Skip to main content

গল্প ।। ট্রেকিং ।। সিদ্ধার্থ সিংহ


ট্রেকিং

সিদ্ধার্থ সিংহ


নামলে নামুক। কী আর করা যাবে! ও আর পারছে না। এ বার একটু বসতেই হবে। কিন্তু কোথায় বসবে? বসার জন্য যেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, ঠিক তখনই ও দেখল, একটা ষোলো-সতেরো বছরের তন্বী মেয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে তরতর করে নেমে আসছে।
সমতল থেকে ছ'হাজার ফুট উঁচুতে এসে, চোপতা থেকে পাহাড়ের এই খাড়া পথ বেয়ে সেই যে হাঁটা শুরু হয়েছে, রোহিতাশ্ব শুধু হেঁটেই যাচ্ছে। এত হেঁটেছে যে, পা আর চলছে না। পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতেই যেন জীবন বেরিয়ে যাচ্ছে। গায়েও আর এতটুকু জোর নেই। এই দিনের বেলাতেও চোখের সামনে হঠাৎ হঠাৎ নেমে আসছে অন্ধকার। মাথাটাও টিপ টিপ করছে। মনে হচ্ছে, ও আর এক পা-ও হাঁটতে পারবে না। যে কোনও সময় মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
না, এ বার একটু না বসলেই নয়। তার গাইড এবং সঙ্গীরা কে কোথায় আছে ও জানে না। জানতেও চায় না। পরবর্তী ক্যাম্পে পৌঁছতে আরও কতক্ষণ লাগবে, তার কোনও ধারণাও নেই ওর। ও নিশ্চয়ই অন্যদের থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে, তার পরেও ও যদি এখানে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য থামে, তা হলে পরবর্তী ক্যাম্পে পৌঁছনোর অনেক আগেই হয়তো অন্ধকার নেমে আসবে।
পথের মাঝে ভিনরাজ্যের অচেনা-অজানা একটা লোককে ও রকম ক্লান্ত-অবসন্ন দেখেই বুঝি মেয়েটি তার কাছে এগিয়ে এল। কোঁচড় থেকে চেরিফলের মতো দেখতে এক মুঠো রা' ফল তার দিকে বাড়িয়ে দিল। ও জানে, এগুলোকে কেউ পার্বতী ফলও বলে। কিন্তু ও জানে না, ওগুলো খায়, না গায়ে মাখে। তাই মেয়েটির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। কারণ ও জানে, মেয়েটিকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও মেয়েটি তার ভাষা বুঝতে পারবে না। যদি বোঝেও, তার জবাবে সে যা বলবে, ও সেটা বুঝতে পারবে না।
কিন্তু কয়েক মুহূর্ত মাত্র। মেয়েটি বোধহয় তার ও রকম চাহনি দেখেই বুঝতে পেরেছে রোহিতাশ্বর মনের কথা। তাই সে আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, এটা চুষে চুষে খাও। বলেই, মেয়েটি পাহাড়ের কোন বাঁকে যেন হঠাৎ করে মিলিয়ে গেল। সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওই ফলগুলো মুখে দিয়ে একটু চুষতেই ওর শরীরটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। মনে হল, রওনা হওয়ার সময় ওর শরীরে এবং মনে যতটা জোর ছিল, এখন যেন তার থেকেও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
শুধু চন্দ্রশিলা কেন, ও এখন ইচ্ছে করলে অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্টের চূড়াতেও উঠে যেতে পারে।
আসলে এর আগে ও কখনও পাহাড়ে ওঠেনি। আজ থেকে বহু বছর আগে, ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে একবার পুরুলিয়ায় গিয়েছিল। খড়িদুয়ারায়। মুকুটমণিপুর থেকে একটুখানি। সেটাও ছিল পাঁচ মাথাওয়ালা পাহাড়। একেবারে দুধের মতো সাদা ধবধবে। পরে জেনেছিল, ওটা ছিল খড়ি, মানে চকের পাহাড়। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে রাস পূর্ণিমায় তিন দিন ধরে সেখানে উৎসব হয়--- সৃজন উৎসব।
সেখানেই সে প্রথম দেখেছিল কত দেরি করে ওখানে রাত নামে। অথচ রাত নামলেও অন্ধকার নামে না। জ্যোৎস্নার ফটফটে আলোয় চারিদিক ভেসে যেতে থাকে। মনে হয়, লক্ষ লক্ষ টিউব লাইট জ্বলছে। সেই আলোয় পাহাড়ের গায়ে খড় আর মাথার উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল আয়োজকেরা। সারা রাত ধরে অনুষ্ঠান। পাহাড়ের এ চূড়া, ও চূড়া, সে চূড়ায় ম‌্যাড়াপ বাঁধা হয়েছিল। ছৌ-নৃত্য আর আদিবাসী চটুল গানে সবাই যখন মেতে উঠেছে, তখন তার মা তাকে নিয়ে ইচ্ছে করেই দল ছুট হয়ে একটু আলাদা হয়ে গিয়েছিল। মাইকের আওয়াজ যেখানে একদম ক্ষীণ, সে রকম একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে ওর মা-ই ওকে আঙুল তুলে দেখিয়েছিল, সেই বিশাল রুপোর মতো চাঁদটা কেমন হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড়ের একটা চূড়া থেকে আরেকটা চূড়ায় যাচ্ছে।
ও মুগ্ধ হয়ে দেখেছিল। বেলার দিকে দেখেছিল, পাহাড়ের গায়ে এখানে সেখানে এক-একটা মুরগির লড়াই ঘিরে কেমন ছোট ছোট জটলা তৈরি হয়েছে। 
মেলা হচ্ছে শুনে পাহাড়ের ঢালে গিয়ে ও একটু হতাশই হয়েছিল। না, সেখানে কোনও নাগোরদোলা ছিল না। ছিল না রঙিন মাছ। খাঁচায় ভরা বদ্রি বা টিয়াপাখির ঝাঁক। ছিল না ফিশ-ফ্রাই, চিকেন রোল কিংবা দই ফুচকার দোকান। তার বদলে ছিল পাতি লোহার হাতা-খুন্তি, দা-কোদাল। বেতের ঝুড়ি, অ্যালুমনিয়ামের থালা-বাটি। রঙিন রংতায় মোড়া তির-ধনুক। ছৌ-মুখোশ। প্লেট-টেলেট তো নয়ই, শালপাতাও নয়, লুচি, ঘুঘনি আর ঘরে বানানো মারবেলের মতো ছোট ছোট রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছিল বটপাতা বা ডুমুরপাতায় করে।
আশপাশের গ্রাম দেখার জন্য পর দিন সকালে ওখান থেকে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নেমে এসেছিল ওরা। কিন্তু গ্রাম নয়, সামনেই সরু গাড়িরাস্তার গা ঘেঁষে ওঠা পাহাড় দেখে ওরা আর লোভ সামলাতে পারেনি। উঠে পড়েছিল। হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড়ের গায়ে গজিয়ে থাকা ছোট ছোট আগাছা ধরে। বলতে গেলে খানিকটা খাবি খেতে খেতে। সমতলের গাছ হলে হয়তো তাদের টানে উপড়ে যেত। কিন্তু ওগুলো তো পাহাড়ের গাছ। লড়াই করে পাথুরে মাটি ফুঁড়ে শিকড় চালাতে হয় নীচে। তাই বুঝি প্রাণপণে ভূমি আঁকড়ে ছিল।
সাত-আট তলা বাড়ির সমান উঠে শৃঙ্গজয়ের আনন্দে ও যখন গায়ের জামা খুলে ওড়াচ্ছে, নিজেকে মনে করছে লর্ডসের মাঠে সৌরভ গাঙ্গুলি, ঠিক তখনই কতগুলি বাচ্চার হাসি শুনে ও পিছন ফিরে দেখে, চোখের সামনে কী বিশাল একটা আকাশ-ছোঁয়া পাহাড়।
যে-কোনও সময় পড়ে যাওয়ার ভয় নিয়ে দুরুদুরু বুকে তারা এতক্ষণ ধরে যেখানে উঠে এসেছে, ওর তুলনায় এটা কিচ্ছু না। নিছকই একটা চড়াই পথমাত্র। আর ওই খাড়া পাহাড় বেয়ে তারও চেয়ে ছোট ছোট কতগুলি বাচ্চা কিনা মাথায় লকড়ির বোঝা নিয়ে নাচতে নাচতে নেমে আসছে!

