Skip to main content

গল্প ।। ট্রেকিং ।। সিদ্ধার্থ সিংহ


ট্রেকিং

সিদ্ধার্থ সিংহ


নামলে নামুক। কী আর করা যাবে! ও আর পারছে না। এ বার একটু বসতেই হবে। কিন্তু কোথায় বসবে? বসার জন্য যেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, ঠিক তখনই ও দেখল, একটা ষোলো-সতেরো বছরের তন্বী মেয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে তরতর করে নেমে আসছে।
সমতল থেকে ছ'হাজার ফুট উঁচুতে এসে, চোপতা থেকে পাহাড়ের এই খাড়া পথ বেয়ে সেই যে হাঁটা শুরু হয়েছে, রোহিতাশ্ব শুধু হেঁটেই যাচ্ছে। এত হেঁটেছে যে, পা আর চলছে না। পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতেই যেন জীবন বেরিয়ে যাচ্ছে। গায়েও আর এতটুকু জোর নেই। এই দিনের বেলাতেও চোখের সামনে হঠাৎ হঠাৎ নেমে আসছে অন্ধকার। মাথাটাও টিপ টিপ করছে। মনে হচ্ছে, ও আর এক পা-ও হাঁটতে পারবে না। যে কোনও সময় মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
না, এ বার একটু না বসলেই নয়। তার গাইড এবং সঙ্গীরা কে কোথায় আছে ও জানে না। জানতেও চায় না। পরবর্তী ক্যাম্পে পৌঁছতে আরও কতক্ষণ লাগবে, তার কোনও ধারণাও নেই ওর। ও নিশ্চয়ই অন্যদের থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে, তার পরেও ও যদি এখানে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য থামে, তা হলে পরবর্তী ক্যাম্পে পৌঁছনোর অনেক আগেই হয়তো অন্ধকার নেমে আসবে।
পথের মাঝে ভিনরাজ্যের অচেনা-অজানা একটা লোককে ও রকম ক্লান্ত-অবসন্ন দেখেই বুঝি মেয়েটি তার কাছে এগিয়ে এল। কোঁচড় থেকে চেরিফলের মতো দেখতে এক মুঠো রা' ফল তার দিকে বাড়িয়ে দিল। ও জানে, এগুলোকে কেউ পার্বতী ফলও বলে। কিন্তু ও জানে না, ওগুলো খায়, না গায়ে মাখে। তাই মেয়েটির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। কারণ ও জানে, মেয়েটিকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও মেয়েটি তার ভাষা বুঝতে পারবে না। যদি বোঝেও, তার জবাবে সে যা বলবে, ও সেটা বুঝতে পারবে না।
কিন্তু কয়েক মুহূর্ত মাত্র। মেয়েটি বোধহয় তার ও রকম চাহনি দেখেই বুঝতে পেরেছে রোহিতাশ্বর মনের কথা। তাই সে আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, এটা চুষে চুষে খাও। বলেই, মেয়েটি পাহাড়ের কোন বাঁকে যেন হঠাৎ করে মিলিয়ে গেল। সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওই ফলগুলো মুখে দিয়ে একটু চুষতেই ওর শরীরটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। মনে হল, রওনা হওয়ার সময় ওর শরীরে এবং মনে যতটা জোর ছিল, এখন যেন তার থেকেও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
শুধু চন্দ্রশিলা কেন, ও এখন ইচ্ছে করলে অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্টের চূড়াতেও উঠে যেতে পারে।
আসলে এর আগে ও কখনও পাহাড়ে ওঠেনি। আজ থেকে বহু বছর আগে, ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে একবার পুরুলিয়ায় গিয়েছিল। খড়িদুয়ারায়। মুকুটমণিপুর থেকে একটুখানি। সেটাও ছিল পাঁচ মাথাওয়ালা পাহাড়। একেবারে দুধের মতো সাদা ধবধবে। পরে জেনেছিল, ওটা ছিল খড়ি, মানে চকের পাহাড়। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে রাস পূর্ণিমায় তিন দিন ধরে সেখানে উৎসব হয়--- সৃজন উৎসব।
সেখানেই সে প্রথম দেখেছিল কত দেরি করে ওখানে রাত নামে। অথচ রাত নামলেও অন্ধকার নামে না। জ্যোৎস্নার ফটফটে আলোয় চারিদিক ভেসে যেতে থাকে। মনে হয়, লক্ষ লক্ষ টিউব লাইট জ্বলছে। সেই আলোয় পাহাড়ের গায়ে খড় আর মাথার উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল আয়োজকেরা। সারা রাত ধরে অনুষ্ঠান। পাহাড়ের এ চূড়া, ও চূড়া, সে চূড়ায় ম‌্যাড়াপ বাঁধা হয়েছিল। ছৌ-নৃত্য আর আদিবাসী চটুল গানে সবাই যখন মেতে উঠেছে, তখন তার মা তাকে নিয়ে ইচ্ছে করেই দল ছুট হয়ে একটু আলাদা হয়ে গিয়েছিল। মাইকের আওয়াজ যেখানে একদম ক্ষীণ, সে রকম একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে ওর মা-ই ওকে আঙুল তুলে দেখিয়েছিল, সেই বিশাল রুপোর মতো চাঁদটা কেমন হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড়ের একটা চূড়া থেকে আরেকটা চূড়ায় যাচ্ছে।
ও মুগ্ধ হয়ে দেখেছিল। বেলার দিকে দেখেছিল, পাহাড়ের গায়ে এখানে সেখানে এক-একটা মুরগির লড়াই ঘিরে কেমন ছোট ছোট জটলা তৈরি হয়েছে। 
মেলা হচ্ছে শুনে পাহাড়ের ঢালে গিয়ে ও একটু হতাশই হয়েছিল। না, সেখানে কোনও নাগোরদোলা ছিল না। ছিল না রঙিন মাছ। খাঁচায় ভরা বদ্রি বা টিয়াপাখির ঝাঁক। ছিল না ফিশ-ফ্রাই, চিকেন রোল কিংবা দই ফুচকার দোকান। তার বদলে ছিল পাতি লোহার হাতা-খুন্তি, দা-কোদাল। বেতের ঝুড়ি, অ্যালুমনিয়ামের থালা-বাটি। রঙিন রংতায় মোড়া তির-ধনুক। ছৌ-মুখোশ। প্লেট-টেলেট তো নয়ই, শালপাতাও নয়, লুচি, ঘুঘনি আর ঘরে বানানো মারবেলের মতো ছোট ছোট রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছিল বটপাতা বা ডুমুরপাতায় করে।
আশপাশের গ্রাম দেখার জন্য পর দিন সকালে ওখান থেকে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নেমে এসেছিল ওরা। কিন্তু গ্রাম নয়, সামনেই সরু গাড়িরাস্তার গা ঘেঁষে ওঠা পাহাড় দেখে ওরা আর লোভ সামলাতে পারেনি। উঠে পড়েছিল। হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড়ের গায়ে গজিয়ে থাকা ছোট ছোট আগাছা ধরে। বলতে গেলে খানিকটা খাবি খেতে খেতে। সমতলের গাছ হলে হয়তো তাদের টানে উপড়ে যেত। কিন্তু ওগুলো তো পাহাড়ের গাছ। লড়াই করে পাথুরে মাটি ফুঁড়ে শিকড় চালাতে হয় নীচে। তাই বুঝি প্রাণপণে ভূমি আঁকড়ে ছিল।
সাত-আট তলা বাড়ির সমান উঠে শৃঙ্গজয়ের আনন্দে ও যখন গায়ের জামা খুলে ওড়াচ্ছে, নিজেকে মনে করছে লর্ডসের মাঠে সৌরভ গাঙ্গুলি, ঠিক তখনই কতগুলি বাচ্চার হাসি শুনে ও পিছন ফিরে দেখে, চোখের সামনে কী বিশাল একটা আকাশ-ছোঁয়া পাহাড়।
যে-কোনও সময় পড়ে যাওয়ার ভয় নিয়ে দুরুদুরু বুকে তারা এতক্ষণ ধরে যেখানে উঠে এসেছে, ওর তুলনায় এটা কিচ্ছু না। নিছকই একটা চড়াই পথমাত্র। আর ওই খাড়া পাহাড় বেয়ে তারও চেয়ে ছোট ছোট কতগুলি বাচ্চা কিনা মাথায় লকড়ির বোঝা নিয়ে নাচতে নাচতে নেমে আসছে!

