্যায়!'

'তবে এখানে, এই এত দূরে এত কষ্ট করে আসাটা পুরোপুরি বেকার যায়নি বুঝলে– একটা দারুণ রোড ট্রিপ তো হলই; তাছাড়া আমাদের স্বপ্ন-রহস্যের সমাধান হয়ে গেল লাদাখে এসে।'

'বল কী? কেয়া বাত হ্যায়!'

'হুম্‌, আমাদের দু-জনের দ্বিতীয় প্রপার যৌথ অভিযান রাজস্থানের প্রভাবল্লিতে।'

'উও তো হ্যায়! তার সাথে কী সম্পর্ক?'

'রাজস্থানের প্রভাবল্লির সেই পেড়-ওয়ালে বাবা মৃত্যুর পর এই লাদাখে আছেন! তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে আমার।'

'কী বলছ তুমি? আর ইউ সিওর?'

'অ্যাবসলুটলি! ১০০%!'

'কিন্তু আমরা বিশ্বাস করব কী করে? লোকটা জালি নয়তো?'

'না না, আমাদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন উনি।'

'সেটা তো অনেকরকম ভাবেই জানা যায়। জালি হলে লোকটা তো আমাদের কভার ব্লো-ও করে দিতে পারে! তুমি এত সিওর হচ্ছ কী করে?'

'কারণ উনি এমন-এমন কথা বললেন যা হয় পেড়-ওয়ালে বাবা, বা তোমার আমার ছাড়া, অন্য কারুর পক্ষে জানা সম্ভবই নয়।'

'আচ্ছা তাই?' এতক্ষণে মনে হল সিম্মি আশ্চর্য হয়েছে।

সত্য বলল, 'যা শুনছ তাই! আমারও এটা জানতে পেরে কতটা ধাক্কা লেগেছে ভাবো! একজন অভিজ্ঞ লামা রূপে উনি আমাদের জগতেই আছেন- আমাদের ডাইমেনশনেই!'

সিম্মি বিড়বিড় করে বলল, 'ট্রুথ ইজ্‌ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।'

'উনি আভাস পেয়েছিলেন যে আমরা আসব এখানে; তাই স্বপ্নে আমাদের দেখা দিয়ে উনি বলেন যে ওনার সাথে আমাদের দেখা হতে চলেছে'

সিম্মির মুখ দেখে মনে হলো আরও অবাক হয়েছে। ও সত্যকে প্রশ্ন করলো, 'তার মানে উনি মারা যাননি?'

'না, উনি সশরীরে আর নেই।'

            'তাহলে অশরীরে আছেন?'

            'হুমমম, ওনার এসেন্সটা এখানকার এক বয়স্ক লামার মধ্যে আছে'

'কিন্তু এটা কী করে হয়? পেড়-ওয়ালে বাবা মারা যাওয়ার পর এই জীবিত লামার শরীরে প্রবেশ করবেন কী করে?'

'কেন পারবেন না?'

'অ্যাস্ট্রাল প্রজেকশনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রবেশ করেছেন বলতে চাইছ?'

'না, ওটা নয়'

'সূক্ষ্ম দেহে সাময়িকভাবে প্রবেশ বা ভর করেননি?'

'নাহ । তবে সূক্ষ্ম দেহে যে উনি যাতায়াত করতে পারেন এটা সত্যি!'

'হ্যাঁ, তার প্রমান তো আমরা পেয়েছি সেবার রাজস্থানেই'

'সত্যি, অলৌকিক ক্ষমতা এই মহাযোগীর!'

'সে তো ঠিক আছে। কিন্তু এই কেসটা কি?'

'দিস ইজ্‌ আ কেস অফ্‌ রিপ্লেস্‌মেন্ট রিইন্‌কার্‌নেশন, বুঝলে!'

'আব ইয়ে কেয়া চক্কর হ্যায়?'

'হুম্‌, পরাবিজ্ঞানের ভাষায় একে এটাই বলে। বিরাট বড় চক্কর!'

'তাতে কী হয়?'

