Skip to main content

রম্যগল্প ।। ভজন স্যারের পাজী ছাত্ররা ।। সৌমেন দেবনাথ





সে অনেক কাল আগের কথা। ভজন ভট্টাচার্য নামে একজন গুণী শিক্ষক ছিলেন। আজ সেই ভজন স্যারের কথা আর তাঁর ছাত্রদের কথা শোনাবো। 
ছাত্ররা তাঁকে যমের মত ভয় পায়। যেমন গুরুগম্ভীর চেহারা আর রাজা-বাদশাদের মত গোঁফ, ভয় না পেয়ে উপায় নেই। বাংলা দ্বিতীয় পত্র বড় যত্ন করে পড়ান আর পরদিন পড়া ধরে ধরে ছাত্রদের দম বের করে দেন। যথারীতি স্যার ক্লাসে এলেন আর মদনকে ধরলেন, এই মদন, স্কুল ড্রেস না পরে রঙিন ঝকমকে ড্রেস পরেছিস কেন? স্কুল কি তোর শ্বশুরবাড়ি? 
মদন বললো, ছি, ছি, স্কুল শ্বশুরবাড়ি হবে কেন? পড়া শেখার জায়গা!
ভজন স্যারের হাতে বেত উঠবে আর স্যার বেত চালাবেন না তা কি হয়? দুই ঘা বসিয়ে দিলেন। তারপর বোর্ডে গিয়ে একটি বাক্য লিখলেন, গরু আকাশে উড়ে যাচ্ছে
বাক্যটি পড়েই ছেলেরা হাসাহাসি শুরু করে দিয়ে একে অপরকে বললো, গরু প্লেনে উঠেছে নাকি?
মদনকে স্যার পড়া ধরলেন, বল্, এই বাক্যে কিসের অভাব?
মদন বললো, স্যার, একটি দাঁড়ির অভাব।
স্যার মদনের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে পরক্ষণে বোর্ডের দিকে তাকালেন। তারপর বাক্যটির শেষে একটি দাঁড়ি দিয়ে বললেন, এবার বল্, এই বাক্যে কিসের অভাব?
মদন বললো, স্যার, একটা 'ড়' এর অভাব।
স্যারের চোখ চড়ক গাছ। বললেন, কি বললি? পড়াশোনা কি করছিস? 
মদন বললো, গরু এর পর 'ড়' দিলে হয় গরুড়। আর গরুড় হলো পাখি। নারায়ণের বাহন। পাখি তো আকাশেই উড়ে।
ভজন স্যার চমকে গেলেন। তারপর আবারও তাকে দুই ঘা মেরে বললেন, ওরে যোগ্যতার অভাব।
মদন না বুঝতে পেরে বললেন, না স্যার, গরুর তো আকাশে উড়ার যোগ্যতা নেই। 
প্যাকলে মদনের দিকে চেয়ে বললো, অবশ্যই গরুর যোগ্যতা আছে। নতুবা গরু প্লেনে উড়বে কি করে? গরু প্লেনে চড়ছে বলেই- গরু আকাশে উড়ে যাচ্ছে। 
স্যার কটমট চোখে প্যাকলের দিকে তাকালেন। তা দেখে টোটন বললো, স্যার, মনে হয় প্যাকলে ভুল বলেনি। অবশ্যই গরু প্লেনে উড়তে পারছে। কারণ গরু-ছাগলেরই এখন টাকা বেশি।
স্যার এবার আর না রেগে স্থির হলেন। কাউকে মারলেন না। বুঝিয়ে বলে দিলেন, বাক্যের গুণ তিনটি। আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা। বাক্যটিতে এই যোগ্যতার অভাব।
পিছন থেকে গজা উঠে বললো, স্যার, আপনি তো আমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠীকে পড়াচ্ছেন। আপনার তো অনেক যোগ্যতা। তা আপনি আকাশে উড়েন না কেন?
ভজন স্যার তাকে না মেরে স্বস্তি পেলেন না। দু ঘা মেরে বললেন, চুপ করে বসে থাক্। ঠিকঠাক করে পড়ে আসবি।
ভজন স্যার এবার প্যাকলেকে পড়া ধরলেন, প্যাকলে বল্ তো, 'গল্পের গরু গাছে উঠে ' এ বাক্যের ভাবার্থ কি?
প্যাকলে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললো, এমন বাক্য বাপের জন্মে শুনিনি। এমন আজগুবি বাক্য কোথা থেকে পান? না, আমাদের ভুল শেখাচ্ছেন? আপনি আমাদের স্যার, তাই বলে উল্টা-পাল্টা পড়ালে মানবো না!
একথা শোনামাত্রই ভজন স্যার প্যাকলেকে দুই ঘা মেরে বসলেন। প্যাকলে মার খেয়ে বললো, গরু গাছে উঠে কি করে? আজ শেখাবেন গরু গাছে উঠে, কাল শেখাবেন ছাগল একটি পাখি। আমরা কি বেবোধ? বুঝি না?
ভজন স্যার তদক্ষেপা রেগে বললেন, আমি কি বলেছি 'গরু গাছে উঠে'! বলেছি, 'গল্পের গরু গাছে উঠে'।
প্যাকলে চমকে উঠে বললো, 'গল্পের গরু গাছে উঠে'! ও গল্প কি কারো নাম? যেমন- রচনা, প্রত্যয়, অক্ষর... 
বলতে শেষ না তো দুই ঘা বেত্রাঘাত খাওয়া শেষ প্যাকলের। প্যাকলে এবার বললো, স্যার, গল্প কি রূপকথার চরিত্র? গল্প যদি রূপকথার চরিত্র হয় তবে তার গরু গাছে উঠতেই পারে।
ভজন স্যার আরো দুই ঘা মেরে বললেন, 'গল্পের গরু গাছে উঠে' মানে কল্পনায় সব সম্ভব। বস্।
ভজন স্যার আবার বললেন বল্, 'কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই' এর মানে কি?
টোটন আশ্চর্য হয়ে বললো, গরু কেতাবে থাকে কি করে? উঁইপোকা, ছারপোকা না হয় কেতাবে থাকে, তাই বলে অত্ত বড় গরু? গরু গোয়ালেই থাকবে। আপনি ভুল নতুবা যে বইয়ে এ বাক্য আছে সেই বই ভুল।
টোটনের পিঠে বেত্রাঘাত বসে গেলো। স্যার গজাকে পড়া ধরলেন, বল্, 'গরু মেরে জুতা দান' মানে কি?
গজার চোখ চড়ক গাছ। আশ্চর্য হয়ে বললো, জীবনে এই প্রথম শুনলাম জুতাও দান করা যায়! বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। প্যাকলে ঠিকই বলেছে, এমন সব আজগুবি কথা কোথা থেকে পান?
গজাকেও দুই বার বেত্রাঘাত মেরে গেদুকে বললেন, তুই বল্, 'জুতা মেরে গরু দান' মানে কি?
গেদু একচোট হেসে নিলো একথা শুনে। তারপর বললো, এতক্ষণ জুতা দান, এবার গরু দান। স্যার, আপনার কি মাথা গেছে?
স্যার ওকেও দুই ঘা মেরে পঁচাকে বললেন, বল্, 'গরু খোঁজা' মানে কি?
পঁচা বললো, 'গরু খোঁজা' মানে আবার কি হবে? গরু খোঁজা মানে গরু খোঁজা! ছাগল খোঁজা মানে ছাগল খোঁজা, মুরগি খোঁজা মানে মুরগি খোঁজা, ভেড়া খোঁজা মানে...
কথাটি বলতে দিলেন না ভজন স্যার, তার আগে চার ঘা। আর গোঙাতে গোঙাতে বললেন, এই সব দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
পঁচা বললো, আমরা দুষ্ট গরু স্যার? তবে তো ক্লাস রুমটা গোয়াল ঘর! আর আপনি রাখাল!
ভজন স্যার পঁচাকে এক ঘা মেরে দ্বিতীয় ঘা মারতে উদ্যত হলেই মদন দাঁড়ায়ে বললো, আজ ক্লাসে এসে আপনি গরু নিয়েই আছেন। কেন? গরু কি পড়ার বিষয় হতে পারে? গরু একটি নিরীহ প্রাণী। আর আপনি গরুকে নিয়ে যত আজগুবি কথা বের করছেন!
ভজন স্যার মদনকে মারার জন্য দৌঁড়ে এলে মদন ক্লাস ছেড়ে দৌঁড় মারলো আর বললো, সব তো পারেন, আমাকে ধরেন তো দেখি...
মদন বাড়ি গেলো। ভজন স্যার মেরে তার শরীরে দড়িদড়ি দাগ করে দেছেন। বাবার সাথে শলাপরামর্শ করছে, বাবা, ভজন স্যার দেখো তোমার ছেলেকে মেরে কি করেছেন?
ভজন স্যারের নাম শুনেই মদনের বাবা হরগঙ্গা তো থ। বললেন, ওরে উনি এবার তোকে ধরেছেন? উনি তো আমারও স্যার। পিটিয়ে পিটিয়ে আমার পিঠ তো তক্তা করে দিয়েছিলেন। তাই তো পড়ালেখা ছেড়ে বিয়ে করেছিলাম। 
মদন বললো, এবার আমাকে যেভাবে পিটাচ্ছেন, না জানি কবে পড়া ছেড়ে আমাকেও বিয়ে করতে হয়! বাবা, চলো দুই জন মিলে ভজন স্যারকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করি।
হরগঙ্গা বললেন, ভজন স্যারের নাম শুনলে আমার দাঁত নড়ে। যাসনে স্যারের সাথে লড়তে।
মদন বললো, না বাবা, আজ একটি বুদ্ধি দাও, স্যারকে শায়েস্তা করার বুদ্ধি। স্যার আজ ক্লাসে গরু নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গরু নিয়ে কিছু বলো, গরু দিয়েই স্যারকে শায়েস্তা করবো।
হরগঙ্গা বললেন, তুই কি স্যারের পায়ে গরুর রশি বেঁধে দেয়ার পরিকল্পনা করতে চাচ্ছিস? খবরদার, এসব দুষ্টমি করতে যাসনে।
মদন বললো, না বাবা, ওমনটা করবো কেন? স্যার তো অনেক মেধাবী আর বুদ্ধিমান! স্যারকে বুদ্ধি দিয়ে সোজা করতে হবে। যেহেতু গরু নিয়ে উনি মেতেছেন। গরুসংক্রান্ত কিছু টিপস্ দাও, যেন স্যারকে জব্দ করতে পারি।
হরগঙ্গা বললেন, স্যার যেহেতু বাংলা দ্বিতীয় পত্র পড়ান, স্যারকে কৃষিশিক্ষা থেকে প্রশ্ন করবি। যেমন, বলবি, 'গরুর মুখে দুধ' মানে কি? স্যার কাবু হবেন উত্তর না দিতে পেরে।
মদন বাবার একথা শুনে খুশি হয়ে বললো, বাহ্ দারুণ, কালকে স্যারের ঘাম ছুটিয়ে দেবো।

