Skip to main content

নাটিকা ।। উদিপুরের ছোটোরানী ।। নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

 

 
 
।।নাটিকা।।

        উদিপুরের ছোটোরানী

        নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

        *****************
।।প্রথম দৃশ্য।।
উদিপুর রাজ্যের রাজা উদিতনারায়ণ রাতে ছদ্মবেশে নগরভ্রমণে বেরিয়ে একসময়ে পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে  একটা ভাঙা মন্দিরের  চাতালে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।সঙ্গে শুধু তাঁর দেহরক্ষী।সেও ছদ্মবেশে। পূর্ণিমারাত। সহসা রাজার কানে এল সুমধুর নৃত্যগীতের দূরায়ত ধ্বনি।
রাজাঃ রক্ষী, নাচগানের শব্দ  মনে হচ্ছে। দেখো তো কোথায়?
রক্ষীঃ আজ্ঞে মহারাজ,দেখছি।(রক্ষী বেরিয়ে গিয়ে একটু পরেই ফিরে এসে) আজ্ঞে মহারাজ, কুলিক নদীর ধারে ওই বটগাছটার নীচে কয়েকটি মেয়ে......
রাজাঃ চলো তো দেখি।কিন্তু খুব সাবধান।পা টিপে টিপে যেতে হবে যেন কোনো শব্দ না হয়।চুপিচুপি গাছটার আড়ালে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।কাছথেকে ওদের নাচ দেখবো,গান শুনবো।
রক্ষীঃ বুঝেছি মহারাজ,চলুন(উভয়ের প্রস্থান)
 
।।দ্বিতীয় দৃশ্য।।
 
[পূর্ণিমারাতে জ্যোৎস্নালোকে একদল তরুণী হাতধরাধরি করে নাচগান করছে]
গানঃ আয় তবে সহচরী /হাতে হাত ধরিধরি...(রবীন্দ্রসংগীত)
নাচ গানের শেষে  তরুণীরা ইতস্ততভাবে বসে পড়ল।একএকজন একএক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।যেমন আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মোছা,চুল,বেশবাস ঠিক করা ইত্যাদি। সহসা পূর্ণিমা  উঠে দাঁড়ালো।
পূর্ণিমা ঃঅ্যাই,আচার খাবি?
কঙ্কনাঃ  আচার! এই রাতের বেলা এই বিজন ঘাটে আচার কোথায় পাবি?
সুরুচিঃ  আছাড় খাওয়ার কথা বলছিস না তো!
ঈশানী ঃ তাই হবে মনে হয়। (পূর্ণিমা ছাড়া সকলের খিলখিল হাসি)
পূর্ণিমা ঃনা রে,সত্যি বলছি।আমি লুকিয়ে এনেছি পদ্মপাতায়।খাবি তো বল্।
সুরুচিঃ  তাহলে বের কর হতভাগী।জিভে যে জল
 এসে গেলো।
[পূর্ণিমা পদ্মপাতায় মোড়া আচার বের করে সবাইকে বিলোতে থাকে।]
পূর্ণিমা ঃনে,ধর্।হাত পাত সবাই।ও বাবা,তুই যে আগে থেকেই হাত পেতে বসে আছিস রে কঙ্কনা!(সকলের হাসি)ও কী রে ঈশানী, তোর যে হেলদোল নেই।খাবিনে আচার?
ঈশানী ঃ খাবো না আবার!নিশ্চয়ই খাবো।কিন্তু আচারের নাম শুনলেই সুরুচির মতো আমার জিভ দিয়ে টসটস করে জল গড়ায় না।[আবার সকলের একপ্রস্থ হাসি।ঈশানী হাত পেতে বলে,ঃদে।(আচার নেয়)]
সুরুচি ঃ সত্যি রে,আচার খেতে আমার খু-উ-ব ভালো লাগে। 
পূর্ণিমা ঃ আচ্ছা,তোরা কেউ বলতে পারবি সারা পৃথিবীতে মানুষের কাছে সবচেয়ে মুখরোচক কী?
সুরুচিঃ ঠিক জানি না।তবে ইলা শীলারা বলে মাংসের স্বাদের নাকি তুলনা নেই।
কঙ্কনাঃআমি তো শুনেছি সুরার স্বাদ নাকি অপূর্ব।
পূর্ণিমা ঃভুল, সবই ভুল।এসব তো কেবল জিভের স্বাদ। জীবনের নয়।প্রেমের স্বাদ ধরায় অতুল।
সুরুচিঃ তুই আবার কবি হলি কবে রে?
পূর্ণিমা ঃ কেন?কবিত্বের কী দেখলি?
সুরুচিঃ ওই যে বললি,(সুর করে)ভুল...সবই ভুল/প্রেমের স্বাদ ধরায় অতুল।
(সকলের হাসি)
কঙ্কণাঃ কী রে,ঈশানী। তোর কি স্বাদবোধ নেই? তুই যে কিছুই বলছিস না?
ঈশানী ঃ বলবো?
সবাই( সমস্বরে)ঃহ্যাঁ,বল্।
ঈশানীঃ  সবচেয়ে সুস্বাদু, সব চেয়ে মুখরোচক হল মিথ্যা কথা।মিথ্যার মতো মুখরোচক কিছু হয় না।
 
[আড়ালে থাকা রাজা ও তার দেহরক্ষী  হো-হো করে হেসে উঠলেন।সেই হাসির শব্দে ত্রস্তা হরিণীর মতো মেয়েরা যে যেদিকে পারে ছুটে পালালো।তাদের পায়ের নূপুরধ্বনি মিলিয়ে যেতে না যেতেই রাজা ও দেহরক্ষী হাসতে হাসতে মঞ্চে প্রবেশ করবেন]
 
দেহরক্ষী ঃ প্রভু,ওরা যে সব পালিয়ে গেলো!
রাজাঃ  চলো,আমরাও পালাই। না,না।তুমি এক কাজ করো।তুমি ছুটে গিয়ে ওদের পিছু নাও।দেখে এসো ওরা কোথায় থাকে।যাও।
রক্ষীঃ  আর আপনি, প্রভু?
রাজাঃ   আমি রাজপ্রাসাদে ফিরে যাচ্ছি।
রক্ষীঃ   আপনি একা যাবেন,প্রভু?
রাজাঃ   যা বলছি তাই করো। 
রক্ষীঃ   যথা আজ্ঞা, প্রভু।কিন্তু খুব সাবধানে যাবেন,প্রভু।আমি চললাম।।[দুজন দুদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।]

 ,।।  তৃতীয় দৃশ্য।। 
      ------------------
[রাজা সিংহাসনে আসীন।পাত্রমিত্ররা উপস্থিত। ]
মন্ত্রী ঃরাজামশাইকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।কী হয়েছে প্রভু?
বিদূষক ঃ হ্যাঁ,ঠিক।মেঘে ঢাকা তারার মতো দেখাচ্ছে মহারাজকে। এই সময় গানবাজনা খুব কাজে দেয়। ডাকবো মহারাজ? ডাকি?
রাজাঃ না।সে সবের প্রয়োজন নেই।তুমি বরং আমার প্রধান দেহরক্ষীকে ডেকে আনো।(রক্ষীর প্রস্থান)
মন্ত্রী ঃতাই তো!মহারাজের প্রধান দেহরক্ষীকে তো আজ সকাল থেকে দেখছি নে।এমনটা তো হওয়ার কথা নয়!
বিদূষক ঃআমরা এসে গেছি মন্ত্রীমশাই!(রক্ষীসহপ্রবেশ)
রাজা(সাগ্রহে)ঃএসো,রক্ষী,এসো।কোনো খবর পেলে?
রক্ষী  ঃ পেয়েছি মহারাজ।এখানেই বলবো?
রাজা ঃসকলে একটু বাইরে যান।মন্ত্রণাকক্ষের দরজা বন্ধ করে দিন।(রক্ষী ব্যতীত সকলের প্রস্থান) 
রাজা ঃবলো।
রক্ষী ঃমহারাজ, আমি প্রথমে যে মেয়েটির পরিচয় পাই সে এক কণ্ঠিধারী বৈষ্ণবের মেয়ে।বড় রাস্তার ধারে যে অাখরাটি আছে সেখানেই সে থাকে। সেই আখরার কাছাকাছি  বাড়ি এক শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণের।দ্বিতীয় মেয়েটি তাঁর একমাত্র সন্তান।
রাজা ঃআর বাকি দুজন?
রক্ষী ঃএকজন বাউলের মেয়ে, অন্যজন এক কৃষক কন্যা।চার জনের খুব ভাব।
রাজা ঃমন্ত্রীকে ডেকে আনো।(রক্ষী বাইরে গিয়ে মন্ত্রীকে ডেকে আনে)
রাজা ঃমন্ত্রীমশাই,আপনাকে খুব গোপনে একটা কাজ করতে হবে।
রাজা ঃআদেশ করুন রাজা।
রাজা ঃরক্ষী আপনাকে চারটি মেয়ের বিবরণ দেবে।আপনি তাদের বাবামাকে বুঝিয়ে মেয়ে চারটিকে রাজবাড়িতে পরশু বিকেলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবেন।পারবেন তো?
মন্ত্রী  ঃ আপনি আদেশ করলে পারতেই হবে মহারাজ।
রাজা ঃআপনি চারজনের জন্য চারটি সুসজ্জিত পাল্কির ব্যবস্থা করবেন।
রক্ষী ঃ চারটি পাল্কির দরকার নেই মহারাজ,দুটিই যথেষ্ট। ওদের তো কাছাকাছি বাড়ি।
রাজা ঃ না,ওরা পৃথক পৃথক পাল্কিতে আসবে।সসম্মানে ওদের নিয়ে আসবেন।মনে রাখবেন ওদের ধরে আনতে নয়,বরণ করে আনতে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী ঃবুঝেছি মহারাজ।আর বলতে হবে না।আমি সমস্ত ব্যবস্থা করছি।
 
