Skip to main content

গল্প ।। গোপনে ।। আবরার নাঈম চৌধুরী




গোপনে

আবরার নাঈম চৌধুরী 


ঢাকায় নতুন এসেছে নওরিন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এলিফেন্ট রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের একটি ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হয়েছে। যেহেতু ৩ মাস ব্যাপী ট্রেনিং, থাকার তো একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। তাই বাবার সাথে ঢাকায় আসা। 
জিগাতলা, ফার্মগেটে ভালো হোস্টেল না পাওয়ায় মিরপুরের একটি হোস্টেলের তৃতীয় তলার দক্ষিণের রুমটাতে উঠেছে সে। রুমে ঢুকতেই পরিচয় হয় স্নেহা আর সিন্থিয়ার সাথে। অল্প কয়েকদিনে তাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল নওরিনের। 
সপ্তাহের শেষ দিন। ৮ই জানুয়ারি ২০২১। সিন্থিয়া নওরিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের টিএসসিতে ঘুরতে নিয়ে যায়। টিএসসি এসে নওরিনের একঘেয়ে ভাবটা দূর হয়ে গেল। টিএসসির মাঠে বসে ওরা চা খাচ্ছিল। হঠাৎ সিন্থিয়ার ডাক , "এই! আবরার!" 
দূরে পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চির এক যুবক পিছে ঘুরে সিন্থিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।                      
"এদিকে আয়।"
সিন্থিয়ার ডাকে ধীর পায়ে তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল আবরার। 
সিন্থিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, "কীরে কেমন আছিস? "
হুডির পকেটে দুই হাত রেখে আবরার বলল, "আরে তুই এখানে?"
সিন্থিয়া হাসিমুখে বলল, "পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, আমার বান্ধবী নওরিন।" 
আবরার ও নওরিন একে অপরের দিকে তাকাল। 
"বস, এখানে।"
সিন্থিয়ার কথায় টিএসসির সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়ল আবরার। 
সিন্থিয়া ওকে জিজ্ঞেস করল, "চা খাবি?" 
আবরার না সূচক মাথা নাড়ল।
সিন্থিয়া আবার বলতে শুরু করল, "জানিস নওরিন! ও আমার ছোট বেলার বন্ধু।"
নওরিন বলল, "ও, আচ্ছা।" 
"আমরা ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে।"
নওরিন আবার আবরারের দিকে তাকাল। আবরারের চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ নামিয়ে ফেলল ।
কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ। নীরাবতার দেওয়াল ভেঙ্গে আবরার নওরিনকে বলল, "আপনি কী সিন্থিয়ার ছোটবেলার বান্ধবী?"
নওরিন হেসে বলল, "না, না। আমাদের বন্ধুত্ব কিছু দিনের।" 
"কিছু দিনের?" 
"হ্যাঁ।"
"বুঝলাম না বিষয়টা।"
"আসলে, কিছু দিন হলো আমি হোস্টেলে উঠেছি। ওখানেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব। আমরা একই রুমে থাকি।"
"ও, আচ্ছা।" 
"আপনি কী করছেন?" 
নওরিনের প্রশ্নের উত্তরে আবরার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল এর মধ্যেই সিন্থিয়া হাসিমুখে বলে উঠল, "ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এখন সে শিক্ষিত বেকার।"
সিন্থিয়ার কথা শুনে আবরার ও নওরিন দু'জনই মুচকি হাসল। 
আবরার নওরিনকে জিজ্ঞেস করল, "আপনি কী করছেন? পড়াশুনা?"
"না, না। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি এই বছর।"
"কোন সাবজেক্ট?"
"ট্রিপল ই।"
"বাহ, আমিও তো ট্রিপল ই থেকে পাশ করেছি।"
"এই বছর?"
"না, ২০১৯ এ।" 
অতঃপর নওরিন কিছু বলতে যাচ্ছিল এর মধ্যেই সিন্থিয়া আবরারকে উদ্দেশ্য করে নওরিনকে বলল, "জানিস ও অনেক ভালো গল্প লিখে।" 
নওরিন মুচকি হেসে আবরারের দিকে তাকাল। আবরার একটু লজ্জা পেয়ে বলল, "না, আসলে তেমন কিছু না, টুকটাক পত্রিকাতে লিখি।"
"আচ্ছা, নওরিন চল, নিউমার্কেট যেতে হবে, টুকটাক কেনাকাটা আছে।" বলেই সিন্থিয়া উঠে দাঁড়াল। 
নওরিনও উঠে দাঁড়াল, সাথে সাথে আবরারও। 
"আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।" বলেই আবরার মুচকি হাসল। 
"আমারও, ভালো থাকবেন।" বলেই নওরিনও  হাসল।