পরের দিন সবাই স্কুলে এলো। আর যথারীতি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ভজন স্যার ক্লাসে এলেন। গজাকে পড়া ধরলেন, বল্, ননীগোপাল আটকপালে- এখানে আটকপালে মানে কি?
গজার দ্রুত উত্তর, স্যার, মানুষ আবার আটকপালে হয় কি করে? ননী দাদুর তো একটা কপাল!
স্যার দুই ঘা মেরে বললেন, মন্দভাগ্য। 
গজা মার খেলো আর বললো, এভাবে মার খাওয়া তো মন্দভাগ্যই। তা স্যার আটকপালে মানে কি?
স্যার আবার দুই ঘা মেরে বললেন, কানের মধ্যে কি তেলাপোকা গেছে?
গজা কানে হাত দিয়ে বললো, কাল স্নানের সময় কানে জল গিয়েছিলো। তেলাপোকা না, গেলে তেলাপিয়া যেতে পারে।
স্যার আবার দুই ঘা মারলেন। মেরে বোর্ডের দিকে তাকালেন। বোর্ডে লেখা আছে, 'শিশুদের বেত্রাঘাত করা গুরুতর অন্যায়'।
স্যার ছাত্রদের দিকে তাকালেন, কে লিখেছে একথা?
সবাই চুপ। স্যার বললেন, মদন, এতো তোরই হাতের লেখা।
মদন চুপ করে থাকলো। মদনের প্রতি স্যারের গতদিনের একটা রাগ আছে। স্যার বললেন, বল্, যে বাক্যটি লিখেছিস এটি কি বাক্য?
মদন বললো, উপযুক্ত বাক্য।
স্যার কটমট করে তাকিয়ে বললেন, কি বললি? ঠিক করে বল্।
মদন মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য বললো, এটি একটি ভুল বাক্য।
স্যার এবার না মেরে পারলেন না। মেরে বললেন, এটি একটি সরল বাক্য।
পাশ থেকে গুণগুণ করে প্যাকলে বললো, কিসের সরল বাক্য? এটি একটি সঠিক বাক্য।
স্যার তা শুনতে পেয়েছেন। প্যাকলেকে দুই ঘা মেরে বললেন, পড়াশোনা কতদিন হলো বাদ দিয়েছিস? বল্ বেত্রাঘাত কি শব্দ?
প্যাকলে চোখ মুছতে মুছতে বললো, বেত্রাঘাত স্বাস্থ্যহানীকর অশুভ শব্দ।
স্যার বাঘের মত গর্জিয়ে বললেন, কি বললি?
প্যাকলে ভড়কে গিয়ে বললো, স্যার, বেত্রাঘাত শুভ শব্দ।
স্যার আরো দুই ঘা মেরে বললেন, তোদের বাপদের আমি মানুষ করেছি। আর তোরা তো বাচ্চা। 
স্যার আজ খুব রেগে আছেন দেখে এবং গরু বিষয়ে কথা না উঠাতে মদন বাবার শেখানো বুদ্ধি প্রয়োগ করে স্যারকে শায়েস্তা করতে পারলো না। ভজন স্যার হঠাৎ বললেন, তোরা কি আমাকে ভয় পাস? আমাকে ভয় পেলে তোরা পড়া শিখবি কি করে? বল্, তোদের মনের কথা শুনবো আজ। কে কি জানতে চাস্, বল্।
প্রথমে প্যাকলে বললো, স্যার, ভূতপূর্ব হয়, প্রেতপূর্ব হয় না কেন? ভূতাপেক্ষা হয়, প্রেতাপেক্ষা হয় না কেন?
স্যার রেগে গিয়ে বললেন, এটি কি প্রশ্ন হলো? বস্।
টোটন বললো, স্যার, ভীতু পুরুষকে আমরা কাপুরুষ বলি, ভীতু মহিলাকে আমরা কামহিলা বলি না কেন?
স্যার আরো রেগে গেলেন, বললেন, গঠনমূলক কিছু জানতে চাস্ না কেন? এসব কি কোনো প্রশ্ন নাকি? তোরা হচ্ছিস এক একটা বিশ্ববদ। তোদের সুযোগ দেয়ায় ঠিক না।
তখন গেদু উঠে বললো, আচ্ছা স্যার, গঠনমূলক কিছুই জানতে চাচ্ছি। ডাব বতী হলে নারকেল বলি, আম বতী হলে আমই বলি কেন?
স্যার বেতটা হাতে উঠিয়ে চশমার উপর দিয়ে চেয়ে বললেন, এটা গঠনমূলক জানতে চাওয়া? তোরা পাকামো করছিস। আমি ঘ শুনলে ঘোড়া মারা পর্যন্ত বুঝে ফেলি।
মদন দাঁড়িয়ে বললো, স্যার, আমি ঘ শুনলে ঘোড়ার ডিম বুঝি। 
স্যার এবার রেগে গেলেন। গতকালের রাগ ছিলোই। মদনের কাছে এলেন আর বললেন, আমি পালং শাকের জলে পালং শাক রান্না করা লোক। তুই আমাকে ভূগোল বুঝাচ্ছিস? মুখে মুখে কথা বলিস, ষাড়কে যতই খেতে দেয়া হোক না কেনো সে একটুও দুধ দেবে না। তোদের যতই জ্ঞান দিই না কেন, একটুও সম্মান দিবি না। 
এই বলে মদনকে স্যার দুইটা বেতের বাড়ি দিলেন। মদনের চোখে জল চলে এলো। তা দেখে স্যারের মনটা আজ গলে গেলো। বললেন, তোরা হয়ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বীরপুরুষ কবিতা পড়িসনি। একটা ছেলে মায়ের জন্য কত কি করে! তোরা কি করলি? হয়েছিস এক একটা খাটাশ। আজ তোদের বীরপুরুষ কবিতাটি পাঠ করে শোনাবো। তার আগে বল্ তো দেখি বীরপুরুষ কে?
গজা বললো, স্যার, বীরপুরুষ? মেয়েকে বিয়ে করতে না পেরে মেয়ের মাকেই বিয়ে করে যে সেই বীরপুরুষ। 
স্যার গজাকে দুই ঘা মেরে বললেন, বয়স কত হলো? এখনই মাথায় বিয়ের চিন্তা? পঁচা, তুই বল্, বীরপুরুষ কে?
পঁচা অনেকক্ষণ ভেবে বললো, যে ব্যক্তি তিন থেকে চারটি বিয়ে করেও দিব্যি সুখে সংসার করছে সেই বীরপুরুষ। 
স্যার কোনো কথা না বলে পঁচাকে চোখ বুঝে শরীরের জোরে দুই ঘা মেরে বললেন, আবার সেই বিয়ের কথা? কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবি তো পা ভেঙে দেবো। মদন বল্, বীরপুরুষ কে?
মদন কি বলবে ভেবে পেলো না। হঠাৎ বলেই ফেললো, স্যার, যে ব্যক্তি বিয়ে করে ঘর-জামাই থেকেও বৌকে বেদম প্রহার করতে পারে সেই প্রকৃত বীরপুরুষ। 
ভজন স্যার আফসোস করে বললেন, বুঝেছি, তোদের মাথা থেকে বিয়ের ব্যামো যাবে না। তোরা সব এক একটা বিয়ে পাগল। বিয়ে পাগল বিয়ের পর বৌ পাগল হয়ে যায়। আর বৌ পাগলেদের বৌরা ইচ্ছেমত বাদর নাচ নাচায়।
মদন বললো, স্যার, বিয়ে পাগল আর বৌ পাগল ব্যতীত আর কোনো পাগল ভালো না। এই জন্য আমরা পড়া পাগল বা কাজ পাগল হতে চাই না।
ভজন স্যার এবার মারতে যেয়েও না মেরে বুঝিয়ে বললেন, এই জ্ঞানে যা বুঝিস তাই বললি। পড়া পাগলরাই আসল পাগল। কাজ পাগলরাই সফলকামী হয়। আমার কথা তোদের ভালো লাগবে না। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা কেউ কোনো দিন বোঝে না।
মদন সুর টেনে বললো, জ্যি স্যার, কিডনি থাকতে কিডনির মর্যাদা কেউ বোঝে না।
স্যার চোখ কটমট করে তাকালেন। আর ভাবলেন, এ যুগের ছোট্ট ছোট্ট শিশুগুলি অকালপক্ব হয়ে গেছে। জুতসই প্রহার না চালিয়ে গেলে ঠিক হবে না।
স্যার চলে গেলেন। ছাত্ররা গোল হয়ে বসলো। মদন বললো, এভাবে কি স্যারের কাছে চৌদ্দগোষ্ঠী মার খেতে খেতে মরবো?
গজা বললো, স্যারকে একটা শিক্ষা না দিলে হবে না, তিনি শিক্ষা দিতে দিতে ভুলে গেছেন শিক্ষা তাঁরও দরকার।
প্যাকলে বললো, প্রথমে বেত চুরি করতে হবে, তারপর তাঁর চশমা চুরি করতে হবে।
মদন বললো, ওরে ওমন বেত আর চশমা ক্রয় করা তাঁর কাছে কিছু না। অন্য কোনো বুদ্ধি বের কর্। মুখ বুঝে মার খাওয়ার দিন শেষ। 
মদনরা কোনো বুদ্ধি বের করতে পারলো না। মদন বাড়ি এসে বাবাকে বললো, ভজন স্যার মেরে মেরে শেষ করে দিলেন। তাঁর ভয়ে তো স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
হরগঙ্গা বললেন, দিন রাত পড়বি। পড়া পারলে তোকে আর মারবেন না।
মদন বললো, দুনিয়ার আজগুবি প্রশ্ন ধরেন। বাবা, স্যারকে সোজা করা যায় কিভাবে বলো তো! নতুন নতুন পরিকল্পনা ছাড়া স্যারের হাত থেকে বাঁচা যাবে না।
হরগঙ্গা বললেন, স্যার প্রশ্ন করার আগেই তুই প্রশ্ন করবি৷ কঠিন কঠিন প্রশ্ন। স্যার জবাব দিতে দিতে ঘণ্টা পড়বে, আর উত্তর না দিতে পারলে ধরা খাবেন।