ফিরে এসে সবাইকে এই গল্পটা ও বলেছিল। এখনও মাঝে মাঝে বলে। কয়েক বছর আগে যখন কথায় কথায় সেই গল্পটাই ও বলেছিল, তখন ওরই এক বন্ধু, স্বপন বলেছিল, খড়িদুয়ারা? ওটা কোনও পাহাড়ই নয়। ওটা তো একটা টিলা। মাটির একটা বড় ঢেলাও বলতে পারিস। পাহাড় হচ্ছে অন্য জিনিস। যে একবার ভালবেসে পাহাড়ের কাছে যায়, পাহাড় তাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে।
স্বপনই ওকে বলেছিল, তুই যদি সত্যিই পাহাড়ে যেতে চাস, তা হলে আমাদের সঙ্গে যেতে পারিস। তবে তার জন্য তোকে কিন্তু ট্রেনিং নিতে হবে।
ও বলেছিল, কোথায়?
স্বপন বলেছিল, এন আই এমে।
--- সেটা আবার কী?
--- এন আই এম মানে নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং।
রোহিতাশ্ব জানতে চেয়েছিল, সেটা কোথায়?
ও বলেছিল, উত্তরকাশীতে।
--- বাব্বাঃ, অত দূরে!
--- দার্জিলিংয়েও আছে। এইচ এম আই। মানে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট।
--- কাছাকাছি কিছু নেই?
স্বপন বলেছিল, থাকবে না কেন? সর্বত্রই আছে। আমাদের এই কৃষ্ণনগরেও আছে।
--- তাই নাকি? কোথায়?
— গভর্মেন্ট আর্ট কলেজে ঢোকার মুখেই। দেখবি, গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা আছে— মাউন্টেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর।
আগ্রহের সঙ্গে রোহিতাশ্ব জানতে চেয়েছিল, ওখানে কত দিনের কোর্স?
স্বপন বলেছিল, বিভিন্ন রকমের কোর্স আছে। কোনওটা পনেরো দিনের, কোনওটা এক মাসের, তো কোনওটা আবার পাঁচ দিনের। যেমন আমি একবার রক ক্লাইম্বিংয়ের কোর্স করেছিলাম শুশুনিয়া পাহাড়ে। এটা ছিল পাঁচ দিনের কোর্স।
--- তাই নাকি? আচ্ছা, ওখানে ভর্তি হতে গেলে কী করতে হয়?
--- দ্যাখ, ওই সব ইনস্টিটিউটগুলিতে গেলেই যে তোকে সঙ্গে সঙ্গে লুফে নেবে, তা কিন্তু নয়। ওরা কিছু পরীক্ষা নেয়। তবে ক্লাব-ভিত্তিক লোকাল ইনস্টিটিউটগুলিতে অত কড়াকড়ি নেই।
অধীর আগ্রহে রোহিতাশ্ব জিজ্ঞেস করেছিল, ওখানে কী কী শেখায়?
--- অনেকগুলো ধাপ আছে। যেমন প্রথমেই শেখানো হয় ফ্রি হ্যান্ড ক্লাইম্বিং। আর তার সঙ্গে চেনানো হয় পাহাড়ের চরিত্র। সে সব হয়ে গেলে র‍্যাপলিং। মানে দড়ি ধরে পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা। তার পর ন্যাচারাল ক্যাবিটি, সেখানে খালি হাতে খাড়া পাহাড়ে ওঠা শেখানো হয়।
--- খালি হাতে খাড়া পাহাড়ে!
স্বপন বলেছিল, হ্যাঁ, খালি হাতে। অনেক সময় দেখবি, একদম দেওয়ালের মতো খাড়া পাহাড় বেয়ে অনেকে তরতর করে উঠে যাচ্ছে। নীচ থেকে দেখলে কিছুই বুঝতে পারবি না। আসলে পাহাড়ের গায়ে প্রচুর প্রাকৃতিক খাঁজ-খোঁজ থাকে। সেগুলি ধরে ধরে ওঠে। সেই ওঠাটাই শেখানো হয়।
রোহিতাশ্ব জানতে চেয়েছিল, কত করে নেয়?
--- সেটা খুব একটা খরচসাপেক্ষ নয়। তবে ক্লাইম্বিং শেখার সময় একটু খরচ হয় বইকী... অবশ্য একটু করিৎকর্মা হলে বা হাঁটাহাঁটি করতে পারলে, অভিযানে যাওয়ার সময় সরকারি সাহায্য মিললেও মিলতে পারে। আবার ঠিকঠাক লোককে ধরতে পারলে অনেক সময় স্পনসরশিপও জোগাড় করা যায়।
--- তাই নাকি? ও। এমনি ট্রেকিং করতে গেলে কী রকম খরচ-খরচা পড়ে?
--- সেটা নির্ভর করে কোথায় যাচ্ছিস, কত দিনের জন্য যাচ্ছিস এবং কত জন মিলে যাচ্ছিস তার উপরে।
--- কত জন মানে!
স্বপন বলেছিল, সচরাচর কেউ তো একা-একা পাহাড়ে যায় না। তবে দল বেঁধে যাওয়াও ঠিক নয়। সব থেকে ভাল হয়, যদি চার-পাঁচ জন মিলে যাওয়া যায়। আর সব সময় এমন লোকের সঙ্গেই যাওয়া উচিত, যারা পাহাড়কে ভালবাসে। যারা মনে করে পাহাড়ে গিয়েও
বাড়ির যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পাব কিংবা বাড়ির মতোই খাওয়া-দাওয়া পাব, তাদের সঙ্গে না যাওয়াই ভাল।
--- কেন?
--- সেটা না গেলে বুঝবি না। আমরা যেমন কয়েকজন মিলে একবার এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে ট্রেকিংয়ের জন্য কাঠমাণ্ডু থেকে প্লেনে লুকলা গিয়েছিলাম। লুকলা থেকে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছিলাম একশো কিলোমিটার দূরের কালা পাথরের উদ্দেশে। পথটা ছিল ছ'-সাত দিনের। দু'দিন হাঁটার পরেই আমাদের মধ্যে থেকেই একজন ফস করে বলে ফেলেছিল, এত খরচ করে শুধু শুধু এখানে এলাম! এর থেকে অনেক ভাল হত, যদি গোয়ায় যেতাম। সমুদ্রের পাড়ে শুয়ে থাকতাম। মদ খেতাম আর সারাক্ষণ সাগর-সুন্দরীদের দেখতাম।
সে হয়তো কথাটা এমনিই বলেছিল, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, তার ওই কথাটা আমাদের পুরো জার্নিটাকেই তেতো করে দিয়েছিল।
--- তাই! কিন্তু এটা তো খারাপ অভিজ্ঞতা। ভাল কোনও অভিজ্ঞতা নেই?
--- থাকবে না কেন? প্রচুর আছে। তবে আমার ট্রেকিং জীবনের সেরা মুহূর্তটা আমি কখনওই ভুলতে পারব না। সে বার আমরা দশ-বারো জন মিলে নীলকণ্ঠ পাহাড়ে গিয়েছিলাম। কিছুটা ওঠার পরেই তাঁবু ফেলা হয়েছিল। ভারী সুন্দর জায়গা। যে দিকেই তাকাই, দেখি, বরফের চাদর মুড়ি দিয়ে যেন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছে সার সার চুড়ো। তাদের মাথা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভেসে যাচ্ছে মেঘ। চারিদিকে কনকনে ঠান্ডা। হাওয়ার সঙ্গে ঝাঁক ঝাঁক আলপিন যেন ছুটে এসে মুখে বিঁধছে, গলায় বিঁধছে। টিম লিডার বলেছিলেন, কেউ যেন রাত্রে তাঁবু থেকে একা-একা না বেরোই।
কিন্তু আমার তো সুগার আছে। ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়। বারবার কাকে ডাকব! তাই শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না-পেরে মাঝরাতে যখন তাঁবুর ভিতর থেকে চুপিচুপি বাইরে বেরিয়ে এলাম, আমি তো একেবারে হতবাক। সে দিনটা ছিল অমাবস্যা। ভেবেছিলাম বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার হবে। তাই বেরোবার সময় টর্চটা সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু এ কী! কোথায় অন্ধকার! চারিদিকে ফটফটে আলো। গোটা আকাশটা যেন  হিরের কুচি দিয়ে মোড়া। আকাশে এত তারা সেই প্রথম দেখেছিলাম। ঝিকমিক ঝিকমিক করছে। এক ফোঁটা জায়গা নেই, যেখানে পিন ফোঁটানো যায়।
হঠাৎ মনে হল, অনেক দিন কোনও লোক দেখেনি ওরা, তাই এত তারা একসঙ্গে দল বেঁধে এসেছে আমাদের দেখতে। ওরা তারা! না, তারা মা! জয় তারা। জয় দুর্গা। জয় বাবা ভোলেনাথ!