৯ই জানুয়ারি ২০২১। কুমিল্লার রাণীর দীঘির পাড়। বিকেল ৪টা বেজে ১৫ মিনিট। কসবা হাউজ থেকে বের হলো আবরার। কুমিল্লা নিজ বাসায় এলেই বিকেল বেলা রাণীর দীঘির পাড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে সে। দীঘির পাড় ঘেঁষে হাঁটছে সে হঠাৎ এমন ভাবে চমকাল যেন ভূত দেখেছে। সামনেই দীঘির পাড়ে নওরিন বসা। কাছে গিয়ে  কথা বলব? ভাবে আবরার। অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই নওরিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, "আরে আপনি?" 
নওরিন চমকে গেল আবরারকে দেখে, বলল, "আপনি?"
আবরার বলল, "হ্যাঁ, আপনি এখানে?"
"না, এমনি আসলাম। আপনি এখানে কী করছেন?"
"আমার বাসা তো এখানেই।"
"কোথায়?"
"কসবা হাউজ।"
"এই বিল্ডিংটা। "
"হ্যাঁ।" 
"দারুণ তো!"
"কিভাবে দারুণ?"
"এই যে বাসা থেকে বের হলেই এত সুন্দর একটি জায়গা, মন খারাপ হলেই দীঘির পাড়ে এসে বসা যায়।"
"আপনার মন খারাপ?"
নওরিন বিস্মিত কণ্ঠে বলল, "আপনি কিভাবে বুঝলেন?"
আবরার মৃদু হেসে বলল, "এই যে বললেন মন খারাপ হলে বসা যায়, তাই ভাবলাম আপনারও হয়তো মন খারাপ।"
"ও, আচ্ছা। "
"বসতে পারি?"
"সরকারি জায়গা বসে পড়ুন।" বলেই নওরিন মুচকি হাসল। 
"দারুণ বলেছেন তো, সরকারি জায়গা।" 
আবরার নওরিন থেকে একটু দুরেই বসল। অতঃপর বলল, "বলুন, আপনার মন খারাপ কেন?"
"কিছু না, এমনেই।" 
"এমনি এমনি কারো মন খারাপ হয় নাকি?"
"হয়।"
"না হয় না।"
"হয়।"
"আরে বললাম তো হয় না।" 
নওরিন আবরারের দিকে চোখ বাকা করে বলল, "আপনি আমার কে হন যে আপনাকে বলব?"
"হইনি, হতে কতক্ষণ?"
"মানে?"
"না মানে, আপনি চাইলে হতে পারি।"
"আমি চাইলে? যদি না চাই?"
"তাহলে বলব আমি পৃথিবীর সব থেকে দুর্ভাগা পুরুষ।"
"কেন? কেন? দুর্ভাগা কেন?"
"আবরার নওরিনের চোখে চোখ রেখে বলল, "এত্ত সুন্দর একটা মানুষের আপন কেউ হতে পারা, সৌভাগ্য নয় কী?" 
নওরিন লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মুচকি হেসে বলল, "আমি যে সুন্দর তা আপনাকে কে বলেছে?"
আবরারও মুচকি হেসে বলল,  "আবরার বলেছে।"
"তা আবরার বললেই কী বিশ্বাস করতে হবে?"
"আবরার নওরিনকে মিথ্যা বলবে না।" 
"তাই?"
"হুম, আমি মিথ্যা বলছিনা। আপনি অনেক সুন্দর।" 
কথাটি শুনে নওরিন আর কিছু বলল না। লজ্জায় চুপ করে থাকল।
নীরাবতা ভেঙ্গে আবরার জিজ্ঞেস করল, "হতে পারি আপনার আপন কেউ?"
নওরিন বলল, "ভেবে দেখব।" 
"ভেবে দেখার কী আছে?"
"আমি হুটহাট করে তো আর যাকে তাকে আপন করে নিতে পারি না।"
"আমি যাকে তাকে হয়ে গেলাম?"
"না, না, মানে আপনাকে আরো ভালোভাবে চিনি, জানি।এরপর না হয়..."
"ঠিক আছে।" 
কিছুক্ষণ কি যেন চিন্তা করে গলার স্বর নিচু করে আবার আবরার বলল, "আপনার মোবাইল নাম্বারটা পেতে পারি?"
"কেন? নাম্বার কেন?"
"না, মানে এই যে বললেন আরো ভালো করে চিনতে চান, জানতে চান, তাই বলছিলাম, নাম্বার পেলে মাঝে মধ্যে আপনার সাথে কথা হলো।"
"০১৭১..."
সূর্য অস্ত যাচ্ছে পশ্চিম দিগন্তে। পাখিরা নীড়ে ফিরছে। আবরার নওরিনকে দেখছে। অপরূপ সুন্দর তাঁর চোখ, ফুলের পাপড়ির মতো ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, দুধে আলতা রং।
"এভাবে তাকিয়ে থাকা কিন্তু ঠিক না।"
আবরার মৃদু হেসে দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, "কই? কিছু না।"
নওরিন মুচকি হেসে বলল, "এভাবে তাকিয়ে থাকলে প্রেমে পড়ে যাবেন।" 
"তাই?"
"হুম, আর প্রেম কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।" 
আবরার নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি তো তা ই চাই।"
"মানে?" বলেই নওরিন হেসে ফেলল। 
"না কিছু না। চলেন উঠি। সন্ধ্যা হয়ে এলো।"
নওরিন আর আবরার উঠে দাঁড়াল। 
"আসি।" বলেই আবরার নওরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। 
নওরিন বলল, "ভালো থাকবেন।" 
আবরার মুখে হাসি নিয়ে বলল, "আপনিও।" 
নওরিন একটা রিক্সা ভাড়া করে উঠে পড়ল। আবরার তখনো দাঁড়িয়ে। নওরিনের রিক্সা যতক্ষণ তার দৃষ্টির সীমারেখায় ছিল ততক্ষণ সে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রিক্সা চোখের আড়াল হতেই সে বাড়ির পথ ধরল।