পরদিন সবাই স্কুলে গেলো। স্যার পড়া ধরার আগেই মদন প্রশ্ন করলো, স্যার, ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার- এখানে নিধিরাম কে ছিলেন বলেন তো?
স্যার ভ্রূ কুঁচকে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, বাসা থেকে পড়ে এসে জানাবো।
মদন অন্য প্রশ্ন করলো, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে- এই উদো এবং বুধো কি দুই ভাই ছিলেন? এদের জীবন কাহিনি শুনতে চাই।
স্যার চিবুকে হাত দিয়ে ভেবে ভেবে বললেন, পড়ে এসে কালকে জানাবো।
স্যার এবার মদনকে পড়া ধরলেন, বল্, কান পাতলা মানে কি?
মদন কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর বললো, পড়ে এসে কালকে জানাবো। 
স্যার চোখ আগুন করে বললেন, কি বললি?
মদনকে মারার জন্য স্যার উদ্যত হলে পঁচা বললো, স্যার তুঘলকি কাণ্ড তো জানি। তুঘলকি কাণ্ড সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাই।
স্যার আবারো বিব্রত হলেন আর বললেন, আমি কি ইতিহাসের স্যার? ইতিহাসের স্যারের কাছ থেকে জেনে নিবি।
গেদু বললো, স্যার, বিদুরের খুদ তো জানি৷ বিদুর সম্বন্ধে জানতে চাই।
স্যার তো পড়লেন মহামুশকিলে। বললেন, আমি কি ধর্মীয় শিক্ষক? ধর্মীয় বিষয় স্যারের কাছ থেকে জেনে নিবি। 
কেদু বললো, স্যার, সবচেয়ে বড় ইংরেজি শব্দ কোনটি, যদি জানাতেন।
ভজন বললেন, আমি কি ইংরেজির স্যার? ইংরেজি স্যারের কাছ থেকে জেনে নিবি।
স্যার মনে মনে ভাবলেন, ছাত্রদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিলে হিতে বিপরীত হবে।
তারপর নিজেই প্রশ্ন করলেন, মদন বল্, পটল তোলা মানে কি?
স্যারের উত্তরের সাথে উত্তর মিলিয়ে মদন বললো, আমি কি কৃষকের ছেলে? কৃষকের কাছ থেকে জেনে নিয়েন।
স্যার গেলেন তুমুল রেগে। এক ঘা মেরে দিলেন, মদন বললো, আপনি না পারলে অন্য স্যারেদের কাছ থেকে জেনে নিতেন বলেন, আমরা না পারলেই যত দোষ, কেনো?
স্যার বললেন, পরীক্ষা কি আমি দেবো? আমি না পারলে কি ফেল করবো? তোদের সব জানতে হবে।
মদন বললো, আপনাকেও জানতে হবে। আপনি না জানলে শিখবেন কি করে?
স্যার মনে মনে ধরা খেলেন আর রাগ কিছুটা স্তিমিত করলেন। ভাবলেন, শিশুগুলো পেকে গেছে। শিশুদের মন প্রশ্নপ্রবণ। জানার আগ্রহ প্রকাশ করে বেশি। কিছু একটা বলে দিলে বুঝে যায়। আমারও তাই করতে হবে।
স্যার মুখে বললেন, আচ্ছা, তোরা কি জানতে চাস্ বল্?
মদন বললো, স্যার, আপনি পড়িয়েছেন শকুনি মামা মানে কুচক্রী লোক। আমার প্রশ্ন হলো, শকুনি মামা মানে কুচক্রী লোক কেনো?
প্যাকলে বললো, আপনি পড়িয়েছেন রাবণের গোষ্ঠী মানে বড় পরিবার। আমার প্রশ্ন হলো, রাবণের গোষ্ঠী মানে বড় পরিবার কেনো?
স্যার অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লাস ত্যাগ করলেন। ছাত্ররা আনন্দে স্ফূর্তি করতে লাগলো আর হাসাহাসি করতে লাগলো। 
টোটন বললো, স্যার তো আজ জব্দ হয়েছেন। সেই সাথে প্রচণ্ড রেগেছেনও। আগামীকাল না সুদে-আসলে পরিশোধ করে দেন। আগামী কালের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
মদন বোর্ডে একটি বাক্য লিখলো। কিছুক্ষণ পরেই ভজন স্যার প্রধান শিক্ষককে নিয়ে হাজির হলেন। দুই গম্ভীর স্যারকে দেখে ক্লাসের সবাই চুপ। প্রধান শিক্ষক বোর্ডে তাকালেন, তাতে লেখা আছে, 'বেত্রাঘাত বরদাস্ত করা হবে না'।
প্রধান শিক্ষকের চোখ তো চড়ক গাছ, বললেন, কে লিখেছে এ কথা? স্কুলে তো বেত্রাঘাত নিষেধ করেছি আমি।
মদন দাঁড়িয়ে বললো, বেত্রাঘাত তো চলছেই স্যার। বেত্রাঘাতের ভয়ে আমার বন্ধুরা একে একে স্কুল ত্যাগ করছে। ডাক্তার খরচ দিতে দিতে বাবা-মা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।  
প্রধান শিক্ষক বললেন, স্যার, কত করে বলেছি ছাত্রদের প্রহার করবেন না।
ভজন স্যার বেত উঠিয়ে প্রধান শিক্ষককে এক ঘা বসিয়ে দিলেন। প্রধান শিক্ষক একেবারে থ এবং বিব্রত। তাছাড়া ছাত্রদের সামনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাতে হতভম্ব হয়ে গেলেন। ভজন স্যার বললেন, মারের উপর ওষুধ নেই। তোকেও যদি না মারতাম প্রধান শিক্ষক হতে পারতি?
প্রধান শিক্ষক কোনো কথা না বলে চলে গেলেন। পূর্বাপেক্ষা গর্জে উঠলেন ভজন স্যার, বললেন, প্যাকলে, বেত্রাঘাত শব্দ দিয়ে নতুন দুইটা বাক্য বল্।
প্যাকলে বললো, বেত্রাঘাত আর খাবো না। আমরা বেত্রাঘাতের বিপক্ষে। 
শুনেই ভজন স্যার এক ঘা মারলেন, পরক্ষণেই প্যাকলে বললো, বেত্রাঘাত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বেত্রাঘাত ভীতির কারণ।
ভজন স্যার আর এক বাড়ি মারলেন। প্যাকলে এবার বললো, বেত্রাঘাত ছাড়া ছাত্ররা সোজা হবে না। বেত্রাঘাতেই ছাত্ররা মানুষ হবে।
ভজন স্যার বললেন, এবার ঠিক আছে। গজা, বেত্রাঘাতের ত্র দিয়ে শব্দ গঠন করে বাক্য বল্।
গজা বললো, অত্র স্কুলের নেত্রহীন গোত্রহীন চরিত্রহীন আরত্র স্যার ছাত্রদের কাছে ঘৃণার পাত্র, চলে যাক অন্যত্র।
ভজন স্যার চমকে গিয়ে বললেন, কথাটি কি আমাকে বললি?
বলেই দুই ঘা। ঘণ্টা পড়ে যাওয়ার পরও স্যার আজ যাচ্ছেন না। পরবর্তী বিষয় পড়াতে অন্য স্যার চলে এসেছেন। কিন্তু সাহস করে ভজন স্যারকে কিছু বলতে পারলেন না। গেদু বললো, স্যার, আপনার ক্লাস শেষ।
ভজন স্যার বললেন, পরবর্তী ক্লাস করবি? কোন স্যারের? বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছি। টিংকু স্যার ভেতরে আসেন। 
ভয়ে ভয়ে টিংকু স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। ভজন স্যার বললেন, পড়ান। আমি দেখবো।
বিব্রত হলেও টিংকু স্যার পড়াতে শুরু করলেন। টিংকু স্যার একটু বুদ্ধি করে বইয়ের বাইরে থেকে পড়াতে লাগলেন, সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেকে খুব পণ্ডিত মনে করে, তোমরা তেমন কোনো পণ্ডিত দেখেছো?
কেদু বললো, হ্যাঁ স্যার, তেমন পণ্ডিত আমাদের স্কুলেও একখান আছেন। আমরা তাঁকে একদিন পুকুরের জলে চুবিয়ে পণ্ডিতি ছুটাবো।
কথাটি ভজন স্যারের কানে খুব বাঁধলো। কিন্তু কিছু বললেন না। টিংকু স্যার আবার বক্তব্যে ফিরলেন, তোমরা কি জানো যারা নিজেকে মহাজ্ঞানী ভাবে তারা মূলত কি?
গেদু দাঁড়িয়ে বললো, স্যার তারা আস্ত একটা গর্দভ, অপদার্থ, ভাঁড় কিংবা কেবলাকান্ত। আর তেমন একখান মহাজ্ঞানী ভাঁড় আমাদের স্কুলে আছে, আমরা তাঁকে একদিন দিগম্বরী করবো।
কথাটি শুনতেই দুই কান খাঁড়া হয়ে গেলো ভজন স্যারের। বুঝতে বাকি থাকলো না তীর তাঁর দিকেই ছুঁড়ছে। টিংকু স্যার আবার বললেন, বাচ্চারা, তোমরা কি জানো সব কাজে বেশি বেশি করলে হীতে কি ঘটে?
মদন বললো, স্যার, বেশি বেশি কোনো কিছুই ভালো না। কেউ কেউ বেশি বেশি করে ফেলেন। বেশি বেশি কোনো কাজেরই ফল ভালো না। আমরা সংঘবদ্ধ হচ্ছি যেই বেশি বেশি করবে আমরা তাঁকে ধরবো, আর চ্যাংদোলা করে নিয়ে বাতরুমে আটকে রাখবো।
টিংকু স্যার বললেন, তোমরা কি জানো বয়স বেশি হলে কি করা উচিত?
প্যাকলে বললো, স্যার, বয়স বেশি হলে ধর্ম চর্চায় বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। আর শরীর চর্চা করা উচিত। কিন্তু কিছু নির্বোধ আছেন বুড়ো হয়েছে ভুলেই যান। আমরা তেমন একখান বুড়ো বানরের সন্ধান পেয়েছি, তাঁকে পাগল আখ্যা দিয়ে ভেবেছি তাঁর পিছে পিছে আমরা ঘুরবো আর তাড়াবো।
অবস্থা বেগতিক দেখে ভজন স্যার ক্লাস ছেড়ে চলে গেলেন। স্যার চলে যেতেই ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো।