'একজন মৃত ব্যক্তির আত্মা অন্য একজনের শরীরে ঢোকে।'

'ঢুকে তার আসল আত্মাকে রিপ্লেস করে দেয়?'

'হ্যাঁ, ধরো কেউ সিওর মারা যাচ্ছে– সে হঠাৎ বেঁচে উঠল– আর নতুন করে বেঁচে ওঠার পর তার পুরো পার্সোনালিটিই পাল্টে গেল- তার স্বভাব, তার কথা-বার্তা, তার আচার-বিচার, সবকিছু। আবার এরমও হয়, জীবিত ব্যক্তির আত্মাকেই অন্য আত্মা রিপ্লেস করে দিল। এটা পসেস করার বা ভর হওয়ার ব্যাপার নয় কিন্তু, রিপ্লেস বা বদল করার ব্যপার।'

'আচ্ছা তো ইয়ে বাত হ্যায়!'

'যতদূর মনে পড়ছে ৮০-র দশকে ইউ.পি.-তে এরম একটা কেস্‌ হয়েছিল– সেটা কোর্টে অবধি উঠেছিল। আরও কেস্‌ আছে এরকম।'

ভগবানজিও তো এটার কথা বলেছেন না?'

'ভগবানজি মানে পেড়-ওয়ালে বাবার কথা বলছ?'

'না, স্বামীজির মানসপুত্রের কথা বলছি।'

'ওহ হো, হ্যাঁ, দেখতে হবে ওটা। শরীর পরিবর্তন, নাকি সাধনার সাহায্যে শারীরিক বয়সকে নিয়ন্ত্রণ করা, কমিয়ে ফেলা– এই দুটোর মধ্যে কোনটা বলেছেন মনে নে ঠিক তবে এই জাতীয় সাধনার কথা যে উনি উল্লেখ করেছেন সেটা মনে আছে। হিউম্যান সুপার পাওয়ারস্‌, বুঝলে!'

'উনি তো তিব্বতের জ্ঞানগঞ্জের অস্তিত্বের কথাও বলেছেন। আর ৪০-এর দশকের শেষের দিকে তিব্বতি সাধনাও শিখেছেন। জ্ঞানগঞ্জ, মানে 'শম্ভালা'। তাই তো?'

'হ্যাঁ, অনেকের কাছে 'শাঙরি-লা'-ও। তিব্বতি সাধুদের আশ্চর্য ক্ষমতা তো পৃথিবী-বিখ্যাত! হয়তো হিমালয়তে থাকার ফলেই...! যাই হোক, আসল প্রসঙ্গে ফিরি।'

'হ্যাঁ, পেড়-ওয়ালে বাবা কী করে এটা করলেন?'

'উনি যা বললেন সেটা হল এরকমঃ প্রভাবল্লির সেই পিশাচকে আটকাতে গিয়ে উনি বুঝতে পারেন যে তাকে আটকাতে গেলে ওনার নিজের আসল শরীর ত্যাগ করা ছাড়া গতি নেই কারণ পিশাচকে পরাস্ত করতে গেলে তাঁকে অ্যাস্ট্রাল লেভেলে সূক্ষ্ম দেহে পিশাচের সাথে লড়াই করতে হবে। তিনি সেটাই করলেন; সাময়িকভাবে পিশাচকে সফলভাবে বেঁধে রেখে তিনি জনকগড়ে নিজের বাসস্থানে ফিরে গেলেন হাভেলি থেকে অন্তর্হিত হয়ে। এই পিশাচকে বেঁধে রাখা ছিল সাময়িক; তাই ওনাকে নিজের শরীর ত্যাগ করে পিশাচের মোকাবিলা করতে হয় অ্যাস্ট্রাল লেভেলে ফিরে গিয়ে। তবে কোনও কারণে উনি নিজের শরীরে পুনরায় প্রবেশ করতে পারেননি। হয়তো অ্যাস্ট্রাল লেভেলে ওনার যা সময় লেগে গেছিল ততক্ষণ ওনার শরীর সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হত না।'

সিম্মি এতক্ষণে কথা বলল, 'সেই। অ্যাস্ট্রাল টাইমের ব্যাপারে তো আমাদের কোনও ধারণা নেই। পার্থিব সময়ের হিসেবের সাথে সেটা নাও মিলতে পারে। ওটা তো আলাদা একটা ডাইমেনশন!'