রাত বারোটা পনেরো মিনিট। আবরার তার প্রিয় লেখক ইমদাদুল হোক মিলনের একটা উপন্যাস পড়ছিল। হঠাৎ তার মুঠোফোনটা বেজে উঠল। উপন্যাসের পাতা থেকে চোখ সরিয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই দেখল অপরিচিত নাম্বার। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, "হ্যালো!"
"হ্যালো, কে বলছেন?" 
"আবরার বলছেন?" 
"জি, বলছি। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।" 
"চিনার কথাও না।"
"মানে?"
"মানে, আমি তো কোন সেলিব্রিটি না।"
"বুঝলাম, সেলিব্রিটি না। কিন্তু আপনি কে?"
"গলার কণ্ঠস্বর শুনেও বুঝতে পারছেন না আমি কে?"
"না তো।"
"তাই?"
"হুম।"
"ঠিক আছে। তো আপনার কী মনে হয়, এত রাতে আপনাকে কে ফোন দিতে পারে?" 
"কে দিতে পারে?"
"আপনি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি।"
"জানি না। এত রাতে কে ফোন দিবে?"
"কেন আপনার গার্লফ্রেন্ড ফোন দেয় না।" 
"না তো।"
"কেন?" 
"আমার গার্লফ্রেন্ড থাকলেই তো দিবে।" 
"ঠিক আছে বুঝলাম। কাউকে আশা করছিলেন? কেউ আপনাকে আজ ফোন দিবে।" 
"না তো।"
"তাই?"
"হ্যাঁ। কে দিবে ফোন?"
"ঠিক আছে, রাখি।" বলেই নওরিন ফোন কেটে দিল। 
আজীব তো। কে মেয়েটা? আবরার মনে মনে ভাবে। 
মুঠোফোনটা রেখে বইটা হাতে নিতেই আবার মুঠোফোনটা বেজে উঠল। 
"হ্যালো।"
"হ্যালো, আপনি কি গাধা বলছেন?"
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এমন কথা শুনে আবরার নড়ে চড়ে বসল। 
"কে গাধা?"
"আপনি গাধা।"
"মানে?" 
"গাধাকে গাধা বলব না তো কী বলব?"
"আমি রাখি।" 
"এই গাধা! আমি নওরিন।"
"কে?"
"নওরিন।"
"আপনি?"
"হ্যাঁ, আমি।"
"আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?" 
"মন থেকে চাইলে সবই পাওয়া যায়।" 
"হ্যাঁ?"
"জি।" 
এবার আবরার কণ্ঠস্বর একটু নিচু করে বলল, "তা মন থেকে চাওয়ার কারণটা জানতে পারি?" 
নওরিন লজ্জা পেল, বলল, "সব কারণ জানতে হয় না।" 
"কেন? কেন?" 
"হার্ট অ্যাটাক হয়।" 
আবরার নওরিনের কথা শুনে হেসে ফেলল। অতঃপর বলল, "আমার তো হার্ট নেই।"
"নেই মানে?"
"হার্ট চুরি হয়ে গিয়েছে।" 
"মানে?"
"কোন এক মায়াবী রাজকন্যা আমার হার্ট চুরি করেছে।" 
"তা সেই মায়াবী রাজকন্যার নামটা জানতে পারি?"
"নাম তো বলা যাবে না। কিন্তু সে কেমন তা বলতে পারি।"
"ঠিক আছে বলেন।"
আবরার সোফায় বসে পড়ল। অতঃপর চোখ বন্ধ করে মুঠোফোনের অপর পাশে থাকা নওরিনকে বলল, "সুন্দর তাঁর চোখ, ফুলের পাপড়ির মতো ঠোঁটে মিষ্টি হাসি,  দুধে আলতা রং।" 
"বুঝতে পেরেছি।" 
"সত্যি বুঝতে পেরেছেন?"
"হ্যাঁ।"
"কে বলেন তো?"
"বলতেই হবে?"
"হ্যাঁ।" 
"না বললে হয় না?" 
"না।" 
"আমি কাল ঢাকা ফিরছি। যাবে আমার সাথে?"
হঠাৎ নওরিন আবরারকে আপনি থেকে তুমি বলাতে থমকে গেল। 
"তুমি যাবে তো? কী হল? কথা বল?"
"নওরিন?" 
"কি?"
আবরার চুপ হয়ে রইল। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারল না। 
"বল?"
"আসলে..."
"বল?"
"না। কিছু না।"
"বল বলছি। নাহলে কিন্তু আমি ফোন রেখে দিব।"
"না, না।"
"বল তাহলে?"
আবরার নিচু কণ্ঠে বলল, "তোমাকে খুব পছন্দ করি।"
নওরিন মুচকি হেসে ফোনের অপর পাশে থাকা আবরারকে বলল, "শুধু পছন্দ?"
"না মানে..."
"আচ্ছা আমি রাখছি।"
"না, না শুনো। এই নওরিন?"
"বল।"
"ভালোবাসি তো।"
এই কথা শুনে নওরিনের হৃদয় নড়ে উঠল। খুশিতে, লজ্জায় মুচকি হেসে বলল, "কাল ১১টায় জাঙ্গালিয়া বাস স্ট্যান্ডে থেকো।"
"ঠিক আছে। দেখা হচ্ছে।"
"রাখি।" 
নওরিন ফোনটা রেখে দিল। অতঃপর বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।   আবরারের প্রতি এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে ওর মনে। এক অদ্ভুত অনুভূতি। একটা মনের টান। দেখতে চাওয়ার আকুলতা। এটাই কি তাহলে ভালোবাসা? নওরিন ভাবে।
বিছানায় পিঠ এলিয়ে দেয় নওরিন। আবরারকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায়। সেই কল্পনার রাজ্যে নেমে আসে ঘুম নামক নীরাবতা। অতঃপর নওরিন তার প্রিয় আবরারকে নিয়ে পাড়ি দেয় স্বপ্নের রাজ্যে। সেই স্বপ্ন দীর্ঘায়িত হয় ভোর পর্যন্ত।   ভোরের মিষ্টি বাতাস জানালা ভেদ করে নওরিনের চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে নওরিন। আচ্ছা, আবরার এখন কী করছে? ঘুমাচ্ছে তাই না? নওরিন ভাবে। এভাবেই এই স্নিগ্ধ মিষ্টি ভোরে নওরিনের চিন্তার রাজ্যে আবরারের পদচারণ হয়। 

১০ই জানুয়ারি ২০২১।  ঢাকাগামী বাসের সামনে বেশ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে আবরার। আর মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই বাস ছাড়বে কিন্তু নওরিন এখনো এসে পৌঁছায়নি। তাই সে বেশ চিন্তিত। নওরিন কি আসবে? এখনো আসছে না কেন? ফোন দিলাম, ফোনটাও ধরছে না। কোন বিপদ হলো না তো? ভাবে আবরার। 
"স্যার বাসে উঠে বসুন। বাস একটু পরেই ছেড়ে দিবে।" 
বাসের সুপার ভাইসরের কথা শুনে সে আরো বেশি চিন্তায় পড়ে গেল। 
"এই টিকেট কেটেছ?"
পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে আবরার পিছে তাকিয়ে দেখল নওরিন দাঁড়িয়ে। 
নওরিনকে দেখে তার সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। মুচকি হেসে বলল, "দেরি হলো যে?" 
"সেসব কথা পরে হবে, আগে বল টিকেট কেটেছ কিনা?"
"হ্যাঁ। চল, বাসে উঠি।" 
"বাস ছাড়বে কয়টায়?"
"এই তো, পাঁচ মিনিট পরই।"
"ঠিক আছে চল।" 