দৃশ্যান্তর
--------------
।।চতুর্থ দৃশ্য।। 
*************
*[পাল্কিবাহকের বিচিত্র  কণ্ঠধ্বনি: হুম্ নারে...হুম্ না..হুমনা.. আ.. প্রথমে অষ্পষ্ট, পরে  তীব্র  থেকে তীব্রতর, পরে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে।মঞ্চে প্রবেশ করবেন রাজা।আসনে উপবিষ্ট হলে রক্ষীর প্রবেশ।]
 
রক্ষী ঃ প্রভু,চারটি পাল্কিতে চার কন্যা  উপস্থিত। 
রাজা ঃ ও, ওরা এসে গেছে! কোথায় ওরা?
রক্ষী ঃ মন্ত্রীমশাইয়ের নির্দেশ মতো ওদের বিশ্রামকক্ষে বসানো হয়েছে।
রাজা ঃ ওদের জন্য জলযোগের ব্যবস্থা করো।
রক্ষী ঃ তা-ও করা হয়েছে প্রভু।
রাজা ঃ বেশ! তাহলে ওদের একে একে পাঠিয়ে দাও।একজন ফিরে গেলে তবেই অন্যজনকে পাঠাবে। মনে থাকবে?
রক্ষী ঃ থাকবে প্রভু।বিলক্ষণ থাকবে।
রাজা ঃতাহলে যাও,আর দেরি কোরো না।(রক্ষীর
 প্রস্থান)
[রাজা কিছু একটা চিন্তা করতে করতে পদচারণা করতে থাকবেন।অবশেষে আসনে বসতে না বসতেই
একটি মিষ্টিকণ্ঠ] ঃআসবো?
রাজা ঃএসো মা,এসো।বোসো ওই চেয়ারটায়।
সুরুচি ঃ বসার দরকার নেই,মহারাজ। আপনি কী বলতে চান বলুন।
রাজা ঃভয় পেয়ো না,মা। আমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে তা জানা হয়ে গেলেই তোমাকে সসম্মানে তোমার বাড়ি পাঠিয়ে দেবো।
সুরুচি  ঃ বলুন,কী জানতে চান।
রাজা ঃতোমার নাম কী মা?
সুরুচি  ঃ আমার নাম সুরুচি।
রাজা ঃ বাঃ! সুন্দর নাম।কিন্তু শুধুই সুরুচি?পুরো নাম বলো।
সুরুচি ঃ সুরুচি অধিকারী।
রাজা ঃ তা পরশু রাতে সখীদের সাথে কী বলাবলি করছিলে? 
সুরুচি(ভীতকণ্ঠে)ঃকোথায়? কখন?
রাজা ঃ নগরের শেষপ্রান্তে,কুলিক নদীর ধারে,বুড়ো বটতলায়।নাচগানের শেষে আচার খেতে খেতে।মনে পড়ছে?
সুরুচি ঃ আপনার নামে কিছু বলিনি মহারাজ।সত্যি, বিশ্বাস করুন।
রাজা ঃআমার নামে কেন কারে নামেই তুমি কিছু বলো নি--সে আমি জানি।কী বলেছিলে শুধু সেটাই জানতে চাইছি।
সুরুচি ঃ(দ্বিধান্বিত) না---মানে--বলতে লজ্জা করছে।
রাজা ঃ লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলেছিলে কি? নিশ্চয়ই না।কী বলো?
সুরুচি  ঃ (হেসে)স্বাদের বিষয়ে কথা হচ্ছিলো মহরাজ।আমি বলেছিলাম,..
রাজা ঃ থামলে কেন?বলো....
সুরুচি ঃ মাংসের স্বাদ নাকি সব চেয়ে  ভালো।
রাজা ঃতুমি তো এক পরম বৈষ্ণবের মেয়ে।তোমরা কি মাংস খাও?
সুরুচি  ঃরাধে,রাধে। মাংস খাওয়া তো দূরের কথা,মাংস স্পর্শ করলেও আমাদের স্নান করতে হয়।
রাজা ঃ তাহলে মাংসের স্বাদ তুমি জানলে কী করে? কেনই বা বললে, মাংসের স্বাদ সবচেয়ে ভালো?
সুরুচি ঃআমাদের পাড়ায় এক মাংসের দোকান আছে।সেখানে প্রায় প্রতিদিন  মাংস কেনার জন্য লোকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।খুব সুস্বাদু না হলে মাংসের এত চাহিদা হবে কেন মহারাজ? তাছাড়া..  
রাজা ঃ তাছাড়া ---তাছাড়া কী?
সুরুচি ঃ মানুষ মাংস খায়।তার হাড়হাড্ডি খায় কুকুরে।মানুষ যে অংশ ফেলে দেয় তা কাক এসে নিয়ে যায়।যা পড়ে থাকে তা নিয়ে যায় পিঁপড়ে।তাই আমার মনে হয়েছে মাংস নিশ্চয়ই খুব সুস্বাদু।
রাজা(হেসে)ঃতোমার কথায় যুক্তি আছে।সত্যি মা,মাংস খুবই সুস্বাদু। (উচ্চকণ্ঠে) রক্ষী-ই-ই।
রক্ষী(প্রবেশ)ঃ আজ্ঞা করুন প্রভু।
রাজা ঃএই মেয়েটিকে মিষ্টান্ন, বস্ত্র, ও একটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে সসম্মানে গৃহে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করো। যাও মা তুমি।অন্য একজনকে পাঠিয়ে দাও।
[রাজা পেছন ফিরে কিছু একটা ভাবছিলেন। সহসা নারীকণ্ঠ]
কঙ্কনা  ঃ মহারাজের জয় হোক।
রাজা ঃ কী নাম মা তোমার?
কঙ্কণা ঃ কঙ্কণা ভট্টাচার্য।
রাজা ঃ ও,তুমি সেই পুরুতঠাকুরের মেয়ে? 
কঙ্কণা ঃআজ্ঞে  হ্যাঁ।
রাজা ঃপরশু রাতে আচার খেতে খেতে সখীদের কী বলেছিলেে?
কঙ্কণা ঃনা মহারাজ,আমি কিছু বলি নি।
রাজা ঃ তুমি পুরুতঠাকুরের মেয়ে, মিথ্যা বলা তোমাকে মানায় না।সত্যি করে বলো,কী বলেছিলে।
কঙ্কণা ঃঈশ্বরের দিব্যি,আপনার সম্বন্ধে কিছু বলি নি।
রাজা ঃস্বাদের সম্বন্ধে কী বলেছিলে?
কঙ্কণা ঃস্বাদের সম্বন্ধে!ও,সে তো একটা কথার কথা।
রাজা ঃকী কথা?
কঙ্কণা ঃ বলেছিলাম,সুরা খুবই সুস্বাদু।
রাজা ঃ তুমি কি সুরা পান করো?
কঙ্কণা ঃছি,ছি,মহারাজ,এ কী বলছেন? আমি পুরুত ঠাকুরের মেয়ে ; নিম্নবর্ণের মেয়েদের মতো সুরাপান করবো?
রাজা ঃতাহলে বললে কেন যে সুরা খুবই সুস্বাদু? 
কঙ্কণা ঃএকটা ভাটিখানার পাশ দিয়ে রোজ আমাদের যাতায়াত করতে হয়।প্রায়ই দেখি,ইতরভদ্র অনেকেই সেখানে বসে মদ্যপান করে।ও পাড়ার সুরেন দত্ত,যার একছেলে কাউন্সিলার, প্রায়ই ওখানে যান,টলতে টলতে ফেরেন। একদিন তো নর্দমায় পড়ে গিয়ে কী অবস্থা!  ভাবলাম,আর হয়তো এমনটি করবেন না।ওমা, পরদিনই আবার....আমাদের পাশের বাড়ির হ্যাবলাকাকু তো মদ খেয়ে রাজা বনে যান। তাঁর মনে কী ফুর্তি! টলতে টলতে গান ধরেন।
রাজা ঃগান! মাতলামির গান! সে কেমন শুনি?
কঙ্কণা ঃগেয়ে শোনাবো?
রাজা ঃ দুকলি গাও তো শুনি।
 
কঙ্কণা ঃ(গান)
 
তোরা যে যা বলিস ভাই
আমার বাংলা মালই চাই।
সে যে হাওয়ায় দোলায়,বাক্য জড়ায়
যায় না তারে ছাড়া
সে যে পেটে গেলে উঠবে ঠেলে
দৃষ্টি ছন্নছাড়া
আমি ছুটবো পিছে যেথায় আছে
চোলাই মদের ঠাঁই।
আমি খুশি মনে  সংগোপনে ঢুকুস ঢুকুস খাই
তোরা যে যা বলিস ভাই.......
(গান শেষে রাজা হো হো করে হেসে ওঠেন)
 
রাজা ঃ রক্ষী!(রক্ষীর প্রবেশ) একেও বস্ত্র, মিষ্টান্ন  ও স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে সসম্মানে বাড়ি পাঠাবার ব্যবস্থা করো।
রক্ষী ঃ যথা আজ্ঞা মহারাজ। আসুন মা।(কঙ্কণা সহ প্রস্থান)
রাজা ঃ তাহলে কে, কে বললো  কথাটা?
[সহসা পদশব্দে ফিরে দেখেন,অন্য একটি মেয়ে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে]
পূর্ণিমা ঃপ্রণাম মহারাজ।
রাজা ঃকী নাম মা তোমার?
পূর্ণিমা ঃ পূর্ণিমা দাস।
রাজা ঃ পরশুরাতে সখীদের সঙ্গে আচার খেতে খেতে কী বলেছিলে?
পূর্ণিমা ঃ আপনার সম্বন্ধে কিছু বলি নি মহারাজ, বিশ্বাস করুন।রাধাগোবিন্দের দিব্যি।
রাজা ঃ সে আমি জানি পূর্ণিমা। কিন্তু স্বাদ সম্পর্কে কিছু একটা বলেছিলে।বলো নি?
পূর্ণিমা ঃ হ্যাঁ,বলেছিলাম।
রাজা ঃকী বলেছিলে?
পূর্ণিমা ঃ উঁ....উঁ...হ্যা মনে পড়েছে।বলেছিলাম,প্রেমের স্বাদ ধরায় অতুল।
রাজা ঃতুমি তো খুব কচি মেয়ে গো,প্রেমের তুমি কী বোঝো?
পূর্ণিমা ঃ আমি বাউলের মেয়ে।মাঝেমাঝে বাবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমাকেও কৃষ্ণপ্রেমের গান গাইতে হয়।
রাজা ঃ তুমি গান জানো?একটু গাও তো শুনি।
পূর্ণিমা ঃএখানে দোতারা, খমক কিছু নেই।তবু আপনি যখন বলছেন দুকলি গেয়ে শোনাচ্ছি।
 
।।গান।।প্রেম করো ভাই,পীরিত কোরো না.....
 