সত্য আবার বলল, 'প্রতাপ বাহাদুরের হাভেলি শাপমুক্ত হলেও নিজের শরীরে আর প্রবেশ করতে পারলেন না পেড়-ওয়ালে বাবা। এদিকে ওনার কিছু সাধনা বাকি ছিল– তাই তাঁর প্রয়োজন ছিল একটা নতুন সাধক-শরীর। ওনার সাথে অ্যাস্ট্রাল লেভেলে যোগাযোগ হয় এই বৌদ্ধ লামার। দু-জনেই এনলাইটেন্‌ড মানুষ। ইনি শরীর ত্যাগ করতে চাইছিলেন, আর পেড়-ওয়ালে বাবা করতে চাইছিলেন নতুন শরীর ধারন। একদিন রাতে লামার আত্মা শরীর ত্যাগ করল, আর পেড়-ওয়ালে বাবার আত্মা প্রবেশ করল লাদাখি লামার শরীরে। সেই থেকে উনি এখানেই আছেন এখানকার একজন হয়ে–খোলসটা পাল্টেছে শুধু।'

এই অবধি বলে একটু থেমে সত্য সিম্মিকে জিজ্ঞেস করল, 'কী ভাবছ?'

'নাহ্‌, ভাবছি যে এই এক জীবনে যে আর কী-কী দেখতে আর জানতে পারব তা জানি না!'

'সেই, ওনার সাথে এরম ভাবে এই সুদূর লাদাখে সাক্ষাৎ হয়ে যাবে, তা কে ভেবেছিল বলো?'

'তাও আবার এমন একজনের সাথে যিনি সাধারণ মানুষের কাছে মৃত।'

'বসংসি জির্নানি...!' এটা বলে একটু থেমে সত্য পুরো শ্লোকটা মনে করার চেষ্টা করল।

সিম্মি জিজ্ঞেস করল, 'মানে?'

'ভগবৎ গীতার একটা শ্লোক বলছিলাম।'

'ওহ আচ্ছা। আই সি...! ইয়ে, ওনার সাথে ঠিক কোথায় দেখা হল তোমার?'

'হ্যাঁ, চলো তোমায় নিয়ে যাব ওই মঠে। আমিও ওখানেই দেখা পাই ওনার।'

দুপুর অনেকটা গড়িয়ে গেছিল। একটা ক্যাফেতে হালকা লাঞ্চ সেরে নিয়ে দু-জনে মিলে পেড়-ওয়ালে বাবার সাথে, মানে প্রধান লামার সাথে, দেখা করার জন্য মনাস্ট্রির উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলো ওরা


=== সমাপ্ত ===





নাম: আলাপন রায় চৌধুরী। 
ঠিকানা: দমদম, কলকাতা- ৭০০০৬৫।

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।। কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।      মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কা...

ছড়া ।। প্রেম নদীর মাঝি ।। গোবিন্দ মোদক

  প্রেম নদীর মাঝি  গোবিন্দ মোদক  প্রেম নদীতে ভাসাই ডিঙি উথাল পাথাল জল,  ছোট্ট আমার তরীখানি করছে যে টলমল! জলের উপর ফুটে আছে কতো মোহন ফুল,  ফুলের বোঁটা জড়িয়ে আছে তোমার মাথার চুল!  জলের ভেতর আরো যে জল, টল-মল-টল করে,  বিদেশ থেকে আসছে চিঠি বিরহিনীর ঘরে!  জলের নিচে লুকিয়ে আছে রহস্য অজানা,  সাধুজনে বারণ করেন যাওয়া নাকি মানা!  প্রেমিক মন চায় যে যেতে সেই অচিনপুরে,  সারা জীবন বৈঠা বেয়েও থেকে যায় দূরে!  কিন্তু প্রেমিক শোনে নাকো সাধুজনের বারণ,  সাধ করে তাই ডেকে আনে অতৃপ্তিটার কারণ!  অবশেষে হালে পানি না পেয়ে সে কাঁদে,  বিশ্বভুবন সারা জীবন পড়ছে ঘুঘুর ফাঁদে!  তবুও তো প্রেম নদীতে সবাই ভাসায় তরী,  প্রেম যমুনা উথাল-পাথাল কি যে এবার করি! মন রে মনে মতি রাখো করো সাধুসঙ্গ,   প্রেম নদীতে ভাসিয়ে তরী দেখো আজব রঙ্গ!!   ____________________   গোবিন্দ মোদক।  রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।  পশ্চিমবঙ্গ --- 741103