এয়ার কন্ডিশন বাসের ডি থ্রি এবং ডি ফোর সিটে বসে পড়ল আবরার আর নওরিন। নওরিন জানালার পাশেই বসলো। বাসে ওরা সহ মাত্র ৬ জন যাত্রী। 
"এই আবরার!"
"হ্যাঁ?"   
 "একটা পানির বোতল কিনে আনবে? খুবই পিপাসা পেয়েছে।"
"আচ্ছা তুমি বসো। আমি নিয়ে আসছি।" 
পানির বোতল কিনার উদ্দেশ্যে আবরার বাস থেকে নেমে দেখল বাস কাউন্টারের পাশের দোকানটা বন্ধ। অগত্যা দূরের দোকানের উদ্দেশ্যে সে পা বাড়াল। এদিকে আবরারের জন্য অপেক্ষা করছে নওরিন। অনেকক্ষণ তো হয়ে গেল। আসছে না কেন? কোথায় গেল? নওরিন ভাবে। হঠাৎ বাস ছেড়ে দিল। জাঙ্গালিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস বের হয়ে দ্রুত গতিতে পদুয়ার বাজার বিশ্ব রোডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  ডি ফোর সিটে বসে থাকা নওরিন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে অনেকবার মুঠোফোনে আবরারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করল। কিন্তু আবরার ফোন ধরল না। 
ওদিকে পানির বোতল নিয়ে দোকানিকে টাকা দিয়ে পিছনে ঘুরতেই আবরার  দেখল বাস দ্রুত গতিতে ওকে ফেলে চলে যাচ্ছে। 
"এই মামা!" বলেই বাসের পেছন পেছন দৌড়াতে শুরু করল সে। শেষে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো একটা সিএনজিতে উঠে ড্রাইভারকে বলল, "মামা! ঐ বাসের পিছু নাও জলদি।"
ড্রাইভার বুঝতে পেরে  সিএনজি স্টার্ট করে দ্রুত গতিতে বাসের পিছনে ছুটাল। 
ওদিকে ভয়ে দুশ্চিন্তায় নওরিনের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কি করবে সে বুঝতে পারছে না।   
অবশেষে বাস পদুয়ার বাজার বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়াল। আবরার দ্রুত সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে বাসে উঠে দেখল নওরিন অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। 
নিজ সিটে বসে নওরিনকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে আবরার বলল, "নাও, পানির বোতল।" 
নওরিন অশ্রুসিক্ত রাগান্বিত চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে রইল।
"কী হলো? নাও?" 
"মজা করছ?" 
 আবরার ভ্রু কুঁচকে বলল, "মজা? মজা কেন করব?"
নওরিন অশ্রুসিক্ত রাগান্বিত লাল লাল চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল, "কোথায় ছিলে এতক্ষণ?" 
"আরে বাস তো ছেড়ে দিয়েছিল। ভাগ্যিস রাস্তার ধারে একটা সিএনজি পেয়েছিলাম।"
"আমি যে বার বার ফোন দিচ্ছিলাম। ধরলা না কেন?"
"কই?" বলেই আবরার পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে দেখে ৬টা মিসড কল।  
নওরিন আর কিচ্ছু বলল না। অশ্রুসিক্ত চোখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
আবরার নওরিনের ডান হাতটি ধরে বলল, "নওরিন! আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও।" 
উত্তরে নওরিন কিছু বলল না। বাইরে তাকিয়ে রইল। 
"ক্ষমা করে দাও। আর এমন হবে না। সব সময় তোমার ফোন ধরব। ফোন আর সাইলেন্ট রাখব না।"
নওরিন এবারো কিছুই বলল না। 
"ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।" বলেই আবরার সিট থেকে উঠে যেতে উদ্যত হওয়ার সাথে সাথেই নওরিন তার হাত ধরে ফেলল। অতঃপর বলল, "এই বাঁদর! তুই কী কিছুই বুঝিস না?"
"কী বুঝব?"
"কিছুই বুঝিস না?"
"এখানে বুঝার কী আছে?"
"বুঝার কিছু নেই?"
"ফোন ধরিনি। আর তাছাড়া হয়তো ভয় পেয়েছ।" 
"এই বাঁদর! আমার চোখে পানি কেন বুঝিস না? কার জন্য বুঝিস না?"
"না।"
"না?" 
"না।" 
"কিভাবে বুঝবি? তুই তো বাঁদর।"
আবরার নিচু গলায় বলল, "বাঁদর তো গাছে থাকে।"
"শয়তান!" বলেই আবরারের শরীরে আলতো প্রহার করল নওরিন।
আবরার মুচকি হেসে নওরিনকে জড়িয়ে ধরল। নওরিন আবরারের বুকে ফেলল স্বস্তির নিশ্বাস। সে অনুভব করল যেন এক ভারি পাথর তার বুক থেকে সরে গিয়েছে। দূর হয়ে গিয়েছে সমস্ত দুশ্চিন্তার আঁধার। এটাই তাহলে ভালোবাসা? হ্যাঁ, এটাই ভালোবাসা। নওরিন ভাবে।

ধীরে ধীরে নওরিন আর আবরারের সম্পর্ক গভীর হতে শুরু করল। আবরার একটা দিন নওরিনকে না দেখলে যেমন স্থির থাকতে পারে না তেমনি নওরিনও। সপ্তাহে তিন দিন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে নওরিনের ট্রেনিং কোর্সের ক্লাস। ক্লাসের সময় সূচি দুপুর দুইটা ত্রিশ মিনিট থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত। আবরার প্রতিদিন ঠিক চারটা পঞ্চাশ মিনিটে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নওরিনের জন্য অপেক্ষা করে। নওরিন ক্লাস থেকে বের হলেই দু' জন বেইলি রোডের কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। কোনো দিন ঘুরতে যায় রমনা পার্কে কোনো দিন টিএসসিতে। 
২৮ই জানুয়ারি ২০২১। বিকাল ৪টা। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এর তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে আছে আবরার আর তার সেই ছোটবেলার বান্ধবী সিন্থিয়া। 
"কীরে তোর ফোনে কথা বলা হল?" 
সিন্থিয়া মুঠোফোন ভ্যানেটি ব্যাগে দ্রুত ঢুকিয়ে আবরারকে বলল, "আরে দোস্ত, সাব্বির ফোন দিয়েছিল।" 
"সাব্বির?"
"হ্যাঁ।"
"আচ্ছা।"
"কেন ডেকেছিস বল।"
"কেন তোর কী তাড়া আছে?"
"হ্যাঁ, তাড়া আছে।"
"কেন? কোথায় যাবি?"
"একটু এলিফেন্ট রোড যাব।" 
"কেন? ওখানে কী?"
"তা জেনে তোর কী?"
"বুঝি বুঝি।" 
"কী বুঝেছিস?"
"ঐ ন্যাকা নওরিনের সাথে যে তোর কিছু একটা চলছে তা কী আমি বুঝি না?"
"সিন্থিয়া! আমি ওকে ভালোবাসি।"
"ভালোবাসিস!"
"হ্যাঁ।" 
"আর আমাকে?" 
"তোকে মানে? তুই আমার ফ্রেন্ড।"
"শুধুই ফ্রেন্ড?"
"মানে?"
"মানে কী তুই বুঝিস না?"
"কী বুঝব?"
সিন্থিয়া আর কিছু বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। 
"কি হলো? বল? মানে কী?"
"বুঝবি না তুই।" বলেই সিন্থিয়া হাঁটা দিল। সিন্থিয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা অশ্রু। গোপনে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে সে বসুন্ধরা  সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে পড়ল।

রাতে হোস্টেলে ফিরেনি সিন্থিয়া। চট্টগ্রামে নিজ বাসায় চলে যায় সে। রাতের খাবার খেয়ে চুপচাপ নিজ রুমে শুয়ে আছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোয় তার অশ্রুসিক্ত চোখ ঠিক স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু মনের ভেতর দাউ দাউ করে জ্বলা প্রতিশোধ আর হিংসের আগুন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। নওরিন কী আমার থেকেও সুন্দরী? ন্যাকা একটা। ন্যাকামি ছাড়া তো কিছুই পারে না। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আবরারের মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি আবরারকে ছোট থেকে ভালোবাসি। আমার এই ভালোবাসার কী কোন মূল্য নেই ওর কাছে? বলা নেই কওয়া নেই,  কোথা থেকে মেয়েটা উড়ে এসে জুড়ে বসল আমাদের মাঝে। সে কে? এত সাহস তার। এসব ভাবতে ভাবতে সিন্থিয়া কম্পিউটারের সামনে এসে বসল। 