রাজা ঃ বাঃ! তোমার গানের গলা ভারি মিষ্টি। খুব ভালো লাগলো।রক্ষী....
রক্ষী ঃ আজ্ঞা করুন প্রভু।
রাজা ঃএকেও উপঢৌকনাদি দিয়ে গৃহে পাঠাবার ব্যবস্থা করো।
রক্ষী।।এসো গো বাউল মেয়ে।
(পূর্ণিমা সহ প্রস্থান)
 
[রাজা  শান্তভাবে সিংহাসনে বসে রইলেন।কৃষককন্যা ঈশানীর প্রবেশ।]
 
ঈশানী ঃআমাকে কেন ধরে এনেছেন রাজামশাই?
রাজা ঃ এ কী বলছো!ধরে আনা হয়নি তো।কেউ কি তোমার অসম্মান করেছে?
ঈশানী ঃ তা করে নি।কিন্তু রাজামশাই,সামান্য কৃষককন্যা আমি।আপনার অনুগ্রহে সুসজ্জিত পাল্কিতে চড়ার সুযোগ পেয়েছি। এখন কি শূলে চড়াবেন?
রাজা ঃতোমার কথায় বিনয়ের ছিটেফোঁটাও নেই।তবে তুমি যে বাকপটু তা স্বীকার করতেই হবে।
ঈশানী ঃধন্যবাদ রাজামশাই।এখন বলুন, আমার উপর আপনার কৃপাদৃষ্টির কারণ?
রাজা ঃ তুমি তো দেখছি আমার উপর রুষ্ট হয়েই আছো।তোমাকে কীকরে বোঝাই যে তোমাদের ডাকার পেছনে আমার কোনো বদমতলব নেই!
ঈশানী ঃ তো?
রাজা ঃ আমি একটা কথা জানার জন্যই তোমাদের ডেকেছি।
ঈশানী ঃ কী কথা?
রাজা ঃপরশু রাতে নদীপারে সখীদের সঙ্গে আচার খেতে খেতে কী বলেছিলে?
ঈশানী  ঃ সখীদের সঙ্গে তো অনেক কথাই বলেছিলাম।আপনি ঠিক কী জানতে চাইছেন বলুন তো?
রাজা ঃস্বাদের বিষয়ে কী বলেছিলে?
ঈশানী ঃ যা সত্যি তাই বলেছিলাম।
রাজা ঃ সত্যিটা কী?
ঈশানী ঃ মিথ্যার মতো মুখরোচক আর কিছু নেই।
রাজা ঃ অর্থাৎ মিথ্যা কথা বলে মানুষ খুবই তৃপ্তি পায়, এই তো?কেন তোমার এমনটা মনে হল বলো তো!
ঈশানী ঃ তৃপ্তি যদি না-ই পাবে তা হলে মানুষ  অহরহ মিথ্যাকথা বলে কেন?
রাজা ঃভুল,ভুল।সবাই মিথ্যা কথা বলে না।আমি তো কখনও মিথ্যে  বলেছি বলে মনে পড়ে না। আসলে আমি কখনই মিথ্যে  বলি না।
ঈশানী ঃ এইমাত্র তো বললেন।
রাজা ঃএইমাত্র  বললাম! কী বললাম?
ঈশানী ঃ আমি মিথ্যা বলি না--এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর হয়না রাজামশাই।
রাজা ঃ তোমার স্পর্ধা তো কম নয়! তুমি রাজাকে মিথ্যাবাদী বলো!প্রমাণ করতে পারবে যে সবাই মিথ্যা কথা বলে,রাজাও মিথ্যাবাদী? 
ঈশানী ঃ আমাকে দু'লাখ টাকা আর মাস তিনেক সময় দিন।আমি ঠিক প্রমাণ করে দেবো।
রাজা(সকৌতুকে)ঃঅাচ্ছা! এখনও ভেবে দেখো, পারবে তো প্রমাণ করতে?
ঈশানী ঃ পারবো,অবশ্যই পারবো। 
রাজা ঃ রক্ষী!
রক্ষী ঃ আদেশ করুন প্রভু।
রাজা ঃ মহামন্ত্রীকে বলো  এই মেয়েটিকে দু'লাখ টাকা দিয়ে সসম্মানে বাড়িতে রেখে আসতে।
রক্ষী ঃ যথা আজ্ঞা প্রভু।
রাজা ঃকিন্তু  মনে রেখো সুভদ্রে..
ঈশানী ঃ আমার নাম ঈশানী  রাজন।ঈশানী রাজবংশী।
রাজা ঃ কিন্তু মনে রেখো ঈশানী, প্রমাণ করতে যদি না পারো তাহলে রাজাকে মিথ্যাবাদী বলার অপরাধে তোমাকে কঠিন শাস্তিভোগ  করতে হবে।
ঈশানী ঃ যদি প্রমাণ করতে না পারি তাহলে আপনার দেওয়া যে কোনো শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো রাজামশাই।
রাজা ঃ তথাস্তু। যাও।
 
।।পঞ্চম দৃশ্য।।
 
[রাজা সিংহাসনে আসীন। পাত্রমিত্ররাও উপস্থিত]
 