ফিরে এসে সবাইকে এই গল্পটা ও বলেছিল। এখনও মাঝে মাঝে বলে। কয়েক বছর আগে যখন কথায় কথায় সেই গল্পটাই ও বলেছিল, তখন ওরই এক বন্ধু, স্বপন বলেছিল, খড়িদুয়ারা? ওটা কোনও পাহাড়ই নয়। ওটা তো একটা টিলা। মাটির একটা বড় ঢেলাও বলতে পারিস। পাহাড় হচ্ছে অন্য জিনিস। যে একবার ভালবেসে পাহাড়ের কাছে যায়, পাহাড় তাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে।
স্বপনই ওকে বলেছিল, তুই যদি সত্যিই পাহাড়ে যেতে চাস, তা হলে আমাদের সঙ্গে যেতে পারিস। তবে তার জন্য তোকে কিন্তু ট্রেনিং নিতে হবে।
ও বলেছিল, কোথায়?
স্বপন বলেছিল, এন আই এমে।
--- সেটা আবার কী?
--- এন আই এম মানে নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং।
রোহিতাশ্ব জানতে চেয়েছিল, সেটা কোথায়?
ও বলেছিল, উত্তরকাশীতে।
--- বাব্বাঃ, অত দূরে!
--- দার্জিলিংয়েও আছে। এইচ এম আই। মানে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট।
--- কাছাকাছি কিছু নেই?
স্বপন বলেছিল, থাকবে না কেন? সর্বত্রই আছে। আমাদের এই কৃষ্ণনগরেও আছে।
--- তাই নাকি? কোথায়?
— গভর্মেন্ট আর্ট কলেজে ঢোকার মুখেই। দেখবি, গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা আছে— মাউন্টেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর।
আগ্রহের সঙ্গে রোহিতাশ্ব জানতে চেয়েছিল, ওখানে কত দিনের কোর্স?
স্বপন বলেছিল, বিভিন্ন রকমের কোর্স আছে। কোনওটা পনেরো দিনের, কোনওটা এক মাসের, তো কোনওটা আবার পাঁচ দিনের। যেমন আমি একবার রক ক্লাইম্বিংয়ের কোর্স করেছিলাম শুশুনিয়া পাহাড়ে। এটা ছিল পাঁচ দিনের কোর্স।
--- তাই নাকি? আচ্ছা, ওখানে ভর্তি হতে গেলে কী করতে হয়?
--- দ্যাখ, ওই সব ইনস্টিটিউটগুলিতে গেলেই যে তোকে সঙ্গে সঙ্গে লুফে নেবে, তা কিন্তু নয়। ওরা কিছু পরীক্ষা নেয়। তবে ক্লাব-ভিত্তিক লোকাল ইনস্টিটিউটগুলিতে অত কড়াকড়ি নেই।
অধীর আগ্রহে রোহিতাশ্ব জিজ্ঞেস করেছিল, ওখানে কী কী শেখায়?
--- অনেকগুলো ধাপ আছে। যেমন প্রথমেই শেখানো হয় ফ্রি হ্যান্ড ক্লাইম্বিং। আর তার সঙ্গে চেনানো হয় পাহাড়ের চরিত্র। সে সব হয়ে গেলে র‍্যাপলিং। মানে দড়ি ধরে পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা। তার পর ন্যাচারাল ক্যাবিটি, সেখানে খালি হাতে খাড়া পাহাড়ে ওঠা শেখানো হয়।
--- খালি হাতে খাড়া পাহাড়ে!
স্বপন বলেছিল, হ্যাঁ, খালি হাতে। অনেক সময় দেখবি, একদম দেওয়ালের মতো খাড়া পাহাড় বেয়ে অনেকে তরতর করে উঠে যাচ্ছে। নীচ থেকে দেখলে কিছুই বুঝতে পারবি না। আসলে পাহাড়ের গায়ে প্রচুর প্রাকৃতিক খাঁজ-খোঁজ থাকে। সেগুলি ধরে ধরে ওঠে। সেই ওঠাটাই শেখানো হয়।
রোহিতাশ্ব জানতে চেয়েছিল, কত করে নেয়?
--- সেটা খুব একটা খরচসাপেক্ষ নয়। তবে ক্লাইম্বিং শেখার সময় একটু খরচ হয় বইকী... অবশ্য একটু করিৎকর্মা হলে বা হাঁটাহাঁটি করতে পারলে, অভিযানে যাওয়ার সময় সরকারি সাহায্য মিললেও মিলতে পারে। আবার ঠিকঠাক লোককে ধরতে পারলে অনেক সময় স্পনসরশিপও জোগাড় করা যায়।
--- তাই নাকি? ও। এমনি ট্রেকিং করতে গেলে কী রকম খরচ-খরচা পড়ে?
--- সেটা নির্ভর করে কোথায় যাচ্ছিস, কত দিনের জন্য যাচ্ছিস এবং কত জন মিলে যাচ্ছিস তার উপরে।
--- কত জন মানে!
স্বপন বলেছিল, সচরাচর কেউ তো একা-একা পাহাড়ে যায় না। তবে দল বেঁধে যাওয়াও ঠিক নয়। সব থেকে ভাল হয়, যদি চার-পাঁচ জন মিলে যাওয়া যায়। আর সব সময় এমন লোকের সঙ্গেই যাওয়া উচিত, যারা পাহাড়কে ভালবাসে। যারা মনে করে পাহাড়ে গিয়েও
বাড়ির যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পাব কিংবা বাড়ির মতোই খাওয়া-দাওয়া পাব, তাদের সঙ্গে না যাওয়াই ভাল।
--- কেন?
--- সেটা না গেলে বুঝবি না। আমরা যেমন কয়েকজন মিলে একবার এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে ট্রেকিংয়ের জন্য কাঠমাণ্ডু থেকে প্লেনে লুকলা গিয়েছিলাম। লুকলা থেকে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছিলাম একশো কিলোমিটার দূরের কালা পাথরের উদ্দেশে। পথটা ছিল ছ'-সাত দিনের। দু'দিন হাঁটার পরেই আমাদের মধ্যে থেকেই একজন ফস করে বলে ফেলেছিল, এত খরচ করে শুধু শুধু এখানে এলাম! এর থেকে অনেক ভাল হত, যদি গোয়ায় যেতাম। সমুদ্রের পাড়ে শুয়ে থাকতাম। মদ খেতাম আর সারাক্ষণ সাগর-সুন্দরীদের দেখতাম।
সে হয়তো কথাটা এমনিই বলেছিল, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, তার ওই কথাটা আমাদের পুরো জার্নিটাকেই তেতো করে দিয়েছিল।
--- তাই! কিন্তু এটা তো খারাপ অভিজ্ঞতা। ভাল কোনও অভিজ্ঞতা নেই?
--- থাকবে না কেন? প্রচুর আছে। তবে আমার ট্রেকিং জীবনের সেরা মুহূর্তটা আমি কখনওই ভুলতে পারব না। সে বার আমরা দশ-বারো জন মিলে নীলকণ্ঠ পাহাড়ে গিয়েছিলাম। কিছুটা ওঠার পরেই তাঁবু ফেলা হয়েছিল। ভারী সুন্দর জায়গা। যে দিকেই তাকাই, দেখি, বরফের চাদর মুড়ি দিয়ে যেন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছে সার সার চুড়ো। তাদের মাথা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভেসে যাচ্ছে মেঘ। চারিদিকে কনকনে ঠান্ডা। হাওয়ার সঙ্গে ঝাঁক ঝাঁক আলপিন যেন ছুটে এসে মুখে বিঁধছে, গলায় বিঁধছে। টিম লিডার বলেছিলেন, কেউ যেন রাত্রে তাঁবু থেকে একা-একা না বেরোই।
কিন্তু আমার তো সুগার আছে। ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়। বারবার কাকে ডাকব! তাই শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না-পেরে মাঝরাতে যখন তাঁবুর ভিতর থেকে চুপিচুপি বাইরে বেরিয়ে এলাম, আমি তো একেবারে হতবাক। সে দিনটা ছিল অমাবস্যা। ভেবেছিলাম বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার হবে। তাই বেরোবার সময় টর্চটা সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু এ কী! কোথায় অন্ধকার! চারিদিকে ফটফটে আলো। গোটা আকাশটা যেন  হিরের কুচি দিয়ে মোড়া। আকাশে এত তারা সেই প্রথম দেখেছিলাম। ঝিকমিক ঝিকমিক করছে। এক ফোঁটা জায়গা নেই, যেখানে পিন ফোঁটানো যায়।
হঠাৎ মনে হল, অনেক দিন কোনও লোক দেখেনি ওরা, তাই এত তারা একসঙ্গে দল বেঁধে এসেছে আমাদের দেখতে। ওরা তারা! না, তারা মা! জয় তারা। জয় দুর্গা। জয় বাবা ভোলেনাথ!