তখন আমার মনে হয়েছিল, আমরা বুঝি স্বর্গে পৌঁছে গেছি! তখনই ঠিক করেছিলাম, লাগুক ঠান্ডা, তেত্রিশ কোটি দেবতাকে আমি এখন দু'চোখ ভরে দেখব।সত্যিই সে রাতে আমি আর তাঁবুর ভিতরে ঢুকিনি। সারা রাত শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। যারা এ রকম দৃশ্য দেখেনি, তাদের জীবনটাই বৃথা।
স্বপনের কথা শুনতে শুনতে বিহ্বল হয়ে রোহিতাশ্ব বলেছিল, এত সুন্দর!
স্বপন বলেছিল, শুধু প্রকৃতি নয়, ওই রকম প্রকৃতির মধ্যে থাকে বলে ওখানকার মানুষের মনগুলিও খুব সুন্দর। আমি তো বহু জায়গায় গিয়েছি। হিমালয় বা কুমায়ুনেও দেখেছি, যেহেতু ওখানে বিদেশিরাই বেশির ভাগ ট্রেকিং করে, ফলে সাহেব-সুবোদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ওখানকার গাইডরাও একটু সাহেবি গোছের হয়ে গেছে। তারা মাল বয়ে নিয়ে যায়। ঠিকঠাক পথ চিনিয়ে নিয়ে যায়। সারাক্ষণ পাশে পাশেই থাকে। বিপদে-আপদে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পারতপক্ষে কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না। ভীষণ মেপেজুপে কথা বলে। সাধারণত, যত দুর্গম এবং বিপদসঙ্কুল পথ হয়, গাইডদের দৈনিক মুজুরিও তত বেশি হয়। কিন্তু যা নেবার, তা ওরা আগেই দর কষাকষি করে চুক্তি করে নেয়। পরে তা নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করে না। এক কথায় বলতে গেলে, এরা খুব প্রফেশনাল হয়। কিন্তু ওদের মধ্যে কী যেন একটা নেই। কেমন যেন একটা ফাঁকা ফাঁকা। ফলে কাজে পটু হলেও, যত দিনই থাকুক না কেন, পর্বতারোহীদের সঙ্গে ওদের কোনও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
কিন্তু গাড়োয়াল অঞ্চলটা একটু অন্য রকমের। এখানকার গাইড ও মালবাহকদের সঙ্গে অনেক সময়ই পর্বতাভিযাত্রীদের কথা কাটাকাটি হয়। মন কষাকষি হয়। মুখ ফসকে খারাপ কথাও বলে ফেলে কেউ কেউ। কিন্তু অভিযান শেষ করে ফিরে আসার সময় দেখেছি, ওদের মনটা কত নরম। কত শিশুর মতো। কিছুতেই ভোলা যায় না তাদের সেই থমথমে মুখ। চোখের কোণে চিকচিক করা জলের কণা।
একবার রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একেবারে হতদরিদ্র একটা চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। খানিক পরেই এক দম্পতি গাড়ি থামিয়ে ডিমটোস্ট আর চায়ের অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোলের বাচ্চার জন্য এক গ্লাস দুধও চেয়েছিলেন।
দোকানি ভদ্রমহিলা তাদের চা-ডিমডোন্ট দেওয়ার আগেই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দুধ গরম করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দাম নেওয়ার সময় বাকি সব কিছুর দাম নিলেও, ওই দুধের দাম তিনি কিছুতেই নেননি। বলেছিলেন, দুধের দাম? বাচ্চার জন্য দুধ দিয়েছি, তার জন্য পয়সা নেই? ছিঃ।
শুধু ওই দোকানিই নয়, পরে দেখেছি, ওখানকার মানুষগুলোই ওই রকম।
--- এখনও এ রকম লোকজন আছে! রোহিতাশ্ব বলেছিল, আমি ওখানে যাব। ক্লাইম্বিং করব।
স্বপন বলেছিল, আগে ট্রেকিং কর। তার পর তো ক্লাইম্বিং।
বুঝতে না-পেরে ও বলেছিল, দুটো আলাদা নাকি?
স্বপন বলেছিল, মোটামুটি আঠারো হাজার ফুট অবধি হেঁটে ওঠাটাকে বলা যেতে পারে ট্রেকিং। কিন্তু উনিশ হাজার ছাড়ালেই সেটা সাধারণত ক্লাইম্বিং বা মাউন্টেনিয়ারিংয়ের মধ্যে পড়ে যায়। তখন শুধু গাইড বা মালবাহকে কাজ চলে না। শেরপা নিতে হয়। তবে আমি বলি, পুণ্য অর্জনের জন্য তীর্থযাত্রীরা যত দূর পর্যন্ত উঠতে পারে, ততটুকুই ট্রেকিং।