মন্ত্রী ঃ রাজা মশাইকে কেমন বিমর্ষ মনে হচ্ছে।শরীর ঠিক আছে তো,রাজামশাই? নাকি কিছু ভাবছেন?
রাজা ঃশরীর ঠিক আছে,মন্ত্রীমশাই।তবে...
মন্ত্রী ঃ তবে কী রাজামশাই?
বিদূষক ঃ মন খারাপ? নাকি পেট খারাপ?নাকি খিদে পেয়েছে?
রাজা ঃ আহ্ ! বিদূষক! 
বিদূষক ঃ না,মহরাজ! খিদে তো অনেক রকম হয়।যেমন  পেটের খিদে,চোখের খিদে, মনের খিদে.....
রাজা ঃ বাজে বোকো না তো বিদূষক। এ তোমার পরিহাসের বিষয় নয়।
বিদূষক ঃ তাহলে আমি আমার মুখে তালা মেরে দিলাম। [রক্ষীর প্রবেশ]
রাজা ঃকী খবর রক্ষী?
রক্ষী ঃ মহারাজ, দূত আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।
রাজা ঃ ডাকো,ডাকো তাকে।আমি তো তার জন্যই উৎকণ্ঠিত হয়ে বসে আছি।(রক্ষীর প্রস্থান ও দূতের প্রবেশ)
দূত ঃ মহরাজের জয় হোক।
রাজা ঃ কী খবর দূত?
দূত ঃ মহারাজ, ঈশানী নামের সেই মেয়েটি তার গ্রামে নেই।
রাজা ঃ নেই!
বিদূষক ঃতার মানে দু'লক্ষ টাকা নিয়ে সে গা ঢাকা দিয়েছে।
মন্ত্রী ঃ গ্রামে নেই।তো কোথায় গেছে সে?
বিদূষক ঃ ওই যে বললাম,গা ঢাকা দিয়েছে।হয়তো দেশ ছেড়েই পালিয়েছে।দু'লক্ষ টাকা।ভাবা যায়!
রাজা ঃ থামো তো তুমি।বাঁচাল কোথাকার। (দূতকে) তার কোনো খোঁজ পাও নি?
দূত ঃ পেয়েছি মহরাজ।
সমস্বর ঃ পেয়েছো!!
দূত ঃ হ্যা,মহারাজ,অনেক খোঁজাখুঁজি করে তার হদিশ পেয়েছি।
রাজা ঃকোথায়,কোথায় তার দেখা পেলে? কী বললো সে?
বিদূষক ঃ টাকা ফেরৎ দেবে বলেছে?
দূত ঃ না,আমি তার দেখা পাইনি।
সমস্বর ঃ পাও নি!!
দূত ঃ না।দেখা পাই নি।শুধু তার খোঁজ পেয়েছি।
রাজা ঃ কোথায় সে?
দূত ঃ এক নির্জন টিলায়।
সমস্বর ঃ টিলায়!!
রাজা ঃসেখানে সে কী করছে?
বিদূষক ঃ তপস্যা?
দূত ঃ সেখানে সে নাকি এক মন্দির নির্মাণ করছে।
রাজা ঃ মন্দির!?
মন্ত্রী ঃ কোন্ দেবতার মন্দির? 
দূত ঃ তা তো জানি না, মন্ত্রীমশাই।
রাজা ঃতুমি সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলে না কেন?
দূত ঃ চেষ্টা করেছিলাম মহারাজ।অনুমতি পাইনি।সে নাকি কারো সঙ্গেই দেখা করে না।
রাজা ঃ আচ্ছা তুমি যাও।তোমাদের দিয়ে হবে না।(দূতের প্রস্থান) মন্ত্রীমশাই,এখন কী করা যায় বলুন তো?
মন্ত্রী ঃ এ কাজ দূতকে দিয়ে হবে না রাজা মশাই।আপনি বরং দায়িত্বশীল  কাউকে পাঠান। যার নাম শুনলে সে আর না বলার সাহস পাবে না।
রাজা ঃ ঠিক বলেছেন। আমি বরং আমার দেহরক্ষীকেই পাঠাই। ঈশানী ওকে চেনেও।সে ঠিক খোঁজ আনতে পারবে।
সমস্বর ঃ তাই করুন মহারাজ।।
++++++++++
।।ষষ্ঠ দৃশ্য।। 
+++++++++
[দেহরক্ষীর প্রবেশ।সে বিড় বিড় করে কিছু একটা বলতে বলতে ইতস্তত পায়চারি করছে।বিদূষকের প্রবেশ।]
বিদূষক ঃআরে দেহরক্ষী যে!
রক্ষী ঃ হ্যাঁ,ভাঁড় মশাই আমি।
বিদূষক ঃএ্যাই, খবরদার আমাকে ভাঁড় বলবে না।
রক্ষী ঃতাহলে কী বলবো?
বিদূষক ঃ সবাই যা বলে-- বিদূষক!  
রক্ষী ঃসে তো রাজসভায় বলে।আড়ালে সবাই আপনাকে ...যাকগে....
  (মন্ত্রীর প্রবেশ)
মন্ত্রী ঃ ও,দেহরক্ষী !  তুমি এসে গেছো? কখন এলে?
(সহসা রাজাকে দেখে) আসুন,রাজামশাই,...
(রাজা আসন গ্রহণ করেন)
রাজা।কী খবর দেহরক্ষী?  তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে!ঈশানীর দেখা পাওনি?
দেহরক্ষী ঃ না,মহারাজ।
রাজা ঃ তোমার সাথেও দেখা করলো না?
দেহরক্ষী ঃ দেখা করে নি,তবে খবর পাঠিয়েছে।
রাজা ঃ কী খবর?
দেহরক্ষী ঃ চৈত্রসংক্রান্তির দিন তার প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের দ্বারোদঘাটন হবে।আর দ্বারোদঘাটন  করবেন আপনি।
বিদূষক ঃ মহারাজ, যদি না হয় ভ্রান্তি।
আগামী পরশুই তো চৈত্রসংক্রান্তি।।
রাজা ঃ আশ্চর্য! আমাকে তো কোনো খবর দেয়নি!তুমি ঠিক শুনেছো তো দেহরক্ষী , আমাকে দিয়েই..
দেহরক্ষীঃহ্যাঁ,মহারাজ, যাকে দিয়ে সে বলে পাঠিয়েছে সে তো স্পষ্টই বললো।
মন্ত্রী ঃকী বললো?
দেহরক্ষী ঃবললো যে মহারাজকে দিয়েই মন্দিরের দ্বারোদঘাটন  হবে।
বিদূষক ঃ তাহলে হয়তো হবে কোনো মঠের মহরাজ ।মেয়েটা কি ধড়িবাজ!
রাজা ঃ মন্ত্রীমশাই।
মন্ত্রী ঃ বলুন রাজা মশাই।
রাজা ঃ এখন কী করা যায় বলুন তো?
মন্ত্রী ঃ সেপাইসান্ত্রি পাঠিয়ে ধরে আনি মেয়েটাকে।
কতো ধানে কতো চাল বুঝিয়ে দেই তাকে।।
[নেপথ্যে ঈশানী ঃ ধরে আনতে হবে না রাজন।
সকলে(বিস্ময়ে)ঃ ঈশানী!!
ঈশানী ঃ হ্যাঁ,রাজন।
রাজা ঃ তিনমাস কি হয়নি পূরণ?
ঈশানী ঃপরশুই পূর্ণ হবে মহারাজ।
তাই তো আপনাকে নিতে এসেছি আজ।
রাজা ঃ কোথায় যেতে হবে?
ঈশানী ঃউদয়ন টিলায়।
রাজা ঃ কী আছে সেখানে?
ঈশানী ঃ ঈশ্বরের এক মন্দির গড়েছি আমি।আগামীকাল শুদ্ধাচারে স্নানধ্যান পূৃজাপাঠ শেষে হবে তার উদ্বোধন।কৃপাকরে চলুন রাজন। আপনার দ্বারাই হবে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন।
রাজা ঃকিন্তু তুমি যা প্রমাণ করতে চেয়েছো তার কী হল?
ঈশানী ঃ সেখানেই ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে তার প্রমাণ দেবো রাজন।
রাজা ঃ বেশ।তুমি পথশ্রমে ক্লান্ত।এখন বিশ্রাম নাও।আমি যাত্রার আয়োজন করছি।চলো,অন্তঃপুরে চলো।(সকলের প্রস্থান) 
 *******************
।।সপ্তম দৃশ্য।।
++++++++
[ঈশানী  তার কয়েকজন সাথীকে নিয়ে কর্মব্যস্ত।দ্বারোদ্ঘাটনের জন্য ফুল, লতা পাতা দিয়ে প্রবেশদ্বার সাজানো হচ্ছে।একজন দরজায় রিবন ফিতা দিয়ে,একজন কাঁচি নিয়ে,অপর একজন শঙ্খ নিয়ে প্রস্তুত।] 
ঈশানী ঃ তাহলে সব ব্যবস্থা হয়ে গেলো।তোরা এদিকটা দ্যাখ্,আমি রাজা মশাইকে ডেকে নিয়ে আসি।
 
[প্রস্থান। সখীরা কর্মব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরে রাজাকে নিয়ে ঈশানীর প্রবেশ]
 
ঈশানী ঃ আসুন,রাজা মশাই।আগে মন্দিরের দ্বার উন্মোচন করুন।
[রাজা ফিতে কেটে দ্বারোদ্ঘাটন করেন।শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি।]
রাজা ঃ ঈশানী!
ঈশানী ঃ বলুন রাজামশাই।
রাজা ঃ মন্দিরের দ্বার তো উদ্ঘাটন করলাম।কিন্তু  বিগ্রহ  কোথায়?
ঈশানী ঃ বিগ্রহ তো নেই মহারাজ। 
রাজা ঃবিগ্রহ  নেই!? তাহলে?[মন্ত্রী, বিদূষকের প্রবেশ]
মন্ত্রী ঃএ কেমন মন্দির,রাজামশাই। কোনো মূর্তি নেই।কোনো দেবতা নেই!
ঈশানী ঃএ তো ঈশ্বরের আবাস।ঈশ্বরের মন্দির।
রাজা ঃ তার মানে এখানে স্বয়ং ভগবান থাকেন।তাই তো?
ঈশানী  ঃঠিক তাই রাজা মশাই।
বিদূষক  ঃতাকে দেখা যাবে না?
ঈশানী ঃকেন যাবেনা?
মন্ত্রী ঃ মন্দিরের ঠিক কোন্ জায়গায় আছেন তিনি?
ঈশানী ঃ গর্ভগৃহে।
রাজা ঃতার মানে ভেতরের ওই ছোট্ট কুঠরিটায়,যেখানে একটা প্রদীপ জ্বলছে?
ঈশানী  ঃঠিক তাই প্রভু।
মন্ত্রী ঃ ওর ভেতরে গেলে স্বচক্ষে ঈশ্বরকে দেখতে পাবো?
ঈশানী ঃ পাবেন,অবশ্যই পাবেন।
বিদূষক ঃ কীভাবে চিনবো তাকে?
ঈশানী ঃ তিনিই চিনিয়ে দেবেন।কাউকে চেনাতে হবে না।
বিদূষক ঃ আসল,না নকল বুঝবো কী করে?
ঈশানী ঃ উনিই বুঝিয়ে দেবেন
মন্ত্রী ঃ অতো কথায় কাজ কী?চলুন রাজামশাই,গর্ভগৃহে প্রবেশ করে চক্ষু- কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করি।
রাজা ঃ চলুন।এসো ঈশানী।
ঈশানী ঃ গর্ভগৃহে প্রবেশের পূর্বে ঈশ্বরের অনুমতি নিতে হয় প্রভু।
রাজা ঃ অনুমতি!কীভাবে অনুমতি চাইবো?কার কাছে চাইবো?
ঈশানী ঃআমি প্রার্থনা সঙ্গীত গাইছি।আপনারা আমার সঙ্গে গলা মেলান।
মন্ত্রী ঃ আমরা গাইবো?এই বুড়ো বয়সে হেঁড়ে গলায় গান ধরলে ভগবান মন্দির ছেড়ে পালাবেন না তো?
বিদূষক ঃভগবানও যদি বুড়ো হয়ে থাকেন তাহলে না-ও পালাতে পারেন।
ঈশানী ঃ আপনাদের গলা ছেড়ে গাইতে হবেনা।মনে মনে গাইলেই হবে। ভগবান তো অন্তর্যামী। 
রাজা ঃতুমি কৃষক কন্যা।কিন্তু বোধ ও বুদ্ধিতে তুমি ঋষিকন্যার সমকক্ষ। নাও শুরু করো।
[সকলে হাঁটুগেড়ে প্রার্থনা করার ভঙ্গিতে হাত জোড় করে বসে]
 