পরদিন স্যার ক্লাসে এলেন। স্যার আজ 'বাংলাদেশের পাখি' এর উপর রচনা লিখতে দিয়েছেন। যে যার ইচ্ছামত লিখছে। পাশ থেকে মদন প্যাকলেকে দেখেছে, স্যার তা দেখতে পেয়ে প্যাকলেকে বললেন, এই মদনকে দেখাচ্ছিস কেন?
প্যাকলের তৎক্ষণাৎ উত্তর, স্যার, আমি পরোপকারী। মানুষ তো মানুষের জন্যই।
স্যার চোখ গোল্লা গোল্লা করে বললেন, ফের দেখাবি তো ক্লাস থেকে বের করে দেবো।
তা শুনে মদন বললো, স্যার, আপনি এত নিষ্ঠুর কেন?
স্যার এবার রেগে গেলেন, মদনকে দাঁড়াতে বললেন, আর বললেন, কি লিখেছিস, পড়্।
মদন যা লিখেছে পড়তে শুরু করেছে, পাখি একটি উড়ন্ত প্রাণী। দুটি পা, দুটি চোখ, দুটি ডানা আছে। অবশ্য ডানা কাটা পাখিও আছে। তারা অবশ্য ঠোঁটে লিপিস্টিক দেয়।
স্যার মদনকে থামিয়ে দিলেন, কি লিখেছিস এসব? টোটন, অফিস থেকে বেতটা আন্।
পাশ থেকে কেদু টোটনকে অর্ডার করলো, যা টোটন, দ্রুত বেতন নিয়ে আয়।
স্যার কেদুর উপর ক্ষেপে গেলেন, কান ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বললেন, তোকে অর্ডার করতে কে বলেছে? পেকে গেছিস, না?
পিছন থেকে প্যাকলে দাঁড়িয়ে বললো, স্যার, আপনি এসব কি শুরু করলেন? আপনার বিরক্তিতে তো 'বাংলাদেশের পাখি' রচনা লিখতেই পারছি না। চুপ করেন। কাজের সময় বিরক্ত করতে নেই।
স্যার প্যাকলের কাছে এলেন আর বললেন, আমি তোকে লিখতে বিরক্ত করছি? কি লিখেছিস পড়্।
প্যাকলে বললো, লিখেছি আমি, পড়ার দায়িত্ব আপনার। ভালো লিখলে ভালো আমার, খারাপ লিখলে খারাপ আমার। ভালো লিখেছি, না খারাপ লিখেছি বিচার করবেন আপনি।
স্যার আবার টোটনকে অর্ডার করলেন, তুই এখনো বেত আনতে গেলি না?
টোটন বেত আনতে চলে গেলো। স্যার প্যাকলের খাতা নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। 'পাকি দেকতে সুন্দর। আমাদের মতই পাকি ভাত খায়, মাচ খায়। পাকিরা আমাদের চারপাশে উড়ে বলে আমাদের মন ভালো থাকে'।
এটুকু পড়ার পর স্যার বললেন, তোর হাতের লেখার যেমন শ্রী, তেমন বানানের শ্রী। আজ তোকে ডাবল ডোজ দেবো।
এরপর স্যার বাকি অংশ পড়তে লাগলেন। প্যাকলে লিখেছে,'আমরা পাকি দেকতে আমাদের স্কুল পালিয়ে গার্ডস স্কুলে যাই'।
স্যার গম্ভীর চোখে প্যাকলের দিকে চেয়ে বললেন, পাখি দেখতে গার্লস স্কুলে যাস?
প্যাকলে কানে ধরে বললো, স্যার, আমরা পাখি দেখতে বনে যাই।
স্যার আবার খাতা পড়তে লাগলেন, প্যাকলে লিখেছে, 'পাকি শিস দেয়, আমরা পাকি দেখে শিস দিলে দোশ। আমরা হাসলে পাকিরা দেখলে দোশ নেই, পাকিরা হাসলে আমরা দেখলে দোশ। আমরা তাই হতভাগা প্রাণী'।
টোটন বেত এনে হাজির। স্যার প্যাকলের জামার কলার ধরে চারটা বেতের বাড়ি দিলেন। প্যাকলে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে বলতে লাগলো, আমরা না, পাখিরা হতভাগা প্রাণী। পাখি গান গায়, উড়ে বেড়ায়। পাখিরা জামা পরলে যত না সুন্দর লাগে, শাড়ি পরলে তার চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে।
স্যার আরো দুই ঘা মেরে বললেন, গোল্লায় গেছিস। কোন্ পাখি নিয়ে লিখতে বলেছি আর কোন্ পাখি নিয়ে লিখেছিস?
প্যাকলে বললো, স্যার, আমি বনের পাখি আর মনের পাখি 'বাংলাদেশের পাখি' রচনাতে একাকার করে লিখেছি। আপনি কি শুধু বনের পাখি নিয়েই লিখতে বলেছেন? 
স্যার আরো এক ঘা মেরে বললেন, তোকে আর লিখতে হবে না। বাড়ি গিয়ে বাবাকে বলবি, বাবা, স্যার তোমার ছেলেকে বিয়ে দিতে বলেছেন।
গজা দাঁড়িয়ে বললো, স্যার, আপনি এভাবে বাল্য বিবাহে কাউকে উৎসাহী করতে পারেন না। এটা আপনার অন্যায়।
স্যার এবার গজার কাছে এলেন, বললেন, মাঝখান থেকে পড়্, কি লিখেছিস শুনি...
গজা পড়তে লাগলো, 'পাখি বজ্জাত প্রাণী, মানুষের কাঁধে মল ছুঁড়ে মারে। পাখি বিরক্তিকর প্রাণী, জানালায় বসে কিচির-মিচির করে আমাদের ঘুম ভাঙায়। আর শকুন পাখির কথা কি বলবো, তার দোয়াতে গ্রামের সব গরু মরে যায়। আর কাঠঠোকরা পাখির কথা কি বলবো, গ্রামের গাছগুলি সব ফুঁটো করে ফেলছে, ডেকে ডেকে বাড়িতে আত্মীয় আনছে'।
ভজন স্যার গজার চোখের দিকে তাকালেন আর বললেন, পাখির কত কত ভাল গুণ আছে, একটিও চোখে পড়ে না? যত অবান্তর চিন্তা তোদের মনের মাঝে বাস করে! একটু পড়াশোনা কর্ বাবা, জীবনের হিসাব কিন্তু মিলাতে পারবি না। তখন আমার কথা মনে পড়বে।