রাত ২টার দিকে নওরিনের মুঠোফোন ভাইব্রেট করে উঠল। মুঠোফোন হাতে নিয়ে  সে দেখল মেসেঞ্জারে মেসেজ এসেছে সিন্থিয়ার। মেসেঞ্জার অ্যাপে সিন্থিয়ার মেসেজ দেখে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। মুঠোফোনের স্ক্রিনে সে স্পষ্ট দেখল সিন্থিয়া আর আবরারের মেসেজের কিছু স্ক্রিনশট। এসব সে কী দেখছে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। আবরার মেসেজে সিন্থিয়াকে লিখেছে, "নওরিন একটা চরিত্রহীন মেয়ে। অনেক ছেলের সাথে তার সম্পর্ক। আমি তোমাকে চাই সিন্থিয়া। আমি তোমাকে ভালোবাসি।" 
এসব দেখার সাথে সাথে কাঁপা কাঁপা হাতে নওরিন আবরারকে ফোন দিল। 
ফোনের অপর পাশ থেকে আবরার বলে উঠল, "হ্যালো নওরিন?"
"তুমি কোথায়?"
"এই তো রুমে। কেন?"
"না এমনি।"
"তোমার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? কী হয়েছে?"
"না, কিছু না।"
"বল?"
"না।"
"বল বলছি?"
"আবরার?" বলেই নওরিন কেঁদে দিল। 
"এই তুমি কাঁদছ কেন? কি হয়েছে? নওরিন?"
নওরিন কাঁদতে থাকে। নীরবে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। 
"নওরিন? হ্যালো?"
নওরিন ফোন কেটে দেয়। আবরার প্রচন্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কি করবে বুঝতে পারছে না। 
হঠাৎ আবরারের মুঠোফোন ভাইব্রেট করে উঠে। মুঠোফোনের স্ক্রিনে দেখে নওরিনের মেসেজ। তাতে লিখা, "কাল বিকাল ৪টায় টিএসসিতে থেকো।" 

বিকেল ৪টা। টিএসসির এক পাশে নওরিন আর সিন্থিয়া দাঁড়িয়ে আছে। 
সিন্থিয়া নওরিনকে বলল, "দোস্ত! আবরার মোটেও ভালো ছেলে না। তুই এই সম্পর্কটা করার আগে আমাকে একটাবার জানানো প্রয়োজন মনে করলি না?" 
নওরিন সিন্থিয়াকে বলল,  "জানালে কী হত?"
"জানালে এই সম্পর্কটা হতে দিতাম না।" 
"আচ্ছা। কিভাবে?" 
"কিভাবে আবার কী? তোকে নিষেধ করতাম এরকম চরিত্রহীন ছেলের সাথে সম্পর্কে না জড়াতে।"
"চরিত্রহীন?"
"হ্যাঁ। তা নয় তো কী? চরিত্রহীন না হলে রাত ১টায় তোকে ফোন, মেসেজ না দিয়ে আমাকে কেন মেসজ দিল? আমাকে কেন ভালোবাসি বলল?" 
"হুম। ঠিক বলেছিস।"
"এই তো বুঝলি।"
"তো আমার এখন কী করা উচিত?"
"ব্রেকআপ করে ফেল।"
"ব্রেকআপ?"
"হ্যাঁ।"
"তারপর?"
"তারপর কী?"
"তারপর তুই এই সুযোগটা কাজে লাগাবি তাই তো?"
নওরিনের কথা শুনে চমকে গেল সিন্থিয়া, বলল, "সুযোগ মানে? কিসের সুযোগ?"
"নওরিন উত্তেজিত হয়ে বলল, "তুই খুব নিজেকে চালাক ভাবিস তাই না?"
"কী বলতে চাস?"
"তুই কী ভেবেছিস আমি কিছুই জানি না?"
"কী বলতে চাস? স্পষ্ট করে বল।"
"বলছি।" 
নওরিন মুঠোফোনটা বের করে আবরারকে ফোন দিয়ে বলল, "এই তুমি একটু এদিকে আসো।"
আবরার দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। সিন্থিয়া আবরারকে এদিকে আসতে দেখে দ্বিধায় পড়ে যায়। 
আবরার কাছে বলল, "হ্যাঁ বল।" 
"তোমার মোবাইলটা বের কর।" 
"কেন?"
"আমি বলছি বের কর।"
আবরার মোবাইল বের করল। নওরিন আবরারের মোবাইলটা নিজ হাতে নিয়ে সিন্থিয়াকে প্রশ্ন করল, "এটা কী মোবাইল?"
সিন্থিয়া আমতা আমতা করে বলল, "কী? কী মোবাইল?"
"এটা নোকিয়া ১১০০।"
"নোকিয়া ১১০০ দিয়ে কী মেসেঞ্জার অ্যাপ আর ফেসবুক চালানো সম্ভব?"
সিন্থিয়া চুপ করে রইল। 
নওরিন আবরারকে জিজ্ঞেস করল, "আবরার! সম্ভব?"
আবরার বলল, "না তো। সম্ভব না।"
"তোমার ফেইসবুক আইডি ডিএক্টিভ?"
"হ্যাঁ।"
"কবে থেকে?"
"এই, ২০২১ এর দুই অথবা তিন জানুয়ারি থেকে।"
"তোমার সাথে আমার কথা হয় কিভাবে? মোবাইলেই তো? এই নোকিয়া ১১০০ দিয়েই তো আমাকে ফোন দাও।"
"হ্যাঁ।" 
"তোমার ফেইসবুক আইডিটা একটু এক্টিভ করা যাবে এখন?"
"কিন্তু আমার সাথে তো এখন ল্যাপটপ নেই।" 
"এই নাও। আমার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে এক্টিভ কর। "
আবরার তার ফেইসবুক আইডি এক্টিভ করে নওরিনের হাতে মোবাইলটা হাতে দিয়ে বলল, "এই নাও।"
"এটাই তোমার প্রোফাইল পিকচার?"
"হ্যাঁ। দেখতেই তো পাচ্ছ।"
"সিন্থিয়া! তুই এটা কিভাবে করলি?"
সিন্থিয়া বলল, "কী করলাম?"
"কিছু করিসনি?"
"কী করেছি?"
"তুই আবরারের নামে ফেইক আইডি কেন খুললি? খুলে এসব ফেইক মেসেজ কেন আমাকে পাঠালি?"
"কই? কই? আমি তো করিনি!"
"নামটাও তো ঠিক মতো দিতে পারিসনি। নাঈম বানান ভুল। "ই" দিয়েছিস।"
"দেখ নওরিন..."
নওরিন সিন্থিয়াকে থামিয়ে দিল, বলল, "তুই যদি সত্যি সত্যি আবরারকে ভালোবাসতি তাহলে এই জঘন্য কাজটা করতে পারতি না। তুই আমাকে বলতে পারতি না সে একটা চরিত্রহীন ছেলে।" 
আবরার চমকে গেল এসব কথা শুনে, বলল, "আমি চরিত্রহীন?"
নওরিন আবরারকে বলল, "তোমাকে সব পরে বলছি।"
নওরিন সিন্থিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই যদি সত্যি আমার প্রকৃত বন্ধু হতি তাহলে এই ফেইক মেসেজে আমাকে চরিত্রহীন বলতি না। "
"ঠিক আছে। আমি দোষী তো?" বলেই সিন্থিয়া উঠে হাঁটা দিতেই নওরিন পিছন থেকে বলল, " দাঁড়া!"
সিন্থিয়া দাঁড়াল। নওরিন পিছন থেকে বলল, "বিয়ের দাওয়াত রইল।" 
সিন্থিয়া টিএসসি থেকে বেরিয়ে পড়ল। নওরিন আর আবরার বসে রইল টিএসসিতে।         
১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০২১। নীল আকাশ। চারদিকে মেঘের ছড়াছড়ি। নীলগিরি পাহাড়। আবরারের ডান হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখেছে নওরিন। নিস্তব্ধ নীরব চারদিক। ওদের কী বিয়ে হয়েছে? 