কিন্তু না। তখন ওর আর পাহাড়ে চড়া হয়নি। পরে, অনেক পরে, পাশটাস করে ও যখন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে চাকরি পেল, তখন প্রথম পোস্টিং হল মধ্য কলকাতার টি-বোর্ডের পাশেই সার্কেল অফিসের মার্কেটিং বিভাগে।
সেখানেই চাকরি করেন মাউন্টেনিয়ার বসন্ত সিংহ রায়। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হতেই ওর ভিতরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল পর্বত-প্রেম। ফলে কারণে-অকারণে, নানান খুঁটিনাটি জিনিস জানার জন্য ও যখনই সুযোগ পেত, অমনি চলে যেত বসন্তদার পাশের চেয়ারে। তাঁর কমপিউটারের সামনে বসে পাহাড় এবং পাহাড়ে ওঠার নানান ছবি দেখত। আলোচনা করত। পাহাড়ের নানা গল্প শুনত তন্ময় হয়ে।
তাঁর মুখেই ও শুনেছিল, সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় একবার তাঁর কী দশা হয়েছিল। নেপালের সমতল থেকে পঁচিশ হাজার ফুট উপরে, ধওলাগিরিতে কী ভাবে সারা রাত বরফের মধ্যে অচৈতন্য হয়ে আটকে পড়েছিলেন তিনি। পর দিন যখন তাঁকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়, তাঁর শরীর তখন প্রায় জমে গেছে। পা দুটো এতটাই অসাড় হয়ে গিয়েছিল যে, অপারেশন করে বাদ দিতে হয় তিনটে আঙুল।