গান(রবীন্দ্রসঙ্গীত)  ঃ
এসো, এসো আমার ঘরে এসো......
রাজা ঃবাঃ!ঈশানী, তোমার গায়কী খুব সুন্দর।
মন্ত্রী ঃ তাহলে এখন আমরা গর্ভগৃহে প্রবেশ করি?
ঈশানী ঃ অবশ্যই। তবে একে একে। একজন দর্শন করে বেরিয়ে এলে তবেই আর একজন।
রাজা ঃ কেন?
ঈশানী ঃ রাজামশাই,ঈশ্বর কি এতই সহজলভ্য?  একসঙ্গে অনেককে দেখা দিলে তো তার মাহাত্ম্যই থাকবে না।
রাজা ঃ তাও তো বটে।
ঈশানী ঃ ঈশ্বর  একবার মাত্র একজনকেই দেখা দেন।একাধিক ব্যক্তি গর্ভগৃহে প্রবেশ করলে ঈশ্বর থাকেন অদৃশ্য।বিশ্বাস নাহলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তা হলে যান কে কে যাবেন?
বিদূষক ঃনা-দেখার জন্য যাওয়া?
মন্ত্রী ঃনা,না।অমন গিয়ে কাজ নেই। রাজামশাই, সর্বপ্রথম আপনিই যান।
বিদূষক ঃমহারাজ গর্ভগৃহে প্রবেশ করলেই ঈশ্বরকে দেখতে পাবেন তো?
ঈশানী  ঃ নিশ্চয়ই পাবেন।মহারাজ তো আর বেজন্মা নন্।
মন্ত্রী ঃ তার মানে?
রাজা ঃ কী বলতে চাও তুমি?
ঈশানী ঃ মহারাজ,তিন ধরণের লোক ঈশ্বরের দর্শন পাবেন না।
বিদূষক ঃতিন ধরণ! তুমি আমাদের কথা বলছো না তো?
ঈশানী ঃআপনারা  আবার তিন ধরণ হবেন কী করে?
বিদূষক ঃ কেন,একজন রাজা,একজন মন্ত্রী, একজন বিদূষক। হল না তিন ধরণ?
রাজা ঃ থামো তো তুমি।বলো ঈশানী কোন তিন ধরণের লোকের কথা বলছো তুমি।
ঈশানী ঃ  বেজন্মা,পরস্বাপহারী  আর নারী নির্যাতনকারী। আপনি তো এর কোনোটাই নন্। আপনি কেন ঈশ্বরের দর্শন পাবেন না? নিশ্চয় পাবেন। যান মহারাজ, আপনি নিশ্চিন্তে ভেতরে যান।
রাজা ঃনা,না। তা হয়না।মন্ত্রী মশাই বয়োজ্যেষ্ঠ। বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা উচিৎ। যান মন্ত্রীমশাই।দ্বিধা করবেন না।আপনি সদ্বংশজাত পুণ্যাত্মা। ভগবান আপনাকে দর্শন দেবেনই।যান।
বিদূষক ঃ স্বচক্ষে ঈশ্বর দর্শন!মন্ত্রীমশাইর মানবজন্ম ধন্য হয়ে যাবে।
রাজা ঃএরপর তুমি যাবে।তোমার মানবজন্মও সার্থক হবে।
বিদূষক ঃধ্যাৎ,তাই হয় নাকি!  রাজা মশাইয়ের আগে আমি?
রাজা(দৃঢ়কণ্ঠ) ঃ হ্যাঁ,হ্যাঁ।তুমি।আমাকে রাজধর্ম পালন করতে দাও।আমি যাবো সবার শেষে।সব কিছু সবার আগে ভোগ করা রাজধর্ম নয়।
বিদূষক (জনান্তিকে)ঃআসলে রাজা মশাই ভয় পাচ্ছেন।উনিও তো পরস্বাপহরণকারী।কে না জানে,রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
রাজা ঃকী বকছো বিড়বিড় করে?
বিদূষক ঃ আমি মন্ত্রীমশাইয়ের সাফল্য কামনা করছি।
ঈশানী ঃ ঈশ্বর দর্শনের জন্য নিবিষ্ট চোখ চাই।শুধু একথাটাই খেয়াল রাখবেন, মন্ত্রী মশাই।
মন্ত্রী (আনমনা)ঃতা...হলে..আমি যাই?
সমস্বরে ঃ হ্যাঁ,যান মন্ত্রীমশাই,যান।(দ্বিধান্বিত মন্ত্রীর প্রস্থান)
ঈশানী ঃ আসুন আমরা মন্ত্রীমশাইয়ের সাফল্য কামনা করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।।
রাজা ঃবেশ।তাই হোক।
[তিনজনই প্রার্থনার ভঙ্গিতে বসে প্রার্থনাসঙ্গীত শুরু করে।]
 
গান।। আগুনের পরশমণি  ছোঁয়াও প্রাণে..... (রবীন্দ্রসঙ্গীত)
 
।। অষ্টম  দৃশ্য।।
++++++++++
প্রার্থনারত রাজা ও অন্যরা হাত জোর করে বসে আছেন।
ঈশানী ঃ ওই তো মন্ত্রীমশাই ফিরে এসেছেন।
রাজা ঃ(সাগ্রহে) মন্ত্রীমশাই,দেখলেন? ঈশ্বরকে দেখলেন?
মন্ত্রীঃ(দ্বিধাভরে)এ্যাঁ...হ্যাঁ...হ্যাঁ...দেখলাম বৈকি!
ঈশানী ঃ দেখলেন!
রাজা ঃকেমন দেখলেন?ঈশ্বর দেখতে কেমন?
মন্ত্রী ঃভালো।
রাজা ঃ ভালো মানে?
মন্ত্রী ঃ শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।... আমাকে আশীর্বাদ  করলেন।
বিদূষক ঃ কিছু বলেন নি?
মন্ত্রী ঃ অ্যাঁ!
বিদূষকঃ কোন্ ভাষায়? সংস্কৃতে,না বাংলায়,নাকি ইংরেজিতে?
ঈশানী ঃ(হাসি গোপন করে) ছাড়ুন তো।বুড়ো মানুষ, ঈশ্বরকে দেখে হকচকিয়ে গেছেন।ওনাকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিন। এবার কে যাবেন?
রাজা ঃ যাও হে বিদূষক। 
মন্ত্রী ঃ এটা কি ঠিক হচ্ছে প্রভু?
রাজা ঃ যাও তো তুমি।
বিদূষক ঃ তা হলে যাই? যাচ্ছি।
ঈশানী ঃ হ্যাঁ, যান।আমরা আপনার জন্য প্রার্থনা করছি।
 
[বিদূষকের প্রস্থান।সবাইকে নিয়ে ঈশানীর প্রার্থনা সঙ্গীত। 
গান(রবীন্দ্রসঙ্গীত)
গান শেষে পূর্ববৎ সবাই বসে থাকবে।বিদূষকের প্রত্যাগমন।]
 
রাজা ঃ কী হে,বিদূষক, দেখতে পেলে?
বিদূষক ঃ হ্যাঁ।দেখতে পাবো না কেন?
মন্ত্রী ঃ বলি,ঈশ্বরকে দেখতে পেলে?
বিদূষক ঃ আপনি বুড়ো মানুষ দেখতে পেলেন,আর আমি পাবো না?
রাজা ঃ  কেমন দেখলে?
বিদূষক ঃ স্পষ্ট দেখলাম।এই যেমন আপনাকে দেখছি।
রাজা ঃ হেঁয়ালি কোরো না তো।বলো,ঈশ্বর দেখতে কেমন।
বিদূষক ঃ আমি দেখলাম,নররূপী নারায়ণ কে।অবিকল আমার অন্নদাতা মহারাজের মতো দেখতে।ঈশ্বর বহুরূপী কিনা।
ঈশানী ঃ আপনি ভাগ্যবান।
রাজা ঃভগবানের কাছে কী চাইলে তুমি?
বিদূষক ঃ আমি? আমি আমার অন্নদাতার দীর্ঘায়ু কামনা করলাম।
ঈশানী ঃ নিজের জন্য কিছুই চাইলেন না? আশ্চর্য!
বিদূষক ঃ চাইলাম তো।আমার অন্নদাতা দীর্ঘায়ু হলে আমার কখনো অন্নাভাব হবে না।
ঈশানী ঃ এবার তাহলে.... রাজামশাই.......
রাজা ঃ যেতেই হবে?
সমস্বরে ঃ হ্যাঁ,হ্যাঁ, যান।
রাজা ঃ যাই তাহলে।
ঈশানী ঃ আসুন রাজামশাই।আমরা আপনার জন্য প্রার্থনা করছি।
[পূর্ববৎ সকলের প্রার্থনা--- রবীন্দ্রসংগীত। ]
#াাাাাাাাা###$$$##$
।।নবম দৃশ্য।।
++++++++++
[মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে রাজা উদিত নারায়ণ। ]
 