১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২১। মাঝারি আকারের রুমে সোফা সেট, টি-টেবিল। টি-টেবিলে মিষ্টি, ফল সহ নানা পদের নাস্তা। আজ আবরার আর নওরিনের এনগেজমেন্ট। তাই নওরিনের বাসায় আবরার এবং আবরারের পরিবার উপস্থিত হয়েছে।
 আবরারের বাবা বললেন, "ভাই সাহেব! মোহরানার বিষয়টা একটু পাকা করে ফেললে ভালো হতো।"  
নওরিনের বাবা বললেন, "জি, এই ব্যাপারে একটু কথা বলার আছে।"
"জি, বলুন।" 
"আমরা চাচ্ছিলাম যে মোহরানা এক কোটি হোক।" 
"জি?"
"জি, এক কোটি।" 
আবরারের বাবা মা একে অপরের দিকে তাকাল।
আবরারের বাবা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, "এক কোটি?"
"জি, ভাই।"
"ভাই, ছেলে তো মাত্র চাকরিতে ঢুকেছে। আসলে এত টাকা?..."
"দেখুন, আমরা তো আর যার তার হাতে আমাদের মেয়েকে তুলে দিতে পারি না।"
"আমার ছেলে এখন যার তার হয়ে গেল?" 
"দেখুন, ছেলে যদি আর্থিক ভাবে সচ্ছল না হয়, তাহলে তো আমরা আমাদের মেয়েকে আপনার ছেলের হাতে তুলে দিতে পারব না।"
"আমার ছেলে চাকরি করে, মাস শেষে বেতন পায়। সচ্ছল নয়?"
"সচ্ছল হলে ১ কোটি দিতে অসুবিধে কোথায়?"
আবরারের বাবা রেগে বললেন, "আপনি সচ্ছলের অর্থ বুঝেন?"
নওরিনের বাবাও রেগে চিৎকার করে বললেন, "আপনার থেকে এখন আমার শিখতে হবে?"
"আপনি মুখ সামলে কথা বলেন।"
"আপনি ভদ্রভাবে কথা বলেন। নিজেকে কী ভাবেন?"
এসব উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ভিতর থেকে শুনে দৌড়ে ছটে আসলো নওরিন। ওদিকে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে আবরার নওরিনের বাবাকে বলল,"আংকেল! আপনি শান্ত হন। বাবা! তুমিও একটু শান্ত হও।"
নওরিনের বাবা উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, "তোর বাবা কী শান্ত হবে? তোর বাবা ভদ্রতা জানে নাকি? থার্ড ক্লাস, মিডেল ক্লাস।" 
"বাবা! আসো। চলো। এখানে আর এক মুহূর্ত নয়।"
"হ্যাঁ। চল। এখানে থাকতে চায় কে?
"যান, যান। আর যেন চেহারাও না দেখি।" 
এসব কিছু নওরিন পর্দার আড়াল থেকে দেখে রীতিমত ধাক্কা খেল। বিয়েটা এভাবে ভেঙ্গে যাবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। 

১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২১। সকাল ১০টায় আবরারের বাসায় ডোরবেল বেজে উঠল। আবরার দরজা খুলল। দরজার বাইরে নওরিনের ছোট ভাই লিসানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে চমকে গেল, বলল, "আরে তুমি?"
লিসান আবরারের দিকে একটা চিঠি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "আপু দিয়েছে।" আবরার চিঠিটা হাতে নিল। লিসান আবারো বলল, "আপনাকে ফোনে পাচ্ছিল না আপু। চিঠিটা পড়বেন দয়া করে।"

দরজা আটকে চিঠি নিয়ে নিজের রুমে চলে যায় আবরার। নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। খাটের উপর বসে চিঠিটা খুলল। নওরিনের হাতের লেখা। 

প্রিয় আবরার, 
             কেমন আছো জিজ্ঞেস করব না। আমি জানি তোমার মনের অবস্থা এখন কেমন। আমার বাবার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। 
আবরার, সম্পর্কের শুরুতে আমাকে তুমি মুঠোফোনে ভালোবাসি বলেছিলে। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করিনি। কিন্তু প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে বুঝিয়েছি, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
আবরার, ভালোবাসা প্রকাশ করাটা জরুরী নয়। ভালোবাসতে পারাটা জরুরী। সবাই ভালোবাসি বলে। ভালোবাসতে কয় জন পারে? প্রিয় মানুষটাকে কয়জন ধরে রাখতে পারে? ভালোবাসতে হয় গোপনে, নিভৃতে। 
আমি তোমাকে গোপনে, নিভৃতে ভালোবেসে যেতে চাই আজীবন। তোমাকে হারাতে চাই না। তাই একটা বড় সিধান্ত নিয়েছি। আমি তোমাকে পরিবারের অমতেই বিয়ে করতে চাই। পৃথিবীতে কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়। আমি না হয় আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার জন্য পরিবারকে হারালাম। করবে আমাকে বিয়ে? সমাজ, পরিবারের বাঁধা উপেক্ষা করে তোমার জীবন সঙ্গিনী করতে পারবে? 
ধর্মসাগর পাড়ে আজ সকাল ১১টায় আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।  বিয়ের সাক্ষী দেওয়ার জন্য লিসান ওর বন্ধুদের বলে দিয়েছে। ওরা সময় মতো চলে আসবে। এখন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তোমার। ভালোবাসার এই পরীক্ষায় তুমি জয়ী হবে নাকি হবে পরাজিত, এখন তোমার হাতে।

তোমার অপেক্ষায় রইলাম। 
                                                               ইতি
                                                           তোমার নওরিন         


তারপর? তারপর কী হলো? 
তারপর  কাবিননামায় সই হলো। দুই হৃদয় এক হলো।    
                  
১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০২১। নীল আকাশ। চারদিকে মেঘের ছড়াছড়ি। নীলগিরি পাহাড়। আবরারের ডান হাত জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখেছে নওরিন। নিস্তব্ধ নীরব চারদিক। 
নওরিন মায়াবী কণ্ঠে বলল, "এই আবরার!" 
আবরার বলল, "জি, রাজকুমারি। বলুন আপনার জন্য কী করতে পারি?"
"আমার জন্য?"
"হুম তোমার জন্য।" 
"সত্যি করতে চাও?" 
"হুম বল। করব।" 
নওরিন কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমাকে এই ভাবে ভালবাসবে তো?"
আবরার নওরিনের হাতটা ধরে বলল, "বাসবো। আজীবন। তুমি ভালোবাসবে তো? 
নওরিন আবরারের কাঁধে মাথা রেখে বলল, "হ্যাঁ। বাসবো। এভাবেই, গোপনে......"       
বিশাল নীল আকাশ। তাতে মেঘের ছড়াছড়ি। নীলগিরি পাহাড়। 
"এই আবরার?"
"হুম?"
"ভালোবাসি। খুব বেশি। অনেক বেশি।" 

                        =====  (সমাপ্ত) =====
 

          
আবরার নাঈম চৌধুরী 
ফাইন্ড আলাউদ্দিন টাওয়ার, 
সরকারি মহিলা কলেজ রোড, 
কুমিল্লা, বাংলাদেশ।
        
   
                                  


                                                        
       
      



 
    
                      
                   
 
      
         
        
              
 


Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।। কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।      মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কা...