হোক। তারও যদি সে রকম হয়, তো হোক। তবু সে পাহাড়ে যাবে। যাবেই। তাই বসন্তদার কাছ থেকে খবর নিয়ে সে যোগাযোগ করেছিল কুড়ি নম্বর পদ্মপুকুর রোডের সাউথ ক্যালকাটা ট্রেকার অ্যাসোসিয়েশনের দীপেন সামস্তর সঙ্গে। তাদের ওখানে কয়েক দিন  যাতায়াত করতেই আলাপ হয়ে গিয়েছিল আরও অনেক পর্বতারোহীর সঙ্গে। বয়সে তার থেকে অনেকটা বড় হলেও খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল অরণিদার সঙ্গে। পাহাড় নিয়ে তাঁরও অভিজ্ঞতা কম নয়। তাই তাঁর কাছ থেকেও নানান টিপস নিয়ে, রাহুল, শ্রাবণ আর কারুকৃতের সঙ্গে ও একদিন পাড়ি দিয়ে দিল পঞ্চকেদারের উদ্দেশে।
সে আগেই জেনে গিয়েছিল পাহাড়ে কখনও তাড়াহুড়ো করে উঠতে নেই। দ্রুত উঠতে গেলেই পালমুনারি ইডিমায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। মানে ফুসফুসের মধ্যে জল জমে যায়। আর সেরিব্রাল ইডিমা হলে তো কথাই নেই। অসহ্য যন্ত্রণায় মনে হয় গোটা মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তখন নীচে নেমে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। তাই ঋষিকেশ, রুদ্রপ্রয়াগে  ওঠার সময় দ্রুত পা চালালেও, পঞ্চকেদারের প্রধান দ্রষ্টব্য--- গৌরীকুণ্ড থেকে প্রায় চোদ্দো কিলোমিটার দূরের 'কেদার'-এ যাওয়ার পুরো পথটাই সে ধীরে ধীরেই উঠেছিল।
তার পরে আবার এই চন্দ্রশিলা অভিযান। তবে না, তার ভয়ের কোনও কারণ নেই। যা যা দরকার সবই সে গুছিয়ে এনেছে। পায়ে একটা পরা থাকলেও, রবার সোলের খুব ভাল আরও এক জোড়া জুতো সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। এই আবহাওয়ায় চাল-ডাল সেদ্ধ হতে প্রচুর সময় লাগে বলে খাবার জন্য এনেছে ছাতু, চিঁড়ে, নুডলস। বড় ফ্রেমের কালো চশমা। রাতে শোয়ার সময় পরার জন্য গরম মোজা। এনেছে জ্যাকেট, স্লিপার ব্যাগ, টর্চ। দড়ি, মোমবাতি, যাবতীয় ওযুধপত্র ছাড়াও অরণিদার পরামর্শ মতো কোকা থার্টি। এটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ। একটু বেশি উপরে উঠে গেলে, যেখানে গাছপালা নেই, অক্সিজেনের মাত্রা কম, বাতাসও ভারী, সেখানে তো নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তখন নাকি এটা খুব ভাল কাজ করে। আর সব থেকে যেটা জরুরি, সেই জলও নিয়ে এসেছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কিন্তু সেটাও তো এখন শেষের দিকে।
অরণিদা বারবার করে বলে দিয়েছেন, যাচ্ছিস যা। তবে খেয়াল রাখবি, ডি-হাইড্রেশন যেন না হয়। সব সময় লিক্যুইড খাবি। বেশি করে জল খাবি। আর মনে রাখবি, যেটা সঙ্গে করে অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে, সেটা হল, কষ্ট করার মানসিকতা।
কষ্ট তো সে করছেই। চেষ্টা করছে বাকি তিন সঙ্গীর থেকে অন্তত কিছুটা হলেও, একটু এগিয়ে থাকতে। কারণ, ও শুনেছে, যতই বন্ধু হোক, আগে যত লোকই সেই শিখরে পা রেখে থাকুক না কেন, প্রতিবারই, প্রতি দলের প্রত্যেকটা সদস্যই চায় এক মিনিট আগে হলেও, সবার চেয়ে আগে চূড়ায় পৌঁছতে। এবং মজার কথা হল, চূড়ায় উঠে, চূড়া ছোঁয়ার আনন্দে অনেকেই বেমালুম ভুলে যায়, আগে থেকে ঠিক করে রাখা--- উঠেই, পটাপট ছবি তোলার কথা। কারণ, ক্যামেরায় ধরা সময়টাই বলে দেয় সে ঠিক কখন, ক'টায়, কত মিনিট, কত সেকেন্ডে, পারলে সেকেন্ডটাকে যাট দিয়ে ভাগ করে, ঠিক কোন মুহূর্তে সে পৌঁছেছে।

পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ওই তন্বী মেয়েটি তাকে যে রা' ফল দিয়েছিল, সেটা খেয়ে সে বেশ ঝরঝরে তরতাজা হয়ে উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু বাকি সঙ্গীদের পিছনে ফেলে হুটোপাটি করে এগোতে গিয়ে তাঁর শরীর আবার বিগড়োতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই গা গুলিয়ে উঠছে। গলার কাছে উঠে আসছে টকটক বিচ্ছিরি একটা জল। মুখ ভরে যাচ্ছে তাতে। ইতিমধ্যেই বার কতক বমিও করেছে সে।
মুখ ধুতে ধুতে আর অরণিদার কথা মতো বারবার খেতে খেতে সঙ্গে আনা জলের স্টক এর মধ্যেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। যেটুকু আছে তাতে আর কতক্ষণ চলবে কে জানে! সামনে ঝর্না-টর্না না-পেলে মহামুশকিল! তবে হ্যাঁ, তার এখন আর বমি-টমি হচ্ছে না। বমি-বমি ভাবটাও নেই। ভাগ্যিস খানিক আগে সাধু গোছের ওই লোকটা মাঝপথে হঠাৎ উদয় হয়ে তাকে একটা পোড়া জাম্বুরা লেবু দিয়ে বলেছিল, এটা খেয়ে নে বেটা। আর বুমি-টুমি হুবে না।
সত্যিই তাই। ওটা খাওয়ার পর তার আর বমি তো হয়ইনি, বমি-বমি ভাবটাও চলে গেছে। তবে শরীরটা একটু কাহিল হয়ে পড়েছে। আরও কতটা হাঁটতে হবে কে জানে! সামনে যত দূর চোখ যাচ্ছে, গাইডকে দেখা যাচ্ছে না। প্রথম প্রথম তাদের সঙ্গ ছেড়ে গাইড যখন এগিয়ে যেত, ওদের রাগ হত। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই ও দেখত, গাইড তাদের চার জনের জন্য কাঠকুটো জ্বেলে গরম গরম নেম্বু-পানি রেডি করে রেখেছে। বিশ্রাম করার জন্য টাঙিয়ে ফেলেছে তাঁবু। তাই গাইডকে দেখতে না-পেয়ে ওর মনে হল, নিশ্চয়ই সামনে কোথাও তাঁবু ফেলেছে সে। এবং সেটা খুব একটা দূরেও নয়। তাই সে ফের আগের চেয়ে একটু দ্রুতই পা চালাতে লাগল।
তুঙ্গনাথ হয়ে সে যখন চন্দ্রশিলায় উঠছে, তখন তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টটা দশ-এগারো হাজার ফুট ওঠার পরেই সাধারণত হয়। কারও কারও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ছ'-সাত হাজার ফুট উঠলেও হয়। আর সে তো বারো ছাড়িয়ে তেরো হাজার ফুটের দিকে এগোচ্ছে। তার তো এ সব হওয়ারই কথা। এতক্ষণ যে হয়নি, সেটাই অনেক। তার মনের জোর আছে বলতে হবে। তবে না। মনের জোরে সব কিছু হয় না। শরীরটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। তার শরীর আর চলছে না। টলে টলে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, শরীরটাকে ব্যালেন্স করার জন্য শুধু হাত আর পা-ই যথেষ্ট নয়, একটা লেজ থাকলে ভাল হত।
অরণিদা তাকে পইপই করে বলে দিয়েছিলেন, মনে রাখবি, পাহাড়ে উঠতে হলে শুধু শরীর ফিট রাখলেই হবে না। মনে রাখতে হবে, নিজেকে নিজেরই খেয়াল রাখতে হবে। অসুস্থ হয়ে পড়া মানেই অন্য সঙ্গীদের বিব্রত করা।
তাই কাবু হয়ে পড়লেও সে কাউকেই কিছু জানাবে না। আর জানাবেই বা কাকে! তার তিন সঙ্গীর কেউ তরতর করে এগিয়ে গেছে, তো কেউ আবার তার চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা পথ।
এই মে মাসেও চার দিকে বরফে বরফ। শুধু পাহাড়ি পথ হলে হত, কিন্তু এই পথটা পুরু বরফে মোড়া বলে হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। গোড়ালির কল-কবজা যেন লক হয়ে যাচ্ছে। তবে এখানে যে খুব একটা ঠান্ডা আছে, তা নয়। সামনে দিয়ে বাতাস এসে যখন বুকের উপরে আছড়ে পড়ছে, তখন শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পিঠে রোদ পড়লেই এত জ্বালা করছে যে, মনে হচ্ছে কে যেন বিছুটি পাতা ঘষে দিচ্ছে।
সত্যিই কি রোদের জন্য এটা হচ্ছে, নাকি পাহাড়েরই কারসাজি ওটা! হতে পারে! হতেই পারে! এত লোক এখানে আসে, ব্যবহারের পরে এখানেই ফেলে দিয়ে যায় জলের বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট, বড় বড় পলিপ্যাক। পাহাড় বাগ করবে না?
খাওয়ার পরে কেউ যদি কলার খোসা আমাদের গায়ে ছুড়ে ফেলে, যেতে যেতে জুতো দিয়ে পা মাড়িয়ে দেয়, কাঁধের উপরে উঠে বসতে চায়, আমরা রাগ করব না!তবে?
তাই তো একটু আগেই, সে নিজেই আরও অনেক পর্বতারোহীর মতো এইটুকু পথ আসতে গিয়েই পথের মধ্যে দু'-দুটো খালি বোতল ছুড়ে ফেলেছে। তা হলে কি এই জন্যই পাহাড়টা তার উপরে রেগে গেছে! তাকে এতটাই কাহিল করে দিচ্ছে, যাতে সে আর এক পা-ও এগোতে না পারে। হতে পারে! হতেই পারে! এগুলি তো সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। সবাই যদি এই ভাবে দুটো করেও বোতল ফেলে যায়, তা হলে আগামী পঞ্চাশ বা একশো বছরের মধ্যে এখানে যে কী পরিমাণ দূষণ হবে, সেটা কল্পনা করতে গিয়েই থমকে দাঁড়াল রোহিতাশ্ব। মুখ দিয়ে শুধু একটাই শব্দ বেরিয়ে এল— ছিঃ।
এই জন্যই পাহাড় এত বিরক্ত হয়। থাকতে না-পেরে উসখুস করে। হয়তো চেষ্টা করে এই পর্বতারোহীদের নাগাল থেকে আর একটু দূরে সরে যেতে। আর তার ফলেই নেমে আসে ধস। শুরু হয় প্লাবন। আমরা তো নিজেরাই দেখলাম, এই তো কয়েক বছর আগে, বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করেই উত্তরাখণ্ডের উপরে কী ভাবে আছড়ে পড়ল ভয়ঙ্কর দুর্যোগ।
হবে না? পাহাড় ফুঁড়ে পাঁচ তলা ছ'তলা বাড়ি বানাবে। তারস্বরে মাইক বাজিয়ে তার শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিত করবে। হাজার হাজার গাড়ির কালো ধোঁয়ায় চারিদিক ঢেকে দেবে, আর সে চুপচাপ সব সহ্য করবে!
আমার তো মনে হয়, সেই দিন আর বেশি দূর নেই, যে দিন দা-কুড়ুল নিয়ে গাছপালা কাটতে গেলে গাছেরাও রুখে দাঁড়াবে। প্রতিবাদ করবে। কিংবা প্রাণপণে ছুটে পালাবে। আর গাছ যদি সত্যি সত্যিই শিকড়বাকড় নিয়ে ছুটে পালায়, তা হলে তার পরিণাম যে কী হবে, তা একবারও কেউ কি ভেবে দেখেছে!
নাঃ, আর নয়। পর্বতারোহীরা বলে--- আমরা এই শৃঙ্গ জয় করেছি, ওই শৃঙ্গ জয় করেছি, সেই শৃঙ্গ জয় করেছি। আরে বাবা, কারও উপরে পা রাখা মানেই কি তাকে জয় করা? পাহাড়কে কি কখনও জয় করা যায়? না, কখনও সম্ভব? পাহাড়ের তুলনায় আমরা এত তুচ্ছ, এত নগন্য যে, ওটা ভাবাটাও অপরাধ। হ্যাঁ, তার কাছে আমরা যেতে পারি। তার পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে মাথা তুলে তাকে দেখতে পারি, সে কত বড়। তার কোলে দু'দণ্ড জিরিয়ে শীতল-শান্ত হতে পারি। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারি। তাকে ভালবাসতে পারি। কিন্তু জয়? কখনওই নয়।
জয় যদি করতেই হয়, পাহাড়ের শরীর নয়, সবার আগে পাহাড়ের মনটাকে জয় করতে হবে। আর সে যদি খুশি হয়? তা হলে কুলি বা গাইড তো দূরের কথা, যত উঁচু বা দুর্গম চূড়াই হোক না কেন, কোনও শেরপাও লাগবে না। সে নিজেই আমাদের মাথায় করে রাখবে। আর তাকে খুশি করার প্রথম শর্তই হল, তাকে তার মতো থাকতে দেওয়া।
ওর যেই এটা মনে হল, অমনি পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করল রোহিতাশ্ব। নাঃ, যত কাছেই এসে থাকুক, সে আর  চন্দ্রশিলায় উঠবে না। যে ভাবে সে এসেছে, সে ভাবেই ফিরে যাবে সমতলে। মানুষের কাছে গিয়ে মানুষ হয়েই থাকবে। একজন ছাপোষা মানুষ হয়ে। তবে যাবার সময় এই পাহাড়ের বুকে সে যা যা ফেলে এসেছে, শুধু সেগুলিই না, অন্যরাও যা ফেলে গেছে, সেগুলিও সে খুঁজে খুঁজে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। সে যতই ভারী হোক না কেন।
এটা ভাবামাত্র শেষ বারের মতো পিছন দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে টা টা করল সে। কিন্তু কাকে? সঙ্গীদের, নাকি তাদের গাইডকে, নাকি পাহাড়ের ওই শিখরটাকে, সে নিজেও বুঝতে পারল না।