রাজা ঃএটাই তো মন্দিরের গর্ভগৃহ। ওই তো সেই প্রদীপটা।টিমটিম করে জ্বলছে। কিন্তু.. গর্ভগৃহের ভেতরে তো কোনো আলো নেই!ঘুটঘুটে অন্ধকার।ঈশ্বর কি অন্ধকারে লুকিয়ে থাকেন!হতেও পারে। আর একটু এগিয়ে দেখি তো।(এগোন)কই,কোথায়?কোথায় হে ঈশ্বর? মন্ত্রী দেখলেন,বিদূষক দেখলো,আমি রাজা।আমি দেখতে পাচ্ছিনা কেন?দেখা দাও,দেখা দাও হে ঈশ্বর! জ্ঞানত আমি পরস্ব অপহরণ করিনি।আমার তো কখনও অভাব ছিলো না।আমি কেন পরের ধন চুরি করবো?আমি কখনও কাউকে খুন-ধর্ষণ করিনি।তাহলে আমি কি বেজন্মা? তাই বা কী করে হবে! মহান শতানীক বংশে আমার জন্ম। বিদূষী পুণ্যবতী কমলাবতী আমার গর্ভধারিনী জননী। আমার পিতা দেবতুল্য রাজরাজেন্দ্র দিনেন্দ্রনারায়ণ দেববর্মন।আমি বেজন্মা হবো কেন? ও-হো-হো-ও(কান্না)আমার প্রতি এত নির্দয় হলে কেন ভগবান!?কেন?কেন?কেন?(কান্না)।এখন আমি কী করি?বাইরে গিয়ে কী বলবো?যদি বলি,আমি ঈশ্বরের দেখা পাই নি,তাহলে কে কী ভাববে!কেউ ভাববে আমি চোর, কেউ ভাববে আমি খুনি,কেউবা ভাববে রাজা তার মায়ের অবৈধ সন্তান।  উঃ,আমি আর ভাবতে পারছি না। (একটু থেমে)না, বাইরে সত্যি কথাটা বলা যাবে না। তাহলে কী বলবো?(একটু চিন্তা করে) বলবো,দেখেছি।আমিও ঈশ্বরকে দেখেছি।তারপর বানিয়ে বানিয়ে যা বলতে হয় বলবো। হায় ঈশ্বর,আমাকে এ কী ফ্যাসাদে ফেললে![ মাথার চুল আঁকড়ে ধরে মাটিতেই বসে পড়ে।আলো নিভে যায়।]
-------------------------------------
।।শেষ(দশম)দৃশ্য।।
০০০০০০০০০০০০
[রাজার ফেরার অপেক্ষায় মন্ত্রী  ও অন্যান্যরা।ঈশানী ছাড়া সকলে উদ্বিগ্ন। ]
মন্ত্রী ঃরাজামশাই এখনও ফিরছেন না কেন?
ঈশানী ঃঠিকই ফিরবেন।চিন্তার কোনো কারণ নেই।
বিদূষক ঃহয়তো ঈশ্বরের সঙ্গে কোনও বিষয়ে পরামর্শ করছেন।
রক্ষী ঃওই তো রাজামশায় এসে গেছেন।
মন্ত্রী ঃ রাজাকে এমন উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে কেন?
রক্ষী ঃকেমন পাগল-পাগল  লাগছে। আমি কি ছুটে গিয়ে মহারাজের হাত ধরবো?
ঈশানী ঃ আপনারা চিন্তা করবেন না। যা দেখতে পাওয়া যায় না তার দেখা পেলে অনেকেরই এমন হয়।সব ঠিক হয়ে যাবে।
   [রাজার প্রবেশ]
মন্ত্রী ঃ রাজামশাই! রাজামশাই!
রাজা ঃএ্যাঁ....
মন্ত্রী ঃআপনি ঠিক আছেন তো?
রাজা ঃ এ্যাঁ...হ্যাঁ...
বিদূষক ঃ ঈশ্বরের দেখা পেলেন,মহারাজ?
রাজা,ঃহ্যাঁ,হ্যাঁ..
ঈশানী ঃ দেখলেন?
রাজা ঃ(মাথা ঝারা দিয়ে) কেন দেখবো না?মন্ত্রী দেখলেন,বিদূষক দেখলো আর আমি দেশের রাজা,আমি দেখবো না?
রক্ষী ঃ মহারাজ, আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি এই আসনটায় বসুন।
রাজা ঃ সত্যি আমি ক্লান্ত,বড় পরিশ্রান্ত। দাও,দাও।[রক্ষী চেয়ার এগিয়ে দেয়।রাজা বসেন]
  ঈশানী, ঃক্লান্ত তো হওয়ারই কথা।কিন্তু মহারাজ,আপনিও ঈশ্বরকে দেখলেন?
রাজা ঃ দেখলাম তো, স্পষ্ট দেখলাম।
ঈশানী ঃ কীভাবে দেখলেন?
রাজা ঃ এই যেভাবে তোমাকে দেখছি।
ঈশানী ঃ সত্যি দেখেছেন?
মন্ত্রী ঃ অ্যাই মেয়ে,তোমার স্পর্ধা তো কম নয়! রাজার কথায় সন্দেহ প্রকাশ করো।
রাজা ঃ মন্ত্রীমশাই,আপনি থামুন। আমাকে বলতে দিন।তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করছো না, ঈশানী?
ঈশানী ঃ যা বিশ্বাসযোগ্য নয়,তা কেমন করে বিশ্বাস করি, বলুন?
মন্ত্রী ঃ রাজামশাই,এ অসহ্য। এ প্রকারান্তরে আপনাকে মিথ্যাবাদী  বলছে।
রক্ষী ঃ ও বলতে চাচ্ছে, আপনি ঈশ্বরকে দেখেন নি
বিদূষক ঃ কারণ আপনি হয় মিথ্যাবাদী,নয় নরহত্যাকরী, নয়তো......
মন্ত্রী ঃ ও আপনাকে বেজন্মা মনে করে।
রক্ষী ঃ মহারাজের আদেশ পেলে আমি এক্ষুনি.....
রাজা ঃতোমরা থামো।আমি ভগবানকে দেখেছি,আমার এ কথা তুমি বিশ্বাস করছো না কেন,ঈশানী? 
ঈশানী ঃবিশ্বাসযোগ্য নয় বলে। রাজামশাই, ভগবানের দেখা পাওয়া কি অতই সহজ?মুনি -ঋষিরা দীর্ঘ তপস্যা করেও যাঁর দর্শন পান না,মানুষের তৈরি একটা মন্দিরে প্রবেশমাত্রই আপনি তাঁর দেখা পাবেন এটা ভাবলেন কীকরে?
রাজা ঃ তবে মন্ত্রীমশাই দেখলেন কী করে?
ঈশানী ঃ মন্ত্রী মশাই মিথ্যাকথা বলেছেন।(রাজা,মন্ত্রী, বিদূষক কেঁপে ওঠে)
রাজা ঃবিদূষকও তো বলেছে!
ঈশানী ঃউনিও মিথ্যে বলেছেন। দেখুন,দুজনই কেমন মাথা হেঁট করে বসে আছেন।
রাজা ঃ কিন্তু তুমিও তো বলেছো -এ মন্দিরের গর্ভগৃহে  ঈশ্বর আছেন।
ঈশানী ঃ আমিও মিথ্যাকথা বলেছিলাম।
রক্ষী ঃ কী দুঃসাহস!
রাজা ঃকেন? মিথ্যাকথা বলে আমাকে ধোকা দিলে কেন?
ঈশানী ঃ(হেসে)সবই ভুলে গেলেন মহরাজ?
রাজা ঃ কী? কী ভুলে গেলাম?
ঈশানী ঃ সবাই মিথ্যাকথা বলে।মহারাজও মিথ্যে বলেন।এবং মিথ্যা বলার যে স্বাদ,যে তৃপ্তি তার জুড়ি নেই।আমি একথা প্রমাণ করেছি রাজন।
রাজা ঃ(চমৎকৃত)ও রে,দুষ্টু মেয়ে!তলে তলে এই মতলব নিয়ে তুমি ঈশ্বরের মন্দির বানিয়েছো?
ঈশানী ঃ মহারাজ,আমরা গরিব প্রজারা ধনপ্রাণ বাঁচাবার জন্য অনেক সময় মিথ্যা বলতে বাধ্য হই।বিত্তবান ও ধনবান ব্যক্তিরা অন্যের ধন অপহরণের জন্য কিংবা মান বাঁচাবার জন্য মিথ্যাকথা বলে থাকেন। কিন্তু আপনি তো রাজা
আপনার তো ধনের অভাব নেই,মান হারাবারও ভয় নেই।আপনি কেন অকারণে মিথ্যা বলেন?(একটু অপেক্ষা করে)ব-লে-ন তার কারণ হোলো মিথ্যার মতো মুখরোচক আর কিছু নেই।
রাজা ঃ চমৎকার!তোমারই জয় হোলো,ঈশানী। আমার গলার এই মোতিহার তোমার গলায় পরিয়ে দিয়ে আমি তোমাকে বিজয়ী ঘোষণা করলাম। জয় কৃষককন্যার জয়(মালা পরিয়ে দেয়)
মন্ত্রী ঃ এ কী করলেন,রাজামশাই!?
রাজা ঃঅন্যায্য কিছু করলাম কি ? এই বুদ্ধিমতী তরুণী  কি পুরস্কারের যোগ্য নয়?
মন্ত্রী ঃ নিশ্চয়ই পুরস্কারের যোগ্য।কিন্তু রাজামশাই, মহান শতানীক বংশে আপনার জন্ম।এই বংশের রীতি হোলো চৈত্রসংক্রান্তির পূর্ণিমা তিথিতে এই বংশের কোনো পুরুষ কোনো নারীর কণ্ঠে মাল্যদান করলে এবং সেই নারী বিনা বাধায় তা গ্রহণ করলে  তিথিমাহাত্ম্যে সেই মাল্যদান পাণিগ্রহণ  রূপে গণ্য হয়।
বিদূষক ঃ তাই তো!তাইতো! আজ তো চৈত্রসংক্রান্তি এবং পূর্ণিমাতিথি।রাজা মশাই নিজের  কণ্ঠহার এই তরুণীর কণ্ঠে পরিয়ে দিয়েছেন আর তরুণীও তা বিনাবাধায় কণ্ঠে ধারণ করেছেন।
রক্ষী ঃ তার মানে ইনি আজ থেকে আমাদের ছোট রানীমা হলেন!
ঈশানী ঃ (দৃঢ়কণ্ঠে) না,না।কিছুতেই না।
 মন্ত্রী ঃ এখন আর আপত্তি করে লাভ নেই মা।নিয়তি কেন বাধ্যতে! এ হোলো বংশের বিধান।অমান্য করার সাধ্য কারো নেই।রাজারও না।
ঈশানী ঃ এ বিধান আমি মানি না। শোষিত উৎপীড়িত কৃষককন্যা আমি।শোষক শাসকের ঘরণী হওয়ার কেনা বাসনা আমার নেই।
বিদূষক ঃ এভাবে বলবেন না ছোটোরানী মা।
ঈশানী ঃ খবরদার! আমাকে রানীমা বলবেন না।
বিদূষক ঃকী বলবো তাহলে?
ঈশানী ঃআমার নাম ঈশানী। যা বলার নাম ধরেই বলবেন।
মন্ত্রী ঃ রাজামশাই সম্পর্কে তোমার ধারণা ভুল মা।উনি শাসক অবশ্য ই,কিন্তু শোষক একদম নন।
ঈশানী ঃনন্? তাহলে তাঁর রাজ্যে কৃষকদের এমন দুরবস্থা কেন? কেন তাদের উৎপন্ন ফসলের দাম নেই?কেন প্রতিবছর সার বীজ আর প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে?নিত্যনতুন ট্যাক্স বসিয়ে রাজামশাই প্রজাদের অর্থসম্পদ লুঠ করছেন,অস্বীকার করতে পারেন?
মন্ত্রী ঃ ভুল,ভুল। প্রচণ্ড ভুল করছেন আপনি।প্রজাদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখবার জন্য রাজামশাই ছদ্মবেশে নগর ভ্রমণ করেন।প্রজাদের দুঃখকষ্ট দেখলে তার প্রতিকারেরও ব্যবস্থা করেন।ছদ্মবেশে নগর ভ্রমণ কালেই তো রাজামশাই আপনাদের দেখেছিলেন, আপনার কথা শুনেছিলেন।এমন প্রজাদরদী রাজাকে আপনি অযথা দোষারোপ করছেন মা।
ঈশানী ঃপ্রজাদরদী!(বিদ্রূপাত্মক হাসি) প্রজা কি কেবল নগরবাসীরা?গ্রামের কৃষকরা প্রজা নয়? গ্রামের মানুষদের সুখদুঃখের কোনো খোঁজ রাখেন আপনাদের প্রজাদরদী  মহারাজা?খরায়- বন্যায় রোগ-মহামারীতে কৃষকদের পাশে দাঁড়ান কি তিনি?তাঁর যত চিন্তা শহরবাসীদের নিয়ে।গ্রামে ভালো স্কুল নেই,হাসপাতাল নেই,রাস্তাঘাট নেই সে খবর কি রাখেন আপনাদের প্র-জা-বৎ-সল  রাজা?
রাজা ঃবেশ তো, রাজরানী হয়ে তুমিই না হয়  গ্রামের মানুষদের কথা ভাববে।উদিপুরের রাজার পরামর্শদাতার পদ দেওয়া হবে তোমাকে।
ঈশানী ঃ লোভ দেখাচ্ছেন? তা ওই পদে কতো সম্মানদক্ষিণা পাওয়া যাবে?মোটা টাকা হলে ভেবে দেখতেও পারি।
মন্ত্রী ঃআপনি কি বেতনের কথা বলছেন? তা কি রাজরানীর পক্ষে সম্মানজনক হবে?
রাজা ঃ তুমিই বলো তুমি কী চাও!
ঈশানী ঃআমি যা চাই দেবেন? 
রাজা ঃচেষ্টা করবো।
ঈশানী ঃ পারবেন না রাজা,পারবেন না।বিলাসবহুল জীবনযাত্রার হ্যালোজেন আলোয় নারীকে আপনারা দেখে এসেছেন চকচকে পেয়ালায় ঝকঝকে পানীয়রূপে।স্বাধিকারপ্রমত্ত পুরুষ কখনই  নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দেয় না।আপনিি দেবেন না।
রাজা ঃ(রাগত)থামো, থামো।অনেক বলেছো তুমি।তোমার রূপযৌবনের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই।নেহায়েত ভুল করে একটা কাজ আমি করে ফেলেছি। সে য়ভুলের খেসারত আমাকে দিতেই হবে।মহান শতানীক রাজ বংশের রীতিঐতিহ্য অবমাননা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আজই আমি তোমার বাবাকে আনতে লোক পাঠাচ্ছি। তিনি যদি রাজি হন ভালো।নইলে..
ঈশানী ঃ নইলে বলপ্রয়োগ?  তাই তো?
মন্ত্রী ঃ আপনিই বলুন,মা, রাজামশাই কীভাবে তাঁর বংশের রীতি ঐতিহ্য  রক্ষা করবেন।
ঈশানী ঃ আমাকে ভাবার জন্য একটাদিন সময় দিন।
মন্ত্রী ঃ তা কী করে সম্ভব? কাল পর্যন্ত তো পূর্ণিমা থাকবে না,সংক্রান্তিও না।যা করার আজই করতে হবে।
ঈশানী ঃ তাহলে আর আমি কী বলবো?বলির পশুর কাছে সম্মতি চাওয়ার কোনো অর্থ হয়?
রাজা ঃ এভাবে বলছো কেন,ঈশানী? 
ঈশানী ঃ বলির পাঁঠার সঙ্গে আমার কী পার্থক্য, মহারাজ?প্রথার যূপকাষ্ঠে যেমন করে পশু বলি দেওয়া হয় তেমনি করেই তো আপনারা আমাকে আপনার বংশের প্রথার হাড়িকাঠে বলি দিতে চাইছেন।সম্মতি দিলে ভালো,নইলে বলপ্রয়োগ। পার্থক্যটা কোথায় বুঝিয়ে বলবেন?
রাজা ঃ(আপন মনে) তাই তো!এভাবে তো কখনও ভেবে দেখি নি।মন্ত্রীমশাই!
মন্ত্রী ঃবলুন রাজামশাই।
রাজা ঃচলুন,আমরা ফিরে যাই।ঈশ্বরহীন এই মন্দিরে আর নয়।আপনি প্রত্যাগমনের ব্যবস্থা করুন।
মন্ত্রী ঃকিন্তু উনি তো এখনও সম্মতি দেন নি।বংশের বিধান তো রক্ষা করতে হবে।তবে কি....
রাজা ঃনা। ওকে ওর মতো থাকতে দিন। যে বিধান, যে রীতি বা প্রথা  কারো ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে,মানুষকে মনুষ্যত্বে উত্তীর্ণ করে না, তা কখনোই শতানীক বংশের বিধিবিধান হতে পারে না।আপনি এক কাজ করুন,এই মন্দিরের জন্ঢ় আরো এক সহস্র স্বর্ণমুদ্রা বরাদ্দ করুন।যাতে উনি ওনার পছন্দমত  যে কোনো বিগ্রহ এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।চলুন...
মন্ত্রী ঃ যথা আজ্ঞা। চলুন তাহলে...(প্রস্থানোদ্যত)
ঈশানী ঃনা,না,যাবেন না।
মন্ত্রী ঃকেন মা?আপনি তো আমাদের রাজামশাইয়ের পাণি গ্রহণে  সম্মতি দিচ্ছেন না।তা হলে যেতে নিষেধ করছেন কেন?
ঈশানী ঃরাজামশাইয়ের দেওয়া বরণমালা  আমি তো গলা থেকে খুলে ফেলিনি।এই দেখুন,এখনো সেই মোতিহার আমার গলায় শোভা পাচ্ছে। 
বিদূষক ঃ তা..তা...তার মানে?
মন্ত্রী ঃ তাহলে?
ঈশানী ঃ আমি রাজার এই মানবিক মুখটাই দেখতে চেয়েছিলাম।প্রথার  চেয়ে হৃদয়ধর্মকে যিনি বেশি গুরুত্ব দেন তিনিই তো হৃদয়েশ্বর হওয়ার যোগ্য। দয়া করে আমার বাবামাকে আনার ব্যবস্থা করুন।এই মন্দিরেই হবে বিবাহ অনুষ্ঠান।
বিদূষক ঃ জয়, উদিপুরের ছোটোরানীমার জয়।
[মন্দিরের ভেতর থেকে মহিলাদের শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি।]
 