তখন আমার মনে হয়েছিল, আমরা বুঝি স্বর্গে পৌঁছে গেছি! তখনই ঠিক করেছিলাম, লাগুক ঠান্ডা, তেত্রিশ কোটি দেবতাকে আমি এখন দু'চোখ ভরে দেখব।সত্যিই সে রাতে আমি আর তাঁবুর ভিতরে ঢুকিনি। সারা রাত শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। যারা এ রকম দৃশ্য দেখেনি, তাদের জীবনটাই বৃথা।
স্বপনের কথা শুনতে শুনতে বিহ্বল হয়ে রোহিতাশ্ব বলেছিল, এত সুন্দর!
স্বপন বলেছিল, শুধু প্রকৃতি নয়, ওই রকম প্রকৃতির মধ্যে থাকে বলে ওখানকার মানুষের মনগুলিও খুব সুন্দর। আমি তো বহু জায়গায় গিয়েছি। হিমালয় বা কুমায়ুনেও দেখেছি, যেহেতু ওখানে বিদেশিরাই বেশির ভাগ ট্রেকিং করে, ফলে সাহেব-সুবোদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ওখানকার গাইডরাও একটু সাহেবি গোছের হয়ে গেছে। তারা মাল বয়ে নিয়ে যায়। ঠিকঠাক পথ চিনিয়ে নিয়ে যায়। সারাক্ষণ পাশে পাশেই থাকে। বিপদে-আপদে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পারতপক্ষে কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না। ভীষণ মেপেজুপে কথা বলে। সাধারণত, যত দুর্গম এবং বিপদসঙ্কুল পথ হয়, গাইডদের দৈনিক মুজুরিও তত বেশি হয়। কিন্তু যা নেবার, তা ওরা আগেই দর কষাকষি করে চুক্তি করে নেয়। পরে তা নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করে না। এক কথায় বলতে গেলে, এরা খুব প্রফেশনাল হয়। কিন্তু ওদের মধ্যে কী যেন একটা নেই। কেমন যেন একটা ফাঁকা ফাঁকা। ফলে কাজে পটু হলেও, যত দিনই থাকুক না কেন, পর্বতারোহীদের সঙ্গে ওদের কোনও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
কিন্তু গাড়োয়াল অঞ্চলটা একটু অন্য রকমের। এখানকার গাইড ও মালবাহকদের সঙ্গে অনেক সময়ই পর্বতাভিযাত্রীদের কথা কাটাকাটি হয়। মন কষাকষি হয়। মুখ ফসকে খারাপ কথাও বলে ফেলে কেউ কেউ। কিন্তু অভিযান শেষ করে ফিরে আসার সময় দেখেছি, ওদের মনটা কত নরম। কত শিশুর মতো। কিছুতেই ভোলা যায় না তাদের সেই থমথমে মুখ। চোখের কোণে চিকচিক করা জলের কণা।
একবার রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একেবারে হতদরিদ্র একটা চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। খানিক পরেই এক দম্পতি গাড়ি থামিয়ে ডিমটোস্ট আর চায়ের অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোলের বাচ্চার জন্য এক গ্লাস দুধও চেয়েছিলেন।
দোকানি ভদ্রমহিলা তাদের চা-ডিমডোন্ট দেওয়ার আগেই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দুধ গরম করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দাম নেওয়ার সময় বাকি সব কিছুর দাম নিলেও, ওই দুধের দাম তিনি কিছুতেই নেননি। বলেছিলেন, দুধের দাম? বাচ্চার জন্য দুধ দিয়েছি, তার জন্য পয়সা নেই? ছিঃ।
শুধু ওই দোকানিই নয়, পরে দেখেছি, ওখানকার মানুষগুলোই ওই রকম।
--- এখনও এ রকম লোকজন আছে! রোহিতাশ্ব বলেছিল, আমি ওখানে যাব। ক্লাইম্বিং করব।
স্বপন বলেছিল, আগে ট্রেকিং কর। তার পর তো ক্লাইম্বিং।
বুঝতে না-পেরে ও বলেছিল, দুটো আলাদা নাকি?
স্বপন বলেছিল, মোটামুটি আঠারো হাজার ফুট অবধি হেঁটে ওঠাটাকে বলা যেতে পারে ট্রেকিং। কিন্তু উনিশ হাজার ছাড়ালেই সেটা সাধারণত ক্লাইম্বিং বা মাউন্টেনিয়ারিংয়ের মধ্যে পড়ে যায়। তখন শুধু গাইড বা মালবাহকে কাজ চলে না। শেরপা নিতে হয়। তবে আমি বলি, পুণ্য অর্জনের জন্য তীর্থযাত্রীরা যত দূর পর্যন্ত উঠতে পারে, ততটুকুই ট্রেকিং।