-----------------------------------
 

 
SIDDHARTHA SINGHA
27/P, ALIPORE ROAD,
KOLKATA 700027

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

ছোটগল্প ।। নীলিমার আত্মজাগরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত

নীলিমার আত্মজাগরণ পরেশ চন্দ্র মাহাত নীলিমা মাহাত, বয়স পঁচিশ প্লাস —তার বাবা মায়ের পঞ্চম তথা শেষ সন্তান। দুই দাদা —বড়দাদা শঙ্কর ও ছোটদাদা বিজয়। বড় দাদা শঙ্কর আর দুই দিদি তাদের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র নীলিমা আপাতত স্বামীর কোমল হাতের স্পর্শ ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত এবং আদৌ কবে অথবা সেই সৌভাগ্য আসবে সেটা ঈশ্বরের নিকটই একমাত্র জ্ঞাত। সেই সঙ্গে দুবছরের সিনিয়র ছোটদাদা বিজয়েরও নীলিমার মতো অবস্থা। তারও জীবনসঙ্গিনী জুটেনি। মোট সাতজন সদস্য নিয়ে গঠিত সংসার নীলিমাদের পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার —মধ্যবিত্ত পরিবার না বলে যদি নিম্নবিত্ত বলা হয় তবুও কোনো অত্যুক্তি করা হয় না। বাবার প্রত্যেকদিনের আয়ের উপর ভিত্তি করেই চলে সংসার। এই কঠোর এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও নীলিমার মা শ্রীমতী মেনকা‚ সংসার সামলে তার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার প্রতি যথেষ্ট তৎপর ও সহানুভূতিশীল। তাদের পড়াশুনায় কোনো খামতি রাখেননি। যথা সময়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের মুখ দেখিয়েছে – টিউশনের বন্দোবস্ত করেছে। তাদের জীবন যাতে সুখকর হয় সেটাই প্রতিদিন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছে। পাঁচ-পাঁচটি ছেলেমেয়ের মধ্যে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলা একপ...