ক্লাস শেষে স্যার চলে গেলেন। গজা বললো, কাল থেকে আমরা আর কেউ স্কুলে আসবো না। দেখি ভজন স্যার কাকে মারেন!
প্যাকলে বললো, স্কুলে আসবি না মানে? স্কুল আমাদের। আমরা স্কুলে আসবো। ভজন স্যারের আসা বন্ধ করতে হবে।
মদন বললো, কিন্তু কিভাবে?
প্যাকলে একটা বুদ্ধি দিলো। বুদ্ধিমত কাজ। সন্ধ্যাবেলা ভজন স্যার বাজার করে ফিরছিলেন। মদন ভূত সেজে স্যারকে ভয় দেখালো। আর স্যার গিয়ে তার গলা ধরলেন, বললেন, ওরে ভূত বলে কিছু নেই।
মদন ছটফট করতে লাগলো কিন্তু স্যার তাকে ছাড়লেন না, বললেন, আমার বাড়ি চল্। বাজার করেছি, আমাকে রান্না করে খাওয়াবি। বাড়িতে নতুন একটা বেতও এনে রেখেছি, ওটা তোর পিঠে মেরে উদ্বোধন করবো।
মদন বললো, স্যার, বেতের বাড়ি আর কত খাবো, এক জিনিস খেতে আর কত ভালো লাগে?
স্যার মদনকে ছাড়তেই কোনো কথা না বলে দৌঁড় দিলো। সামনে যেতেই চারদিক থেকে ঢিল পড়ছে স্যারের সামনে। স্যার বললেন, ওরে তোর বাবারাও এভাবে আমাকে ঢিল ছুঁড়তো। সবগুলোকেই মানুষ করেছি। তোদেরও মানুষ করে ছাড়বো।
থুত্থুরে বুড়ির মতো কণ্ঠ ধারণ করে প্যাকলে আড়াল থেকে বললো, আমরা তোর যম।
স্যার বললেন, কানমলা খেলে সামনে আয়।
স্যার তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন গাছের আড়ালে কে যেন আছে। হনহন করে হেটে প্যাকলেকে ধরে রাস্তায় আনলো। প্যাকলে বললো, স্যার, আমাকে ছেড়ে দেন, আমি কিন্তু সত্যিকারের ভূত। আপনার অমঙ্গল হবে।
স্যার কান টেনে বললেন, ভূত? তুই সত্যিকারের ভূত? পড়াশোনা করতে ইচ্ছে না থাকলে বিয়ে কর্। তারপর বৌর বায়না পূরণ করতে করতে মর্।
প্যাকলে বললো, স্যার, আমি বাচ্চা মানুষ। কেউ মেয়ে দেবে না, নতুবা আপনার কথা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম।
স্যার প্যাকলের কান আরো জোরে জোরে টানছেন আর প্যাকলে আরো জোরে জোরে কেঁকাচ্ছে। তা শুনে জঙ্গল থেকে বাকিরা পালালো। স্যার বললেন, আমার ভয়ে বাকি ভূতেরা তো পালালো, আমি তবে কে?
প্যাকলে বললো, ভূত সর্দার।
স্যার জোরে হুংকার দিয়ে বললো, কি বললি?
প্যাকলে বললো, যম সর্দার।
স্যার আরো জোরে কান টেনে বললো, আবার বল্!
প্যাকলে বললো, যমের বাপ।
প্যাকলে কান ছাড়িয়ে নিয়ে দৌঁড় মারলো আর বললো, আপনি যম রাজ।