কিন্তু না। তখন ওর আর পাহাড়ে চড়া হয়নি। পরে, অনেক পরে, পাশটাস করে ও যখন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে চাকরি পেল, তখন প্রথম পোস্টিং হল মধ্য কলকাতার টি-বোর্ডের পাশেই সার্কেল অফিসের মার্কেটিং বিভাগে।
সেখানেই চাকরি করেন মাউন্টেনিয়ার বসন্ত সিংহ রায়। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হতেই ওর ভিতরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল পর্বত-প্রেম। ফলে কারণে-অকারণে, নানান খুঁটিনাটি জিনিস জানার জন্য ও যখনই সুযোগ পেত, অমনি চলে যেত বসন্তদার পাশের চেয়ারে। তাঁর কমপিউটারের সামনে বসে পাহাড় এবং পাহাড়ে ওঠার নানান ছবি দেখত। আলোচনা করত। পাহাড়ের নানা গল্প শুনত তন্ময় হয়ে।
তাঁর মুখেই ও শুনেছিল, সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় একবার তাঁর কী দশা হয়েছিল। নেপালের সমতল থেকে পঁচিশ হাজার ফুট উপরে, ধওলাগিরিতে কী ভাবে সারা রাত বরফের মধ্যে অচৈতন্য হয়ে আটকে পড়েছিলেন তিনি। পর দিন যখন তাঁকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়, তাঁর শরীর তখন প্রায় জমে গেছে। পা দুটো এতটাই অসাড় হয়ে গিয়েছিল যে, অপারেশন করে বাদ দিতে হয় তিনটে আঙুল।