ছড়া ।। প্রেম নদীর মাঝি ।। গোবিন্দ মোদক

  প্রেম নদীর মাঝি  গোবিন্দ মোদক  প্রেম নদীতে ভাসাই ডিঙি উথাল পাথাল জল,  ছোট্ট আমার তরীখানি করছে যে টলমল! জলের উপর ফুটে আছে কতো মোহন ফুল,  ফুলের বোঁটা জড়িয়ে আছে তোমার মাথার চুল!  জলের ভেতর আরো যে জল, টল-মল-টল করে,  বিদেশ থেকে আসছে চিঠি বিরহিনীর ঘরে!  জলের নিচে লুকিয়ে আছে রহস্য অজানা,  সাধুজনে বারণ করেন যাওয়া নাকি মানা!  প্রেমিক মন চায় যে যেতে সেই অচিনপুরে,  সারা জীবন বৈঠা বেয়েও থেকে যায় দূরে!  কিন্তু প্রেমিক শোনে নাকো সাধুজনের বারণ,  সাধ করে তাই ডেকে আনে অতৃপ্তিটার কারণ!  অবশেষে হালে পানি না পেয়ে সে কাঁদে,  বিশ্বভুবন সারা জীবন পড়ছে ঘুঘুর ফাঁদে!  তবুও তো প্রেম নদীতে সবাই ভাসায় তরী,  প্রেম যমুনা উথাল-পাথাল কি যে এবার করি! মন রে মনে মতি রাখো করো সাধুসঙ্গ,   প্রেম নদীতে ভাসিয়ে তরী দেখো আজব রঙ্গ!!   ____________________   গোবিন্দ মোদক।  রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।  পশ্চিমবঙ্গ --- 741103

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

পাপান ও নূতন মিস ।। গোপা সোম

পাপান ও নূতন মিস গোপা সোম       পাপান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই বিদ্যালয়টি বিশাল বড়, অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে অনেক শ্রেণী কক্ষ রয়েছে, কারণ, প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করে বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে কম বেশী ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী। এক কথায়, শহরের বুকে এক অন্যতম গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই বিদ্যালয়ে অনেক সংখ্যক মাস্টারমশাই দিদিমণি আছেন। পড়াশোনায় ও বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম আছে। রেজাল্ট খুবই ভাল হয়।        সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অঙ্কের মাস্টারমশাই অবসর নিয়েছেন, তাঁর স্থানে একজন নূতন মিস এসেছেন। নূতন মিস কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রী সবার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন। সবসময় লাল পেড়ে শাড়ি পরে আসেন, এছাড়া আর কোনো পোষাকে মিসকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। নূতন মিস পাপানদের অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান, এত সুন্দর বোঝান, পাপানের খুব ভালো লাগে মিসের পড়ানো। নূতন মিস বলতে পাপান অজ্ঞান। আর নূতন মিসও পাপানকে খুব স্নেহ করেন। নূতন মিসের কাছ থেকে পাপান অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।        নূতন মিস খুব নিয়মানুবর্তী, উনি সময় দেখে ক্লাসে আসেন, এবং তাঁর পড়ানোর ভাগ পুরোপুরি...

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নিশাবসানের সাথে সাথে জেগে ওঠে ধরণী। জেগে ওঠে নতুন প্রাত্যহিকতার আরো একটি স্বপ্ন নিয়ে --- চিরন্তনের নিত্যনিয়মে। একটু একটু করে প্রভাতআভায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিবসনিসর্গ। ঋতুচক্রে আবারো নতুন মোড়! শারদীয়ার রঙ লেগেছে আজ প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে। ঘাসের ডগায় ডগায় কুয়াশার অন্তরঙ্গ স্পর্শ! সুখাবহ অনুভূতির সবটুকুজুড়ে তাই ভিজেভিজে কেমন একটা হিমেল রোমাঞ্চ। টুপটাপ ঝরে পড়ছে ডাগর যুবতীর মতো শিউলী। অবিরাম আলতো ছোঁয়ায় ভিজেমাটিতে শিহরণ লাগে। স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মন। ভাবনায় ভেসে ওঠে ফেলে আসা আরো কত আশ্বিনের ভালোলাগা! দিনেরআলো আরো চেকনাই হয়ে ওঠে। নদীর দুধার বরাবর বিছিয়ে থাকা কাশবনের বেসামাল আবেগ দুলেদুলে গড়িয়ে পড়ে। তাকে সামনে রেখেই, উৎসবের বল্গাহীন আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ধরার বুকে। মাথার উপরে তখন ঝকঝকে নীলাকাশ। কারোর যেন খেয়ালই নেই --- যার অনাবিল বিস্তারে, অসীম স্বচ্ছতায় চিত্রবৎ প্রতিবিম্বিত হয়েছে পৃথিবীরই উচ্ছ্বাস। ওই দেখ --- অলস ভেসে চলেছে সফেদ ফেনার মতো নিরম্বু মেঘের দল। আদিগন্ত নীলিমায় --- এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। প্রকারান্তরে যেন প্রত...