পরের দিন ক্লাসে মদন, প্যাকলে, গজা ওরা মাথা নিচু করে বসে থাকলো। স্যার বললেন, এই তোদের কি হয়েছেরে? মাথা নিচু করে কেন? মাথা নিচু করে থাকতে ভালো লাগে? আয়, সামনে আয়।
তিনজনকে সামনে এনে তিনজনেরই মাথা টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে দিলেন আর মদনকে বললেন, প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উত্তর দিবি। বল্, ব্যাকরণে পণ্ডিত যিনি-
মদন বললো, ব্যাকরণে পণ্ডিত যিনি- ভজন স্যার।
স্যার এক ঘা মেরে প্যাকলেকে পড়া ধরলেন, কয়েক দিন আগে পড়িয়েছিলাম অলংকার। বল্, অলংকার কি?
প্যাকলে বললো, স্যার, অলংকার হলো আংটি, চুড়ি, হার, নূপুর...
প্যাকলে আরো কিছু বলছিলো কিন্তু থেমে গেলো কারণ প্রতিটি অলংকারের নাম বলার সাথে সাথে একটি একটি করে বেতের বাড়ি পড়ছিলো। এবার গজাকে পড়া ধরলেন, গজা বল্, পুরুষ কত প্রকার ও কি কি?
গজা বললো, স্যার, পুরুষ তিন প্রকার।
স্যার খুশী হলেন, বললেন, কি কি?
গজা বললো, পুরুষ তিন প্রকার, যথা- কালপুরুষ, সিংহপুরুষ ও পরপুরুষ।
স্যার দিলেন এক ঘা। গজা বললো, না স্যার, চার প্রকার, যথা- কালপুরুষ, সিংহপুরুষ, পরপুরুষ ও বীরপুরুষ। বীরপুরুষটা ভুলে গিয়েছিলাম।
স্যার দিলেন আর এক ঘা। গজা বললো, না স্যার, পাঁচ প্রকার। কালপুরুষ, সিংহপুরুষ, পরপুরুষ, বীরপুরুষ ও মহাপুরুষ। দূর ছাই, ছয় প্রকার, বাকিটা কাপুরুষ।
স্যার রেগে বললেন, ছয় প্রকার?
স্যার গুণে গুণে আরো ছয় ঘা মারলেন। আর বললেন, যা নিজ নিজ আসনে গিয়ে বস্।
স্যার এবার কেদুকে বললেন, প্রকৃত মানুষ হবি কি করে?
কেদু বললো, প্রকৃত মানুষ হবো নিয়মিত বেত্রাঘাত খেলে, কান উঠবস করলে আর টেবিলের নিচে মাথা দিলে।
বলামাত্রই কেদুর পিঠে দুই ঘা বসে গেলো। তা দেখে পিছন দরজা দিয়ে অন্যরা দৌঁড়ে পালালো।