হোক। তারও যদি সে রকম হয়, তো হোক। তবু সে পাহাড়ে যাবে। যাবেই। তাই বসন্তদার কাছ থেকে খবর নিয়ে সে যোগাযোগ করেছিল কুড়ি নম্বর পদ্মপুকুর রোডের সাউথ ক্যালকাটা ট্রেকার অ্যাসোসিয়েশনের দীপেন সামস্তর সঙ্গে। তাদের ওখানে কয়েক দিন  যাতায়াত করতেই আলাপ হয়ে গিয়েছিল আরও অনেক পর্বতারোহীর সঙ্গে। বয়সে তার থেকে অনেকটা বড় হলেও খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল অরণিদার সঙ্গে। পাহাড় নিয়ে তাঁরও অভিজ্ঞতা কম নয়। তাই তাঁর কাছ থেকেও নানান টিপস নিয়ে, রাহুল, শ্রাবণ আর কারুকৃতের সঙ্গে ও একদিন পাড়ি দিয়ে দিল পঞ্চকেদারের উদ্দেশে।
সে আগেই জেনে গিয়েছিল পাহাড়ে কখনও তাড়াহুড়ো করে উঠতে নেই। দ্রুত উঠতে গেলেই পালমুনারি ইডিমায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। মানে ফুসফুসের মধ্যে জল জমে যায়। আর সেরিব্রাল ইডিমা হলে তো কথাই নেই। অসহ্য যন্ত্রণায় মনে হয় গোটা মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তখন নীচে নেমে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। তাই ঋষিকেশ, রুদ্রপ্রয়াগে  ওঠার সময় দ্রুত পা চালালেও, পঞ্চকেদারের প্রধান দ্রষ্টব্য--- গৌরীকুণ্ড থেকে প্রায় চোদ্দো কিলোমিটার দূরের 'কেদার'-এ যাওয়ার পুরো পথটাই সে ধীরে ধীরেই উঠেছিল।
তার পরে আবার এই চন্দ্রশিলা অভিযান। তবে না, তার ভয়ের কোনও কারণ নেই। যা যা দরকার সবই সে গুছিয়ে এনেছে। পায়ে একটা পরা থাকলেও, রবার সোলের খুব ভাল আরও এক জোড়া জুতো সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। এই আবহাওয়ায় চাল-ডাল সেদ্ধ হতে প্রচুর সময় লাগে বলে খাবার জন্য এনেছে ছাতু, চিঁড়ে, নুডলস। বড় ফ্রেমের কালো চশমা। রাতে শোয়ার সময় পরার জন্য গরম মোজা। এনেছে জ্যাকেট, স্লিপার ব্যাগ, টর্চ। দড়ি, মোমবাতি, যাবতীয় ওযুধপত্র ছাড়াও অরণিদার পরামর্শ মতো কোকা থার্টি। এটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ। একটু বেশি উপরে উঠে গেলে, যেখানে গাছপালা নেই, অক্সিজেনের মাত্রা কম, বাতাসও ভারী, সেখানে তো নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তখন নাকি এটা খুব ভাল কাজ করে। আর সব থেকে যেটা জরুরি, সেই জলও নিয়ে এসেছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কিন্তু সেটাও তো এখন শেষের দিকে।
অরণিদা বারবার করে বলে দিয়েছেন, যাচ্ছিস যা। তবে খেয়াল রাখবি, ডি-হাইড্রেশন যেন না হয়। সব সময় লিক্যুইড খাবি। বেশি করে জল খাবি। আর মনে রাখবি, যেটা সঙ্গে করে অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে, সেটা হল, কষ্ট করার মানসিকতা।
কষ্ট তো সে করছেই। চেষ্টা করছে বাকি তিন সঙ্গীর থেকে অন্তত কিছুটা হলেও, একটু এগিয়ে থাকতে। কারণ, ও শুনেছে, যতই বন্ধু হোক, আগে যত লোকই সেই শিখরে পা রেখে থাকুক না কেন, প্রতিবারই, প্রতি দলের প্রত্যেকটা সদস্যই চায় এক মিনিট আগে হলেও, সবার চেয়ে আগে চূড়ায় পৌঁছতে। এবং মজার কথা হল, চূড়ায় উঠে, চূড়া ছোঁয়ার আনন্দে অনেকেই বেমালুম ভুলে যায়, আগে থেকে ঠিক করে রাখা--- উঠেই, পটাপট ছবি তোলার কথা। কারণ, ক্যামেরায় ধরা সময়টাই বলে দেয় সে ঠিক কখন, ক'টায়, কত মিনিট, কত সেকেন্ডে, পারলে সেকেন্ডটাকে যাট দিয়ে ভাগ করে, ঠিক কোন মুহূর্তে সে পৌঁছেছে।

পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ওই তন্বী মেয়েটি তাকে যে রা' ফল দিয়েছিল, সেটা খেয়ে সে বেশ ঝরঝরে তরতাজা হয়ে উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু বাকি সঙ্গীদের পিছনে ফেলে হুটোপাটি করে এগোতে গিয়ে তাঁর শরীর আবার বিগড়োতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই গা গুলিয়ে উঠছে। গলার কাছে উঠে আসছে টকটক বিচ্ছিরি একটা জল। মুখ ভরে যাচ্ছে তাতে। ইতিমধ্যেই বার কতক বমিও করেছে সে।
মুখ ধুতে ধুতে আর অরণিদার কথা মতো বারবার খেতে খেতে সঙ্গে আনা জলের স্টক এর মধ্যেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। যেটুকু আছে তাতে আর কতক্ষণ চলবে কে জানে! সামনে ঝর্না-টর্না না-পেলে মহামুশকিল! তবে হ্যাঁ, তার এখন আর বমি-টমি হচ্ছে না। বমি-বমি ভাবটাও নেই। ভাগ্যিস খানিক আগে সাধু গোছের ওই লোকটা মাঝপথে হঠাৎ উদয় হয়ে তাকে একটা পোড়া জাম্বুরা লেবু দিয়ে বলেছিল, এটা খেয়ে নে বেটা। আর বুমি-টুমি হুবে না।
সত্যিই তাই। ওটা খাওয়ার পর তার আর বমি তো হয়ইনি, বমি-বমি ভাবটাও চলে গেছে। তবে শরীরটা একটু কাহিল হয়ে পড়েছে। আরও কতটা হাঁটতে হবে কে জানে! সামনে যত দূর চোখ যাচ্ছে, গাইডকে দেখা যাচ্ছে না। প্রথম প্রথম তাদের সঙ্গ ছেড়ে গাইড যখন এগিয়ে যেত, ওদের রাগ হত। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই ও দেখত, গাইড তাদের চার জনের জন্য কাঠকুটো জ্বেলে গরম গরম নেম্বু-পানি রেডি করে রেখেছে। বিশ্রাম করার জন্য টাঙিয়ে ফেলেছে তাঁবু। তাই গাইডকে দেখতে না-পেয়ে ওর মনে হল, নিশ্চয়ই সামনে কোথাও তাঁবু ফেলেছে সে। এবং সেটা খুব একটা দূরেও নয়। তাই সে ফের আগের চেয়ে একটু দ্রুতই পা চালাতে লাগল।
তুঙ্গনাথ হয়ে সে যখন চন্দ্রশিলায় উঠছে, তখন তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টটা দশ-এগারো হাজার ফুট ওঠার পরেই সাধারণত হয়। কারও কারও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ছ'-সাত হাজার ফুট উঠলেও হয়। আর সে তো বারো ছাড়িয়ে তেরো হাজার ফুটের দিকে এগোচ্ছে। তার তো এ সব হওয়ারই কথা। এতক্ষণ যে হয়নি, সেটাই অনেক। তার মনের জোর আছে বলতে হবে। তবে না। মনের জোরে সব কিছু হয় না। শরীরটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। তার শরীর আর চলছে না। টলে টলে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, শরীরটাকে ব্যালেন্স করার জন্য শুধু হাত আর পা-ই যথেষ্ট নয়, একটা লেজ থাকলে ভাল হত।
অরণিদা তাকে পইপই করে বলে দিয়েছিলেন, মনে রাখবি, পাহাড়ে উঠতে হলে শুধু শরীর ফিট রাখলেই হবে না। মনে রাখতে হবে, নিজেকে নিজেরই খেয়াল রাখতে হবে। অসুস্থ হয়ে পড়া মানেই অন্য সঙ্গীদের বিব্রত করা।
তাই কাবু হয়ে পড়লেও সে কাউকেই কিছু জানাবে না। আর জানাবেই বা কাকে! তার তিন সঙ্গীর কেউ তরতর করে এগিয়ে গেছে, তো কেউ আবার তার চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা পথ।
এই মে মাসেও চার দিকে বরফে বরফ। শুধু পাহাড়ি পথ হলে হত, কিন্তু এই পথটা পুরু বরফে মোড়া বলে হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। গোড়ালির কল-কবজা যেন লক হয়ে যাচ্ছে। তবে এখানে যে খুব একটা ঠান্ডা আছে, তা নয়। সামনে দিয়ে বাতাস এসে যখন বুকের উপরে আছড়ে পড়ছে, তখন শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পিঠে রোদ পড়লেই এত জ্বালা করছে যে, মনে হচ্ছে কে যেন বিছুটি পাতা ঘষে দিচ্ছে।
সত্যিই কি রোদের জন্য এটা হচ্ছে, নাকি পাহাড়েরই কারসাজি ওটা! হতে পারে! হতেই পারে! এত লোক এখানে আসে, ব্যবহারের পরে এখানেই ফেলে দিয়ে যায় জলের বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট, বড় বড় পলিপ্যাক। পাহাড় বাগ করবে না?
খাওয়ার পরে কেউ যদি কলার খোসা আমাদের গায়ে ছুড়ে ফেলে, যেতে যেতে জুতো দিয়ে পা মাড়িয়ে দেয়, কাঁধের উপরে উঠে বসতে চায়, আমরা রাগ করব না!তবে?
তাই তো একটু আগেই, সে নিজেই আরও অনেক পর্বতারোহীর মতো এইটুকু পথ আসতে গিয়েই পথের মধ্যে দু'-দুটো খালি বোতল ছুড়ে ফেলেছে। তা হলে কি এই জন্যই পাহাড়টা তার উপরে রেগে গেছে! তাকে এতটাই কাহিল করে দিচ্ছে, যাতে সে আর এক পা-ও এগোতে না পারে। হতে পারে! হতেই পারে! এগুলি তো সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। সবাই যদি এই ভাবে দুটো করেও বোতল ফেলে যায়, তা হলে আগামী পঞ্চাশ বা একশো বছরের মধ্যে এখানে যে কী পরিমাণ দূষণ হবে, সেটা কল্পনা করতে গিয়েই থমকে দাঁড়াল রোহিতাশ্ব। মুখ দিয়ে শুধু একটাই শব্দ বেরিয়ে এল— ছিঃ।
এই জন্যই পাহাড় এত বিরক্ত হয়। থাকতে না-পেরে উসখুস করে। হয়তো চেষ্টা করে এই পর্বতারোহীদের নাগাল থেকে আর একটু দূরে সরে যেতে। আর তার ফলেই নেমে আসে ধস। শুরু হয় প্লাবন। আমরা তো নিজেরাই দেখলাম, এই তো কয়েক বছর আগে, বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করেই উত্তরাখণ্ডের উপরে কী ভাবে আছড়ে পড়ল ভয়ঙ্কর দুর্যোগ।
হবে না? পাহাড় ফুঁড়ে পাঁচ তলা ছ'তলা বাড়ি বানাবে। তারস্বরে মাইক বাজিয়ে তার শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিত করবে। হাজার হাজার গাড়ির কালো ধোঁয়ায় চারিদিক ঢেকে দেবে, আর সে চুপচাপ সব সহ্য করবে!
আমার তো মনে হয়, সেই দিন আর বেশি দূর নেই, যে দিন দা-কুড়ুল নিয়ে গাছপালা কাটতে গেলে গাছেরাও রুখে দাঁড়াবে। প্রতিবাদ করবে। কিংবা প্রাণপণে ছুটে পালাবে। আর গাছ যদি সত্যি সত্যিই শিকড়বাকড় নিয়ে ছুটে পালায়, তা হলে তার পরিণাম যে কী হবে, তা একবারও কেউ কি ভেবে দেখেছে!
নাঃ, আর নয়। পর্বতারোহীরা বলে--- আমরা এই শৃঙ্গ জয় করেছি, ওই শৃঙ্গ জয় করেছি, সেই শৃঙ্গ জয় করেছি। আরে বাবা, কারও উপরে পা রাখা মানেই কি তাকে জয় করা? পাহাড়কে কি কখনও জয় করা যায়? না, কখনও সম্ভব? পাহাড়ের তুলনায় আমরা এত তুচ্ছ, এত নগন্য যে, ওটা ভাবাটাও অপরাধ। হ্যাঁ, তার কাছে আমরা যেতে পারি। তার পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে মাথা তুলে তাকে দেখতে পারি, সে কত বড়। তার কোলে দু'দণ্ড জিরিয়ে শীতল-শান্ত হতে পারি। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারি। তাকে ভালবাসতে পারি। কিন্তু জয়? কখনওই নয়।
জয় যদি করতেই হয়, পাহাড়ের শরীর নয়, সবার আগে পাহাড়ের মনটাকে জয় করতে হবে। আর সে যদি খুশি হয়? তা হলে কুলি বা গাইড তো দূরের কথা, যত উঁচু বা দুর্গম চূড়াই হোক না কেন, কোনও শেরপাও লাগবে না। সে নিজেই আমাদের মাথায় করে রাখবে। আর তাকে খুশি করার প্রথম শর্তই হল, তাকে তার মতো থাকতে দেওয়া।
ওর যেই এটা মনে হল, অমনি পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করল রোহিতাশ্ব। নাঃ, যত কাছেই এসে থাকুক, সে আর  চন্দ্রশিলায় উঠবে না। যে ভাবে সে এসেছে, সে ভাবেই ফিরে যাবে সমতলে। মানুষের কাছে গিয়ে মানুষ হয়েই থাকবে। একজন ছাপোষা মানুষ হয়ে। তবে যাবার সময় এই পাহাড়ের বুকে সে যা যা ফেলে এসেছে, শুধু সেগুলিই না, অন্যরাও যা ফেলে গেছে, সেগুলিও সে খুঁজে খুঁজে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। সে যতই ভারী হোক না কেন।
এটা ভাবামাত্র শেষ বারের মতো পিছন দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে টা টা করল সে। কিন্তু কাকে? সঙ্গীদের, নাকি তাদের গাইডকে, নাকি পাহাড়ের ওই শিখরটাকে, সে নিজেও বুঝতে পারল না।

-----------------------------------
 

 
SIDDHARTHA SINGHA
27/P, ALIPORE ROAD,
KOLKATA 700027

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।। কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।      মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কা...