------------সমাপ্ত-----------
 
 
 
Nripendranath Mahanta 
Vill. & Post-HEMTABAD 
District -Uttar Dinajpur PIN-733130 
Mobile No. -891886 1003
-----------------------------------------------------------

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।। কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।      মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কা...

ছড়া ।। প্রেম নদীর মাঝি ।। গোবিন্দ মোদক

  প্রেম নদীর মাঝি  গোবিন্দ মোদক  প্রেম নদীতে ভাসাই ডিঙি উথাল পাথাল জল,  ছোট্ট আমার তরীখানি করছে যে টলমল! জলের উপর ফুটে আছে কতো মোহন ফুল,  ফুলের বোঁটা জড়িয়ে আছে তোমার মাথার চুল!  জলের ভেতর আরো যে জল, টল-মল-টল করে,  বিদেশ থেকে আসছে চিঠি বিরহিনীর ঘরে!  জলের নিচে লুকিয়ে আছে রহস্য অজানা,  সাধুজনে বারণ করেন যাওয়া নাকি মানা!  প্রেমিক মন চায় যে যেতে সেই অচিনপুরে,  সারা জীবন বৈঠা বেয়েও থেকে যায় দূরে!  কিন্তু প্রেমিক শোনে নাকো সাধুজনের বারণ,  সাধ করে তাই ডেকে আনে অতৃপ্তিটার কারণ!  অবশেষে হালে পানি না পেয়ে সে কাঁদে,  বিশ্বভুবন সারা জীবন পড়ছে ঘুঘুর ফাঁদে!  তবুও তো প্রেম নদীতে সবাই ভাসায় তরী,  প্রেম যমুনা উথাল-পাথাল কি যে এবার করি! মন রে মনে মতি রাখো করো সাধুসঙ্গ,   প্রেম নদীতে ভাসিয়ে তরী দেখো আজব রঙ্গ!!   ____________________   গোবিন্দ মোদক।  রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।  পশ্চিমবঙ্গ --- 741103

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

পাপান ও নূতন মিস ।। গোপা সোম

পাপান ও নূতন মিস গোপা সোম       পাপান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই বিদ্যালয়টি বিশাল বড়, অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে অনেক শ্রেণী কক্ষ রয়েছে, কারণ, প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করে বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে কম বেশী ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী। এক কথায়, শহরের বুকে এক অন্যতম গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই বিদ্যালয়ে অনেক সংখ্যক মাস্টারমশাই দিদিমণি আছেন। পড়াশোনায় ও বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম আছে। রেজাল্ট খুবই ভাল হয়।        সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অঙ্কের মাস্টারমশাই অবসর নিয়েছেন, তাঁর স্থানে একজন নূতন মিস এসেছেন। নূতন মিস কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রী সবার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন। সবসময় লাল পেড়ে শাড়ি পরে আসেন, এছাড়া আর কোনো পোষাকে মিসকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। নূতন মিস পাপানদের অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান, এত সুন্দর বোঝান, পাপানের খুব ভালো লাগে মিসের পড়ানো। নূতন মিস বলতে পাপান অজ্ঞান। আর নূতন মিসও পাপানকে খুব স্নেহ করেন। নূতন মিসের কাছ থেকে পাপান অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।        নূতন মিস খুব নিয়মানুবর্তী, উনি সময় দেখে ক্লাসে আসেন, এবং তাঁর পড়ানোর ভাগ পুরোপুরি...