পরদিন ছাত্ররা বসে বসে যুক্তি আটছে কিভাবে কি করলে স্যারের হাত থেকে মার না খাওয়া যায়। জুতসই কেউ কোনো বুদ্ধি বের করতে পারছে না। গজা বললো, স্যার যাকেই মারবেন আমরা মরার ভান করবো। স্যার ভয় পেলে আর মারবেন না।
মদন বললো, ভজন স্যারের হৃদয় বলে কিছু নেই। স্যার যদি মারেন আর মরার ভান করিস তবে আরো মারবেন। দয়া-মায়া আছে নাকি উনার? মরার উপর খাড়ার ঘা মারার লোক তিনি। তারচেয়ে মরার ভান না করে অন্য বুদ্ধি বের কর্।
গেদু বললো, যাকেই স্যার বেত আনতে দেবেন, ফিরে এসে বলবো, বেত নেই। উঁইপোকা খেয়ে ফেলেছে। আমরা যদি একমত হতে পারি তবে কিন্তু বুদ্ধিটা ভালো। 
মদন বললো, স্যার তো অধিকাংশ দিনই নিজ হাতে বেত নিয়েই আসেন। এ বুদ্ধিতে কাজ হবে না।
গজা বললো, আমাদের কাউকে বেত নিয়ে আসতে পাঠালে এত আস্তে ধীরে যাবো আর আসবো যেন আসতে আসতে ঘণ্টা পড়ে যায়।
মদন বললো, তোর বুদ্ধিটা ভালো। তবে প্রত্যেকদিন এমন করলে স্যার বুঝে যাবেন। দীর্ঘদিন ফল পাওয়া যাবে এমন বুদ্ধি বের কর্।
পঁচা বললো, বেত ভেঙে গেলেই তো স্যার বেত কেনেন। বেত বিক্রেতাকে বলবো, অন্য ব্যবসায় শুরু করেন।
মদন বললো, বেত বিক্রেতা কি আমাদের কথা শুনবে? অন্য কোনো বুদ্ধি বল্।
টোটন বললো, আচ্ছা, আমরা স্যারের সাথে বেশি বেশি মিশবো। বাড়ি থেকে ফল-ফলাদি এনে খাওয়াবো। প্রয়োজনে তাঁর বাসায় বাজার সদাই কিনে দিয়ে আসবো। স্যারের হাতের কাজ করে দেবো। যদি স্যারের বন্ধু হতে পারি তবে মনে হয় কাজ হতে পারে।
মদন বিজ্ঞজনের মত করে বললো, বুদ্ধিটা ভালো। চল্, আজ বিকালে বাজার নিয়ে স্যারের বাসায় যাবো।
যেই বলা সেই কাজ। বাজার থেকে এক ব্যাগ ফল-মূল আর তরি-তরকারি কিনে ওরা স্যারের বাসায় গেলো। স্যার দেখে খুব খুশি। বললেন, তোরা এই বয়সেই তেল মারা শিখে গিয়েছিস? তোদের পড়িয়ে এই শিখালাম? তোদের স্যার আমি? আমি কি কখনো তোদের এ শিক্ষা দিয়েছি?
স্যার দরজা বন্ধ করে দিয়ে নতুন কিনে আনা বেতটা হাতে নিলেন। স্যারের ভাবগতি দেখে মদন টোটনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আর বললো, তোর বুদ্ধির একি হাল আর ফল দেখ্!
স্যার মদনকে এক ঘা মেরে বললেন, হাসছিস কেন্? 
মদন বললো, স্যার, আমি হাসি-খুশি থাকতেই পছন্দ করি। 
বলেই আর একটু হাসলো। স্যার আরো এক ঘা মেরে বললেন, আমি তোকে মারছি আর তুই হাসছিস? আমাকে এত অবজ্ঞা?
মদন বললো, স্যার, আপনার হাতের বেতের আগাতে মিষ্টি আছে। আর মিষ্টি খেলেই আমার হাসি লাগে। ফল-মূল এনেছি, খাবেন, শক্তি হবে, বেত জোরে চালাতে পারবেন।
স্যার রেগে গিয়ে আরো এক ঘা মেরে বললেন, এই প্রথম শুনলাম বেতের বাড়ি খেলে হাসি লাগে।
মদন বললো, স্যার, শত কষ্ট আর ব্যথার মাঝে হাসতে পারায় জীবনের স্বার্থকতা। 
গেদু বললো, স্যার, আমরা তেল মারতে আসিনি। আপনার বয়স হয়েছে। আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আর তাই বাজারের ভালো ভালো তরকারি কিনে এনেছি। তবুও স্যার আপনি আমাদের বন্ধুকে মেরে শেষ করে দিলেন। ও যে হাসছে, কত কষ্টে হাসছে জানেন? ওর চোখের ভাষা কি বোঝেন? মার দিয়ে সব হয়? আপনি ভালোবাসতে জানেন?
স্যারের গেলো রাগ হয়ে, কিন্তু মারলেন না, গেদুর কান ধরে বললেন, জ্ঞান দিস?
গেদু বললো, না স্যার, জ্ঞান সাগরে কেউ কি জ্ঞান বিলাতে যায়?
স্যার তদপেক্ষা জোরে কান টেনে বললেন, ভালো-মন্দ বুঝিস? বড় বড় যে কথা বলিস!
গেদু বললো, পাগলও ভাল-মন্দ বোঝে। আমি তো পাগল না। আপনি পড়াতে ভালো পারেন, কিন্তু আপনি ভালো শিক্ষক না।
স্যার গেদুর পশ্চাৎদেশে দুই ঘা মেরে বললেন, মুখে মুখে কথা বলিস! এ সাহস তোদের কে দিলো?
গেদু বললো, যত পারেন মারেন। আপনার ভয়ে পালিয়ে শিক্ষা জীবন তো শেষ করতে পারি না। আমাদের ভালোবাসার মত আরো অনেক স্যার আছেন।
স্যার বললেন, বুঝেছি, অন্য স্যারেরা তোদের লেলিয়ে দিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে। 
গেদু বললো, তেমনটা ভাবতেই পারেন। কারণ আপনার ভাবনা-চিন্তা হিংসাত্মক। সৎসাহস থাকলে সব অন্যায় প্রতিবাদ করা যায়। 
ছাত্ররা একত্রে স্লোগান দিয়ে উঠলো। অবস্থা বেগতিক দেখে ভজন স্যার দরজা খুলে দিলেন।