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________ 

কবিতা ।। রঙ ।। ইউসুফ মোল্লা

  রঙ  ইউসুফ মোল্লা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,  পৃথিবী নানা রঙে সেজে উঠেছে।  ধূসর বাদামী রঙ তোমার দেহ,  মাথায় সবুজ রঙের বাবরি চুল,  তাতে গুঁজে রেখেছো লাল-নীল ফুল।  নববধূর মতো সিঁথিতে দিয়েছো সিঁদুর,  চোখে দিয়েছো কাজল।  দিগন্তভরা আকাশ তোমাকে নীল উপহার দিল,  সূর্যের লাল আলো তোমাকে সুন্দর করেছে।  তুমি তাদের ফিরিয়ে দিলে, বুকভরা ভালোবাসা আর স্নেহ।  মাঝে মাঝে এইভাবে হোলি আসে,  আমার মনকে রাঙিয়ে দিতে। ------------------    ইউসুফ মোল্লা উত্তর অঙ্গদ বেড়িয়া, ট্যাংরাখালী, ক্যানিং,  দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ৭৪৩৩২৯

চন্দন সুরভি নন্দর কবিতা

টাকার মেশিন                      মায়ের ওষুধ নিয়ে শহর থেকে ফিরল রতন সবে সন্ধ্যা নেমেছে  রাস্তায় আলো কম হাসপাতাল অনেক দূরে  অদৃশ্য যম খেলাকরে  মৃত্যুর সীমান্তে শায়িত মা   শেষ রক্ষা হল না  আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফোটে রাতের আঁধারে ঘরের দেওয়াল গুলো রাঙিয়ে গেছে কারা  তুলেছে রং বেরং এর তোরন  এসেছে নির্বাচন  শোনাযায় এবার নাকি এ টি এম চিহ্নে দাঁড়িয়েছে একজন! টাকার মেশিন........  জিতলে সবাইকে দেওয়া হবে! সামনে বসে উল্লাসে ফেটে পড়া রোবট গুলো মানুষ কবে হবে?  ====================== Chandansuravi Nanda Revenue Office  BL&LRO,Manbazar-ll Boro Purulia PIN-723131 Phone-9163332432

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

নারীমর্যাদা ও অধিকার হিমাদ্রি শেখর দাস  নারীর মর্যাদা বলতে বোঝায় নারীর সম্মান, অধিকার, এবং তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এটি সমাজে নারীর অবস্থান এবং তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। নারীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং তাদের অধিকার গুলি সুরক্ষিত থাকে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই শ্রেণি সংগ্রাম শুরু হয়েছিল অনেক আগে।  একদিকে শ্রেণী বৈষম্য অপরদিকে নারী পুরুষের বৈষম্য এই দুটি ছিল শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অন্যতম দুটি মূল ভিত। নারীর অধিকারহীনতা বা দাসত্ব শুরু হয় পরিবার ও সম্পত্তির উদ্ভাবনের ফলে। বহু যুগ ধরে নারী সমাজকে পারিবারিক ও সামাজিক দাসত্বের বোঝা বহন করতে হয়েছে বিনা প্রতিবাদে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে - দাস সমাজব্যবস্থা এবং সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষ ও পরিবারের অধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। সামাজিক উৎপাদনের কাজে নারীদের বঞ্চিত রেখেই তাদের পরাধীন জীবন যাপনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা হয় ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে। নতুন করে নারীদের সামাজিক উৎপাদনের কাজে ...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

ভালবাসা কারে কয় ।। দ্যুতি রায়

  ভালবাসা কারে কয় দ্যুতি রায়       দ্বিরাগমনে বাপের বাড়ি এলো সৌমিলী । গাড়ি থেকে নেমেই, নিজের ঘরে ঢুকে, দরজা আটকে বসে রইলো সে। বর সমীরণ তার পিছু পিছু এসে ঘরে ঢুকলো। সৌমিলীর বাবা মা বেশ ঘাবড়ে গেছেন, তবে মুখে দেখন হাসির প্রলেপ মাখিয়ে নতুন জামাইকে আপ্যায়ন করলেন। বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে "মিলি", আদরে যতনে মানুষ হলেও অশিক্ষা কুশিক্ষা কখনো পায়নি বরং গুরুজনদের সম্মান করা, সহবত  সংযম সব জানে সে। খুব ভালো ঘরে বরে ওকে সম্প্রদান করা হয়েছে।  শত কষ্ট পেলেও ওই অভিমানী মেয়ে মুখ ফুটে কিছু বলবে না। কি এমন হলো? চিন্তিত হলেন মিলির মা বাবা। একটু বাদে, বন্ধ ঘরে সৌমিলীর মা, মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলেন। বেচারা বর, গোবেচারা মুখে ঘরের বাইরে রইলো। মায়ের প্রশ্নের উত্তরে সৌমিলীর ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ করতে লাগলো।           বরের সাথে নাকি ভালো করে আলাপ হয়নি। সে গম্ভীর মানুষ, দরকার ছাড়া মুখে কথা নেই তার। মা বুঝলেন,  কথার ফুলঝুরি মিলি, গল্প করতে শুরু করলে ঝর্নার মতন কলকল করতেই থাকে। তার কথা বলার লোক কম ওখানে। তিনি বলেন মিলিকে," নতুন জায়গা, নুতন...