অভিমান ।। তন্ময় পালধী

অভিমান তন্ময় পালধী   গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি চলছেই। আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। বিকেলে বারান্দায় বসে অনুভাদেবী সবে খবরের কাগজ খুলেছেন, ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামল। একটানা বৃষ্টিতে মন খারাপ হলেও আজ আর বারান্দা ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ডুব দিলেন অতীতে। স্মৃতির ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে উঠলো পুরানো দিনগুলি। কদিন ধরেই চরম ব্যস্ততা বালিয়াল পরিবারে। বাড়ির ছোটমেয়ে অনুভার বিয়ে। সবে ম্যাট্রিক দিয়েছে। তার ইচ্ছা আরও পড়ার, বাবার ও তাই ইচ্ছে। কিন্তু সমাজ! তখনকার রীতিতে মেয়ের বয়স পনেরো ষোল হলেই দিয়ে দাও বিয়ে। অগত্যা বাবা আর কি করেন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সিলেকশন হয়েও তাই ভর্তি হওয়া হলো না। বিষণ্ণতা নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। সেদিনও বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে যেন চারিদিক ভেসে যাবে। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সাড়ে আটটায় লগন। মুহূর্তগুলো যেন কাটতেই চায় না। এক একটা মিনিট ঘন্টাখানেক বলে মনে হচ্ছে। চিরকালই অন্তর্মুখী সে। তার মনে যে কি ঝড় চলছে কেউই বুঝতে পারছে না। অথচ বিপরীতমুখী একটা আশাবাদিতা তাকে স্থির অবিচল রেখে দিয়েছে। মনের গতিপ্রকৃতি...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার

গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার  আলোর দিশারি শিক্ষক তুমি অন্ধকারে আলো, তুমি পথ দেখাও অচেনা কালো। ছাত্রের চোখে স্বপ্নের বাতি, তুমি জ্বালাও প্রতিদিন রাতে। তোমার কথায় জেগে ওঠে প্রাণ, পথ চলা শিখি, মুছে যায় জ্ঞানহীন ধ্যান। তুমি হৃদয়ের দর্পণ স্বচ্ছ, যত শিখি ততই হই স্পষ্ট। ছাত্র যদি হয় কচি চারাগাছ, শিক্ষক তারে দেন শেকড়ের রস। শক্তি জোগাও, ভরাও সাহসে, স্বপ্ন সাজাও অন্তরের গহনে। তুমি আকাশ, আমরা তার তারা, তুমি ছাড়া চলতে পারি না সারা। যতদিন বাঁচি থাকবে মনে, শিক্ষকের ঋণ লেখা রবে গগনে। শ্রদ্ধার পাঠশালা চকের দাগে কালো বোর্ডে, লিখে চলে শিক্ষক দিনরাতে। ছাত্র বসে মন ভরে শোনে, সত্যের পথ শেখে তার সনে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিলন, তাতেই গড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের সৃজন। বইয়ের পাতায় প্রাণের ছোঁয়া, শিক্ষক দেন জ্ঞানের বীজ বোনা। ভুল করলে ধমক দেন স্নেহে, আবার হাসেন বুক ভরা প্রাণে। ছাত্রের চোখে দেবদূত তুমি, ভুলের অন্ধকারে করো আলোকধ্বনি। শিক্ষা নয় কেবল কাগজের লেখা, শিক্ষক শেখান বাঁচার দেখা। এই তো জীবনের সত্যি মানে, ছাত্র–শিক্ষক একসাথে প্রাণে। ছাত্রের কণ্ঠে গান শিক্ষক তুমি জীবনের গান, তুমি দিলে জ্ঞানের দান। তোমা...

সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী

সমুদ্র আর অস্তিত্ব  সুব্রত চৌধুরী  সমুদ্র শুধু নিরন্তর ঢেউয়ের সান্নিধ্য নয়   নয় সে নিখাদ গভীরতায় মুগ্ধ এক শরীর    পাতালের রহস্যে ফেরা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে  বুঝতে থাকি— সমুদ্র আসলে সভ্যতার বিনম্র স্পর্শ  সম্পর্কের পরাগরেণু মেখে তরল হয়ে ওঠা অস্তিত্ব  সে কোনো স্থানাঙ্কিত জলরাশি নয়  পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা দৃশ্যের গতিশীল যৌবন  সমুদ্র হারিয়ে গেলে অস্তিত্বে ফিরে আসে শূন্যতা  অদৃশ্য হয়ে থাকা বিবেকের দর্পণে  যখন ফুটে ওঠে আপন ক্ষুদ্রতার প্রতিবিম্ব  নিঃশব্দে হয়ে যায় নিজের উপলব্ধি—   দেহের মানুষকে ছুঁয়ে যায় মনুষ্যত্বের সমুদ্র   আমিত্ব ডুব দেয় অস্তিত্বের তরল সম্পর্কের বন্ধনে               —————————  Dr. Subrata Chaudhuri  Asst. Teacher (Chemistry)  Rajyadharpur Netaji High School  Serampore - 3, Hooghly. 

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি ।। শ্যামল হুদাতী

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি শ্যামল হুদাতী  ভূমিকা: বাংলা সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি সুদীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতিফলন। গঙ্গা–পদ্মা–মেঘনা নদীবিধৌত ডেল্টা অঞ্চল শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয়, এটি মানব সভ্যতার একটি প্রাচীনতম উর্বর ক্ষেত্র। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে প্রাচীন, মধ্যযুগ, নবজাগরণ এবং আধুনিক সময় পর্যন্ত বাংলা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির সহাবস্থানে গড়ে উঠেছে । বাংলা সভ্যতা তাই একক কোনো জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের সম্মিলিত রূপ। অধ্যায় ১: ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য বাংলা সভ্যতার শিকড় বোঝার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন এর ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট অনুধাবন। ১.১ নদী–ডেল্টা ও উর্বর ভূমি বাংলা অঞ্চল গঠিত হয়েছে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পলি জমে। নদীর অববাহিকা পলি–সমৃদ্ধ কৃষিজমি তৈরি করে, যা প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই ধানচাষের জন্য উপযুক্ত ছিল। বর্ষাকালীন প্লাবন নতুন পলি এনে জমিকে উর্বর রাখত, ফলে গ্রামীণ কৃষিনির্ভর সভ্যতা বিকশিত হয়। ১.২ বাণিজ্যপথ ও সাংস্কৃতিক সংযোগ নদীপথ ও...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত

গল্প দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে            সমীর কুমার দত্ত  সমর গুপ্ত নামের যুবকটি সর্বদা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরতো। ওটা শিখেছে ও ওর চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো শম্ভুনাথ সরকারের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে।  ধুতি পরার অভ্যাস শম্ভুর গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এসে পরীক্ষা দিয়ে  কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি পায়। নাইটে নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে বি.কম পাশ করে। রবিবার দিন আর অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে বিকেল বেলায ধুতি পাঞ্জাবি পরে সমরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ঘোরা বলতে  পাড়ার শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলের পাশে উকিলবাবুর বাড়ির সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সমরের সঙ্গে গল্প করতে। বহুদূর থেকে হাওড়ার গার্লস্ কলেজে পড়তে আসা চামেলী ঘোষ নামের একটি মেয়ে ওই লেডিজ হোষ্টেলে বোর্ডার হিসেবে এসে ওঠে। নিত্য যাতায়াতের পথে ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথ ও সমরের সঙ্গে চোখের দেখায় পরিচিত হয়ে হাসি বিনিময় করে। হাসির পরিণতিতে বাক্যালাপ, বাক্যালাপের পরিণতি প্রেমে পৌঁছায়। একদিন সমর গুপ্তের সালিশিতে শম্ভুনাথের সঙ্গে চামেলীর ঘনিষ্ঠ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...