পরদিন ভজন স্যার স্কুলে এলেন না। খুব অসুস্থ। সবাই খুব খুশি হলো এবং আনন্দে সারা স্কুলে হৈ-হুল্লোড় করলো। কিন্তু বেশ কিছুদিন স্যার স্কুলে আসলেন না। তখন খবর নিয়ে জানা গেলো, স্যার ভীষণ অসুস্থ, বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থতা পেয়ে বসেছে। কিন্তু কোনো ছাত্র তাঁকে দেখতে গেলো না। এমনকি তাঁর সহকর্মীরাও তাঁকে দেখতে গেলেন না। ভজন স্যারের চোখ দিয়ে জল ঝরতেই থাকলো। ভাবলেন, কেনো সারাজীবন ভালো শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কেনো জনপ্রিয় শিক্ষক হইনি।

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

চন্দন সুরভি নন্দর কবিতা

টাকার মেশিন                      মায়ের ওষুধ নিয়ে শহর থেকে ফিরল রতন সবে সন্ধ্যা নেমেছে  রাস্তায় আলো কম হাসপাতাল অনেক দূরে  অদৃশ্য যম খেলাকরে  মৃত্যুর সীমান্তে শায়িত মা   শেষ রক্ষা হল না  আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফোটে রাতের আঁধারে ঘরের দেওয়াল গুলো রাঙিয়ে গেছে কারা  তুলেছে রং বেরং এর তোরন  এসেছে নির্বাচন  শোনাযায় এবার নাকি এ টি এম চিহ্নে দাঁড়িয়েছে একজন! টাকার মেশিন........  জিতলে সবাইকে দেওয়া হবে! সামনে বসে উল্লাসে ফেটে পড়া রোবট গুলো মানুষ কবে হবে?  ====================== Chandansuravi Nanda Revenue Office  BL&LRO,Manbazar-ll Boro Purulia PIN-723131 Phone-9163332432

কবিতা ।। রঙ ।। ইউসুফ মোল্লা

  রঙ  ইউসুফ মোল্লা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,  পৃথিবী নানা রঙে সেজে উঠেছে।  ধূসর বাদামী রঙ তোমার দেহ,  মাথায় সবুজ রঙের বাবরি চুল,  তাতে গুঁজে রেখেছো লাল-নীল ফুল।  নববধূর মতো সিঁথিতে দিয়েছো সিঁদুর,  চোখে দিয়েছো কাজল।  দিগন্তভরা আকাশ তোমাকে নীল উপহার দিল,  সূর্যের লাল আলো তোমাকে সুন্দর করেছে।  তুমি তাদের ফিরিয়ে দিলে, বুকভরা ভালোবাসা আর স্নেহ।  মাঝে মাঝে এইভাবে হোলি আসে,  আমার মনকে রাঙিয়ে দিতে। ------------------    ইউসুফ মোল্লা উত্তর অঙ্গদ বেড়িয়া, ট্যাংরাখালী, ক্যানিং,  দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ৭৪৩৩২৯

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

ছোটগল্প ।। নীলিমার আত্মজাগরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত

নীলিমার আত্মজাগরণ পরেশ চন্দ্র মাহাত নীলিমা মাহাত, বয়স পঁচিশ প্লাস —তার বাবা মায়ের পঞ্চম তথা শেষ সন্তান। দুই দাদা —বড়দাদা শঙ্কর ও ছোটদাদা বিজয়। বড় দাদা শঙ্কর আর দুই দিদি তাদের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র নীলিমা আপাতত স্বামীর কোমল হাতের স্পর্শ ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত এবং আদৌ কবে অথবা সেই সৌভাগ্য আসবে সেটা ঈশ্বরের নিকটই একমাত্র জ্ঞাত। সেই সঙ্গে দুবছরের সিনিয়র ছোটদাদা বিজয়েরও নীলিমার মতো অবস্থা। তারও জীবনসঙ্গিনী জুটেনি। মোট সাতজন সদস্য নিয়ে গঠিত সংসার নীলিমাদের পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার —মধ্যবিত্ত পরিবার না বলে যদি নিম্নবিত্ত বলা হয় তবুও কোনো অত্যুক্তি করা হয় না। বাবার প্রত্যেকদিনের আয়ের উপর ভিত্তি করেই চলে সংসার। এই কঠোর এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও নীলিমার মা শ্রীমতী মেনকা‚ সংসার সামলে তার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার প্রতি যথেষ্ট তৎপর ও সহানুভূতিশীল। তাদের পড়াশুনায় কোনো খামতি রাখেননি। যথা সময়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের মুখ দেখিয়েছে – টিউশনের বন্দোবস্ত করেছে। তাদের জীবন যাতে সুখকর হয় সেটাই প্রতিদিন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছে। পাঁচ-পাঁচটি ছেলেমেয়ের মধ্যে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলা একপ...

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________ 

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

নারীমর্যাদা ও অধিকার হিমাদ্রি শেখর দাস  নারীর মর্যাদা বলতে বোঝায় নারীর সম্মান, অধিকার, এবং তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এটি সমাজে নারীর অবস্থান এবং তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। নারীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং তাদের অধিকার গুলি সুরক্ষিত থাকে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই শ্রেণি সংগ্রাম শুরু হয়েছিল অনেক আগে।  একদিকে শ্রেণী বৈষম্য অপরদিকে নারী পুরুষের বৈষম্য এই দুটি ছিল শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অন্যতম দুটি মূল ভিত। নারীর অধিকারহীনতা বা দাসত্ব শুরু হয় পরিবার ও সম্পত্তির উদ্ভাবনের ফলে। বহু যুগ ধরে নারী সমাজকে পারিবারিক ও সামাজিক দাসত্বের বোঝা বহন করতে হয়েছে বিনা প্রতিবাদে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে - দাস সমাজব্যবস্থা এবং সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষ ও পরিবারের অধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। সামাজিক উৎপাদনের কাজে নারীদের বঞ্চিত রেখেই তাদের পরাধীন জীবন যাপনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা হয় ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে। নতুন করে নারীদের সামাজিক উৎপাদনের কাজে ...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________