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

পাপান ও নূতন মিস ।। গোপা সোম

পাপান ও নূতন মিস গোপা সোম       পাপান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই বিদ্যালয়টি বিশাল বড়, অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে অনেক শ্রেণী কক্ষ রয়েছে, কারণ, প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করে বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে কম বেশী ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী। এক কথায়, শহরের বুকে এক অন্যতম গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই বিদ্যালয়ে অনেক সংখ্যক মাস্টারমশাই দিদিমণি আছেন। পড়াশোনায় ও বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম আছে। রেজাল্ট খুবই ভাল হয়।        সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অঙ্কের মাস্টারমশাই অবসর নিয়েছেন, তাঁর স্থানে একজন নূতন মিস এসেছেন। নূতন মিস কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রী সবার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন। সবসময় লাল পেড়ে শাড়ি পরে আসেন, এছাড়া আর কোনো পোষাকে মিসকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। নূতন মিস পাপানদের অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান, এত সুন্দর বোঝান, পাপানের খুব ভালো লাগে মিসের পড়ানো। নূতন মিস বলতে পাপান অজ্ঞান। আর নূতন মিসও পাপানকে খুব স্নেহ করেন। নূতন মিসের কাছ থেকে পাপান অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।        নূতন মিস খুব নিয়মানুবর্তী, উনি সময় দেখে ক্লাসে আসেন, এবং তাঁর পড়ানোর ভাগ পুরোপুরি...

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নিশাবসানের সাথে সাথে জেগে ওঠে ধরণী। জেগে ওঠে নতুন প্রাত্যহিকতার আরো একটি স্বপ্ন নিয়ে --- চিরন্তনের নিত্যনিয়মে। একটু একটু করে প্রভাতআভায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিবসনিসর্গ। ঋতুচক্রে আবারো নতুন মোড়! শারদীয়ার রঙ লেগেছে আজ প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে। ঘাসের ডগায় ডগায় কুয়াশার অন্তরঙ্গ স্পর্শ! সুখাবহ অনুভূতির সবটুকুজুড়ে তাই ভিজেভিজে কেমন একটা হিমেল রোমাঞ্চ। টুপটাপ ঝরে পড়ছে ডাগর যুবতীর মতো শিউলী। অবিরাম আলতো ছোঁয়ায় ভিজেমাটিতে শিহরণ লাগে। স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মন। ভাবনায় ভেসে ওঠে ফেলে আসা আরো কত আশ্বিনের ভালোলাগা! দিনেরআলো আরো চেকনাই হয়ে ওঠে। নদীর দুধার বরাবর বিছিয়ে থাকা কাশবনের বেসামাল আবেগ দুলেদুলে গড়িয়ে পড়ে। তাকে সামনে রেখেই, উৎসবের বল্গাহীন আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ধরার বুকে। মাথার উপরে তখন ঝকঝকে নীলাকাশ। কারোর যেন খেয়ালই নেই --- যার অনাবিল বিস্তারে, অসীম স্বচ্ছতায় চিত্রবৎ প্রতিবিম্বিত হয়েছে পৃথিবীরই উচ্ছ্বাস। ওই দেখ --- অলস ভেসে চলেছে সফেদ ফেনার মতো নিরম্বু মেঘের দল। আদিগন্ত নীলিমায় --- এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। প্রকারান্তরে যেন প্রত...