ছড়া ।। প্রেম নদীর মাঝি ।। গোবিন্দ মোদক

  প্রেম নদীর মাঝি  গোবিন্দ মোদক  প্রেম নদীতে ভাসাই ডিঙি উথাল পাথাল জল,  ছোট্ট আমার তরীখানি করছে যে টলমল! জলের উপর ফুটে আছে কতো মোহন ফুল,  ফুলের বোঁটা জড়িয়ে আছে তোমার মাথার চুল!  জলের ভেতর আরো যে জল, টল-মল-টল করে,  বিদেশ থেকে আসছে চিঠি বিরহিনীর ঘরে!  জলের নিচে লুকিয়ে আছে রহস্য অজানা,  সাধুজনে বারণ করেন যাওয়া নাকি মানা!  প্রেমিক মন চায় যে যেতে সেই অচিনপুরে,  সারা জীবন বৈঠা বেয়েও থেকে যায় দূরে!  কিন্তু প্রেমিক শোনে নাকো সাধুজনের বারণ,  সাধ করে তাই ডেকে আনে অতৃপ্তিটার কারণ!  অবশেষে হালে পানি না পেয়ে সে কাঁদে,  বিশ্বভুবন সারা জীবন পড়ছে ঘুঘুর ফাঁদে!  তবুও তো প্রেম নদীতে সবাই ভাসায় তরী,  প্রেম যমুনা উথাল-পাথাল কি যে এবার করি! মন রে মনে মতি রাখো করো সাধুসঙ্গ,   প্রেম নদীতে ভাসিয়ে তরী দেখো আজব রঙ্গ!!   ____________________   গোবিন্দ মোদক।  রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।  পশ্চিমবঙ্গ --- 741103

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

পাপান ও নূতন মিস ।। গোপা সোম

পাপান ও নূতন মিস গোপা সোম       পাপান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই বিদ্যালয়টি বিশাল বড়, অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে অনেক শ্রেণী কক্ষ রয়েছে, কারণ, প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করে বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে কম বেশী ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী। এক কথায়, শহরের বুকে এক অন্যতম গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই বিদ্যালয়ে অনেক সংখ্যক মাস্টারমশাই দিদিমণি আছেন। পড়াশোনায় ও বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম আছে। রেজাল্ট খুবই ভাল হয়।        সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অঙ্কের মাস্টারমশাই অবসর নিয়েছেন, তাঁর স্থানে একজন নূতন মিস এসেছেন। নূতন মিস কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রী সবার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন। সবসময় লাল পেড়ে শাড়ি পরে আসেন, এছাড়া আর কোনো পোষাকে মিসকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। নূতন মিস পাপানদের অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান, এত সুন্দর বোঝান, পাপানের খুব ভালো লাগে মিসের পড়ানো। নূতন মিস বলতে পাপান অজ্ঞান। আর নূতন মিসও পাপানকে খুব স্নেহ করেন। নূতন মিসের কাছ থেকে পাপান অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।        নূতন মিস খুব নিয়মানুবর্তী, উনি সময় দেখে ক্লাসে আসেন, এবং তাঁর পড়ানোর ভাগ পুরোপুরি...

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নিশাবসানের সাথে সাথে জেগে ওঠে ধরণী। জেগে ওঠে নতুন প্রাত্যহিকতার আরো একটি স্বপ্ন নিয়ে --- চিরন্তনের নিত্যনিয়মে। একটু একটু করে প্রভাতআভায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিবসনিসর্গ। ঋতুচক্রে আবারো নতুন মোড়! শারদীয়ার রঙ লেগেছে আজ প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে। ঘাসের ডগায় ডগায় কুয়াশার অন্তরঙ্গ স্পর্শ! সুখাবহ অনুভূতির সবটুকুজুড়ে তাই ভিজেভিজে কেমন একটা হিমেল রোমাঞ্চ। টুপটাপ ঝরে পড়ছে ডাগর যুবতীর মতো শিউলী। অবিরাম আলতো ছোঁয়ায় ভিজেমাটিতে শিহরণ লাগে। স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মন। ভাবনায় ভেসে ওঠে ফেলে আসা আরো কত আশ্বিনের ভালোলাগা! দিনেরআলো আরো চেকনাই হয়ে ওঠে। নদীর দুধার বরাবর বিছিয়ে থাকা কাশবনের বেসামাল আবেগ দুলেদুলে গড়িয়ে পড়ে। তাকে সামনে রেখেই, উৎসবের বল্গাহীন আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ধরার বুকে। মাথার উপরে তখন ঝকঝকে নীলাকাশ। কারোর যেন খেয়ালই নেই --- যার অনাবিল বিস্তারে, অসীম স্বচ্ছতায় চিত্রবৎ প্রতিবিম্বিত হয়েছে পৃথিবীরই উচ্ছ্বাস। ওই দেখ --- অলস ভেসে চলেছে সফেদ ফেনার মতো নিরম্বু মেঘের দল। আদিগন্ত নীলিমায় --- এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। প্রকারান্তরে যেন প্রত...

অভিমান ।। তন্ময় পালধী

অভিমান তন্ময় পালধী   গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি চলছেই। আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। বিকেলে বারান্দায় বসে অনুভাদেবী সবে খবরের কাগজ খুলেছেন, ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামল। একটানা বৃষ্টিতে মন খারাপ হলেও আজ আর বারান্দা ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ডুব দিলেন অতীতে। স্মৃতির ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে উঠলো পুরানো দিনগুলি। কদিন ধরেই চরম ব্যস্ততা বালিয়াল পরিবারে। বাড়ির ছোটমেয়ে অনুভার বিয়ে। সবে ম্যাট্রিক দিয়েছে। তার ইচ্ছা আরও পড়ার, বাবার ও তাই ইচ্ছে। কিন্তু সমাজ! তখনকার রীতিতে মেয়ের বয়স পনেরো ষোল হলেই দিয়ে দাও বিয়ে। অগত্যা বাবা আর কি করেন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সিলেকশন হয়েও তাই ভর্তি হওয়া হলো না। বিষণ্ণতা নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। সেদিনও বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে যেন চারিদিক ভেসে যাবে। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সাড়ে আটটায় লগন। মুহূর্তগুলো যেন কাটতেই চায় না। এক একটা মিনিট ঘন্টাখানেক বলে মনে হচ্ছে। চিরকালই অন্তর্মুখী সে। তার মনে যে কি ঝড় চলছে কেউই বুঝতে পারছে না। অথচ বিপরীতমুখী একটা আশাবাদিতা তাকে স্থির অবিচল রেখে দিয়েছে। মনের গতিপ্রকৃতি...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার

গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার  আলোর দিশারি শিক্ষক তুমি অন্ধকারে আলো, তুমি পথ দেখাও অচেনা কালো। ছাত্রের চোখে স্বপ্নের বাতি, তুমি জ্বালাও প্রতিদিন রাতে। তোমার কথায় জেগে ওঠে প্রাণ, পথ চলা শিখি, মুছে যায় জ্ঞানহীন ধ্যান। তুমি হৃদয়ের দর্পণ স্বচ্ছ, যত শিখি ততই হই স্পষ্ট। ছাত্র যদি হয় কচি চারাগাছ, শিক্ষক তারে দেন শেকড়ের রস। শক্তি জোগাও, ভরাও সাহসে, স্বপ্ন সাজাও অন্তরের গহনে। তুমি আকাশ, আমরা তার তারা, তুমি ছাড়া চলতে পারি না সারা। যতদিন বাঁচি থাকবে মনে, শিক্ষকের ঋণ লেখা রবে গগনে। শ্রদ্ধার পাঠশালা চকের দাগে কালো বোর্ডে, লিখে চলে শিক্ষক দিনরাতে। ছাত্র বসে মন ভরে শোনে, সত্যের পথ শেখে তার সনে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিলন, তাতেই গড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের সৃজন। বইয়ের পাতায় প্রাণের ছোঁয়া, শিক্ষক দেন জ্ঞানের বীজ বোনা। ভুল করলে ধমক দেন স্নেহে, আবার হাসেন বুক ভরা প্রাণে। ছাত্রের চোখে দেবদূত তুমি, ভুলের অন্ধকারে করো আলোকধ্বনি। শিক্ষা নয় কেবল কাগজের লেখা, শিক্ষক শেখান বাঁচার দেখা। এই তো জীবনের সত্যি মানে, ছাত্র–শিক্ষক একসাথে প্রাণে। ছাত্রের কণ্ঠে গান শিক্ষক তুমি জীবনের গান, তুমি দিলে জ্ঞানের দান। তোমা...

সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী

সমুদ্র আর অস্তিত্ব  সুব্রত চৌধুরী  সমুদ্র শুধু নিরন্তর ঢেউয়ের সান্নিধ্য নয়   নয় সে নিখাদ গভীরতায় মুগ্ধ এক শরীর    পাতালের রহস্যে ফেরা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে  বুঝতে থাকি— সমুদ্র আসলে সভ্যতার বিনম্র স্পর্শ  সম্পর্কের পরাগরেণু মেখে তরল হয়ে ওঠা অস্তিত্ব  সে কোনো স্থানাঙ্কিত জলরাশি নয়  পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা দৃশ্যের গতিশীল যৌবন  সমুদ্র হারিয়ে গেলে অস্তিত্বে ফিরে আসে শূন্যতা  অদৃশ্য হয়ে থাকা বিবেকের দর্পণে  যখন ফুটে ওঠে আপন ক্ষুদ্রতার প্রতিবিম্ব  নিঃশব্দে হয়ে যায় নিজের উপলব্ধি—   দেহের মানুষকে ছুঁয়ে যায় মনুষ্যত্বের সমুদ্র   আমিত্ব ডুব দেয় অস্তিত্বের তরল সম্পর্কের বন্ধনে               —————————  Dr. Subrata Chaudhuri  Asst. Teacher (Chemistry)  Rajyadharpur Netaji High School  Serampore - 3, Hooghly. 

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি ।। শ্যামল হুদাতী

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি শ্যামল হুদাতী  ভূমিকা: বাংলা সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি সুদীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতিফলন। গঙ্গা–পদ্মা–মেঘনা নদীবিধৌত ডেল্টা অঞ্চল শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয়, এটি মানব সভ্যতার একটি প্রাচীনতম উর্বর ক্ষেত্র। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে প্রাচীন, মধ্যযুগ, নবজাগরণ এবং আধুনিক সময় পর্যন্ত বাংলা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির সহাবস্থানে গড়ে উঠেছে । বাংলা সভ্যতা তাই একক কোনো জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের সম্মিলিত রূপ। অধ্যায় ১: ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য বাংলা সভ্যতার শিকড় বোঝার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন এর ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট অনুধাবন। ১.১ নদী–ডেল্টা ও উর্বর ভূমি বাংলা অঞ্চল গঠিত হয়েছে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পলি জমে। নদীর অববাহিকা পলি–সমৃদ্ধ কৃষিজমি তৈরি করে, যা প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই ধানচাষের জন্য উপযুক্ত ছিল। বর্ষাকালীন প্লাবন নতুন পলি এনে জমিকে উর্বর রাখত, ফলে গ্রামীণ কৃষিনির্ভর সভ্যতা বিকশিত হয়। ১.২ বাণিজ্যপথ ও সাংস্কৃতিক সংযোগ নদীপথ ও...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত

গল্প দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে            সমীর কুমার দত্ত  সমর গুপ্ত নামের যুবকটি সর্বদা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরতো। ওটা শিখেছে ও ওর চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো শম্ভুনাথ সরকারের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে।  ধুতি পরার অভ্যাস শম্ভুর গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এসে পরীক্ষা দিয়ে  কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি পায়। নাইটে নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে বি.কম পাশ করে। রবিবার দিন আর অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে বিকেল বেলায ধুতি পাঞ্জাবি পরে সমরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ঘোরা বলতে  পাড়ার শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলের পাশে উকিলবাবুর বাড়ির সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সমরের সঙ্গে গল্প করতে। বহুদূর থেকে হাওড়ার গার্লস্ কলেজে পড়তে আসা চামেলী ঘোষ নামের একটি মেয়ে ওই লেডিজ হোষ্টেলে বোর্ডার হিসেবে এসে ওঠে। নিত্য যাতায়াতের পথে ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথ ও সমরের সঙ্গে চোখের দেখায় পরিচিত হয়ে হাসি বিনিময় করে। হাসির পরিণতিতে বাক্যালাপ, বাক্যালাপের পরিণতি প্রেমে পৌঁছায়। একদিন সমর গুপ্তের সালিশিতে শম্ভুনাথের সঙ্গে চামেলীর ঘনিষ্ঠ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...