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নিশাবসানের সাথে সাথে জেগে ওঠে ধরণী। জেগে ওঠে নতুন প্রাত্যহিকতার আরো একটি স্বপ্ন নিয়ে --- চিরন্তনের নিত্যনিয়মে। একটু একটু করে প্রভাতআভায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিবসনিসর্গ। ঋতুচক্রে আবারো নতুন মোড়! শারদীয়ার রঙ লেগেছে আজ প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে। ঘাসের ডগায় ডগায় কুয়াশার অন্তরঙ্গ স্পর্শ! সুখাবহ অনুভূতির সবটুকুজুড়ে তাই ভিজেভিজে কেমন একটা হিমেল রোমাঞ্চ। টুপটাপ ঝরে পড়ছে ডাগর যুবতীর মতো শিউলী। অবিরাম আলতো ছোঁয়ায় ভিজেমাটিতে শিহরণ লাগে। স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মন। ভাবনায় ভেসে ওঠে ফেলে আসা আরো কত আশ্বিনের ভালোলাগা! দিনেরআলো আরো চেকনাই হয়ে ওঠে। নদীর দুধার বরাবর বিছিয়ে থাকা কাশবনের বেসামাল আবেগ দুলেদুলে গড়িয়ে পড়ে। তাকে সামনে রেখেই, উৎসবের বল্গাহীন আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ধরার বুকে। মাথার উপরে তখন ঝকঝকে নীলাকাশ। কারোর যেন খেয়ালই নেই --- যার অনাবিল বিস্তারে, অসীম স্বচ্ছতায় চিত্রবৎ প্রতিবিম্বিত হয়েছে পৃথিবীরই উচ্ছ্বাস। ওই দেখ --- অলস ভেসে চলেছে সফেদ ফেনার মতো নিরম্বু মেঘের দল। আদিগন্ত নীলিমায় --- এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। প্রকারান্তরে যেন প্রত...

অভিমান ।। তন্ময় পালধী

অভিমান তন্ময় পালধী   গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি চলছেই। আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। বিকেলে বারান্দায় বসে অনুভাদেবী সবে খবরের কাগজ খুলেছেন, ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামল। একটানা বৃষ্টিতে মন খারাপ হলেও আজ আর বারান্দা ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ডুব দিলেন অতীতে। স্মৃতির ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে উঠলো পুরানো দিনগুলি। কদিন ধরেই চরম ব্যস্ততা বালিয়াল পরিবারে। বাড়ির ছোটমেয়ে অনুভার বিয়ে। সবে ম্যাট্রিক দিয়েছে। তার ইচ্ছা আরও পড়ার, বাবার ও তাই ইচ্ছে। কিন্তু সমাজ! তখনকার রীতিতে মেয়ের বয়স পনেরো ষোল হলেই দিয়ে দাও বিয়ে। অগত্যা বাবা আর কি করেন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সিলেকশন হয়েও তাই ভর্তি হওয়া হলো না। বিষণ্ণতা নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। সেদিনও বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে যেন চারিদিক ভেসে যাবে। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সাড়ে আটটায় লগন। মুহূর্তগুলো যেন কাটতেই চায় না। এক একটা মিনিট ঘন্টাখানেক বলে মনে হচ্ছে। চিরকালই অন্তর্মুখী সে। তার মনে যে কি ঝড় চলছে কেউই বুঝতে পারছে না। অথচ বিপরীতমুখী একটা আশাবাদিতা তাকে স্থির অবিচল রেখে দিয়েছে। মনের গতিপ্রকৃতি...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার

গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার  আলোর দিশারি শিক্ষক তুমি অন্ধকারে আলো, তুমি পথ দেখাও অচেনা কালো। ছাত্রের চোখে স্বপ্নের বাতি, তুমি জ্বালাও প্রতিদিন রাতে। তোমার কথায় জেগে ওঠে প্রাণ, পথ চলা শিখি, মুছে যায় জ্ঞানহীন ধ্যান। তুমি হৃদয়ের দর্পণ স্বচ্ছ, যত শিখি ততই হই স্পষ্ট। ছাত্র যদি হয় কচি চারাগাছ, শিক্ষক তারে দেন শেকড়ের রস। শক্তি জোগাও, ভরাও সাহসে, স্বপ্ন সাজাও অন্তরের গহনে। তুমি আকাশ, আমরা তার তারা, তুমি ছাড়া চলতে পারি না সারা। যতদিন বাঁচি থাকবে মনে, শিক্ষকের ঋণ লেখা রবে গগনে। শ্রদ্ধার পাঠশালা চকের দাগে কালো বোর্ডে, লিখে চলে শিক্ষক দিনরাতে। ছাত্র বসে মন ভরে শোনে, সত্যের পথ শেখে তার সনে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিলন, তাতেই গড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের সৃজন। বইয়ের পাতায় প্রাণের ছোঁয়া, শিক্ষক দেন জ্ঞানের বীজ বোনা। ভুল করলে ধমক দেন স্নেহে, আবার হাসেন বুক ভরা প্রাণে। ছাত্রের চোখে দেবদূত তুমি, ভুলের অন্ধকারে করো আলোকধ্বনি। শিক্ষা নয় কেবল কাগজের লেখা, শিক্ষক শেখান বাঁচার দেখা। এই তো জীবনের সত্যি মানে, ছাত্র–শিক্ষক একসাথে প্রাণে। ছাত্রের কণ্ঠে গান শিক্ষক তুমি জীবনের গান, তুমি দিলে জ্ঞানের দান। তোমা...

সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী

সমুদ্র আর অস্তিত্ব  সুব্রত চৌধুরী  সমুদ্র শুধু নিরন্তর ঢেউয়ের সান্নিধ্য নয়   নয় সে নিখাদ গভীরতায় মুগ্ধ এক শরীর    পাতালের রহস্যে ফেরা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে  বুঝতে থাকি— সমুদ্র আসলে সভ্যতার বিনম্র স্পর্শ  সম্পর্কের পরাগরেণু মেখে তরল হয়ে ওঠা অস্তিত্ব  সে কোনো স্থানাঙ্কিত জলরাশি নয়  পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা দৃশ্যের গতিশীল যৌবন  সমুদ্র হারিয়ে গেলে অস্তিত্বে ফিরে আসে শূন্যতা  অদৃশ্য হয়ে থাকা বিবেকের দর্পণে  যখন ফুটে ওঠে আপন ক্ষুদ্রতার প্রতিবিম্ব  নিঃশব্দে হয়ে যায় নিজের উপলব্ধি—   দেহের মানুষকে ছুঁয়ে যায় মনুষ্যত্বের সমুদ্র   আমিত্ব ডুব দেয় অস্তিত্বের তরল সম্পর্কের বন্ধনে               —————————  Dr. Subrata Chaudhuri  Asst. Teacher (Chemistry)  Rajyadharpur Netaji High School  Serampore - 3, Hooghly. 

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি ।। শ্যামল হুদাতী

বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি শ্যামল হুদাতী  ভূমিকা: বাংলা সভ্যতা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি সুদীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ধারার প্রতিফলন। গঙ্গা–পদ্মা–মেঘনা নদীবিধৌত ডেল্টা অঞ্চল শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয়, এটি মানব সভ্যতার একটি প্রাচীনতম উর্বর ক্ষেত্র। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে প্রাচীন, মধ্যযুগ, নবজাগরণ এবং আধুনিক সময় পর্যন্ত বাংলা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির সহাবস্থানে গড়ে উঠেছে । বাংলা সভ্যতা তাই একক কোনো জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর নয়, বরং এটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের সম্মিলিত রূপ। অধ্যায় ১: ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য বাংলা সভ্যতার শিকড় বোঝার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন এর ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট অনুধাবন। ১.১ নদী–ডেল্টা ও উর্বর ভূমি বাংলা অঞ্চল গঠিত হয়েছে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পলি জমে। নদীর অববাহিকা পলি–সমৃদ্ধ কৃষিজমি তৈরি করে, যা প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই ধানচাষের জন্য উপযুক্ত ছিল। বর্ষাকালীন প্লাবন নতুন পলি এনে জমিকে উর্বর রাখত, ফলে গ্রামীণ কৃষিনির্ভর সভ্যতা বিকশিত হয়। ১.২ বাণিজ্যপথ ও সাংস্কৃতিক সংযোগ নদীপথ ও...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত

গল্প দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে            সমীর কুমার দত্ত  সমর গুপ্ত নামের যুবকটি সর্বদা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরতো। ওটা শিখেছে ও ওর চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো শম্ভুনাথ সরকারের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে।  ধুতি পরার অভ্যাস শম্ভুর গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এসে পরীক্ষা দিয়ে  কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি পায়। নাইটে নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে বি.কম পাশ করে। রবিবার দিন আর অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে বিকেল বেলায ধুতি পাঞ্জাবি পরে সমরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ঘোরা বলতে  পাড়ার শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলের পাশে উকিলবাবুর বাড়ির সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সমরের সঙ্গে গল্প করতে। বহুদূর থেকে হাওড়ার গার্লস্ কলেজে পড়তে আসা চামেলী ঘোষ নামের একটি মেয়ে ওই লেডিজ হোষ্টেলে বোর্ডার হিসেবে এসে ওঠে। নিত্য যাতায়াতের পথে ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথ ও সমরের সঙ্গে চোখের দেখায় পরিচিত হয়ে হাসি বিনিময় করে। হাসির পরিণতিতে বাক্যালাপ, বাক্যালাপের পরিণতি প্রেমে পৌঁছায়। একদিন সমর গুপ্তের সালিশিতে শম্ভুনাথের সঙ্গে চামেলীর ঘনিষ্ঠ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...