অভিমান ।। তন্ময় পালধী

অভিমান তন্ময় পালধী   গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি চলছেই। আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। বিকেলে বারান্দায় বসে অনুভাদেবী সবে খবরের কাগজ খুলেছেন, ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামল। একটানা বৃষ্টিতে মন খারাপ হলেও আজ আর বারান্দা ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ডুব দিলেন অতীতে। স্মৃতির ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে উঠলো পুরানো দিনগুলি। কদিন ধরেই চরম ব্যস্ততা বালিয়াল পরিবারে। বাড়ির ছোটমেয়ে অনুভার বিয়ে। সবে ম্যাট্রিক দিয়েছে। তার ইচ্ছা আরও পড়ার, বাবার ও তাই ইচ্ছে। কিন্তু সমাজ! তখনকার রীতিতে মেয়ের বয়স পনেরো ষোল হলেই দিয়ে দাও বিয়ে। অগত্যা বাবা আর কি করেন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সিলেকশন হয়েও তাই ভর্তি হওয়া হলো না। বিষণ্ণতা নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। সেদিনও বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে যেন চারিদিক ভেসে যাবে। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সাড়ে আটটায় লগন। মুহূর্তগুলো যেন কাটতেই চায় না। এক একটা মিনিট ঘন্টাখানেক বলে মনে হচ্ছে। চিরকালই অন্তর্মুখী সে। তার মনে যে কি ঝড় চলছে কেউই বুঝতে পারছে না। অথচ বিপরীতমুখী একটা আশাবাদিতা তাকে স্থির অবিচল রেখে দিয়েছে। মনের গতিপ্রকৃতি...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার

গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার  আলোর দিশারি শিক্ষক তুমি অন্ধকারে আলো, তুমি পথ দেখাও অচেনা কালো। ছাত্রের চোখে স্বপ্নের বাতি, তুমি জ্বালাও প্রতিদিন রাতে। তোমার কথায় জেগে ওঠে প্রাণ, পথ চলা শিখি, মুছে যায় জ্ঞানহীন ধ্যান। তুমি হৃদয়ের দর্পণ স্বচ্ছ, যত শিখি ততই হই স্পষ্ট। ছাত্র যদি হয় কচি চারাগাছ, শিক্ষক তারে দেন শেকড়ের রস। শক্তি জোগাও, ভরাও সাহসে, স্বপ্ন সাজাও অন্তরের গহনে। তুমি আকাশ, আমরা তার তারা, তুমি ছাড়া চলতে পারি না সারা। যতদিন বাঁচি থাকবে মনে, শিক্ষকের ঋণ লেখা রবে গগনে। শ্রদ্ধার পাঠশালা চকের দাগে কালো বোর্ডে, লিখে চলে শিক্ষক দিনরাতে। ছাত্র বসে মন ভরে শোনে, সত্যের পথ শেখে তার সনে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিলন, তাতেই গড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের সৃজন। বইয়ের পাতায় প্রাণের ছোঁয়া, শিক্ষক দেন জ্ঞানের বীজ বোনা। ভুল করলে ধমক দেন স্নেহে, আবার হাসেন বুক ভরা প্রাণে। ছাত্রের চোখে দেবদূত তুমি, ভুলের অন্ধকারে করো আলোকধ্বনি। শিক্ষা নয় কেবল কাগজের লেখা, শিক্ষক শেখান বাঁচার দেখা। এই তো জীবনের সত্যি মানে, ছাত্র–শিক্ষক একসাথে প্রাণে। ছাত্রের কণ্ঠে গান শিক্ষক তুমি জীবনের গান, তুমি দিলে জ্ঞানের দান। তোমা...

সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী

সমুদ্র আর অস্তিত্ব  সুব্রত চৌধুরী  সমুদ্র শুধু নিরন্তর ঢেউয়ের সান্নিধ্য নয়   নয় সে নিখাদ গভীরতায় মুগ্ধ এক শরীর    পাতালের রহস্যে ফেরা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে  বুঝতে থাকি— সমুদ্র আসলে সভ্যতার বিনম্র স্পর্শ  সম্পর্কের পরাগরেণু মেখে তরল হয়ে ওঠা অস্তিত্ব  সে কোনো স্থানাঙ্কিত জলরাশি নয়  পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা দৃশ্যের গতিশীল যৌবন  সমুদ্র হারিয়ে গেলে অস্তিত্বে ফিরে আসে শূন্যতা  অদৃশ্য হয়ে থাকা বিবেকের দর্পণে  যখন ফুটে ওঠে আপন ক্ষুদ্রতার প্রতিবিম্ব  নিঃশব্দে হয়ে যায় নিজের উপলব্ধি—   দেহের মানুষকে ছুঁয়ে যায় মনুষ্যত্বের সমুদ্র   আমিত্ব ডুব দেয় অস্তিত্বের তরল সম্পর্কের বন্ধনে               —————————  Dr. Subrata Chaudhuri  Asst. Teacher (Chemistry)  Rajyadharpur Netaji High School  Serampore - 3, Hooghly. 

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি ।। শ্যামল হুদাতী

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি শ্যামল হুদাতী  ভূমিকা: বাংলা সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি সুদীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতিফলন। গঙ্গা–পদ্মা–মেঘনা নদীবিধৌত ডেল্টা অঞ্চল শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয়, এটি মানব সভ্যতার একটি প্রাচীনতম উর্বর ক্ষেত্র। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে প্রাচীন, মধ্যযুগ, নবজাগরণ এবং আধুনিক সময় পর্যন্ত বাংলা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির সহাবস্থানে গড়ে উঠেছে । বাংলা সভ্যতা তাই একক কোনো জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের সম্মিলিত রূপ। অধ্যায় ১: ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য বাংলা সভ্যতার শিকড় বোঝার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন এর ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট অনুধাবন। ১.১ নদী–ডেল্টা ও উর্বর ভূমি বাংলা অঞ্চল গঠিত হয়েছে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পলি জমে। নদীর অববাহিকা পলি–সমৃদ্ধ কৃষিজমি তৈরি করে, যা প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই ধানচাষের জন্য উপযুক্ত ছিল। বর্ষাকালীন প্লাবন নতুন পলি এনে জমিকে উর্বর রাখত, ফলে গ্রামীণ কৃষিনির্ভর সভ্যতা বিকশিত হয়। ১.২ বাণিজ্যপথ ও সাংস্কৃতিক সংযোগ নদীপথ ও...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত

গল্প দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে            সমীর কুমার দত্ত  সমর গুপ্ত নামের যুবকটি সর্বদা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরতো। ওটা শিখেছে ও ওর চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো শম্ভুনাথ সরকারের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে।  ধুতি পরার অভ্যাস শম্ভুর গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এসে পরীক্ষা দিয়ে  কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি পায়। নাইটে নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে বি.কম পাশ করে। রবিবার দিন আর অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে বিকেল বেলায ধুতি পাঞ্জাবি পরে সমরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ঘোরা বলতে  পাড়ার শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলের পাশে উকিলবাবুর বাড়ির সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সমরের সঙ্গে গল্প করতে। বহুদূর থেকে হাওড়ার গার্লস্ কলেজে পড়তে আসা চামেলী ঘোষ নামের একটি মেয়ে ওই লেডিজ হোষ্টেলে বোর্ডার হিসেবে এসে ওঠে। নিত্য যাতায়াতের পথে ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথ ও সমরের সঙ্গে চোখের দেখায় পরিচিত হয়ে হাসি বিনিময় করে। হাসির পরিণতিতে বাক্যালাপ, বাক্যালাপের পরিণতি প্রেমে পৌঁছায়। একদিন সমর গুপ্তের সালিশিতে শম্ভুনাথের সঙ্গে চামেলীর ঘনিষ্ঠ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...